ভূমিকা :

নবী-রাসূলগণের পরে আল্লাহর নিকটে ছাহাবীদের মর্যাদা সর্বাধিক। বিশেষ করে ইসলামের প্রথম যুগের আনছার ও মুহাজির ছাহাবীগণ, যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাদের জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘মুহাজির ও আনছারগণের মধ্যে যারা অগ্রবর্তী ও প্রথম দিককার এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে নিষ্ঠার সাথে, আল্ল­াহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। তিনি তাদের জন্য প্রস্ত্তত রেখেছেন জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর এটিই হ’ল মহা সফলতা’ (তওবা ৯/১০০)। ছাহাবীদের মর্যাদা প্রসঙ্গে রাসূল (ছাঃ)-এর বলেন,فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلاَ نَصِيفَهُ- ‘যদি তোমাদের কেউ ওহোদ পাহাড়ের সমপরিমাণ স্বর্ণ দান করে, তথাপি তা ছাহাবীদের কোন একজনের (সৎকর্মের) সিকি ছা‘ সমপরিমাণ দানের বা তার অর্ধেকেরও সমতুল্য হবে না’।[1] রাসূল (ছাঃ)-এর পরে ছাহাবীগণই আমাদের অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব, আমাদের যাবতীয় সৎকর্মের প্রেরণা ও জান্নাতের পথে নিরন্তর এগিয়ে যাওয়ার অনুভূতি। সেকারণ ছাহাবীদের জীবনী জানা ও সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের জীবনকে সে মোতাবেক গড়ে তোলা জান্নাতপিয়াসী সকল মুমিনের জন্য আবশ্যক। আলোচ্য নিবন্ধে ইসলামের প্রথম দাঈ ও ওহোদ যুদ্ধের ঝান্ডাবাহী তরুণ মুহাজির ছাহাবী মুছ‘আব বিন ওমায়ের (রাঃ)-এর জীবনী আলোচনা করা হ’ল।-

নাম ও বংশ পরিচয় : তার নাম মুছ‘আব। পিতার নাম উমায়ের। দাদার নাম হাশিম। মাতার নাম খুনাস বিনতে মালেক। তার বংশ ধারা হচ্ছে- মুছ‘আব বিন ওমায়ের বিন হাশিম বিন আব্দে মানাফ বিন আব্দুদ দার বিন কুছাই বিন কিলাব। তার কুনিয়াত হচ্ছে আবূ মুহাম্মাদ।[2]

ইসলামপূর্ব জীবন : মুছ‘আব মক্কার এক সম্ভ্রান্ত ও ধনাঢ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতা খুনাস বিনতে মালেক ছিলেন অঢেল সম্পদের মালিক। মুছ‘আব ছিলেন এক সুদর্শন যুবক। ছিলেন মায়ের অতি আদরের। অভাব-অনটন, দুঃখ-কষ্ট তাকে কখনো স্পর্শ করেনি। দামী পোষাক ও দামী আতর ব্যবহার ছিল তার নিত্য স্বভাব। তিনি মক্কার সকল দামী ব্রান্ডের আতর ব্যবহার করতেন এবং দামী দামী পোষাক পরিধান করতেন।[3] ধনীর দুলাল হিসাবে তার চলাফেরাও ছিল ভিন্নতর। চলার পথে সহপাঠীরা ঘিরে রাখত তাকে।[4] ইসলাম গ্রহণের পূর্বে পুরোদস্ত্তর এক বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন তিনি।

দ্বীনের আলো গ্রহণ : হেদায়াতের চাবি একমাত্র আল্লাহর হাতে। তিনি যাকে ইচ্ছা হেদায়াতের আলো দান করেন (বাক্বারাহ ২/১৪২)। ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান মুছ‘আবকে মহান আল্লাহ তাঁর দ্বীনের জন্য কবুল করলেন। ইসলামের একেবারে প্রারম্ভিক সময়েই ইসলাম গ্রহণ করেন তিনি। ছিলেন অগ্রবর্তী ছাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত। প্রচলিত জাহেলী সমাজ ব্যবস্থার বিপরীতে তাওহীদের আলোকোজ্জ্বল রাজপথের সন্ধান পান তিনি। জানতে পারেন ছাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী আরক্বাম বিন আবুল আরক্বামের গৃহে মুহাম্মাদ (ছাঃ) দ্বীনের দাওয়াত দিচ্ছেন। তাই কালক্ষেপণ না করে সংগোপনে সেখানে গিয়ে হাযির হন। অতঃপর তাওহীদের অমিয় সুধা পান করে নিজেকে ধন্য করেন। বাপ-দাদার আচরিত ধর্ম ও সমাজ ব্যবস্থা দু’পায়ে দলে চির শান্তির ধর্ম ইসলাম কবুল করেন।[5]

