পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ । পর্ব ৭। পর্ব ৮। পর্ব ৯। শেষ পর্ব  

বাহাছ-মুনাযারায় মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী :

বিংশ শতকের প্রথমার্ধ বাহাছ-মুনাযারার যুগ ছিল। বিভিন্ন মাযহাব ও ভ্রান্ত ফিরক্বাগুলোর বিদ্বানগণ নিজ নিজ মাযহাব ও ফিরক্বার সত্যতা প্রমাণের জন্য পরস্পরকে বাহাছ-মুনাযারার চ্যালেঞ্জ জানাতে থাকতেন। এ সময় ব্রিটিশরা কট্টর হিন্দুত্ববাদী আর্য সমাজ ও কাদিয়ানী মতবাদের বীজ নিজ হাতে রোপণ করে ভারতবর্ষে বিতর্ক ও দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদের কলুষিত পরিবেশ সৃষ্টিতে নেপথ্য কারিগরের ভূমিকা পালন করেছিল। স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীকে দিয়ে তারা ‘সত্যার্থ প্রকাশ’ লিখিয়ে মুসলমানদের হৃদয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। কলকাতা থেকে লাহোর সমগ্র ভারত মুনাযারায় গুঞ্জরিত হচ্ছিল। কলকাতা, লাক্ষ্ণৌ, ব্রেলী, ভূপাল, আলীগড়, দিল্লী, দেওবন্দ, লাহোর সকল শহর থেকে মুনাযারার ঢঙে রচিত বইপত্র, পুস্তিকা ও প্রচারপত্র ছাপানো শুরু হয়ে গিয়েছিল। সমকালীন পত্র-পত্রিকাও সেই রঙে রঞ্জিত হয়েছিল।[1]

এরূপ দ্বন্দ্বমুখর পরিবেশে মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী বেড়ে ওঠেন ও যৌবনে পদার্পণ করেন। ফলে ছাত্রজীবনেই মুনাযারার প্রতি তাঁর আগ্রহ জন্মে। তিনি অমৃতসর ও ওয়াযীরাবাদে অধ্যয়নের সময় খ্রিস্টান পাদ্রীদের বক্তব্য শ্রবণ করতেন এবং তাঁর তরুণ মনে উদিত নানা প্রশ্ন, আপত্তি ও সংশয় তাদের নিকট উত্থাপন করতেন। সাধারণ মানুষ তাঁর আপত্তিগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনত।[2] মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ছানী খ্যাতিমান আহলেহাদীছ আলেম মাওলানা আহমাদুল্লাহ অমৃতসরীর নিকট ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর অধ্যয়নের সময়কার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘মাওলানা মুহাম্মাদ জামাল অমৃতসরী, যিনি আমার হাদীছের শিক্ষক, তিনি বলতেন, সে সময় আমি কুরআন মাজীদ হিফয করতাম আর মৌলভী ছানাউল্লাহ (যিনি তখনও ছাত্র ছিলেন) রামবাগের গির্জায় গিয়ে পাদ্রীর বক্তব্যগুলোর উপর আপত্তি তুলতেন। সাধারণ মানুষ তা মনোযোগ দিয়ে শুনত’।[3]

একবার অমৃতসরের হ’ল বাজারে পাদ্রী জেমস্ খ্রিস্টবাদ সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। তাঁর বক্তব্যের সারনির্যাস ছিল, ঈসা মাসীহ (আঃ) আল্লাহর বেটা এবং তাঁর মধ্যে আল্লাহর বেটা হওয়ার সকল গুণ বিদ্যমান রয়েছে। শত শত মুসলমান সেখানে উপস্থিত ছিল। এর মধ্যে অনেক আলেমও ছিলেন। সবাই নীরবে পাদ্রীর বক্তব্য শুনছিলেন। কিন্তু কেউ কোন প্রশ্ন বা প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছিলেন না। অমৃতসরীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি ১৫/১৬ বছরের প্রতিভাদীপ্ত তরুণ। তিনি সামনে এগিয়ে গিয়ে পাদ্রীকে বললেন, আমি একটি প্রশ্ন করার অনুমতি চাচ্ছি। পাদ্রী ছাহেব অমৃতসরীর বয়স অল্প হওয়ার কারণে কৌতূহলবশতঃ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘বৎস! তুমি যা জিজ্ঞাসা করতে চাও করো? আমি তো এখানে এজন্য দাঁড়িয়েছি যে, আল্লাহ যেন আমার দ্বারা একজন ব্যক্তিকে হলেও হেদায়াতের পথ প্রদর্শন করেন’।

এবার অমৃতসরী বললেন, পাদ্রী ছাহেব! আপনি বার বার ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর বেটা বলছেন। আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি, ‘আল্লাহ কবে বিয়ে করেছেন? কোথায় বিয়ে করেছেন? তার স্ত্রীর নাম কি? আল্লাহ কি ঈসা (আঃ)-কে নিজেই জন্ম দিয়েছেন, নাকি তার স্ত্রী জন্ম দিয়েছে’? তাঁর এসকল অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন শুনে পাদ্রী হতভম্ব হয়ে যান। পুরা মজলিসে পিন-পতন-নীরবতা নেমে আসে। পাদ্রী অনেক চেষ্টা করেও তাঁর প্রশ্নগুলোর কোন উত্তর দিতে ব্যর্থ হন। পাদ্রীকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ও পেরেশান দেখে অমৃতসরী বললেন, ‘পাদ্রী ছাহেব! আপনি কেন আল্লাহ ও তাঁর প্রেরিত সত্য রাসূলের (ঈসা মাসীহ) বেইয্যতী করছেন? আপনি ঈসাকে আল্লাহর বেটা বলে কেন তাঁর মর্যাদাহানি করছেন? এর মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে যে, আল্লাহ ও তাঁর গুণাবলীর প্রতি যেমন আপনার ঈমান নেই, তেমনি ঈসা (আঃ)-এর নবুঅত ও রিসালাতের প্রতিও আপনার দৃঢ় বিশ্বাস নেই। এজন্যই আপনি তিন তিনজন ঈশ্বরের উপাসনা করছেন। কিন্তু আফসোস! এখন পর্যন্ত একজন ঈশ্বরেরও নাগাল পাননি। পাদ্রী ছাহেব! আপনি অন্যদেরকে কিভাবে সঠিক পথে নিয়ে আসবেন? আপনি তো নিজেই গুমরাহীর মধ্যে নিমজ্জিত আছেন। শুনুন পাদ্রী ছাহেব! আমাদের আল্লাহ ও তদীয় রাসূল (ছাঃ) স্রেফ একটি বিষয়ের শিক্ষা দেন। সেটি হ’ল তাওহীদ বা একত্ববাদ। এটিই ইসলামের ভিত্তি। এর উপরেই আমাদের দ্বীনের সুরম্য প্রাসাদ দাঁড়িয়ে আছে’। এই জবাব শুনার পর পাদ্রী তাঁর ব্যাগপত্র গুছিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে সেখান থেকে প্রস্থান করেন। মুসলমানরা অমৃতসরীর যুক্তিগ্রাহ্য জবাব শুনে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরে এবং তার সাহসিকতার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে।[4]

