পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ । পর্ব ৭ । 


হাদীছের বিশুদ্ধতা নিরূপণে শায়খ আলবানীর অবদান

হাদীছের বিশুদ্ধতা নিরূপণে মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহ.) গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। আধুনিক যুগে তিনি হাদীছ শাস্ত্রে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছেন। সমসাময়িকদের মধ্যে তিনি সর্বাধিক সংখ্যক হাদীছের তাখরীজ করেছেন। ইলমে হাদীছের ময়দানে বিশেষত তাখরীজুল হাদীছের ক্ষেত্রে তিনি যে তথ্য সমৃদ্ধ, প্রজ্ঞাপূর্ণ ও বিস্তৃত গবেষণা উপস্থাপন করেছেন, তা ইবনু হাজার আসক্বালানী (৮৫২ হি.) পরবর্তী আর কোন বিদ্বানের রচনায় পাওয়া যায় না। তিনি হাদীছ সমালোচনা পদ্ধতিকে নতুনভাবে তুলে ধরেছেন, হাযার হাযার রেওয়ায়াতের হুকুম নির্ধারণ করেছেন এবং মুহাদ্দিছগণের হাদীছ তাহক্বীক্ব পদ্ধতিকে পুনর্জীবিত করেছেন।[1] তাঁর সংকলিত ‘সিলসিলাতুল আহাদীছিছ ছহীহাহ’ ও ‘সিলসিলাতুল আহাদীছিয যঈফাহ’ আধুনিক যুগে তাখরীজুল হাদীছ বিষয়ক যত গ্রন্থ রচিত হয়েছে, তন্মধ্যে সর্বাধিক বিস্তারিত ও তথ্যবহুল আলোচনা সমৃদ্ধ গ্রন্থ হিসাবে পরিগণিত।

মৌলিকভাবে ৪টি গ্রন্থে[2] প্রায় ১২ হাযার হাদীছের উপর তিনি বিস্তারিত তাখরীজ পেশ করেছেন। অপর এক হিসাবে সুনানে আরবা‘আহ এবং মুখতাছার ছহীহ বুখারী ও মুসলিম ব্যতীত তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহে তিনি প্রায় ৪০ হাযার হাদীছ ও আছারের তাখরীজ করেছেন।[3] এছাড়া তাঁর প্রকাশিত-অপ্রকাশিত ২৩১টি মতান্তরে ২৩৮টি রচনাবলীর প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হ’ল- এ সকল গ্রন্থের কোন হাদীছ ও আছার তিনি তাখরীজ ব্যতীত উল্লেখ করেননি। ফলে সমসাময়িক মুহাদ্দিছদের মধ্যে তিনি সর্বাধিক সংখ্যক হাদীছের তাখরীজ করেছেন, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-‘আববাদ (জন্ম ১৯৩৪ খ্রি.) বলেন,والحقيقة هناك شخصان لا يستغني المشتغل بالحديث عن الرجوع إليهما وهما: الحافظ ابن حجر، والشيخ الألباني، فالاستفادة من الحافظ ابن حجر فيما يتعلق بالحديث عظيمة، والاستفادة من الشيخ الألباني فيما يتعلق بالحديث عظيمة؛ ‘বাস্তবতা হ’ল (বর্তমানে) যারাই হাদীছ গবেষণায় রত রয়েছেন, তারা সকলেই দু’জন ব্যক্তির মুখাপেক্ষী। তারা হলেন, হাফেয ইবনু হাজার এবং শায়খ আলবানী। হাদীছের ক্ষেত্রে ইবনু হাজার (রহ.)-এর নিকট থেকে যেমন ব্যাপকতর ইলমী ফায়েদা অর্জিত হয়, ঠিক অনুরূপই শায়খ আলবানী থেকেও ব্যাপক ফায়েদা পাওয়া যায়’।[4]

প্রফেসর আলী আব্দুল ফাত্তাহ বলেন, الشيخ الألباني حجة في مصطلح الحديث وقال عنه العلماء المحدثون أنه أعاد عصر ابن حجر العسقلاني والحافظ ابن كثير وغيرهم من علماء الجرح والتعديل ‘শায়খ আলবানী মুছত্বলাহুল হাদীছের ক্ষেত্রে দলীল স্বরূপ। মুহাদ্দিছ ওলামায়ে কেরাম তাঁর ব্যাপারে মন্তব্য করেন যে, তিনি ইবনু হাজার আসক্বালানী ও হাফেয ইবনু কাছীরের মত জারহ ও তা‘দীলের ইমামদের যুগকে পুনরায় ফিরিয়ে এনেছেন’।[5]

শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দুল আযীয আল-আক্বীল (১৩৩৪-১৪৩২ হি.) বলেন, وبذلك أصبح الإمام الألباني محدث العصر بلا منازع، فإنا لا نعلم أحدا أفاد في الحديث من بعد أصحاب الحافظ ابن حجر إلي وقتنا الحاضر مثله ‘...ইমাম আলবানী অবিসংবাদিতভাবে যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছে পরিণত হয়েছেন। হাফেয ইবনু হাজার (রহ.)-এর সাথীদের পর আমাদের যুগ পর্যন্ত ইলমে হাদীছের ময়দানে আর কেউ আলবানীর মত উপকার সাধন করেছেন বলে আমাদের জানা নেই’।[6]

বিশিষ্ট গবেষক ড. মুহাম্মাদ আব্দুর রাযযাক আসওয়াদ বলেন, তাখরীজের ক্ষেত্রে আলবানী যে ব্যাপক খেদমত পেশ করেছেন, বর্তমান যুগে তার সমকক্ষ আর কেউ নেই।[7]

তাখরীজের ক্ষেত্রে শায়খ আলবানীর মধ্যে যে ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় তা হল, তিনি একইসাথে একটি হাদীছের সনদ ও মতনের উপর উছূলী বিশ্লেষণ, রাবীগণের অবস্থা পর্যালোচনা, গোপন দোষ-ত্রুটি উদঘাটন, মুতাবা‘আত ও শাওয়াহেদ কেন্দ্রিক আলোচনা, হাদীছটির ব্যাপারে পূর্ববর্তী মুহাদ্দিছগণের হুকুম পর্যালোচনা, তা থেকে উদ্ভূত শারঈ বিধি-বিধান, তার আক্বীদাগত বা আমলগত ক্ষতির দিক ও সামাজিক কুপ্রভাব, তা নিয়ে বিদ্বানদের বিভ্রান্তি ও তার খন্ডন ইত্যাদি নানা দিক ও বিভাগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা পেশ করেছেন।

ড. মুহাম্মাদ হাস্সানীন হাসান বলেন, ‘এটা সত্য যে, তাখরীজুল হাদীছের ময়দানে বহু বিদ্বান এসেছেন। কিন্তু শায়খ আলবানী স্বীয় তাখরীজ পদ্ধতি ও সূক্ষ্মতার কারণে পৃথক বৈশিষ্ট্যমন্ডিত একজন বিদ্বান। কেবল ছহীহ ও যঈফ হাদীছ অনুসন্ধান তাঁর লক্ষ্য ছিল না। বরং এক্ষেত্রে তিনি পানির মধ্যে থাকা সমস্ত ময়লা-আবর্জনা যেভাবে পরিষ্কার করা হয়, তেমনিভাবে গবেষণাকর্ম পরিচালনা করেছেন। যাতে হাদীছসমূহ তার প্রথম অবস্থার মত স্বচ্ছ রূপে প্রত্যাবর্তন করে তৃষ্ণার্ত উম্মতের পিপাসা নিবারণ করতে পারে’।[8]