গৃহবন্দী মুছ‘আব : মুছ‘আব বিন ওমায়েরের ধনাঢ্য মা খুনাস ছিলেন অত্যন্ত রাগী মহিলা। ছেলের প্রতি যেমন ছিলেন স্নেহশীল তেমনি শাসনেও ছিলেন কঠোর। মুছ‘আব তার মাকে ব্যতীত সমাজের অন্য কাউকে ভয় করতেন না। মাতৃভীতির কারণে তিনি তার ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি আপাতত গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নেন। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হ’লে জানাবেন। একারণে তিনি দারুল আরক্বামে গোপনে যাতায়াত করতেন। কিন্তু ওছমান বিন তালহা তাঁর দারুল আরক্বামে যাতায়াতের বিষয়টি দেখে ফেলেন এবং খবরটি তৎক্ষণাৎ তার মাকে জানিয়ে দেন। ফলে তার মা সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় মুছ‘আবকে প্রথমে বুঝানোর চেষ্টা করে, অতঃপর শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। এমনকি তাঁকে গৃহবন্দী করা হয়। দিন-রাত পাহারার মধ্যে রাখা হয় তাকে। যেন কোনভাবেই ঘর থেকে বের হয়ে দারুল আরক্বামে যেতে না পারেন। এভাবে দিনের পর দিন বন্দীত্ব বরণ করেন তরুণ ছাহাবী মুছ‘আব বিন ওমায়ের (রাঃ)।[6]

হিজরত : গৃহবন্দী থাকাবস্থায় তিনি জানতে পারেন যে, নতুন মুসলমানদের একটি কাফেলা হাবশায় হিজরত করছেন। তিনিও মনস্থির করলেন যেকোনভাবে এই বন্দীদশা থেকে মুক্তি লাভ করে হাবশায় হিজরত করবেন। সে লক্ষ্যে সুযোগ খুঁজতে থাকেন। একদিন কৌশলে তিনি বেরিয়ে যেতে সক্ষম হন এবং মুসলিম কাফেলার সাথে হাবশায় হিজরত করেন। হাবশায় কিছুদিন থাকার পর তিনি পুনরায় মক্কায় ফিরে আসেন। এবারে তিনি ইয়াছরিব তথা মদীনায় হিজরত করেন। রাসূল (ছাঃ) তাকে দাঈ হিসাবে ইয়াছরিবে প্রেরণ করেন। মুহাজিরদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম মদীনায় গমন করেন। বারা ইবনে ‘আযেব (রাঃ) বলেন,أَوَّلُ مَنْ قَدِمَ عَلَيْنَا مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ وَابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ، ثُمَّ قَدِمَ عَلَيْنَا عَمَّارُ بْنُ يَاسِرٍ وَبِلاَلٌ رضى الله عنهم‏.‏ ‘সর্বপ্রথম আমাদের মধ্যে (মদীনায়) আগমন করেন মুছ‘আব বিন ওমায়ের ও ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ)। তারপর আমাদের কাছে আসেন আম্মার ইবনু ইয়াসির ও বিলাল (রাঃ)’।[7] একই মর্মে অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ قَالَ سَمِعْتُ الْبَرَاءَ بْنَ عَازِبٍ رضى الله عنهما قَالَ أَوَّلُ مَنْ قَدِمَ عَلَيْنَا مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ وَابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ، وَكَانَا يُقْرِئَانِ النَّاسَ، فَقَدِمَ بِلاَلٌ وَسَعْدٌ وَعَمَّارُ بْنُ يَاسِرٍ، ثُمَّ قَدِمَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ فِي عِشْرِينَ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم، فَمَا رَأَيْتُ أَهْلَ الْمَدِينَةِ فَرِحُوا بِشَىْءٍ فَرَحَهُمْ بِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم، حَتَّى جَعَلَ الإِمَاءُ يَقُلْنَ قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَمَا قَدِمَ حَتَّى قَرَأْتُ ‏(‏سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى‏)‏ فِي سُوَرٍ مِنَ الْمُفَصَّلِ‏-