পড়াশোনা শেষ করার সাথে সাথেই অমৃতসরী শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন। কিন্তু শিক্ষকতার প্রতি তাঁর তেমন একটা আকর্ষণ ছিল না। এর কারণ হল, তখন বিভিন্ন দিক থেকে ইসলামের উপর বুদ্ধিবৃত্তিক আক্রমণ চালানো হচ্ছিল। খ্রিস্টান পাদ্রীগণ ও আর্য সমাজের প্রচারকরা সংঘবদ্ধভাবে ইসলাম এবং ইসলামী তাহযীব-তমদ্দুন ও শিক্ষার বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছিল। ওদিকে ইংরেজদের প্ররোচনা ও সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় কাদিয়ানী ফিৎনা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল। এমত পরিস্থিতিতে শুধু মসজিদ-মাদরাসায় বসে দ্বীনী খিদমত আঞ্জাম দেয়ার সময় এটা ছিল না বলে মনে করেন মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী। বরং সরাসরি ময়দানে অবতীর্ণ হয়ে ঐ সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার উপযুক্ত সময় ছিল সেটা। সে সময় পাঞ্জাব প্রদেশে মাওলানা মুহাম্মাদ হুসাইন বাটালভী (রহঃ) একাই ইসলাম বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন। অমৃতসরীও তাঁর পথ বেছে নিলেন।[5] ১৯৪২ সালের ২৩শে জানুয়ারীতে লিখিত স্বীয় আত্মজীবনীতে মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী বলেন, ‘কানপুর থেকে ফারেগ হওয়া মাত্রই আমি আমার জন্মভূমি পাঞ্জাবে পৌঁছি। মাদরাসা তাঈদুল ইসলাম, অমৃতসরে দরসে নিযামীর কিতাব সমূহ পাঠদানে নিয়োজিত হই। স্বভাবগতভাবেই গবেষণা ও অনুসন্ধানের প্রতি আমার ঝোঁক বেশী ছিল। এজন্য এদিক সেদিক থেকে আশপাশের ধর্মীয় অবস্থা জানতে বেশী ব্যস্ত থাকতাম। আমি দেখি যে, ইসলামের কঠিন বরং কঠিনতম বিরোধী খ্রিস্টান ও আর্য দুই গোষ্ঠী। তখন কাছাকাছি সময়ে কাদিয়ানী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। দেশে তাদের হৈচৈ বেড়ে গিয়েছিল। মুসলমানদের পক্ষ থেকে এদেরকে প্রতিরোধের অগ্রসৈনিক ছিলেন মাওলানা আবু সাঈদ মুহাম্মাদ হুসাইন বাটালভী। ছাত্রজীবনেই মুনাযারার প্রতি আমার তবীয়ত অত্যন্ত আগ্রহী ছিল। এজন্য দরস-তাদরীস ছাড়াও আমি ঐ তিন গোষ্ঠীর (খ্রিস্টান, আর্য সমাজ ও কাদিয়ানী) দর্শন ও ধর্মীয় গ্রন্থ সমূহের প্রতি মনোনিবেশ করেছিলাম। আল্লাহর অনুগ্রহে আমি যথেষ্ট জ্ঞান হাছিল করেছিলাম। তবে এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ঐ তিন গোষ্ঠীর মধ্যে কাদিয়ানীরাই ছিল আমার এক নম্বর টার্গেট। সম্ভবত এজন্য যে, আল্লাহর নিকট গৃহীত হয়েছিল যে, মাওলানা বাটালভী মরহুমের পরে এই দায়িত্ব আমার উপরে অর্পিত হবে।

এ বিষয়ে আমি কিছু পূর্বসূরী বিদ্বানের রচনাবলী থেকে বিশেষ ফায়েদা হাছিল করেছি। হাদীছে কাযী শাওকানী, হাফেয ইবনু হাজার, ইবনুল ক্বাইয়িম প্রমুখের গ্রন্থসমূহ থেকে, ধর্মতত্ত্বে ইমাম বায়হাকী, ইমাম গাযালী, হাফেয ইবনে হাযম, আল্লামা আব্দুল করীম শহরস্তানী, হাফেয ইবনু তায়মিয়াহ, শাহ অলিউল্লাহ, ইমাম রাযী প্রমুখের (রহমাতুল্লাহি আলাইহিম) রচনা সমূহ থেকে উপকৃত হয়েছি’।[6]

জীবনীকার মাওলানা আব্দুল মজীদ খাদেম সোহদারাভী লিখেছেন, ‘শিক্ষাজীবন শেষ করা মাত্রই তিনি কঠিন লড়াই শুরু করে দেন। যদি এক সময় আর্য সমাজের সাথে লড়াই করছেন তো আরেক সময় খ্রিস্টানদের সাথে বাহাছ করছেন। একদিন যদি হাদীছ অস্বীকারকারী আহলে কুরআন-এর সাথে বাহাছ হচ্ছে তো অন্যদিন মুক্বাল্লিদদের সাথে মুনাযারা লেগে গেছে। যদি শী‘আরা তাঁর সাথে লড়াই করছে তো ব্রেলভীরাও এক মুহূর্ত ছাড় দিচ্ছে না। মোটকথা কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী এমন কোন ফিরক্বা নেই যাকে তিনি ছেড়ে দিয়েছেন এবং তার সাথে মুনাযারা করেননি। বেদ-সমাজী হোক বা সনাতন ধর্মী, শিখ হোক বা জৈন, আর্য হোক বা খ্রিস্টান, কাদিয়ানী হোক বা বাহাঈ, হাদীছ অস্বীকারকারী হোক বা নাস্তিক, শী‘আ হোক বা ব্রেলভী, কাদিয়ানী হোক বা লাহোরী সবার সাথেই তিনি সমানতালে মুনাযারা করেছেন এবং আল্লাহর রহমতে সবার উপরেই বিজয়ী থেকেছেন’।[7]

মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী স্বীয় আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘অমৃতসরে অবস্থানের সময় মুনাযারার প্রতি মনোযোগী হই। প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীদের সাথে বিতর্ক হয়েছে। আল্লাহর অনুগ্রহ সাথে ছিল। কিছু মুনাযারায় বিচারকও নিযুক্ত হয়েছিলেন। বিচারকদের রায়ও আল্লাহর রহমতে আমার পক্ষে গেছে’।[8]

