পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ । পর্ব ৭। পর্ব ৮। পর্ব ৯। শেষ পর্ব ।
২. লুধিয়ানার মুনাযারা (এপ্রিল ১৯১২) :
কাদিয়ানী মুনাযির মুনশী কাসেম আলী দেহলভী ১৯১২ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারী দিল্লী থেকে প্রকাশিত কাদিয়ানী পত্রিকা ‘আল-হক’-এ মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীকে মুনাযারার চ্যালেঞ্জ জানান। একই বছরের ১লা মার্চ অমৃতসরী সাপ্তাহিক ‘আহলেহাদীছ’ পত্রিকায় তাঁর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার ঘোষণা দেন। মুনাযারার শর্ত নির্ধারণের পর অবশেষে ১৯১২ সালের ১৫ই এপ্রিল পাঞ্জাব প্রদেশের লুধিয়ানায় মুনাযারা অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এবার কাদিয়ানীরা তাদের বিজয়ের ব্যাপারে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী ছিল। এজন্য তারা ঘোষণা দেয়, যদি মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী এই বিতর্কে বিজয়ী হ’তে পারেন তাহ’লে আমরা তাঁকে ৩০০ রূপিয়া পুরস্কার দিব। আর উনি পরাজিত হ’লে আমরা তার নিকট থেকে কিছুই নিব না। গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ই এপ্রিল ১৯১২ তারিখে উভয় পক্ষ লুধিয়ানায় উপস্থিত হয়। সরকারী উকিল সরদার বচ্চন সিংকে বিচারক নিযুক্ত করা হয়। ১৭ই এপ্রিল বিকাল ৩-টায় আসল মুনাযারা শুরু হয় এবং রাত ৯/১০-টায় গিয়ে শেষ হয়। বিতর্কের বিষয় ছিল মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর সাথে মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর শেষ ফায়ছালা তথা মুবাহালা প্রসঙ্গ। দীর্ঘ বিতর্কের পর ২১শে এপ্রিল মাগরিবের সময় বিচারক অমৃতসরীকে বিজয়ী ঘোষণা করে রায় দেন।
এ বিতর্কে বিজয়ের ফলে মুসলমানদের মনে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী এ সম্পর্কে নিজেই লিখেছেন, ‘২১শে এপ্রিল মাগরিবের সময় সরদার ছাহেব ফায়ছালা দেন। ঈদের চাঁদ উঠার ন্যায় দ্রুতই সমগ্র শহরে খবর ছড়িয়ে পড়ে। মুসলমানরা একে অপরকে অভিবাদন জানাতে থাকে। ছোট্ট সোনামণিরা গাড়িতে বসে হর্ষধ্বনি দিতে থাকে। এমনকি রাত ১০-টার সময় মিয়াঁ ছাহেব (মাওলানা মুহাম্মাদ হাসান খান)-এর বাড়ির প্রশস্ত আঙ্গিনায় জালসা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ফলাফল প্রকাশ করা হয় এবং শিখ বিচারককে ধন্যবাদ জানিয়ে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ অত্যন্ত আনন্দের সাথে রেজুলেশন পাশ করেন। অতঃপর কোষাধ্যক্ষের নিকট থেকে ৩০০ রূপিয়া পুরস্কার হাছিল করে সকালের মেইল ট্রেনে অমৃতসরে রওয়ানা হই। স্টেশনে শুভাকাঙ্ক্ষীরা জড়ো হয়েছিলেন। তারা খুবই আনন্দ প্রকাশ করেন। সদলবলে আমি নিজ বাড়িতে পৌঁছি। আলহামদুলিল্লাহ’। ‘ফাতিহে কাদিয়ান’ গ্রন্থে মাওলানা অমৃতসরী এই বাহাছের বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন এবং মুনাযারায় প্রাপ্ত পুরস্কারের অর্থ দ্বারা বই ছাপিয়ে মানুষের মাঝে ফ্রি বিতরণ করেন।[1] এটি বেশ কয়েকবার মুদ্রিত হয়ে মানুষের হাত হাতে পৌঁছে যায়।
