পর্ব ১ । পর্ব ২ ।

(মার্চ’১৯ সংখ্যার পর)

খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে হুযায়ফা (রাঃ)

ক. আবুবকর (রাঃ)-এর আমলে হুযায়ফা :

নবী করীম (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে আবুবকর (রাঃ) খেলাফতে অধিষ্ঠিত হ’লে হুযায়ফা (রাঃ) তাঁর নিকটে বায়‘আত করেন। আবুবকর (রাঃ) ২ বছর ৩ মাস ১০ দিন খেলাফতে অধিষ্ঠিত থাকেন। তিনি এ সময় মুরতাদদের দমন এবং পারস্য ও সিরিয়া বিজয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ফলে সে সময়ে আবুবকর (রাঃ)-এর পক্ষে হুযায়ফা (রাঃ)-কে কোন দায়িত্বে নিযুক্ত করা সম্ভব হয়নি।[1] 

খ. ওমর (রাঃ)-এর আমলে হুযায়ফার দায়িত্ব পালন :

ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) খেলাফতে আসীন হয়ে হুযায়ফা (রাঃ)-কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত করেন। ওমর (রাঃ)-এর নিকটে হুযায়ফা (রাঃ)-এর মার্যাদার স্তরও ছিল অতি উচ্চে। খলীফা ওমর (রাঃ)-এর সময় তিনি কূফা শহরের গোঁড়া পত্তনের জন্য স্থান নির্ধারণ করেন।[2] তিনি মাদায়েন ও দাজলার তীরবর্তী এলাকায় তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করেন।[3]

একজন নতুন ওয়ালী আসছেন- এ খবর মাদায়েনবাসীদের কাছে পৌঁছে গেল। ফলে নতুন আমীরকে স্বাগত জানানোর জন্য তারা দলে দলে শহরের বাইরে সমবেত হ’ল। তারা এ মহান ছাহাবীর তাক্বওয়া, আল্লাহভীতি, সরলতা ও ইরাক বিজয়ের অনেক কথা শুনেছিল। সেকারণ একটি জাঁকজমকপূর্ণ কাফেলার সাথে তাঁর আগমনের প্রতীক্ষায় ছিল। কিন্তু না, কোন কাফেলার সাথে নয়। তারা দেখতে পেল কিছু দূরে গাধার উপরে সওয়ার হয়ে দীপ্ত চেহারার এক ব্যক্তি তাদের দিকে এগিয়ে আসছেন। গাধার পিঠে অতি পুরনো একটি জিন। তার ওপর বসে বাহনের পিঠের দু’পাশের পা ছেড়ে দিয়ে এক হাতে রুটি ও অন্য হাতে লবণ ধরে মুখে ঢুকিয়ে চিবোচ্ছেন। আরোহী ধীরে ধীরে জনতার মাঝখানে এসে পড়লেন। তারা ভাল করে তাকিয়ে দেখে বুঝল, ইনিই সেই ওয়ালী, যার প্রতীক্ষায় তারা দাঁড়িয়ে আছে। এই প্রথমবারের মত তাদের কল্পনা হোঁচট খেল। পারস্যের কিসরা বা তাঁর পূর্ব থেকে তাদের দেশে এমন ওয়ালীর আগমণ আর কখনো ঘটেনি।

তিনি চললেন এবং লোকেরাও তাঁকে ঘিরে পাশাপাশি চলল। তিনি আবাস স্থলে পৌঁছে উপস্থিত জনতাকে তাদের প্রতি লেখা খলীফার ফরমান পাঠ করে শোনালেন। খলীফা ওমর (রাঃ)-এর নিয়ম ছিল, নতুন ওয়ালী বা শাসক নিয়োগের সময় সেই এলাকার অধিবাসীদের প্রতি বিভিন্ন নির্দেশ ও ওয়ালীর দায়িত্ব ও কর্তব্য স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া। কিন্তু হুযায়ফা (রাঃ)-এর নিয়োগপত্রে মাদায়েনবাসীর প্রতি শুধু একটি নির্দেশ ছিল- ‘তোমরা তাঁর কথা শুনবে ও আনুগত্য করবে।’ তিনি যখন তাদের সামনে খলীফার এ ফরমান পাঠ করে শোনালেন, তখন চারদিক থেকে আওয়ায উঠল, বলুন, আপনার কী প্রয়োজন। আমরা সবই দিতে প্রস্তুত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছাহাবী ও খুলাফায়ে রাশেদার পদাঙ্ক অনুসরণকারী হযায়ফা (রাঃ) বললেন, ‘আমার নিজের পেটের জন্য শুধু কিছু খাবার, আর আমার গাধাটির জন্য কিছু ঘাস-খড় প্রয়োজন। যতদিন এখানে থাকব, আপনাদের কাছে শুধু এতটুকুই চাইব।’ তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে আরো বললেন, ‘তোমরা ফিৎনার স্থানগুলি থেকে দূরে থাকবে। লোকেরা জানতে চাইল, ফিৎনার স্থানগুলি কি? তিনি বললেন, আমীর বা শাসকদের বাড়ীর দরজাসমূহ। তোমাদের কেউ আমীর বা শাসকের কাছে এসে মিথ্যা দ্বারা তাকে সত্যায়িত করবে এবং তার মধ্যে যা নেই তাই বলে তার প্রশংসা করবে- এটাই মূলতঃ ফিৎনা’।

