
একজন মুসলিম ব্যক্তি মহান আল্লাহ, ফেরেশতা, নবী-রাসূল, আসমানী কিতাব, আখেরাত ও তাক্বদীর সম্পর্কে কিরূপ আক্বীদা পোষণ করবে এর সবকিছুই পবিত্র কুরআনে যথাযথভাবে বর্ণিত হয়েছে। কুরআনের এমন কোন সূরা নেই যেখানে আক্বীদা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়নি। তাওহীদ কি, তাওহীদপন্থী কারা, তাদের দুনিয়ায় করণীয় কি, দুনিয়ায় বিজয় এবং পরকালে পরম সুখের জান্নাত, বিপরীতে শিরক কি, মুশরিকের পরিচয়, দুনিয়ায় তাদের পরাজয় এবং আখেরাতে জাহান্নাম ইত্যাদি আলোচনায় পরিপূর্ণ পবিত্র কুরআন। নূহ, হূদ, ছালেহ ও ইবরাহীম (আঃ)-এর বিশুদ্ধ আক্বীদার দাওয়াত এবং দাওয়াত কবুলকারীদের উপর আগত সাহায্য এবং প্রত্যাখ্যানকারীদের উপর শাস্তির কথাও বিবৃত হয়েছে পবিত্র কুরআনে। পবিত্র কুরআনে আক্বীদা সংক্রান্ত আলোচনার কিছু নমুনা নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-
প্রথমতঃ আল্লাহর প্রতি ঈমান :
রুবূবিয়্যাত, উলূহিয়্যাত এবং আসমা ওয়াছ ছিফাতের ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্বের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসই হ’ল, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার মূল অর্থ।
p মা‘বূদ হিসাবে আল্লাহর একত্বের বিষয়ে পবিত্র কুরআনে এসেছে, وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ ‘আর আমি জিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছি কেবল আমার ইবাদত করার জন্য’ (যারিয়াত ৫১/৫৬)। আল্লাহ আরো বলেন,وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ، ‘আর নিশ্চয়ই প্রত্যেক জাতির নিকট আমরা রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কর এবং ত্বাগূত থেকে বিরত হও’ (নাহল ১৬/৩৬)। তিনি বলেন,إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ ‘আমরা কেবলমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং কেবলমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি’ (ফাতিহা ১/৪)।
p আনুগত্যের ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্বের বিষয়ে পবিত্র কুরআনে এসেছে,قُلْ أَطِيعُوا اللهَ وَالرَّسُولَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ، ‘তুমি বল, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। কিন্তু যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহ’লে (তারা জেনে রাখুক যে) আল্লাহ কাফেরদের ভালবাসেন না’ (আলে ইমরান ৩/৩২)। আরো এসেছে, وَمَنْ يُطِعِ الرَّسُول فَقَدْ أَطاعَ الله، ‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে, সে আল্লাহর আনুগত্য করে’ (নিসা ৪/৮০)।
p শাফা‘আতের ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্বের বিষয়ে পবিত্র কুরআনে এসেছে, وَأَنْذِرْ بِهِ الَّذِينَ يَخَافُونَ أَنْ يُحْشَرُوا إِلَى رَبِّهِمْ لَيْسَ لَهُمْ مِنْ دُونِهِ وَلِيٌّ وَلاَ شَفِيعٌ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ، ‘আর তুমি কুরআনের মাধ্যমে তাদেরকে সতর্ক কর। যারা এ বিষয়ে ভয় করে যে, তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের নিকট এমন অবস্থায় সমবেত করা হবে, যেখানে তিনি ব্যতীত তাদের কোন সাহায্যকারী ও সুফারিশকারী থাকবে না। যাতে তারা সংযত হয়’ (আন‘আম ৬/৫১)।
p হুকুম ও বিধানদাতা হিসাবে আল্লাহর একত্বের বিষয়ে পবিত্র কুরআনে এসেছে,إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ، ‘আদেশ দানের ক্ষমতা আল্লাহ ব্যতীত কারু নেই। তিনি আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ব্যতীত তোমরা অন্য কারু ইবাদত করো না’ (ইউসূফ ১২/৪০)। আরো এসেছে,أَفَحُكْمَ الْجاهِلِيّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللهِ حُكْماً لِّقَومٍ يُوقِنُون، ‘তবে কি তারা ফের জাহেলিয়াতের বিধান কামনা করে? অথচ দৃঢ় বিশ্বাসীদের নিকট আল্লাহর চাইতে উত্তম বিধানদাতা আর কে আছে’? (মায়েদাহ ৫/৫০)।
