পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । শেষ পর্ব 

লোভহীনতা : ধর্মীয় ও শিক্ষা সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য মুবারকপুরী (রহঃ)-এর কাছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দাওয়াত আসত। সাধ্যানুযায়ী তিনি সেসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত হ’তেন। এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদেরকে আয়োজকরা পথখরচ ও সম্মানী দিতেন। কিন্তু মুবারকপুরী কখনো সম্মানী গ্রহণ করতেন না। পথখরচও অনেক সময় নিতে চাইতেন না। তবে কখনো কখনো নিতে বাধ্য হ’লে কর্মস্থলে ফিরে এসে অতিরিক্ত অর্থ কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত পাঠাতেন।

তদীয় ছাত্র, নেপালের খ্যাতনামা আহলেহাদীছ আলেম মাওলানা আব্দুর রউফ ঝান্ডানগরী বলেন, ‘আমার বাবা শায়খ মুবারকপুরীকে সিরাজুল উলূম মাদরাসা (ঝান্ডানগর, নেপাল) পরিদর্শনের জন্য দাওয়াত দেন এবং আব্দুর রহমান মুবারকপুরী ও মুহাম্মাদ মুনীর খানের মৃত্যুর পর মাদরাসার তত্ত্বাবধান করার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি দাওয়াত গ্রহণ করেন এবং একাই সেখানে যান। ফেরার সময় বাবা তাঁকে পথখরচ দিতে চান। কিন্তু তাঁর হাতে দেয়ার সাহস না পেয়ে দারুল হাদীছ রহমানিয়া, দিল্লীর ঠিকানায় তাঁর নামে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু তিনি টাকা ফেরত পাঠান এবং গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন’।
একবার এ্যাডভোকেট আদীল আববাসী বাস্তী নগরীতে একটি ধর্মীয় ও শিক্ষা সম্মেলনের আয়োজন করেন। দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম, ইসলামী চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীগণ সে সম্মেলনে উপস্থিত হন। ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ)ও এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। তাঁকে পথখরচ দিতে চাইলে তিনি তা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, ‘এই সম্মেলন আয়োজনের জন্য আপনারা প্রচন্ড পরিশ্রম করেছেন। নিজ খরচে এই সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে আপনাদেরকে সহযোগিতা করা কী আমাদের দায়িত্ব নয়’?
মাওলানা মুহাম্মাদ আমীন আছারী মাদরাসা মুহাম্মাদিয়া, নি‘মতপুরের শিক্ষক থাকাকালে ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী মাদরাসাটি পরিদর্শনে যান। তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন জামে‘আ সালাফিয়া, বেনারসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং ‘আহলেহাদীছ আওর সিয়াসাত’ মাওলানা নাযীর আহমাদ রহমানী (১৯০৬-১৯৬৫) ও আলহাজ আব্দুস সালাম মুবারকপুরী। তিনি (মুবারকপুরী) সেখানে দাওয়াতী প্রোগ্রামে বক্তব্য দেন। বিদায়লগ্নে মুবারকপুরীকে হাদিয়া স্বরূপ আম ও পথখরচ প্রদান করা হয়। কিন্তু তিনি কোনটিই গ্রহণ করেননি। দিল্লী পৌঁছার পর মাওলানা আছারীকে একটি পত্র লিখে মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। উক্ত পত্রে তিনি বলেন, ‘হাদিয়া ও টিকিট গ্রহণ না করার জন্য আলহাজ আব্দুল্লাহ ও নূরে এলাহী যেন মনঃকষ্ট না পান। শাশহানিয়ার অনুষ্ঠানে আব্দুল জলীল পথখরচ ও সম্মানী এবং তুলসীপুর অনুষ্ঠানে মুহাম্মাদ শফী খান দ্বিগুণ পথখরচ দিতে চাইলেও আমার মন তা গ্রহণ করতে সায় দেয়নি। তা গ্রহণ না করে আমি মানসিক প্রশান্তি ও আনন্দ লাভ করছি। আশা করি ভবিষ্যতেও আল্লাহ আমাদেরকে এত্থেকে রক্ষা করবেন এবং প্রত্যেক আলেমকে এরূপ মনোবৃত্তি পোষণের তাওফীক্ব দান করবেন’।
