৪. আলবানী (রহঃ) ছহীহুল বুখারী ও মুসলিমে সংকলিত কিছু হাদীছের সমালোচনা করেছেন :
আলবানী (রহঃ)-এর বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগসমূহের মধ্যে অন্যতম মৌলিক অভিযোগ হ’ল, তিনি ছহীহ বুখারী ও মুসলিমের আপাদমস্তক বিশুদ্ধতার ব্যাপারে বিদ্বানদের ঐক্যমতকে অগ্রাহ্য করে এর মধ্যস্থিত কিছু হাদীছের সমালোচনা করেছেন। ড. মাহমূদ সাঈদ মামদূহ আলবানীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আরোপ করে তাঁর কৃত সমালোচনার জবাবে পৃথক গ্রন্থ রচনা করেছেন।[1] এক্ষণে উক্ত অভিযোগের ব্যাপারে আলোকপাত করা হ’ল।-
জানা আবশ্যক যে, ছহীহ বুখারী ও মুসলিম পবিত্র কুরআনের পর সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও বিশুদ্ধতম দু’টি হাদীছ গ্রন্থ। মুসলিম উম্মাহর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল যুগের ওলামায়ে কেরাম সর্বসম্মতভাবে এর হাদীছসমূহকে বিশুদ্ধতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হিসাবে গ্রহণ করেছেন। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, لَيْسَ تَحْتَ أَدِيمِ السَّمَاءِ كِتَابٌ أَصَحُّ مِنْ الْبُخَارِيِّ وَمُسْلِمٍ بَعْدَ الْقُرْآنِ ‘আসমানের নীচে পবিত্র কুরআনের পরে ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিমের চেয়ে বিশুদ্ধ কোন গ্রন্থ নেই’।[2] ইমাম নববী বলেন, ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, কুরআনের পর সর্বাধিক বিশুদ্ধ গ্রন্থ হ’ল ইমাম বুখারী এবং ইমাম মুসলিমের ছহীহাইন। সমগ্র উম্মাহ এ ব্যাপারে স্বীকৃতি দিয়েছে।’[3]
ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিমের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে যেমন প্রাচ্য-প্রতীচ্যের লাখো ওলামায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করেছেন। তেমনি প্রাথমিক ও আধুনিক যুগের কিছু মুহাদ্দিছ ও সমালোচক ছহীহ বুখারীর আপাদমস্তক বিশুদ্ধতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে এর মধ্যস্থিত কিছু ভুলভ্রান্তি তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন।
প্রাথমিক যুগের মুহাদ্দিছদের মধ্যে ইমাম দারাকুৎনী (৩০৬-৩৮৫ হি.),[4] আবু মাস‘ঊদ আদ-দিমাশক্বী, আবু আলী আল-গাস্সানী আল-জাইয়ানী[5] প্রমুখ মুহাদ্দিছ ছহীহ বুখারীর বেশ কিছু হাদীছের উপর সমালোচনা করেছেন। তৎপরবর্তীকালে শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ[6], ইবনু হাযম[7], হাফেয যায়নুদ্দীন ‘ইরাক্বী[8], তাজুদ্দীন সুবকী[9], ইমাম তাহাবী সহ[10] কতিপয় বিদ্বান কিছু কিছু হাদীছের সমালোচনা করেছেন। আধুনিক যুগে শায়খ আলবানীসহ আরো কিছু বিদ্বান অল্প কিছুসংখ্যক হাদীছের দোষ-ত্রুটি তুলে ধরেছেন। তবে সার্বিক বিবেচনায় এ বিষয়ে দারাকুৎনীর সমালোচনাটিই সবচেয়ে সমৃদ্ধ। এসব সমালোচনার জবাবে বিভিন্ন গ্রন্থও লিপিবদ্ধ হয়েছে। এক্ষণে আমরা শায়খ আলবানীর কৃত সমালোচনার প্রতি দৃষ্টিপাত করব।-
আলবানী ছহীহ বুখারী ও মুসলিমের শ্রেষ্ঠত্বের কথা তাঁর লেখনীতে বারংবার উল্লেখ করেছেন। একইসাথে তিনি তাঁর নিকটে প্রতিভাত হওয়া অল্প কিছু দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। কেননা তাঁর মতে, কুরআন ব্যতীত অন্য কোন গ্রন্থ নিরঙ্কুশভাবে ত্রুটিমুক্ত নয়। তিনি বলেন, ছহীহাইন মুহাদ্দিছগণসহ সকল মুসলিম ওলামায়ে কেরামের ঐক্যমতে আল্লাহর কিতাবের পর বিশুদ্ধতম গ্রন্থ। কেননা গ্রন্থ দু’টি প্রতিষ্ঠিত মূলনীতি ও সূক্ষ্ম শর্তাবলীর ভিত্তিতে বিশুদ্ধ হাদীছ একত্রীকরণ এবং যঈফ ও মুনকার হাদীছ পরিত্যাগের ক্ষেত্রে অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে। ছহীহ হাদীছ জমা করার ক্ষেত্রে তারা যে সফলতা অর্জন করেছেন, পরবর্তীতে তাদের পদাঙ্ক অনুসরণকারীগণ তা অর্জন করতে পারেননি। যেমন ইমাম ইবনু খুযায়মা, ইবনু হিববান, হাকেম প্রমুখ। ফলে একথা প্রসিদ্ধ হয়ে গেছে যে, যদি কোন হাদীছ ইমাম বুখারী বা ইমাম মুসলিম স্ব স্ব গ্রন্থে সংকলন করেন, তবে নিঃসন্দেহে তা বিশুদ্ধতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং সঠিকতা ও নিরাপত্তার পথে প্রবেশ করেছে। আর আমাদের মূলনীতিও এটাই। তবে এর অর্থ এটা নয় যে, ছহীহাইনের প্রতিটি অক্ষর, শব্দ ও বাক্য কুরআনের সম পর্যায়ভুক্ত। ফলে তার মধ্যে কোন রাবীর পক্ষ থেকে কোন অনিচ্ছাকৃত ভুল থাকা কখনোই অসম্ভব নয়। আমরা নীতিগতভাবে আল্লাহর কিতাবের পর অন্য কোন কিতাবকে নিরঙ্কুশভাবে ত্রুটিমুক্ত মনে করি না।[11]