এককভাবে এরূপ বিস্তৃত গবেষণাকর্ম পরিচালনা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়েছিল কয়েকটি কারণে।-

প্রথমতঃ আল্লাহ রববুল আলামীনের তাওফীক লাভ। আল্লাহ কারো দ্বারা কোন কিছু করিয়ে নিতে চাইলে তাকে সে ক্ষমতা দান করেন। মূলত জন্মগতগতভাবেই তিনি ছিলেন সংস্কারক হৃদয়ের অধিকারী। যেখানে ছিল মুসলিম উম্মাহকে যুগের পরিক্রমায় অনুপ্রবিষ্ট শিরক-বিদ‘আত ও অন্ধ তাক্বলীদের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে বিশুদ্ধ দ্বীনের পথে পরিচালিত করার সীমাহীন ব্যাকুলতা। ছিল শরী‘আতের প্রত্যেকটি বিধান পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের কষ্টিপাথরে সূক্ষ্মভাবে যাচাই-বাছাইয়ের তীব্র অনুপ্রেরণা। মূলত এ লক্ষ্যেই তিনি হাদীছের বিশুদ্ধতা নিরূপণের এই বিস্তর গবেষণায় প্রবৃত্ত হন। 

দ্বিতীয়তঃ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা হাদীছ সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ পান্ডুলিপি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হওয়া বা অধ্যয়ন উপযোগী হওয়া। যার ফলে তিনি হাদীছ সংশ্লিষ্ট বিপুল পরিমাণ গ্রন্থ পর্যবেক্ষণের সুযোগ লাভ করেন। ফলে মূল হাদীছসহ বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত মুতাবা‘আত ও শাওয়াহেদ সমূহের উপরে তিনি প্রভূত জ্ঞানার্জনে সক্ষম হন। একই সাথে তিনি ইলমুল জারহ ওয়াত তা‘দীল, ইলমুল ‘ইলাল, ইলমুর রিজাল সংক্রান্ত গ্রন্থাবলীর উপর ব্যুৎপত্তি অর্জনের সুযোগ পান। সর্বোপরি ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ ও প্রাচীন লাইব্রেরী দামেশকের মাকতাবা যাহেরিয়া-তে নিরবচ্ছিন্ন গবেষণার সুযোগ লাভ তাঁর হাদীছ গবেষণার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

তৃতীয়তঃ দীর্ঘ প্রায় ষাট বছর যাবৎ হাদীছের তাহক্বীক্ব, তাখরীজ ও তাদরীসে লিপ্ত থাকা। একই বিষয়ে এককভাবে এত দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করা এই ময়দানে তাঁকে গভীর ব্যুৎপত্তি অর্জনে সহায়তা করে।

এক্ষণে হাদীছের বিশুদ্ধতা নিরূপণে আলবানীর অবদানের গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা পেশ করা হল।-

১. বিশুদ্ধতা যাচাই সাপেক্ষে হাদীছ গ্রহণের ক্ষেত্রে নবজাগরণ সৃষ্টি :

সুন্নাহকে পরিশুদ্ধভাবে উপস্থাপনে শায়খ আলবানীর কর্মতৎপরতা মানুষের মাঝে বিশুদ্ধতা যাচাই সাপেক্ষে দলীল গ্রহণের ক্ষেত্রে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছে। ‘তাখরীজ ব্যতীত কোন হাদীছ গ্রহণযোগ্য নয়’ আলবানীর এই আহবানের ফলে বিজ্ঞমহল থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষের মনঃজগতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। পক্ষ-বিপক্ষ উভয় শ্রেণীর আলেমদের মধ্যে হাদীছ অধ্যয়ন ও সূক্ষ্মভাবে তা তাহক্বীক্ব করার আগ্রহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। আলেম সমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত ছহীহ ও যঈফ হাদীছের মাঝে পার্থক্যকরণ এবং বিশুদ্ধ দলীল ভিত্তিক ফৎওয়া প্রদান ও শারঈ বিধান গ্রহণের নতুন প্রেরণা লাভ করেছে।

শায়খ উছায়মীন (রহ.) এ ব্যাপারে শায়খ আলবানীর অবদান স্বীকার করে বলেন,

إن كثيرا من المشايخ قبل دعوة الشيخ ما كانوا يفرقون بين الحديث الصحيح والضعيف والموضوع، ومن المشايخ من كان يفتي ويبني فتواه على أحاديث ضعيفة بل بعضها موضوع، فبدأ الشيخ ينشر هذا العلم الشريف حتى تبصر الناس وعرفوا الصحيح من الضعيف، فجزاه الله خير الجزاء

‘আলবানীর দাওয়াতের পূর্বে বহু বিদ্বান ছহীহ, যঈফ ও মাওযূ‘ হাদীছের মাঝে পার্থক্য করতেন না। বহু বিদ্বান এমন ছিলেন যে, তারা ফৎওয়া দিতেন, কিন্তু সেসব ফৎওয়ার ভিত্তি ছিল যঈফ হাদীছ। বরং কিছু ফৎওয়া ছিল মাওযূ‘ হাদীছ ভিত্তিক। অতঃপর শায়খ আলবানী ইলমে হাদীছের এই মর্যাদাপূর্ণ ইলম প্রচারের কাজ শুরু করলেন। এতে মানুষের দৃষ্টি খুলে গেল। তারা যঈফ হাদীছের মধ্য থেকে ছহীহ হাদীছসমূহ জানতে পারল। অতএব আল্লাহ তাঁকে সর্বোত্তম জাযা দান করুন’।[9]

শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দুল আযীয আল-‘আক্বীল (১৩৩৪-১৪৩২ হি.) বলেন, ‘...আলবানীর উত্তম কর্মসমূহ হ’ল- তিনি হাদীছ, ফিক্বহ ও অন্যান্য গ্রন্থরাজির মধ্যস্থিত যঈফ থেকে ছহীহ হাদীছকে পৃথকীকরণের গুরুত্ববোধ উম্মতের মধ্যে পুনর্জীবিত করেছেন। একইভাবে তিনি সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা, বিদ‘আত থেকে সতর্ক থাকা এবং দলীল সমর্থিত আমল অনুসরণের মূলনীতিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন...। ফলে বিষয়গুলো সমাজের বিভিন্ন স্তরে তথা আলেম-ওলামা, তালিবুল ইলম, সাধারণ শিক্ষিত ও সুন্নাহপ্রেমী জনগণের মাঝে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়েছে’।[10]

তাঁর এ ইলমী তৎপরতার প্রভাবে বিভিন্ন মাযহাবের অন্ধ অনুসারীদের মধ্যেও নিজেদের মাযহাবী মতামতের পক্ষে দলীল খোঁজার প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে মাযহাবী সিদ্ধান্তের সাথে ছহীহ হাদীছের বিস্তর ব্যবধান লক্ষ্য করে তা পরিবর্তনের প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সমাজে হাদীছের গুরুত্ব ও তা গবেষণায় লিপ্ত হওয়া তালিবুল ইলমের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আলবানীর অন্যতম সমালোচক প্রখ্যাত মুহাক্কিক শায়খ শু‘আইব আরনাঊত্ব (১৯২৮-২০১৬ খ্রি.) ইলমুল হাদীছে আলবানীর খেদমত সম্পর্কে বলেন, أنا لا أنكر أن للشيخ ناصر رحمه الله الفضل في دفع محبيه وخصومه معا إلي دراسة علم الحديث والإكثار منها وأستطيع أن أقول : إن الشيخ ناصر الدين قد أوجد النشاط الحديثي في بلاد الشام ومصر وله الفضل في ذلك ، أسأل الله تعالي أن يخزيه عن المسلمين خير جزاء ‘আমি অস্বীকার করি না যে, শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী একইসাথে তাঁর পক্ষ ও বিপক্ষ উভয় শ্রেণীর মধ্যে হাদীছ গবেষণায় উদ্দীপনা সৃষ্টি ও তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করার মর্যাদা হাছিল করেছেন। আমি এটাও বলতে পারি যে, তিনি মিসর ও সিরিয়ায় হাদীছভিত্তিক তৎপরতাকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে বড় অবদান রেখেছেন। আল্লাহ তা‘আলা এই কাজের জন্য মুসলমানদের পক্ষ থেকে তাঁকে উত্তম পুরস্কার দান করুন’।[11]

আলবানীর অপর কঠোর সমালোচক জর্দানী মুহাক্কিক হাসসান আব্দুল মান্নান বলেন, ‘শায়খ আলবানী ঐসব বিদ্বানদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কৃতিত্বের অধিকারী, যারা এমন সময় ইলমুল হাদীছের দুয়ার উন্মুক্ত করেছেন, যখন জ্ঞান অন্বেষণকারীরা তা থেকে দূরে সরে গিয়েছিল। আল্লাহ তাকে উত্তম জাযা দান করুন। তবে তিনি ভুল করেছেন, সঠিকও করেছেন। তাঁর অবস্থা অন্যান্য বিদ্বানদের মতই’।[12]

২. তাখরীজুল হাদীছকে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন :

ইবনু হাজার আসক্বালানী (৮৫২ হি.)-এর পর ইলমুত তাখরীজ ধীরে ধীরে অনুসরণ ও অনুকরণের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। এসময় খুব অল্প সংখ্যক বিদ্বানকেই দেখা যায়, যারা ইজতিহাদী গবেষণার মাধ্যমে হাদীছের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে হুকুম পেশ করেছেন। পরবর্তীতে ইমাম সুয়ূত্বী (৯১১ হি.) এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও তাঁর পরিসর ছিল সংক্ষিপ্ত। এ সময়ে মুহাদ্দিছগণ তাখরীজের ক্ষেত্রে মূলত হাদীছগুলোকে বর্ণনাকারী গ্রন্থের দিকে সম্পৃক্ত করা, ইবনু হাজার, যায়লা‘ঈ, সুয়ূত্বী প্রমুখ পূর্ববর্তী মুহাদ্দিছদের আলোচনা তুলে ধরা এবং তাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিদ্ধান্ত প্রদান করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছেন।

আধুনিক যুগে শায়খ আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির এ ময়দানে কিছুটা অগ্রগামী হয়েছিলেন। তবে তা কেবল মুসনাদে আহমাদের এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।[13] অতঃপর শায়খ আলবানী স্বীয় কর্মতৎপরতার মাধ্যমে পূর্ববর্তী ইমামগণের গৃহীত মানহাজের আলোকে হাদীছসমূহ নতুনভাবে যাচাই-বাছাই করে হুকুম প্রদান করে তাখরীজুল হাদীছকে নতুনভাবে তুলে ধরেছেন। এজন্য সমসাময়িক অনেক বিদ্বান তাঁকে ইলমে হাদীছের ক্ষেত্রে বর্তমান শতাব্দীর ‘মুজাদ্দিদ’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।

সঊদী আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতী শায়খ বিন বায (১৯১৩-১৯৯৯ খ্রি.) বলেন,الشيخ محمد ناصر الدين الألباني هو مجدد هذا العصر في ظني والله أعلم ‘আমার ধারণা মতে শায়খ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী এযুগের মুজাদ্দিদ। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত’।[14]

সঊদী আরবের সর্বোচ্চ ফৎওয়া পরিষদ-এর সদস্য শায়খ ড. আব্দুল করীম খুযায়ের (১৯৫৪ খ্রি.-) বলেন, الشيخ الألباني رحمه الله يعد من المجددين في علم الحديث، فإذا نظرنا إلى أعماله ومؤلفاته ودعوته إلى التمسك بالسنة وإحياء السنة على مقدار نصف قرن أو أكثر من الزمان نجزم يقيناً بأنه، من المجددين ‘শায়খ আলবানী ইলমে হাদীছে মুজাদ্দিদগণের অন্যতম। অর্ধ শতাব্দী বা তার কিছু বেশী সময় যাবৎ তার যে চলমান কর্মতৎপরতা, লেখনী এবং সুন্নাহকে অাঁকড়ে ধরা ও তাকে পুনর্জীবিত করার প্রতি তাঁর আহবান, সেদিকে দৃষ্টিপাত করলে আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি যে এক্ষেত্রে তিনি মুজাদ্দিদগণের অন্যতম’।[15]

ইয়ামনের প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ ও মুহাক্কিক শায়খ মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদে‘ঈ (১৯৩৭-২০০১ খ্রি.) বলেন,إن الشيخ محمد ناصر الدين الألباني حفظه الله تعالي لا يوجد له نظير في علم الحديث... والذي أعتقده وأدين لله به أن الشيخ محمد ناصر الدين الألباني حفظه الله من المجددين الذين يصدق عليهم قول الرسول : إن الله يبعث لهذه الأمة على رأس كل مائة سنة من يجدد لها أمر دينها- ‘ইলমে হাদীছের ময়দানে শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানীর সমকক্ষ কেউ নেই। আল্লাহ তাঁকে হেফাযত করুন। ...আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, তিনি ঐসকল মুজাদ্দিদগণের অন্যতম, যাঁদের সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী যথার্থ বলে বিবেচিত হয়েছে, ‘আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক শতাব্দীতে একজন মুজাদ্দিদ প্রেরণ করেন, যিনি দ্বীনের সংস্কার সাধন করেন’।[16]

মৌরিতানিয়ার বিশিষ্ট মুহাদ্দিছ শায়খ মুহাম্মাদ হাসান দাদো আশ-শানক্বীত্বী (জন্ম : ১৯৬৩খ্রি.) বলেন, ‘শায়খ আলবানী বর্তমান যুগে ইলমুত তাখরীজকে পুনর্জীবিতকারী বিদ্বানদের অন্যতম। তিনি মানুষের সম্মুখে হাদীছ তাখরীজ, তার হুকুম পেশ এবং রাবীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণের বিষয়টি নতুনভাবে তুলে ধরেছেন। বর্তমান যুগে তিনি এবিষয়ে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ বিদ্বান’।[17]

৩. পূর্ববর্তী মুহাদ্দিছগণের মৌলিক নীতিমালার পূর্ণ অনুসরণ :

হাদীছের বিশুদ্ধতা নিরূপণের ক্ষেত্রে শায়খ আলবানী (রহঃ) পূর্ববতী মুহাদ্দিছগণের অনুসৃত নীতিমালার উপরে পরিচালিত হয়েছেন এবং তাদের মতামতের আলোকেই সিদ্ধান্ত পেশ করেছেন। তিনি এমন কোন সিদ্ধান্ত পেশ করেননি, যার প্রতি পূর্ববর্তী কোন ইমামের সমর্থন নেই। তিনি কোন রাবীকে মুদাল্লিস সাব্যস্ত করেননি, যতক্ষণ না পূর্ববর্তী কোন ইমাম তাকে তাদলীসের দোষে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি কোন রাবীকে মিথ্যাবাদী বা মাতরূক বলেননি, যতক্ষণ না পূর্ববর্তী কোন ইমাম তাকে উক্ত দোষে অভিযুক্ত সাব্যস্ত করেছেন। বিভিন্ন তুরুকের (সূত্র) সমন্বয়ে কোন হাদীছকে শক্তিশালী সাব্যস্ত করলেও, তা মৌলিক নীতিমালার আলোকেই করেছেন। মুহাদ্দিছীনের অনুসরণে তিনি কোন হাদীছকে সনদের বাহ্যিক অবস্থা দৃষ্টে ছহীহ সাব্যস্ত না করে, তার গোপন ত্রুটি-বিচ্যুতিসমূহ উদঘাটনের প্রয়াস পেয়েছেন। সর্বোপরি তিনি মৌলিক কোন নীতির ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী ইমামগণের বিপরীত করেননি। তবে শাখা-প্রশাখাগত কিছু বিষয়ে তিনি কখনো কখনো ভিন্নমত পোষণ করেছেন। সেটা কেবল পূর্ববর্তী কোন ইমামের সিদ্ধান্তের বিপরীতে স্পষ্ট দলীল বা কারীনা পাওয়ার ভিত্তিতে।[18]

আলবানী বলেন, পরবর্তীদের জন্য পূর্ববর্তী মুহাদ্দিছদের চেষ্টা, গবেষণা, ইজতিহাদ ও ইলমী চিন্তাধারার কাছে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া উপায় নেই। তবে কোন কোন বিষয়ে পরবর্তীদের নিকটে এমন কিছু প্রকাশ পায়, যা তাদেরকে পূর্ববর্তীদের থেকে ভিন্ন মত পোষণে উদ্বুদ্ধ করে (তখন তা না মেনে উপায় থাকে না)। কেননা মুমিনদের পথ এটাই। আর আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে এদিকেই উৎসাহিত করেছেন। যেমন তিনি বলেন, হে নবী তুমি বলে দাও, এটাই আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে।[19] অতএব আমাদের জন্য ওয়াজিব হ’ল পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করা। কেননা জ্ঞান সবসময় চলমান। তা সীমাবদ্ধতাকে গ্রহণ করে না। যেমন বিভিন্ন মজলিসে আমি বলে থাকি যে, জ্ঞান কখনো স্থবিরতাকে গ্রহণ করে না। তাই আমাদের পরবর্তীদের জন্য কেবলমাত্র পূর্ববর্তীদের প্রচেষ্টার উপর নির্ভর না করে গবেষণা ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ব্যয় করা ওয়াজিব। এর অর্থ এটা নয় যে, আমরা তাদের প্রচেষ্টাকে অবহেলা করব বা তা থেকে ফায়েদা গ্রহণ থেকে বিরত থাকব। বরং মৌলিকভাবে তা থেকেই ফায়েদা গ্রহণ করব। তবে যখন আমাদের নিকটে এমন কিছু স্পষ্ট হবে, যা তাদের কারো কোন সিদ্ধান্তের বিপরীত করতে বাধ্য করবে, তখনই কেবল আমরা সেদিকে অগ্রসর হব’।[20]

যেমন একদল মুহাদ্দিছ রাবীর ন্যায়পরায়ণতা সাব্যস্ত হওয়ার জন্য প্রাপ্তবয়স্ক হওয়াকে শর্ত করেছেন। কিন্তু আলবানী শর্ত করেছেন বুদ্ধি-বিবেচনা সম্পন্ন হওয়াকে, যদিও সে বালেগ না হয়।[21] এ ব্যাপারে তিনি ইমাম বুখারী, ইবনুছ ছালাহ, ইবনু হাজারসহ জুমহূর মুহাদ্দিছীনের সাথে একমত পোষণ করেছেন।[22] কিন্তু প্রথম দলের মুহাদ্দিছগণ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়াকে শর্ত নির্ধারণ করলেও নাবালেগ ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস ও আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ) বর্ণিত হাদীছ গ্রহণ করেছেন, যদিও তারা রাসূল (ছাঃ)-এর ইন্তেকালের সময়ে নাবালেগ ছিলেন।[23] অর্থাৎ নাবালেগ হওয়া সত্ত্বেও মুহাদ্দিছগণ তাদের হাদীছ দলীল হিসাবে গ্রহণ করেছেন। অতএব দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য থাকলেও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে সকল বিদ্বানের মধ্যে ঐক্যমত রয়েছে।

এছাড়া আরো কিছু বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দলীলের আলোকে তিনি মতভেদ করেছেন। তবে তার সবটাই শাখা-প্রশাখাগত বিষয়ে, মৌলিক কোন বিষয়ে নয়। যেমন, ‘সনদ মুত্তাছিল হওয়ার জন্য রাবীগণের মধ্যে পরস্পর শ্রবণ প্রমাণিত হওয়া আবশ্যক’ মর্মে ইমাম বুখারীর নির্ধারিত শর্তের সাথে আলবানী একমত পোষণ করেননি। বরং এক্ষেত্রে তিনি ইমাম মুসলিমের শর্ত ‘সাক্ষাৎ ও শ্রবণ সম্ভব হওয়ার নিশ্চয়তাই যথেষ্ট’-এর সাথে তিনি একমত পোষণ করেছেন। তবে এর অর্থ এই নয় যে তিনি ইমাম বুখারীর গৃহীত শর্তের বিরোধী। বরং তাঁর মতে, ইমাম বুখারীর শর্ত আরো শক্তিশালী। তাঁর শর্ত পরিপূর্ণতার শর্ত। কিন্তু সনদের বিশুদ্ধতার জন্য সাক্ষাৎ ও শ্রবণ সম্ভব হওয়ার নিশ্চয়তা থাকাই যথেষ্ট।[24] অর্থাৎ সাক্ষাতের সম্ভাবনা থাকলেই সনদ বিশুদ্ধ হিসাবে গণ্য হবে। আর যদি শ্রবণ প্রমাণিত হয়ে যায়, তবে তা সনদকে আরো পূর্ণতা দান করবে।

৪. হুকুম সাব্যস্তের ক্ষেত্রে ইজতিহাদভিত্তিক গবেষণা :

হাদীছের হুকুম সাব্যস্তের ক্ষেত্রে তিনি পূর্ববর্তী নির্দিষ্ট কোন মুহাদ্দিছের মতামতের অন্ধ অনুসরণ বা তার প্রতি নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেননি। বরং পূর্ববর্তী মুহাদ্দিছগণের নীতিমালা ও মতামতের অনুসরণে নিজস্ব গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করেছেন। তিনি তাঁদের বক্তব্যসমূহ পর্যালোচনা করেছেন এবং দলীলসমূহ পর্যবেক্ষণ করেছেন। সবশেষে কেবল ঐ বক্তব্যকে গ্রহণ করেছেন বা অগ্রগণ্য সাব্যস্ত করেছেন, যা তাঁর নিকটে বিশুদ্ধ দলীলের অধিক নিকটবর্তী সাব্যস্ত হয়েছে। এরূপ ক্ষেত্রে তিনি কখনো কোন মুহাদ্দিছের সমালোচনা করেছেন। তাদের কোন সিদ্ধান্তকে ভুল বা মারজূহ সাব্যস্ত করেছেন। তবে এর অর্থ এটা নয় যে, তিনি তাদের ইলমী গভীরতা ও উচ্চ মর্যাদাকে অবজ্ঞা করেছেন। বরং এর মাধ্যমে তিনি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সর্বযুগের ওলামায়ে কেরামের চিরন্তন নীতি ‘অনুসরণের ক্ষেত্রে সত্য সর্বদা অধিকতর হকদার’ নীতি অনুসরণ করেছেন।

যেমন আলবানী বলেন, যেসব হাদীছের উপর আমি হুকুম পেশ করেছি, সেক্ষেত্রে আমি কারো অন্ধ অনুসরণ করিনি। বরং হাদীছ বিশারদগণ হাদীছের বিশুদ্ধতা নিরূপণে যে ইলমী নীতিমালা তৈরী করে গেছেন এবং ছহীহ-যঈফ সাব্যস্তের ক্ষেত্রে যার উপর নির্ভর করেছেন, আমি তার অনুসরণ করেছি মাত্র।[25]

বরং তাখরীজের ক্ষেত্রে আলবানীর নির্দেশনা হ’ল, ইলমুল হাদীছের শক্তিশালী শিক্ষার্থীদের জন্য পূর্ণ গবেষণা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত প্রদান করা ওয়াজিব। কেবল একটি ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী কোন ইমামের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করা যাবে। সেটা হ’ল- যদি তিনি হাদীছটি সনদসহ সংকলন করেন এবং সনদের দোষ-ত্রুটি উল্লেখ করেন। কিন্তু যদি কেবল মতন উল্লেখ করেন। তারপর পরবর্তী কোন তালিবুল ইলম ঐ হাদীছের সনদ যাচাই করে তা ছহীহ বা হাসান হিসাবে পান, বিশেষত যদি হাদীছটির কোন শাহেদ বা মুতাবে‘ খুঁজে পান, তবে অবশ্যই তার জন্য স্বীয় সিদ্ধান্ত ও ইজতিহাদের উপর নির্ভর করতে হবে। শর্ত হ’ল, উক্ত তালিবুল ইলমকে অভিজ্ঞ ও শক্তিশালী হ’তে হবে।[26]

যেমন আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে একটি সূত্রে এসেছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, দুঃখ-বেদনার প্রারম্ভেই ছবর করা প্রয়োজন। উক্ত হাদীছটির ব্যাপারে প্রথম যুগের জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আবু হাতিম বলেন, হাদীছটি এই সনদে বাতিল এবং এর মধ্যস্থিত বর্ণনাকারী ‘বায়ান’ অপরিচিত শায়খ।[27] অর্থাৎ তিনি কেবল একটি সনদের ত্রুটির ভিত্তিতে হাদীছটি বাতিল সাব্যস্ত করেছেন। অথচ হাদীছটি বুখারী (হাদীছ নং ১৩০২) ও মুসলিমে (হাদীছ নং ৯২৬) বায়ানের সূত্র ব্যতীত অন্য বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আবু হাতেম কর্তৃক হাদীছটি বাতিল সাব্যস্ত করার কারণ হ’ল বিশুদ্ধ সূত্রটি সম্পর্কে না জানা। এরূপ ক্ষেত্রে আলবানী শাহেদের ভিত্তিতে বর্ণনাকারী অপরিচিত হওয়া সত্ত্বেও তাকে ছহীহ সাব্যস্ত করেছেন।

৫. অধিক পরিমাণ মুতাবা‘আত ও শাওয়াহেদের সহযোগিতা গ্রহণ :

শায়খ আলবানী দীর্ঘ গবেষণা জীবনে বিপুল পরিমাণ হাদীছ গ্রন্থ পর্যবেক্ষণের সুযোগ লাভ করেছিলেন। সেকারণে তিনি সমকালীন মুহাদ্দিছদের মধ্যে হাদীছের মুতাবা‘আত ও শাওয়াহেদ পেশ করার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। বিশেষত তাঁর রচিত সিলসিলা ছহীহাহ ও সিলসিলা যঈফাহকে এক্ষেত্রে আকর গ্রন্থ বলা যেতে পারে। উক্ত গ্রন্থদ্বয়ে তিনি বহু দুর্বল হাদীছকে শাওয়াহেদ ও মুতাবা‘আতের মাধ্যমে শক্তিশালী করার প্রয়াস পেয়েছেন। একটি হাদীছকে শক্তিশালী করণার্থে বিভিন্ন হাদীছগ্রন্থ থেকে সূত্র সংগ্রহের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। 

আলবানী বলেন, একটি হাদীছকে যঈফ সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে আমি কেবল সেই হাদীছের সূত্র যঈফ হওয়ার উপর নির্ভর করিনি। বরং ইমাম ও হাফেযগণের সহযোগিতায় আমি আমার আয়ত্তের মধ্যে থাকা প্রকাশিত ও হস্তলিখিত গ্রন্থরাজির মধ্যে সর্বাত্মক অনুসন্ধান করেছি। সবকিছুই কেবল এই আশংকায় যে, যদি হাদীছটিকে শক্তিশালী করার মত একটি সূত্রও থেকে থাকে; আর তা না পেয়ে হয়ত আমি ভুলের মধ্য পতিত হব। আমার মনে হয় পাঠকবৃন্দ আমার সিলসিলা যঈফার প্রবন্ধসমূহের মধ্যে একটি প্রবন্ধ দেখলেই তা অনুধাবন করতে পারবেন। উক্ত মানহাজের আলোকে আমি একই অর্থে একাধিক হাদীছ ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করেছি এবং প্রত্যেকটি সূত্রের তাখরীজ পেশ করেছি।[28]

যেমন রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী- الأذنان من الرأس ‘দুই কান মাথার অংশ’-এর তাখরীজে আলবানী বলেন, উক্ত হাদীছটি ছাহাবায়ে কেরামের বড় একটি দল থেকে বর্ণিত হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন আবু উমামা, আবু হুরায়রা, ইবনু ‘উমার, ইবনু আববাস, আয়েশা, আবু মূসা আশ‘আরী, আনাস, সামুরা ইবনু জুনদুব এবং আব্দুল্লাহ ইবনু যায়েদ (রাঃ)।

অতঃপর ১০ পৃষ্ঠাব্যাপী দীর্ঘ আলোচনার শুরুতে তিনি আবু উমামা থেকে উক্ত হাদীছটির তিনটি তুরুক (বর্ণনাসূত্র) এনে ১ম সূত্রটিকে হাসান এবং বাকি দু’টিকে যঈফ সাব্যস্ত করেছেন। আবু হুরায়রা থেকে মোট চারটি তুরুক এনে বিস্তারিত আলোচনা শেষে প্রত্যেকটিকেই কমবেশী দুর্বল প্রমাণ করেছেন। তারপর ইবনু ‘উমার থেকে ২টি তুরুক এনে প্রথমটি হাসান এবং দ্বিতীয়টি যঈফ হওয়ার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। অতঃপর ইবনু আববাস থেকে মোট ৩টি তুরুক এনে দু’টিকে ছহীহ এবং একটিকে যঈফ সাব্যস্ত করেছেন এবং আয়েশা থেকে ২টি সূত্র উল্লেখ করে একটিকে মাওযূ‘ এবং অন্যটিকে মুরসাল ছহীহ সাব্যস্ত করেছেন। তারপর আবু মূসা বর্ণিত সূত্রটিকে মাওকূফ ছহীহ, আনাস ও সামুরা বর্ণিত সূত্রদ্বয়কে যঈফ এবং আব্দুল্লাহ বিন যায়েদের বর্ণনাকে বিস্তারিত আলোচনা শেষে হাসান লি গায়রিহী সাব্যস্ত করেছেন।

দীর্ঘ আলোচনা শেষে তিনি বলেন, ইবনু যায়েদের উক্ত হাসান সূত্রের সাথে যদি ইবনু আববাস বর্ণিত ছহীহ সূত্র এবং ইবনুল ক্বাত্তান, ইবনুল জাওযী, যায়লা‘ঈ ও অন্যান্য বিদ্বান কর্তৃক ছহীহকৃত এর আরেকটি সূত্রকে যোগ করা হয়, তাহ’লে হাদীছটির সত্যতা ও বিশুদ্ধতা নিয়ে আর কোন সন্দেহ থাকে না। আর সাথে যদি অন্যান্য ছাহাবী কর্তৃক বর্ণিত সূত্রগুলো একত্রিত করা হয়, তাহ’লে এর শক্তি আরো বৃদ্ধি পাবে।[29]

আলোচ্য হাদীছটির তাখরীজে আলবানী মোট ২৫টি হাদীছ গ্রন্থে ৮ জন ছাহাবী বর্ণিত ১৮টি সূত্র একত্রিত করেছেন। অতঃপর প্রত্যেকটির সূত্রের পৃথক পৃথক হুকুম পেশ করে সবগুলোর সমন্বয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন।

৬. ‘ইলালুল হাদীছ বা হাদীছের গোপন দোষ-ত্রুটির প্রতি গভীর দৃষ্টি :

‘ইলালুল হাদীছ ইলমুল হাদীছের অন্যতম সূক্ষ্মতম অধ্যায়। পূর্ববর্তী মুহাদ্দিছগণের মধ্যে আলী ইবনুল মাদীনী, ইমাম বুখারী, তিরমিযী ও দারাকুৎনীসহ অল্প সংখ্যক মুহাদ্দিছ এ ব্যাপারে আলোকপাত করেছেন। আধুনিক যুগে শায়খ আলবানী এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং এ ময়দানকে পুনর্জীবিত করেছেন। তিনি ইমাম বুখারী, আলী ইবনুল মাদীনী, আহমাদ ইবনু হাম্বল, দারাকুৎনী প্রমুখ ‘ইলালবিদদের মতামতের আলোকে একই হাদীছের বিভিন্ন তুরুক একত্রিত করে ত্রুটিসমূহ চিহ্নিত করার প্রয়াস পেয়েছেন।

প্রফেসর ড. বাসিম ফয়ছাল আল-জাওয়াবিরাহ বলেন, ‘গোপন দোষ-ত্রুটিযুক্ত হাদীছ পর্যালোচনার ক্ষেত্রে শায়খ আলবানীর সুস্পষ্ট মানহাজ ছিল। তিনি সমালোচক ও দোষ-ত্রুটি উদঘাটনকারী ওলামায়ে কেরাম থেকে ইলমী ফায়েদা হাছিল করেছেন। তিনি তাদের অনুসৃত মানহাজের বাইরে যাননি। বরং তাদের রেখে যাওয়া উৎসসমূহ থেকে ইলমী সুধা পান করেছেন এবং ভিন্নপন্থা অবলম্বন না করে তাদের পদাংক অনুসরণকারী হয়েছেন।[30]

‘ইলালুল হাদীছের ক্ষেত্রে আলবানীর কর্মতৎপরতার উপর গবেষণাকারী ড. মুহাম্মাদ হামদী আবু ‘আব্দুহু বলেন, ‘মুহাদ্দিছগণ রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছসমূহ সংরক্ষণের জন্য নীতিমালা তৈরী করেছেন এবং তা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন। যার অন্যতম হ’ল ইলমু ‘ইলালিল হাদীছ। অত্যধিক গুরুত্ব ও আলোচনার সূক্ষ্মতার বিবেচনায় এখানে প্রবেশ করাকে হাদীছ শাস্ত্রের সবচেয়ে কঠিন পদক্ষেপ হিসাবে গণ্য করা হয়। সেকারণে পূর্ববর্তী মুহাদ্দিছগণের মধ্যে অল্প সংখ্যক মুহাদ্দিছ এ ব্যাপারে আলোকপাত করেছেন। যেমন আলী ইবনুল মাদীনী, ইমাম বুখারী, তিরমিযী, দারাকুৎনী প্রমুখ। আর পরবর্তীদের মধ্যে ‘ইরাক্বী, ইবনু হাজার আসক্বালানী প্রমুখ। আধুনিক যুগে অল্পসংখ্যক বিদ্বান এ ব্যাপারে এগিয়ে এসেছেন, যাদের শীর্ষে রয়েছেন শায়খ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী। যিনি এক্ষেত্রে স্বীয় যুগে সবচেয়ে অগ্রগামী হয়েছেন। তিনি এমন এক ময়দানে প্রবেশ করেছেন, যেখানে সমসাময়িক কেউ প্রবেশ করেননি। এমন এক ময়দানকে পুনর্জীবিত করেছেন, যে ময়দানটি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল। তিনি ইলমুল ‘ইলালের ময়দানে এগিয়ে গেছেন। কিন্তু সেখানে তার কোন সাথী ছিল না। তিনি ব্যতীত কারো হৃদয় এদিকে অগ্রগামী হয়নি। ফলে তিনি একে নতুনভাবে তুলে ধরেছেন এবং এবিষয়ে তার সাথীদের মধ্যে একক ব্যক্তি হিসাবে পরিগণিত হয়েছেন।

যদিও মানবীয় দুর্বলতার কারণে তাকেও সেখানে বিবিধ ভুলের মুখোমুখি হ’তে হয়েছে, যা থেকে বিজ্ঞ আলেমগণের কেউই বাঁচতে পারেননি। এটা স্বভাবগত বিষয় যে, মানুষ সঠিক করবে, ভুলও করবে। মানুষের জন্য ঐ তীরই যথেষ্ট যে, তার দোষসমূহ গণনা করা হবে। কিন্তু সুন্নাতে নববীর খেদমতে তিনি যে বিশাল অবদান রেখেছেন, সেদিক বিবেচনায় এটা তাঁর ইলমী মর্যাদাকে লঘুতর করার ক্ষমতা আদৌ রাখে না’।[31]

৭. অকপটে সাহসী সিদ্ধান্ত প্রদান :

তাখরীজের ক্ষেত্রে কোন বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর আলবানী সিদ্ধান্ত প্রদানে কোন দ্বিধা করেননি। হুকুম নির্ধারণে কোন সংশয় বা মতদ্বৈততার আশ্রয় নেননি। বরং সাধ্যমত গবেষণা করে আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রেখে সিদ্ধান্ত প্রদানে অগ্রসর হয়েছেন। ফলে অধিকাংশ তাখরীজে তিনি আলোচনার সার-নির্যাস হিসাবে প্রথমে হাদীছের হুকুম উল্লেখ করেছেন। অতঃপর বিস্তারিত আলোচনা পেশ করেছেন।