বিনয়-নম্রতা : মাসআলা-মাসায়েল জানার জন্য মুবারকপুরীর কাছে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসত। এতে ‘মির‘আত’ রচনায় ব্যাঘাত ঘটতে দেখে জামে‘আ সালাফিয়া, বেনারসের শিক্ষক মাওলানা মুহাম্মাদ রাঈস নাদভী (১৯৩৭-২০০৯) সাক্ষাৎকারীদের জন্য সময় নির্ধারণ করার ব্যাপারে মুবারকপুরীকে প্রস্তাব দেন। কিন্তু তিনি এ প্রস্তাব কঠিনভাবে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আগমুতক ও সাক্ষাৎপ্রার্থীদের জন্য সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ করা ইসলামী শরী‘আত অনুমোদন করে না। বিশেষ করে যারা ইলমী, দ্বীনী ও সামাজিক বিষয় সম্পর্কিত মাসআলা-মাসায়েল জানার জন্য আসে তাদের জন্য। সফরের কষ্ট স্বীকার করে তাদের অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে আসে। কাজেই শরী‘আত তা অনুমোদন করে না এবং ইসলামী চরিত্র তা বৈধ করে না। এটি মানবিকতারও পরিপন্থী। আমাদের পূর্ববর্তী মনীষীদের জীবনে এর দৃষ্টান্ত আমরা পাইনি’।
অতিথিপরায়ণতা :মাওলানা আবুল বারাকাত বলেন, ‘আমার বাবা মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া একবার মুবারকপুরীর সাথে দেখা করার জন্য তাঁর বাড়ীতে যান। তখন ছিল সন্ধ্যাবেলা। ঐ সময় বাজারে গোশত পাওয়া না যাওয়ায় তিনি বাড়ির একটি দুগ্ধবতী ছাগল যবেহ করে তার মেহমানদারী করেন’।
মুবারকপুরীর জামাই মুহাম্মাদ ফারূক আযমী বলেন, ‘তিনি অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ, উত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং নম্র-ভদ্র ছিলেন। তাঁর বাড়ীতে প্রায় সব সময় মেহমানের আনাগোনা থাকত। দূর ও কাছের লোকেরা দ্বীনী বিষয়াবলী জানা এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে তাঁর কাছে আসত। এতে গবেষণাকর্মে ব্যাঘাত ঘটলেও তাঁর কপালে কখনো ভাঁজ পড়ত না। আগমুতকদের খবরাখবর জিজ্ঞেস করতেন। সাধ্যানুযায়ী তাদের খাতির-যত্ন ও আপ্যায়ন করতেন। তাঁর এই সুন্দর গুণ এবং অতিথিপরায়ণতা মানুষের মনে গেঁথে যেত এবং যে কেউ তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসত অথবা তার মেহমান হ’ত, সে মনে করত, মুবারকপুরীর সব ভালবাসা, খাতির-যত্ন এবং সৌজন্যবোধ বুঝি তার জন্যই নির্দিষ্ট। তাঁর এই উন্নত চরিত্র-মাধুর্যের কথা সবাই স্বীকার করত’।
আল্লাহভীরুতা : আত্মপ্রশংসা, আত্মপ্রকাশ ও আত্মগর্ব থেকে তিনি সর্বদা বিরত থাকতেন। আল্লাহভীরুতা ছিল তাঁর চরিত্রের ভূষণ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিম্নোক্ত হাদীছের প্রতিচ্ছবি ছিলেন তিনি।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ثَلاَثٌ مُنْجِيَاتٌ، وَثَلاَثٌ مُهْلِكَاتٌ  فَأَمَّا الْمُنْجِيَاتُ : فَتَقْوَى اللهِ فِى السِّرِّ وَالْعَلاَنِيَةِ، وَالْقَوْلُ بِالْحَقِّ فِى الرِّضَى وَالسَّخَطِ، وَالْقَصْدُ فِى الْغِنَى وَالْفَقْرِ. وَأَمَّا الْمُهْلِكَاتُ : فَهَوًى مُتَّبَعٌ، وَشُحٌّ مُطَاعٌ، وَإِعْجَابُ الْمَرْءِ بِنَفْسِهِ، وَهِىَ أَشَدُّهُنَّ.
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তিনটি জিনিস মুক্তিদানকারী এবং তিনটি জিনিস ধ্বংসসাধনকারী। মুক্তিদানকারী জিনিসগুলি হ’ল- প্রকাশ্যে ও গোপনে (সর্বাবস্থায়) আল্লাহকে ভয় করা। খুশী ও অখুশী উভয় অবস্থায় সত্য কথা বলা এবং ধনাঢ্যতা ও দারিদ্র্য উভয় অবস্থায় মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। আর ধ্বংসসাধনকারী জিনিসগুলি হ’ল- প্রবৃত্তিপূজারী হওয়া, লোভ-লালসার দাস হওয়া এবং আত্মগর্বী হওয়া। আর এটিই হ’ল সর্বাপেক্ষা জঘন্য’।
