পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । শেষ পর্ব 

আল্লামা যহীরের জীবনের ছিটেফোঁটা :

দুরন্ত সাহস : আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর প্রচন্ড সাহসী ছিলেন। মক্কার হারামের ইমাম ও সঊদী সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ সদস্য শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আস-সুবাইল বলেন, إنه كان شجاعا، وجريئا، وصريحا، ولا يكتم ما في نفسه ولا تأخذه في الله لومة لائم. ‘তিনি দুঃসাহসী ও স্পষ্টবাদী ছিলেন। তিনি মনের কথা গোপন রাখতেন না এবং আল্লাহর পথে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে তোয়াক্কা করতেন না’।[1] তিনি যা হক মনে করতেন তা প্রকাশে কোন দ্বিধা-সংকোচ বা ভয় কখনো তাঁর কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেনি। নিম্নে তাঁর সাহসিকতার কিছু দৃষ্টান্ত পেশ করা হল-

১. আল্লামা যহীর যখন কোন বাতিল ফিরকা সম্পর্কে কোন বই লিখতেন, তখন প্রসিদ্ধ ওলামায়ে কেরামকে তার কপি পাঠাতেন। এমনকি শী‘আ ও অন্যান্য ভ্রান্ত ফিরকার লোকদের কাছেও নাম-ঠিকানা ও টেলিফোন নম্বর সহ বইপত্র পাঠাতেন। পক্ষান্তরে শী‘আরা তাঁর বিরুদ্ধে বই লিখত। কিন্তু কখনো তার কাছে সেসবের কপি পাঠাত না। উপরন্তু ঐসব বইয়ে লেখকের ছদ্মনাম ব্যবহার করত। যেমন- আল্লামা যহীরের ‘আশ-শী‘আ ওয়াস সুন্নাহ’ বইটি প্রকাশিত হলে শী‘আদের গুমর ফাঁস হয়ে যাওয়ার কারণে শী‘আ মহলে হৃৎকম্প শুরু হয়ে যায়। জনৈক শী‘আ এর প্রত্যুত্তরে ‘আশ-শী‘আ ওয়াস সুন্নাহ ফিল মীযান’ নামে একটি বই লিখে। কিন্তু ‘সীন-খা’ ছদ্মনাম ব্যবহার করে।[2] নিঃসন্দেহে এটি আল্লামা যহীরের সাহসিকতা ও শী‘আদের ভীরুতা-কাপুরুষতার দলীল বৈ-কি!

২. মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন নূরুদ্দীন ইতর নামে একজন কট্টর হানাফী শিক্ষক ‘মুছতালাহুল হাদীছ’ (হাদীছের পরিভাষা) পড়াতেন। তিনি এ বিষয়টি পড়ানোর সময় তাতে মাতুরীদী আক্বীদা ঢুকিয়ে দিতেন। আল্লামা যহীর আদব ও সম্মান বজায় রেখে তাঁর যুক্তি খন্ডন করতেন। পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়ার ভয় তাঁকে কখনো পেয়ে বসেনি। বরং এক্ষেত্রে তিনি যেটাকে সঠিক মনে করতেন তা দ্ব্যর্থহীনভাবে ঐ শিক্ষকের কাছে পেশ করতেন।[3]

৩. ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট যাকির হুসাইন মদীনা মুনাউওয়ারায় গেলে তাঁকে মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানানো হয়। আল্লামা যহীর তখন ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষানবিশ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্রেটারী শায়খ নাছের আল-উবূদীকে এসে বললেন, আপনি জানেন যে, ইনি ভারতের প্রেসিডেন্ট। যে দেশটি মুসলমানদের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে এবং তাদের কাছ থেকে কাশ্মীরকে কেড়ে নেয়ার জন্য জোরাজুরি করেছে। অথচ তারা জানে যে, কাশ্মীরীরা ভারতের সাথে একীভূত হতে চায় না। একথা শুনে শায়খ উবূদী বললেন, তুমি কি করতে চাচ্ছ? তখন তিনি বললেন, আমরা একটি প্রতিনিধি দল গিয়ে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর সমালোচনা করব এবং হিন্দুরা মুসলমানদের উপর কি নির্যাতন চালিয়েছে তা বিবৃত করব। শায়খ উবূদী তাঁর আবেগ ও আগ্রহের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন যে, উনাকে আমাদের সম্মান করা উচিত। কারণ আমরা জানি, তাঁর পদ সম্মানসূচক; নির্বাহী নয়। রাজনৈতিক নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে। কিন্তু যহীর যেন কিছুতেই শান্ত হচ্ছিলেন না। কারণ তিনি প্রচন্ড আবেগ নিয়ে শায়খ উবূদীর কাছে এসেছিলেন। দ্বীনের প্রতি তাঁর আগ্রহ, মুসলমানদের সমস্যা নিয়ে তাঁর চিন্তা-ভাবনা ও সাহসিকতার জ্বলন্ত সাক্ষী এ ঘটনাটি।[4]

৪. আল্লামা যহীর বাতিল ফিরকাগুলোর কেন্দ্রে ও তাদের মাহফিলে গিয়ে মুনাযারা করতেন নির্ভয়ে-নিঃশঙ্কচিত্তে। ১৯৬৫ সালে ইরাকের সামার্রায় এক রেফাঈ ছূফী নেতার সাথে তাঁর মুনাযারা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ ছূফী নেতার দাবী ছিল, সে কারামতের অধিকারী। অস্ত্র তার কোন ক্ষতি করতে পারে না। আল্লামা যহীর এর প্রত্যুত্তরে বিতর্কসভায় বলেছিলেন, যদি অস্ত্র, বর্শা ও চাকু আপনাদের কোন ক্ষতি করতে না পারে, তাহলে আপনারা কেন যুদ্ধের ময়দানে অবতীর্ণ হন না? গুলী ও অন্যান্য জিনিস যাদের কোন ক্ষতি করতে পারে না, সেসব লোকের ইরাকের বড্ড প্রয়োজন। তিনি সেখানে ঐ রেফাঈ ছূফী নেতাকে দ্ব্যর্থহীনকণ্ঠে বলেছিলেন, আপনি আমার হাতে একটা রিভলভার দিন। আমি গুলী ছুঁড়ে দেখিয়ে দিচ্ছি, ওটা আপনার কোন ক্ষতি করতে পারে কি-না। একথা বলার পর ঐ ভন্ড ছূফী পালাতে দিশা পায়নি।[5] একইভাবে তিনি ইরাকের কাযেমিয়াতে গিয়েও শী‘আদের সাথে বিতর্ক করেন।[6]

৫. পাকিস্তানে বাতিল ফিরকাগুলো কর্তৃক আহলেহাদীছদের অপদখলকৃত মসজিদগুলো তিনি পুনরুদ্ধার করতেন।[7]