কাদিয়ানী, হিন্দু ও খ্রিস্টানদের সাথে তাঁর সবচেয়ে বেশী বিতর্ক হয়েছে।[9] তিনি মৌখিক ও লিখিত উভয় প্রকার বিতর্কে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর মুনাযারার সংখ্যা ১ হাযারের অধিক।[10] শুধু অমৃতসরেই তিনি ২০০-এর বেশী মুনাযারা করেছেন। লাহোরে কৃত মুনাযারার সংখ্যাও শতাধিক।[11]

অমুসলিম ও ইসলাম বিরোধীদের সাথে তিনি শুধু আহলেহাদীছদের পক্ষ থেকেই বিতর্ক করতেন না; বরং অন্য ফিক্বহী মাসলাকের বিদ্বানগণও তাঁর নিকট থেকে খিদমত নিতেন এবং অমুসলিমদের সাথে বাহাছ করার জন্য তাঁকে নিয়ে যেতেন।[12] মাওলানা সাইয়িদ সুলাইমান নাদভী যথার্থই বলেছেন, ‘বর্তমান রাজনৈতিক আন্দোলন সমূহের পূর্বে যখন শহরগুলোতে ইসলামী সংগঠনগুলি কায়েম ছিল এবং মুসলমান, কাদিয়ানী, আর্য সমাজ ও খ্রিস্টানদের মাঝে বিতর্ক হত, তখন মরহূম (মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী) সাধারণত মুসলমানদের প্রতিনিধি হতেন। এ উপলক্ষ্যে তিনি হিমালয় থেকে শুরু করে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত সর্বদা ছুটতে থাকতেন’।[13]

মাওলানা অমৃতসরী বলতেন, ‘মাওলানা মাহমূদুল হাসান দেওবন্দী আমাকে নিজ সন্তানের মতো ভালবাসতেন। এজন্য বড় বড় বাহাছে, যেখানে আকাবিরে দেওবন্দ-এর কর্তৃত্ব থাকত, অধমের উপরেই বাহাছের দায়িত্ব অর্পণ করা হ’ত। যেমন নাগীনা, রামপুর প্রভৃতি স্থানের বাহাছ’।[14]

আল্লামা সাইয়িদ রশীদ রিযা মিসরী তাঁর মুনাযারা প্রতিভার অকুণ্ঠ স্বীকৃতি দিতে গিয়ে বলেছেন,صديقنا العلامة ثناء الله صاحب المصنفات والمناظرات مع الوثنيين والنصاري والمبتدعين وأشهرها مناظراته مع غلام أحمد القادياني ومباهلتهما التي تبين بها أن القادياني دجال كذاب- ‘আমাদের বন্ধু আল্লামা ছানাউল্লাহ বহুগ্রন্থ প্রণেতা। তিনি মূর্তিপূজক, খ্রিস্টান ও বিদ‘আতীদের সাথে অসংখ্য মুনাযারা করেছেন। এগুলির মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হল গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর সাথে তাঁর মুনাযারাগুলো এবং তাদের দু’জনের মুবাহালা। যার মাধ্যমে সুস্পষ্ট হয়েছে যে, কাদিয়ানী ভন্ড নবী ও মিথ্যুক’।[15]

তিনি আরো বলেন,مولانا الشيخ ثناء الله من علماء أهل الحديث والكلام والفقه في أمرتسر بالهند. له مجلة ومؤلفات في الدفاع عن الإسلام، وهو مع هذا مناظر كبير، فصيح اللسان، قوي الحجة، بليغ العبارة، يدعي لمناظرة الطاعنين علي الإسلام من الهند وخصوصا جماعة آرية سماج، وكذلك له مواقف محمودة مع مضللي النصاري وكذا النصاري وكذا الأحمدية القاديانية جماعة مرزا غلام أحمد القادياني- ‘মাওলানা শায়খ ছানাউল্লাহ ভারতের অমৃতসরের অন্যতম আহলেহাদীছ আলেম, ধর্মতাত্ত্বিক ও ফকীহ। ইসলামের প্রতিরক্ষায় তাঁর পত্রিকা ও অনেক বইপত্র রয়েছে। এর সাথে সাথে তিনি একজন বড় মুনাযির (তার্কিক), বিশুদ্ধভাষী, শক্তিশালী দলীল উপস্থাপনকারী এবং অলংকারপূর্ণ ভাষার অধিকারী। ভারতে ইসলামের উপর আঘাতকারীদের বিশেষত আর্য সমাজের সাথে মুনাযারার জন্য তিনি আমন্ত্রিত হতেন। অনুরূপভাবে বিভ্রান্তকারী খ্রিস্টান, খ্রিস্টান ও মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর আহমদী জামা‘আতের বিরুদ্ধে তাঁর প্রশংসনীয় ভূমিকা রয়েছে’।[16]

মাওলানা আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী (রহঃ) বলেন,

وكان قوي العارضة، حاد الذهن، قوي البديهة، سريع الجواب، عالي الكعب في المناظرة، له براعة في الرد على الفرق الضالة وإفحام الخصوم، ذلق اللسان، سريع الكتابة، كثير الاشتغال بالتأليف والتحرير، كثير الأسفار للمناظرة والانتصار للعقيدة الإسلامية-

‘তিনি বিশুদ্ধভাষী বাগ্মী, তীক্ষ্ণবুদ্ধি, প্রত্যুৎপন্নমতি, দ্রুত জবাব প্রদানকারী ও মুনাযারায় উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। পথভ্রষ্ট ফিরক্বাগুলোর প্রত্যুত্তর প্রদানে এবং প্রতিপক্ষকে নিরুত্তর করে দেয়ার ক্ষেত্রে তার অপরিসীম দক্ষতা রয়েছে। তিনি বাকপটু, দ্রুত লিখতে সক্ষম, রচনা ও সম্পাদনায় অত্যন্ত ব্যস্ত এবং মুনাযারা ও ইসলামী আক্বীদার বিজয়ের জন্য বহু স্থানে সফরকারী ছিলেন’।[17]

খ্রিস্টানদের সাথে বিতর্ক :

খ্রিস্টান মিশনারীদের তৎপরতায় দুই মুসলিম যুবক আব্দুল হক ও সুলতান মুহাম্মাদ খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে পাদ্রী বনে যান। পাদ্রী হওয়ার পর তারা খ্রিস্টধর্মের প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। বিভিন্ন স্থানে তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রদান করতেন এবং লেখনীর মাধ্যমে আলেমদেরকে চ্যালেঞ্জ জানাতে থাকতেন। তারা ছাড়া আরো অনেক পাদ্রী খ্রিস্ট ধর্মের প্রচারে নিয়োজিত ছিলেন। তারা ইংরেজ সরকারের সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা পেতেন। ভারতে একটা সময় এমনও এসেছিল যে, তারা ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য জনসম্মুখে অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করতেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ করার হিম্মত কারো হ’ত না। ধীরে ধীরে আলেম সমাজ তাদের প্রতিবাদে এগিয়ে আসেন। মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী গ্রন্থ রচনা ও মুনাযারার মাধ্যমে তাদের জবাব দানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।[18]