একবার তিনি সিদ্ধার্থনগর যেলার ইউসুফপুরে অবস্থিত দারুল হুদা মাদরাসা পরিদর্শনে গেলে কবি হায়রাত বাস্তাবী ও আমজাদ নেপালী তাঁর প্রশংসায় কয়েক ছত্র কবিতা আবৃত্তি করেন। তাদের কবিতা পাঠের পর মুবারকপুরী বলেন, ‘তোমরা ভাল কবিতা রচনা করতে পার। তবে তোমরা আমার এমন প্রশংসা করেছ, যার যোগ্য আমি নই। তোমরা আমার প্রশংসা করছিলে আর আমার মন ডুকরে কেঁদে উঠছিল। একথা বলার পর তার চোখ বেয়ে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়ে।
অনেকে তাঁর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে লেখার জন্য তাঁর কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি এতে সাড়া দেননি।১০
সহজ-সরল জীবন যাপন :তিনি অত্যন্ত সাদাসিধে ও অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন। বিলাসিতা ও আড়ম্বরতা তাঁকে বিন্দুমাত্র স্পর্শ করতে পারেনি। মুহাম্মাদ ফারূক আযমী বলেন, ‘তিনি সালাফে ছালেহীনের পূত-পবিত্র জীবনের নমুনা ছিলেন। তাঁকে দেখে মনে হ’ত যে, সালাফে ছালেহীনও এভাবে দুনিয়াতে থেকেও দুনিয়াবী ভোগ-বিলাস থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করে জীবন-যাপন করতেন’।১১
‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর আমীর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব তাঁর পিএইচ.ডি থিসিসের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য ৫২ দিনের দক্ষিণ এশিয়া সফরের ৩৬ দিন ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান করেন। ১০ জানুয়ারী ’৮৯-তে তিনি ভারতের বিশ্বখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরীর সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে তাঁর বাড়ীতে যান। তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন জামে‘আ সালাফিয়া, বেনারসের তৎকালীন ছাত্র বেলাল হোসায়েন (বর্তমানে জয়পুরহাটের বানিয়াপাড়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ড. বেলাল হোসায়েন)। ড. গালিব মুবারকপুরীর সাথে সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘মাগরিবের বেশ কিছু পরে আমরা তাঁর বাড়ীতে পৌঁছি। ছিমছাম ছোট বাড়ী। মানুষজন নেই। মনে হ’ল মাওলানা একাই বাড়ীতে। নামকরা শহর হ’লেও আমরা বিদ্যুৎ দেখিনি। ছোট গোল চিমনীর হারিকেন হাতে নিয়ে এসে মাওলানা আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন। ঘরে বসালেন। চেয়ার-টেবিল নয়। মেঝেতে পাতানো বিছানায় হারিকেন সামনে রেখে মুখোমুখি আলোচনা হ’ল অনেকগুলি বিষয়ে। আলোচনা শেষে হালকা নাশতা-পানি। উনি বেরিয়ে উঠানে গেলেন আরেকটি হারিকেন নিয়ে। বেলাল ছুটে গেল, আমিও উঠে দাঁড়ালাম। উনি এক হাতে টিউবওয়েল চাপছেন, অন্য হাতে পানির জগ। কোন মতেই বেলালকে চাপতে দিলেন না। বললেন, আপ কিউঁ যাহমাত করেঙ্গে। আপ মেহমান হ্যঁয় (আপনারা কেন কষ্ট করবেন? আপনারা মেহমান)। অথচ আমরা তাঁর ছাত্র হবারও যোগ্য নই। কতবড় উদার হৃদয়ের মানুষ। শেষনবীর সত্যিকারের ওয়ারেছ একজন কথা ও কর্মের আপাদমস্তক আহলেহাদীছ বিদ্বানকে সে রাতে দেখেছিলাম হারিকেনের স্বল্প আলোয়। যা কোনদিনও ভুলবার নয়। অথচ তাঁর ‘মির‘আতুল মাফাতীহ’ ছেপে বিক্রি করে অনেক আলেম কোটিপতি বনে গেছেন ও বড় বাণিজ্যিক শহরে গাড়ী-বাড়ীর মালিক হয়েছেন। এই নিরহংকার জ্বলন্ত প্রতিভার কোন মূল্য সমাজ দেয়নি’।১২