‘আবূ ইসহাক হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বারা ইবনু ‘আযেব (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, সর্বপ্রথম আমাদের মধ্যে (মদীনায়) আগমন করেন মুছ‘আব বিন ওমায়ের ও ইবনু উম্মে মাকতূম (রাঃ)। তারা লোকদের কুরআন পড়াতেন। তারপর আসেন বিলাল, সা‘দ ও আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ)। এরপর ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর বিশজন ছাহাবীসহ মদীনায় আসেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) স্বয়ং আগমন করেন। তাঁর আগমনে মদীনাবাসী যে পরিমাণ আনন্দিত হয়েছিল সে পরিমাণ আনন্দিত হ’তে আমি কখনো দেখিনি। এমনকি দাসীরাও বলছিল, রাসূল (ছাঃ) শুভাগমন করেছেন। বারা (রাঃ) বলেন, তাঁর আগমনের পূর্বেই আমি ‏سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى পর্যন্ত কয়েকটি সূরা পড়েছিলাম’।[8]

এতে প্রমাণিত হয় যে, মুছ‘আব বিন ওমায়ের (রাঃ) সর্বপ্রথম মদীনায় গমন করেন। তিনি সেখানে দাওয়াতী কাজের পাশাপাশি লোকেদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন। যার ফলে রাবী নিজেই কুরআনের বেশ কিছু সূরা শিখতে সক্ষম হয়েছিলেন। অন্য বর্ণনায় আছে, রাবী বলেন, فَمَا رَأَيْتُ أَهْلَ الْمَدِينَةِ فَرِحُوا بِشَىْءٍ فَرَحَهُمْ بِهِ، حَتَّى رَأَيْتُ الْوَلاَئِدَ وَالصِّبْيَانَ يَقُولُونَ هَذَا رَسُولُ اللَّهِ قَدْ جَاءَ ‘রাসূল (ছাঃ)-এর আগমনে মদীনাবাসীকে এত বেশি আনন্দিত হ’তে দেখেছি যে, অন্য কোন বিষয়ে তাদেরকে কখনো এতটা আনন্দিত হ’তে দেখিনি। এমনকি আমি দেখেছি যে, ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা পর্যন্ত বলছিল, ইনিই তো আল্লাহর সেই রাসূল, যিনি আমাদের মাঝে আগমন করেছেন’।[9]

ইসলামের প্রথম দাঈ মুছ‘আব : ইসলামের ইতিহাসে প্রথম দাঈ ছিলেন মুছ‘আব বিন ওমায়ের (রাঃ)। ১১ নববী বর্ষে হজ্জের মওসুমে ইয়াছরিব থেকে মক্কায় আগত ৬ জন তরুণ ইসলাম কবূল করে মদীনায় ফিরে গিয়ে দাওয়াতী কাজ করলে পরের বছর নতুন ৭জন সহ মোট ১২জন মক্কায় আগমন করেন। তাদের মধ্যে বয়োকনিষ্ঠ আস‘আদ বিন যুরারাহ (রাঃ) ছিলেন দলনেতা। আগের বছরের ন্যায় এবারও তারা আক্বাবা নামক পাহাড়ী সুড়ঙ্গে রাসূল (ছাঃ)-এর হাতে বায়‘আত করেন। এ সময় তারা তাদের সাথে মদীনায় একজন দাঈ প্রেরণের জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে অনুরোধ জানান। যিনি মদীনার সর্বত্র তাওহীদের বাণী পেঁŠছে দিবেন। রাসূল (ছাঃ) তখন মিষ্টভাষী, তীক্ষণধী সম্পন্ন তরুণ ছাহাবী মুছ‘আব বিন ওমায়ের (রাঃ)-কে এ মহতী কাজের জন্য মনোনীত করেন। ফলে ইসলামের ইতিহাসে প্রথম দাঈ হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন মুছ‘আব বিন ওমায়ের (রাঃ)। মদীনায় গিয়ে তিনি আস‘আদ বিন যুরারাহর বাড়ীতে অবস্থান করেন। অতঃপর তরুণ দুই ছাহাবী মুছ‘আব ও আস‘আদ (রাঃ) মিলে ইয়াছরিবের ঘরে ঘরে তাওহীদের দাওয়াত পেঁŠছাতে শুরু করেন।[10]