ছাত্রজীবনে খ্রিস্টান পাদ্রী জেমস্-এর সাথে বিতর্কের মাধ্যমে অমৃতসরীর বিতর্কজীবনের সূচনা হয় বলা চলে। এরপর বিভিন্ন সময় তাদের সাথে তাঁর অনেক বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। নিম্নে খ্রিস্টানদের সাথে তাঁর ৫টি বিতর্কের সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করা হ’ল-

১ লাহোরের বিতর্ক : ‘মাসীহ-এর ঈশ্বরত্ব’ বিষয়ে ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে পাদ্রী জোয়ালা সিং-এর সাথে লাহোরে অমৃতসরীর মুনাযারা অনুষ্ঠিত হয়। পাদ্রী যে প্রমাণই উপস্থাপন করছিলেন মাওলানা অমৃতসরী সেটিই খন্ডন করে দিচ্ছিলেন। এতে পাদ্রী ছাহেব ঘাবড়ে গিয়ে এক পর্যায়ে বলে উঠেন, ‘মাওলানা ছাহেব! আমার কোন দলীল তো অবশিষ্ট রাখুন, সব দলীল খন্ডন করে দিয়েন না’? একথা শুনে শ্রোতামন্ডলী হেসে ফেলে। বিতর্কে পাদ্রীর পরাজয়ের ফলে বিতর্কসভায় উপস্থিত খৃস্টানদের একটি বংশের সবাই মুসলমান হয়ে যায়।[19]ফালিল্লাহিল হাম্দ

২. হোশিয়ারপুরের বিতর্ক : ১৯১৬ সালের ৬ই ডিসেম্বর পাঞ্জাবের হোশিয়ারপুরে খ্রিস্টানদের সাথে মাওলানা অমৃতসরীর একটি জাকজমকপূর্ণ বিতর্ক হয়। খ্রিস্টানদের পক্ষ থেকে তার্কিক ছিলেন পাদ্রী জোয়ালা সিং। তিনি অত্যন্ত বড় মাপের একজন যুক্তিবাদী ছিলেন। বরং বলা চলে খ্রিস্টান তার্কিকদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশী যুক্তিবাদী ছিলেন। তিনি মানতিক বা যুক্তিবিদ্যা ছাড়া কোন কথা বলতেন না। কিন্তু মানতিকে অমৃতসরীরও কোন জুড়ি ছিল না। বিতর্কের প্রথম অধিবেশনে পাদ্রী ছাহেব ‘আল্লাহর জ্ঞান’ সম্পর্কে যুক্তিসম্মত প্রশ্ন করেন। অমৃতসরী মানতিকের আলোকেই এর যথার্থ জবাব দেন। অতঃপর দ্বিতীয় অধিবেশনে মাওলানা ছাহেব ‘মাসীহ-এর প্রকৃতি’ বিষয়ে পাদ্রীকে মানতেকী প্রশ্ন করেন। তিনিও এর জবাব দেন। কিন্তু অমৃতসরী তাঁকে মানতে বাধ্য করেন যে, মাসীহ এমন একজন ব্যক্তি যিনি সত্তাগতভাবে আল্লাহর মুখাপেক্ষী। তিনি আল্লাহর বেটা নন এবং তিন ঈশ্বরের দ্বিতীয়জনও নন। পাদ্রী মানতেকী প্যঁাচ খাটিয়ে এর উত্তর দেয়ার সবরকম চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। বিতর্কে অমৃতসরীর বিজয়ে মুসলমানরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়।[20]

৩. গুজরানওয়ালার বিতর্ক : ১৯২৬ সালের ২৭ ও ২৮শে ফেব্রুয়ারী ‘আঞ্জুমানে আহলেহাদীছ গুজরানওয়ালা’ আয়োজিত বার্ষিক জালসায় খ্রিস্টানদের সাথে মাওলানা অমৃতসরীর বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। বিতর্কের বিষয় ছিল ‘তাওহীদ’। বিতর্ক সভায় ৮/১০ হাযারের মতো মানুষ উপস্থিত ছিল। কতিপয় ইউরোপীয় খ্রিস্টানও এ বিতর্ক শুনতে এসেছিলেন। খ্রিস্টানদের পক্ষে তার্কিক ছিলেন পাদ্রী মুহাম্মাদ সুলতান পাল। তিনি অমৃতসরীর উপস্থাপিত দলীল সমূহের জবাব দিতে না পারার কারণে ভরা মজলিসে এক খ্রিস্টান যুবক মুসলমান হয়ে যায়।[21]

৪. হাফিযাবাদের বিতর্ক : ১৯২৮ সালের ২রা ও ৩রা সেপ্টেম্বর গুজরানওয়ালা যেলার হাফিযাবাদে খ্রিস্টানদের সাথে অমৃতসরীর বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দিন খ্রিস্টান পক্ষে বিতর্কে অংশ নেন পাদ্রী সুলতান মুহাম্মাদ পাল। বিষয় ছিল ‘একত্ববাদ’। কিন্তু তিনি এ বিতর্কে মাওলানার সাথে তাল মিলাতে ব্যর্থ হন। ফলে দ্বিতীয় দিন খ্রিস্টানরা পাদ্রী প্রফেসর আব্দুল হককে নিয়ে আসে। এবার বিতর্কের বিষয় ছিল ‘মাসীহ-এর ঈশ্বরত্ব’। কিন্তু তিনিও ব্যর্থ হন। দু’দিনই অমৃতসরী বিতর্কে বিজয়ী হন। এ বিতর্কে পরাজয়ের ফলে অনেক দিন পর্যন্ত খ্রিস্টানরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।[22]