p রব ও সৃষ্টিকর্তা হিসাবে আল্লাহর একত্বের বিষয়ে পবিত্র কুরআনে এসেছে,إِنَّ رَبَّكُمُ اللهُ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ، ‘নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক হ’লেন আল্লাহ, যিনি ছয় দিনে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশে উন্নীত হয়েছেন। তিনি কর্ম সমূহ পরিচালনা করেন’ (ইউনুস ১০/৩)। আরো এসেছে, اللهُ خالِقُ كُلّ شَيْءٍ ‘আল্লাহ সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা’ (যুমার ৩৯/৬২)।
p মহান আল্লাহর গুণবাচক নাম ও গুণসমূহে তাঁর একত্বের বিষয়ে আল্লাহ বলেন, لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ ‘তাঁর তুলনীয় কিছুই নেই। তিনিই সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’ (শূরা ৪২/১১)। তিনি বলেন,يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِهِ عِلْمًا، ‘তিনি তাদের অগ্র-প্রশ্চাৎ সবই জানেন। আর তারা জ্ঞান দ্বারা তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না’ (ত্বোয়াহা ২০/১১০)। তিনি আরো বলেন,لاَ تُدْرِكُهُ الأَبْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الأَبْصَارَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ، ‘কোন দৃষ্টি তাঁকে (দুনিয়াতে) বেষ্টন করতে পারে না। বরং তিনিই সকল দৃষ্টিকে বেষ্টন করেন। তিনি অতীব সূক্ষ্মদর্শী ও সকল বিষয়ে অবগত’ (আন‘আম ৬/১০৩)। তিনি আরো বলেন,قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ، اللهُ الصَّمَدُ، لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ، ‘বল, তিনি আল্লাহ এক, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, তিনি (কাউকে) জন্ম দেননি এবং তিনি (কারও) জন্মিত নন, আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই’ (ইখলাছ ১১২/১-৪)।
তিনি আরো বলেন, وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوْا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ، ‘আর আল্লাহর জন্য সুন্দর নাম সমূহ রয়েছে। সেসব নামেই তোমরা তাঁকে ডাক এবং তাঁর নাম সমূহে যারা বিকৃতি ঘটিয়েছে তাদেরকে তোমরা পরিত্যাগ কর’ (আ‘রাফ ৭/১৮০)। তিনি আরো বলেন,قُلْ ادْعُوا اللهَ أَوْ ادْعُوا الرَّحْمنَ أَيًّا مَا تَدْعُوا فَلَهُ الأَسْمَاءُ الْحُسْنَى، ‘বল, তোমরা ‘আল্লাহ’ নামে ডাক বা ‘রহমান’ নামে ডাক, তোমরা যে নামেই ডাকো না কেন, সকল সুন্দর নাম তো কেবল তাঁরই জন্য’ (বানী ইসরাঈল ১৭/১১০)।
p পবিত্র কুরআনের অনেক জায়গায় আল্লাহর আরশে সমুন্নত হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। অথচ এ গুণটি নামধারী অনেক মুসলিমরা অস্বীকার করে। সর্বাধিক প্রসিদ্ধ আয়াতটি হচ্ছে, :الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى ‘দয়াময় আরশে সমুন্নত’ (ত্বোয়াহা ২০/৫)। আল্লাহ আরো বলেন, إِنَّ رَبَّكُمُ اللهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ ‘নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভু আল্লাহ। যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে। অতঃপর আরশে সমুন্নত হয়েছেন’ (আল-আ‘রাফ ৭/৫৪)।