অনাড়ম্বর জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিম্নোক্ত বাণীর মূর্তপ্রতীক ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
كُنْ فِى الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيْبٌ أَؤْ عَابِرُ سَبِيْلٍ. وَعُدَّ نَفْسَكَ فِىْ أَهْلِ الْقُبُوْرِ.
‘মুসাফির অথবা পথ অতিক্রমকারীর ন্যায় তুমি দুনিয়াতে অবস্থান করবে এবং নিজেকে (সর্বদা) কবরবাসী মনে করবে’।১৩
বক্তব্যের প্রভাব : তাঁর বক্তব্য জনগণের মনে দারুণ প্রভাব বিস্তার করত। তাঁর মজলিসে যে বসত তার ঈমান শাণিত হ’ত। তিনি শ্রোতাদের স্তর ও অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতঃ এত সুন্দরভাবে বক্তব্য দিতেন যে, প্রত্যেক শ্রোতা মনে করত তার কল্যাণের জন্যই বুঝি তিনি নছীহত করছেন। এতে তাঁর বক্তব্য উপস্থিত সকলের মন ছুঁয়ে যেত।১৪
একবার হজ্জের মওসুমে আরাফার দিনে আরাফাত ময়দানে তাঁর উপস্থিতির কথা জানতে পেরে লোকজন সেখানে জড়ো হয়। তাদের মধ্যে ওলামায়ে কেরাম যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন ছাত্ররা। তারা মুবারকপুরীর বক্তৃতা শোনার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তাদের আগ্রহের প্রেক্ষিতে মাওলানা মুখতার আহমাদ নাদভী তাঁকে বক্তব্য দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি এ ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করেন। কিন্তু নাদভী জোরাজুরি করলে তিনি বলতে শুরু করেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না যে, উপস্থিত কেউ আমার চেয়ে বেশী তওবা-ইস্তেগফারের মুখাপেক্ষী। আল্লাহ্র রহমত নাযিল ও মাগফিরাত লাভের এই মূল্যবান সময়ে আমি নিজেকে বক্তব্য ও দরস প্রদানের যোগ্য নয় বলে বিবেচনা করি। মানুষদের উচিত তাদের পাপের কথা স্মরণ করে আল্লাহ্র কাছে খাঁটি তওবা করা এবং মহান প্রভুর সামনে দন্ডায়মান হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ দিনকে স্মরণ করা। কারণ শুধু বক্তৃতা শোনা ও দো‘আর শেষে আমীন বলা যথেষ্ট নয়, যতক্ষণ না প্রকৃত তওবা, আল্লাহ্র দিকে ফিরে যাওয়া ও তাঁর কাছে কাকুতি-মিনতি করা হবে। হে আলেম সমাজ! আপনাদের জন্য আল্লাহ্র এ বাণীই যথেষ্ট।
إِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ.
‘আল্লাহ্র বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে’ (ফাতির ৩৫/২৮)
উপস্থিতিদের মাঝে তাঁর এ বক্তব্য দারুণ প্রভাব বিস্তার করেছিল। প্রত্যেকের চোখ হয়ে উঠেছিল অশ্রুসজল।১৫
বই সংগ্রহে আগ্রহ :বই ক্রয়ের প্রতি মুবারকপুরীর দারুণ আগ্রহ ছিল। কোন প্রয়োজনীয় বই পেলে তিনি সংগ্রহের চেষ্টা করতেন। অনেক সময় মূল্যবান বই কেনার আগ্রহ থাকলেও অর্থাভাবের কারণে তা কিনতে পারতন না। ১৯৬৫ সালে লিখিত এক পত্রে আব্দুস সালাম রহমানী তাঁকে المعجم المفهرس لألفاط الحديث النبوىগ্রন্থের কথা জানান। বইটির কথা জানার পর তা সংগ্রহের জন্য তাঁর আগ্রহ বেড়ে যায়। তখন বইটির দাম ছিল ১০০০ রূপী। এত বেশী টাকা দিয়ে তার পক্ষে এ বই কেনা সম্ভব ছিল না। এক পত্রে তিনি আব্দুস সালাম রহমানীকে এ সম্পর্কে জানান, ‘আল-মু‘জামুল মুফাহরাস’ আমাদের মতো মানুষের পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। আমাদের পরিচিতও এমন কেউ নেই, যে এই বইয়ের জন্য একবারে ১০০০ রূপী পরিশোধ করতে পারেন। তাই এত্থেকে বঞ্চিত হওয়া ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই। হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য এটি ক্রয়ের পথ সহজ করে দাও’।১৬

