পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ । পর্ব ৭। পর্ব ৮। পর্ব ৯। শেষ পর্ব ।
রাজনীতি ও অমৃতসরী :
মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী যখন তাঁর দ্বীনী দায়িত্বসমূহ পালনের জন্য বক্তৃতা ও লেখনী জগতে পদার্পণ করেন, তখন বৃটিশ শাসনের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য তিনি মুসলমানদেরকে ঐ সকল রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করতেন, যেগুলি মুসলমানদের সমস্যা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করত। দেশকে স্বাধীন করার জন্য তিনি শুধু মানুষদেরকে উৎসাহ প্রদান করেই ক্ষান্ত হননি; বরং এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত সকল রাজনৈতিক আন্দোলনে সরাসরি নিজে অংশগ্রহণ করেছেন। এজন্যেই জিহাদ আন্দোলনের অন্যতম নেতা আমীরুল মুজাহিদীন মাওলানা ফযলে ইলাহী ওয়াযীরাবাদী (১৮৮২-১৯৫১ হিঃ) ও তাঁর মুজাহিদ বাহিনীকে তিনি পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করতেন। মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধীর (১৮৭২-১৯৪৪) আন্দোলনের প্রতিও তিনি সহানুভূতিশীল ছিলেন।[1]
দেশের স্বাধীনতা অর্জন ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষার জন্য তিনি প্রথমতঃ তৎকালীন সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল কংগ্রেসে যোগদান করেন। মাওলানা আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী বলেন,ساهم في الحركة السياسية الوطنية، وشارك في المؤتمر الوطني العام، ‘তিনি দেশের রাজনৈতিক আন্দোলনে অবদান রাখেন এবং কংগ্রেসে শরীক হন’।[2] পদ-পদবীর জন্য তিনি কখনো রাজনীতি করেননি। একবার কংগ্রেস তাঁকে অমৃতসর যেলার সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।[3]
কংগ্রেসে যোগদানের পর তিনি উপলব্ধি করেন যে, দলটি মুসলমানদের ন্যায্য অধিকার প্রদানে মোটেই আন্তরিক নয়। বৃটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ ভারতে রাম রাজত্ব কায়েম করতে বদ্ধপরিকর। বিশেষতঃ ‘নেহেরু রিপোর্ট’-এ (১৯২৮) মুসলমানদের সম্পর্কে কংগ্রেসের অবস্থান পরিষ্কার হওয়ার পর তিনি কংগ্রেসের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন।[4] অতঃপর মুসলিম লীগে যোগদান করেন এবং আমৃত্যু এতে শামিল থাকেন।[5]
১৯২০ সালে হাকীম আজমল খাঁর সভাপতিত্বে অমৃতসরে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের এক আড়ম্বরপূর্ণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহ (১৮৭৬-১৯৪৮) মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এই অধিবেশনের অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি ছিলেন মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী।[6]
কায়েদে আযম মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহ মুসলিম লীগের দায়িত্ব গ্রহণের পর অমৃতসরী মুসলিম লীগে সক্রিয় হন। লেখনী ও বক্তৃতার মাধ্যমে তিনি মুসলিম লীগকে ফলপ্রসূ পরামর্শ প্রদান করতে থাকেন।[7]
১৯৩০ সালের ২৯শে ডিসেম্বর এলাহাবাদে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের বার্ষিক অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে আল্লামা মুহাম্মাদ ইকবাল ভারতের মুসলমানদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের পরিকল্পনা পেশ করেন।[8] ছানাউল্লাহ অমৃতসরী তাঁর এ পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে সাপ্তাহিক ‘আহলেহাদীছ’ পত্রিকায় এর সমর্থনে প্রবন্ধ লিখেন এবং বক্তৃতায় উক্ত পরিকল্পনার সাথে ঐক্যমত পোষণ করতঃ এর পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলমানদেরকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।[9]