৩. অমৃতসরের মুনাযারা (এপ্রিল ১৯১৬) :
১৯১৬ সালের ২৯ ও ৩০শে এপ্রিল মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী ও কাদিয়ানী মুনাযির মৌলভী গোলাম রসূল রাজিকীর মাঝে ‘মাসীহ-এর জীবন ও মৃত্যু’ বিষয়ে লিখিত মুনাযারা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় অমৃতসরী বিভিন্ন মামলার কারণে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন। তাঁর ভাষায়, ‘মামলা সমূহের কারণে অত্যন্ত ব্যস্ত ছিলাম। বিশেষ করে বাহাছের নিকটবর্তী ২৬-২৮শে এপ্রিল পর্যন্ত মোকদ্দমা ছিল। ২৮ তারিখে ৪ ঘণ্টা যাবৎ আদালতে কার্যক্রম চলতে থাকে। আমার বন্ধু চিন্তিত হয়ে বইপত্র দেখার প্রতি আমার মনোযোগ আকর্ষণ করলে আমি বলতাম, ‘কাপুরুষকে মারার জন্য লাঠির কি প্রয়োজন আছে’? (সাপ্তাহিক আহলেহাদীছ, অমৃতসর, ১২ই মে ১৯১৬)। এত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি অমৃতসরবাসীর জোরাজুরিতে বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন। প্রথম দিন উভয় পক্ষ থেকে ৩ পৃষ্ঠা করে বিনিময় হয়। দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ৩০শে এপ্রিল ‘মির্যার দাবী সমূহ সত্য না মিথ্যা’ বিষয়ে বাহাছ হয়। অমৃতসরী লিখিতভাবে মির্যার মিথ্যা দাবীসমূহের জোরালো উত্তর প্রদান করেন। কিন্তু বিচারক নিযুক্ত না থাকায় এবং ঘরোয়া পরিবেশে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হওয়ায় জনসম্মুখে ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। এজন্য জনগণ উন্মুক্ত স্থানে আম জালসার সময় আলোচনা আকারে বাহাছের দাবী জানান। কিন্তু কাদিয়ানীরা তাদের দুর্বলতার কারণে এতে সম্মত হচ্ছিল না। অবশেষে জনগণের চাপে তারা বাহাছে অংশ নিতে বাধ্য হয়। অমৃতসরীর লিখিত জওয়াব শুনে কাদিয়ানীরা নিশ্চুপ হয়ে যায়। অনেকে তওবা করে কাদিয়ানী মতবাদ পরিত্যাগ করে ইসলাম ধর্মে ফিরে আসে। লাহোরের ইংরেজী পত্রিকা Belton এ বিতর্ক সম্পর্কে লিখেছে, ‘এই বাহাছের ফল এটা হয়েছিল যে, মৌলভী ছানাউল্লাহ ছাহেব মৌলবী গোলাম রসূল রাজিকীর উপরে বিজয়ী হন এবং মির্যায়ী হেরে যায়। মুসলমানরা ছাড়া অন্য ধর্মের লোকজনও জালসায় উপস্থিত ছিলেন। সবাই সর্বসম্মতিক্রমে কাদিয়ানীদের বিপক্ষে ফায়ছালা প্রদান করেন’ (Belton, লাহোর, ৩রা মে ১৯১৬)।[2]
৪. সারগোদার মুনাযারা (ডিসেম্বর ১৯১৬) :
পশ্চিম পাঞ্জাবের (পাকিস্তান) প্রসিদ্ধ ও বড় শহর সারগোদায় কাদিয়ানীদের বেশ দাপট ছিল। তারা এখানে বড় বড় সরকারী পদে আসীন ছিল। ইত্যবসরে ডেপুটি কালেক্টর মুহাম্মাদ শরীফ এখানে বদলী হয়ে আসেন। কাদিয়ানীরা তাঁকে কাদিয়ানী মতবাদের দাওয়াত দেয়। তিনি তাদের সাথে বাহাছ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১৯১৬ সালের ৩রা ও ৪ঠা ডিসেম্বর বাহাছের দিন নির্ধারিত হয়। মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীকে মুনাযির হিসাবে দাওয়াত দেওয়া হয়। অমৃতসরী লিখেছেন, ‘শর্তগুলো এত বেঢপ ছিল