মদীনায় দাওয়াতের সুফল : অল্পদিনের মধ্যেই তাদের দাওয়াতের সুফল দৃশ্যমান হ’তে লাগল। তিনি এতটাই নম্রভাষী ছিলেন যে, যে কেউ তার কথা মন্ত্রমুগ্ধের মত শ্রবণ করত। চরম বিদ্বেষী ব্যক্তিও মুহূর্তে পরম বন্ধুতে পরিণত হয়ে যেত। একদিন আস‘আদ বিন যুরারাহ তাঁকে সাথে নিয়ে ‘বনু আব্দিল আশহাল’ ও ‘বনু যাফরে’র মহল্লায় গমন করেন ও সেখানে একটি কূয়ার পাশে কয়েকজন মুসলমানকে নিয়ে বসে দাওয়াতী কাজ করছেন। তখনো পর্যন্ত বনু আব্দিল আশহাল গোত্রের দুই নেতা সা‘দ বিন মু‘আয ও উসায়েদ বিন হুযায়ের ইসলাম কবুল করেননি। মুবাল্লিগদের আগমনের খবর জানতে পেরে সা‘দ উসায়েদকে বললেন, আপনি গিয়ে ওদের নিষেধ করুন যেন আমাদের সরল-সিধা মানুষগুলিকে বোকা না বানায়। আস‘আদ আমার খালাতো ভাই না হ’লে আমি নিজেই যেতাম’।

অতঃপর উসায়েদ বর্শা উঁচিয়ে সদর্পে সেখানে গিয়ে বললেন, যদি প্রাণে বাঁচতে চাও, তবে এখুনি পালাও। তোমরা আমাদের বোকা লোকগুলিকে মুসলমান বানাচ্ছ’। মুছ‘আব তখন শান্তভাবে বললেন, আপনি কিছুক্ষণের জন্য বসুন ও কথা শুনুন। যদি পসন্দ না হয়, তখন দেখা যাবে’। উসায়েদ তখন মাটিতে বর্শা গেড়ে বসে পড়লেন। অতঃপর মুছ‘আব তাকে কুরআন থেকে কিছু অংশ পাঠ করে শুনালেন। তারপর তিনি আল্লাহর বড়ত্ব, মহত্ত্ব ও তাঁর ইবাদত ও আনুগত্যের গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু কথা বললেন। ইতিমধ্যে উসায়েদ চমকিত হয়ে বলে উঠলেন,مَا أَحْسَنَ هَذَا الْكَلاَمَ وَأَجْمَلَهُ ‘কতই না সুন্দর কথা এগুলি ও কতই না মনোহর’। এরপর তিনি সেখানেই ইসলাম কবুল করলেন। অতঃপর তিনি সা‘দ বিন মু‘আয-এর নিকটে এসে বললেন, فَواللهِ مَا رَأَيْتُ بِهِمَا بَأْسًا ‘আল্লাহর কসম! আমি তাদের মধ্যে দোষের কিছু দেখিনি’।

পরক্ষণে সা‘দ বিন মু‘আযও ইসলাম কবুল করেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি নিজ গোত্রে ফিরে এসে সবাইকে ডেকে বললেন, ‘হে বনু আব্দিল আশহাল! তোমরা আমাকে তোমাদের মধ্যে কেমন মনে কর?’ তারা বলল, ‘আপনি আমাদের নেতা, সর্বোত্তম সিদ্ধান্তের অধিকারী ও আমাদের নিশ্চিন্ততম কান্ডারী’। তখন তিনি বললেন, فَإِنَّ كَلاَمَ رِجَالِكُمْ وَنِسَائِكُمْ عَلَيَّ حَرَامٌ حَتّى تُؤْمِنُوا بِاللهِ وَبِرَسُولِهِ ‘তোমাদের নারী ও পুরুষ সকলের সঙ্গে আমার কথা বলা হারাম, যে পর্যন্ত না তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপরে ঈমান আনবে’। এ কথার প্রতিক্রিয়া এমন হ’ল যে, সন্ধ্যার মধ্যেই সকলে ইসলাম কবুল করল’।[11]

