পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ । পর্ব ৭। পর্ব 8। পর্ব ৯।
রচনাবলী :
মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী লেখাপড়া শেষ করার পর দ্রুতই লেখনী জগতে পদার্পণ করেন এবং ১৮৯৫ সালে ‘তাফসীরে ছানাঈ’-এর ১ম খন্ড লিখে প্রকাশ করেন। ১৯০০ সালের দিকে তিনি বাতিল ধর্মগুলির বিরুদ্ধে লেখালেখি শুরু করেন।[1] তাঁর মৃত্যুর পর মাওলানা সাইয়িদ সুলায়মান নাদভী মাসিক ‘মা‘আরিফ’ পত্রিকায় লিখেন, ‘ইসলাম এবং ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে যেই বিষোদগার করেছে এবং কলম ধরেছে, তার আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর কলম কোষমুক্ত তরবারির ভূমিকা পালন করেছে। এই কলমী জিহাদে তিনি সারাজীবন অতিবাহিত করেছেন। ... তিনি লেখকও ছিলেন। তাঁর অধিকাংশ পুস্তক-পুস্তিকা ইসলাম বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে লিখিত’।[2] মাওলানা আব্দুল হাই হাসানী নাদভী বলেন, له مصنفات كثيرة في الرد على مرزا غلام أحمد القادياني وعلى الآرية، ‘মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী ও আর্য সমাজীদের জবাবে তাঁর অনেক গ্রন্থ রয়েছে’।[3] অমৃতসরী নিজেই বলেছেন, ‘আল্লাহ প্রদত্ত মেধা ও ক্ষমতাবলে আমি ইসলামের সমর্থনে এবং কুফরী, বিদ‘আত ও সীমালঙ্ঘনের জবাবে বহু গ্রন্থ রচনা করেছি এবং পরম করুণাময় আল্লাহর উপরে ভরসা করে নবী করীম (ছাঃ)-এর সুন্নাহর স্তম্ভ সমূহকে সুদৃঢ় করেছি’।[4]
তাফসীর, হাদীছ, ফিক্বহ, মানতিক, দর্শন ও ধর্মতত্ত্বে তাঁর জ্ঞানের গভীরতা ছিল ব্যাপক ও অতুলনীয়। বক্তব্য প্রদান করার সময় তার মুখ থেকে মূল্যবান মণি-মুক্তা বিচ্ছুরিত হ’ত এবং তিনি যে বিষয়ে কলম ধরতেন তা থেকে ইলম ও তাহকীকের প্রস্রবণ নির্গত হ’ত। তিনি ছিলেন অজস্রপ্রসূ লেখক। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি কত বই লিখেছেন, তার সঠিক সংখ্যা নিরূপণ দুরূহ। জীবনীকার ও গবেষক আব্দুর রশীদ ইরাকী-এর মতে তাঁর রচিত গ্রন্থ সংখ্যা ১৮৯টি। আধুনিক গবেষক আব্দুল মুবীন নাদভী (জন্ম ১৯৫৫) তাঁর থিসিসে অমৃতসরীর বইয়ের সংখ্যা ১৩৬টি বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। নাদভী তাঁর গ্রন্থসমূহকে ৬টি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করেছেন।
১. তাফসীরুল কুরআন বিষয়ে তাঁর রচিত গ্রন্থ ৭টি।
২. কাদিয়ানীদের খন্ডনে ৩৬টি (ইরাকীর মতে ৪০টি)।
৩. খ্রিস্টানদের খন্ডনে তাঁর রচিত গ্রন্থ সংখ্যা ৭টি।
৪. আর্যসমাজীদের খন্ডনে ৩২টি (ইরাকীর মতে ৪৮টি)।
৫. বিদ‘আতী ও গোঁড়া মুক্বাল্লিদদের খন্ডনে এবং আহলেহাদীছদের সম্পর্কে তাঁর লিখিত গ্রন্থ সংখ্যা ২২টি।
৬. হাদীছ, ফিক্বহ, ফৎওয়া, দাওয়াত, সাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে ২২টি এবং সমালোচনাধর্মী গ্রন্থ ১০টি। এই হ’ল সর্বমোট ১৩৬টি।[5] মোটকথা, মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী লিখিত ছোট-বড় বইয়ের সংখ্যা ১৩০-এর অধিক। এর অধিকাংশই উর্দূ ভাষায় রচিত।
কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের তালিকা :
* তাফসীরুল কুরআন বিষয়ক : তাফসীরুল কুরআন বি-কালামির রহমান (আরবী), তাফসীরে ছানাঈ (৮ খন্ড), বায়ানুল ফুরক্বান ‘আলা ইলমিল বায়ান (আরবী), তাফসীর বির-রায়, বুরহানুত তাফাসীর বা-জওয়াবে সুলতানুত তাফাসীর, আয়াতে মুতাশাবিহাত।
* খ্রিস্টানদের জবাবে : তাক্বাবুলে ছালাছাহ, জওয়াবাতে নাছারা, ইসলাম আওর মাসীহিয়াত, ইসলাম আওর ব্রিটিশ ল’, তাহরীফাতে বাইবেল আওর তাফসীরে সূরা ইউসুফ।
* আর্য সমাজীদের জবাবে : হক প্রকাশ, হুদূছে বেদ, মুক্বাদ্দাস রাসূল, তুরকে ইসলাম, তাগলীবুল ইসলাম (৪ খন্ড), তাব্রে ইসলাম, ইলহামী কিতাব, ছানাঈ পকেট বুক, উছূলে আ-রিয়া।
* কাদিয়ানীদের জবাবে : মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর রচনাবলীর একটা বড় অংশ কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে লিখিত। তিনি তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘কাদিয়ানী আন্দোলন সম্পর্কে আমার এত বই রয়েছে যে, আমার নিজেরই তার সংখ্যা মনে নেই’।[6] কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে তিনি ৩৬টি গ্রন্থ রচনা করেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হ’ল- ইলহামাতে মির্যা, তারীখে মির্যা, শাহাদাতে মির্যা, নিকাতে মির্যা, ফাতিহে কাদিয়ান, মুরাক্কা‘ কাদিয়ানী, আজাইবাতে মির্যা, ফাছলু কাযিইয়াতিল কাদিয়ানী : ফায়ছালায়ে মির্যা (আরবী ও উর্দূ), তা‘লীমাতে মির্যা, ইলমে কালামে মির্যা, বাতশে ক্বাদীর, আবাতীলে মির্যা, মুকালামাতে আহমাদী।
* তাক্বলীদের খন্ডনে : হাদীছে নববী আওর তাক্বলীদে শাখছী, ইজতিহাদ ওয়া তাক্বলীদ, ফিক্বহ আওর ফক্বীহ, তাক্বলীদে শাখছী আওর সালাফী, তানক্বীদে তাক্বলীদ, উছূলুল ফিক্বহ (আরবী), আছলী হানাফিয়াত আওর তাক্বলীদে শাখছী।
* বিদ‘আতীদের খন্ডনে : ইলমে গায়েব কা ফায়ছালা, শাম‘য়ে তাওহীদ, নূরে তাওহীদ, তাহরীকে ওহাবিয়াত পর এক নযর, মাসআলায়ে হেজায পর নযর, শরী‘আত ওয়া তরীকত।
* হাদীছে নববীর প্রতিরক্ষায় : দলীলুল ফুরক্বান বা-জওয়াবে আহলুল কুরআন, হুজ্জিয়াতে হাদীছ আওর ইত্তেবায়ে রাসূল, খাকসারী তাহরীক আওর উস কা বানী, দিফা‘ আনিল হাদীছ, দিফায়ে সুন্নাত।
* আহলেহাদীছদের সম্পর্কে : আহলেহাদীছ কা মাযহাব, ইসলাম আওর আহলেহাদীছ, ফুতূহাতে আহলেহাদীছ।[7]
প্রসিদ্ধ গ্রন্থ সমূহের সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা :
(ক) তাফসীর :
কুরআন মাজীদ ও তার তাফসীরের সাথে মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর সুগভীর সম্পর্ক ছিল। কুরআনের খিদমতেই তিনি সারাজীবন অতিবাহিত করেছেন। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘ছাত্রজীবনে কুরআন শেখার এবং লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর তা শিক্ষাদানের সুযোগ আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। কুরআনের তা‘লীম ও তাফসীরে আমার জীবনকালের চল্লিশ বছরের অধিক সময় অতিবাহিত হয়েছে’।[8] তিনি প্রায় প্রত্যেক দিন তাঁর মসজিদে কুরআন মাজীদের দারস দিতেন।[9]
তিনি স্বীয় আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘আমার রচনাবলীর চতুর্থ শাখা হ’ল তাফসীর লিখন। যদিও আমার সকল গ্রন্থ কুরআনেরই খিদমতে নিয়োজিত, তথাপি আমি বিশেষভাবে তাফসীর লেখার ক্ষেত্রে উদাসীন ছিলাম না’।[10]
মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর যুগে কাদিয়ানী, আর্য সমাজী, শী‘আ, ব্রেলভী ও খ্রিস্টান পন্ডিতগণ কুরআন মাজীদের মনগড়া তাফসীর করতেন। এমনকি তারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী কুরআন মাজীদের আয়াত সমূহকে বিকৃত পর্যন্ত করতেন। তাদের এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তাফসীরগুলি ইসলামী আক্বীদাকে ক্ষত-বিক্ষত করত। হিন্দু ও খ্রিস্টানরা কুরআন মাজীদকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত এবং তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ সমূহ যেমন বেদ, ইঞ্জীল প্রভৃতির পবিত্রতার দলীল কায়েম করত। এহেন দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে অমৃতসরী জনগণের সামনে কুরআনের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরে তাদের আক্বীদা সংশোধনে এগিয়ে আসেন এবং এ লক্ষ্যে কয়েকটি তাফসীর রচনা করেন।[11] তন্মধ্যে তাফসীরুল কুরআন বি-কালামির রহমান, তাফসীরে ছানাঈ ও বায়ানুল ফুরক্বান ‘আলা ইলমিল বায়ান অন্যতম।
১. তাফসীরুল কুরআন বি-কালামির রহমান : আরবী ভাষায় রচিত ‘তাফসীরুল কুরআন বি-কালামির রহমান’ অমৃতসরীর এক অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত তাফসীর। এ তাফসীরে তাঁর অনুসৃত পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আমি এতে কুরআন দিয়ে কুরআনের তাফসীর করার নীতি অবলম্বন করেছি। এটি বিদ্বানদের নিকট একটি স্বীকৃত মূলনীতি। আমি এতে আমার সবটুকু সামর্থ্য ব্যয় করেছি। আল্লাহ আমার ভুল-ত্রুটিগুলি ক্ষমা করুন’।[12]
আপাতদৃষ্টিতে কুরআন দিয়ে কুরআনের তাফসীর করা সহজ মনে হ’লেও তা বেশ দুরূহ। এজন্য প্রয়োজন কুরআন মাজীদ গভীরভাবে অধ্যয়ন ও এর উপরে পূর্ণ দখল। সেই সাথে একটি আয়াতের সাথে আরেকটি আয়াতের সম্পর্কও ভালভাবে বুঝা যরূরী। তবে সর্বাগ্রে প্রয়োজন তাওফীকে ইলাহী। অমৃতসরীকে আল্লাহ তা‘আলা সেই প্রখর মেধা, সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গি, গভীর জ্ঞান সর্বোপরি তাওফীক ও সক্ষমতা প্রদান করেছিলেন। তিনি গভীরভাবে কুরআন মাজীদ অধ্যয়ন ও অনুধাবন করেন এবং একই মর্মের আয়াতগুলি দ্বারা কুরআনের তাফসীর করেন।[13]
মাওলানা সাইয়িদ সুলায়মান নাদভী (১৮৮৪-১৯৫৩) এ তাফসীর সম্পর্কে বলেন, ‘মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর সর্বদা স্মরণীয় কর্মসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় কাজ তাঁর এই আরবী তাফসীর ‘তাফসীরুল কুরআন বি-কালামির রহমান’। সম্ভবতঃ ইসলামে এটি প্রথম তাফসীর, যেটি কুরআন দিয়ে কুরআনের তাফসীর করার মূলনীতির ভিত্তিতে লেখা হয়েছে। অথচ থিওরীগত দিক থেকে ‘কুরআনের এক অংশ অপর অংশকে ব্যাখ্যা করে’ এই মূলনীতি আলেমদের মাঝে দীর্ঘদিন থেকে সর্বজনগ্রাহ্য ও সর্বস্বীকৃত একটি মূলনীতি। কিন্তু বাস্তবে এখন পর্যন্ত কেউ তা করে দেখায়নি বা কেউ করে দেখালেও বর্তমানে তা মওজুদ নেই। এ দৃষ্টিকোণ থেকে উক্ত তাফসীরের এই বৈশিষ্ট্য অনেক প্রশংসার দাবীদার। লেখক প্রত্যেক আয়াতের তাফসীরে অন্যান্য এমন সব আয়াত উল্লেখ করেন, যার মাধ্যমে পূর্ববর্তী আয়াত সমূহের পুরা ব্যাখ্যা হয়ে যায়’।[14]
এই তাফসীরের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হ’ল, এটি তাফসীরে জালালাইনের মতো সংক্ষিপ্ত। এজন্য সাইয়িদ সুলায়মান নাদভী তাফসীরে জালালাইনের পরিবর্তে উক্ত তাফসীরকে মাদ্রাসার পাঠ্যসূচীভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ বর্তমান যুগের চাহিদা অনুযায়ী এটি জালালাইনের চেয়ে বেশী উপকারী হবে বলে তিনি তাঁর সুচিন্তিত অভিমত প্রকাশ করেছেন।[15]
এক্ষণে প্রশ্ন হ’ল, তিনি কেন এ ধরনের তাফসীর রচনায় প্রবৃত্ত হ’লেন? এর জবাবে অমৃতসরী উক্ত তাফসীরের ভূমিকায় বলেছেন, ‘আমি যতবার পূর্বসূরি ও উত্তরসূরি বিদ্বানদের তাফসীর অধ্যয়ন করেছি ততবার তাদেরকে কুরআনের জটিল ও কঠিন আয়াত সমূহের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করতে দেখেছি। তাদের মধ্যে কেউ হাদীছ ও আছারের মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর করেছেন। আবার কেউ বুদ্ধিভিত্তিক দলীল সমূহ দ্বারা কুরআনের তাফসীর করেছেন। অথচ তারা সবাই একমত যে, তাফসীরের সর্বোত্তম পদ্ধতি হ’ল আল্লাহর কালাম দিয়েই আল্লাহর কালামের তাফসীর করা’। ...অতঃপর তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অপার অনুগ্রহে আমাকে এই পথ ও পদ্ধতির সন্ধান দিয়েছেন। ... ফলে আমি আল্লাহর রহমতে এই তাফসীর রচনা করতে পেরেছি। আমি এতে আমার চিন্তা-চেতনা নিয়োজিত করেছি এবং চেষ্টা-সাধনায় কোন ত্রুটি করিনি’।[16]
তাফসীরের নমুনা : সূরা বাক্বারার ৭ আয়াতের তাফসীরে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ সত্য গ্রহণ করা থেকে তাদের অন্তরকে, সত্য শ্রবণ করা থেকে তাদের কর্ণ সমূহকে এবং সত্য দেখা থেকে তাদের চোখ সমূহকে গাফেল করে দিয়েছেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِيْنَ نَسُوا اللهَ فَأَنْسَاهُمْ أَنْفُسَهُمْ أُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ، ‘আর তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে আত্মভোলা করে দিয়েছেন। ওরাই হ’ল অবাধ্য’ (হাশর ৫৯/১৯)। আল্লাহ আরো বলেন,فَبِمَا نَقْضِهِمْ مِيثَاقَهُمْ لَعَنَّاهُمْ وَجَعَلْنَا قُلُوبَهُمْ قَاسِيَةً، ‘অতঃপর তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে আমরা তাদের উপর লা‘নত করি এবং তাদের অন্তরগুলিকে আমরা শক্ত করে দিই’ (মায়েদাহ ৫/১৩)। ফলে কাফেরদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের অপরাধ সম্পর্কে যে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল তা দূর হয়ে গেল’।[17]
তাফসীর শুরু করার পূর্বে মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী ১ম সংস্করণে সংক্ষেপে এবং ২য় সংস্করণে কিছুটা বর্ধিত আকারে একটি মূল্যবান ভূমিকা লিপিবদ্ধ করেছেন। এতে তাফসীরের বিশুদ্ধতার মানদন্ড, তাফসীর বির-রায়ের পরিচয় ও শানে নুযূল সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং তাঁর অনুসৃত পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন।[18]
তাফসীর করার সময় তিনি আয়াত সমূহের পূর্ণ ব্যাখ্যা কুরআন মাজীদের আয়াতের মাধ্যমেই করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু কিছু মাসআলা যেগুলি স্পষ্ট হয়নি সেগুলিকে অধিকতর স্পষ্ট করার জন্য হাশিয়ায় হাদীছ নিয়ে এসেছেন। কিছু জায়গায় অন্যান্য গ্রন্থের বরাত উলেলখ করেছেন। মতভেদপূর্ণ মাসআলাগুলিও হাশিয়ায় বর্ণনা করেছেন। কোথাও কোথাও নিজের মত ব্যক্ত করেছেন। আবার কোথাও পাঠকের উপরে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়-দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন।[19]
তাফসীরটি প্রকাশের পর দেশে ও আরব বিশ্বে তাঁর সুনাম-সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যেক মাযহাব ও মাসলাকের আলেমগণ এ তাফসীরটি পসন্দ করেন এবং এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন।[20] মিসরের ‘আল-আহরাম’ ও ‘আল-মানার’ পত্রিকায় এই তাফসীরের উপর রিভিউ প্রকাশিত হয় এবং অমৃতসরীকে ভারতের অন্যতম বড় ইসলামী চিন্তাবিদ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।[21]
মাওলানা মাহমূদুল হাসান দেওবন্দী (১৮৫১-১৯২০) বলেন, ‘হামদ ও ছানার পর বক্তব্য হ’ল, তাফসীরের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। তন্মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর পদ্ধতি হ’ল পরম করুণাময়ের বাণী দ্বারা কুরআনের ব্যাখ্যা করা। সুন্নাহ ও সঠিক পথের অনুসারী মাওলানা আবুল অফা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী সে পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন’।[22]
মাওলানা শিবলী নোমানী (১৮৫৭-১৯১৪) বলেন, ‘আমি মাওলানা ছানাউল্লাহর তাফসীরুল কুরআন দেখেছি। আমি স্বীকৃতি প্রদান করছি যে, এটি জ্ঞানান্বেষীদের জন্য উপকারী। তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হ’ল তিনি কুরআন দিয়ে কুরআনের তাফসীর করেন। আমার জানা মতে অন্য কোন তাফসীরে এই বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় না’।[23]
‘আল-জামি‘আহ আল-আরাবিইয়াহ’ পত্রিকার সম্পাদক এই তাফসীরকে ‘দামী মুক্তা ও মূল্যবান গ্রন্থ’ হিসাবে আখ্যায়িত করে বলেন, ‘মুসলিম বিশ্বের এ ধরনের আধুনিক তাফসীরের অত্যাধিক প্রয়োজন ছিল’।[24]
মাওলানা সাইয়িদ সুলায়মান নাদভী বলেন, ‘কুরআনের এ ধরনের তাফসীরের প্রয়োজনীয়তা সাধারণ মানুষের জন্য এবং তাদের চেয়ে আলেমদের জন্য দিন দিন বেশী অনুভূত হচ্ছে এবং হ’তে থাকবে’। তিনি আলেমগণকে এ তাফসীরটি অধ্যয়নের আহবান জানান।[25]
মাওলানা আব্দুল মাজেদ দরিয়াবাদী (১৮৯২-১৯৭৭) বলেন, ‘মাওলানা অমৃতসরীর উর্দূ তাফসীরও সংক্ষিপ্ত তাফসীরগুলির মধ্যে ভাল। কিন্তু আরবী তাফসীরের মূল্য এর চেয়ে বেশী। কুরআনের তাফসীর খোদ কুরআনের মাধ্যমেই করা হয়েছে। একই মর্মের আয়াতগুলি সুন্দরভাবে এক জায়গায় পাওয়া যায়’।[26]
গবেষক আব্দুল মুবীন নাদভী বলেন, ‘ভারত ও ভারতের বাইরে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি আরবী তাফসীর। এর রচনাশৈলী অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত’।[27]
মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর জীবদ্দশায় তাফসীরটি দু’বার প্রকাশিত হয়। প্রথমবার ১৯০৩ সালে এবং দ্বিতীয়বার ১৯২৯ সালে।[28] সর্বশেষ ২০০২ সালে রিয়াদের দারুস সালাম প্রকাশনী থেকে এর একটি চমৎকার সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। যার মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ৭৭৮। শায়খ ছফিউর রহমান মুবারকপুরী (১৯৪৩-২০০৬) এটি সম্পাদনা করেছেন।
২. তাফসীরে ছানাঈ : মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর দীর্ঘ ৩৬ বছরের সাধনার ফসল ৮ খন্ডে সমাপ্ত এই তাফসীরটি। উর্দূ ভাষায় রচিত এটি তাঁর প্রথম গ্রন্থ। ১৮৯৫ সালে এর ১ম খন্ড এবং ১৯৩১ সালে শেষ খন্ড প্রকাশিত হয়।[29] এই তাফসীরটি উর্দূভাষীদের মাঝে দারুণ জনপ্রিয় এবং সর্বমহলে প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্য এক অসাধারণ তাফসীর।[30] গবেষক আব্দুল মুবীন নাদভী বলেন, ‘তাঁর তাফসীরগুলির মধ্যে এই তাফসীরটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী। আলেম-ওলামা, গবেষক ও পাঠকবৃন্দের নিকট এটি ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে’।[31] অমৃতসরীর নিজের কাছেও ‘তাফসীরে ছানাঈ’ ও ‘তাফসীরুল কুরআন বি-কালামির রহমান’ অত্যন্ত পসন্দনীয় ছিল।[32]
উক্ত তাফসীর রচনার দু’টি কারণ তিনি উল্লেখ করেছেন। মাওলানার ভাষায়- ‘দু’টি কারণে আমার মনে এই তাফসীর লেখার চিন্তা উদিত হয়। একটি কারণ হ’ল আমি বলেছি যে, সাধারণভাবে মুসলমানরা কুরআনের বুঝ সম্পর্কে ওয়াকিফহাল নয়। এমনকি অনেকে আরবী বর্ণ পরিচয় পর্যন্ত জানে না। এমত পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে আরবী রচনাবলী দ্বারা কুরআন থেকে ফায়েদা হাছিল করা প্রায় অসম্ভব। দীর্ঘ হওয়ার কারণে উর্দূ তাফসীরগুলি থেকেও সাধারণ মানুষ উপকৃত হ’তে পারে না’।
দ্বিতীয় যে কারণটি তিনি উল্লেখ করেছেন তার সারমর্ম হ’ল, ইসলাম বিরোধীরা কুরআন মাজীদ সম্পর্কে তেমন জ্ঞান না রাখা সত্ত্বেও নিজেদেরকে সবজান্তা হিসাবে যাহির করে এবং কুরআনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়। এক্ষেত্রে তাদের পুঁজি হ’ল কুরআন মাজীদের কিছু উর্দূ অনুবাদ। অথচ কুরআনের সঠিক মর্ম অনুধাবনের জন্য গভীর জ্ঞান প্রয়োজন।[33] এদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সমালোচনার জবাব প্রদান সময়ের অনিবার্য দাবী ছিল। এ দু’টি কারণে তিনি উক্ত তাফসীরটি রচনা করেন।
তাফসীরে ছানাঈতে তিনি সহজ, সাবলীল ও সাধারণ মানুষের বোধগম্য ভাষায় শব্দে শব্দে কুরআনের অনুবাদ করেছেন। যাতে সবাই সমানভাবে এর দ্বারা উপকৃত হ’তে পারে। অনুবাদের পর সহজ ভাষায় আয়াতের মর্মার্থ বর্ণনা করেছেন। তারপর হাশিয়ায় সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা করেছেন।[34]
মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী বলেন, ‘এই তাফসীর লেখার আমার মূল উদ্দেশ্য যেহেতু স্রেফ এটা যে, সাধারণ মুসলমানেরা কুরআনের মর্ম অনুধাবন করবে, সেজন্য আমি আয়াতের অনুবাদ করার সময় আরবী শব্দ সমূহের ধারাবাহিকতা রক্ষা করিনি অর্থাৎ এমনটা করিনি যে, যে শব্দটি পরে এসেছে তার অনুবাদও পরে করব। বরং আরবী বাচনভঙ্গিকে উর্দূ বাচনভঙ্গিতে রূপান্তর করেছি। এ নিয়মও মেনে চলিনি যে, নামবাচক বাক্যের (جمله إسميه) অনুবাদ নামবাচক বাক্যেই করেছি, বরং উর্দূ বাচনভঙ্গিতে যে বাক্যে তার মর্ম পেয়েছি তা উল্লেখ করেছি।[35]
তাফসীরে ছানাঈ উর্দূ ভাষায় রচিত প্রথম তাফসীর যাতে কুরআনের আয়াতগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক বর্ণনা করা হয়েছে।[36] এ সম্পর্কে অমৃতসরী নিজেই বলেছেন, ‘আমি একটি আয়াতকে আরেকটি আয়াতের সাথে জুড়ে দিয়েছি এবং কিছু না কিছু পারস্পরিক সম্পর্কও খুঁজে পেয়েছি। ... আজ পর্যন্ত আমার এই বর্ণনা পদ্ধতি উর্দূ তাফসীরগুলিতে দৃষ্টিগোচর হয়নি’।[37] পরবর্তীতে মাওলানা হামীদুদ্দীন ফারাহী (১৮৬৩-১৯৩০) ও মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (১৮৬৩-১৯৪৩) নিজ নিজ তাফসীরে তাঁর এই রীতির অনুকরণ করেছেন।[38]
‘তাফসীরে ছানাঈ’-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হ’ল, এতে সমকালীন ইসলাম বিরোধী ফিরক্বা সমূহ যেমন আর্য সমাজী, সনাতন ধর্মী, কাদিয়ানী, শী‘আ, ব্রেলভী, প্রকৃতিবাদী, ইহুদী, খ্রিস্টান প্রমুখের বাতিল চিন্তাধারা কুরআনের আলোকে মাওলানা অমৃতসরী এমনভাবে খন্ডন করেছেন যে, এরপরে সমালোচনা ও অভিযোগ উত্থাপনের দরজা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিতর্কসুলভ দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটেছে।[39] কারণ তিনি নিজে একজন জাদরেল মুনাযির ছিলেন এবং তাঁর ভাষায় কুরআন মাজীদকে তিনি বিতর্ক শিল্পের ‘ইমাম’ হিসাবে পেয়েছেন।[40]
তাফসীরে ছানাঈর শুরুতে মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী একটি ভূমিকা লিপিবদ্ধ করেছেন। এ ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এই ভূমিকায় কিছু সংক্ষিপ্ত দলীলের মাধ্যমে নবীগণের সর্দার মুহাম্মাদ মুছত্বফা (ছাঃ)-এর নবুঅতের প্রমাণ পেশ করা হবে। এজন্য যে, প্রত্যেকটি গ্রন্থ অধ্যয়নের পূর্বে গ্রন্থকারের সম্মান-মর্যাদার প্রতিও খেয়াল রাখা যরূরী’।[41]
৩. বায়ানুল ফুরক্বান ‘আলা ইলমিল বায়ান : এটি আরবী ভাষায় রচিত অমৃতসরীর একটি চমৎকার তাফসীর। ১৩৫৩ হি./১৯৩৪ সালে এর প্রথম খন্ড মাতবা‘ ছানাঈ, অমৃতসর থেকে প্রকাশিত হয়। পৃষ্ঠা সংখ্যা ৬০। এরপর আর কোন খন্ডই প্রকাশিত হয়নি।[42]
তিনি বালাগাত ও ফাছাহাত তথা আরবী অলংকার শাস্ত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে কুরআন মাজীদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য এ তাফসীরটি লেখা শুরু করেছিলেন। সূরা ফাতিহা ও বাক্বারার তাফসীর লিখে ১ম খন্ড প্রকাশের পর আর সামনে এগুতে পারেননি। তাফসীরের শুরুতে তিনি একটি সারগর্ভ ভূমিকা লিখেছেন। এতে তিনি ইলমে মা‘আনী, বায়ান ও বাদী‘-এর ৭২টি কায়েদা উল্লেখ করেছেন।[43]
উক্ত তাফসীরে তিনি সূরার প্রথমে সংক্ষেপে তার বিষয়বস্ত্ত লিপিবদ্ধ করেছেন। অতঃপর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো উল্লেখ করেছেন। যেমন সূরা ফাতিহার তাফসীরে লিখেছেন, ‘সূরা ফাতিহা মক্কায় অবতীর্ণ। এর আয়াত সংখ্যা ৭। এটি কুরআন মাজীদের সর্বাধিক মর্যাদামন্ডিত সূরা। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘এটি বারবার পঠিতব্য সাতটি আয়াত এবং মহান কুরআন, যা আমাকে দেয়া হয়েছে’।[44]
এতে উল্লেখিত বিষয় সমূহ ৬টি। আল্লাহর প্রশংসা, পাঠকের দাসত্বের স্বীকৃতি, আললাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা, হেদায়াতের দো‘আ, ইবাদতের বিষয়ে সাহায্য প্রার্থনা এবং পথভ্রষ্ট ও বক্র হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকা প্রভৃতি’।[45]
(খ) অন্যান্য :
১. তাক্বাবুলে ছালাছাহ : পাদ্রী ঠাকুর দত্ত রচিত ‘আদামে যরূরাতে কুরআন’-এর জওয়াবে অমৃতসরী ‘তাক্বাবুলে ছালাছাহ’ লিখেন। এতে কুরআন, তাওরাত ও ইঞ্জীলের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করা হয়েছে। খ্রিস্টানদের জবাবে এটি তাঁর অন্যতম প্রসিদ্ধ ও শ্রেষ্ঠ রচনা। ১৯০১ সালে এটি ১ম প্রকাশিত হয়। ১৯০৪ সালে এর ২য় সংস্করণ বের হয়। ১৯৮৪ সালে এটি জমঈয়তে আহলেহাদীছ, লাহোর-এর উদ্যোগে নতুনভাবে প্রকাশিত হয়। যার পৃষ্ঠা সংখ্যা ১২৮।[46]
২. জওয়াবাতে নাছারা : অমৃতসরী স্বীয় আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘খ্রিস্টানদের ‘আদামে যরূরাতে কুরআন’-এর জওয়াব ছাড়াও আমি তাদের জবাবে কয়েকটি বই লিখেছি। যার সমষ্টির নাম ‘জওয়াবাতে নাছারা’।[47] এ রচনাসমগ্রে খ্রিস্টানদের লিখিত তিনটি পুস্তকের জবাব প্রদান করা হয়েছে। এগুলি হ’ল (১) হাকায়েকে কুরআন-এর জবাবে মা‘আরিফে কুরআন (২) ইছবাতে তাছলীছ-এর জবাবে ইছবাতে তাওহীদ এবং ‘মায়ঁ মাসীহী কিউঁ হোয়া (আমি কেন খ্রিস্টান হ’লাম)-এর জবাবে ‘তুম ঈসাঈ কিউঁ হোয়ে’ (তুমি কেন খ্রিস্টান হ’লে)। এগুলি প্রথমত সাপ্তাহিক ‘আহলেহাদীছ’ পত্রিকায় প্রবন্ধাকারে প্রকাশিত হয়। তারপর ১৯৩০ সালে ‘জওয়াবাতে নাছারা’ শিরোনামে বই আকারে প্রকাশিত হয়।[48]
৩. ইসলাম আওর মাসীহিয়াত : খ্রিস্টানদের রচিত তিনটি বইয়ের জবাবে তিনি এ গ্রন্থটি রচনা করেন। এগুলি হ’ল- (১) আলমগীর মাযহাব ইসলাম হ্যায় ইয়া মাসীহিয়াত (বিশ্বজনীন ধর্ম ইসলাম না খ্রিস্টান) (২) দ্বীনে ফিতরাত ইসলাম হ্যায় ইয়া মাসীহিয়াত? (স্বভাবধর্ম ইসলাম না খ্রিস্টান) ও (৩) উছূলুল বায়ান ফী তাওযীহিল কুরআন। খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে লিখিত এটিই তাঁর সর্বশেষ বই। ১৯৪১ সালে এটি ১ম প্রকাশিত হয়। মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ২২৬। বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর সমকালীন পত্র-পত্রিকায় এর দারুণ প্রশংসা করা হয়। ক্বিয়ামতের দিন ‘মুক্বাদ্দাস রাসূল’ ও এই বইটি অমৃতসরীর নাজাতের অসীলা হবে বলে তিনি আশা করেন।[49]
৪. আহলেহাদীছ কা মাযহাব : আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদের জওয়াব প্রদান করা হয়েছে ১১৪ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থে। সেই সাথে আহলেহাদীছদের আক্বীদা ও আমলের প্রমাণপঞ্জীও এতে তুলে ধরা হয়েছে।[50]
উক্ত গ্রন্থের উপসংহারে তিনি আহলেহাদীছদের মাযহাব সম্পর্কে বলেন, ‘আহলেহাদীছদের মাযহাবের সারমর্ম হ’ল لآ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ للهِ অর্থাৎ নবীগণের সরদার হযরত মুহাম্মাদ মুছত্বফা আহমাদ মুজতাবা (ছাঃ) কুরআন ও ছহীহ হাদীছ সমূহের মাধ্যমে যে শিক্ষা মানুষকে দিয়ে গেছেন, তার অনুসরণ করা আমাদের মাযহাব’।[51] অনেকে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব নাজদী (রহঃ)-কে আহলেহাদীছ মাসলাকের প্রতিষ্ঠাতা বলে থাকেন। এর জবাবে তিনি ‘আহলেহাদীছ কে মাযহাব কা বানী কোন হ্যায়’ (আহলেহাদীছদের মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা কে) শিরোনামে বলেন, ‘আহলেহাদীছদের মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ (ছাঃ)। ... মূর্খদের মধ্যে প্রসিদ্ধ আছে যে, আহলেহাদীছদের মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা হ’লেন আব্দুল ওয়াহ্হাব নাজদী। এটা আদৌ সঠিক নয়। ... আমাদেরকে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাবের অনুসারী বা তাঁকে আমাদের মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা বলা সুস্পষ্ট মিথ্যা ও যুলুম দুই নয় কি’?[52] ১৮৯৯ সালে গ্রন্থটি ১ম প্রকাশিত হয়। এ পর্যন্ত এটি মোট ৮ বার প্রকাশিত হয়েছে।[53]
৫. ইসলাম আওর আহলেহাদীছ : ১৪ পৃষ্ঠার এই পুস্তিকায় ইসলাম ও ফের্কাবন্দীর ইতিহাস অত্যন্ত সংক্ষেপে তুলে ধরে আহলেহাদীছ যে কোন নতুন ফের্কা নয় সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। ১৩৩০ হিজরীতে তিনি এটি রচনা করেন। আহলেহাদীছ ফের্কা কি-না এর উত্তরে তিনি লিখেছেন, ‘নাম হিসাবে আহলেহাদীছকে একটি ফের্কা বলা হ’লে ভিন্ন কথা। কিন্তু উছূল বা মূলনীতি ও আমলের দৃষ্টিকোণ থেকে আহলেহাদীছ কোন ফের্কা নয়। বরং সেটিই একমাত্র দল, যা নবুঅতের শিক্ষা থেকে সৃষ্টি হয়েছিল। যার নীতি ও আদর্শ ছিল কুরআন ও হাদীছের প্রতি আমল করা। এই দলটি যেমন তাদের আমলের নিয়ম-পদ্ধতিতে নতুন কিছু যোগ করেনি, তেমনি সালাফে ছালেহীনের রীতি-নীতি বিরুদ্ধও কিছু করেনি। বরং ঠিক অনুরূপই কুরআন ও হাদীছকে অথবা এভাবে বলা যায় যে, কুরআন ও নবী করীম (ছাঃ)-এর তরীকাকে ছাহাবীদের নীতির উপরে সুরক্ষিত রেখেছে’।[54]
আহলেহাদীছ নাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য ফের্কাগুলি তাদের সম্বন্ধ নিজেদের ইমামগণের দিকে করে হানাফী, শাফেঈ প্রভৃতি উপাধি গ্রহণ করেছে। কিন্তু এই দলের (আহলেহাদীছ) সংযোগ যেহেতু অন্য কারো সাথে ছিল না বরং ছাহাবীদের যুগের ন্যায় স্রেফ নবী করীম (ছাঃ)-এর সাথে ছিল, তাই তারা তাদের আমলের নিয়মপ্রণালী অনুসারে আহলেহাদীছ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। যা তাদের আমলের পদ্ধতির থেকে একটি উপযুক্ত নাম’।[55]
৬. ফুতূহাতে আহলেহাদীছ : বৃটিশ শাসিত ভারতে ব্রেলভীরা তাদের মসজিদে আহলেহাদীছদেরকে প্রবেশ করতে বাধা দিত। এমনকি তাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে একটি বইও তারা লিখে এবং এ বিষয়ে অত্যন্ত বাড়াবাড়ি করে। ফলে আহলেহাদীছদের আমল সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে সরকারী আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। আল্লাহর রহমতে আদালতের ফায়ছালা আহলেহাদীছদের পক্ষেই আসে। মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী কলিকাতা ও এলাহাবাদের চীফকোর্ট, হাইকোর্ট ও প্রিভি কাউন্সিলে আহলেহাদীছদের পক্ষে রায়প্রাপ্ত ৬টি মামলার বিবরণ সংকলন করেছেন এ গ্রন্থে। আহলেহাদীছ প্রেস, অমৃতসর থেকে ১৯০৫ সালে বইটি ১ম প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে করাচীর মাকতাবা শু‘আইব এটি পুনঃপ্রকাশ করে। বইটির মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ৮০।[56]
উক্ত মামলা সমূহের রায় প্রকাশের পেছনে অমৃতসরীর দু’টি উদ্দেশ্য ছিল। ১. পাঠককে এ বিষয়টি অবগত করানো যে, যারা আহলেহাদীছদের বিরোধিতা করে তারা কখনো সফলকাম হয় না। ২. আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে মামলাবাজি বন্ধ করা।[57]
৭. হক প্রকাশ : স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী তার ‘সত্যার্থ প্রকাশ’ গ্রন্থে কুরআন মাজীদের বিরুদ্ধে ১৫৯টি অভিযোগ উত্থাপন করেন। অমৃতসরী এর জবাবে ‘হক প্রকাশ’ (সত্যের আলো) লিখেন।[58] কাযী মুহাম্মাদ আদীল আববাসী এডভোকেট বাস্তী লিখেছেন, ‘সত্যার্থ প্রকাশ’-এর জবাব ‘হক প্রকাশ’ একটি এটম বোমা ছিল। যেটি সকল সমালোচনাকে ধোঁয়ার মত উড়িয়ে দিল’।[59] বিদ্বান মহলে বইটি দারুণ প্রশংসিত হয়। এটি ১০ বার মুদ্রিত হয়। ১৯০০ সালে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়।
৮. তুরকে ইসলাম : আব্দুল গফূর নামক জনৈক ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে ধর্মপাল নাম ধারণ করেন এবং ‘তারকে ইসলাম’ (ইসলাম ত্যাগ) নামে একটি বই লিখেন। এই বইয়ে তিনি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করার কারণ উল্লেখ করেন এবং কুরআন মাজীদ সম্পর্কে ১১৬টি অভিযোগ উত্থাপন করেন। ফলে মুসলমানদের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভ ধূমায়িত হয়। মাওলানা অমৃতসরী সর্বপ্রথম এই বইয়ের জবাবে ‘তুরকে ইসলাম’ (ইসলামের সৈনিক) লিখেন। ফলে এটি মুসলমানদের ক্ষত-বিক্ষত হৃদয়ে ঠান্ডা মলমের মতো কাজ দেয় এবং তাদের অন্তরকে ঐরূপ প্রশান্তিতে ভরে দেয়, মে-জুন মাসে গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহে ছায়েম ইফতার করে যেরূপ প্রশান্তি লাভ করে।[60]
২৪০ পৃষ্ঠার বিশাল এ গ্রন্থটি ১৯০৩ সালে ১ম প্রকাশিত হয়। ১৯২৭ সালে এর ৬ষ্ঠ সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। গ্রন্থটি দারুণ পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে এবং বড় বড় আলেম-ওলামা এর প্রশংসা করেন।[61]
৯. মুক্বাদ্দাস রাসূল : জনৈক আর্য সমাজী ‘রঙ্গীলা রাসূল’ নামে একটি বই লিখেন। এতে রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট সব অভিযোগ উত্থাপন করতঃ তাঁর পূত-পবিত্র চরিত্রে কলঙ্ক লেপনের অপচেষ্টা করা হয়। অমৃতসরী ‘মুক্বাদ্দাস রাসূল’ বই লিখে দৃঢ়তার সাথে সেসব অভিযোগের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেন।[62]
অমৃতসরী লিখেছেন, ‘রঙ্গীলা রাসূল’-এর জবাবে আমি ‘মুক্বাদ্দাস রাসূল’ লিখেছি। মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহে এই বইটাও এমন গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে যে, এরপরে কোন আলেম ‘রঙ্গীলা’র জবাবে কলম ধরেননি। কেননা এর প্রয়োজনই পড়েনি। আর আর্য সমাজীরাও এর প্রত্যুত্তর দেয়নি। গুজরাটের মুসলমানেরা গুজরাটী ভাষায় এর অনুবাদ প্রকাশ করেছেন’।[63]
জমঈয়তে ওলামায়ে হিন্দ-এর প্রথম সভাপতি মাওলানা মুফতী কেফায়াতুল্লাহ দেহলভী হানাফী (১৮৭৫-১৯৫২) লিখেছেন, ‘মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী এই গ্রন্থটি লিখে মুসলমানদের উপর বড় অনুগ্রহ করেছেন’।[64] এ গ্রন্থের মোট ৮-এর অধিক সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। ১৯২৪ সালে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়।
১০. তারীখে মির্যা : এতে ভন্ডনবী গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনকাহিনী তারই রচিত গ্রন্থাবলী ও ইশতেহার সমূহের আলোকে লিখিত হয়েছে। মির্যার জীবনীর উপরে এটি একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। ১৯১৯ সালে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়।[65]
১১. তা‘লীমাতে মির্যা : পাঁচটি অধ্যায়ে বিভক্ত এ গ্রন্থে গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর গুণাগুণ, পরস্পর বিরোধী বক্তব্য সমূহ, মিথ্যাবাদিতা, নিদর্শন সমূহ এবং চরিত্র আলোচিত হয়েছে। ১৯৩০ সালে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়।[66]
১২. খিতাব বা মওদূদী : এটি অমৃতসরী রচিত সর্বশেষ গ্রন্থ।[67] এতে হাদীছ সম্পর্কে মাওলানা আবুল আলা মওদূদীর দৃষ্টিভঙ্গি আলোচিত হয়েছে এবং তাঁর হাদীছ সম্পর্কিত সন্দেহ-সংশয়ের জবাব দেয়া হয়েছে। ১৯৪৬ সালে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়।[68]
অমৃতসরীর ফৎওয়া :
মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী ১৯০৩ সালে সাপ্তাহিক ‘আহলেহাদীছ’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। এতে সুদীর্ঘ ৪৪ বছর যাবৎ তাঁর ফৎওয়া সমূহ প্রকাশিত হয়। উক্ত পত্রিকায় এসব ফৎওয়া মুক্তাদানার ন্যায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। মাওলানা দাঊদ রায (১৯০৯-১৯৮১) এই বিক্ষিপ্ত মুক্তাগুলিকে একটি মালায় গ্রথিত করেন।[69]
দাঊদ রায সংকলিত ও শায়খুল হাদীছ আবু সাঈদ শারফুদ্দীন দেহলভী কর্তৃক হাশিয়া ও টীকা সংযোজিত অমৃতসরীর ফৎওয়া সংকলন ‘ফাতাওয়া ছানাইয়াহ’ নামে ১৯৭২ সালে ইদারায়ে তারজুমানুস সুন্নাহ, লাহোর থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়। অতঃপর ২০০২ সালে ‘মারকাযী জমঈয়তে আহলেহাদীছ হিন্দ’ এটি দুই খন্ডে প্রকাশ করে। যার মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা (৮১০+৭৯৬) ১৬০৬। ফিক্বহী অধ্যায়ভিত্তিক বিন্যস্ত ‘ফাতাওয়া ছানাইয়াহ’-তে সর্বমোট ১৪৯৩টি ফৎওয়া রয়েছে।[70] আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর (রহঃ) বলেন, ‘ফাতাওয়া ছানাইয়াহ’ আলেম ও সাধারণ মানুষ সবার জন্যই সমান উপকারী।[71]
মনীষীদের দৃষ্টিতে মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী :
১. ‘নুযহাতুল খাওয়াতির’ প্রণেতা মাওলানা আব্দুল হাই হাসানী নাদভী (১৮৬৯-১৯২৩) বলেন, الشيخ الفاضل ثناء الله الأمرتسري أحد الفضلاء المشهورين بالمناظرة... وكان عاملاً بالحديث، نابذاً للتقليد، ‘মাওলানা ছানাউললাহ অমৃতসরী একজন প্রসিদ্ধ ও খ্যাতিমান মুনাযির। ... তিনি হাদীছ অনুযায়ী আমলকারী (আহলেহাদীছ) এবং তাক্বলীদ বর্জনকারী ছিলেন’।[72]
২. মাওলানা সাইয়িদ সুলায়মান নাদভী হানাফী (১৮৮৪-১৯৫৩) বলেন, ‘মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী হিন্দুস্থানের অন্যতম প্রসিদ্ধ আলেম ছিলেন। তিনি বিতর্ক শিল্পের ইমাম, সুবক্তা এবং বহু গ্রন্থপ্রণেতা ছিলেন। মাযহাবগতভাবে তিনি আহলেহাদীছ ছিলেন’। ... মরহূম ইসলামের একজন বড় মুজাহিদ সৈনিক ছিলেন। যবান এবং কলমের মাধ্যমে ইসলামের উপর যেই হামলা করত, তার হামলা প্রতিরোধে যে সৈনিকটি সর্বাগ্রে সামনে অগ্রসর হ’তেন তিনি মাওলানা অমৃতসরী নিজেই। আল্লাহ তা‘আলা ইসলামের এই গাযীকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করুন’![73]
৩. খাজা হাসান নিযামী দেহলভী হানাফী (১৮৭৩-১৯৫৫) বলেন, ‘মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর সারা জীবন ইসলামের খিদমতে অতিবাহিত হয়েছে। তিনি ইসলামের শত্রুদের প্রত্যেকটি হামলার তাৎক্ষণিক জবাব প্রদান করতেন’।[74]
৪. দামেশকে হাম্বলীদের সাবেক মুফতী আল্লামা মুহাম্মাদ জামীল সালাফী বলেন, ‘স্বধর্মত্যাগী গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী ও তার মৃত্যুর পরে তার দলের বিরুদ্ধে আপনি বড় জিহাদ করেছেন এবং সত্যিকার অর্থে ইসলামের প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত হয়েছেন’।[75]
৫. উপমহাদেশের অনলবর্ষী বাগ্মী ও রাজনীতিবিদ আগা সুরেশ কাশ্মীরী (১৯১৭-১৯৭৫) বলেন, ‘যেসকল আহলেহাদীছ আলেম মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী ও তার পরে কাদিয়ানী গোষ্ঠীকে নিস্তেজ-নিষ্প্রভ করেছেন তাদের মধ্যে মাওলানা বাশীর সাহসোয়ানী, কাযী মুহাম্মাদ সুলায়মান মানছূরপুরী এবং মাওলানা মুহাম্মাদ ইবরাহীম মীর শিয়ালকোটীর নাম তালিকার শীর্ষে ছিল। কিন্তু আহলেহাদীছ আলেমদের মধ্যে যে মহান ব্যক্তিত্ব ‘ফাতিহে কাদিয়ান’ (কাদিয়ান বিজয়ী) উপাধি লাভ করেছিলেন তিনি হ’লেন মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী। তিনি মির্যা কাদিয়ানী ও তার দলকে কঠিন চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তাদের পিছনে তার সারা জীবন ব্যয় করেন। তাঁর বদৌলতে কাদিয়ানী জামা‘আতের প্রসার থেমে গিয়েছিল’।[76]
৬. ‘আলমী মজলিসে তাহাফ্ফুযে খতমে নবুঅত’ (পাকিস্তান) নেতা মাওলানা আল্লাহ অসায়া হানাফী (জন্ম: ১৯৪৫) বলেছেন, ‘তিনি মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর সাথে বাহাছ-মুনাযারা ও মুকাবিলা করেছেন। এজন্য তাঁকে ‘শেরে পাঞ্জাব’ (পাঞ্জাবের সিংহ) বলা হয়। মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী শেষ বয়সে ঘোষণা করেছিল যে, আমি যদি সত্যবাদী হই তাহ’লে আমার জীবদ্দশায় ছানাউল্লাহ কোন প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। আর যদি সে সত্যবাদী হয় তাহ’লে আমি তাঁর জীবদ্দশায় মরে যাব। আলহামদুলিল্লাহ, হযরত মাওলানা ছানাউল্লাহর জীবদ্দশায় মির্যা কাদিয়ানী কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এজন্য তাঁকে (অমৃতসরী) ‘ফাতিহে কাদিয়ান’ লকবে স্মরণ করা হয়’।[77]
৭. আর্য পন্ডিত ধর্মপাল লিখেছেন, ‘যখন মৌলভী নূরুদ্দীন কাদিয়ানী ‘নূরুদ্দীন’ নামক বইয়ের মাধ্যমে এবং মৌলভী ছানাউল্লাহ ছাহেব ‘তুরকে ইসলাম’ নামক বইয়ের মাধ্যমে ইসলাম ও মোল্লাইযমের (ব্যক্তির মত বা আলেমদের তাক্বলীদ) মধ্যে পার্থক্য রেখা টেনে দেন, তখন আমার রচনাবলীর মূল্য একটা দিয়াশলাই-এর মতো থেকে যায়। আমার অভিযোগগুলির জবাব দেয়ার ক্ষেত্রে ‘নূরুদ্দীন’-এর লেখকের নিশানা ইলমী তথ্যাবলীর কারণে নির্ভুল হ’ত। কিন্তু ‘তুরকে ইসলাম’-এর আঘাত আমাকে বেশী কষ্ট দিত। আমি প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে তাফসীরের ভিতের উপর যে দুর্গ নির্মাণ করতাম, তিনি স্রেফ এ বাক্যটুকু বলেই তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিতেন যে, ‘তাফসীরের জওয়াব তাফসীর লেখকদের কাছ থেকে নাও। কুরআন মাজীদ এর যিম্মাদার নয়’। এই একটিমাত্র বাক্য আমার ‘তারকে ইসলাম’ ও আমার অন্য আরেকটি রচনা ‘তাহযীবুল ইসলাম’-কে চালুনি করে দেয় এবং আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি যে, ‘নূরুদ্দীন’-এর লেখকের সাথে বিতর্ক চলতে পারে, কিন্তু ‘তুরকে ইসলাম’-এর লেখকের সাথে বিতর্ক চলা মুশকিল। যিনি মোল্লাইযমকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকারকারী। মজার ব্যাপার হ’ল ‘নূরুদ্দীন’-এর লেখক আমার বিরুদ্ধে দ্বিতীয়বার কলম ধরেননি। অথচ আমি আশা করেছিলাম যে, তার সাথে বিতর্ক অব্যাহত থাকুক। কিন্তু ‘তুরকে ইসলাম’-এর লেখক ‘তাহযীবুল ইসলাম’-এর জবাবে আবার কলম ধরেন। তখন আমি ‘তুরকে ইসলাম’-এর লেখকের মুকাবিলায় পুনরায় কলম ধরতে অস্বীকার করি। এভাবে আমাদের প্রথম যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে’।[78]
৮. কাযী মুহাম্মাদ আদীল আববাসী এডভোকেট বাস্তী লিখেছেন, ‘এ যুগের নতুন মুসলিম বংশধরদের প্রতি তাঁর ইহসান অপরিসীম। আজ আমরা যদি এই ধরাধামে ঈমান ও ইয়াক্বীনের (দৃঢ় বিশ্বাস) দ্বারা সৌভাগ্যবান হয়ে থাকি, তাহ’লে এটা সেই মর্দে মুজাহিদের অসীলায়। আগামী বংশধরগণের উপর তাঁর ইহসান যথারীতি বাকী আছে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত বাকী থাকবে’।[79]
৯. উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক, দৈনিক ‘যমীনদার’ পত্রিকার খ্যাতিমান সম্পাদক মাওলানা যাফর আলী খান (১৮৭৩-১৯৫৬) বলেন, ‘মাওলানা আবুল অফা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী অমুসলিমদের ধর্মীয় আপত্তি সমূহের দাঁতভাঙ্গা ও অকাট্য উত্তর প্রদানে যে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন তা ব্যাখ্যা করার অবকাশ রাখে না। নির্দ্বিধায় ও নির্ভয়ে এ দাবী করা যায় যে, মাওলানা ছাহেব এ পর্যন্ত খ্রিস্টান, আর্য সমাজী এবং অন্যান্য গোমরাহ ফের্কাগুলির মুকাবিলায় ইসলামের যে বিশাল খিদমত আঞ্জাম দিয়েছেন, ভারতের মুসলমানরা কখনো তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে পারবে না’।[80]
১০. মাওলানা আবুল হাসান আলী নাদভী হানাফী (১৯১৪-১৯৯৯) বলেন, ‘মির্যা গোলাম আহমাদ যখন ১৮৯১ সালে প্রতিশ্রুত মাসীহ হওয়ার দাবী করেন। অতঃপর ১৯০১ সালে নবুঅতের দাবী করে বসে, তখন ইসলামের অতন্দ্র প্রহরী ওলামায়ে কেরাম তার বিরোধিতা ও মুকাবিলা করা শুরু করেন। বিরোধিতা ও মুকাবিলাকারীদের মধ্যে প্রখ্যাত আলেম, ‘আহলেহাদীছ’ সম্পাদক মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী অগ্রগামী ও স্পষ্টবাদী ছিলেন’।[81]
১১. ভারতের খ্যাতিমান আহলেহাদীছ বিদ্বান, মারকাযী জমঈয়তে আহলেহাদীছ হিন্দ-এর সাবেক সেক্রেটারী মাওলানা আব্দুল হামীদ রহমানী (১৯৪০-২০১৩) বলেন, ‘শায়খুল ইসলাম আবুল অফা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহঃ) হিন্দুস্থানে ইসলামের একটি বড় মু‘জিযা ছিলেন। এই মর্দে মুজাহিদ একাই নাস্তিকতা ও স্বেচ্ছাচারিতা, শিরক ও কুফর, বিদ‘আত ও কুসংস্কার, আর্য সমাজ ও সনাতন ধর্ম, শুদ্ধি সংগঠন, খ্রিস্টান, কাদিয়ানী মতবাদ, বাহাঈ ও বাবী মতবাদ, শী‘আ ও রাফেযী, খাকসার, ইসমাঈলী ও বোহরা, কবরপূজারী, ছূফীবাদ ও যোগ-সন্ন্যাস, হাদীছ অস্বীকার ও চকড়ালবী প্রভৃতি বহু ফিৎনার মুকাবিলা করেছেন। তরুণ বয়স থেকে শুরু করে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত এই মহান মুজাহিদ ইসলাম ও তার শিক্ষা সমূহের বিরুদ্ধে উত্থিত প্রত্যেকটি ফিৎনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছেন এবং
এ পথেই পুরা মুজাহিদসুলভ মর্যাদায় তিনি নিজের জীবনকে স্রষ্টার নিকটে সোপর্দ করেছেন’।[82]
উপসংহার :
মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (১৮৬৮–১৯৪৮) উপমহাদেশের খ্যাতিমান আলেমে দ্বীন, অজস্রপ্রসূ লেখক ও শ্রেষ্ঠ মুনাযির ছিলেন। তিনি দারুল উলূম নাদওয়াতুল ওলামা লাক্ষ্মৌর প্রতিষ্ঠাতা ও স্থায়ী সদস্য, জমঈয়তে ওলামায়ে হিন্দ-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, অল ইন্ডিয়া আহলেহাদীছ কনফারেন্স-এর আজীবন সেক্রেটারী এবং আহলেহাদীছ জামা‘আতের আমীর ছিলেন।
মুনাযারা বা বিতর্ক শিল্পের ইমাম রূপে সর্বমহলে স্বীকৃত এই মর্দে মুজাহিদ ইসলাম বিরোধী ফেরকাগুলির বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। খ্রিস্টান, আর্য সমাজ, কাদিয়ানী, ব্রেলভী, আহলে কুরআন প্রভৃতি বাতিল ফেরকাগুলির বিরুদ্ধে তিনি এক হাযারের অধিক বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন। এ উপলক্ষে তিনি হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত ছুটে চলেছেন অবিশ্রান্তভাবে।
এদের মধ্যে কাদিয়ানীরাই ছিল তার এক নম্বর টার্গেট। ভন্ড নবী গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী তাঁর সাথে মুবাহালা করার ১৩ মাস ১০ দিন পর কলেরায় আক্রান্ত হয়ে ১৯০৮ সালের ২৬শে মে লাঞ্ছনাকর অবস্থায় এ পৃথিবী থেকে বিদায় হয়। এজন্য তিনি ‘ফাতিহে কাদিয়ান’ উপাধিতে ভূষিত হন। ইসলামের জীবন্ত মু‘জিযা অমৃতসরী গোলাম আহমাদের মৃত্যুর পরে ৪০ বছর ১১ মাস জীবিত ছিলেন।
ভারতবর্ষের মুসলমানদের উপর তাঁর ইহসান ক্বিয়ামত পর্যন্ত বাকী থাকবে। আল্লাহ তাঁর সকল কর্ম প্রচেষ্টা কবুল করুন এবং তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাঊসে স্থান দিয়ে সম্মানিত করুন- আমীন!!
ড. নূরুল ইসলাম
ভাইস প্রিন্সিপাল, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
[1]. মুহাম্মাদ রামাযান ইউসুফ সালাফী, মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী: হায়াত-খিদমাত-আছার, পৃঃ ২০।
[2]. মাসিক মা‘আরিফ (উর্দূ), আযমগড়, ইউপি, ভারত, ৬১/৫ সংখ্যা, মে ১৯৪৮, পৃঃ ৩৮৮; ইয়াদে রফতেগাঁ, পৃঃ ৩৭০।
[3]. নুযহাতুল খাওয়াতির ৮/১২০৫।
[4]. মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী, তাফসীরুল কুরআন বি-কালামির রহমান, সম্পাদনা : শায়খ ছফিউর রহমান মুবারকপুরী (রিয়াদ : দারুস সালাম, ১৪২৩ হি./২০০২ খৃ.), পৃঃ ২২।
[5]. চালীস ওলামায়ে আহলেহাদীছ, পৃঃ ১৯৮-২০৩; আব্দুল মুবীন নাদভী, আশ-শায়খ আল-আল্লামা আবুল অফা ছানাউল্লাহ আল-আমরিতসারী জুহূদুহু আদ-দা‘বিয়াহ ওয়া আছারুহু আল-ইলমিইয়াহ, পৃঃ ৪২৭-৪২৮;, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৪২৬।
[6]. ফিৎনায়ে কাদিয়ানিয়াত আওর মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী, পৃঃ ৬১।
[7]. চালীস ওলামায়ে আহলেহাদীছ, পৃঃ ১৯৮-২০৩; আব্দুল মুবীন নাদভী, আশ-শায়খ আল-আল্লামা আবুল অফা ছানাউল্লাহ আল-আমরিতসারী জুহূদুহু আদ-দা‘বিয়াহ ওয়া আছারুহু আল-ইলমিইয়াহ, পৃঃ ৪২৭-৪২৮; মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী, দিফায়ে সুন্নাত, তাহকীক্ব ও তা‘লীক : হাফেয শাহেদ মাহমূদ (গুজরানওয়ালা, পাকিস্তান : উম্মুল কুরা পাবলিকেশন্স, ১ম প্রকাশ, ২০০৮), পৃঃ ১৪-১৫।
[8]. আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৪৫০। গৃহীত : অমৃতসরী রচিত বায়ানুল ফুরক্বান ‘আলা ইলমিল বায়ান-এর ভূমিকা।
[9]. সীরাতে ছানাঈ, পৃঃ ২৩৮; ফিৎনায়ে কাদিয়ানিয়াত, পৃঃ ৬২।
[10]. ঐ, পৃঃ ৬২।
[11]. আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৪২৯-৪৩০।
[12]. তাফসীরুল কুরআন বি-কালামির রহমান, পৃঃ ২২।
[13]. ড. মুহাম্মাদ সালেম কিদওয়াঈ, হিন্দুস্তানী মুফাস্সিরীন আওর উন কী আরবী তাফসীরেঁ (লাহোর : ইদারায়ে মা‘আরিফে ইসলামী, ১ম প্রকাশ, ১৯৯৩), পৃঃ ১১৭-১১৮; আব্দুর রহমান ফিরিওয়াঈ, জুহূদু আহলিল হাদীছ ফী খিদমাতিল কুরআনিল কারীম (বেনারস : জামে‘আ সালাফিইয়াহ, ১৯৮০), পৃঃ ৪১।
[14]. মাসিক মা‘আরিফ, আযমগড়, ইউপি, ভারত, ২৪/৪ সংখ্যা, অক্টোবর ১৯২৯, পৃঃ ৩১৫।
[15]. ঐ, পৃঃ ৩১৫-৩১৬।
[16]. তাফসীরুল কুরআন বি-কালামির রহমান, পৃঃ ৩৩।
[17]. ঐ, পৃঃ ৮-৯।
[18]. ঐ, পৃঃ ৩৩-৪২; আব্দুর রশীদ ইরাকী, প্রবন্ধ : শায়খুল ইসলাম মাওলানা আবুল অফা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী কী ইলমী খিদমাত, সাপ্তাহিক আল-ই‘তিছাম, লাহোর, পাকিস্তান, ৪০/৩০ ও ৩১তম সংখ্যা, ২২-২৯শে জুলাই ১৯৮৮, পৃঃ ২৮।
[19]. হিন্দুস্তানী মুফাস্সিরীন আওর উন কী আরবী তাফসীরেঁ, পৃঃ ১১৮; আল-ই‘তিছাম, প্রাগুক্ত, পৃঃ ২৮।
[20]. মাসিক মা‘আরিফ, অক্টোবর ১৯২৯, পৃঃ ৩১৫; আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৪৪০।
[21]. জুহূদু আহলিল হাদীছ ফী খিদমাতিল কুরআনিল কারীম, পৃঃ ৪১; ইমাম খান নওশাহ্রাবী, হিন্দুস্তান মেঁ আহলেহাদীছ কী ইলমী খিদমাত (সাহীওয়াল, পাকিস্তান: মাকতাবা নাযীরিয়াহ, ১৩৯১ হি.), পৃঃ ২৪।
[22]. তাফসীরুল কুরআন বি-কালামির রহমান, পৃঃ ২৪।
[23]. তদেব।
[24]. আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৪৩৯। গৃহীত : আল-জামি‘আতুল আরাবিইয়াহ, ৮ই জুমাদাল আখেরাহ ১৩৪৮ হিঃ।
[25]. মা‘আরিফ, অক্টোবর ১৯২৯, পৃঃ ৩১৬।
[26]. সেমিনার সংকলন : কুরআন মাজীদ কী তাফসীরেঁ চৌদ্দা সো বরস মেঁ (পাটনা : খোদাবখ্শ ওরিয়েন্টাল পাবলিক লাইব্রেরী, ১৯৯৫), পৃঃ ৩০৮। গৃহীত : দরিয়াবাদী, মু‘আছিরীন, পৃঃ ১২৪।
[27]. আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৪৩০।
[28]. তাযকেরায়ে আবুল অফা, পৃঃ ৫৯।
[29]. ঐ, পৃঃ ৫৭-৫৮; আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৪৫৩-৪৫৪।
[30]. মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী, মাখযানে ছানাঈ-২ (লাহোর : রাজপুত প্রিন্টিং ওয়ার্কস, জানুয়ারী ১৯১৪), পৃঃ ১২।
[31]. আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৪৫৩-৪৫৪।
[32]. ইয়াদে রফতেগাঁ, পৃঃ ৩৭০-৩৭১।
[33]. মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী, তাফসীরে ছানাঈ (লাহোর : মাকতাবা কুদ্দূসিয়াহ, ২০০২), ১ম খন্ড, পৃঃ ৫।
[34]. ড. সাইয়িদ শাহেদ আলী, উর্দূ তাফাসীর বীসবী ছদী মেঁ (লাহোর : মাকতাবা কাসেমুল উলূম, তা.বি), পৃঃ ৩২।
[35]. তাফসীরে ছানাঈ ১/১৮।
[36]. উর্দূ তাফাসীর বীসবী ছদী মেঁ, পৃঃ ৩২-৩৩।
[37]. তাফসীরে ছানাঈ ১/১৮।
[38]. আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৪৫৬; জুহূদু আহলিল হাদীছ ফী খিদমাতিল কুরআনিল কারীম, পৃঃ ৪১।
[39]. বায্মে আরজুমন্দাঁ, পৃঃ ১৪৯-১৫০; উর্দূ তাফাসীর বীসবী ছদী মেঁ, পৃঃ ৩৫; হিন্দুস্তান মেঁ আহলেহাদীছ কী ইলমী খিদমাত, পৃঃ ২৪।
[40]. তাফসীরে ছানাঈ ১/৫।
[41]. ঐ ১/৬।
[42]. তাযকেরায়ে আবুল অফা, পৃঃ ৬১।
[43]. বায্মে আরজুমন্দাঁ, পৃঃ ১৫০; নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৪৫০।
[44]. বুখারী হা/৪৭০৩।
[45]. আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৪৫১-৪৫২। গৃহীত : বায়ানুল ফুরক্বান ‘আলা ইলমিল বায়ান, পৃঃ ৬।
[46]. আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৬৩-১৬৪।
[47]. সাপ্তাহিক আল-ই‘তিছাম, ২২-২৯শে জুলাই ১৯৮৮, পৃঃ ২৯।
[48]. তাযকেরায়ে আবুল অফা, পৃঃ ৬৮-৬৯; আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৫৯-১৬৩।
[49]. মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী, ইসলাম আওর মাসীহিয়াত (লাহোর : নু‘মানী কুতুবখানা, ১৯৯৯), পৃঃ ১২; আল-ই‘তিছাম, ২২-২৯শে জুলাই ১৯৮৮, পৃঃ ২৮-২৯।
[50]. মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী, আহলেহাদীছ কা মাযহাব (লাহোর : দারুদ দাওয়াহ আস-সালাফিইয়াহ, ১৪০৫ হিঃ), পৃঃ ৬-১০; রাসায়েলে ছানাইয়াহ, পৃঃ ২০-২২।
[51]. আহলেহাদীছ কা মাযহাব, পৃঃ ১১২; রাসায়েলে ছানাইয়াহ, পৃঃ ১০২।
[52]. আহলেহাদীছ কা মাযহাব, পৃঃ ১১১-১১২।
[53]. সাপ্তাহিক আল-ই‘তিছাম, ১২ই আগস্ট ১৯৮৮, পৃঃ ১৬।
[54]. মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী, ইসলাম আওর আহলেহাদীছ (লাহোর : দারুদ দাওয়াহ আস-সালাফিইয়াহ, ১৪০৫ হিঃ), পৃঃ ১২-১৩।
[55]. ঐ, পৃঃ ১৩।
[56]. আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩৫৩-৩৫৪; আহলেহাদীছ আন্দোলন, পৃঃ ২৮৫, টীকা-২১।
[57]. মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী, ফুতূহাতে আহলেহাদীছ (করাচী : মাকতাবা শু‘আইব, ১৯৬০), পৃঃ ২-৩।
[58]. আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৭৮।
[59]. মাওলানা মুহাম্মাদ মুস্তাকীম সালাফী, জামা‘আতে আহলেহাদীছ কী ছাহাফাতী খিদমাত (বেনারস : আল-ইয্যাহ ইউনিভার্সাল, ২০১৪), পৃঃ ১৭।
[60]. মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী, তুরকে ইসলাম (দিল্লী : আল-কিতাব ইন্টারন্যাশনাল, তাবি), পৃঃ ১; আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৮৬; ফিৎনায়ে কাদিয়ানিয়াত, পৃঃ ৬০।
[61]. তুরকে ইসলাম, পৃঃ ৮-১১।
[62]. চালীস ওলামায়ে আহলেহাদীছ, পৃঃ ২০৫; মাসিক ছওতুল উম্মাহ, জামে‘আ সালাফিইয়াহ, বেনারস, ভারত, সম্পাদকীয়, নভেম্বর ২০০৭, পৃঃ ৩-১১।
[63]. আল-ই‘তিছাম, লাহোর, পাকিস্তান, ২২-২৯শে জুলাই ১৯৮৮, পৃঃ ৩০; সাপ্তাহিক আহলেহাদীছ, অমৃতসর, ২৩শে জানুয়ারী ১৯৪২।
[64]. মুক্বাদ্দাস রাসূল, পৃঃ ১২।
[65]. চালীস ওলামায়ে আহলেহাদীছ, পৃঃ ২০৫-২০৬।
[66]. রাসায়েলে ছানাইয়াহ, পৃঃ ৩৭৯-৪৩২।
[67]. আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৪৮০।
[68]. চালীস ওলামায়ে আহলেহাদীছ, পৃঃ ২০৮।
[69]. ফাতাওয়া ছানাইয়াহ (দিল্লী : মারকাযী জমঈয়তে আহলেহাদীছ হিন্দ, ২০০২), ১ম খন্ড, পৃঃ ১৩।
[70]. মুহাম্মাদ আফযাল, বার্রে ছাগীর কে ওলামায়ে আহলেহাদীছ কী কুতুবে ফাতাওয়া: তা‘আরুফী ওয়া তাহকীকী মুতালা‘আ, এম.ফিল থিসিস, সেশন : ২০০৫-২০০৭, আল্লামা ইকবাল ওপেন ইউনিভার্সিটি, ইসলামাবাদ, পাকিস্তান, পৃঃ ৮৪।
[71]. ফাতাওয়া ছানাইয়াহ ১/১৫।
[72]. নুযহাতুল খাওয়াতির ৮/১২০৫।
[73]. ইয়াদে রফতেগাঁ, পৃঃ ৩৬৯, ৩৭৩; মাসিক মা‘আরিফ, মে ১৯৪৮, পৃঃ ৩৮৭, ৩৯০।
[74]. মুক্বাদ্দাস রাসূল, পৃঃ ৮।
[75]. আব্দুল মুবীন নাদভী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩৩০।
[76]. সুরেশ কাশ্মীরী, তাহরীকে খতমে নবুঅত (লাহোর : মাতবূ‘আতে চাটান, ৪র্থ সংস্করণ, ২০০৩), পৃঃ ৪০।
[77]. মুহাম্মাদ ইবরাহীম সালাফী, প্রবন্ধ : ‘ফাতিহে কাদিয়ান শায়খুল ইসলাম মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহঃ) কা রদ্দে কাদিয়ানিয়াত মেঁ কিরদার’, আল-ই‘তিছাম, লাহোর, পাকিস্তান, ৬৪/১৩ সংখ্যা, ৩০শে মার্চ-৫ই এপ্রিল ২০১২, পৃঃ ১৭। গৃহীত : তাযকেরায়ে মুজাহিদীনে খতমে নবুঅত, পৃঃ ১১৯।
[78].জামা‘আতে আহলেহাদীছ কী ছাহাফাতী খিদমাত, পৃঃ ২০। গৃহীত : আল-মুসলিম, ডিসেম্বর ১৯১৪, পৃঃ ৩৯৩।
[79]. ঐ, পৃঃ ১৭।
[80]. মুক্বাদ্দাস রাসূল, পৃঃ ১৮।
[81]. মাওলানা আবুল হাসান আলী নাদভী, কাদিয়ানিয়াত মুতালা‘আ ওয়া জায়েযা (করাচী : মজলিসে নাশরিয়াতে ইসলাম, তাবি), পৃঃ ২৩; ঐ বঙ্গানুবাদ : কাদিয়ানিবাদের স্বরূপ (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ১ম প্রকাশ, ২০১৪), পৃঃ ২৫।
[82]. সালনামায়ে তারীখে আহলেহাদীছ ২০১৭, ২য় খন্ড, সংকলনে: আব্দুল হাকীম আব্দুল মা‘বূদ মাদানী (মুম্বাই: মারকাযে তারীখে আহলেহাদীছ, ২০১৮), পৃঃ ৩০। গৃহীত : মাজমূ‘আ মাক্বালাতে মাওলানা আব্দুল হামীদ রহমানী ২/২৫৮।