তবে এর পিছনে পূর্ববর্তীদের মত তাঁর উদ্দেশ্যও এরূপ নয় যে, এর মাধ্যমে তিনি বুখারী-মুসলিমের সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন বা হাদীছের সংশয়বাদীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন। বরং একজন মুজতাহিদ বিদ্বান হিসাবে ইলমুল হাদীছের নীতিমালা এবং রাবীদের ব্যাপারে পূর্ববর্তী বিদ্বানগণের মতামতের ভিত্তিতে ইলমী গবেষণার সার নির্যাস তুলে ধরেছেন মাত্র।[12] যা সঠিক হ’লে দু’টি নেকী এবং ভুল হ’লে একটি নেকী লাভ করবেন ইনশাআল্লাহ।
সমালোচনার কারণ :
আলবানীর সমালোচনার কারণগুলো কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন, কিছু রাবীর দুর্বলতা সাব্যস্তকরণ, মতনের মধ্যস্থিত কোন শব্দ বা বাক্যকে শায, গরীব বা মুনকার সাব্যস্তকরণ, হাদীছের মধ্যে অতিরিক্ত কিছু সংযোজন তথা ইদরাজ, সনদ ও মতনগত ইযত্বিরাব, সনদগত বিচ্ছিন্নতা সাব্যস্তকরণ ইত্যাদি। এক্ষণে এরূপ সমালোচনার কিছু উদাহরণ পর্যালোচনাসহ পেশ করা হ’ল।-
ক. রাবীর দুর্বলতার কারণে সমালোচনা :
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ رِضْوَانِ اللَّهِ لاَ يُلْقِى لَهَا بَالاً ، يَرْفَعُ اللَّهُ بِهَا دَرَجَاتٍ ، وَإِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللَّهِ لاَ يُلْقِى لَهَا بَالاً يَهْوِى بِهَا فِى جَهَنَّمَ ‘নিশ্চয়ই বান্দা কখনও অবচেতনভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির কথা বলে, অথচ সে কথার দ্বারা আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আবার বান্দা কখনও পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা না করেই আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কথা বলে ফেলে, অথচ সে কথার কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’।[13]
উক্ত হাদীছ সম্পর্কে আলবানী (রহঃ) বলেন, ইমাম বুখারী, আহমাদ ও বায়হাক্বী عَبْدُ اللهِ بْنُ مُنِيرٍ سَمِعَ أَبَا النَّضْرِ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَبْدِ اللهِ يَعْنِى ابْنَ دِينَارٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ أَبِى صَالِحٍ عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ থেকে মারফূ‘ সূত্রে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, দু’টি ত্রুটির কারণে এর সনদ যঈফ।
১ম ত্রুটি : عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَبْدِ اللهِ -এর স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা। যদিও ইমাম বুখারী তার হাদীছ গ্রহণ করেছেন। মুহাদ্দিছগণ তার স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে সমালোচনা ও বিরোধিতা করেছেন। তবে সত্যবাদিতার ব্যাপারে সমালোচনা করেননি। যেমন-
(১) ইয়াহইয়া ইবনু মা‘ঈন বলেন, حدث يحيى القطان عنه، وفي حديثه عندي ضعف ‘ইয়াহইয়া আল-ক্বাত্তান তার থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তবে আমার মতে তার হাদীছের মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে’।[14]
(২) আমর ইবনু আলী বলেন, ‘আব্দুর রহমান (অর্থাৎ ইবনু মাহদী) কখনো তার থেকে কিছু বর্ণনা করেছেন বলে আমি শুনিনি’।
(৩) আবু হাতিম বলেন, فيه لين، يكتب حديثه ولا يحتج به ‘তার হাদীছে দুর্বলতা রয়েছে। তার হাদীছ লেখা যাবে তবে দলীল হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না’।
(৪) ইবনু হিববান বলেন, كان ممن ينفرد عن أبيه بما لا يةابع عليه مع فحش الخطأ في روايةه، لا يجوز الاحةجاج بخبره إذا انفرد، كان يحيى القطان يحدث عنه، وكان محمد بن إسماعيل البخاري ممن يحةج به في كةابه ويةرك حماد بن سلمة ‘তিনি এককভাবে এবং ভুল সহকারে স্বীয় পিতা থেকে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন, যার কোন মুতাবি‘ নেই। এককভাবে বর্ণনা করলে তার হাদীছ থেকে দলীল গ্রহণ জায়েয হবে না। তবে ইয়াহইয়া আল-ক্বাত্তান আব্দুর রহমান থেকে হাদীছ বর্ণনা করতেন। ইমাম বুখারী স্বীয় কিতাবে তার হাদীছ দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন। আর হাম্মাদ ইবনু সালামা তাকে পরিত্যাগ করেছেন।[15]