৫. এলাহাবাদের বিতর্ক : ১৯৩৪ সালের ৪ ও ৫ই আগস্ট অমৃতসরী ও খ্রিস্টান পাদ্রী প্রফেসর আব্দুল হকের মাঝে ‘একত্ববাদ ও ত্রিত্ববাদ’ বিষয়ে এই বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। পাদ্রী ছাহেব কিছু মানতেকী পরিভাষা মুখস্থ করে রেখেছিলেন। সুযোগমত তিনি এসব পরিভাষা ব্যবহার করে জনগণের মাঝে ভীতির সঞ্চার করতেন। যাতে তারা তাঁকে অনেক বড় বিদ্বান ভাবে। কিন্তু অমৃতসরীর সামনে এসব মানতেকী প্যঁাচ ধূলোয় ধূসরিত হয়ে গিয়েছিল। কারণ পাদ্রী তাঁর দাবীর স্বপক্ষে যখন কোন মানতেকী পরিভাষা উল্লেখ করতেন তখন অমৃতসরী তার নিকট এর ব্যাখ্যা ও উদাহরণ তলব করতেন। কিন্তু পাদ্রী ছাহেব তা দিতে ব্যর্থ হতেন। অমৃতসরী তখন সহজ ভাষায় পাদ্রীর দুর্বোধ্য বক্তব্য জনগণের সামনে তুলে ধরতেন। তারপর তার ত্রিত্ববাদের আক্বীদার জবাব দিতেন এবং তাওহীদ বা একত্ববাদের আক্বীদা প্রমাণ করতেন। ফলে উপস্থিত শ্রোতামন্ডলীর উপর বিশেষ করে শিক্ষিত ব্যক্তিদের উপর এর দারুণ প্রভাব পড়ে। বিতর্কের এক পর্যায়ে অমৃতসরী বলেন, ‘পাদ্রী ছাহেব তো মাসীহ-এর উলূহিয়াত বা ঈশ্বরত্বের প্রবক্তা’। একথা শুনে পাদ্রী ছাহেব পেরেশান হয়ে বলে উঠেন, ‘কোন হতাভাগা মাসীহ-এর উলূহিয়াতের প্রবক্তা’। ব্যস, এতেই খ্রিস্টান সমাজে হৈচৈ পড়ে যায়। তারা বলতে থাকেন, পাদ্রী ছাহেব এটা কি বললেন? একথার প্রেক্ষিতে অমৃতসরী তাকে এক হাত নেন এবং তার ত্রিত্ববাদের ভ্রান্ত আক্বীদা খন্ডন করে বিতর্কে বিজয়ী হন।[23] ‘মুনাযারায়ে এলাহাবাদ’ শিরোনামে এটি ১৯৩৪ সালে ছানাঈ প্রেস, অমৃতসর থেকে পুস্তাকারে প্রকাশিত হয়।[24]

উক্ত মুনাযারার প্রেক্ষাপট ছিল বেশ মজাদার। এলাহাবাদে খ্রিস্টবাদের প্রচার শুরু হলে শিক্ষিত মুসলিম যুবসমাজ সেদিকে ঝুঁকে পড়া শুরু করে। এতে মুসলিম সমাজে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। কিছু মানুষ তাদের নেতা আহমাদ রেযা খান ব্রেলভীর সাথে সাক্ষাৎ করে খ্রিস্টানদের সাথে বিতর্কের জন্য অনুরোধ জানায়। অনেক পীড়াপীড়ির পরেও তিনি এতে রাযী হননি। এরপর তারা দেওবন্দে গিয়ে শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমূদুল হাসান দেওবন্দীর সাথে সাক্ষাৎ করে সব ঘটনা খুলে বলে। কিন্তু আহলে দেওবন্দও বিতর্ক করতে অসম্মতি জানান। এরূপ দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে মাওলানা মাহমূদুল হাসান তাঁর প্রিয় ছাত্র অমৃতসরীর নিকট একটি পত্র লিখেন। তাতে তিনি বলেন, ‘তুমি যদি ইসলামের হেফাযত করতে চাও তাহলে পত্র পাওয়া মাত্রই এলাহাবাদে রওয়ানা হয়ে যাবে’। পত্র পাওয়ার পর উস্তাদের নির্দেশ পালনার্থে তিনি এলাহাবাদে যান এবং উল্লেখিত ব্যক্তির সাথে মুনাযারা করে ইসলামের পতাকা উড্ডীন করেন।[25]

আর্য সমাজের সাথে বিতর্ক :

স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী ১৮৭৫ সালে বৈদিক ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য এই উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। আর্য সমাজীরা এক ঈশ্বরে বিশ্বাসী এবং মূর্তিপূজার বিরোধী। তবে তারা স্রষ্টার গুণাবলীকে নাকচ করে এবং রিসালাতকে অস্বীকার করে। তাদের বিশ্বাস বেদোক্ত ব্রহ্মের উপর। তারা জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী।[26]

মাওলানা আব্দুল হাই লাক্ষ্মৌভী বলেছেন,وهم أكبر أعداء الإسلام في الهند، ‘এরা ভারতে ইসলামের সবচেয়ে বড় দুশমন’।[27] মূলতঃ মুসলমানদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য ঔপনিবেশিক ভারতে ইংরেজদের ছত্রছায়ায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় এই গোষ্ঠীটির আবির্ভাব ঘটে। ইংরেজ সরকার দয়ানন্দ সরস্বতীর কর্ণকুহরে এই বিষ ঢেলে দেয় যে, ‘আপনি জানেন ইসলাম আপনাদের ধর্মের সবচেয়ে বড় শত্রু। মুসলমানরা সর্বদা এই আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে যে, ভারতের সকল হিন্দু ইসলামের ছায়াতলে চলে আসুক। ভারতে মুসলমান ছাড়া অন্য কোন ধর্মের অনুসারী যেন না থাকে’। এই কানপড়া ও উস্কানী দিয়ে ইংরেজরা তাকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়।[28]

মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত লেখনী ও মুনাযারার মাধ্যমে এদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে থাকেন। আর্য সমাজীরা পত্র-পত্রিকায় কোন প্রবন্ধ বা ইশতেহার প্রকাশ করলে তিনি তাঁর পত্রিকা সমূহের মাধ্যমে তাদের সমুচিত জবাব দিতেন। আর্য সমাজের কোন প্রচারক বক্তব্যের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ জানালে তিনি তৎক্ষণাৎ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতঃ জবাবদানের জন্য হাযির হতেন। আর্য সমাজের বেশ কয়েকজন জাদরেল তার্কিক ছিলেন। এরা সাধারণত প্রতিপক্ষকে লিখিত বিতর্কের আহবান জানাতেন। অর্থাৎ মুনাযির বা তার্কিক যে বক্তব্য প্রদান করতে চান তা নির্দিষ্ট সময়ে লিপিবদ্ধ করে শ্রোতাদের সামনে পড়বেন এবং প্রতিপক্ষের তার্কিক ও লিখিত আকারে তার উত্তর দিবেন। ভিন্নধর্মী এ ধরনের বিতর্কে সবাই অংশগ্রহণ করার সাহস পেত না। কিন্তু আল্লাহর অপার অনুগ্রহে মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর যবান ও কলম সমানতালে চলত। এজন্য তিনি নির্দ্বিধায় আর্য সমাজের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতেন এবং মৌখিক ও লিখিত উভয় প্রকার বিতর্কে তাদেরকে পরাজিত করতেন।[29]