এভাবে মুছ‘আব (রাঃ)-এর দাওয়াতী মেহনতের ফলে পরবর্তী হজ্জ মৌসুম আসার আগেই ইয়াছরিবের ঘরে ঘরে ইসলামের শাশ্বত বাণী পৌঁছে গিয়েছিল এবং ৭৫ জনের এক বিশাল কাফেলা মক্কায় গিয়ে আক্বাবা নামক পাহাড়ী সুড়ঙ্গে রাসূল (ছাঃ)-এর হাতে বায়‘আত গ্রহণ করে ধন্য হয়েছিলেন। যাকে ‘বায়‘আতে কুবরা’ বলা হয়। সেই সাথে রাসূল (ছাঃ)-এর মদীনায় হিজরতের পথও সুগম ও সুপ্রশস্ত হয়েছিল।

ওহোদ যুদ্ধে ঝান্ডাবহন ও শাহাদতবরণ : তিনি বদর ও ওহোদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে কাফেরদের বিরুদ্ধে বীর বিক্রমে যুদ্ধ করেছেন। ওহোদের যুদ্ধে রাসূল (ছাঃ) তাঁর হাতে ইসলামের ঝান্ডা অর্পণ করেন। ৩য় হিজরীর ৭ই শাওয়াল শনিবার সকালে যুদ্ধ শুরু হয়। তৎকালীন রীতি অনুযায়ী প্রথমে দ্বৈত যুদ্ধ, অতঃপর সম্মিলিত যুদ্ধে কাফের বাহিনীর বহু সৈন্য হতাহত হয় ও তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালাতে থাকে। কিন্তু গনীমত সংগ্রহকে কেন্দ্র করে গিরিপথের পাহারাদার মুসলিম তীরন্দায সেনাদের সাময়িক ভুল সিদ্ধান্তের ফলে শত্রুপক্ষের অশ্বারোহী দলের চৌকস সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ তার বাহিনী নিয়ে উক্ত গিরিপথ দিয়ে ঝড়ের বেগে মুসলিম বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে মুসলিম বাহিনীর উপর মহা পরীক্ষা নেমে আসে। নিশ্চিত বিজয় যেন পরাজয়ের রূপ লাভ করে। অনেক ছাহাবী হাতাহত হন। রাসূল (ছাঃ) মারাত্মকভাবে আহত হন। তাঁর দান্দান মুবারক শহীদ হয়। এই কঠিন মুহূর্তে যে কয়জন ছাহাবী রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে ছুটে এসে তাকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন মুছ‘আব বিন ওমায়ের (রাঃ)। =সীরাতুর রাসূল, পৃ: ৩৭৩। এক হাতে তরবারী ধারণ করে অপর হাতে তিনি শত্রুদের বিরুদ্ধে অস্ত্র চালাতে থাকেন। জান্নাত লাভের উদগ্র নেশায় বীরত্বের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যান। ইতিমধ্যে শত্রুদের টার্গেট হয়ে যান তিনি। শত্রুপক্ষের অশ্বারোহী ইবনে ক্বামিয়াহ ধেয়ে আসে তাঁর দিকে। ঘোড়ার উপর থেকে অস্ত্র চালনা করে সে। মুছ‘আবও সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করেন। অতঃপর ইবনে ক্বামিয়াহ তাঁর ডান হাতে আঘাত করলে হাতটি দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তিনি তখন বলে ওঠেন, وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ ‘মুহাম্মাদ একজন রাসূল ছাড়া কিছুই নন। তাঁর পূর্বে আরো বহু রাসূল অতিবাহিত হয়েছেন’। এবারে মুছ‘আব স্বীয় বাম হাত দ্বারা ইসলামের ঝান্ডাকে উড্ডীন করেন। ইবনে ক্বামিয়াহ দ্বিতীয়বার আঘাত করে তাঁর বাম হাতটিও বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। আবারও তিনি পূর্বের ন্যায় বলতে থাকেন, وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ ‘মুহাম্মাদ একজন রাসূল ছাড়া কিছুই নন। তাঁর পূর্বে আরো বহু রাসূল অতিবাহিত হয়েছেন’। মুছ‘আবের দুই হাতই দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই কঠিন মুহূর্তে জীবনের অন্তিম সায়াহ্নেও তিনি ইসলামের ঝান্ডাকে পদানত হ’তে দেননি। যন্ত্রণায় কাতর রক্তাক্ত মুছ‘আব এবারে দুই হাতের বাহু দ্বারা ইসলামের ঝান্ডাকে উঁচু করে ধরেন। কিন্তু না শেষ রক্ষা হ’ল না। তৃতীয় দফায় বর্শা নিক্ষেপ করা হ’ল তাঁর দিকে। অবশেষে বর্শা বিদ্ধ হয়ে ইসলামের পতাকা নিয়েই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এভাবেই সংক্ষিপ্ত ও মর্যাদামন্ডিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাক্বামে পৌঁছে যান ইসলামের প্রথম দাঈ দুনিয়াত্যাগী ছাহাবী মুছ‘আব বিন ওয়ায়ের (রাঃ)।[12]