p পবিত্র কুরআনে আল্লাহর আকারের কথা বলা হয়েছে। তিনি নিরাকার ও সত্ত্বাগতভাবে সর্বত্র বিরাজমান নন। সেকারণ কুরআনে আল্লাহর চেহারা (আর-রহমান ২৭), তাঁর দুই হাত (ছোয়াদ ৭৫; মায়েদাহ ৬৪), তাঁর চোখ (তূর ৪৮) আছে বলে উল্লেখিত হয়েছে। কিন্তু তা কারু সাথে তুলনীয় নয়। আল্লাহ বলেন, ‘তাঁর তুলনীয় কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’ (শূরা ১১; নাহল ৭৪)।
* ঈমান বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ : পবিত্র কুরআনে ঈমান রক্ষার পাশাপাশি ঈমান ভঙ্গের বিষয়ে অনেক দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে। যেমন-
* শিরক : মহান আল্লাহ বলেন, ذَلِكَ مِمَّا أَوْحَى إِلَيْكَ رَبُّكَ مِنَ الْحِكْمَةِ وَلَا تَجْعَلْ مَعَ اللهِ إِلَهًا آخَرَ فَتُلْقَى فِيْ جَهَنَّمَ مَلُومًا مَدْحُورًا، ‘অতএব তুমি আল্লাহর সাথে অন্যকে উপাস্য নির্ধারণ করো না। তাহ’লে তুমি নিন্দিত ও অনুগ্রহ বঞ্চিত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’ (বানী ইস্রাঈল ১৭/৩৯)। তিনি আরো বলেন, فَلَا تَدْعُ مَعَ اللهِ إِلَهًا آخَرَ فَتَكُوْنَ مِنَ الْمُعَذَّبِيْنَ ‘অতএব তুমি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে আহবান করো না। তাহ’লে তুমি শাস্তিপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’ (শো‘আরা ২৬/২১৩)।
* কুরআনুল কারীম ও ছহীহ হাদীছের কোন বিষয় নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা, তামাশা করা। মহান আল্লাহ বলেন,قُلْ أَبِاللهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ، لَا تَعْتَذِرُوْا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ، ‘বলে দাও, তবে কি তোমরা আল্লাহ ও তাঁর আয়াতসমূহকে নিয়ে এবং তাঁর রাসূলকে নিয়ে উপহাস করছিলে? তোমরা কোন ওযর পেশ করো না। তোমরা অবশ্যই কুফরী করেছ ঈমান আনার পরে’ (তওবাহ ৯/৬৫-৬৬)।
* আক্বীদা ধ্বংসকারী মতবাদের উপর ঈমান আনা। যেমন- নাস্তিক্যবাদ, মাসুনিয়া, সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ বা এ জাতীয় মতবাদ যা আরব অমুসলিমদেরকে অনারব মুসলিমদের উপর প্রাধান্য দেয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ، ‘আর যে ব্যক্তি ‘ইসলাম’ ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন তালাশ করে, তার নিকট থেকে তা কখনোই কবুল করা হবে না এবং ঐ ব্যক্তি আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আলে ইমরান ৩/৮৫)।
* মুসলিমদের বিরুদ্ধে অমুসলিমদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। আল্লাহ বলেন, لَا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللهِ فِي شَيْءٍ إِلَّا أَنْ تَتَّقُوا مِنْهُمْ تُقَاةً وَيُحَذِّرُكُمُ اللهُ نَفْسَهُ وَإِلَى اللهِ الْمَصِيرُ، ‘মুমিনগণ যেন মুমিনদের ছেড়ে কাফেরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে, আল্লাহর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি তোমরা তাদের থেকে কোন অনিষ্টের আশংকা কর (সেটি স্বতন্ত্র কথা)। আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর (প্রতিশোধ গ্রহণ) সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছেন। আর আল্লাহর কাছেই সকলের প্রত্যাবর্তনস্থল’ (আলে ইমরান ৩/২৮)।
দ্বিতীয়তঃ ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান :
ফেরেশতাদের প্রতি কিরূপ ঈমান আনতে হবে সে বিষয়ে পবিত্র কুরআনে অনেক আয়াত রয়েছে। যেমন-