তাঁর এই অবদান বড় বড় ইসলামী ব্যক্তিত্ব অকপটে স্বীকার করেছেন। যেমন মাওলানা আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী বলেন, وكان أكثر ردوده على الآرية والقاديانية، ‘তাঁর অধিকাংশ খন্ডনগুলি ছিল আর্য সমাজ ও কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে’।[30] ‘তাফসীরে মাজেদী’র লেখক মাওলানা আব্দুল মাজেদ দরিয়াবাদী বলেছেন, ‘মুনাযারা শিল্পের তো বলা চলে তিনি ইমাম ছিলেন। বিশেষ করে আর্য সমাজের অনুসারীদের মুকাবিলায়। যারা মন্দ বুঝ ও অজ্ঞতার পাশাপাশি গালমন্দকারীও ছিল। বিংশ শতকের শুরুতে তাদের ফিৎনা সে সময়ের সবচেয়ে বড় ফিৎনা ছিল। যদি মাওলানা ছানাউল্লাহ তাদের সামনে না আসতেন তাহলে আল্লাহ জানেন মুসলমানদের উপর ভর করা ভয়-ভীতি কতদূর গিয়ে ঠেকত। প্রতিপক্ষের নাড়ি-নক্ষত্র জানার ব্যাপারে মাওলানা অনেক অগ্রগামী ছিলেন। এমন কথা খুঁজে বের করতেন যে, আর্য সমাজীরা দিশেহারা হয়ে যেত। কত যে মুনাযারা করেছেন তা এখন মনে নেই। সব জায়গায় তিনি বিজয়ীই থাকতেন।[31]

নিম্নে আর্য সমাজের সাথে তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিতর্কের বিবরণ উপস্থাপিত হল-

১. দেওরিয়ার বিতর্ক : ১৯০৩ সালের ১৬-২১শে আগস্ট উত্তর প্রদেশের দেওরিয়া যেলায় মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর সাথে আর্য সমাজের পন্ডিত দর্শনান্দের এক সপ্তাহব্যাপী লিখিত বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। পন্ডিত ছাহেব আর্য সমাজের বেশ কয়েকজন বড় বড় তার্কিক ও প্রচারককে সাথে নিয়ে বিতর্কে যোগ দেন। বেনারসের এক হিন্দু পন্ডিত কয়েকজন তরুণ হিন্দু শিষ্যকে নিয়ে বিতর্কসভায় আসেন। বেনারসী পন্ডিত মহাশয়ের এক শিষ্য হঠাৎ অমৃতসরীকে বলে বসেন, আপনার ধর্মে পুরুষদের রেশম ও সোনা পরিধানের অনুমতি নেই। তাহ’লে আপনি কেন এই রেশমী কোট পরিধান করেছেন এবং ঘড়িতে সোনার চেইন লাগিয়েছেন? এ প্রশ্ন শুনামাত্রই মাওলানা অমৃতসরী কোট ও ঘড়ি খুলে ঐ তরুণ হিন্দুর নিকট পাঠিয়ে দেন এবং মুচকি হেসে বলেন, যদি কোটকে রেশমী ও ঘড়ির চেইন সোনার প্রমাণ করতে পারেন তাহ’লে এগুলি আপনাকে দান করে দিব। বেনারসী পন্ডিত উভয়টি ভাল করে দেখে ওযর পেশ করে বলেন, ‘আমার শিষ্য প্রশ্ন উত্থাপনে তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। কোট ভাগলপুরী এবং ঘড়ির চেইন উজ্জ্বল পিতলের’। এরপর ‘বেদ ও কুরআনের মধ্যে কোনটি ইলাহী ধর্মগ্রন্থ ও কোনটি সত্য’ বিষয়ে লিখিত মুনাযারা শুরু হয়। বিতর্কে ৫টি পৃষ্ঠা বিনিময় হয়। যেগুলিতে উভয় পক্ষের প্রশ্ন লিখিত ছিল। মুনাযারার অন্যতম শর্ত ছিল, আর্য সমাজ কুরআন ও কুরআন মাজীদ সম্পর্কে যা কিছু কোন গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে তার আলোকে এবং যুক্তির মাধ্যমে অমৃতসরীর জবাব দিবে। পক্ষান্তরে অমৃতসরী আর্য সমাজের গ্রন্থ সমূহ যেমন ‘ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ, অথর্ববেদ এবং যুক্তির মাধ্যমে তাদের প্রশ্নের জবাব দিবেন। এক সপ্তাহের বিতর্কে আর্য সমাজ বেদ যে ইলাহী গ্রন্থ সেটা প্রমাণে ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে মাওলানা অমৃতসরী প্রমাণ করে দেন যে, কুরআন মাজীদ সত্য ও ইলাহী ধর্মগ্রন্থ; বেদ নয়। এভাবে আর্য সমাজ বিতর্কে পরাজয় বরণ করে।

উক্ত বিতর্কে অমৃতসরীর সহায়তায় ছিলেন আল্লামা আব্দুল আযীয রহীমাবাদী, ‘তাফসীরে হক্কানী’র লেখক মাওলানা আব্দুল হক দেহলভী, মাওলানা রহমত হাসান মীরাঠী, মাওলানা শুজা‘আত আলী মানতেকী ও মাওলানা আব্দুল হামীদ পানিপথী।[32] ১৯০৩ বা ১৯০৬ সালে লাক্ষ্ণৌর মুজতাবাঈ প্রেস থেকে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। যার মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৮৪।[33]

২. নাগীনার বিতর্ক : উত্তর প্রদেশের বিজনোর যেলার নাগীনা গ্রামে আর্য সমাজের বেশ দাপট ছিল। তারা প্রত্যেক সভায় মুসলমানদেরকে মুনাযারার চ্যালেঞ্জ জানাত। কিন্তু মুসলমানরা মুনাযারা করার সাহস পেত না। অবশেষে ১৯০৪ সালে যখন আর্য সমাজের উপদ্রব বেড়ে গিয়েছিল তখন মুসলমানরা তাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে এবং মুনাযারার জন্য ব্যাপক প্রস্ত্ততি গ্রহণ করে। ভারতের বাছাইকৃত আলেমগণকে মুসলমানদের পক্ষ থেকে মুনাযারার জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন, ১. শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমূদুল হাসান দেওবন্দী (মৃঃ ১২৩৯ হিঃ) ২. মাওলানা আহমাদ হাসান আমরূহী (মৃঃ ১৩৩০ হিঃ) ৩. মাওলানা মুহাম্মাদ হাসান মুরাদাবাদী ৪. মাওলানা আলী আহমাদ মীরাঠী ৫. মাওলানা আবু রহমত মীরাঠী ৬. মাওলানা আবুল ফারাজ আব্দুল্লাহ পানিপথী।