এদিকে মুছ‘আব বিন ওমায়ের শহীদ হবার পর তাঁকে আঘাতকারী আব্দুল্লাহ বিন ক্বাতিমাহ ফিরে গিয়ে ঘোষণা করে যে, إِنَّ مُحَمَّدًا قَدْ قُتِلَ ‘মুহাম্মাদ নিহত হয়েছে’। কেননা রাসূল (ছাঃ)-এর চেহারার সাথে মুছ‘আবের চেহারার অনেকটা মিল ছিল। এই খবর উভয় শিবিরে দারুণ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। মুসলমানগণ ক্ষণিকের জন্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। তখন আল্লাহ তা‘আলা মুছ‘আবের মুখনিঃসৃত উক্ত বাণীই অহী হিসাবে নাযিল করেন, وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ وَمَنْ يَنْقَلِبْ عَلَى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَضُرَّ اللَّهَ شَيْئًا وَسَيَجْزِي اللَّهُ الشَّاكِرِينَ ‘আর মুহাম্মাদ একজন রাসূল বৈ কিছু নন। তাঁর পূর্বে বহু রাসূল বিগত হয়েছেন। এক্ষণে যদি তিনি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তাহ’লে তোমরা কি পশ্চাদপসরণ করবে? বস্ত্ততঃ যদি কেউ পশ্চাদপসরণ করে, সে আল্লাহর কোনই ক্ষতি করতে পারে না। আর আল্লাহ সত্বর তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দাদের পুরস্কৃত করবেন’ (আলে ইমরান ৩/১৪৪)[13]

কাফন-দাফন : যুদ্ধ শেষ হ’লে রাসূল (ছাঃ) মুছ‘আব বিন ওমায়েরের নিকট যান এবং সূরা আহযাবের ২৩নং আয়াত তিলাওয়াত করেন। যেখানে আল্লাহ বলেন, مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ فَمِنْهُمْ مَنْ قَضَى نَحْبَهُ وَمِنْهُمْ مَنْ يَنْتَظِرُ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا ‘মুমিনদের মধ্যে অনেকে আল্লাহর সাথে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। আর তারা তাদের অঙ্গীকার আদৌ পরিবর্তন করেনি’ (আহযাব ৩৩/২৩)

এ সময়ে রাসূল (ছাঃ) তার কাফনের চাদরটির দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘আমি তোমাকে মক্কায় দেখেছি। সেখানে তোমার চেয়ে কোমল চাদর এবং সুন্দর যুলফী আর কারো ছিল না। আর আজ তুমি এখানে এই চাদরে ধুলিমলিন অবস্থায় পড়ে আছ’। তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, ক্বিয়ামতের দিন তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে সাক্ষ্যদানকারী হবে’।[14] উল্লেখ্য যে, তাঁর কাফনের জন্য একখন্ড চাদর ব্যতীত কোন কিছু পাওয়া যায়নি। যা দিয়ে তার মাথা ঢাকলে পা বেরিয়ে যেত, পা ঢাকলে মাথা বেরিয়ে যেত। অবশেষে রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশে চাদরটি দিয়ে মাথা ঢেকে ‘ইযখির’ ঘাস দিয়ে পা ঢেকে তাকে দাফন করা হয়।