বাদশাহ ফয়সালের সামনে আরবীতে বক্তৃতা প্রদান : আল্লামা যহীর উর্দূ ভাষায় যেমন অনর্গল অগ্নিঝরা বক্তৃতা দিতে পারতেন, তেমনি আরবী ভাষাতেও। একবার সঊদী বাদশাহ ফয়সাল পাকিস্তান সফরে আসেন। তখন আল্লামা যহীর মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তিনি বাদশাহর সামনে দাঁড়িয়ে আরবীতে বক্তৃতা প্রদান করেন। বাদশাহ তাঁর বিশুদ্ধভাষিতা ও বক্তব্যের স্টাইল শুনে মুগ্ধ হন এবং তাঁর নাম জিজ্ঞেস করেন। তিনি মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে বাদশাহকে নিজের পরিচয় দেন।[8]

সিউলের চাবি যহীরের হাতে : কোরিয়ায় একটি মসজিদ উদ্বোধনের জন্য আল্লামা যহীর সেখানে যান এবং কোরীয় প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে ইসলামের দাওয়াত দেন। প্রেসিডেন্ট তাঁর প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাঁকে সিউলের চাবি প্রদান করেন। অদ্যাবধি এ চাবিটি তাঁর পরিবারের কাছে সংরক্ষিত আছে।[9]

গাড়িতে কুরআন তেলাওয়াত : তিনি গাড়িতে চড়ে স্টিয়ারিং হুইল ধরেই কুরআন তেলাওয়াত শুরু করতেন এবং হিফয ঝালিয়ে নিতেন। ভাই আবিদ ইলাহীকে তিনি বলতেন, ‘কুরআনের যেকোন স্থান থেকে আমাকে পরীক্ষা করো’। তাঁর হিফযুল কুরআন ছিল খুবই পাকাপোক্ত।[10]

বাগে আনতে শী‘আদের নানান প্রচেষ্টা :

১. ইসমাঈলী শী‘আদের নেতা করীম আগা খান (জন্ম : ১৯৩৬) আল্লামা যহীরকে ব্রিটেন সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং সেখানে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার প্রতিনিধিকে প্রাইভেট বিমানসহ করাচীতে পাঠান। উদ্দেশ্য ছিল যহীরের সাথে সাক্ষাত করে ইসমাঈলীদের সম্পর্কে বই না লেখার জন্য তাঁকে রাজি করানো। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। অগত্যা আগা খান আল্লামা যহীরকে প্রেরিত এক পত্রে বলেন, ‘মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আপনার লেখালেখি করা উচিত; তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য নয়’। জবাবে আল্লামা যহীর তাকে লেখেন, ‘হ্যাঁ, শুধুমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং তাঁদের শিক্ষার প্রতি ঈমান আনয়নকারী মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য। মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নবুঅতের পরিসমাপ্তিকে অস্বীকারকারী কাফের এবং মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈলের রিসালাতে বিশ্বাসকারীদের সাথে মুসলমানদের ঐক্যের জন্য নয়’।[11]

২. একবার একজন বড় শী‘আ আলেম ইমাম খোমেনীর (১৩১৮-১৪০৯ হিঃ) প্রতিনিধি হিসাবে আল্লামা যহীরের সাথে তাঁর বাড়িতে দেখা করে তাঁর ‘আল-বাবিয়া’ ও ‘আল-বাহাইয়া’ বই দু’টি সম্পর্কে ইমাম খোমেনীর মুগ্ধতার বিষয়টি উল্লেখ করে তাঁকে ইরান সফরের আমন্ত্রণ জানান। আল্লামা যহীর এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমার জীবনের নিরাপত্তার গ্যারান্টি কে দিবে’? তখন সেই শী‘আ আলেম তাঁকে বলেন, আমি আপনার জীবনের নিরাপত্তার গ্যারান্টি প্রদান করব এবং আপনি পাকিস্তানে ফিরে না আসা পর্যন্ত আমি এখানে আপনার অনুসারীদের কাছে অবস্থান করব। আল্লামা যহীর তখন বলেন, ‘কে জানে যে, হয়ত আপনি খোমেনীর ক্রোধভাজন’। অতঃপর আল্লামা যহীর তাকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনাদের কোন বই-ই ছাহাবীগণকে গালি দেয়া থেকে মুক্ত নয় কেন’? এ প্রশ্ন করে তিনি খোমেনীর প্রতিনিধিকে হতচকিত করে দিয়ে ‘অছূলুল আখয়ার ইলা উছূলিল আখবার’ গ্রন্থটি হাতে নেন। ঐ শী‘আ আলেম তখন বলেন, এ বইয়ের কোথায় ছাহাবীগণকে গালি দেয়া হয়েছে তা আমাকে দেখান? আল্লামা যহীর বইটির ১৬৮ পৃষ্ঠা খুলেন যেখানে লেখা ছিল, ‘আমরা (শী‘আরা) এদেরকে (ছাহাবীগণকে) গালিগালাজ করে ও তাদের সাথে এবং তাদেরকে যারা ভালবাসে তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করি’। অতঃপর সেই শী‘আ আলেম তাঁকে খোমেনীর একটি পত্র হস্তান্তর করেন এবং সাক্ষাৎ শেষ হওয়ার পূর্বেই ও যহীর পত্রটি পড়ে দেখার পূর্বেই তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, খোমেনীর ব্যাপারে আপনার মতামত কি? জবাবে আল্লামা যহীর বলেন, আল্লাহর কাছে দো‘আ করছি, তিনি যেন তাকে দীর্ঘজীবি করেন। তাঁর কথা শেষ না হতেই ঐ শী‘আ আলেম বললেন, আপনি আমাদের ব্যাপারে সুস্পষ্ট মতামত ব্যক্ত করুন। তখন তিনি বললেন, আমাকে কথা শেষ করতে দিন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি তাকে দীর্ঘজীবি করুন এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা দিন। যতক্ষণ না তিনি ধ্বংস হন এবং মুসলমানদেরকে তার অনিষ্ট থেকে রক্ষা করেন। একথা শুনে ঐ শী‘আ আলেম বলেন, এ কেমন শত্রুতা! অতঃপর মিটিং সমাপ্ত হয়।[12]

৩. একদা ওমানের মিড্লইস্ট ব্যাংকের প্রধান আল্লামা যহীরের সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে বলেন, শী‘আদের সম্পর্কে লেখালেখি ছেড়ে দিন, আমি আপনার জন্য দুই মিলিয়ন (২০ লাখ) রিয়াল ব্যয়ে আহলেহাদীছের জন্য একটি মারকায বা কেন্দ্র নির্মাণ করে দিব।[13]