যে, আমি কখনো এ ধরনের শর্তে বাহাছ করিনি। যেমন দু’টি বিষয়ে আলোচনা হবে। (১) খতমে নবুঅত ও (২) মির্যার নবুঅত। প্রত্যেক মাসআলায় স্রেফ দু’টি লিখিত জবাব থাকবে। প্রত্যেকটি জবাব লেখার সময় থাকবে দেড় ঘণ্টা করে। সম্পূর্ণ ভিন্ন স্থানে এগুলি লিখিত হবে। সেখানে লেখকবৃন্দ ও তাদের সহযোগীরা ছাড়া অন্য কেউ থাকবে না। অতঃপর সেগুলি একটি আম জালসায় শুনানো হবে। প্রথম দিন ৯-টার সময় লিখিত বাহাছ শুরু হয়ে যায়। আমি একা ছিলাম। আর প্রতিপক্ষের ৪ জন ব্যক্তি ছিল। প্রথম দিন ‘খতমে নবুঅত’ বিষয়ে বাহাছ হয়’।
মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী শারঈ দলীলের আলোকে খতমে নবুঅত প্রমাণ করেন এবং যুক্তির আলোকে কাদিয়ানীদের সামনে এমন প্রশ্ন উত্থাপন করেন, যার সদুত্তর দিতে তারা ব্যর্থ হয়। কাদিয়ানীরা তাদের লিখিত পৃষ্ঠাগুলিতে কিছু উদ্ধৃতি দিয়েছিল। অমৃতসরী বলেন, ‘এসব উদ্ধৃতি ভুল। যদি সঠিক হয় তাহ’লে মূল কিতাবে দেখাও’। কাদিয়ানীরা এর জন্য দু’দিন সময় চায় এবং বলে, যদি দু’দিনের মধ্যে আমরা হাওয়ালা বা সূত্র দেখাতে না পারি তাহ’লে ১০০ রূপিয়া জরিমানা দিব। কিন্তু দ্বিতীয় দিনেই তারা নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে নেয়। তারা সূত্রও দেখাতে পারেনি আর জরিমানার অর্থও পরিশোধ করেনি। মিথ্যুক, ধোঁকাবাজ এবং ওয়াদা ভঙ্গকারীদের কাছ থেকে তো এর চেয়ে বেশী কিছু আশা করা যায় না।
দ্বিতীয় দিন মির্যা গোলাম আহমাদের নবুঅত বিষয়ে মুনাযারা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাদিয়ানী মুনাযিররা নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিতই হয়নি। বরং মুনাযারার জন্য নির্ধারিত সময়ে একটি লম্বা চিরকুট পাঠিয়ে দেয়। যার সারমর্ম ছিল, আমরা ওখানে গিয়ে বাহাছ করব না। যদি আপনি চান তাহলে আমাদের বাড়িতে চলে আসুন! চিরকুট পাওয়ার পর অমৃতসরী কালবিলম্ব না করে তৎক্ষণাৎ তাদের বাড়িতে গিয়ে হাযির হন। দু’পক্ষের মধ্যে লিখিত বাহাছ অনুষ্ঠিত হয়। মাওলানা কাদিয়ানীদের লেখনীর যথার্থ জবাব প্রদান করে তাদের উপর এমন প্রশ্ন উত্থাপন করেন, যার জওয়াব দিতে কাদিয়ানী তার্কিকরা অপারগতা প্রকাশ করে খামোশ হয়ে যায়।[3]
৫. ডেরা গাযী খানের মুনাযারা (মে ১৯১৭) :
পশ্চিম পাঞ্জাব (পাকিস্তান)-এর একটি প্রসিদ্ধ শহর ডেরা গাযী খান (D.G. Khan)। ১৯১৭ সালে কাদিয়ানীদের দুই গ্রুপ তথা লাহোরী ও কাদিয়ানী উভয়ই এখানে জালসা করে। তাদের জালসার প্রভাব দূরীভূত করার জন্য মাওলানা অমৃতসরীকে দাওয়াত দেওয়া হয়। তিনি ১৯১৭ সালের ২৬শে মে বিকাল ৩-টায় ডেরা গাযী খানে পৌঁছে কাদিয়ানী মতবাদের খন্ডনে দু’টি সারগর্ভ বক্তব্য প্রদান করেন। ইত্যবসরে একজন কাদিয়ানী বাহাছ করার জন্য সামনে আসে। কিন্তু ফল হয় উল্টো। সে গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর ভুল ও মিথ্যা সমূহ স্বীকার করে ফিরে যায়। রাতে আবার আলোচনা হয়। অমৃতসরী মির্যার গ্রন্থসমূহ খুলে ইবারত পড়ে পড়ে দেখান এবং বলেন যে, কিভাবে যুগের ঘটনাসমূহ মির্যা