ছাহাবী আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ)-কে একদিন খাবার দেওয়া হ’লে তিনি আক্ষেপ করে বললেন,قُتِلَ مُصْعَبُ بْنُ عُمَيْرٍ وَكَانَ خَيْرًا مِنِّى فَلَمْ يُوجَدْ لَهُ مَا يُكَفَّنُ فِيهِ إِلاَّ بُرْدَةٌ ‘মুছ‘আব বিন উমায়র (রাঃ) শহীদ হয়েছেন। তিনি ছিলেন আমার চাইতে শ্রেষ্ঠ, অথচ তাঁর কাফনের জন্য এক ফালি চাঁদর ছাড়া কিছুই পাওয়া যায়নি’।[15]

অন্য বর্ণনায় আছে, আব্দুর রহমান বিন আওফ ছিয়াম অবস্থায় ছিলেন। তাকে খাদ্য পরিবেশন করা হ’লে তিনি বলেন, قُتِلَ ‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏ ‘মুছ‘আব বিন উমায়র (রাঃ) শহীদ হয়েছেন। তিনি ছিলেন আমার চাইতে শ্রেষ্ঠ। অথচ তাঁকে এমন একখানা চাদর দিয়ে কাফন দেয়া হ’ল যে, তাঁর মাথা ঢাকলে দু’পা বের হয়ে যায়। আর দু’পা ঢাকলে মাথা বের হয়ে যায়। (রাবী বলেন) আমার মনে পড়ে, তিনি আরও বলেছিলেন, হামযাহ (রাঃ) শহীদ হয়েছেন। তিনিও ছিলেন আমার চাইতে শ্রেষ্ঠ। অতঃপর আমাদেরকে পৃথিবীতে অনেক প্রাচুর্য দেওয়া হয়েছে। আমার আশংকা হয় যে, আমাদের নেক আমল গুলোর বিনিময় আমাদেরকে আগেই দিয়ে দেওয়া হ’ল কি-না। এরপর তিনি কাঁদতে লাগলেন, এমনকি খাদ্যও পরিহার করলেন।[16] একই মর্মে খাববাব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত আছে, ‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏খাববাব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে হিজরত করেছি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য। আমাদের প্রতিদান আল্লাহর নিকটেই নির্ধারিত আছে। আমাদের মধ্যে অনেকে তাঁদের ত্যাগ ও কুরবানীর ফল ভোগ না করেই আখেরাতে চলে গেছেন। তাদের মধ্যে মুছ‘আব বিন ওমায়ের (রাঃ) অন্যতম। তিনি ওহোদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। তাঁকে কাফন দেয়ার জন্য আমরা তার একটি চাদর ব্যতীত আর কিছুই পাইনি। চাদরটি দিয়ে তাঁর মাথা ঢাকলে পা বের হয়ে যায়, পা ঢাকলে মাথা বের হয়ে যায়। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, চাদরটি দিয়ে তাঁর মাথা ঢেকে দাও, আর পা দু’টির উপর ইয্‌খির ঘাস রেখে দাও। অর্থাৎ ইযখির ঘাস দিয়ে পা ঢেকে দাও। আর আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন, যাদের ফল পেকে গেছে এবং তাঁরা তা আহরণ করছেন’।[17]