(৫) ইবনু ‘আদী তার জীবনী বর্ণনা শেষে তার বর্ণিত কয়েকটি হাদীছ উল্লেখ করার পর বলেন, بعض ما يرويه منكر لا يتابع عليه، وهو في جملة من يكتب حديثه من الضعفاء ‘তার বর্ণিত কিছু হাদীছ মুনকার, যার কোন মুতাবি‘ নেই। আর তিনি এমন যঈফ রাবীদের অন্তর্ভুক্ত, যাদের হাদীছ লেখা যায়’।
(৬) দারাকুৎনী বলেন, خالف فيه البخاري الناس، وليس بمتروك ‘তার ব্যাপারে ইমাম বুখারী অন্য সবার মুখালাফা করেছেন। তবে তিনি মাতরূক নন।[16]
(৭) যাহাবী তাকে স্বীয় ‘যু‘আফা’ গ্রন্থে এনেছেন এবং বলেছেন সে বিশ্বস্ত। তারপর বলেছেন, ইবনু মা‘ঈন বলেন, তার হাদীছে দুর্বলতা রয়েছে।
(৮) ইবনু হাজার সকল মন্তব্যের সারসংক্ষেপ টেনে স্বীয় তাক্বরীবে বলেন, আব্দুর রহমান ইবনু আব্দিল্লাহ ‘সত্যবাদী তবে ভুলকারী’ (صدوق يخطىء)।[17]
আলবানী বলেন, উক্ত মন্তব্যসমূহ ইবনুল মাদীনীর বক্তব্য صدوق বা সত্যবাদী’ এবং বাগাবীর মন্তব্য ‘صالح الحديث’-এর বিরোধী নয়। কেননা সত্যবাদিতা মুখস্থশক্তির দুর্বলতার সাথে সঙ্গতিহীন নয় (অর্থাৎ কেউ মুখস্থের ক্ষেত্রে দুর্বল হলেও সত্যবাদী হ’তে পারেন)। আর বাগাবীর উক্ত বক্তব্য শায। কেননা তা পূর্বে বর্ণিত মন্তব্যসমূহের বিরোধী এবং তারা তার চেয়ে অধিক বিজ্ঞ। সম্ভবত একারণেই হাফেয ইবনু হাজার বাগাবীর মন্তব্য ফাৎহুল বারীর ভূমিকায় আব্দুর রহমানের জীবনীতে উল্লেখ করেননি। বরং দারাকুৎনীসহ অন্যান্য সমালোচনাকারীদের মন্তব্য উল্লেখ করেছেন। তিনি উক্ত রাবীর মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে কেবল এ মন্তব্যটি উল্লেখ করতে সক্ষম হয়েছেন যে, يكفيه رواية يحيى القطان عنه ‘তার থেকে ইয়াহইয়া আল-কাত্তান হাদীছ বর্ণনা করেছেন, এটাই তার জন্য যথেষ্ট’। তিনি আব্দুর রহমান থেকে আরেকটি হাদীছ উল্লেখ করেছেন, যেটির ব্যাপারে দারাকুৎনী ইমাম বুখারীর সমালোচনা করছেন। কেননা সেখানে আব্দুর রহমান এককভাবে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন। দারাকুৎনী বলেন, এ অংশটুকু আব্দুর রহমান ব্যতীত কেউ বলেননি। এর অন্য বর্ণনাকারীগণ তার চেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য। তবে হাদীছটির বাকী অংশ ছহীহ। ইবনু হাজার দারাকুৎনীর মন্তব্যের উপর কিছু বলেননি। বরং তাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
মোদ্দাকথা উক্ত রাবীর দুর্বলতার ব্যাপারে ইমামগণের উক্ত ঐক্যমত সম্পর্কে জানার পর এ ব্যাপারে কোন গবেষক চুপ থাকতে পারবে না বা কোন ইনছাফকারী সন্দেহে পতিত হবে না। নিম্নে আরো কিছু আলোচনা পেশ করা হ’ল যা উপরের বক্তব্যকে আরো মজবূত করবে।
২য় ত্রুটি : হাদীছটি মারফূ‘ সূত্রে বর্ণনা করায় তা ইমাম মালেকের বর্ণনার বিপরীত হয়েছে। তিনি স্বীয় ‘মুওয়াত্ত্বা’য় হাদীছটি عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ عَنْ أَبِي صَالِحٍ السَّمَّانِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ থেকে মাওকূফ সূত্রে বর্ণনা করেছেন এবং في الجنة শব্দটি বৃদ্ধি করেছেন। ইমাম মালিক কর্তৃক অতিরিক্ত অংশসহ মাওকূফ সূত্রের উক্ত বর্ণনাটি তাকীদ করে যে, আব্দুর রহমান হাদীছটি সঠিকভাবে মুখস্থ করেননি। ফলে সনদে কিছু বৃদ্ধি করে তিনি মারফূ‘ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু মতনের মধ্যে ‘মুখস্থের ক্ষেত্রে পাহাড় সম’ ইমাম মালেকের অতিরিক্ত বর্ণনাটুকু কমিয়ে দিয়েছেন।
এছাড়া তার মুখস্থশক্তির ঘাটতির আরেকটি দলীল হ’ল, হাদীছটির শেষে কিছু অতিরিক্ত অংশ রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, وَإِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللَّهِ لاَ يُلْقِى لَهَا بَالاً يَهْوِى بِهَا فِى جَهَنَّمَ। একই হাদীছ শায়খাইন অন্য তুরুকে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে মারফূ‘ সূত্রে সংকলন করেছেন। তবে সেখানে তিনি অতিরিক্ত বলেছেন, مَا يَتَبَيَّنُ فِيهَا يَزِلُّ بِهَا فِى النَّارِ أَبْعَدَ مِمَّا بَيْنَ الْمَشْرِقِ والمغرب। একই হাদীছ তিরমিযীর নিকটে لا يرى بها بأسا يهوي بها سبعين خريفا في النار শব্দে হাদীছটি হাসান।