মাওলানা অমৃতসরীর খ্যাতির কারণে তাঁকেও দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। তিনি নাগীনায় পৌঁছলে সর্বসম্মতিক্রমে তাঁর উপরেই মুনাযারার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। আর্য সমাজের তার্কিক ছিলেন মাস্টার আ-ত্মা রাম, পন্ডিত কৃপা রাম ও লালা ওয়াযীর চন্দ্র। ১৯০৪ সালের ৫-১৪ই জুন ১০ দিন ব্যাপী এই লিখিত বিতর্ক অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। বিতর্কের বিষয় ছিল ‘ইলহামের সংজ্ঞা ও বেদের ইলহামী গ্রন্থ হওয়া সাব্যস্তকরণ’। উভয় পক্ষ থেকে ২২ পৃষ্ঠা লিখিত প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। ৩ দিন অতিবাহিত হ’তে না হ’তেই আর্য সমাজের দু’জন তার্কিক বিতর্ক থেকে পলায়ন করেন। ৫ম দিন স্বয়ং আ-ত্মা রামও হাল ছেড়ে দেন। ফলে বিতর্কে অমৃতসরী বিজয়ী হন। এর ফলে বিতর্ক ময়দানেই ১১ জন হিন্দু মুসলমান হয়ে যায়। মুহাম্মাদ ওমর করতাপুরী যিনি মুরতাদ হয়ে আর্য সমাজে দীক্ষিত হয়েছিলেন, তিনি মুনাযারার ফলাফলে প্রভাবিত হয়ে পুনরায় ইসলাম ধর্মে ফিরে আসেন এবং আমৃত্যু ইসলামের উপর টিকে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। বিতর্ক সভায় উপস্থিত স্বামী দর্শনানন্দ সরস্বতী স্পষ্ট ভাষায় আর্য সমাজের পরাজয় স্বীকার করে নেন।[34]

বিচারক বিতর্কের রায় ঘোষণা করে বলেন, আর্য সমাজ তাদের দাবী প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সুতরাং এ বিতর্কের যাবতীয় ব্যয়ভার আর্য সমাজকে বহন করতে হবে। এটিই চূড়ান্ত ফায়ছালা। কোন আদালতে বিষয়টি পুনরায় উত্থাপন করা যাবে না।[35] ১৩২২ হিঃ/১৯০৪ সালে প্রকাশিত ‘রুকূবুস সাফীনা ফী মুনাযারাতিন নাগীনা’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা সংখ্যা ২০৪) এই মুনাযারার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।[36]

ড. নওয়ায দেওবন্দী ‘সাওয়ানিহে ওলামায়ে দেওবন্দ’ গ্রন্থে এ বিতর্ক সম্পর্কে লিখেছেন, ‘১৩২২ হিঃ মোতাবেক ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে বিজনোর যেলার নাগীনায় আর্যদের সাথে বিতর্ক হয়। হযরত মাওলানা সাইয়িদ আহমাদ হাসান আমরূহী এবং তখনকার প্রায় সকল প্রসিদ্ধ আলেম-ওলামা তাতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। হযরত মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী দ্বিতীয় পক্ষের সাথে মুনাযারা করেন। কয়েকদিন পর্যন্ত বিতর্কসভা গরম ছিল’।[37]

৩. খুরজার বিতর্ক : বুলন্দশহরের খুরজায় অবস্থিত কাসেমুল উলূম মাদরাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা মুবারক হুসাইন সাম্ভুলীর সাথে আর্য সমাজের বিতর্ক হত। একদিন ‘আর্য গেজেট’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক পন্ডিত চন্দ্র প্রকাশের সাথে ইসলাম সম্পর্কে তাঁর আলাপ-আলোচনা হয়। তিনি মাওলানার যুক্তিসম্মত উত্তর শুনে মুসলমান হয়ে যান এবং আব্দুর রহমান নাম ধারণ করে ইসলামের প্রচার-প্রসারে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর সাথে কয়েকজন হিন্দুও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। এতে আর্য সমাজে আগুন ধরে যায় এবং তারা একটি বিশাল মুনাযারা আয়োজনের জন্য ব্যাপক প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে থাকে। মুসলমানরাও তাদের মুকাবিলা করার জন্য মাওলানা মুরতাযা হাসান মুরাদাবাদী, আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী ও মাওলানা মুহাম্মাদ ইবরাহীম দেহলভী প্রমুখকে আমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু সিদ্ধান্ত হয়, মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীকেই মুসলমানদের তরফ থেকে তার্কিক নিযুক্ত করা হবে। ঐ সময় তিনি মুযাফ্ফরনগর যেলার দেলামে আর্য সমাজের সাথে তিনদিন ব্যাপী (১৫-১৭ই মার্চ ১৯১৭) একটি মুনাযারায় ব্যস্ত ছিলেন। তাঁকে খুরজায় আনার জন্য মাওলানা মুবারক হুসাইন নিজে দেলামে গিয়ে স্বচক্ষে উক্ত মুনাযারা প্রত্যক্ষ করেন। তিনি অমৃতসরীর প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, হৃদয়গ্রাহী আলোচনা ও বিজয় দেখে তাঁর গুণমুগ্ধ হয়ে যান এবং তাঁকে খুরজায় যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করেন। কিন্তু অমৃতসরী ওযরখাহী করে বলেন, ‘টানা তিন দিনের বিতর্কে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এজন্য এখনই অন্য কোন মুনায়ারায় যেতে চাচ্ছি না’। কিন্তু মাওলানা মুবারক হুসাইন নাছোড়বান্দা। অবশেষে ১৮ই মার্চ ২০১৭ সন্ধ্যাবেলায় তিনি তাঁকে নিয়ে খুরজায় পৌঁছেন। ১৯শে মার্চ মুনাযারা শুরুর কথা থাকলেও আর্য সমাজের অনুরোধে একদিন পিছিয়ে ২০ ও ২১শে মার্চ তা অনুষ্ঠিত হয়। বিতর্কের বিষয় ছিল ‘সত্য ধর্ম’। আর্য সমাজের তিনজন তার্কিক অমৃতসরীর সাথে উক্ত বিতর্কে পরাজিত হন।[38]

বিতর্কে অমৃতসরীর উত্তরগুলো ছিল সারগর্ভ। সেকারণ মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী তাঁর উত্তরগুলো সঠিক ও শক্তিশালী পেয়ে রায় ঘোষণা করে বলেছিলেন, ‘আমরা বিচারক ও মধ্যস্ততাকারী হিসাবে এই বিষয়ে ইসলামের বিজয় ঘোষণা করছি’।[39] আর্য সমাজের প্রতিনিধি স্বীকার করে নেন যে, বেদে গায়রুল্লাহর উপাসনার কথা এসেছে। এজন্য বেদ ইলাহী ধর্মগ্রন্থ হতে পারে না। কাজেই মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী ইসলামের যে বিজয় ঘোষণা করেছেন তা সঠিক ও বাস্তবসম্মত।[40] ১৯১৭ সালে ‘ফাতহে ইসলাম ইয়া‘নী মুনাযারায়ে খুরজা (ইসলামের বিজয় অর্থাৎ খুরজার বিতর্ক) শিরোনামে উক্ত মুনাযারার সারনির্যাস গ্রন্থাকারে (৬৬ পৃষ্ঠা) প্রকাশিত হয়।[41]