গোলাম আহমাদের দাবী ও ভবিষ্যদ্বাণীগুলিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করতঃ তাকে মিথ্যাবাদীদের কাতারে শামিল করেছে। তখন আরেকজন কাদিয়ানী বাহাছ করার জন্য সামনে আসে। কিন্তু খুব দ্রুতই পরাজয় বরণ করে ফিরে যায়। ২৮শে মে (১৯১৭) সকাল বেলা অমৃতসরীর চতুর্থ আলোচনা হয়। সে সময় শী‘আরা কিছু প্রশ্ন ও আপত্তি উত্থাপন করে। মাওলানা তাদেরকেও যথোচিত উত্তর প্রদান করেন এবং ঐদিন দুপুরের পরে অমৃতসরে ফিরে আসেন (সাপ্তাহিক আহলেহাদীছ, অমৃতসর, ৮ই জুন ১৯১৭)। এর ফলে ডেরা গাযী খান থেকে কাদিয়ানী ফিৎনা নির্মূল হয়।[4]
৬. হোশিয়ারপুরের মুনাযারা (অক্টোবর ১৯১৭) :
ডেরা গাযী খানের মুনাযারার পর মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী ১৯১৭ সালের ২১, ২২ ও ২৩শে অক্টোবর ‘আঞ্জুমানে আহলেহাদীছ হোশিয়ারপুর’ (পাকিস্তান) আয়োজিত বার্ষিক জালসায় অংশগ্রহণ করেন। জালসার বাইরে তিনি কাদিয়ানীদের সাথে বাহাছ-মুনাযারাও করেন। মানুষের উপর এর অত্যন্ত কার্যকর প্রভাব পড়ে (সাপ্তাহিক আহলেহাদীছ, অমৃতসর, ৯ই নভেম্বর ১৯১৭)।
৭. গুজরানওয়ালার মুনাযারা (নভেম্বর ১৯১৭ ও জানুয়ারী ১৯১৮) :
হোশিয়ারপুরের জালসা ও মুনাযারা শেষ করা মাত্রই আহলেহাদীছ আলেমদের দাওয়াতে অমৃতসরী গুজরানওয়ালায় যাত্রা করেন। ১৯১৭ সালের ৪ঠা নভেম্বর ‘আঞ্জুমানে আহলেহাদীছ গুজরানওয়ালা’-এর বার্ষিক জালসায় তিনি কাদিয়ানী মতবাদ ও হাদীছ অস্বীকারকারীদের খন্ডনে জোরালো দালীলিক বক্তব্য পেশ করেন। অতঃপর দুই দলের লোকদের সাথে তাঁর বাহাছ হয়। বাহাছে তিনি তাদেরকে নিরুত্তর করে দেন।
এরপর ১৯১৮ সালের ১৯ ও ২০শে জানুয়ারী ‘আঞ্জুমানে আহলেহাদীছ গুজরানওয়ালা’র আহবানে সাড়া দিয়ে প্রথম দিন মাওলানা ইবরাহীম মীর শিয়ালকোটী ‘মাসীহ-এর জীবন ও মৃত্যু’ বিষয়ে এবং দ্বিতীয় দিন মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী ‘খতমে নবুঅত ও মির্যার সত্যতা’ বিষয়ে মুনাযারা করেন। দু’দিনই রাতে অনুষ্ঠিত জালসাতেও তাঁরা বক্তৃতা করেন। গুজরানওয়ালা ও এর আশপাশের এলাকা সমূহে এই মুনাযারা ও আলোচনার দারুণ প্রভাব পড়ে। আল্লাহ দাত্তা নামক একজন ব্যক্তি মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীকে লিখিত একটি পত্রে এ সম্পর্কে বলেন, ‘আপনার গুজরানওয়ালায় আগমন মানুষজনের জন্য একজন রহমতের ফেরেশতার আগমনের মতো ছিল। বহু মানুষ যারা নানাজনের প্রলাপ ও ধোঁকাবাজির কারণে ঈমানহারা হয়ে যাচ্ছিল তারা সঠিক পথে ফিরে আসে। আমার আক্বীদাও কিছুটা পরিবর্তিত হচ্ছিল। আপনার বক্তব্য শোনার পর সবকিছু বুঝতে পেরেছি (অর্থাৎ আমার নিকটে কাদিয়ানীদের ভ্রান্তি সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়ে গেছে)। ইনশাআল্লাহ এখন বিরোধী পক্ষের ঝড়-ঝঞ্ঝা ঈমানের এই পবিত্র বৃক্ষের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। এখন প্রত্যেকটি ব্যক্তি এসব মিথ্যাবাদীদের মুকাবিলা করার জন্য প্রস্ত্তত রয়েছে’।[5]
৮. মালেরকোটলার মুনাযারা (মার্চ ও এপ্রিল ১৯২১) :