p তারা আল্লাহর অবাধ্য হন না : ফেরেশতামন্ডলী সৃষ্টিগতভাবেই আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার ক্ষমতা রাখেন না। ফলে আল্লাহর আদেশ ও নিষেধের চোখের পলক পরিমাণও বিরোধিতা তারা করেন না। যেভাবে আদিষ্ট হন সেভাবেই তা পালন করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لا يَعْصُونَ اللهَ ما أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ ما يُؤْمَرُونَ، ‘তারা আল্লাহ যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং তাদেরকে যা আদেশ করা হয়, তারা তাই করে’ (তাহরীম ৬৬/৬)।
p তাদের ডানা ও ক্বলব আছে : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, الْحَمْدُ لِلَّهِ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ جَاعِلِ الْمَلَائِكَةِ رُسُلًا أُولِي أَجْنِحَةٍ مَّثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاع، ‘যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃষ্টিকর্তা। যিনি ফেরেশতাদের করেছেন বার্তাবাহক। যারা দুই দুই, তিন তিন বা চার চার ডানা বিশিষ্ট’ (ফাত্বির ৩৫/১)।
p ফেরেশতামন্ডলী বিভিন্ন রকম দায়িত্ব পালন ও কর্ম সম্পাদনে নিয়োজিত। তারা তাদের দায়িত্ব পালনে সামান্য ত্রুটিও করেন না এবং বিরক্ত ও ক্লান্তিবোধও করেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُونَ ‘তারা রাত্রি-দিন তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করে এবং তারা দুর্বল হয় না’ (আম্বিয়া ২১/২০)।
p আদম সন্তানকে হেফাযত করার দায়িত্ব পালন : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لَهُ مُعَقِّبَاتٌ مِّن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ يَحْفَظُونَهُ مِنْ أَمْرِ اللهِ، ‘প্রত্যেক মানুষের জন্য তার সামনে ও পিছনে পরপর আগত পাহারাদার ফেরেশতাগণ রয়েছে। যারা তাকে হেফাযত করে আল্লাহর হুকুমে’ (রা‘দ ১৩/১১)।
p আদম সন্তানের আমল সংরক্ষণ করা : কিছু ফেরেশতা রয়েছেন, যারা মানুষের ভাল-মন্দ সব রকমের আমল সংরক্ষণ করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِينَ، كِرَامًا كَاتِبِينَ، يَعْلَمُونَ مَا تَفْعَلُونَ، ‘অথচ তোমাদের উপরে অবশ্যই তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত রয়েছে। সম্মানিত লেখকবৃন্দ। তারা জানেন যা তোমরা কর’ (ইনফিত্বার ৮২/১০-১২)। তিনি আরো বলেন, مَّا يَلْفِظُ مِن قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ، ‘সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তা গ্রহণ করার জন্য তার কাছে সদা প্রস্ত্তত প্রহরী থাকে’ (ক্বাফ ৫০/১৮)।
তৃতীয়তঃ আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান :
আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি আমাদেরকে কিরূপ ঈমান আনতে হবে সে বিষয়ে পবিত্র কুরআনে অনেক আয়াত রয়েছে। যেমন-
p রাসূল (ছাঃ)-এর উপর নাযিলকৃত কিতাব হেদায়াত, অন্তরের রোগমুক্তি, হক্ব ও নূর- এটিকে পরিপূর্ণরূপে বিশ্বাস করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,يَاأَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ، ‘হে মানবজাতি! তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হ’তে এসে গেছে উপদেশবাণী (কুরআন) এবং অন্তরের ব্যাধিসমূহের উপশম। আর বিশ্বাসীদের জন্য পথ প্রদর্শক ও রহমত’ (ইউনুস ১০/৫৭)।
p আসমানী কিতাবগুলো একটি অপরটির সত্যায়নকারী- একথার প্রতি ঈমান আনা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَقَفَّيْنَا عَلَى آثَارِهِمْ بِعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ وَآتَيْنَاهُ الْإِنْجِيلَ فِيهِ هُدًى وَنُورٌ وَمُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ وَهُدًى وَمَوْعِظَةً لِلْمُتَّقِينَ، ‘অতঃপর আমরা তাদের পরে মারিয়াম-পুত্র ঈসাকে প্রেরণ করেছিলাম তার পূর্ববর্তী কিতাব তাওরাতের সত্যায়নকারী হিসাবে এবং তাকে প্রদান করেছিলাম ইনজীল, যাতে ছিল হেদায়াত ও জ্যোতি। যা ছিল পূর্ববর্তী কিতাব তাওরাতের সত্যায়নকারী এবং আল্লাহভীরুদের জন্য সুপথ প্রদর্শনকারী ও উপদেশ স্বরূপ’ (মায়েদাহ ৫/৪৬)।