উপসংহার : দুনিয়া ত্যাগের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন ছাহাবী মুছ‘আব বিন ওমায়ের (রাঃ)। চিরশান্তির অনন্ত নিবাস জান্নাত লাভের প্রত্যাশায় তিনি বিলাসী জীবন ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করে বেছে নিয়েছিলেন সমাজ সংস্কারের কাঁটাযুক্ত পথ। বাহারী পোষাক ও দামী আতর ত্যাগ করে পরেছিলেন অতি সাধারণ পোষাক। ইসলামের সূচনালগ্নে ইয়াছরিবের জনপদে তাঁর প্রজ্ঞাপূর্ণ দাওয়াত, সদাচরণ, মিষ্টভাষিতা ও ধৈর্যশীলতা এবং সর্বোপরি জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ইসলামের ঝান্ডাকে উড্ডীন রাখার প্রাণান্ত কোশেশ আল্লাহর পথের দাঈদের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর তাক্বওয়াপূর্ণ আপোষহীন জিহাদী যিন্দেগী থেকে ইবরত হাছিলের তাওফীক দান করুন-আমীন!


[1]. বুখারী হা/৩৬৭৩; মুসলিম হা/২৫৪০; মিশকাত হা/৫৯৯৮।

[2]. ইবনুল জাওযী, আল-মুনতাযাম ফী তারীখিল মুলূক ওয়াল উমাম (বৈরুত: দারুল কুতুব আল-ইলমিইয়াহ, তাবি), ৩/১৯৩; খালেদ মুহাম্মাদ খালেদ, রিজালুন হাওলার রাসূল (বৈরুত: দারুল ফিকর ১৪২১হি:), পৃ. ২৫।

[3]. রিজালুন হাওলার রাসূল, পৃ. ২৪।

[4]. সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) (রাজশাহী: হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ৩য় মুদ্রণ ২০১৬), পৃ. ২০৫।

[5]. আল-মুনতাযাম ফী তারীখিল মুলূক ওয়াল উমাম, ৩/১৯৩; রিজালুন হাওলার রাসূল, পৃ.২৪-২৫।

[6]. রিজালুন হাওলার রাসূল, পৃ. ২৫।

[7]. বুখারী হা/৩৯২৪; ঐ, ই.ফা.বা. হা/৩৬৪০।

[8]. বুখারী হা/৩৯২৫; ঐ, ই.ফা.বা. হা/৩৬৪১।

[9]. বুখারী হা/৪৯৪১; ঐ, ই.ফা.বা. হা/৪৫৭৭ ‘তাফসীর’ অধ্যায় নং-৫২; মিশকাত হা/৫৯৫৬।

[10]. রিজালুন হাওলার রাসূল, পৃ. ২৭।

[11]. সীরাতুর রাসূল, পৃ. ২০৫-২০৬।

[12]. আল-মুনতাযাম ফী তারীখিল মুলূক ওয়াল উমাম, ৩/১৯৪; রিজালুন হাওলার রাসূল, পৃ. ২৯।

[13]. মুনতাযাম ৩/১৯৫; রিজালুন হাওলার রাসূল, পৃ. ২৯; সীরাতুর রাসূল, পৃ. ৩৭০।

[14]. মুস্তাদরাক আলাছ ছহীহাইন, হা/২৯৭৭; রিজালুন হাওলার রাসূল, পৃ. ৩০।

[15]. বুখারী হা/১২৭৪; ঐ, ই.ফা.বা. হা/১২০০ জানাযা অধ্যায়

[16]. বুখারী হা/১২৭৫; ৪০৪৫; ঐ, ই.ফা.বা. হা/১২০১; মিশকাত হা/১৬৪৪।

[17]. বুখারী হা/৩৯১৪, ৪০৪৭; ঐ, ই.ফা.বা. হা/৩৬৩২; মুসলিম হা/৯৪০; তিরমিযী হা/৩৮৫৩; মিশকাত হা/৬১৯৬।






হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
সা‘দ ইবনু মু‘আয (রাঃ) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
রায়হানা বিনতু শামঊন (রাঃ) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
মায়মূনা বিনতুল হারেছ (রাঃ) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
উক্কাশা বিন মিহছান (রাঃ) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
যয়নাব বিনতু খুযাইমা (রাঃ) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
খুবায়েব বিন আদী (রাঃ) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
আস‘আদ বিন যুরারাহ (রাঃ) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
শেরে পাঞ্জাব, ফাতিহে কাদিয়ান মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহঃ) (৪র্থ কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
হাসান বিন আলী (রাঃ)(শেষ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
হাসান বিন আলী (রাঃ) (২য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
আরও
আরও
.