উক্ত পদে কিছু দিন থাকার পর কোন এক কারণে খলীফা ওমর (রাঃ) তাঁকে রাজধানী মদীনায় তলব করেন। খলীফার ডাকে সাড়া দিয়ে হুযায়ফা (রাঃ) যে অবস্থায় একদিন মাদায়েন গিয়েছিলেন ঠিক একই অবস্থায় মদীনার দিকে যাত্রা করেন। হুযায়ফা আসছেন, এ খবর পেয়ে খলীফা মদীনার কাছাকাছি পথের পাশে এক স্থানে লুকিয়ে থাকেন। নিকটে আসতেই হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়ান এবং তাঁকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘হুযায়ফা, তুমি আমার ভাই, আর আমিও তোমার ভাই’। তারপর সেই পদেই তাঁকে বহাল রাখেন।[4]

মাদায়েনে ওয়ালী থাকাকালে একবার জনতার উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে তিনি বলেন, ‘হে জনমন্ডলী! তোমরা তোমাদের দাসদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখ। দেখ, তারা কোথা থেকে কিভাবে উপার্জন করে তোমাদের নির্ধারিত মজুরী পরিশোধ করছে। কারণ হারাম উপার্জন খেয়ে দেহে যে গোশত তৈরী হয় তা কখনও জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আর এটাও জেনে রাখ, মদ বিক্রেতা, ক্রেতা ও তাঁর প্রস্তুতকারক, সকলেই তা পানকারীর সমান’।[5]

ওমর (রাঃ)-এর নিকটে হুযায়ফার স্থান : 

১. হুযায়ফা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা ওমর (রাঃ)-এর নিকটে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তিনি বললেন, ফিৎনা-ফাসাদ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বক্তব্য তোমাদের মধ্যে কে মনে রেখেছ? হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, যেমনভাবে তিনি বলেছিলেন হুবহু তেমনিই আমি মনে রেখেছি। ওমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী মনে রাখার ব্যাপারে তুমি খুব দৃঢ়তার পরিচয় দিচ্ছ। আমি বললাম, (রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছিলেন) মানুষ নিজের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, পাড়া-প্রতিবেশীদের ব্যাপারে যে ফিৎনায় পতিত হয়- ছালাত, ছিয়াম, ছাদাক্বাহ, (ন্যায়ের) আদেশ ও (অন্যায়ের) নিষেধ তা দূরীভূত করে দেয়। ওমর (রাঃ) বললেন, আমার উদ্দেশ্য তা নয়। বরং আমি সেই ফিৎনার কথা বলছি, যা সমুদ্র তরঙ্গের ন্যায় ভয়াল হবে। হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! সে ব্যাপারে আপনার ভয়ের কোন কারণ নেই। কেননা আপনার ও সে ফিৎনার মাঝখানে একটি বন্ধ দরজা রয়েছে। ওমর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, সে দরজাটি ভেঙ্গে ফেলা হবে, না খুলে দেয়া হবে? হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, ভেঙ্গে ফেলা হবে। ওমর (রাঃ) বললেন, তাহ’লে তো আর কোন দিন তা বন্ধ করা যাবে না। [হুযায়ফা (রাঃ)-এর ছাত্র শাক্বীক (রহ.) বলেন], আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ওমর (রাঃ) কি সে দরজাটি সম্বন্ধে জানতেন? হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ, দিনের পূরে রাতের আগমন যেমন সুনিশ্চিত, তেমনি নিশ্চিতভাবে তিনি জানতেন। কেননা আমি তাঁর কাছে এমন একটি হাদীছ বর্ণনা করেছি, যা মোটেও ক্রুটিযুক্ত নয়। (দরজাটি কী) এ বিষয়ে হুযায়ফা (রাঃ)-এর নিকট জানতে আমরা ভয় পাচ্ছিলাম। তাই আমরা মাসরূক (রহ.)-কে বললাম এবং তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, দরজাটি ওমর (রাঃ) নিজেই।[6]