পূর্ব পাঞ্জাবের (ভারত) সানগ্রুর যেলার একটি প্রসিদ্ধ স্থান হল মালেরকোটলা। দেশ বিভাগের পূর্বে এটি একটি রাজ্যের মর্যাদা লাভ করেছিল এবং একটি মুসলিম পরিবার এই রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। মিয়াঁ মুহাম্মাদ আলী খান নামে এই খান্দানের এক ব্যক্তি কাদিয়ানী মতবাদে দীক্ষিত হন এবং মালেরকোটলা ছেড়ে কাদিয়ানে গিয়ে বসতি গড়েন। ‘বূ ছাহেবা’ নামে উক্ত বংশের এক প্রভাবশালী মহিলাকে তিনি রাজ পরিবারের বেগমদের মধ্যে কাদিয়ানী মতবাদ প্রচারের জন্য ব্যবহার করতে চান। কিন্তু বূ ছাহেবা জবাব দেন, আমি আলেমদেরকে নিয়ে এসে বাহাছ করানোর পরেই কেবল সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। তার প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৯২১ সালের ২৮শে মার্চ মুনাযারার দিন ধার্য হয়। মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীকে মুসলমানদের পক্ষ থেকে মুনাযির হিসাবে নির্বাচন করা হয়। ‘বূ ছাহেবা’ ও অন্য মহিলারা পর্দার অন্তরাল থেকে অমৃতসরীর নিকট ঈসা মাসীহ (আঃ)-এর জীবিত থাকার প্রমাণ জানতে চান। তিনি দুপুর পর্যন্ত এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা পেশ করেন। অতঃপর মহিলারা তাঁর নিকটে ‘প্রকৃত ইলহামপ্রাপ্ত ব্যক্তির ইলহামের সত্যতা পরীক্ষা করার মানদন্ড’ সম্পর্কে জানতে চান। অমৃতসরী এর জবাবে ইলহামের সত্যতার মানদন্ড নির্ধারণ পূর্বক মির্যা গোলাম আহমাদকে যাচাই করেন এবং প্রমাণ করেন যে, মির্যা তার কল্পিত ইলহাম সমূহের দাবীতে মিথ্যাবাদী।
মিয়াঁ মুহাম্মাদ আলী খান তার উদ্দেশ্য ভেস্তে যেতে দেখে বলে উঠেন, আমরা জনগণের সামনে বাহাছ করার জন্য প্রস্ত্তত আছি। অমৃতসরীকে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি কখন সময় দিতে পারবেন? তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় মুনাযারা করার জন্য প্রস্ত্তত থাকি। আমার মতে আগামীকালকেই মুনাযারা হোক’। কিন্তু কাদিয়ানীদের আপত্তির ফলে শেষ পর্যন্ত ১৯২১ সালের ১৩, ১৪ ও ১৫ই এপ্রিল মুনাযারার তারিখ নির্ধারিত হয়। ১২ই এপ্রিল অমৃতসরী মালেরকোটলা পৌঁছে যান। কাদিয়ানীরা মুনাযারা না করার জন্য ৪ দিন ধরে মুনাযারার শর্ত নির্ধারণের নামে কালক্ষেপণ ও তালবাহানা করতে থাকে। অমৃতসরী তাদের সকল অন্যায্য শর্ত মেনে নিয়ে বাহাছ করতে সম্মত হন। অবশেষে ১৭ই এপ্রিল নিম্নোক্ত বিষয় সমূহের উপর মুনাযারা অনুষ্ঠিত হয়। ১. মাসীহ-এর জীবন ২. নির্দেশপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সত্যতার মানদন্ড ৩. ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কে পর্যালোচনা ৪. মির্যার সত্যতা ও ৫. মির্যা গোলাম আহমাদের সাথে অমৃতসরীর মুবাহালা।