p কুরআন কারীম পূর্ববর্তী সকল হুকুম-আহকামকে রহিতকারী- একথার প্রতি ঈমান আনা। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে আহলে কিতাবদের মাঝে কুরআন দিয়ে বিচার করার আদেশ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللهُ، ‘আর আমরা তোমার নিকট এ কিতাব (কুরআন) নাযিল করেছি সত্য সহকারে যা তার পূর্ববর্তী কিতাব সমূহের সত্যায়নকারী ও হেফাযতকারী। অতএব তুমি তাদের মধ্যে আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী ফায়ছালা কর’ (মায়েদাহ ৫/৪৮)।
p পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহের বিকৃতির প্রতি ঈমান আনা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,أَفَتَطْمَعُونَ أَنْ يُؤْمِنُوا لَكُمْ وَقَدْ كَانَ فَرِيقٌ مِنْهُمْ يَسْمَعُونَ كَلَامَ اللهِ ثُمَّ يُحَرِّفُونَهُ مِنْ بَعْدِ مَا عَقَلُوهُ وَهُمْ يَعْلَمُونَ، ‘তোমরা কি আকাঙ্ক্ষা কর যে তারা (ইহূদীরা) তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? অথচ তাদের মধ্যে ইতিপূর্বে একটি দল ছিল, যারা আল্লাহর বাণী (তাওরাত) শ্রবণ করত। অতঃপর তা অনুধাবনের পর তারা জেনে-বুঝে তাকে বিকৃত করত’ (বাক্বারাহ ২/৭৫)।
চতুর্থতঃ নবী-রাসূলদের প্রতি ঈমান :
নবী-রাসূলদের প্রতি আমাদেরকে কিরূপ ঈমান আনতে হবে সে বিষয়ে পবিত্র কুরআনে অনেক আয়াত রয়েছে। যেমন-
p মহান আল্লাহ মানুষের হেদায়াতের জন্য যুগে যুগে বহু নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন,وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ وَلَا نَبِيٍّ، ‘আমরা তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল ও নবী প্রেরণ করিনি যে, ...’ (হজ্জ ২২/৫২)।
p নবীগণ আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত অহির ভিত্তিতে কথা বলেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ، ‘তুমি বল, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মত একজন মানুষ বৈ কিছু নই। আমার নিকটে অহি করা হয়েছে যে, তোমাদের উপাস্য মাত্র একজন’ (কাহফ ১৮/১১০)।
p নবী-রাসূলের সংখ্যা অনেক, যার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা কুরআনে সুস্পষ্টরূপে বর্ণিত হয়নি। সেজন্য তাদের সবার প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ مِنْهُمْ مَنْ قَصَصْنَا عَلَيْكَ وَمِنْهُمْ مَنْ لَمْ نَقْصُصْ عَلَيْكَ، ‘আর অবশ্যই আমরা তোমার পূর্বে বহু রাসূল প্রেরণ করেছি। যাদের কারু কারু কথা তোমাকে বর্ণনা করেছি, কারু কারু কথা বর্ণনা করিনি’ (গাফির ৪০/৭৮)।
p নবী-রাসূলগণ মাটির তৈরী মানুষ ছিলেন। সে কারণে নবী-রাসূলগণের উম্মতের অনেকেই তাদেরকে নবী-রাসূল হিসাবে মেনে নিতে পারেনি। আল্লাহ বলেন, وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَنْ يُؤْمِنُوا إِذْ جَاءَهُمُ الْهُدَى إِلَّا أَنْ قَالُوا أَبَعَثَ اللهُ بَشَرًا رَسُولًا، ‘বস্ত্ততঃ যখন মানুষের কাছে হেদায়াত (রাসূল) আসে, তখন তাদেরকে ঈমান আনা হ’তে বিরত রাখে তাদের এই উক্তি যে, ‘আল্লাহ কি মানুষকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন?’ (বনু ইস্রাইল ১৭/৯৪)। আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। আল্লাহ বলেন,قُلْ مَا كُنْتُ بِدْعًا مِنَ الرُّسُلِ ‘বল, আমি তো নতুন কোন রাসূল নই’ (আহক্বাফ ৪৬/৯)। আল্লাহ আরো বলেন,قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ ‘তুমি বল, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মত একজন মানুষ বৈ কিছু নই’ (কাহফ ১৮/১১০)।