পরিশেষে আলবানী (রহঃ) বলেন, فقط أطلت الكلام على هذا الحديث وراويه دفاعا عن السنة ولكي لا يتقول متقول، أويقول قائل من جاهل أوحاسد أومغرض: إن الألباني قد طعن في " صحيح البخاري " وضعف حديثه، فقد تبين لكل ذي بصيرة أنني لم أحكم عقلي أو رأيي كما يفعل أهل الأهواء قديما وحديثا، وإنما ةمسكة بما قاله العلماء في هذا الراوي وما ةقةضيه قواعدهم في هذا العلم الشريف ومصطلحه من رد حديث الضعيف، وبخاصة إذا خالف الثقة ‘আমি কেবল সুন্নাহর প্রতিরক্ষার জন্য উক্ত হাদীছটি ও তার রাবী সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা পেশ করলাম। যেন কোন মিথ্যারোপকারী অপবাদ দিতে বা কোন মূর্খ, হিংসুক ও মতলববাজ বলতে না পারে যে, আলবানী ছহীহ বুখারীর সমালোচনা করেছে এবং তার হাদীছকে যঈফ সাব্যস্ত করেছে। আমার আলোচনার পর প্রত্যেক চক্ষুষ্মান ব্যক্তির নিকটে স্পষ্ট হবে যে আমি আমার নিজস্ব জ্ঞান ও মতামতের ভিত্তিতে এ হুকুম পেশ করিনি। যেমনটি পূর্বের ও পরবর্তীদের মধ্যে প্রবৃত্তি পূজারী লোকেরা করে এসেছে। আমি কেবল উক্ত রাবী সম্পর্কে বিদ্বানগণের মন্তব্য এবং যঈফ হাদীছ গ্রহণ না করা বিশেষত ছিক্বাহ রাবীর সাথে মুখালাফাতের ক্ষেত্রে ইলমুল হাদীছ ও মুছত্বালাহুল হাদীছের নীতিমালাসমূহ তুলে ধরেছি’।[18]
পর্যালোচনা :
প্রথমতঃ রাবী আব্দুর রহমানকে আলবানী কর্তৃক দুর্বল সাব্যস্তকরণ সম্পর্কে বলা যায় যে, তার স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে কিছু বিদ্বান সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তাকে গ্রহণযোগ্য সাব্যস্তকারীর সংখ্যাও কম নয়। বিশেষত ইয়াহইয়া ইবনু মা‘ঈন তার মধ্যে দুর্বলতা আছে বলার পর একথাও বলেছেন যে, ‘ইয়াহইয়া আল-ক্বাত্তান তার থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন এবং তার থেকে ইয়াহইয়ার রেওয়ায়াত করাটাই তার জন্য যথেষ্ট’।[19] এছাড়া আহমাদ ইবনু হাম্বল তার ব্যাপারে বলেছেন, لا بأس به، مقارب الحديث ‘তার ব্যাপারে কোন সমস্যা নেই, সে মুক্বারিবুল হাদীছ’।[20] স্বয়ং আলবানী অন্য একটি হাদীছের তাহক্বীক্বে এই রাবীর হাদীছকে ছহীহ এবং রাবীকে হাসান সাব্যস্ত করেছেন। যেমন তিনি বলেন, ‘আব্দুর রহমান ইবনু ‘আব্দিল্লাহর হাদীছ যদিও ইমাম বুখারী গ্রহণ করেছেন, কিন্তু তিনি সমালোচিত রাবী। তবে ইমাম যাহাবী স্বীয় ‘মীযান’-এ তাকে ছালিহুল হাদীছ এবং বিশ্বস্ত বলেছেন। আর ‘তাক্বরীবে’ বলা হয়েছে, তিনি সত্যবাদী কিন্তু ভুল করেন। সুতরাং ইনশাআল্লাহ তিনি হাসানুল হাদীছ’(فهو حسن الحديث إن شاء الله) ।[21] অন্যত্র তিনি বলেন, তার মত রাবীর হাদীছকে হাসান বলা যায়, কিন্ত ছহীহ নয়।[22]
উপরের আলোচনা থেকে বিশেষত উক্ত রাবী সম্পর্কে অন্য তাহক্বীক্বে আলবানীর বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, আলোচ্য রাবী থেকে বর্ণিত যে হাদীছকে মুজতাহিদ ইমামগণ ছহীহ সাব্যস্ত করবেন, তা গ্রহণ করা যাবে। যেমনটি আলবানী ছহীহ সাব্যস্ত করেছেন। অতএব একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, ইমাম বুখারী যেহেতু আলোচ্য হাদীছটি উক্ত রাবী থেকে গ্রহণ করেছেন, সেহেতু তা গ্রহণযোগ্য সাব্যস্ত করায় কোন বাধা নেই।
দ্বিতীয়তঃ বেলাল ইবনু হারিছ আল-মুযানী থেকে আলোচ্য হাদীছের মারফূ‘ শাহেদ রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, إن الرجل ليتكلم بالكلمة من .... إلى يوم يلقاه، وإن الرجل ليتكلم بالكلمة من سخط ... إلى يوم يلقاه। যাকে আলবানী, ইমাম হাকেম, তিরমিযী প্রমুখ বিদ্বান ছহীহ বলেছেন।[23] এছাড়া আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীছটির إن العبد ليتكلم بالكلمة من سخط الله لا يلقي لها بالا يهوي بها في جهنم এই অংশটুকু আলবানী ‘ছহীহুত তারগীব’ গ্রন্থে ছহীহ লাগাইরিহী বলেছেন।[24] উপরন্তু ইমাম বুখারী এই রেওয়ায়াতটিকে মূল দলীল হিসাবে নয়, বরং মূল দলীলের শাহেদ হিসাবে পেশ করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে মূল হাদীছটি উল্লেখ করার পর সমার্থবোধক হওয়ায় ব্যাখ্যাস্বরূপ এই হাদীছটি উল্লেখ করেছেন।
এক্ষণে সার্বিক বিবেচনায় উক্ত হাদীছের ব্যাপারে ইমাম বুখারীর সিদ্ধান্তই অগ্রাধিকারযোগ্য। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।[25]
খ. ইদরাজগত সমালোচনা :
عن أَبِى هُرَيْرَةَ رضـ قال سَمِعْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : إِنَّ أُمَّتِى يَأْتُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ أَثَرِ الْوُضُوءِ فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ-
আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘ক্বিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে যে, ওযূর চিহ্ন হিসাবে তাদের হাত-পা ও মুখমন্ডল থাকবে উজ্জ্বল। তাই তোমাদের মধ্যে যে এই উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে’।[26]
হাদীছটি বুখারী, মুসলিম, ইবনু মাজাহ, নাসাঈ প্রভৃতি গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। উক্ত হাদীছটির ব্যাপারে আলবানী বলেন, হাদীছটির শেষ অংশটুকু মুদরাজ। তথা প্রথমাংশ মারফূ‘ সূত্রে বিশুদ্ধ। কিন্তুفَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ অংশটুকু আবূ হুরায়রার বক্তব্য। সনদের মধ্যস্থিত কোন রাবী মারফূ‘-এর সাথে মিলিয়ে দিয়েছেন। বিস্তারিত আলোচনা নিম্নরূপ :
ইমাম বুখারী, বায়হাক্বী ও আহমাদ হাদীছটি لَيْثٌ عَنْ خَالِدِ بْنِ يَزِيدَ عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِى هِلاَلٍ عَنْ نُعَيْمٍ الْمُجْمِرِ সূত্রে বর্ণনা করেছেন-رَقِيتُ مَعَ أَبِى هُرَيْرَةَ عَلَى ظَهْرِ الْمَسْجِدِ وَعَلَيْهِ سَرَاوِيلُ مِنْ تَحْتِ قَمِيصِهِ فَنَزَعَ سَرَاوِيلَهُ ثُمَّ تَوَضَّأَ وَغَسَلَ وَجْهَهُ وَيَدَيْهِ وَرَفَعَ فِى عَضُدَيْهِ الْوُضُوءَ وَرِجْلَيْهِ فَرَفَعَ فِى سَاقَيْهِ ثُمَّ قَالَ إِنِّى سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُول্ُর إِنَّ أُمَّتِى يَأْتُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنْ آثَارِ الْوُضُوءِ فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ- তবে বুখারীর বর্ণনায় পায়জামা, কামীছ, মুখ ও দু’হাত ধোয়ার কথা আসেনি।
ইমাম মুসলিম ও বায়হাক্বী عَمْرُو بْنُ الْحَارِثِ عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِى هِلاَلٍ عَنْ نُعَيْمٍ الْمُجْمِرِ সূত্রে একই হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তবে ইবনু আবী হিলাল ইমাম আহমাদের নিকটে মুখতালাত্ব রাবী।
ইমাম আহমাদ فُلَيْحُ بْنُ سُلَيْمَانَ عَنْ نُعَيْمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْمُجْمِرِ সূত্রে উক্ত হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। তবে শেষে তিনি বৃদ্ধি করেছেন যে, নু‘আইম বলেন, আমি জানি না যে فَمَنِ اسْتَطَاعَ ... فَلْيَفْعَلْঅংশটুকু রাসূল (ছাঃ)-এর বক্তব্য না আবূ হুরায়রার।
আলবানী বলেন, فُلَيْحُ بْنُ سُلَيْمَانَ শায়খাইনের রাবী হওয়া সত্ত্বেও হিফযের দিক দিয়ে তার দুর্বলতা রয়েছে। রাসূল (ছাঃ)-এর বক্তব্যের ব্যাপারে তার এ সন্দেহ ‘আমি জানি না যে فَمَنِ اسْتَطَاعَ .... فَلْيَفْعَلْ অংশটুকু রাসূল (ছাঃ)-এর বক্তব্য না আবূ হুরায়রার’ তার দুর্বল হিফযের প্রতি ইঙ্গিত করে। যেমন হাফেয ইবনু হাজার স্বীয় ফৎহুল বারীতে বলেন, وَلَمْ أَرَ هَذِهِ الْجُمْلَةَ فِي رِوَايَةِ أَحَدٍ مِمَّنْ رَوَى هَذَا الْحَدِيثَ مِنَ الصَّحَابَةِ وَهُمْ عَشَرَةٌ وَلَا مِمَّنْ رَوَاهُ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ غَيْرَ رِوَايَةِ نُعَيْمٍ هَذِهِ وَاللهُ أَعْلَمُ ‘আমি হাদীছের এই অংশটুকু হাদীছটির বর্ণনাকারী ১০ জন ছাহাবীর কারো রেওয়ায়াতে দেখিনি। এমনকি আবূ হুরায়রা থেকে যারা হাদীছটি বর্ণনা করেছেন নু‘আইম ব্যতীত কেউ এটা যুক্ত করেননি’।[27]
আলবানী বলেন, তবে ইবনু হাজার ليث عن كعب عن أبي هريرة সূত্রে উক্ত হাদীছের আরেকটি বর্ণনার খোঁজ পাননি। যেখানে فَمَنِ اسْتَطَاعَ ... فَلْيَفْعَلْ বাক্যটি যোগে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আহমাদ হাদীছটি সংকলন করেছেন।
তিনি বলেন, একাধিক হাফেযুল হাদীছ আবূ হুরায়রার উক্ত বক্তব্যটিকে মুদরাজ সাব্যস্ত করেছেন। যেমন হাফেয মুনযিরী বলেন, বলা হয়ে থাকে যে, অংশটুকু আবূ হুরায়রা থেকে মাওকূফ সূত্রে বর্ণিত মুদরাজ। এটা কয়েকজন হাফেযুল হাদীছ থেকে বর্ণিত হয়েছে।
আলবানী বলেন, কয়েকজন মুহাক্কিক বিদ্বানও উক্ত অংশটিকে মুদরাজ সাব্যস্ত করেছেন। যেমন শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ এবং তাঁর ছাত্র ইবনুল ক্বাইয়িম। ইবনুল ক্বাইয়িম বলেন, হাদীছের মধ্যস্থিত এ অতিরিক্ত অংশটুকু আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত মুদরাজ বাক্য; রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী নয়। এটা কয়েকজন হাফেয থেকে বর্ণিত হয়েছে। আমাদের শায়েখ (ইবনু তায়মিয়াহ) বলেন, এটি রাসূল (ছাঃ)-এর উক্তি হওয়া অসম্ভব। কেননা উজ্জলতা কখনো হাতে হয় না। তা মুখমন্ডল ব্যতীত অন্য কোথাও পরিদৃষ্ট হয় না। আর তা বাড়িয়ে নেওয়ার বিষয়টিও সম্ভব নয়। বিশেষত যখন তা মাথার ক্ষেত্রে বলা হবে। আর তাকে উজ্জলতাও বলা হয় না।[28]