[চলবে]

ছাওতুল উম্মাহ, মার্চ ’০৯, পৃঃ ৩২

মুহাদ্দিছ, জানু-ফেব্রুঃ ’৯৭, পৃঃ ১৯৫-৯৬

ঐ, পৃঃ ১৯৫-১৯৬

মাকাতীবে রহমানী, পৃঃ ৩৫-৩৬, পত্র নং-৪, তাং-৫ রজব ১৩৬৫ হিঃ

মুহাদ্দিছ, জানু-ফেব্রুঃ ’৯৭, পৃঃ ২৫১-৫২

ঐ, পৃঃ ৭৯, ২০০-২০১

আল-বালাগ, মার্চ ’৯৪, পৃঃ ৩৬

শু‘আবুল ঈমান ১/৪৭১, হা/৭৪৫, ৫/৪৫২-৫৩, হা/৭২৫২; মিশকাত হা/৫১২২, হাদীছ হাসান, ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়, ‘ক্রোধ ও অহংকার’ অনুচ্ছেদ

মুহাদ্দিছ, জানু-ফেব্রুঃ ’৯৭, পৃঃ ২০৫

১০ছাওতুল উম্মাহ, মার্চ ’০৯, পৃঃ ৩৬

১১আল-বালাগ, মার্চ ’৯৪, পৃঃ ৩৬

১২তথ্য : ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, প্রফেসর, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, তাং ১২/০৮/২০১০ইং

১৩বুখারী হা/৬৪১৬ ‘রিকাক’ অধ্যায়; তিরমিযী হা/২৩৩৩; ইবনু মাজাহ হা/৪১১৪; সিলসিলা ছহীহা ৩/১৪৭-৪৮, হা/১১৫৭; মিশকাত হা/১৬০৪ ‘জানাযা’ অধ্যায়, ‘মৃত্যু কামনা ও তার কথা স্মরণ করা’ অনুচ্ছেদ, ঐ হা/৫২৭৪ ‘রিকাক’ অধ্যায়, ‘আশা-আকাঙ্ক্ষা ও লোভ-লালসা পোষণ’ অনুচ্ছেদ

১৪আল-বালাগ, মার্চ ’৯৪, পৃঃ ৩৬

১৫ঐ, ফেব্রুয়ারী ’৯৪, পৃঃ ১৭-১৮

১৬মাকাতীবে হযরত শায়খুল হাদীছ, পৃঃ ৫৮-৫৯, পত্র নং- ৩২, তাং- ২২/১০/৬৫






যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (৩য় কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) (২য় কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) - ড. নূরুল ইসলাম
ইমাম নাসাঈ (রহঃ) (২য় কিস্তি) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (৭ম কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
শেরে পাঞ্জাব, ফাতিহে কাদিয়ান মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহঃ) (৮ম কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব মুহাদ্দিছ দেহলভী (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - ড. নূরুল ইসলাম
আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর (৪র্থ কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
শেরে পাঞ্জাব, ফাতিহে কাদিয়ান মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহঃ) (২য় কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (৫ম কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) (শেষ কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) (শেষ কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
আরও
আরও
.