১৯৩৭ সালে আল্লামা মুহাম্মাদ ইকবাল মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহকে ‘কায়েদে আযম’ হিসাবে মুসলিম লীগের দায়িত্বভার গ্রহণের আহবান জানান। জিন্নাহ তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে মুসলিম লীগে নতুন প্রাণ সঞ্চার করা শুরু করেন। এর ফলে মুসলিম লীগের প্রতি অমৃতসরীর আকর্ষণ বাড়তে থাকে। ১৯৩৮ সালে মুসলিম লীগ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আওয়ায তুললে আর্যসমাজী পত্রিকা ‘আরিয়া মুসাফির’ একে অবাস্তব স্বপ্ন বলে আখ্যা দেয়। এর জবাবে মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী সাপ্তাহিক ‘আহলেহাদীছ’ পত্রিকায় লিখেন, ‘ইসলাম ধর্ম আমাদেরকে শিখিয়েছে যে, আল্লাহর রহমত হ’তে নিরাশ হওয়া কুফুরী। এজন্য আমরা এই স্বপ্ন সত্যে পরিণত হওয়ার ব্যাপারে নিরাশ হতে পারি না। আল্লাহ করুন এই স্বপ্ন যেন সত্য হয়ে যায়’।[10]
১৯৪০ সালের ২৩শে মার্চ লাহোরে মুসলিম লীগের ঐতিহাসিক অধিবেশনে ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলসমূহে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। যা ‘লাহোর প্রস্তাব’ নামে পরিচিত। মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত অধিবেশনে মাওলানা মুহাম্মাদ ইবরাহীম মীর শিয়ালকোটী, মাওলানা হাফেয মুহাম্মাদ গোন্দলবী, মাওলানা ফযলে ইলাহী ওয়াযীরাবাদী প্রমুখ খ্যাতিমান আহলেহাদীছ আলেম-ওলামা উপস্থিত ছিলেন। এই অধিবেশনের পরেই পাকিস্তান আন্দোলনের সূচনা হয়। অসুস্থতার কারণে মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী এই অধিবেশনে যোগ দিতে পারেননি। কিন্তু তিনি তাঁর ‘আহলেহাদীছ’ পত্রিকায় পাকিস্তান আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং আহলেহাদীছ আলেমদেরকে এ আন্দোলনে শরীক হওয়ার আহবান জানান। তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে মাওলানা আব্দুল্লাহ ছানী, মাওলানা আলী মুহাম্মাদ ছামছাম, মাওলানা হাফেয আব্দুল খালেক ছিদ্দীকী, মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ গুরুদাসপুরী, মাওলানা ইয়াকুব ভানবাটরী, মাওলানা আব্দুল্লাহ মি‘মার, মাওলানা আহমাদুদ্দীন গাখাড়বী, মাওলানা আব্দুর রহীম আশরাফ, শায়খুল হাদীছ মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ বীরুওয়ালাবী প্রমুখ তরুণ আহলেহাদীছ আলেম পাকিস্তান আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন।[11]
১৯৪৬ সালে মাওলানা মুহাম্মাদ ইবরাহীম মীর শিয়ালকোটীর সভাপতিত্বে কলকাতায় আহলেহাদীছ জামা‘আতের এক বিশাল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এতে অমৃতসরী মুসলিম লীগের সাথে আহলেহাদীছ জামা‘আতের সম্পৃক্ততা ঘোষণা করেন। তাঁর এই ঘোষণায় আহলেহাদীছরা অত্যন্ত খুশী হয় এবং পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে ওঠে।[12]
তিনি খেলাফত আন্দোলনেও জড়িত ছিলেন। ১৯১৯ সালে লাক্ষ্ণৌয়ে খেলাফত আন্দোলনের প্রথম মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। দেশের নেতৃস্থানীয় ও প্রসিদ্ধ ব্যক্তিবর্গের সাথে তিনি এতে অংশগ্রহণ করেন।[13]
রাজনৈতিক বিষয়ে মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর অবস্থান ছিল ন্যায়সঙ্গত ও ভারসাম্যপূর্ণ; কিন্তু দুঃসাহসী। ১ম বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটার পর যখন খেলাফত ও স্বাধীনতা আন্দোলন সমূহ যোরদার হয়, তখন তিনি তাঁর সাপ্তাহিক ‘আহলেহাদীছ’ পত্রিকার দুই পৃষ্ঠা রাজনৈতিক সংবাদ পর্যালোচনার জন্য বরাদ্দ রাখেন। এ সময় তিনি বড় বড় রাজনৈতিক সভা-সম্মেলনেও অংশগ্রহণ করেন এবং বড় বড় রাজনৈতিক নেতারা যখন ভয়ে মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিলেন, তখন তিনি চরম দুঃসাহসিকতার সাথে বক্তৃতা দিয়ে তাদের ভীতিমিশ্রিত নীরবতা ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। তাইতো লাহোর থেকে প্রকাশিত ‘সিয়াসাত’ পত্রিকা রাজনৈতিক বিষয়ে পাঞ্জাবের আলেমগণের সাহসী ভূমিকা প্রসঙ্গে লিখেছে, ‘আখবারে আহলেহাদীছ, অমৃতসর পত্রিকার সম্পাদক আবুল অফা ছানাউল্লাহ ছাড়া বিশেষ কোন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা মুশকিল। তিনিই সভা-সম্মেলন সমূহে সময়ে সময়ে (দেশের স্বাধীনতা ও ইংরেজ সরকারের স্বৈরাচারী নীতির বিরুদ্ধে) বিভিন্ন বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেন’।[14]
মোটকথা, দেশের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা সত্ত্বেও তাঁর মধ্যে দ্বীন পুনর্জীবিতকরণের জায্বা ও কর্মতৎপরতা এমনভাবে প্রবল ছিল যে, তিনি রাজনৈতিক নেতার পরিবর্তে একজন ধর্মীয় নেতা ও পথ-প্রদর্শক হিসাবেই বেশী পরিচিত ও প্রসিদ্ধ হন।[15] অন্য রাজনীতিবিদদের মতো রাজনীতির জন্য তিনি দ্বীনকে কুরবানী দেননি। বরং দেশে ইসলামী শাসনের বাস্তবায়ন চেয়েছেন। তিনি বলতেন, ‘ইসলামে রাজনীতি বলতে বুঝায় মুসলমানরা যে দেশে তাদের সরকার কায়েম করবে, সেই সরকার যেন ইসলামী আইনের অধীনস্থ থাকে, শরী‘আতের নীতির উপরে চলে এবং দেশে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করে’। এজন্য তিনি পাকিস্তান সরকারকে বারবার দেশে শারঈ আইন বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন। কারণ পাকিস্তান ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[16]
হজ্জব্রত পালন :
১৯২৬ সালে (১৩৪৪ হিঃ) সঊদী সরকারের রাজকীয় অতিথি হিসাবে তিনি হজ্জব্রত পালন করেন। তাঁর সাথে ৩৮৩ জনের এক বিশাল কাফেলা ছিল। ১৯২৬ সালের ২৬শে এপ্রিল তিনি অমৃতসর থেকে রওয়ানা হন এবং ৩০শে এপ্রিল করাচী থেকে জাহাজে চড়ে হেজাযের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।
সঊদী বাদশাহ আব্দুল আযীয হজ্জ উপলক্ষ্যে উক্ত সনে একটি ইসলামী সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। মুসলিম বিশ্বের ৬০ জন প্রতিনিধিকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়। হিন্দুস্থান থেকে তিনটি দলের প্রতিনিধিগণ এতে অংশগ্রহণ করেন। মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী ‘অল ইন্ডিয়া আহলেহাদীছ কনফারেন্স’-এর প্রতিনিধি হিসাবে সম্মেলনে যোগদান করেন। সম্মেলনে তিনি আরবীতে দু’টি বক্তৃতাও প্রদান করেন। বাদশাহ আব্দুল আযীয তাঁকে অত্যন্ত সম্মান করেন এবং তাঁর সাথে কয়েকবার বিশেষভাবে মিলিত হন। সম্মেলনে অমৃতসরীর প্রস্তাব অনুযায়ী হজ্জ সম্পর্কিত আলাদা দফতর প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। হজ্জ পালন শেষে ১৯২৬ সালের ২০শে আগস্ট তিনি অমৃতসরে ফিরে আসেন।[17]
হত্যা চেষ্টা :
১৯৩৭ সালের ১-৩রা নভেম্বর ব্রেলভী হানাফীরা ‘উরসে ইমাম আবু হানীফা’ নামে অমৃতসরের মসজিদে মিয়াঁ মুহাম্মাদ জানে একটি জালসা করে। এতে ব্রেলভী বক্তারা সাধারণভাবে তাওহীদপন্থীদের বিরুদ্ধে এবং বিশেষভাবে মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করে এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে। এমনকি বক্তারা একথাও বলে যে, ‘ওহাবীকে হত্যাকারী শহীদের ছওয়াব পাবে’, ‘যে ব্যক্তি ওহাবীর মাথায় একটি জুতা মারবে সে একটি হূর পাবে’ ইত্যাদি।