২. ওমর (রাঃ) হুযায়ফাকে খুব সম্মান করতেন। কোন মুসলমান মারা গেলে ওমর (রাঃ) জিজ্ঞেস করতেন যে, হুযায়ফা কি এর জানাযায় শরীক হয়েছে? যদি বলা হ’ত হ্যাঁ তাহ’লে তিনিও জানাযায় শরীক হ’তেন। আর যদি বলা হ’ত না তাহ’লে তিনি তার জানাযা পড়তেন না।[7]

৩. হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি একদিন মসজিদে বসে আছি। ওমর (রাঃ) আমার পাশ দিয়ে যেতে যেতে বললেন, হুযায়ফা, অমুক মারা গেছে, তার জানাযায় চল। একথা বলে তিনি চলে গেলেন। মসজিদ থেকে বের হ’তে যাবেন, এমন সময় পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখেন, আমি নিজ স্থানে বসে আছি। তিনি বুঝতে পেরে আমার কাছে ফিরে এসে বললেন, হুযায়ফা, আমি তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, সত্যি করে বল তো আমিও কি তাদের (মুনাফিকদের) একজন? আমি বললাম, নিশ্চয়ই না। আপনার পরে আর কাউকে কখনও আমি এমন সনদ দেব না।[8]

৪. একবার খলীফা ওমর (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা আমার কর্মকর্তাদের মধ্যে কি কোন মুনাফিক আছে? হুযায়ফা বললেন, একজন আছে। খলীফা বললেন, আমাকে তার একটু পরিচয় দাও না। বললেন, আমি তা দেব না। হুযায়ফা বলেন, তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যে ওমর তাকে বরখাস্ত করেন। সম্ভবতঃ তিনি সঠিক হিদায়াত পেয়েছিলেন।[9]

৫. একবার খলীফা ওমর (রাঃ) তাঁর পাশে বসা ছাহাবীদের বললেন, আচ্ছা আপনারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার কথা একটু বলুন তো! প্রায় সকলেই বললেন, আমাদের একান্ত ইচ্ছা এই যে, আমরা যদি ধন-রত্নে ভরা একটি ঘর পেতাম, আর তার সবই আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দিতে পারতাম। সবার শেষে ওমর (রাঃ) বললেন, আমার বাসনা এই যে, আমি যদি আবু উবায়দাহদাহ, মু‘আজ ও হুযায়ফা (রাঃ) মত মানুষ বেশী বেশী পেতাম, আর তাদের ওপর রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব অর্পণ করতে পারতাম। একথা বলে তিনি দীনার ভর্তি একটি থলে একজন লোকের হাতে দিয়ে বলেন, এগুলি হুযায়ফার নিকট নিয়ে যাও, আর তাকে বল, খলীফা এগুলি আপনার প্রয়োজনে খরচের জন্য পাঠিয়েছেন। তাকে আরো বলে দেন, তুমি একটু অপেক্ষা করে দেখে আসবে, সে দীনারগুলি কি করে। লোকটি থলেটি নিয়ে হুযায়ফা (রাঃ)-এর নিকট গেল। আর হুযায়ফা (রাঃ) সাথে সাথে তা গরীব-মিসকীনের মধ্যে বন্টন করে দিলেন।[10]

গ. ওছমান (রাঃ)-এর আমলে হুযায়ফার দায়িত্ব পালন :

ওছমান (রাঃ)-এর খেলাফতকালের পুরো সময় এবং আলী (রাঃ)-এর খেলাফতের কিছু দিন, একটানা এ দীর্ঘ সময় তিনি মাদায়েনের ওয়ালী পদে আসীন ছিলেন।[11]