আলবানী বলেন, পূর্বে বর্ণিত ইবনু হাজারের বক্তব্য থেকে বুঝা যায় তিনি এটিকে মুদরাজ হিসাবে জানতেন। অতঃপর তিনি ইবনু আবী শায়বাহ ও ছহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা থেকে কাছাকাছি মর্মে আরো দু’টি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। যেখানে উক্ত অংশটুকু যুক্ত হয়নি।
আলোচনার শেষাংশে আলবানী বলেন, আমাদের পূর্ববর্তী তাহক্বীক্ব থেকে স্পষ্ট হয় যে, উক্ত অংশটুকু আবু হুরায়রা থেকে (মারফূ‘ সূত্রে) প্রমাণিত নয়। বরং তা তার নিজস্ব বক্তব্য।[29]
পর্যালোচনা :
প্রথমতঃ ছহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা কর্তৃক উক্ত হাদীছটির বর্ণনায় পায়জামা, কামীছ, মুখ ও দু’হাত ধোয়ার কথা এসেছে। কিন্তু বুখারীর বর্ণনায় তা আসেনি। অথচ সকল ক্ষেত্রে তা নু‘আইম থেকে বর্ণিত হয়েছে। যা থেকে বুঝা যায় ছহীহ মুসলিমে সংকলিত অতিরিক্ত অংশটুকু ইমাম বুখারীর শর্তানুযায়ী না হওয়ায় তিনি তা সংকলন করেননি। কিন্তুفَمَنِ اسْتَطَاعَ ... فَلْيَفْعَلْ অংশটুকু তাঁর শর্তাধীন হওয়ায় তিনি তা সংকলন করেছেন।
দ্বিতীয়তঃ ছহীহ মুসলিমে বাবসমূহের অধীনে হাদীছ সংকলনের ক্ষেত্রে ইমাম মুসলিমের মানহাজ হ’ল- প্রথমে তিনি সর্বাধিক বিশুদ্ধ হাদীছ উল্লেখ করেন, তারপর ছহীহ, তারপর সে বিষয়ে কোন ‘ইল্লতযুক্ত হাদীছ থাকলে তা দিয়ে বাব সমাপ্ত করেন। কিন্তু আলোচ্য হাদীছের ক্ষেত্রে তিনি কোন ‘ইল্লতের প্রতি ইঙ্গিত করেননি। বরং একই হাদীছের দু’টি সূত্র উল্লেখ করেছেন, যার একটি ইমাম বুখারীও সংকলন করেছেন।
তৃতীয়তঃ উক্ত হাদীছটি আরেকটি সূত্রে অর্থাৎ مطلب بن زياد عن ليث عن طاوس عن أبي هريرة থেকে বর্ণিত হয়েছে, যেটি সম্পর্কে ইবনু আবী হাতিমকে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি একে ইদরাজের দোষে অভিযুক্ত করেননি। একই হাদীছের আরো দু’টি সূত্র তথা عن أبي صالح عن أبي هريرة এবং عن أبي الةياح عن أبي زرعة عن أبي هريرة সম্পর্কে দারাকুৎনীকে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনিও এর মধ্যে অতিরিক্ত কোন সংযোজনের প্রতি ইঙ্গিত করেননি বা তাকে ইদরাজের দোষে অভিযুক্ত করেননি। আর উক্ত দুই ছহীহ সূত্র দ্বারা বুঝা যায় যে, ইবনু হাজারের বক্তব্য ‘আবূ হুরায়রা থেকে যারা হাদীছটি বর্ণনা করেছেন নু‘আইম ব্যতীত কেউ এটা যুক্ত করেননি’ পুরোপুরি সঠিক নয়। কেননা أبو صالح -এর সূত্রটি আবু নু‘আইমের হাদীছের মুতাবি‘ হিসাবে গণ্য হবে। এছাড়া হাফেয ‘ইরাক্বী ইহইয়াউ উলূমিদ্দীনের উপর কৃত স্বীয় তাহক্বীক্ব গ্রন্থে হাদীছটিকে ইদরাজের দোষে অভিযুক্ত করেননি।
চতুর্থতঃ আলবানী বুখারীর বর্ণনাকারী ফুলাইহ ইবনু সালমানের হিফযগত দুর্বলতার কথা বলেছেন। অথচ তার সূত্রেই নু‘আইমের মন্তব্যটি (আমি জানি না যে فَمَنِ اسْتَطَاعَ فَلْيَفْعَلْ... অংশটুকু রাসূল (ছাঃ)-এর বক্তব্য না আবু হুরায়রার) এসেছে। তাই ফুলাইহের ব্যাপারে তাঁর এ মন্তব্যের ভিত্তিতে উক্ত অংশটুকু মুদরাজ সাব্যস্ত করা সঠিক নয়।
অতএব আলবানীর এ মুদরাজ সাব্যস্তকরণ এখানে অগ্রগণ্য হবে না। কারণ ইদরাজ সাব্যস্তের পিছনে শক্তিশালী দলীল থাকা আবশ্যক। যা আলবানীর আলোচনায় অনুপস্থিত। মূলতঃ ইবনু হাজার, মুনযিরী, ইবনু তায়মিয়াহ ও ইবনুল ক্বাইয়িমের মন্তব্যের ভিত্তিতে তিনি এদিকে অগ্রসর হয়েছেন। অতএব উক্ত অংশটুকু রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী হিসাবে গণ্য করাই অধিকতর সঠিক সিদ্ধান্ত বলে প্রতীয়মান হয়।[30]
গ. শায সাব্যস্তকরণ :
‘ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم تَزَوَّجَ مَيْمُونَةَ وَهُوَ مُحْرِمٌ রাসূল (ছাঃ) ইহরাম অবস্থায় মায়মূনা (রাঃ)-কে বিবাহ করেছিলেন’।[31]
উক্ত হাদীছের ব্যাপারে আলবানী বলেন, নিঃসন্দেহে রাসূল (ছাঃ) মায়মূনা (রাঃ)-কে হালাল অবস্থায় বিবাহ করেছিলেন। বিষয়টি স্বয়ং মায়মূনা (রাঃ) থেকে প্রমাণিত। সেকারণে মুহাক্কিক মুহাম্মাদ ইবনু আব্দিল্লাহ আল-হাদী স্বীয় تنقيح التحقيق -এ ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণিত উক্ত হাদীছটি সম্পর্কে বলেন, এটি বুখারীতে সংঘটিত ভুলসমূহের অন্যতম হিসাবে গণ্য হয়। মায়মূনা নিজেই সংবাদ দিয়েছেন যে, ঘটনাটি এমন নয়।[32]