৪. একবার ইরানের প্রেসিডেন্ট খোমেনীর দূত আল্লামা যহীরের বাড়িতে এসে তাঁকে বলেন, শী‘আদের সম্পর্কে লেখালেখি বাদ দিন। জবাবে তিনি বলেন, আপনারা আপনাদের বইগুলো পুড়িয়ে ফেলুন, আমি আপনাদের সম্পর্কে লেখালেখি ছেড়ে দিব।[14]

লাহোর ট্র্যাজেডির একদিন পূর্বে সংলাপ : যারা পাকিস্তানে ‘হানাফী-জা‘ফরী’ ও অন্যান্য ফিকহী মাযহাব বাস্তবায়নের দাবী করে তাদের সাথে লাহোর ট্র্যাজেডির মাত্র একদিন পূর্বে (৮৭-র ২২ মার্চ) আল্লামা যহীর এক সংলাপে অংশগ্রহণ করেন এবং স্পষ্ট ভাষায় বলেন যে, ‘আমরা কুরআন-সুন্নাহর বিকল্প হিসাবে কোন কিছুকে গ্রহণ করি না’। সাড়ে ৬ ঘণ্টার দীর্ঘ আলোচনায় তিনি কুরআন-সুন্নাহ থেকে দলীল পেশ করতে থাকেন এবং এ দু’টিকে অাঁকড়ে ধরার আহবান জানান। পরের দিন বিচারকরা ঘোষণা করেন যে, ‘আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর ও তার জামা‘আতই হকের উপরে আছেন’।[15]

অনারারী ডক্টরেট ডিগ্রী : তিনি নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালীর উপরে পিএইচ.ডি করার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরদের সাথে একাডেমিক বিষয়ে মতপার্থক্যের কারণে পিএইচ.ডি সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি। একটি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে অনারারী ডক্টরেট ডিগ্রীও দিয়েছিল।[16]

অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ও দামী পোষাক পরিধান : আল্লামা যহীর অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত স্বচ্ছল ছিলেন। আমদানী-রফতানী ও কাপড়ের ব্যবসা করতেন। কাপড়ের ফ্যাক্টরি ও প্রকাশনা সংস্থাও ছিল।[17] তিনি অত্যন্ত দামী জামা, জুতা ও চশমা পরিধান করতেন। এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সূরা যোহার ১১নং আয়াত (‘তুমি তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহের কথা জানিয়ে দাও’) দ্বারা জবাব দিতেন। তিনি মনে করতেন যে, দ্বীনের দাঈদের স্বচ্ছল হওয়া উচিত, যাতে তাদেরকে কারো মুখাপেক্ষী না হতে হয় এবং তারা নির্দ্বিধায় হক কথা বলতে পারেন। উল্লেখ্য যে, তিনি লাহোরের প্রাচীনতম ও প্রথম আহলেহাদীছ জামে মসজিদ ‘চীনাওয়ালী’তে বিনা বেতনে খতীবের দায়িত্ব পালন করতেন।[18]

শী‘আদের অভিনব প্রস্তাব : ১৯৮০ সালে আল্লামা যহীর হজ্জ করতে গেলে মক্কায় শী‘আদের কয়েকজন বড় মাপের আলেম তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘আশ-শী‘আ ওয়াস সুন্নাহ’-এর মতো বই লেখা উচিত নয়। তখন তিনি তাদেরকে বলেন, ‘আপনারা ঠিকই বলেছেন। তবে আপনারা আমাকে বলুন, আমার বইয়ে এমন কোন কথা কি উল্লেখ করা হয়েছে যা আপনাদের বইয়ে নেই’? তখন তারা বলল, হ্যাঁ, সবই আমাদের বইয়ে আছে। তবে বিষয়গুলোকে এভাবে উত্থাপন করা ঠিক নয়। তখন তিনি বলেন, আপনারা কি বলতে চাচ্ছেন? আল্লামা যহীর তাদের কথা শুনার কারণে তারা আনন্দে বাগবাগ হয়ে বলল, উক্ত বইটি বাজেয়াপ্ত করে পুড়িয়ে ফেলুন। দ্বিতীয়বার তা প্রকাশ করবেন না। তিনি বললেন, ঠিক আছে তাই হবে। তবে এক শর্তে? তারা শর্তটি উল্লেখ করার পূর্বেই আনন্দে বলা শুরু করল, যে কোন শর্তে আমরা রাজি আছি? এরপর আল্লামা যহীর বললেন, আপনাদের যেসকল বই থেকে আমি ঐসব অসত্য কল্পকাহিনী উল্লেখ করেছি সেগুলো সব বাজেয়াপ্ত করুন এবং জ্বালিয়ে দিন, যাতে বাস্তবিকই এর পরে মতদ্বৈততার আর কোন অবকাশ না থাকে এবং আমার পরে ঐসব বই থেকে আর কেউ উদ্ধৃতি দিতে না পারে। আমরা চিরতরে মতদ্বৈততার মূলোৎপাটন করতে চাই। এরপর তারা বলল, আপনি জানেন যে, ওগুলো বিভিন্ন বইয়ের পৃষ্ঠাসমূহে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। সবার হাতের নাগালে ছিল না। কিন্তু আপনি ঐগুলো একটা বইয়ের মধ্যে সন্নিবেশন করেছেন এবং মুসলিম ঐক্য ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছেন? এর জবাবে আল্লামা যহীর দ্ব্যর্থহীনকণ্ঠে বলেন, হ্যঁা, আমি গ্রন্থ রচনা করে এই সকল আক্বীদাকে সবার হাতের নাগালে নিয়ে এসেছি। অথচ ইতিপূর্বে একটি জাতিই (শী‘আ) সেগুলো অবগত ছিল, আর অন্যরা সে সম্পর্কে ছিল বেখবর। আমি এজন্য উক্ত গ্রন্থটি রচনা করেছি যেন উভয় পক্ষই সুস্পষ্ট দলীল ও সম্যক অবগতির উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে এবং কোন এক পক্ষই যেন শুধু ধোঁকা না খায়। যাতে একদিক থেকে নয়; বরং উভয় দিক থেকেই প্রকৃত ঐক্য অর্জিত হয়। পক্ষান্তরে আমরা আপনাদেরকে ও আপনাদের বড় বড় নেতাদেরকে সম্মান করব আর আপনারা আমাদের সাথে এবং এই উম্মতের পূর্বসুরী, এর কল্যাণকামী, এর মর্যাদার রূপকার, এর কালিমাকে সমুন্নতকারী মর্দে মুজাহিদদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করবেন। আমরা আপনাদের কথা বিশ্বাস করব এবং আমাদের মনের কথা খুলে বলব আর আপনারা ‘তাকিয়া’ নীতি অবলম্বন করে যা প্রকাশ করবেন তার বিপরীত চিন্তা-চেতনা সংগোপনে লালন করবেন, তা কস্মিনকালেও হ’তে পারে না। তবে হ্যঁা, যদি আমার ঐ বইয়ে এমন কিছু পাওয়া যায় যা আপনাদের বইয়ে নেই এবং আমি যদি এমন কোন কিছুকে আপনাদের দিকে সম্পর্কিত করে থাকি যা আপনাদের মধ্যে বিদ্যমান নেই, তাহলে এর জন্য আমি দায়বদ্ধ। আপনাদের ও অন্যদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যিনি এটা প্রমাণ করতে পারবেন। আরব ও অনারবের কোন ব্যক্তিই এটা প্রমাণ করার দুঃসাহস দেখায়নি।[19]