তিন দিন ধরে মুনাযারা চলে। এতে অমৃতসরী বিজয়ী হন। মুনাযারায় উপস্থিত সবাই অমৃতসরীর বিজয় এবং কাদিয়ানীদের পরাজয় ও লাঞ্ছনা প্রত্যক্ষ করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের অন্যতম মালেরকোটলার মুফতীর ভাষ্য হ’ল, ‘সাধারণ মুসলিম জনতা এমনকি হিন্দুরাও যারা ব্যাপক সংখ্যায় এই বাহাছে অংশগ্রহণ করেছিলেন তারা সবাই এই মত প্রকাশ করে যে, মাওলানা ছানাউল্লাহ ছাহেব বিজয়ী হয়েছেন এবং কাদিয়ানী গোষ্ঠী পরাজিত হয়েছে। আর এই বাহাছের উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষ যেন কাদিয়ানীদের ধোঁকায় না পড়ে, যা হাছিল হয়ে গেছে’ (সাপ্তাহিক আহলেহাদীছ, অমৃতসর, ২০শে মে ১৯২১)।[6]
উল্লেখ্য যে, মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব খালজী ‘মারকাযী জমঈয়তে আহলেহাদীছ হিন্দ’-এর সেক্রেটারী থাকাকালীন অমৃতসরীর অনন্য খিদমতের স্মারক হিসাবে ১৯৯৩ সালে এখানে ‘মা‘হাদু আবিল অফা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী’ নামে একটি দ্বীনী প্রতিষ্ঠান কায়েম করেন।[7]
৯. পেশাওয়ার ও গুজরানওয়ালার মুনাযারা (ফেব্রুয়ারী ১৯২৬) :
১৯২৬ সালের শুরুতেই মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী হজ্জ পালনের ঘোষণা দেন এবং এর জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে শুরু করেন। কিন্তু সে সময়েও তিনি কাদিয়ানীদের ভ্রান্ত আক্বীদা খন্ডনে প্রচন্ড ব্যস্ত থাকেন। যেমন ১৯২৬ সালের ১৬, ১৭ ও ১৮ই ফেব্রুয়ারী কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে পেশাওয়ারে অনুষ্ঠিত জালসায় তিনি বক্তব্য প্রদান করেন এবং তাদের মুখে তালা লাগিয়ে দেন। অনুরূপভাবে তিনি একই বছরের ২৭ ও ২৮শে ফেব্রুয়ারী খ্রিস্টান ও কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে ‘আঞ্জুমানে আহলেহাদীছ গুজরানওয়ালা’ আয়োজিত বার্ষিক জালসায় ‘খতমে নবুঅত’ বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। জালসায় প্রায় ৮/১০ হাযার মানুষ উপস্থিত ছিল। অতঃপর বিতর্কের জন্য কাদিয়ানীদেরকে সুযোগ দেওয়া হয়। মৌলভী গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী মুনাযির হিসাবে সামনে আসে। অমৃতসরীর বক্তব্যের কোন যুক্তিগ্রাহ্য উত্তর দেওয়া তো দূরের কথা সে অমৃতসরীর জোরালো প্রমাণ উপস্থাপন দেখে ঘাবড়ে যায়। এর ফলে ভরা মজলিসে ৬ জন কাদিয়ানী কাদিয়ানী মতবাদ থেকে তওবা করে ইসলাম গ্রহণ করে। গুজরানওয়ালা শহর ও এর আশপাশের এলাকায় এর দারুণ প্রভাব পড়ে।[8]
১০. রাওয়ালপিন্ডির মুনাযারা (ডিসেম্বর ১৯২৯) :
১৯২৯ সালের ৯, ১০, ১১ ও ১২ই আগস্ট চারদিন ব্যাপী মাসূরীতে জালসা অনুষ্ঠিত হয়। মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী সহ দেশের খ্যাতিমান আলেম-ওলামা এতে অংশগ্রহণ করেন। জালসা শেষে অমৃতসরী মাসূরী থেকে প্রত্যাবর্তনের পথে আম্বালা যেলায় অবতরণ করেন। এ সময় কাদিয়ানীরা রাওয়ালপিন্ডীতে হৈচৈ ও গন্ডগোল সৃষ্টি করে। সেকারণ মুসলমানদের পীড়াপীড়িতে তিনি সেখানে মুনাযারার জন্য যান। ১৯২৯ সালের ২৮শে ডিসেম্বর সেখানে আম জালসা অনুষ্ঠিত হয়। অমৃতসরী তাতে অংশগ্রহণ করেন। পরের দিন ২৯শে ডিসেম্বর অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মাদ ইসমাঈল খান-এর বাসায় সকাল ৯-টায় কাদিয়ানীদের সাথে মুনাযারার জন্য বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শেষে বিকাল ৩-টা থেকে ৪-টা পর্যন্ত মুনাযারা হয়। ‘প্রতিশ্রুত মাসীহ’ বিষয়ে অমৃতসরী কাদিয়ানী তার্কিককে জিজ্ঞেস করেন, মির্যা গোলাম আহমাদ নিজেই দাবী করেছিলেন যে, তিনি ১৩৩৫ হিজরী পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন। তাহলে এর ৯ বছর পূর্বে ১৩২৬ হিজরীতে কেন তিনি মৃত্যুবরণ করলেন? কাদিয়ানী তার্কিক এ প্রশ্ন শুনে লা-জওয়াব হয়ে যায়। অনুরূপভাবে অমৃতসরী মির্যার প্রতিশ্রুত মাসীহ হওয়ার দাবীকে যৌক্তিকভাবে খন্ডন করেন। ফলে কাদিয়ানী তার্কিক স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে, ‘ইলহামপ্রাপ্ত ব্যক্তির ইলহাম কোন দলীল নয়’। তখন অমৃতসরী বললেন, যদি ইলহামপ্রাপ্ত ব্যক্তির ইলহাম দলীল না হয়ে থাকে তাহ’লে তো কেচ্ছা এখানেই খতম। আর গোলাম আহমাদের প্রতিশ্রুত মাসীহ হওয়ার দাবীও বাতিল। আপনার হাত বাড়িয়ে দিন। মুছাফাহা করি’ (সাপ্তাহিক আহলেহাদীছ, অমৃতসর, ১১ই অক্টোবর ১৯২৯)।[9]
১১. বাটালার জালসা ও মুনাযারা (নভেম্বর ১৯৩০ ও ফেব্রুয়ারী ১৯৩২) :
১৯৩০ সালের ১৫ই নভেম্বর বাটালায় ইসলামী জালসা অনুষ্ঠিত হয়। বাটালা ও কাদিয়ানের দূরত্ব মাত্র ১১ মাইল। এজন্য কাদিয়ান ও এর আশপাশের বহু মানুষ এই জালসায় অংশগ্রহণ করে। পূর্বেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল যে, এতে কাদিয়ানীরা মতবিনিময় করার সময় পাবেন। জালসায় কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে অমৃতসরী জ্বালাময়ী ভাষণ প্রদান করেন। অতঃপর তাদের সাথে ১ ঘণ্টা বাহাছ হয়। একজন সংবাদদাতা লিখেছেন, ‘এটি শুধু বাহাছই ছিল না। বরং এর ফলে কাদিয়ান পর্যন্ত কেঁপে উঠেছিল। কাদিয়ানী তার্কিক তার সঙ্গী-সাথী সহ প্রত্যেক পদে পদে পরাজিত হচ্ছিল। জনগণ একবাক্যে চিৎকার করে বলে ওঠে যে, বিতর্কে আহলেহাদীছ জামা‘আতের বিজয় হয়েছে। ফালিল্লাহিল হাম্দ(সাপ্তাহিক আহলেহাদীছ, অমৃতসর, ৩১শে নভেম্বর ১৯৩০)।[10]
১৯৩২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারী বাটালায় আরেকটি মুনাযারা অনুষ্ঠিত হয়। এই বিতর্কের কারণ ছিল ‘কুরআন ও কাদিয়ান’ শীর্ষক মাওলানা অমৃতসরীর একটি বক্তব্য। তিনি তাঁর সেই বক্তব্যে সরস ভঙ্গিতে বলেছিলেন যে, মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী নিজেকে দ্বিতীয় মুহাম্মাদ দাবী করতেন। কিন্তু তার সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি। যা মুহাম্মাদ (ছাঃ) পূর্ণ করে এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। অতঃপর গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর পরস্পর বিরোধী বক্তব্যের আলোকে তার বয়স নিয়ে কাদিয়ানী তার্কিক গোলাম রসূল রাজিকীর সাথে অমৃতসরীর বাহাছ অনুষ্ঠিত হয়। অমৃতসরী মির্যার গ্রন্থ সমূহ থেকে তার বয়স সম্পর্কে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য তুলে ধরলে কাদিয়ানী তার্কিক রাজিকী এগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে ব্যর্থ হয়। ফলে পরাজয় স্বীকার করে অবনতমস্তকে রাজিকীকে বাড়ী ফিরতে হয় (সাপ্তাহিক আহলেহাদীছ, অমৃতসর, ৪ঠা মার্চ ১৯৩২)।[11]