তিনি বলেন,أن حديث ابن عباس مع كونه فى صحيح البخاري فهو غريب بمعنى ضعيف، لا من حيث الرواة الذين رووا هذا الحديث فى صحيح البخارى أنهم ضعفاء أو كذابون، لا، وإنما انه لم ينج الراوي من الخطأ بدليل الطرق الأخرى التي جاءت عن صاحبة القصة نفسها وهى ميمونة ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত হওয়া সত্ত্বেও হাদীছটি যঈফ অর্থে গরীব। এটা রাবীদের দিক থেকে নয় যে, বুখারীতে যারা হাদীছটি বর্ণনা করেছেন তারা দুর্বল বা মিথ্যাবাদী। বরং রাবী উক্ত ঘটনাটি বর্ণনার ক্ষেত্রে নিজেকে ভুল থেকে রক্ষা করতে পারেননি, যা অন্য সূত্র সমূহ থেকে বর্ণিত মায়মূনা (রাঃ)-এর নিজস্ব বক্তব্য থেকে জানা যায়।[33] তিনি বলেন, হাদীছের সনদ ছহীহ হ’লেও মতন যে কখনও শায বা মুনকার হ’তে পারে ইবনু আববাসের অত্র হাদীছটি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সাধারণ দৃষ্টিতে এটি ছহীহ। কিন্তু যখন সকল তুরুক একত্রিত করা হবে তখন এর মধ্যকার ‘ইল্লত ও শুযূয স্পষ্ট হবে। সেকারণে ইবনু ‘আব্দিল বার্র, ইবনু তায়মিয়াহ, ইবনুল ক্বাইয়িমসহ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বহু বিদ্বান এ হাদীছকে মুনকার সাব্যস্ত করেছেন। তারা বলেছেন সনদের মধ্যস্থিত কোন রাবী এখানে ভুল করেছেন। কেননা মায়মূনা স্বয়ং ছহীহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (ছাঃ) তাকে হালাল অবস্থায় বিবাহ করেছেন।[34]
পর্যালোচনা :
প্রথমতঃ ইবনু আববাস (রাঃ)-এর উক্ত বর্ণনাটি সম্পর্কে সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রহঃ) বলেন,وهم ابن عباس في تزويج ميمونة وهو محرم রাসূল (ছাঃ) মায়মূনাকে ইহরাম অবস্থায় বিবাহ করেছিলেন মর্মে ইবনু আববাসের বক্তব্যটি ভুল।[35]
দ্বিতীয়তঃ ইমামগণ ইবনু আববাসের হাদীছকে মারজূহ হিসাবেই আখ্যায়িত করেছেন। যেমন ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপারে আবু রাফে‘ বর্ণিত (রাসূল (ছাঃ) মায়মূনা (রাঃ)-কে হালাল অবস্থায় বিবাহ করেছেন) হাদীছটি ইবনু আববাসের হাদীছের উপর কয়েকটি কারণে অগ্রগণ্য। যেমন (১) হাদীছটি বর্ণনার সময় ইবনু আববাস (রাঃ) দশ বছরের বালক ছিলেন। যখন আববাস (রাঃ)-এর গোলাম আবু রাফে‘ পূর্ণ যুবক ছিলেন। সঙ্গত কারণে আবু রাফে‘ তার চেয়ে নিরাপদ। (২) আবু রাফে‘ যেহেতু বিয়ের ঘটক ছিলেন, সেহেতু ইবনু আববাস অপেক্ষা তার বেশী জানাটাই যুক্তিসম্মত...। (৩) তাছাড়া ওমরা পালনের সময় ইবনু আববাস (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছিলেন না। তখন তিনি মক্কায় দুর্বল ছাহাবীগণের মাঝে অবস্থান করছিলেন। উক্ত হাদীছটি তিনি পরে শুনে বর্ণনা করেছেন। (৪) ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীছটি ‘ইহরাম অবস্থায় বিবাহ নিষিদ্ধ’ হওয়ার ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) বর্ণিত কওলী হাদীছের বিপরীত হওয়ায় তা গ্রহণীয় হবে না’।[36]
একই বক্তব্য পেশ করেছেন ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ, মানাবী, ইবনু রজব প্রমুখ বিদ্বান।[37]
তৃতীয়তঃ শারঈ নীতি অনুযায়ী ইহ্রাম অবস্থায় বিবাহ করা বা বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া উভয়টি নিষিদ্ধ। এ অবস্থায় কেউ বিবাহ করলে বিবাহ শুদ্ধ হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ইহরাম অবস্থায় কোন ব্যক্তি নিজে বিবাহ করবে না, অন্যকেও বিবাহ করাবে না এবং বিবাহের প্রস্তাবও দিবে না’।[38] অতএব সঠিক কথা হ’ল রাসূল (ছাঃ) মায়মূনা (রাঃ)-কে ইহরাম অবস্থায় বিবাহ করেননি। কারণ মায়মূনা (রাঃ)-এর নিজস্ব বক্তব্য, রাসূল (ছাঃ) তাকে বিবাহ করেন এমন অবস্থায় যে, তিনি হালাল ছিলেন।[39] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘রাসূল (ছাঃ) আমাকে ‘সারিফ’ নামক স্থানে বিয়ে করেছেন। তখন আমরা উভয়ে হালাল অবস্থায় ছিলাম’।[40] রাসূল (ছাঃ)-এর খাদেম আবু রাফে‘ বলেন, রাসূল (ছাঃ) মায়মূনা (রাঃ)-কে হালাল অবস্থায় বিবাহ করেছেন এবং হালাল অবস্থায় বাসর করেছেন। আমিই ছিলাম তাদের বিবাহের ঘটক।[41] এসকল হাদীছ থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, রাসূল (ছাঃ) ইহরাম অবস্থায় বিবাহ করেননি। ছহীহ বুখারীর বর্ণনায় ইবনু আববাস (রাঃ) ভুল করেছেন। অতএব উক্ত হাদীছের ব্যাপারে আলবানীর সিদ্ধান্তই অগ্রগণ্য। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।