‘কুরআন ব্যতীত অন্য কোন কিতাব নিরঙ্কুশভাবে ত্রুটিমুক্ত নয়’-এই চিন্তাধারার আলোকে তিনি ছহীহ বুখারী ও মুসলিমের কিছু হাদীছের ব্যাপারে গবেষণা করে বিস্তারিত সমালোচনা পেশ করতেও যেমন পিছপা হননি,[32] তেমনি উক্ত গ্রন্থদ্বয়ের বেশ কিছু হাদীছের ব্যাপারে অন্যান্য বিদ্বানদের সমালোচনার নিরপেক্ষ জবাবও তিনি পেশ করেছেন। এমনকি ছহীহ মুসলিমের একাধিক হাদীছের ব্যাপারে আলী ইবনুল মাদীনী, আবুদাঊদ, ইবনু মা‘ঈন, ইবনু খুযায়মা, বায়হাক্বী প্রমুখ বিদ্বানের সমালোচনার জবাবে বিস্তারিত আলোচনা পেশ করে সেগুলো ছহীহ সাব্যস্ত করেছেন।[33]

একইভাবে স্বীয় তাহক্বীক্বের ক্ষেত্রে তিনি ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহ.)-এর সিদ্ধান্তের উপর অধিক নির্ভর করলেও তাঁর অনেক সিদ্ধান্তের সমালোচনা বা বিপরীত সিদ্ধান্ত পেশ করতে দ্বিধা করেননি। বরং তাঁর নিকটে যতটুকু ভুল পরিলক্ষিত হয়েছে, তা স্পষ্টভাষায় তুলে ধরেছেন।[34]

নিজের কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ভুল বুঝতে পারলে বা অন্য কেউ ধরিয়ে দিলে তা থেকে ফিরে আসার ক্ষেত্রে তিনি নিন্দুকের নিন্দাবাদের কোন পরওয়া করেননি। বরং ভুল ধরিয়ে দেওয়া ব্যক্তির প্রতি শুকরিয়া ও সম্মান প্রদর্শন করেছেন। যেমন একটি হাদীছের ব্যাপারে তিনি বলেন, ইমাম বায়হাক্বীর বক্তব্য অনুযায়ী ইবনু কুতায়বা হাদীছটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন মনে করে কিছুকাল আমি তা যঈফ বলে ধারণা করতাম। অতঃপর আমি মুসনাদে আবী ইয়া‘লা এবং আখবারে ইস্ফাহান গ্রন্থদ্বয়ে উল্লেখিত সনদ তদন্ত করে নিশ্চিত হলাম যে, এর সনদ ‘শক্তিশালী’। ইবনু কুতায়বা কর্তৃক একক সনদে বর্ণিত বলে ধারণা করা সঠিক নয়। সেকারণে ইলমী আমানত আদায় ও দায়মুক্তির লক্ষ্যে আমি হাদীছটি সিলসিলা ছহীহায় সংকলন করলাম। যদিও

এটা অজ্ঞ ও বিদ্বেষপরায়ণদের অন্যায় আক্রমণ, কুৎসা ও কটাক্ষের পথ খুলে দেবে। তবে যেহেতু আমি দ্বীনের আবশ্যকীয় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি, তাই এসব

সমালোচনার আমি কোনই পরওয়া করি না। বরং আমি আল্লাহর নিকট নেকীর আশা করি মাত্র।[35]

কখনো কখনো কোন বিদ্বানের ভুল-ত্রুটির ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত হলে তাও পূর্ণ আস্থার সাথে দ্ব্যর্থহীনভাবে উল্লেখ করেছেন। ফলে সমালোচনার ক্ষেত্রে কখনো কখনো অধিক কঠোরতাও প্রকাশ পেয়েছে।[36]

৮. হুকুম সাব্যস্তের কারণসমূহ সহজ, বিস্তারিত ও নিরপক্ষেভাবে উপস্থাপন :

আলবানীর তাখরীজের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, কোন হাদীছের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষেত্রে তিনি দলীল-প্রমাণসমূহ সহজ, বিস্তারিত ও নিরপক্ষেভাবে উপস্থাপন করেছেন। হাদীছ ভেদে শাওয়াহেদ ও মুতাবা‘আতসমূহ সেগুলোর সনদ ও যে গ্রন্থে তা সংকলিত হয়েছে তাসহ উল্লেখ করেছেন। কোন গ্রন্থের পান্ডুলিপি থেকে উদ্ধৃতি পেশ করলে তা কোন লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত রয়েছে তা উল্লেখ করেছেন। ইমামগণের মতামতসমূহ তুলে ধরেছেন। রাবীদের ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন মতামত থাকলে নিরপেক্ষভাবে তা উল্লেখ করেছেন। সনদে বা মতনে গোপন দোষ-ত্রুটি থাকলে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন। সর্বোপরি ভারসাম্যপূর্ণ ও সুস্পষ্ট একটি আলোচনা তুলে ধরার পর তিনি স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। ফলে গবেষকগণ তাঁর সিদ্ধান্তের পিছনের গৃহীত দলীল সমূহ ও তার উৎসস্থল সম্পর্কে সহজেই বুঝতে সক্ষম হন। কোন ক্ষেত্রে বিদ্বানদের মতভেদ থাকলে তা স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। সাথে সাথে তাঁর গবেষণায় বিশেষ কোন ভুল-ত্রুটি বা ঘাটতি থাকলে পরবর্তী গবেষকদের তা চিহ্নিত করতেও বেগ পেতে হয় না।

(ক্রমশঃ)


[1]. ড. আল-মানজী বোসনীনাহ, মাওসূ‘আতু আ‘লামিল ‘উলামা ওয়াল উদাবাইল ‘আরাব ওয়াল মুসলিমীন, (বৈরূত : দারুল জীল, ১ম প্রকাশ, ২০০৪ খ্রি.), ২/৩০০।

[2]. সিলসিলাতুল আহাদীছিছ ছহীহাহ (৭ খন্ড), সিলসিলাতুল আহাদীছিয য‘ঈফাহ (১৪ খন্ড), ইরওয়াউল গালীল (৯ খন্ড) ও গায়াতুল মারাম ফী তাখরীজি আহদীছিল হালাল ওয়াল হারাম (১ খন্ড)।

[3]. আবূ উসামা সালীম ইবনু ‘ঈদ আল-হেলালী, আল-জামি‘উল মুফাহরাস লি আতরাফিল আহাদীছ ওয়াল আছার আল্লাতী খাররাজাহাল আলবানী, (দাম্মাম : দারু ইবনিল জাওযী, ৩য় প্রকাশ, ১৯৯৭ খ্রি.), পৃ. ১/১৫। উক্ত গ্রন্থটিকে আলবানীর মোট ৬৭টি গ্রন্থের প্রায় ৪০ হাযার তাখরীজকৃত হাদীছ আরবী বর্ণমালার ধারাবাহিকতায় সাজানো হয়েছে এবং প্রতিটি হাদীছ তাঁর কোন গ্রন্থের কত নম্বর বা কোন পৃষ্ঠায় রয়েছে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে তার সংকলিত সুনানুল আরবা‘আহ-এর তাখরীজ, মুখতাছার ছহীহুল বুখারী এবং মুখতাছার ছহীহ মুসলিমের হাদীছসমূহ উক্ত সংকলন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

[4]. আব্দুল মুহসিন আববাদ, শারহু আবী দাঊদ, ২৩/৪৪০; অডিও ক্লিপ নং (২৯৭) ৬১। ভিডিও লিংক- https://www.youtube .com/watch?v=mZkEwVehjxM, 10.01.2019.