 [চলবে]

ড. নূরুল ইসলাম

ভাইস প্রিন্সিপাল, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।

[1]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ১৯০-১৯৬, ৩৮৪-৮৫

[2]. তাযকেরায়ে আবুল অফা, পৃঃ ২৮; আব্দুল মুবীন নাদভী, আশ-শায়খ আল-আল্লামা আবুল অফা ছানাউল্লাহ আল-আমরিতসারী, পৃঃ ১৫৫

[3]. মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী, নূরে তাওহীদ (অমৃতসর : ছানাঈ বারকী প্রেস, আগস্ট ১৯৩৮), পৃঃ ৩৯, টীকা-১ দ্রঃ

[4]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ১১১-১১৩; আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৫৭-১৫৮

[5]. বায্মে আরজুমন্দাঁ, পৃঃ ১৪৭

[6]. মাওলানা ইমাম খান নওশাহরাবী, নুকূশে আবুল অফা, সম্পাদনা : ইহসান ইলাহী যহীর (লাহোর : ইদারায়ে তারজুমানুস সুন্নাহ, জানুয়ারী ১৯৬৯), ১ম খন্ড, পৃঃ ২৩-২৪; ফিৎনায়ে কাদিয়ানিয়াত আওর মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী, পৃঃ ৩৫-৩৬

[7]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ৩৮৫-৮৬

[8]. নূরে তাওহীদ, পৃঃ ৪৪

[9]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ৩৮৮

[10]. ঐ, পৃঃ ৩৮৬

[11]. ঐ, পৃঃ ৪০১, ৪০৭

[12]. বায্মে আরজুমন্দাঁ, পৃঃ ১৬৬

[13]. মাসিক মা‘আরিফ, আযমগড়, ইউপি, ভারত, মে ১৯৪৮, পৃঃ ৩৮৮

[14]. বায্মে আরজুমন্দাঁ, পৃঃ ১৬৩

[15]. আল-মানার, মিসর, ৩৩/৮ সংখ্যা, ডিসেম্বর ১৯৩৩, পৃঃ ৬৩৯

[16]. ঐ

[17]. নুযহাতুল খাওয়াতির ৮/১২০৫

[18]. ফযলুর রহমান আযহারী, রাঈসুল মুনাযিরীন শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (লাহোর : দারুদ দাওয়াহ আস-সালাফিইয়াহ, মার্চ ১৯৮৭), পৃঃ ২৭০-২৭১

[19]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ৪০৭-৪০৮; রাঈসুল মুনাযিরীন, পৃঃ ২৭১

[20]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ৪৩১-৪৩২; মাওলানা মুহাম্মাদ মুকতাদা আছারী উমরী, তাযকিরাতুল মুনাযিরীন (লাহোর : দারুন নাওয়াদির, ২০০৭), ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৬৩

[21]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ৪১৫

[22]. ঐ, পৃঃ ৪৩৩-৪৩৪; তাযকিরাতুল মুনাযিরীন ১/৪৬৯-৪৭৪

[23]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ৪৪১-৪৪২; নূরে তাওহীদ, পৃঃ ৪৫-৪৬; তাযকিরাতুল মুনাযিরীন ১/৫০৯-৫২৩

[24]. আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৬৫

[25]. ঐ, পৃঃ ১৭৪

[26]. নুযহাতুল খাওয়াতির ৮/১২০৫; আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৭৬; উইকিপিডিয়া

[27]. নুযহাতুল খাওয়াতির ৮/১২০৫

[28]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ১৯৪-১৯৬

[29]. রাঈসুল মুনাযিরীন, পৃঃ ২৬৬-২৬৭

[30]. নুযহাতুল খাওয়াতির ৮/১২০৫

[31]. মাওলানা আব্দুল মাজেদ দরিয়াবাদী, মু‘আছিরীন (কলকাতা : কোহে নূর আর্ট প্রেস, ১ম প্রকাশ, ১৯৭৯), পৃঃ ১২৪

[32]. নূরে তাওহীদ, পৃঃ ৪৫; তাযকিরাতুল মুনাযিরীন ১/২৫২-২৭৪; আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৮০-১৮২

[33]. আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৮০

[34]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ৩৯১-৩৯৩; তাযকিরাতুল মুনাযিরীন ১/২৭৪-২৭৬; তাযকেরায়ে আবুল অফা, পৃঃ ৭৮; নূরে তাওহীদ, পৃঃ ৪৫

[35]. আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৮৩-১৮৪

[36]. ঐ, পৃঃ ১৮২

[37]. তাযকিরাতুল মুনাযিরীন ১/২৭৬; ড. নওয়ায দেওবন্দী, আকাবিরে দেওবন্দ জীবন ও কর্ম, মাওলানা শামসুদ্দীন সাদী অনূদিত (ঢাকা : আনোয়ার লাইব্রেরী, ১ম প্রকাশ, মার্চ ২০১৫), ২য় খন্ড, পৃঃ ৩৭১

[38]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ৩৯৩-৩৯৫; রাঈসুল মুনাযিরীন, পৃঃ ২৬৮; আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৯৫-১৯৭

[39]. আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৯৭। গৃহীত : দাঊদ রায, হায়াতে ছানাঈ, পৃঃ ৫৯৬

[40]. তাযকেরায়ে আবুল অফা, পৃঃ ৮৭

[41]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ৩৯৫; আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৯৫






ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) (শেষ কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) - ড. নূরুল ইসলাম
মাওলানা আব্দুল্লাহ মাদানী ঝান্ডানগরী - ড. নূরুল ইসলাম
মাওলানা অহীদুয্যামান লক্ষ্মৌভী : তাক্বলীদের বন্ধন ছিন্নকারী খ্যাতিমান মুহাদ্দিছ - ড. নূরুল ইসলাম
আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর - ড. নূরুল ইসলাম
শেরে পাঞ্জাব, ফাতিহে কাদিয়ান মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহঃ) (৯ম কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) (৪র্থ কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) (শেষ কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
শেরে পাঞ্জাব, ফাতিহে কাদিয়ান মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহঃ) (৭ম কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ)-এর ব্যাপারে কিছু আপত্তি পর্যালোচনা - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (৩য় কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর (শেষ কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
আরও
আরও
.