পিতা-মাতার সেবা ও আনুগত্য :

আল্লামা যহীর পিতা-মাতার প্রতি অত্যন্ত যত্নবান ছিলেন। তিনি তাদের সাথে সর্বদা সদ্ব্যবহার করতেন, তাদের হকের প্রতি খেয়াল রাখতেন এবং বিভিন্ন বক্তৃতা-ভাষণেও তাদের অবদানের কথা অকপটে স্বীকার করতেন। তিনি লাহোরে বসবাস করতেন আর তাঁর বাবা-মা থাকতেন গুজরানওয়ালায়। ইসলামাবাদে তাঁকে প্রায়ই যেতে হত। ব্যস্ততা যতই থাক না কেন তিনি যখনই গুজরানওয়ালার পাশ দিয়ে যেতেন, তখন বাবা-মার সাথে সাক্ষাৎ করে তবেই যেতেন। একবার তাঁর বাবা হাজী যহূর ইলাহী অসুস্থ হলে তিনি তাঁকে চিকিৎসা করানোর জন্য লাহোরে নিয়ে আসেন। পিতা তাঁকে বলেন, ‘ইহসান! আমি যখন লাহোরে যাব তখন যেন তুমি নিজেকে বড় নেতা ও আলেমে দ্বীন মনে না কর। বরং তুমি আমার কাছে সেই ছোট্টবেলার ইহসান। তুমি ছোটবেলায় যেমন আমার নির্দেশাবলী শুনতে, তেমনি এখনও আমার নির্দেশ মেনে চলবে। এশার পরে দেরি না করে দ্রুত বাড়ি ফিরবে। জেনে রাখ! তুমি যহূর ইলাহীর কাছে যেহেতু ছোট, সেহেতু তিনি তোমাকে আদেশ করবেন। দশদিন আল্লামা যহীরের বাবা তাঁর বাড়িতে অবস্থানকালে প্রত্যেকদিন তিনি বাবার নির্দেশমতো এশার পরপরই বাড়িতে ফিরতেন।[20]

ইবাদত-বন্দেগী :

ছোটবেলা থেকেই আল্লামা যহীর ছালাতের প্রতি যত্নবান ছিলেন। তিনি অত্যন্ত মুত্তাক্বী-পরহেযগার ছিলেন। নিয়মিত তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় করতেন। বিভিন্ন দাওয়াতী প্রোগ্রাম শেষে গভীর রাতে বাড়িতে ফিরলেও তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় করে তবেই ঘুমাতেন। তিনি অত্যধিক নফল ছিয়াম পালন করতেন এবং আল্লাহর কাছে কাতরকণ্ঠে প্রার্থনা করতেন। কোন সমস্যায় পড়লেই কাউকে কিছু না জানিয়ে ওমরা পালন করতে চলে যেতেন।[21]

চরিত্র-মাধুর্য :

আদর্শ মানুষ হিসাবে আল্লামা যহীরের চরিত্রে নানামুখী গুণের সম্মিলন ঘটেছিল। তিনি অত্যন্ত দানশীল, নম্র ও ভদ্র ছিলেন। আল্লাহর রাস্তায় অর্থ ব্যয়, গরীব-দুঃখী ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় তিনি সর্বদা সামনের সারিতে থাকতেন। অসংখ্য মসজিদ নির্মাণে তিনি নিজে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করেছেন এবং অন্যদেরকেও এ ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা ও ক্ষমা ছিল তাঁর চরিত্রের ভূষণ। কারো চাটুকারিতা ও মোসাহেবি করা ছিল তাঁর চিরাচরিত স্বভাববিরুদ্ধ। যতবড় ব্যক্তিই হোক না কেন তিনি তাকে ভয় করতেন না। বরং তার মধ্যে খারাপ কিছু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তা প্রকাশ করতেন।

তিনি মিশুক, রসিক ও প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন। দ্রুত রেগে যেতেন। তাঁর মধ্যে কিছুটা কঠোরতা ছিল। তবে বক্তব্য প্রদানের সময় তাঁর অন্তর নমর হয়ে যেত। শ্রোতাদেরকে কাঁদাতেন ও তাদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতেন। একবার এক মজলিসে রাফেযীদের আক্বীদা ও ছাহাবীগণকে তাদের গালি-গালাজ সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। রাফেযীদের প্রতীক্ষিত মাহদী সম্পর্কে আক্বীদা হল, তাদের কল্পিত ইমাম মাহদী যখন আবির্ভূত হবেন, তখন ইফকের ঘটনার জন্য তিনি আয়েশা (রাঃ)-কে বেত্রাঘাত করবেন ও তাঁর ওপর হদ কায়েম করবেন। একথা বলার পর আল্লামা যহীর ছাহাবায়ে কেরাম ও উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ)-এর প্রতি ভালবাসায় অঝোর নয়নে কাঁদতে থাকেন।[22]

ব্যক্তিগতভাবে তিনি কারো সাথে শত্রুতা পোষণ করতেন না। যাদের সাথে তাঁর বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়াদি নিয়ে মতদ্বৈততা ছিল, তাদের সাথেও তিনি সদাচরণ করতেন। কখনো কারো গীবত, চোগলখুরী ও অকল্যাণ করতেন না।[23]

চিন্তাধারা :

মুসলিম ঐক্য : মুসলিম ঐক্য সম্পর্কে আল্লামা যহীর বলেন, ‘ইসলামী দলসমূহ এবং মাযহাবী গোষ্ঠীগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য প্রয়োজন স্রেফ কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ। কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণই যাবতীয় মতপার্থক্য অবসানের মাধ্যম হতে পারে। যদি সব দল ঈমানদারির সাথে নিজেদের মাযহাবী গোঁড়ামী ছেড়ে এবং দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে নিজেদের মাসআলাগুলোকে কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী ফায়ছালা করে এবং যে মাসআলা ঐ দু’টির বিপরীত হবে সেটা ছেড়ে দেয়, তাহলে এভাবে ঐক্য হতে পারে’।[24]

তিনি ‘আল-ব্রেলভিয়া’ গ্রন্থের ভূমিকায় এ সম্পর্কে আরো বলেন,

ان الاتحاد والاتفاق لايتأتى دون الاتفاق والاتحاد في العقائد والأفكار وإن الوحدة لا تتحقق مادام الآراء والمعتقدات لم تتوحد لأن الاتحاد والوحدة عبارة عن الاتفاق في المبدأ والوجهة. فعلينا جميعا أن نتحد ونتفق بالرجوع إلى كتاب الله وسنة رسوله صلى الله عليه وسلم وبتصحيح العقائد في ضوئهما ونترك العصبيات والتمسك بأقوال الرجال والتتبع طرق الصوفيت والخرافات.

‘আক্বীদা ও চিন্তাধারার ঐক্য ছাড়া কোন ঐক্য সম্ভব নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত চিন্তাধারা ও আক্বীদার ঐক্য না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত (প্রকৃত) ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে না। কেননা ঐক্যের অর্থই হল মূলনীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির ঐক্য। কাজেই আমাদের সবার উচিত কুরআন ও সুন্নাহর দিকে প্রত্যাবর্তন, এর আলোকে আক্বীদা সংশোধন, মাযহাবী গোঁড়ামী ও ব্যক্তির মতামত পরিহার এবং ছূফী ও কুসংস্কারবাদীদের পথ ছেড়ে দেয়ার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হওয়া’।[25]

ইজতিহাদ : কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমায়ে ছাহাবার মধ্যে স্পষ্ট পাওয়া যায় না এমন বিষয়ে শারঈ হুকুম নির্ধারণের জন্য সার্বিক অনুসন্ধান প্রচেষ্টা নিয়োজিত করাকে ইসলামী শরী‘আতের পরিভাষায় ইজতিহাদ বলে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি শুধু ইসলামে ইজতিহাদের প্রবক্তাই নই; বরং আমি একথাও বলি যে, এদেশে ইজতিহাদের স্বাধীনতা থাকা উচিত। তবে এক্ষেত্রে আমি বল্গাহীন স্বাধীনতার পক্ষে নই। এক্ষেত্রে এমন স্বাধীনতা থাকাও উচিত নয় যা কুফরী, ফাসেকী ও ফিতনা-ফ্যাসাদের দরজা উন্মুক্ত করে দিবে’।[26]

দেশে কোন ফিকহ চলবে : এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা কোন ফিকহের-ই বাস্তবায়ন চাই না। কেননা মানুষেরা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় কোন নির্দিষ্ট ফিকহ বাস্তবায়নের জন্য জীবন উৎসর্গ করেনি। ইসলামের নামে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এবং এখানে স্রেফ কুরআন ও সুন্নাহর ইসলাম বাস্তবায়ন হওয়া উচিত। কুরআন ও সুন্নাহ এমন দু’টি জিনিস যার উপর সকল শ্রেণী ও রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত হতে পারে’।[27]

ওলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতে আল্লামা যহীর :

১. সাবেক সঊদী গ্র্যান্ড মুফতী শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রহঃ) বলেন, الشيخ إحسان إلهي ظهير رحمه الله معروف لدينا، وهو حسن العقيدة، وقد قرأت بعض كتبه فسرني ما تضمنته من النصح لله ولعباده والرد على خصوم الإسلام. ‘শায়খ ইহসান ইলাহী যহীর (রহঃ) আমাদের নিকট সুপরিচিত। তাঁর আক্বীদা ভাল। আমি তাঁর কতিপয় গ্রন্থ পড়েছি। আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের জন্য তাতে যে নছীহত এবং ইসলামের শত্রুদের প্রত্যুত্তর রয়েছে, তা আমাকে আনন্দিত করেছে’। তিনি বলেন, نعم الرجل وجهوده طيبة في الدعوة إلى الله. ‘তিনি অত্যন্ত ভাল ব্যক্তি। আর আল্লাহর পথে দাওয়াতের ক্ষেত্রে তাঁর প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়’। তিনি আরো বলেন, له مآثر جميلة، ومؤلفاة طيبة نافعة. ‘তাঁর চমৎকার কীর্তি ও উপকারী ভাল বইপত্র রয়েছে’।

২. শায়খ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-জিবরীন বলেন, كرس الشيخ رحمه الله جهوده في الرد على المبتدعة والذب عن السنة ونصرها. ‘শায়খ যহীর (রহঃ) বিদ‘আতীদের মত খন্ডন এবং হাদীছের প্রতিরক্ষা ও সহযোগিতায় তাঁর প্রচেষ্টা নিয়োজিত করেছিলেন’।

৩. মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ বলেন, وله جهود طيبة في الرد على أهل البدع وكشف باطلهم، وله مؤلفات كثيرة في ذلك. ‘বিদ‘আতীদের মত খন্ডন ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদার স্বরূপ উন্মোচনে তাঁর প্রচেষ্টা ছিল প্রশংসনীয়। এ বিষয়ে তাঁর অনেক বই-পুস্তকও রয়েছে’।

৪. মক্কার হারামের ইমাম শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আস-সুবাইল বলেন, فضيلة الشيخ إحسان إلهي ظهير عالم جليل وداعية بصير من علماء أهل السنة والجماعة في باكستان ومن الدعاة المشهورين هناك. ‘মাননীয় শায়খ ইহসান ইলাহী যহীর পাকিস্তানের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সম্মানিত আলেম এবং সেখানকার দূরদর্শী ও খ্যাতিমান দাঈ’। তিনি আরো বলেন, ويتمتع بقوة في الحجة وشدة في التأثير في خطبه ومواعظه. ‘তিনি দলীল-প্রমাণের বলিষ্ঠতা এবং তাঁর বক্তৃতা ও ওয়ায-নছীহতে প্রচন্ড প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন’।[28]

৫. সঊদী সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ সদস্য শায়েখ ছালেহ বিন মুহাম্মাদ আল-লিহীদান বলেন, وكان لحماسه واندفاعه في دفاعه عن العقيدة أثره في بلاد الباكستان وغيرها. ‘আক্বীদার প্রতিরক্ষায় তাঁর উৎসাহ-উদ্দীপনার পাকিস্তান ও অন্যত্র প্রভাব ছিল’।[29] তিনি আরো বলেন, فقد كان مجاهدا بلسانه وقلمه. ‘তিনি তাঁর বক্তৃতা ও লেখনীর মাধ্যমে একজন মুজাহিদ ছিলেন’।

৬. শায়খ আব্দুর রহমান আল-বাররাক বলেন, اشةهر بجهاده للرافضة. ‘তিনি রাফেযীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য প্রসিদ্ধি অর্জন করেছিলেন’।

৭. শায়খ আব্দুল্লাহ আল-গুনায়মান বলেন, قلَّ أن يُوجد مثله في شجاعته في مواجهة الباطل ورده بالأدلة المقنعة. ‘বাতিলের প্রতিরোধ ও যথোপযুক্ত দলীল দ্বারা তার জবাবদানের ক্ষেত্রে তাঁর মতো দুঃসাহসী ব্যক্তির নাগাল খুব কমই পাওয়া যায়’।

৮. ড. অছিউল্লাহ মুহাম্মাদ আববাস বলেন, وله جهود جبارة في ةوجيه الشباب إلى العقيدة السلفية. ‘যুবকদেরকে সালাফী আক্বীদার দিকে পরিচালিত করার জন্য তাঁর দারুণ প্রচেষ্টা ছিল’।

৯. মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য প্রফেসর শায়খ রবী আল-মাদখালী বলেন, عرفته مجاهدا في ميدان العقيدة. ‘আক্বীদার ময়দানে আমি তাঁকে একজন মুজাহিদ হিসাবে জেনেছি’।

১০. শায়খ আব্দুল আযীয আল-ক্বারী বলেন, إنه كان مقاتلا من الطراز الأول، لا بالسنان ولكن بالفكر والتعلم واللسان. ‘তিনি প্রথম শ্রেণীর যোদ্ধা ছিলেন। তবে বর্শা তথা অস্ত্রের মাধ্যমে নয়; বরং চিন্তা-গবেষণা, শিক্ষা-দীক্ষা ও বক্তৃতার মাধ্যমে’।

১১. শায়খ মুহাম্মাদ নাছের আল-উবূদী বলেন, لقد عاش الشيخ إحسان إلهي حميدا ومضى شهيدا إن شاء الله. ‘শায়খ ইহসান ইলাহী প্রশংসিত ব্যক্তিরূপে বেঁচে ছিলেন এবং ইনশাআল্লাহ শহীদ হয়েই (পরপারে) চলে গেছেন’

১২. ড. মারযূক বিন হাইয়াস আয-যাহরানী বলেন, كان عالما ذكيا فذًّا شجاعا، حسن الأخلاق، يقول رأيه ولا يهاب العواقب. ‘তিনি অত্যন্ত মেধাবী, অনন্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, সাহসী ও চরিত্রবান আলেম ছিলেন। পরিণামের ভয় না করে তিনি তাঁর মত ব্যক্ত করতেন’।[30]

১৩. জীবনীকার মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আশ-শায়বানী বলেন,كان شجاعا في قوله الحق، باحثا عن الحقيقة، ناصحا لأمته. ‘তিনি হক কথা বলায় সাহসী, সত্যানুসন্ধানী এবং তাঁর জাতিকে নছীহতকারী ছিলেন’।[31]

১৪. ড. আলী বিন মূসা আয-যাহরানী বলেন, كان صاحب خلق، وورع، وكرم، قوي الإيمان، شديد التمسك بدينه قوي في الصدع بالحق. ‘তিনি চরিত্রবান, আল্লাহভীরু, দানশীল, সুদৃঢ় ঈমানের অধিকারী, দ্বীনকে কঠিনভাবে অাঁকড়ে ধারণকারী এবং হক কথা প্রচারে নির্ভীক ছিলেন’।[32]

১৫. ড. লোকমান সালাফী বলেন, هو الخطيب المسقع العظيم الذي لم يعرف له مثيل في تاريخ باكستان، وقد شهد له بالعظمة في هذا الشأن القاصي، والداني، والصديق، والعدو. ‘তিনি অনলবর্ষী শ্রেষ্ঠ বাগ্মী, পাকিস্তানের ইতিহাসে যার সমতুল্য কেউ নেই। এক্ষেত্রে তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাপারে নিকটবর্তী-দূরবর্তী এবং শত্রু-মিত্র সবাই সাক্ষ্য প্রদান করেছে’।[33] তিনি আরো বলেন, هو الكاتب البارع الفذ الذي قمع بقلمه السيال قصور الباطل، وهدم بنيان الفرق الباطلة هدما ليس بعده هدم. ‘তিনি সেই শ্রেষ্ঠ ও অনন্য লেখক, যিনি তাঁর গতিশীল লেখনীর মাধ্যমে বাতিলের রাজপ্রাসাদকে পর্যুদস্ত করেছিলেন এবং বাতিল ফিরকাগুলোর ভিত্তিগুলোকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন’।[34]

১৬. ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জমঈয়তে আহলেহাদীছের শুববান বিভাগের সাবেক পরিচালক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের তদানীন্তন সহকারী অধ্যাপক (বর্তমানে প্রফেসর ও আমীর, আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ) মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব আল্লামা যহীরের মৃত্যুতে লাহোরে একটি শোকবার্তা পাঠান। যেটি লাহোর থেকে প্রকাশিত ‘মুমতায ডাইজেস্ট’ বিশেষ সংখ্যা-১, সেপ্টেম্বর ’৮৭-তে ‘মাকতূবে বাংলাদেশ : আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর কি শাহাদত পর ইযহারে গাম’ (বাংলাদেশের চিঠি : আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীরের শাহাদতে শোক প্রকাশ) শিরোনামে প্রকাশিত হয়। উর্দূ ভাষায় প্রেরিত উক্ত শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘জমঈয়তে আহলেহাদীছ পাকিস্তান-এর সেক্রেটারী জেনারেল আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীরের শাহাদতে আমরা সবাই আন্তরিকভাবে ব্যথিত ও মর্মাহত। বাংলাদেশের আহলেহাদীছ ছাত্র ও যুবকদের পক্ষ থেকে আমি গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। আল্লাহ পাক মরহূম আল্লামাকে স্বীয় খাছ রহমত ও মাগফিরাতে সম্মানিত করুন এবং তাঁর উত্তরাধিকারী ও আত্মীয়-স্বজনকে পরম ধৈর্যধারণের ক্ষমতা দান করুন। আমীন!

আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর ছিলেন তার সময়ের অতুলনীয় বাগ্মী, লেখক, সংগঠক, আলেমে দ্বীন ও আহলেহাদীছ আন্দোলনের নির্ভীক মুজাহিদ। মুশরিক, বিদ‘আতী ও দ্বীন বিকৃতকারীদের বুকে কম্পন সৃষ্টিকারী, নির্ভীক সত্যভাষী আল্লামা যহীরের মৃত্যু এভাবে হওয়াটাই মর্যাদাকর ছিল। জিহাদের ময়দানের সেনাপতিকে খ্যাতির শীর্ষে চমকানো অবস্থায় মহান প্রভু স্বীয় রহমতের ছায়াতলে টেনে নিলেন।

আল্লামা যহীর কি চলে গেছেন? শত্রুরা তাকে মেরে ফেলেছে? কখনোই না। আল-কাদিয়ানিয়াহ, আল-বাহাইয়াহ, আশ-শী‘আহ ওয়াল কুরআন, আল-ব্রেলভিয়া এবং তার অন্যান্য মূল্যবান গ্রন্থাবলী, সংবাদপত্র, তার তর্জুমানুল হাদীছ, জমঈয়তে আহলেহাদীছ সবই তো তাঁর জীবন্ত কীর্তি।

ফেব্রুয়ারী ’৮৫-এর ঢাকা কনফারেন্সে তাঁর অগ্নিঝরা ভাষণ তো আমরা এখনো শুনতে পাচ্ছি। বাংলাদেশে আগামী সফরে তিনি বাংলায় ভাষণ দিবেন বলে ওয়াদা করে গেছেন। আর আমরা ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র পক্ষ থেকে তাঁকে সেদিন ‘শেরে পাকিস্তান’ খেতাব দিয়ে সম্মানিত করব বলে দৃঢ় সংকল্প নিয়েছিলাম। এখন মৃত্যুর পরে কি তাঁকে আমরা উক্ত লকব দিতে পারি না?

এরূপ অতুলনীয় নেতার মৃত্যুতে পাকিস্তানীদের এবং বিশেষ করে আহলেহাদীছ জামা‘আত ও জমঈয়তের যে অপরিসীম ক্ষতি সাধিত হয়েছে, আল্লাহ পাক তাঁর খাছ রহমতে তার উত্তম বিনিময় দান করুন! আমীন’!! (অনূদিত)[35]

২৪.০৯.২০১১ তারিখে লেখককে দেওয়া এক লিখিত তথ্যে তিনি বলেন, ‘যহীর আমার সাময়িককালের বন্ধু ছিলেন। প্রথমে কলমী, পরে সরাসরি। আমি তাঁকে ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমায় বক্তা হিসাবে দাওয়াতনামা পাঠিয়েছিলাম। তিনি তা কবুল করেছিলেন। কিন্তু তার আগেই তিনি শাহাদাত লাভ করেন।

১৯৮৫ সালে ঢাকায় জমঈয়ত কনফারেন্সে তাঁকে আনার মূল ভূমিকায় ছিলাম আমি। কেন জানিনা ডক্টর ছাহেব তাঁকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে পারেননি। তাই তাঁকে মাত্র ১৫ মিনিট সময় দেন বক্তৃতার জন্য। যার জন্য হাযারো মানুষের আগমন, যার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে হাযারো শ্রোতা, তাঁর জন্য এত সংক্ষিপ্ত সময় নির্ধারণ কেউই মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু সভাপতির আদেশ শিরোধার্য। আমার বিরূপ মনোভাব বুঝতে পেরে যহীর মাইকের কাছে যাওয়ার আগে আমার হাতে হাত রেখে বললেন, ‘দিল খারাব না কী জিয়ে’ (মন খারাব করবেন না)। তারপর মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে হামদ ও ছানা শেষে ভাষণ শুরুর এক পর্যায়ে ঝলসে উঠে বললেন, ছদরে জালসা মুঝে পন্দ্রা মিনিট টাইম দিয়ে হ্যাঁয়। ওহ নেহী জানতে হ্যাঁয় কে যহীর কো গরম হোনে কে লিয়ে পন্দ্রা মিনিট লাগতা হ্যায়’ (সভাপতি ছাহেব আমাকে ১৫ মিনিট সময় দিয়েছেন। উনি জানেন না যে, যহীরের গরম হ’তেই ১৫ মিনিট সময় লাগে)। এতেই শ্রোতারা সব গরম হয়ে উঠলো। ওদিকে যহীরের বক্তৃতায় আগুনের ফুলকি বের হতে লাগলো। শুরু হ’ল আহলেহাদীছের সত্যতার উপরে একের পর এক কোটেশন টানা ও তার আবেগঘন ব্যাখ্যা। অগ্নিঝরা ভাষণ, অপূর্ব বাকভঙ্গি, যুক্তি আর চ্যালেঞ্জের দাপট, সব মিলে পুরা সম্মেলনটাই হয়ে গেল যহীরময়। সভাপতি ছাহেবও অপলক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছেন এই তরুণ পাকিস্তানী সিংহের প্রতি। ১৫ মিনিট পেরিয়ে কখন যে সময় ঘণ্টার কাছাকাছি চলে গেছে, কারুরই খেয়াল নেই। যহীর এবার শেষ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন- ‘বিদ‘আতী লোগো! আগার আহলেহাদীছ কা এক মাসআলা ভী তোম ছহীহ হাদীছ কে খেলাফ দেখানা সেকো তো লে আও। তোমহারে লিয়ে যহীর হাফতা ভর হোটেল মেঁ ইন্তেযার করে গা’(বিদ‘আতীরা শোনো। যদি তোমরা আহলেহাদীছের একটি মাসআলাও ছহীহ হাদীছের খেলাফ দেখাতে পারো, তবে নিয়ে আস। তোমাদের জন্য যহীর হোটেলে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করবে)। সমস্ত সম্মেলন মুহুর্মুহু তাকবীর ধ্বনিতে ফেটে পড়ল। দক্ষ শিল্পীর মত যহীর এবার দপ করে নিভে গেলেন ও ভাষণ শেষ করে পিছন ফিরে আমার হাত ধরে মঞ্চ থেকে নেমে এসে সোজা একটানে হোটেল ‘শেরাটন’। সেখানে এসে চলল বহুক্ষণ তার সরস আলাপচারিতা। সেই সাথে রাগ-ক্ষোভ অনেক কিছু। পাকিস্তান জমঈয়তের নেতাদের সাথে বাংলাদেশ জমঈয়তের নেতার মনোভঙ্গি ও আচরণের সাথে তিনি অনেক মিল খুঁজে পেলেন এবং আমাকে হিম্মত নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার ব্যাপারে উৎসাহ দিলেন। তার তেজস্বিতা, ওজস্বিনী ভাষণ, খোলামেলা আলাপচারিতা ও এক দিনের বন্ধুসুলভ আচরণ আমি আজও ভুলতে পারি না। শত্রুর বোমা তাকে সরিয়ে নিয়ে গেছে আমাদের কাছ থেকে। কিন্তু ঢাকায় তার ঐতিহাসিক ভাষণের অগ্নিঝরা কণ্ঠ আজও আমাদের কানে ভাসছে। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নছীব করুন- আমীন!’