১২. ওয়াযীরাবাদের মুনাযারা (এপ্রিল ১৯৩২) :
১৯৩২ সালের ১০ই এপ্রিল রবিবার ওয়াযীরাবাদে মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী ও একজন নতুন কাদিয়ানী তার্কিকের মাঝে এ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমে কাদিয়ানী তার্কিক বক্তব্য প্রদান করেন এবং কুরআন মাজীদের কিছু আয়াতের বিকৃত ব্যাখ্যা প্রদান করে মির্যার নবুঅতের প্রমাণ হিসাবে সেগুলিকে উপস্থাপন করেন। অমৃতসরী এর জবাবে বলেন, যদি আপনার বক্তব্য সঠিক হয় তাহলে মির্যা কেন চূড়ান্ত ফায়ছালার জন্য মুবাহালার পথ বেছে নিলেন? এভাবে বুদ্ধিমত্তার সাথে অমৃতসরী বিতর্ককে মুবাহালার দিকে টেনে নিয়ে গেলেন। এতে কাদিয়ানী শিবিরে ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেল। তিন ঘণ্টা যাবৎ বিতর্ক চলল। কিন্তু কাদিয়ানী তার্কিক এর কোন সদুত্তর দিতে পারল না। অতঃপর অমৃতসরী মির্যার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, মির্যা দুনিয়াতে প্রতিশ্রুত মাসীহ-এর অবস্থানকাল ৪০ বছর বলেছেন। কিন্তু তিনি নিজেকে মাসীহ দাবী করার ১৮ বছর পর এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। সুতরাং তার নিজের নির্ধারিত মানদন্ডের আলোকেই তিনি মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হ’লেন। কাদিয়ানী তার্কিকের জন্য এটা ছিল দ্বিতীয় চপেটাঘাত। এরও কোন উত্তর দিতে তিনি সক্ষম হলেন না। এতে বিচারক ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক মাওলানা যাফর আলী খান। তিনি অমৃতসরীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন (সাপ্তাহিক আহলেহাদীছ, অমৃতসর, ৬ই মে ১৯৩২)।[12]
(চলবে)
ড. নূরুল ইসলাম
ভাইস প্রিন্সিপাল, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
[1]. মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী, ফাতিহে কাদিয়ান, পৃঃ ২-৬৮; ইহতিসাবে কাদিয়ানিয়াত ৮/২০০-২৬৬।
[2]. অমৃতসরী, ফাতহে রববানী দর মুবাহাছা কাদিয়ানী, পৃঃ ২-৮৮; ইহতিসাবে কাদিয়ানিয়াত ৮/২৭৬-৩৬২; ফিৎনায়ে কাদিয়ানিয়াত, পৃঃ ১২০-১২২।
[3]. ফিৎনায়ে কাদিয়ানিয়াত, পৃঃ ১২২-১২৩। গৃহীত : সাপ্তাহিক আহলেহাদীছ, অমৃতসর, ১৫ই ডিসেম্বর ১৯১৬।
[4]. ফিৎনায়ে কাদিয়ানিয়াত, পৃঃ ১২৪-১২৫।
[5]. ঐ, পৃঃ ১২৬-১২৭।
[6]. ঐ, পৃঃ ১৫৪-১৫৬।
[7]. আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগূক্ত, পৃঃ ২৭৩।
[8]. সীরাতে ছানাঈ, পৃ: ৪১৫; ফিৎনায়ে কাদিয়ানিয়াত, পৃঃ ১৮৭-১৯০।
[9]. ফিৎনায়ে কাদিয়ানিয়াত, পৃঃ ১৯৬-১৯৮; আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ২৮৪-২৮৫।
[10]. ফিৎনায়ে কাদিয়ানিয়াত, পৃঃ ২০০-২০১; আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ২৮৬।
[11]. ফিৎনায়ে কাদিয়ানিয়াত, পৃঃ ২০২-২০৩; আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ২৮৬।
[12]. ফিৎনায়ে কাদিয়ানিয়াত, পৃঃ ২০৩-২০৪।