ওছমান (রাঃ)-এর খেলাফতকালে হিজরী ৩০ সনে সাঈদ ইবনু ‘আছের সাথে কূফা থেকে খুরাসানের উদ্দেশ্যে বের হন। তুমাইস নামক বন্দরে শত্রু বাহিনীর সাথে প্রচন্ড সংঘর্ষ হয়। এখানে সাঈদ ইবনু আছ ‘ছালাতুল খাওফ’ (ভীতিকালীন ছালাত) আদায় করেন। তিনি ছালাত পড়ানোর পূর্বে হুযায়ফার নিকট থেকে তার পদ্ধতি জেনে নেন।[12] এরপর তিনি ‘রায়’-এ যান এবং সেখান থেকে সালমান ইবনু রাবী‘আ ও হাবীব ইবনু মাসলামার সাথে আরমেনিয়ার দিকে অগ্রসর হন। এ অভিযানে তিনি কূফা বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন।[13]

হিজরী ৩১ সনে ‘খাকানে খাযার’-এর বাহিনীর সাথে বড় ধরনের একটি সংঘর্ষ হয়। এতে সালমানসহ প্রায় চার হাযার মুসলিম শহীদ হন। সালমানের শাহাদাতের পর হুযায়ফা গোটা বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হন। কিন্তু অল্প কিছুদিন পর তাঁকে অন্যত্র বদলী করা হয় এবং তাঁর স্থলে মুগীরা ইবনু শু‘বাকে নিয়োগ করা হয়। হুযায়ফা (রাঃ) ‘বাব’-এর ওপর তিনবার অভিযান চালান।[14] তৃতীয় হামলাটি ছিল হিজরী ৩৪ সনে।[15] এ অভিযান ছিল ওছমান (রাঃ)-এর খিলাফতের শেষ দিকে। এ সকল অভিযান শেষ করে তিনি মাদায়েনে নিজ পদে ফিরে আসেন।

খলীফা ওছমান (রাঃ) পবিত্র কুরআনের যে মূল কপি তৈরী করেন এবং খেলাফতের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠান, তার প্রধান ভূমিকা পালন করেন মূলতঃ হুযায়ফা (রাঃ)। এ সম্পর্কে ইমাম বুখারী (রহঃ) আনাস (রাঃ)-এর একটি বর্ণনা নকল করেছেন। আনাস (রাঃ) বলেন, ‘হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান সিরিয়াবাসীদের সাথে ইরাক, আরমেনিয়া ও আজারবাইজান অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। তিনি এ সকল এলাকার নবদীক্ষিত অনারব মুসলিমদের কুরআন পাঠে তারতম্য লক্ষ্য করে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। সেখান থেকে মদীনায় ফিরে খলীফাকে বললেন, ‘আমি আরমেনিয়া ও আজারবাইজানের লোকদের দেখেছি, তারা সঠিকভাবে কুরআন পড়তে জানে না। তাদের কাছে কুরআনের আসল কপি পৌঁছাতে না পারলে ইহুদী ও নাছারার হাতে তাওরাত ও ইনজীলের যে অবস্থা হয়েছে, এ উম্মতের হাতে কুরআনের অবস্থাও অনুরূপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে’। তখন খলীফা বিশিষ্ট ছাহাবীদের সাথে পরামর্শ করে আবুবকর ছিদ্দীক্ব (রাঃ) কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ‘মাছহাফ’ এনে তার হুবহু নকল করে বিভিন্ন এলাকায় প্রচার করেন। এভাবে পবিত্র কুরআনের হিফাযতের ব্যাপারে হুযায়ফা (রাঃ) পরোক্ষভাবে বিরাট অবদান রাখেন। তিনি গোটা ইরাক ও পারস্যবাসীকে কুরআনের এক পঠনের ওপর সমবেত করেন।[16]

ঘ. আলী (রাঃ)-এর আমলে হুযায়ফা :

ইসলামের চতুর্থ খলীফা আলী ইবনু আবী তালিব (রাঃ)-এর খেলাফতকালে হুযায়ফা (রাঃ) তেমন কোন ভূমিকা পালন করতে পারেননি। কেননা এ সময় আলী (রাঃ) ওছমান (রাঃ)-এর শাহাদত পরবর্তী ফিৎনা প্রশমনে ব্যস্ত ছিলেন। এছাড়া হুযায়ফা (রাঃ) আলী (রাঃ)-এর খেলাফতকালে ৪০ দিনের মত জীবিত ছিলেন। তবে এ সময়ে তিনি দু’টি কাজ করেছিলেন- ১. নতুন খলীফার নামে বায়‘আত করেন। ২. তাঁর দুই ছেলে ছাফওয়ান ও সাঈদকে আলী (রাঃ)-এর বায়‘আত করার এবং তাঁকে সাহায্য করার অছিয়ত করেন। তারা পিতার অছিয়ত পালন করেন এবং ছিফফীনের যুদ্ধে আলী (রাঃ)-এর পক্ষে শাহাদত বরণ করেন।[17]

খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে হুযায়ফা (রাঃ)-এর যুদ্ধে অংশগ্রহণ : হুযায়ফা (রাঃ) পারস্যের নিহাওয়ান্দ, দিনাওয়ার, হামযান, মাহ্, রায়, আযারবাইজান, নাছীবীন, ক্বাদেসিয়া, আরমেনিয়া প্রভৃতি অভিযানে অংশগ্রহণ করেন এবং ঐসব অঞ্চল জয় করেন।[18]

(চলবে)


[1]. ইবরাহীম মুহাম্মাদ আল-আলী, হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান, (দিমাশক : দারুল কলম, ১ম প্রকাশ, ১৪১৭হিঃ/১৯৯৬ খ্রিঃ), পৃঃ ৫৯-৬০।

[2]. তারীখুত তাবারী ৪/১৮৯; হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান, পৃঃ ৬৩-৬৪

[3]. তারীখুত তাবারী ৪/১৮৯, ৪/২৪৭; তাবাক্বাতে ইবনে সাদ ৬/৭-৮; হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান, পৃঃ ৬৪

[4]. আল-আ‘লাম ২/১৭১ পৃঃ; হায়াতুছ ছাহাবাহ ৩/২৬৬, ২/৭৩ পৃঃ; তাহযীবুত তাহযীব ২/১৯৩ পৃঃ।

[5]. হায়াতুছ ছাহাবাহ ৩/৪৮২ পৃঃ

[6]. বুখারী হা/৫২৫, ১৪৩৫, ১৮৯৫, ৩৫৮৬, ৭০৯৬; মুসলিম হা/১৪৪।

[7]. শাজারাতুয যাহাব ১/৪৪ পৃঃ; আল-ইস্তিআব ১/৩২৫ পৃঃ।

[8]. তারীখু ইবন আসাকির ১/৯৭; যাহাবী, তারীখ ২/১৫৩।

[9]. ছুওয়ারুম মিন হায়াতিছ ছাহাবাহ ৪/১৩৬-১৩৭; আল-ইস্তিআব ১/৩২৫ পৃঃ।

[10]. আত-তারীখুছ ছগীর ১/৫৪; তারীখু ইবনু আসাকির ১/৯৯, ১০০; হায়াতুছ ছাহাবাহ ২/২৩৩।

[11]. আল-ইছাবাহ ১/৩১৭ পৃঃ।

[12]. মুসনাদ ৫/৩৮৫ পৃঃ; রাবীআ ৫/৩৮৩৬-৩ পৃঃ।

[13]. তারীখুত তাবারী ৫/২৮৯ পৃঃ।

[14]. তারীখুত তাবারী ৫/২৮৯ পৃঃ।

[15]. তারীখুত তাবারী ৫/২৯৩ পৃঃ।

[16]. বুখারী, ‘জামউল কুরআন’ অধ্যায়; আত-তিব ইয়ান ফী উলূমিল কুরআন, পৃঃ ৫৭।

[17]. আল-ইস্তিআব, ১/৩৩৪ পৃঃ; হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান, পৃঃ৮৯-৯০।

[18]. আল-ইসতিআব; আল-ইছাবার টীকা ১/২৭৮ পৃঃ; তাহযীবুত তাহযীব ২/১৯৩ পৃঃ।






যয়নাব বিনতু খুযাইমা (রাঃ) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
উম্মুল মুমিনীন জুওয়াইরিয়া বিনতুল হারেছ (রাঃ) (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
উম্মু হাবীবা বিনতু আবী সুফিয়ান (রাঃ) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
ইসলামের প্রথম দাঈ, ওহোদের ঝান্ডাবাহী শহীদ ছাহাবী মুছ‘আব বিন ওমায়ের (রাঃ) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
আস‘আদ বিন যুরারাহ (রাঃ) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
হাসান বিন আলী (রাঃ)(শেষ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
মায়মূনা বিনতুল হারেছ (রাঃ) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
হোসাইন বিন আলী (রাঃ) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
উম্মুল মুমিনীন ছাফিয়া (রাঃ) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
খুবায়েব বিন আদী (রাঃ) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
আরও
আরও
.