১৭. Wikipedia-তে বলা হয়েছে, Allama Ihsan Elahi Zaheer was a Ahle-Hadeeth Muslim great scholar of Islam as well as Author from Pakistan. ‘আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর একজন বড় মাপের পাকিস্তানী আহলেহাদীছ আলেম ও লেখক ছিলেন’।[36]

উপসংহার :

পরিশেষে বলা যায়, আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর (রহঃ) বিংশ শতকে আল্লাহর পথে দাওয়াতের ময়দানে নিয়োজিত এক নিবেদিতপ্রাণ অকুতোভয় সিপাহসালার ছিলেন। পাকিস্তানে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের ঝান্ডা উড্ডীন করার দৃপ্ত শপথ নিয়ে তিনি ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। অগ্নিঝরা বক্তৃতা, ক্ষুরধার লেখনী ও সাংগঠনিক তৎপরতার মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানে আহলেহাদীছ আন্দোলনের প্রচার-প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ঘুমন্ত আহলেহাদীছ জামা‘আতকে অল্প সময়ের মধ্যেই জাগিয়ে তুলে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও আত্মোপলব্ধির বীজ বপন করেন।

শী‘আ, কাদিয়ানী, ব্রেলভী, বাহাইয়া, বাবিয়া প্রভৃতি বাতিল ফিরকাগুলো ইসলামের শ্বেত-শুভ্র রূপকে কালিমালিপ্ত করার যে অপপ্রয়াস চালাচ্ছিল, তার বিরুদ্ধে আল্লামা যহীর গবেষণালব্ধ বই-পত্র লিখে বিশ্বের কাছে তাদের স্বরূপ উন্মোচন করেছিলেন। এসব পথভ্রষ্ট ফিরকার আক্বীদা-বিশ্বাস তাদের লিখিত গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করে শক্তিশালী দলীল ও যুক্তির মাধ্যমে তিনি সেগুলো এমনভাবে খন্ডন করতেন যে, তারা তা মুকাবিলা করার দুঃসাহস দেখাত না। তাঁর বই-পুস্তক পড়ে এসব ফিরকার অনেকেই তওবা করে সঠিক পথে ফিরে এসেছেন। ফালিল্লাহিল হামদ

‘খতীবে মিল্লাত’ ‘খতীবে কওম’ রূপে অভিহিত আল্লামা যহীর ছিলেন সময়ের সেরা বাগ্মী। তাঁর অগ্নিঝরা বক্তৃতা হকপিয়াসীদের মনে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের প্রদীপ প্রজ্বলিত করত, আর বাতিলপন্থীদের বুকে থরথর কম্পন সৃষ্টি করত। তাঁর বলিষ্ঠ চ্যালেঞ্জের কাছে বিদ‘আতী, কবরপূজারী ও পথভ্রষ্ট ফিরকার লোকজন ছিল অসহায়-নিরুপায়। আল্লাহর পথে দাওয়াতে অন্তঃপ্রাণ এই বিরল আহলেহাদীছ প্রতিভা খ্যাতির শীর্ষে দেদীপ্যমান থাকা অবস্থায় কুচক্রীদের বোমার আঘাতে মাত্র ৪২ বছর বয়সে ১৯৮৭ সালের ৩০ মার্চ দপ করে নিভে যান। মহান আল্লাহ তাঁকে তাঁর রহমতের বারিধারায় সিক্ত করুন এবং জান্নাতুল ফেরদৌসে ঠাঁই দিয়ে সম্মানিত করুন! আমীন!!

নূরুল ইসলাম

এম.ফিল গবেষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


[1]. ড. যাহরানী, শায়খ ইহসান ইলাহী যহীর, পৃঃ ৫০

[2]. আশ-শী‘আ ওয়া আহলুল বায়েত, পৃঃ ৪; ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৫৩

[3]. ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৫৮

[4]. ঐ, পৃঃ ৫৮-৫৯

[5]. দিরাসাত ফিত-তাছাওউফ, পৃঃ ২৩২

[6]. ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ২১৮

[7]. ঐ, পৃঃ ৫৮

[8]. ঐ, পৃঃ ২১৬

[9]. ঐ, পৃঃ ২২২

[10]. ঐ, পৃঃ ৪৯

[11]. The life of Shaykh Ihsan Ilahi Zaheer, p. 32.

[12]. Ibid, P. 32-33.

[13]. Ibid, P. 79.

[14]. Ibid.

[15]. ‘আল-ইস্তিজাবাহ’, সংখ্যা ১১, ১৪০৭ হিঃ, বর্ষ ২, পৃঃ ৩৫

[16]. ১৫/৪/১৪১৯ হিজরীতে ড. যাহরানীর সাথে এক সাক্ষাৎকারে ইহসান ইলাহী যহীরের ভাই আবেদ ইলাহী যহীর এ তথ্য দিয়েছিলেন। তবে তখন তিনি ডিগ্রী প্রদানকারী বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম স্মরণ করতে পারেননি। দ্রঃ ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৮৯-৯০।

[17]. মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-২, পৃঃ ১২১

[18]. ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৬২, ২১৭

[19]. আশ-শী‘আ ওয়া আহলুল বায়েত, পৃঃ ৫-৬

[20]. ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৬১-৬২

[21]. ঐ, পৃঃ ৬২

[22]. মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ১১৮; ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৫৯, ৬১

[23]. মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ১১৮

[24]. ঐ, পৃঃ ৬২

[25]. আল-ব্রেলভিয়া, পৃঃ ১১

[26]. মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৬১

[27]. ঐ, পৃঃ ৫৯

[28]. ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৯৩-৯৭

[29]. দিরাসাত ফিত-তাছাওউফ, পৃঃ ৫

[30]. ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৯৯-১০৩, ১০৫-১০৬

[31]. শায়বানী, ইহসান ইলাহী যহীর, পৃঃ ২

[32]. ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৪৯

[33]. ‘আল-ইস্তিজাবাহ’, সংখ্যা ১২, যুলহিজ্জাহ ১৪০৭ হিঃ, পৃঃ ৩৩-৩৪; ‘আদ-দাওয়াহ’, সংখ্যা ১০৮৭, ১৫/৮/১৪০৭ হিঃ, পৃঃ ৪০-৪১

[34]. ‘আল-ইস্তিজাবাহ’, সংখ্যা ১২, যুলহিজ্জাহ ১৪০৭ হিঃ

[35]. মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১ (লাহোর : সেপ্টেম্বর ১৯৮৭), পৃঃ ১২৩

[36]. www. wikipedia. org.






শেরে পাঞ্জাব, ফাতিহে কাদিয়ান মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহঃ) - ড. নূরুল ইসলাম
শেরে পাঞ্জাব, ফাতিহে কাদিয়ান মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহঃ) (৫ম কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) (২য় কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব মুহাদ্দিছ দেহলভী (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - ড. নূরুল ইসলাম
শেরে পাঞ্জাব, ফাতিহে কাদিয়ান মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহঃ) - ড. নূরুল ইসলাম
শেরে পাঞ্জাব, ফাতিহে কাদিয়ান মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহঃ) (৮ম কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) (শেষ কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) - ড. নূরুল ইসলাম
ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) - ড. নূরুল ইসলাম
ইবনু মাজাহ (রহঃ) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
ইমাম নাসাঈ (রহঃ) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
আরও
আরও
.