এর জবাবে অমৃতসরের আহলেহাদীছ জামা‘আত ৪ঠা নভেম্বর (১৯৩৭) মসজিদে মুবারকে (কাটরা মোহান সিং, অমৃতসর) জালসার আয়োজন করে। ঐদিন বিকেল ৪-টার দিকে মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী তদীয় পৌত্র মৌলবী রেযাউল্লাহ ও দু’জন সঙ্গীসহ জালসায় অংশগ্রহণের জন্য টাঙ্গায় (ঘোড়াবাহিত দুই চাকার গাড়ি) চড়ে মসজিদে মুবারকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। সেখানে পৌঁছে মসজিদের বাইরে টাঙ্গা থেকে নামার সাথে সাথেই কামার বেগ নামক ২০/২২ বছরের এক ব্রেলভী তরুণ ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ শ্লোগান দিয়ে তাঁর মাথার পেছনের ডান অংশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে সজোরে আঘাত করে। যার ফলে তার পাগড়ি ও শক্ত টুপি কেটে যায় এবং মাথায় গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়। আঘাত পাওয়া মাত্রই অমৃতসরী হামলাকারীর দিকে ফিরেন। ইতিমধ্যে সফরসঙ্গী বাবু আব্দুল মজীদ (সেক্রেটারী, আঞ্জুমানে আহলেহাদীছ, অমৃতসর) ঘাতকের হাত ধরে ফেলেন। ততক্ষণে ঘাতক অমৃতসরীর চেহারায় আরো একটি আঘাত করে। এতে তিনি কপাল থেকে নাক পর্যন্ত মুখের বাম অংশেও আঘাত পান এবং মাটিতে পড়ে যান। তারপর দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে একটি দোকানে গিয়ে দাঁড়ান। ক্ষতস্থান থেকে প্রচুর রক্ত ঝরছিল। চেহারা ও কাপড় রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল। এরই মধ্যে বাবু আব্দুল মজীদ ঘাতকের হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাকে শক্তভাবে পাকড়াও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু ঘাতকের কতিপয় সহযোগী তাকে তার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পালাতে সাহায্য করে।[18]
এরপর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ক্ষতস্থানে সেলাই দেওয়ার পর হাসপাতালে উপযুক্ত জায়গা খালি না হওয়ায় তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। ঐদিন সারারাত তিনি ব্যথায় ঘুমাতে পারেননি। মাসখানিক পর তাঁর ক্ষত সেরে ওঠে। প্রায় তিন মাস পর ঘাতক কামার বেগকে কলকাতা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে ১৯৩৮ সালের ২৭শে জানুয়ারী অমৃতসরে নিয়ে আসে। ঐ বছরের ৬ই এপ্রিল আদালত তাকে ৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে।[19]
উল্লেখ্য যে, ঘাতক কামার বেগ জেলখানায় থাকা অবস্থায় অমৃতসরী তার অসহায় ও দরিদ্র পরিবারকে নিয়মিত মাসিক অর্থ সাহায্য করতেন।[20] পৃথিবীর ইতিহাসে এমন উদারতা বিরল নয় কি?
একমাত্র পুত্রসন্তানের শাহাদাত লাভ :
মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর জীবনের গোধূলিলগ্নে দেশ বিভাগের সময় ঘনিয়ে এলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তীব্র আকার ধারণ করে। শিখ ও হিন্দু সন্ত্রাসীরা পূর্ব পাঞ্জাবের মুসলমানদের পাড়া-মহল্লা ও বাড়িতে প্রবেশ করে তাদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করতে এবং তাদের ধন-সম্পদ লুট করতে শুরু করে। এমত পরিস্থিতিতে শান্তির বার্তাবাহক মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী দাঙ্গা থামানোর প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালান। অমৃতসরে হিন্দু, মুসলিম ও শিখ নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে শান্তি কমিটি সমূহ গঠন করা হয়। তিনি নিজে এসব কমিটির সদস্য হন এবং অন্যদেরকে সদস্য করেন। শান্তি কমিটির সভা-সমাবেশে শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ে জোরালো বক্তব্য প্রদান করেন। ব্যস্ততার কারণে কোন সমাবেশে নিজে উপস্থিত হতে না পারলে স্বীয় পুত্র মৌলভী আতাউল্লাহকে পাঠিয়ে দিতেন। শহরে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি কখনো পায়ে হেঁটে আবার কখনো টাঙ্গায় চড়ে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বক্তৃতা করতেন এবং মানুষজনকে শান্ত থাকার আহবান জানাতেন। শুধু তাই নয়, তিনি নিজ খরচে হাযার হাযার পোস্টার