p রাসূল (ছাঃ) গায়েবের খবর জানতেন না। তবে মহান আল্লাহ তাঁকে অহির মাধ্যমে যতটুকু জানিয়েছেন ততটুকুই তিনি জানতেন। মহান আল্লাহ বলেন,قُلْ لَا أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاءَ اللهُ وَلَوْ كُنْتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ، ‘বল যা আল্লাহ ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত আমি আমার নিজের কোন কল্যাণ ও অকল্যাণের মালিক নই। যদি আমি অদৃশ্যের খবর রাখতাম, তাহ’লে আমি অধিক কল্যাণ অর্জন করতাম এবং কোনরূপ অমঙ্গল আমাকে স্পর্শ করতে পারত না’ (আ‘রাফ ৭/১৮৮)।
পঞ্চমতঃ আখেরাতের প্রতি ঈমান :
p পবিত্র কুরআনে আখেরাতের প্রতি ঈমানের বিষয়টি খুবই গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপিত হয়েছে। এমনকি আল্লাহর প্রতি ঈমানের সাথে ১৯ জায়গায় আখেরাতের প্রতি ঈমানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন,يُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَأُولَئِكَ مِنَ الصَّالِحِينَ، ‘তারা আল্লাহ ও ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে। তারা সৎকাজের আদেশ দেয় ও অসৎকাজে নিষেধ করে এবং সৎকর্ম সমূহের প্রতি দ্রুত ধাবিত হয়। আর তারাই হ’ল সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত’ (আলে ইমরান ৩/১১৪)।
p কবরে প্রশ্নের সময় অবিচল থাকার বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,يُثَبِّتُ اللهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ وَيُضِلُّ اللهُ الظَّالِمِينَ، ‘আল্লাহ মুমিনদের দৃঢ় বাক্য দ্বারা দৃঢ় রাখেন ইহকালীন জীবনে ও পরকালে এবং যালেমদের পথভ্রষ্ট করেন’ (ইবরাহীম ১৪/২৭)।
p শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়ার মাধ্যমে ধ্বংসের সূচনা হবে। মহান আল্লাহ বলেন, وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَصَعِقَ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَاءَ اللهُ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنْظُرُونَ، ‘আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। অতঃপর আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে, সবই মারা পড়বে, তবে যাকে আল্লাহ চাইবেন। অতঃপর শিঙ্গায় আরেকটি ফুঁক দেওয়া হবে। তখন তারা সবাই দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে’ (যুমার, ৩৯/৬৮)।
pবিচারকার্য সর্বোচ্চ স্বচ্ছ করার নিমিত্তে আল্লাহ আমল পরিমাপ করার জন্য দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করবেন। ‘যার পাল্লাসমূহ ভারী হবে সে প্রীতিপদ জীবনে থাকবে। আর যার পাল্লাসমূহ হালকা হবে তার স্থান হবে হাবিয়াহ’ (ক্বারি‘আহ, ১০১/৬-৯)।
p পুলছিরাত বিষয়ে পবিত্র কুরআনে এসেছে, وَإِنْ مِنْكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْمًا مَقْضِيًّا، ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوْا وَنَذَرُ الظَّالِمِينَ فِيهَا جِثِيًّا، ‘আর তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে সেখানে (পুলছেরাতে) পৌঁছবে না। এটা তোমার পালনকর্তার অমোঘ সিদ্ধান্ত। অতঃপর আমরা আল্লাহভীরুদের মুক্তি দেব এবং সীমালংঘনকারীদের নতজানু অবস্থায় তার মধ্যে ছেড়ে দেব’ (মারিয়াম ১৯/৭১-৭২)।