[5]. আলী আব্দুল ফাত্তাহ, আ‘লামুল মুবদি‘ঈন মিন ‘উলামাইল ‘আরাব ওয়াল মুসলিমীন, পৃ. ১৪৪৮।

[6]. ইমাম আলবানী : দুরূস ওয়া মাওয়াকিফ ওয়া ‘ইবার, পৃ. ৫।

[7]. আল-ইত্তিজাহাতুল মু‘আছারাহ ফী দিরাসাতিস সুন্নাহ, পৃ. ৩৬৬।

[8]. ড. মুহাম্মাদ হাস্সানীন হাসান, তাজদীদুদ দ্বীন; মাফহূমুহু ওয়া যাওয়াবিতুহূ ওয়া আছারুহূ (রিয়াদ : জাইযাতু নায়েফ ইবনু আব্দিল আযীয, ১ম প্রকাশ, ২০০৭ খ্রি.), পৃ. ২৩১।

[9]. উসামা শাহহাযা, মুহাদ্দিছুল ‘আছর শায়খ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রিয়াদ : মাজাল্লাতুল বায়ান, প্রকাশকাল : ১৮.০২.২০১৩ খ্রি., লিংক- http://albayan.co.uk/article2.aspx?id=2614.

[10]. ইমাম আলবানী : দুরূস ওয়া মাওয়াকিফ ওয়া ‘ইবার, পৃ. ৫।

[11]. ইবরাহীম যীবাক্ব, আল্লামা শায়খ শু‘আইব আরনাঊত্ব ; সীরাতুহূ ফী ত্বলাবিল ‘ইলমি ওয়া জুহূদুহূ ফী তাহকীকিত তুরাছ (বৈরূত : দারুল বাশাইর, ১ম প্রকাশ, ২০১২ খ্রি.), পৃ. ১৯৬-১৯৭।

[12]. হাসসান আব্দুল মান্নান, মুনাকাশাতুল আলবানীঈন ফী মাসআলাতিছ ছালাত বাইনাস সাওয়ারী (আবূধাবী : দারুল ইমাম আয-যাহাবী, তাবি), পৃ. ৩০।

[13]. আহমাদ ইবনু হাম্বল, আল-মুসনাদ, তাহক্বীক্ব : আহমাদ শাকির (মিসর : দারুল মা‘আরিফ, ৪র্থ প্রকাশ, ১৯৫৪ খ্রি.)।

[14]. ড. আবূ উসামা সালীম বিন ‘ঈদ আল-হিলালী, ইমাম আলবানী শায়খুল ইসলাম ওয়া ইমামি আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ ফী ‘উয়ূনি আ‘লামিল ‘উলামা ওয়া ফুহূলিল উদাবা, পৃ. ১৩৪-৩৫।

[15]. আব্দুল করীম খুযায়ের, আল-হিম্মাহ ফী তলাাবল ‘ইলম (অডিও ক্লিপ), http://www.ahlalhdeeth.com /vb/archive/index. php/t-38742.html. 10.05.2017.

[16]. হায়াতুল আলবানী ওয়া আছারুহু, পৃ. ৫৫৫।

[17]. লিংক- https://dedewnet.com/medias/doc/e-b-3.docx, 07.06.2019.

[18]. যাকারিয়া ইবনু গোলাম ক্বাদির, আলবানী ওয়া মানহাজুল আইম্মাতিল মুতাক্বাদ্দিমীন ফী ‘ইলমিল হাদীছ (রিয়াদ : মাকতাবাতুল মা‘আরিফ, ১ম প্রকাশ, ২০১০ খ্রি.), পৃ. ২৭৭।

[19]. সূরা ইউসুফ, আয়াত নং ১০৮।

[20]. আদ-দুরার ফী মাসাইলিল মুছত্বলাহি ওয়াল আছার, পৃ. ১৫৭।

[21]. ইরওয়াউল গালীল, ৭/২২০।

[22]. আবূ বকর কাফী, মানহাজুল ইমাম বুখারী ফি তাছহীহীল আহাদীছ ও তা‘লীলিহা (বৈরূত : দারু ইবনি হাযম, ১ম প্রকাশ, ২০০৯ খ্রি.), পৃ. ৭৯-৮০।

[23]. আল-বা‘ইছুল হাছীছ শারহু ইখতিছারি ‘উলূমিল হাদীছ, তা‘লীক : আলবানী, ১/২৮০।

[24]. সিলসিলা ছহীহাহ, ৬/১২৪৭।

[25]. সিলসিলা যঈফাহ, ১/৪২।

[26]. আদ-দুরার ফী মাসাইলিল মুছত্বলাহি ওয়াল আছার, পৃ. ১২-১৮।

[27]. ইবনু আবী হাতিম, আল-‘ইলাল, ২/১৭৫।

[28]. আর-রাওযুদ দানী ফিল ফাওয়াইদিল হাদীছিইয়াহ লিল ‘আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী, পৃ. ১৫৩-৫৪।

[29]. সিলসিলা ছহীহাহ, ১/৮১-৯০।

[30]. ড. মুহাম্মাদ হামদী আবূ ‘আব্দুহু, মানহাজুল ‘আল্লামা মুহাদ্দিছ আল-আলবানী ফী তা‘লীলিল হাদীছ, পৃ. ৬।

[31]. , পৃ. ১০।

[32]. শারহুল আক্বীদাতিত ত্বাহাবিয়াহ, পৃ. ২২-২৩, টীকা দ্রষ্টব্য।

[33]. সিলসিলা ছহীহাহ, ৪/৪৪৯-৫০, হাদীছ নং ১৮৩৩, ইরওয়াউল গালীল, ২/৩৮-৩৯, ১২০-১২২, হাদীছ নং ৩৩২, ৩৯৪।

[34]. ইরওয়াউল গালীল, ২/৯৮; আত-তাওয়াসসুল, পৃ. ৯৫।।

[35]. সিলসিলা যঈফাহ, ১/২৭২, হাদীছ নং ১৪২, ৩/৪৭৯।

[36]. সিলসিলা ছহীহাহ, ২/১৯০, হাদীছ নং ৬২১।






যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (৭ম কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব মুহাদ্দিছ দেহলভী - ড. নূরুল ইসলাম
শেরে পাঞ্জাব, ফাতিহে কাদিয়ান মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহঃ) (৫ম কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (৩য় কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
মাওলানা আব্দুস সালাম মুবারকপুরী : মুবারকপুরের এক ইলমী নক্ষত্র - ড. নূরুল ইসলাম
মাওলানা আব্দুর রঊফ ঝান্ডানগরী - ড. নূরুল ইসলাম
ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) - ড. নূরুল ইসলাম
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) (শেষ কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
ইবনু মাজাহ (রহঃ) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) (২য় কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
শেরে পাঞ্জাব, ফাতিহে কাদিয়ান মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহঃ) (৮ম কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
ড. মুক্তাদা হাসান আযহারী - ড. নূরুল ইসলাম
আরও
আরও
.