ও হ্যান্ডবিল ছেপে জনগণের মাঝে বিতরণের ব্যবস্থা করেন। শান্তির বার্তাবাহী এসব পোস্টার শহরের দেওয়ালে দেওয়ালে লাগানো হয়। কিন্তু দাঙ্গা থামানোর যাবতীয় প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার উপক্রম হলে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তিনি পাকিস্তানে হিজরতের সংকল্প করেন। এ বিষয়ে আহলেহাদীছ জামা‘আতের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সাথে যরূরী পরামর্শ বৈঠক করে হিজরতের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ পূর্বক বাড়িতে ফিরে আসেন।
অমৃতসরের যে গলিতে মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর বাড়ি অবস্থিত ছিল সেখানকার মহল্লার মুসলমানদের বাড়ি-ঘর পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব তাঁর একমাত্র পুত্র মৌলভী আতাউল্লাহর উপর ন্যস্ত ছিল। তিনি দিন-রাত মহল্লা পাহারা দিতেন। ১৯৪৭ সালের ১৩ই আগস্ট উক্ত গলির নিকট দিয়ে হিন্দু ও শিখদের একটি দল অতিক্রম করার সময় জনৈক সন্ত্রাসী হাতবোমা নিক্ষেপ করে। বোমাটি মহল্লা পাহারার দায়িত্বে নিয়োজিত মৌলভী আতাউল্লাহর একেবারে কাছে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। অমৃতসরী এ সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেন এবং দু’চারজন ব্যক্তির সহযোগিতায় তাকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। কিন্তু কিছুদূর যেতে না যেতেই তাঁর কলিজার টুকরা একমাত্র পুত্রসন্তান মৌলভী আতাউল্লাহ পবিত্র রামাযান মাসে ছিয়ামরত অবস্থায় আছরের সময় শাহাদাতবরণ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন। ২৬শে রামাযান ১৩৬৬ হিজরী মোতাবেক ১৩ই আগস্ট ১৯৪৭ সালে এই হৃদয়বিদারক ও মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। মাওলানা অমৃতসরী পুত্রশোকে ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ে আহলেহাদীছ জামে মসজিদে তাঁর জানাযার ছালাত পড়ান। দাফন-কাফনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাত্র ১০জন ব্যক্তিকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। অতঃপর নিজ হাতে সন্তানের লাশ দাফন করে বুকে ধৈর্যের পাথর চাপা দিয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন। অতঃপর শুধু পানি দিয়ে ইফতার করেন।[21]
উল্লেখ্য যে, দেশ বিভাগের সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অমৃতসর শহরে কোন আলেমকে হত্যা ছিল এটাই প্রথম।[22]
দেশ ত্যাগ :
মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর বাড়ি সন্ত্রাসীদের মহল্লাতেই অবস্থিত ছিল। এজন্য শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শে তিনি ঐদিন সন্ধ্যার পরপরই স্ত্রী, পৌত্র-পৌত্রী ও তাদের সন্তানদের নিয়ে স্মৃতির মিনার প্রিয় জন্মভূমি অমৃতসরকে চিরদিনের জন্য বিদায় জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়েন এবং অন্যত্র রাত্রি যাপন করেন। বিদায়ের সময় তাঁর ও পরিবারের সদস্যদের যার গায়ে যে পোষাক ছিল সেটা পরেই তারা বের হন। তখন অমৃতসরীর পকেটে ছিল মাত্র ৫০ রূপিয়া। বিদায়ের সময় তারা কিছুই সঙ্গে নেওয়ার সুযোগ পাননি। লক্ষ লক্ষ টাকার আসবাবপত্র তথা প্রেস, লাইব্রেরী, অলংকার, নগদ অর্থ, গৃহস্থ জিনিসপত্র সব কিছুই নিজ নিজ জায়গায় পড়ে রইল।
তারা বাড়ি ছাড়া মাত্রই ওঁৎ পেতে থাকা লুটেরার দল বাড়িতে যা কিছু ছিল সব লুণ্ঠন করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। দুর্যোগের ঘনঘটাপূর্ণ এরূপ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে তিনি ও তাঁর পরিবার পরদিন সেনাছাউনিতে গিয়ে পৌঁছেন। অতঃপর বহু বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে নিদারুণ কষ্ট স্বীকার করে তারা ১৪ই আগস্ট লাহোরে পৌঁছেন। সেখানে তিনি তাঁর মেয়ের বাড়িতে কয়েকদিন অবস্থান করেন।[23]