* ক্বিয়ামত দিবসের শাফা‘আত : এই প্রকার শাফা‘আত আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে চাওয়া যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন,قُلْ لِلَّهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيعًا لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ ‘তুমি বল, সকল প্রকার সুফারিশ কেবল আল্লাহর এখতিয়ারাধীন’ (যুমার ৩৯/৪৪)। এই প্রকার শাফা‘আতের দু’টি শর্ত রয়েছে :
(ক) শাফা‘আতকারীর জন্য শাফা‘আত করার অনুমতি থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,وَمَا فِي الْأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ، ‘তার অনুমতি ব্যতীত এমন কে আছে যে তার নিকটে সুফারিশ করে?’ (বাক্বারাহ ২/২৫৫)।
(খ) যার জন্য শাফা‘আত করা হবে, তার উপর আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَى، ‘আর তারা কোন সুফারিশ করে না, কেবল যার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট’ (আম্বিয়া ২১/২৮)।
p জান্নাত ও জাহান্নাম কি সৃষ্ট অবস্থায় রয়েছে নাকি ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি করবেন? পবিত্র কুরআনে এই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। আল্লাহ বলেন,وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ، ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীন পরিব্যপ্ত। যা প্রস্ত্তত করা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য’ (আলে ইমরান, ৩/১৩৩)। জাহান্নাম সম্পর্কে তিনি বলেন, وَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ، ‘আর তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো। যা অবিশ্বাসীদের জন্য প্রস্ত্তত করা হয়েছে’ (আলে ইমরান ৩/১৩১)।
p জান্নাত মানেই হ’ল ভোগ-বিলাস, অফুরন্ত পানাহার। সেখানে মন যা চাইবে, তা-ই পাবে। আল্লাহ বলেন,وَفِيهَا مَا تَشْتَهِيهِ الْأَنْفُسُ وَتَلَذُّ الْأَعْيُنُ، ‘যাতে তাদের জন্য থাকবে যা তাদের মন চাইবে ও চক্ষু শীতল হবে’ (যুখরুফ, ৪৩/৭১)। তিনি আরো বলেন,وَأَمْدَدْنَاهُمْ بِفَاكِهَةٍ وَلَحْمٍ مِمَّا يَشْتَهُونَ، يَتَنَازَعُونَ فِيهَا كَأْسًا لَا لَغْوٌ فِيهَا وَلَا تَأْثِيمٌ، ‘আর আমরা তাদেরকে অতিরিক্ত দেব ফল-মূল ও গোশত, যা তারা কামনা করবে। সেখানে তারা পরস্পরে পানপাত্র নিয়ে কাড়াকাড়ি করবে। অথচ সেখানে কোন অনর্থক কথা ও পাপের কথা থাকবে না’ (তূর ৫২/২২-২৩)।
p জাহান্নামের একাধিক দরজা রয়েছে, যেসব দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীর অপরাধীরা প্রবেশ করবে। আল্লাহ বলেন,لَهَا سَبْعَةُ أَبْوَابٍ لِكُلِّ بَابٍ مِنْهُمْ جُزْءٌ مَقْسُومٌ، ‘যার সাতটি দরজা রয়েছে। প্রত্যেক দরজার জন্য রয়েছে এক একটি নির্দিষ্ট দল’ (হিজর ১৫/৪৪)।
p জাহান্নাম (جَهَنَّمُ) হ’ল পারলৌকিক এক নিবাস যা আল্লাহ প্রস্ত্তত রেখেছেন পাপিষ্ঠদের জন্য। আল্লাহ বলেছেন,هَذِهِ جَهَنَّمُ الَّتِي يُكَذِّبُ بِهَا الْمُجْرِمُونَ، يَطُوفُونَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ حَمِيمٍ آنٍ، ‘এটা সেই জাহান্নাম, যাকে অপরাধীরা মিথ্যা বলত। তারা এদিন এর আগুন ও ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটাছুটি করবে’ (রহমান ৫৫/৪৩-৪৪)।
ষষ্ঠতঃ তাক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান :
তাক্বদীরের প্রতি ঈমানের স্বরূপ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আয়াতসমূহের কিছু নমুনা নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল :
p আল্লাহ বলেন, إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ ‘আমরা সকল বস্ত্ত সৃষ্টি করেছি পরিমাণ মত’ (ক্বামার ৫৪/৪৯)। তিনি অন্যত্র বলেছেন, وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ فَقَدَّرَهُ تَقْدِيرًا ‘যিনি সমস্ত বস্ত্ত সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে যথাযথ পরিমিতি দান করেছেন’ (ফুরক্বান ২৫/২)। আল্লাহর নির্দেশ অবশ্যম্ভাবীরূপে ঘটবে এবং তিনি জানেন তাঁর কোন কাজ কখন ঘটবে। তিনি বলেন, وَكَانَ أَمْرُ اللهِ قَدَرًا مَقْدُورًا، ‘বস্ত্ততঃ আল্লাহর আদেশ সুনির্ধারিত’ (আহযাব ৩৩/৩৮)।
* তাক্বদীরে বিশ্বাসের চারটি স্তর পবিত্র কুরআন দ্বারা সাব্যস্তঃ যথা-
প্রথম স্তরঃ আল্লাহর জ্ঞান : আল্লাহ তা‘আলা সবকিছু সম্পর্কে জানেন। তিনি যা ছিল এবং যা হবে, আর যা হয়নি যদি হ’ত তাহ’লে কি রকম হ’ত তাও জানেন। মহান আল্লাহ বলেন,لِتَعْلَمُوا أَنَّ اللهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ وَأَنَّ اللهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا، ‘যাতে তোমরা জানো যে, আল্লাহ সকল কিছুর উপর ক্ষমতাশালী। আর আল্লাহ সবকিছুকে তাঁর জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছেন’ (তালাক ৬৫/১২)।
দ্বিতীয় স্তরঃ লিপিবদ্ধকরণ : ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত কিছু ঘটবে সেসব কিছু মহান আল্লাহ লাওহে মাহফূযে লিখে রেখেছেন। আল্লাহ বলেন, وَكُلَّ شَيْءٍ أَحْصَيْنَاهُ فِي إِمَامٍ مُبِينٍ ‘আর প্রত্যেক বস্ত্ত আমরা স্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ রেখেছি’ (ইয়াসীন ৩৬/১২)।
তৃতীয় স্তরঃ আল্লাহর ইচ্ছা : তিনি যা চান তা হয়, আর যা চান না তা হয় না। মহান আল্লাহ বলেন,وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوهُ، ‘যদি তোমার প্রতিপালক চাইতেন, তাহ’লে তারা এটা করতে পারতো না’ (আন‘আম ৬/১১২)। তিনি আরো বলেন, ‘আর তোমরা ইচ্ছা করতে পার না, যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করেন’ (দাহর ৭৬/৩০; তাকভীর ৮১/২৯)।
চতুর্থ স্তরঃ সৃষ্টি : মহান আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা। তিনি বলেন, اللهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ، ‘আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা’ (যুমার ৩৯/৬২) তিনি আরো বলেন, وَاللهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُونَ ‘প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা যা কর তাও’ (ছাফফাত ৩৭/৯৬)।
* বৎসরের নির্দিষ্ট এমন সময় আছে যখন আল্লাহ এ বৎসরের পরিকল্পনা ফেরেশতাদের কাছে প্রদান করেন। মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِيْنَ، فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيْمٍ، أَمْرًا مِنْ عِنْدِنَا إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِيْنَ، ‘আমরা এটি নাযিল করেছি এক বরকতময় রজনীতে। নিশ্চয়ই আমরা সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়, আমাদের পক্ষ হ’তে নির্দেশক্রমে। আমরাই তো প্রেরণ করে থাকি’ (দুখান ৪৪/৩-৫)।
উপসংহার :
উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, সালাফী মানহাজের দাঈগণ যে আক্বীদা প্রচার-প্রসারের প্রতি গুরুত্বারোপ করে থাকেন, সে আক্বীদা বা বিশ্বাস পবিত্র কুরআনের নির্যাস মাত্র। তাঁরা নিজেদের পক্ষ থেকে বানানো কোন কিছুই প্রচার করেন না। কেন আক্বীদার বিষয়টি সর্বাগ্রে রাখেন সেটিও পবিত্র কুরআনের বর্ণনা দ্বারা স্পষ্ট করা সম্ভব। অতএব একজন মুমিন হিসাবে কি কি আক্বীদা পোষণ করতে হবে এবং কেন করতে হবে, আল্লাহর অস্তিত্ব ও একত্বের প্রমাণগুলো খুবই সহজ ও বোধগম্য করে পবিত্র কুরআনে উপস্থাপিত হয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার তাওফীক দিন- আমীন!
ড. আব্দুল্লাহিল কাফী মাদানী
পিএইচ.ডি, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদীআরব।