জুওয়াইরিয়া (রাঃ)-এর স্বপ্ন :
জুওয়াইরিয়া বিনতুল হারেছ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মুরাইসী‘ অভিযানের তিন দিন পূর্বে আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, চাঁদ মদীনা হ’তে কিছুটা সরে এসেছে, এমনকি আমার কক্ষে পতিত হয়েছে। এ ঘটনা আমি কাউকে জানাতে অপসন্দ করলাম। ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অভিযান উপলক্ষে আসলেন। অতঃপর আমরা যখন বন্দী হয়ে মদীনায় নীত হ’লাম, তখন আমি স্বপ্নে দেখা ঘটনা বাস্তবে রূপায়িত হওয়ার প্রত্যাশা করলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে মুক্ত করে বিবাহ করলেও আমি আমার কওমের কাউকে উক্ত স্বপ্নের কথা বলিনি। আমি কাউকে বলেছি এরূপ আমার স্মরণেও ছিল না। কিন্তু মুসলমানরা যখন আমার কওমের সবাইকে মুক্ত করে দিল, তখন আমার জনৈক চাচাত বোন আমাকে উক্ত খবর বললে, আমি আল্লাহ্র প্রশংসা করলাম।১
এ স্বপ্নের পরে রাসূলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ছিল তার হৃদয়ে লালিত বাসনা ও কামনা। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন তাকে বিবাহের প্রস্তাব দেন তখন তিনি আনন্দে আপ্লুত হন। তখনকার অবস্থা ড. আয়েশা আশ-শাত্বী এভাবে বর্ণনা করেন, فةألق وجهها الجميل بفرحة غامرة‘তখন তার সুন্দর মুখমন্ডল সীমাহীন খুশির বন্যায় চমৎকৃত হয়ে ওঠে’।২
বিবাহের সন-তারিখ :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জুওয়াইরিয়া (রাঃ)-কে ৫ম হিজরীতে বিবাহ করেন।৩ এ সময় তার বয়স হয়েছিল ২০ বছর। এ সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেন, تزوجني رسول الله صلى الله عليه وسلم وأنا بنة عشرين سنة-‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে বিবাহ করেন, তখন আমি ছিলাম ২০ বছরের মেয়ে’।৪
বিবাহের কারণ :
জুওয়ারিয়া (রাঃ)-কে বিবাহ করার পিছনে দ্বীনী কারণই ছিল প্রধান। নবী করীম (ছাঃ) বুঝতে পেরেছিলেন যে, গোত্রপ্রধানের কন্যার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপিত হ’লে মুসলমানদের সাথে বনু মুছতালিকের শত্রুতার চির অবসান ঘটবে। সেটাই ঘটেছিল। এরপর বনু মুছতালিক গোত্রের কেউ কোন দিন রাসূল (ছাঃ)-এর বিরোধিতা করেনি; বরং ক্রমান্বয়ে তারা ইসলামে দীক্ষিত হয়।৫ এছাড়া জুওয়াইরিয়া (রাঃ)-কে বিবাহের আরেকটি কারণ হচ্ছে সর্দার কন্যা হিসাবে তাঁকে অপমান, লাঞ্ছনার হাত থেকে রক্ষা করা, তাঁকে যোগ্যস্থানে রেখে তাঁর সম্মান বজায় রাখা এবং দাসত্বের কবল থেকে মুক্ত রেখে তাঁকেও অন্যান্য স্বাধীনা মহিলাদের সমপর্যায়ভুক্ত করা।৬
চেহারা ও চারিত্রিক গুণাবলী :
জুওয়াইরিয়া (রাঃ) অত্যন্ত আকর্ষণীয় চেহারার অধিকারিণী ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে আয়েশা (রাঃ) বলেন, وكانت حلوة ملاحة لا يراها أحد إلا أخذت بنفسه، فأتت رسول الله صلى الله عليه وسلم تستعينه فكرهتها- يعني لحسنها،‘তিনি এতই কমনীয়া ও মিষ্টভাষিণী ছিলেন যে, তাকে যে দেখতো সে তাকে হৃদয়ে স্থান না দিয়ে পারতো না। তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে সাহায্যের জন্য আসলেন। আমি তার সুন্দর চেহারার কারণে তাকে অপসন্দ করলাম’।৭ হাফিয যাহাবী বলেন, وكانت من أجمل النساء‘তিনি ছিলেন অত্যধিক সুন্দরী মহিলা’।৮
তাঁর চেহারা ও গুণাবলীর বর্ণনা অন্যত্র এভাবে এসেছে, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আয়েশার কক্ষে উপবিষ্ট ছিলেন। এমতাবস্থায় আয়েশা শুনতে পেলেন যে, কোন এক মহিলা রাসূলের সাথে সাক্ষাতের অনুমতি প্রার্থনা করছে। আয়েশা (রাঃ) দরজার দিকে গিয়ে দেখেন, ‘সেখানে কমনীয়া এক যুবতী দন্ডায়মান, অসম্ভব মিষ্টি-মধুর তার চেহারা। যে তাকে দেখবে সে তাকে হৃদয়ে স্থান না দিয়ে পারবে না। তার বয়স ২০ বছরের কাছাকাছি। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা ও ভয়ে সে কাঁপছে। আর তার এ আপ্লুতভাব তার প্রাণবন্ততা ও মোহনীয়তাকে আরো বৃদ্ধি করে দিয়েছে।৯
জুওয়াইরিয়া (রাঃ) ছিলেন অত্যন্ত আত্মসম্মানবোধ সম্পন্না ও বিনয়ী মহিলা। যেমন ড. আয়েশা আশ-শাত্বী বলেন, ودخلت الشبابة المليحة فقالت فى ضراعة تمازجها عزة، ‘আর লাবণ্যময়ী যুবতী গৃহে প্রবেশ করে (তার বক্তব্য) বলল। যাতে ছিল বিনয়-নম্রতা ও ইয্যত-সম্মানের সংমিশ্রণ।১০ এছাড়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে তিনি বললেন, وهى لاتكاد تصدق انها قد نجت من الضياع والهوان،‘আর এটা হয়তো ছাদাক্বা হবে না, এটা নীচতা, হীনতা ও অপমান-লাঞ্ছনা থেকে মুক্তি দেবে’।১১
ইবাদত-বন্দেগী :
জুওয়াইরিয়া (রাঃ) অত্যন্ত ইবাদতগুযার ছিলেন। ইবাদতের প্রতি তাঁর বিশেষ আকর্ষণ ছিল। তিনি দিনের অধিকাংশ সময় ইবাদতে মশগূল থাকতেন। তিনি বলেন, একদা সকালে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার নিকটে আসলেন, আমি তখন তাসবীহ-তাহলীল করছিলাম। অতঃপর কোন এক প্রয়োজনে তিনি চলে গেলেন। দ্বিপ্রহরে তিনি আবার ফিরে এসে বললেন, এখনও তুমি বসে আছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু বাক্য শিক্ষা দেব না, যেগুলি তুমি যা বলছ, তার সাথে তুলনা করা যেতে পারে কিংবা তুমি এ যাবৎ যা বলছ তার সাথে এটা ওযন করা যেতে পারে? এরপর তিনি আমাকে নিম্নের দো‘আটি শিখালেন, سُبْحَانَ اللهِ بِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ، سُبْحَانَ اللهِ زِنَةَ عَرْشِهِ، سُبْحَانَ اللهِ رِضَا نَفْسِهِ، سُبْحَانَ اللهِ مِدَادَ كَلِمَاتِهِ-‘আল্লাহ্র পবিত্রতা বর্ণনা করছি তাঁর প্রশংসা সহকারে তাঁর সৃষ্টি সংখ্যার সমপরিমাণ, আল্লাহ্র পবিত্রতা বর্ণনা করছি তাঁর আরশের ওযন পরিমাণ, আল্লাহ্র পবিত্রতা বর্ণনা করছি তাঁর ইচ্ছার সংখ্যানুপাতে ও আল্লাহ্র পবিত্রতা বর্ণনা করছি তাঁর বাক্য সমূহের সংখ্যা পরিমাণ’। শব্দগুলি তিনবার বলতে বললেন।১২
অপর একটি বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (ছ্ঃ) জুওয়াইরিয়া (রাঃ)-এর নিকটে আসলেন, তিনি ছায়েম ছিলেন। নবী করীম (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি গতকাল ছিয়াম রেখেছিলে? তিনি বললেন, না। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, আগামীকাল কি ছিয়াম পালন করার ইচ্ছা কর? তিনি বললেন, না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তাহ’লে ইফতার কর (ছিয়াম ভেঙ্গে ফেল)’।১৩
সম্পদের অংশ দান :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর অন্যান্য স্ত্রীর মত জুওয়াইরিয়া (রাঃ)-এর উপর পর্দা পালনের বিধান আরোপ করেন এবং অন্যদের মত তার জন্য সম্পদের অংশ নির্ধারণ করেন।১৪ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খায়বার যুদ্ধে প্রাপ্ত গনীমতের সম্পদ থেকে ৮০ অসাক১৫ খেজুর ও ২০ অসাক যব বা গম প্রদান করেন।১৬
ইলমে হাদীছে অবদান :
জুওয়াইরিয়া (রাঃ)-এর নিকট থেকে ৭টি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে ১টি ছহীহ বুখারীতে এবং ২টি ছহীহ মুসলিমে উল্লিখিত হয়েছে।১৭ তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট থেকে হাদীছ শ্রবণ করেন ও বর্ণনা করেন।১৮ তাঁর নিকট থেকে আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (মৃঃ ৬৮হিঃ/৬৮৭খ্রীঃ), আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (মৃঃ ৭৩/৬৯২), ওবায়দ ইবনুস সিবাক, তুফায়ল, আবু আইউব মুরাগী (৮০ হিঃ/৬৯৯খ্রীঃ), কুলছূম ইবনু মুছতালিক, আব্দুল্লাহ ইবনু শাদ্দাদ ইবনিল হাদ (মৃঃ ৮১হিঃ/৭০০খ্রীঃ), কুরায়ব, মজাহিদ (রহঃ) প্রমুখ হাদীছ বর্ণনা করেছেন।১৯
মৃত্যু :
জুওয়াইরিয়ার গর্ভে রাসূল (ছাঃ)-এর কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করেনি। তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ইনতিকালের পরে অনেকদিন জীবিত ছিলেন।২০ জুওয়াইরিয়া (রাঃ)-এর মৃত্যুকাল নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তিনি ৫০ মতান্তরে ৫৬ হিজরী সালে ইনতিকাল করেন।২১ তাঁর মৃত্যুসাল ইবনুল জাওযী ৫০ হিজরী, অন্যরা ৫৫ হিজরী এবং ওয়াকেদী ৫৬ হিজরী বলে উল্লেখ করেছেন।২২ তবে বিশুদ্ধ মতে তিনি ৫৬ হিজরীর রবীউল আউয়াল মাসে মু‘আবিয়া ইবনু আবী সুফিয়ানের খিলাফতকালে ৬৫ বছর মতান্তরে ৭০ বছর বয়সে ইনতিকাল করেন।২৩ মদীনার তৎকালীন গভর্ণর মারওয়ান ইবনুল হাকাম তাঁর জানাযা ছালাত পড়ান।২৪
উপসংহার :
জুওয়াইরিয়া বিনতুল হারিছ (রাঃ) সর্দারকন্যা হ’লেও তিনি ছিলেন অতীব বিনয়ী ও নম্র স্বভাবের লজ্জাশীলা মহিলা। আত্মসম্মানবোধ তাঁর মাঝে ছিল কিন্তু গর্ব-অহংকার তাঁর মাঝে ছিল না। কোন দোষ-ত্রুটি তাঁর নির্মল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে ম্লান করতে পারেনি। তিনি তাঁর অবসরকে ইবাদতেই কাটাতেন। রাসূলের সকল আদেশকে শিরোধার্য করে তাঁর যথাসাধ্য অনুসরণ করতেন। এক কথায় তিনি ছিলেন রাসূলের জন্য নিবেদিতা। তাই তাঁর জীবনীতে আমাদের জন্য অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। আমাদের কন্যা-জায়া-জননীরা তাঁর আদর্শকে উপজীব্য করে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে পারলে জগৎসংসারে তাদের পারিবারিক জীবন হবে সুখ-শান্তিময় এবং পরকালে লাভ করবে নাজাত। আল্লাহ আমাদেরকে এই মহিয়ষী মহিলার জীবনী থেকে ইবরাত হাছিলের তাওফীক্ব দিন- আমীন!
১. মুস্তাদরাক, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ২৯; দালাইলুন নবুওয়াত, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৫০।
২. তারাজিমু সাইয়্যেদাতি বায়তিন নবুওয়াত, পৃঃ ৩৫৮।
৩. সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আল-জরদানী, ফাতহুল আল্লাম বিশারহি মুরশিদিল আনাম, ১ম খন্ড, (কায়রো : দারুস সালাম, ৪র্থ প্রকাশ, ১৪১০হিঃ/ ১৯৯০ খ্রীঃ), পৃঃ ২৩৮।
৪. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৬৩; মুস্তাদরাক, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ২৮-২৯।
৫. মনসুর আহমাদ, বহু বিবাহ ইসলাম ও মুহাম্মদ (সা) (ঢাকা : তাসনিম পাবলিকেসন্স, ১৯৯৫), পৃঃ ২৪৮-৪৯।
৬. ছালাহুদ্দীন মকবুল আহমাদ, আল-মারআতু বায়না হিদায়াতিল ইসলাম ওয়া গাওয়াতিল ই‘লাম (কুয়েত : দারু ইলাফ, ১ম প্রকাশ, ১৯৯৭ খ্রীঃ/১৪১৮হিঃ), পৃঃ ২৬৮।
৭. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৬৫।
৮. তদেব, পৃঃ ২৬১।
৯. তারাজিম, পৃঃ ৩৫৭।
১০. ঐ, পৃঃ ৩৫৮।
১১. ঐ, পৃঃ ৩৫৮।
১২. মুসলিম হা/২৭২৬, ‘যিকর ও দো‘আ’ অধ্যায়; মিশকাত হা/২৩০১।
১৩. বুখারী, ৪/২০৩, ‘ছাওম’ অধ্যায়, ‘জুম‘আর দিন ছিয়াম পালন’ অনুচ্ছেদ; আবূদাউদ, হা/২৪২২, ‘ছাওম’ অধ্যায়।
১৪. মুস্তাদরাক ৪/২৯; ত্বাবাকাত, ৮/৯৪ পৃঃ।
১৫. ৬০ ছা‘তে এক অসাক। আর এক ছা‘র পরিমাণ হচ্ছে আড়াই কেজি।
১৬. ত্বাবাকাত, ৮/৯৫ পৃঃ।
১৭. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৬৩।
১৮. তাহযীবুত তাহযীব, ১২শ খন্ড, পৃঃ ৩৫৮।
১৯. হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী, আল-ইছাবাহ, ৮ম খন্ড (বৈরুত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তা. বি.), পৃঃ ৪৪; তাহযীবুত তাহযীব, ১২শ খন্ড, পৃঃ ৩৫৮।
২০. আত-তারীখুল ইসলামী, ১ম ও ২য় খন্ড, পৃঃ ৩৬০।
২১. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৬৩, তাহযীবুত তাহযীব, ১২শ খন্ড, পৃঃ ৩৫৮।
২২. হাফেয ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ৪র্থ খন্ড, ৫ম জুয (কায়রো : দারুর রাইয়ান ১ম প্রকাশ, ১৪০৮হিঃ/১৯৮৮খ্রীঃ), পৃঃ ৫১; তাহযীবুত তাহযীব, ১২শ খন্ড, পৃঃ ৩৫৮।
২৩. তারাজিম, পৃঃ ৩৬২।
২৪. আত-ত্বাবাকাত, ৮ম খন্ড, পৃঃ ৯৫; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২য়খন্ড, পৃঃ ২৬৩; তাহযীবুত তাহযীব, ১২শ খন্ড, পৃঃ ৩৫৮।