অমৃতসরীর লাইব্রেরী রক্ষায় মাওলানা আবুল কালাম আযাদের প্রচেষ্টা :
মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর ব্যক্তিগত লাইব্রেরী মূল্যবান বই-পুস্তকে ঠাসা এক সমৃদ্ধ লাইব্রেরী ছিল। এটি ভারতের বিশেষত পাঞ্জাবের অন্যতম বড় লাইব্রেরী ছিল। তিনি বহু অর্থ ব্যয়ে তিলে তিলে পরম যত্নে লাইব্রেরীটিকে গড়ে তুলেছিলেন। বহু দুর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থের এক অনন্য সংগ্রহশালা ছিল এটি। জীবনীকার মাওলানা আব্দুল মজীদ খাদেম সোহদারাভী বলেন, ‘কিতাব সমূহ ভস্মীভূত হওয়ায় যে আঘাত মাওলানা পেয়েছিলেন, তা একমাত্র পুত্রসন্তানের শাহাদাতের চেয়ে কম ছিল না। এই কিতাবগুলি মাওলানার জীবনের অমূল্য সম্পদ ছিল। এগুলির মধ্যে কিছু কিতাব তো এতো দুষ্প্রাপ্য ছিল যে, সেগুলি পাওয়া দুষ্কর ছিল। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এজন্য তিনি চিন্তান্বিত ছিলেন’।[24]
উপমহাদেশের খ্যাতনামা ঐতিহাসিক মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক ভাট্টী বলেন, ‘তিনি লাইব্রেরীর জন্য সবচেয়ে বেশী আফসোস করতেন। পুত্রের মৃত্যুতে আফসোসকারীদের তিনি বলতেন, তাকে তো মৃত্যুবরণ করতেই হ’ত। সে আমার আগে মৃত্যুবরণ করত অথবা পরে। আসল ট্রাজেডি তো এই যে, কিতাবগুলি ধ্বংস হয়ে গেছে’।[25]
স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মাওলানা আবুল কালাম আযাদ অমৃতসরীর লাইব্রেরীর মহামূল্যবান বই-পুস্তক রক্ষার জন্য তাঁর জনৈক বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে দিল্লী থেকে অমৃতসরে পাঠিয়েছিলেন। তিনি তাঁকে বলেছিলেন, ‘মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী যেখানেই যেতে চান তাঁর লাইব্রেরীর বই-পুস্তক তুমি সযত্নে সেখানেই পৌঁছিয়ে দিবে’। কিন্তু তিনি অমৃতসরে পৌঁছার পূর্বেই সন্ত্রাসীদের হাতে লাইব্রেরী ধ্বংস হয়ে যায়।[26]
পাকিস্তানে হিজরত :
মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট (২৭শে রামাযান ১৩৬৬ হিঃ) পাকিস্তানে হিজরত করেন এবং লাহোরে পৌঁছে কয়েকদিন তাঁর মেয়ের বাড়িতে অবস্থান করেন। এখানে দলে দলে লোকজন এসে তাঁকে সমবেদনা জানায়। মাওলানা মুহাম্মাদ ইসমাঈল সালাফীসহ আহলেহাদীছ জামা‘আতের অন্যান্য দায়িত্বশীলবৃন্দ এ সংবাদ অবগত হওয়ার পর মাওলানা সালাফীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে। মাওলানা ইসমাঈল সালাফী তাঁকে গুজরানওয়ালায় যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। অমৃতসরী তাঁর আন্তরিক আহবানে সাড়া দিয়ে গুজরানওয়ালায় যান। সেখানে তাঁর বসবাসের জন্য আহলেহাদীছ জামে মসজিদের পাশে একটি ভাল বাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মর্মভেদী শোকে জর্জরিত থাকার পরেও তিনি জামা‘আতে ছালাত আদায়ের জন্য মসজিদে আসতেন। যদিচ এ সময় তাঁর জন্য চলাফেরা করা কঠিন ছিল। জীবনের উপর দিয়ে মরু সাইমুম সদৃশ ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাওয়ার পরেও এ সময় তাঁর চেহারায় বিষণ্ণতার ছাপ পরিলক্ষিত হত না। তিনি হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় নম্র ভাষায় মানুষের সাথে কথা বলতেন। মাওলানা ইসমাঈল সালাফীর পীড়াপীড়িতে জুম‘আর খুৎবাও দিতেন। তিনি প্রায় সাড়ে চার মাস গুজরানওয়ালায় অবস্থান করেন।
১৯৪৮ সালের জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝিতে তিনি সারগোদায় চলে যান। কারণ সেখানে তাঁর জন্য পাকিস্তান সরকার একটি বাড়ি ও প্রেসের ব্যবস্থা করেছিল। তিনি সেখানে নতুন উদ্যমে দাওয়াতী কাজ শুরু করার সংকল্প করেছিলেন। এমনকি এখান থেকে পুনরায় সাপ্তাহিক ‘আহলেহাদীছ’ পত্রিকা বের করার চিন্তা-ভাবনা পর্যন্ত করেছিলেন। এজন্য তিনি অমৃতসরের মতো এখানকার প্রেসের নামও দিয়েছিলেন ‘ছানাঈ বারকী প্রেস’। স্বীয় পৌত্র মৌলভী রেযাউল্লাহকে প্রেসের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু পত্রিকা বের করা আর হয়ে ওঠেনি।[27]
রোগ ও পরপারে যাত্রা :
সারগোদায় স্থানান্তরিত হওয়ার মাসখানিকের মধ্যেই ১৯৪৮ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারী তিনি প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হন। এর ফলে তিনি শ্রবণশক্তি ও বাকশক্তিহীন হয়ে পড়েন। এ সময়ে তিনি কাউকে চিনতে পারতেন না। চিকিৎসা করার পর তাঁর অসুস্থতা কিছু সময়ের জন্য সামান্য কমে এবং তিনি মানুষকে অল্প-বিস্তর চিনতে শুরু করেন। কিন্তু তখনও কথা বলতে পারতেন না। অবশেষে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হওয়ার ১ মাস ৩ দিন পর ১৯৪৮ সালের ১৫ই মার্চ এই ইলমী মহীরুহ নশ্বর পৃথিবী থেকে চির বিদায় গ্রহণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
১৯৪০ সালের ১৮ই অক্টোবর তিনি সাপ্তাহিক ‘আহলেহাদীছ’ পত্রিকায় এই আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন-
مرا جنازه جو نكلے تو اس طرح نكلے
كہ ہوں جنازے پہ سارے موحد و مومن
‘আমার জানাযা যেন এমন অবস্থায় বের হয় যে, জানাযায় উপস্থিত সবাই হবে তাওহীদপন্থী ও মুমিন’। তাঁর এই ইচ্ছা পূরণ হয়। সারগোদার মুমিন মুওয়াহ্হিদরা তাঁকে দাফন করে।
তিনি তাঁর জীবদ্দশায় এই কবিতাটিও বেশী পড়তেন-
مجھ كو ديارِ غير ميں مارا وطن سے دور
ركھ لى مرے خدا نے مرى بے كسى كى شرم
মর্মার্থ : ‘নিজ দেশ থেকে দূরে ভিন দেশে আমার মৃত্যু হয়েছে
আল্লাহ আমাকে আমার অসহায়ত্বের লজ্জা থেকে পরিত্রাণ দিয়েছেন’।[28]
এই কবিতাও সত্যে পরিণত হয়।
উল্লেখ্য যে, তাঁর মৃত্যুর তিন মাস পর তাঁর স্ত্রীও মারা যান।[29]
সন্তান-সন্ততি ও পৌত্র-পৌত্রী :
মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী ২১ বছর বয়সে ১৩১১ হিজরীতে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে বিবাহ করেন।[30] তাঁর এক ছেলে ও দুই মেয়ে। একমাত্র পুত্রসন্তান মৌলভী আতাউল্লাহ, যিনি ১৯৪৭ সালের ১৩ই আগস্ট দেশ বিভাগকালীন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় শহীদ হন। মেয়েদের মধ্যে একজনের নাম ছিল ফাতেমা।
মৌলভী আতাউল্লাহর চার পুত্র সন্তান। এরা হলেন যথাক্রমে রেযাউল্লাহ, যাকাউল্লাহ, বাহাউল্লাহ ও যিয়াউল্লাহ। পাকিস্তানে হিজরতের সময় এই চার পৌত্রই তাঁর সহযাত্রী ছিল। সারগোদায় তাদেরকে অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখা হত।
কাদিয়ানীদের ষড়যন্ত্রে ১৯৬২ সালে ইহসানুল্লাহ পারভেয নামে জনৈক কাদিয়ানী সাব-ইন্সপেক্টর দিন-দুপুরে আকস্মিক তাদের বাড়িতে (সারগোদা, পাকিস্তান) প্রবেশ করে দুই ভাই মৌলভী যাকাউল্লাহ ও মাস্টার বাহাউল্লাহকে হত্যা করে। মাওলানা রেযাউল্লাহ ভাইদের মধ্যে সবার বড় ছিলেন। তিনি জামে‘আ রহমানিয়া, দিল্লী ফারেগ আলেম ছিলেন। অমৃতসরে অবস্থানকালীন সময় পর্যন্ত দাদা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীকে তিনি ফৎওয়া লেখার কাজে সহযোগিতা করতেন। ১৯৭৫ সালের ২২শে এপ্রিল লাহোরের মিউ হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অমৃতসরীর কনিষ্ঠ পৌত্র যিয়াউল্লাহ এখন জীবিত আছেন কি-না তা আমরা জানতে পারিনি।[31]
[ক্রমশঃ]
ড. নূরুল ইসলাম
ভাইস প্রিন্সিপাল, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
[1]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ৩৬৭-৩৬৮; আব্দুল মুবীন নাদভী, আশ-শায়খ আল-আল্লামা আবুল অফা ছানাউল্লাহ আল-আমরিতসারী জুহূদুহু আদ-দা‘বিয়াহ ওয়া আছারুহু আল-ইলমিইয়াহ, পৃঃ ১৪৫-১৪৬।
[2]. নুযহাতুল খাওয়াতির ৮/১২০৫।
[3]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ৩৭২-৩৭৩।
[4]. ঐ, পৃঃ ৩৭৫।
[5]. ঐ, পৃঃ ৩৭৬।
[6]. মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ আনওয়ার, হামারে আসলাফ (গুজরানওয়ালা, পাকিস্তান : দারু আবিত ত্বইয়িব, ১ম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারী ২০১৭), পৃঃ ২৯৭, ৩০৫, ৩১০।
[7]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ৩৭৭।
[8]. হামারে আসলাফ, পৃঃ ২৮৭, ২৯৭, ৩১০; ড. মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, আল্লামা ইকবালের রাজনৈতিক চিন্তা ও কর্ম (ঢাকা : ঝিঙেফুল, ১ম প্রকাশ, ২০০৮), পৃঃ ২৮, ১১৫-১৩০।
[9]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ৩৭৮।
[10]. ফিৎনায়ে কাদিয়ানিয়াত আওর মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী, পৃঃ ৫৩। গৃহীত : আহলেহাদীছ, অমৃতসর, ৯ই সেপ্টেম্বর ১৯৩৮।
[11]. হামারে আসলাফ, পৃঃ ২৯৩।
[12]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ৩৭৬; হামারে আসলাফ, পৃঃ ৩১১।
[13]. ইয়াদে রফতেগাঁ, পৃঃ ৩৭১।
[14]. আহলেহাদীছ, ২রা ডিসেম্বর ১৯২১; ফিৎনায়ে কাদিয়ানিয়াত, পৃঃ ৫১-৫২।
[15]. ফিৎনায়ে কাদিয়ানিয়াত, পৃঃ ৫৪।
[16]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ৩৮২-৩৮৩।
[17]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ২৯৩-২৯৯; ফিৎনায়ে কাদিয়ানিয়াত, পৃঃ ৫৭-৫৮; ইয়াদে রফতেগাঁ, পৃঃ ৩৭২; মাওলানা সাঈদ আহমাদ চিনিওটী, মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী কা সফরনামায়ে হেজায : মাকতূবাত কী যবানী (ফায়ছালাবাদ : তারেক একাডেমী, ২০০৪), পৃঃ ২০, ৯৭-৯৮।
[18]. মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী, শাম‘য়ে তাওহীদ, রাসায়েলে ছানাইয়াহ, পৃঃ ১০৭-১০৮, ১৬৭-১৭১।
[19]. ঐ, পৃঃ ১৭০-১৭৭; ফিৎনায়ে কাদিয়ানিয়াত, পৃঃ ৫৮-৬০।
[20]. তাযকেরায়ে আবুল অফা, পৃঃ ১৬১।
[21]. বায্মে আরজুমন্দাঁ, পৃঃ ১৯০-১৯১; সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ৪৬৬-৪৭০।
[22]. বার্রে ছাগীর মেঁ আহলেহাদীছ কী সারগুযাশ্ত, পৃঃ ৫৬।
[23]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ৪৭০-৪৭২; আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৫০১-৫০২।
[24]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ৪৭১; আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৫০২।
[25]. বায্মে আরজুমন্দাঁ, পৃঃ ১৯২।
[26]. সাপ্তাহিক আল-ই‘তিছাম, লাহোর, পাকিস্তান, ৬৬/৪৭ সংখ্যা, ৫-১১ই ডিসেম্বর ২০১৪, পৃঃ ৩১; ফযলুর রহমান আযহারী, রাঈসুল মুনাযিরীন হযরত মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী, পৃঃ ২৮১।
[27]. বায্মে আরজুমন্দাঁ, পৃঃ ১৯২-১৯৩; সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ৪৭২-৪৭৩; ফিৎনায়ে কাদিয়ানিয়াত, পৃঃ ৬৩; আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৫০৩-৫০৪।
[28]. ভিন দেশে মৃত্যুবরণের পরেও বাহ্যতঃ কবি এখানে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছেন। কিন্তু দেশবাসী তার কদর না করার কারণে পরোক্ষভাবে তাদের প্রতি কবি প্রচন্ড ক্ষোভ ও উষ্মা প্রকাশ করেছেন।
[29]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ৪৭৮-৪৭৯; ফিৎনায়ে কাদিয়ানিয়াত, পৃঃ ৬৪।
[30]. নূরে তাওহীদ, পৃঃ ৪৭; সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ৪৬৯, টীকা-১ দ্র.।
[31]. ফিৎনায়ে কাদিয়ানিয়াত, পৃঃ ৬৫-৬৬; সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ৪৬৯ ও ৪৭২।