তবে ইবনু হিববান হাদীছগুলোর মাঝে অন্যভাবে সমন্বয় সাধনের প্রয়াস পেয়েছেন। তাঁর মতে, ‘রাসূল (ছাঃ) মায়মূনা (রাঃ)-কে বিবাহ করেছেন মুহরিম অবস্থায়’-এ হাদীছ দ্বারা ইবনু আববাস (রাঃ) তাঁদের হারাম এলাকার মধ্যে থাকার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, মুহরিম (ইহরাম পরিহিত) অবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করেননি। ভাষার এরূপ ব্যবহার আরবদের মাঝে প্রচলিত রয়েছে। যেমন কেউ নজদ এলাকায় প্রবেশ করলে তাকে বলা হয় أنجد। কেউ অন্ধকার স্থানে প্রবেশ করলে বলা হয় أظلم। অতএব ‘মুহরিম’ শব্দ দ্বারা রাসূল (ছাঃ) এসময় যে হারাম এলাকার মধ্যে ছিলেন সেকথা বুঝানো হয়েছে।[42] (ক্রমশঃ)
[1]. ড. মাহমূদ সাঈদ মামদূহ, তানবীহুল মুসলিম ইলা তা‘আদ্দীল আলবানী ‘আলা ছহীহ মুসলিম (কায়রো : মাকতাবাতুল মুজাল্লাদিল ‘আরাবী, ২য় প্রকাশ, ২০১১ খ্রি.)।
[2]. আহমাদ ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া, (বৈরূত : দারুল ওয়াফা, ৩য় প্রকাশ, ২০০৫ খ্রি.), ১৮/৭৪।
[3]. নববী, আল-মিনহাজ ‘আলা শারহি মুসলিম, ১/১৪; ইবনুছ ছালাহ, আল-মুক্বাদ্দিমা, পৃ. ৯৭; মুহাম্মাদ ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী, আল হিত্তাহ ফি যিকরিছ ছিহাহ আস-সিত্তাহ, পৃ. ১৬৮।
[4]. আবুল হাসান আদ-দারাকুৎনী, আল-ইলতিযামাত ওয়াত তাতাববু‘, তাহক্বীক : মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদে‘ঈ (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিইয়াহ, ২য় প্রকাশ ১৪০৫হি./১৯৮৫ খ্রি.), পৃ. ১১৯।
[5]. হুসাইন ইবনু মুহাম্মাদ আল-গাসসানী, তাকঈদুল মুহমাল ওয়া তামঈযুল মুশকিল (আলজেরিয়া : অযারাতুল আওক্বাফ, প্রকাশকাল : ১৯৯৭ খ্রি.)।
[6]. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া, ১/২৫৬।
[7]. ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী, ৩/২৮৭, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২/২১৩।
[8]. যয়নুদ্দীন ‘ইরাক্বী, আত-তাকঈদ ওয়াল ঈযাহ শারহি মুক্বাদ্দামাতি ইবনিছ ছালাহ (মদীনা : আল-মাকতাবাতুস সালাফিইয়াহ, ১ম প্রকাশ, ১৩৮৯ হি./১৯৬৯ খ্রি.), পৃ. ৩৩।
[9]. তাজুদ্দীন আস-সুবক্বী, তাবাকাতুশ শাফি‘ঈয়াহ আল-কুবরা, (জীযাহ : দারু হিজর, ২য় প্রকাশ, ১৯৯২ খ্রি.), ১০/১১৫-১২০, ৪২৫।
[10]. আবূ জা‘ফর আত-তাহাবী, শারহু মা‘আনিল আছার, (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিইয়াহ, ১ম প্রকাশ, ১৯৯৯ হি.), ৪/১৪৫।
[11]. ইবনু আবীল ইয আল-হানাফী, শারহুল ‘আক্বীদাতিত ত্বাহাবিয়াহ, তাখরীজ : আলবানী, পৃ. ২২-২৩, টীকা দ্রষ্টব্য।
[12]. সিলসিলা যঈফাহ, ৩/৪৬৫।
[13]. বুখারী হা/৬৪৭৮; মিশকাত হা/৪৮১৩।
[14]. উক্বাইলী, আয-যু‘আফাউল কাবীর ২/৩৩৯, হা/৯৩৬।
[15]. ইবনু হিববান, আল-মাজরূহীন ২/৫২।
[16]. ইবনু হাজার, তাহযীবুত তাহযীব ৬/১৮৭।
[17]. ইবনু হাজার, তাক্বরীবুত তাহযীব, পৃ. ৩৪৪।
[18]. সিলসিলা যঈফাহ, ৩/৪৬৫, হা/১২৯৯।
[19]. তাহযীবুত তাহযীব, ৬/২০৬, রাবী নং ৪২২।
[20]. আবুল মু‘আত্বা আন-নূরী, মাওসূ‘আতু আক্বওয়ালিল ইমাম আহমাদ, (বৈরূত : ‘আলামুল কুতুব, ১ম প্রকাশ, ১৯৯৭ খ্রি.), ২/৩২৯, রাবী নং ১৫৪০।
[21]. সিলসিলা ছহীহাহ, ২/৭০০, হা/৯৯৯।
[22]. সিলসিলা ছহীহাহ, ৩/১৫, হা/১০১৮।
[23]. সিলসিলা ছহীহাহ, ২/৫৪৯, হা/৮৮৮।
[24]. আলবানী, ছহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব, ৩/৫৯, হা/২৮৭৬।
[25]. উল্লেখ্য যে, বিশিষ্ট গবেষক ড. মুহাম্মাদ হামদী মুহাম্মাদ আবূ ‘আবদুহ আলবানী কর্তৃক ছহীহুল বুখারীর যঈফকৃত হাদীছসমূহের উপর কৃত গবেষণাপত্রে উক্ত হাদীছটির ব্যাপারে বলেন, রাবী আব্দুর রহমান বিন আব্দিল্লাহ বিন দীনার-এর ব্যাপারে বিদ্বানগণের তা‘দীলের উপর জারহ অগ্রাধিকার যোগ্য। কেননা তা বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। সাথে সাথে সনদ-মতন উভয় ক্ষেত্রেই তার মুখস্থশক্তির ঘাটতি প্রমাণিত হয়েছে। তাই শক্তিশালী দলীলের কারণে উক্ত সনদের ক্ষেত্রে আলবানীর সিদ্ধান্ত অগ্রাধিকারযোগ্য। দ্র. ড. মুহাম্মাদ হামদী মুহাম্মাদ আবূ ‘আবদুহ, আল-আহাদীছ আল্লাতি যা‘আফাহাশ শায়খ আল-আলবানী ফী ছহীহিল বুখারী, ২০১০ সালে জর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের শরী‘আ অনুষদে অনুষ্ঠিত ‘ইনতিছারিছ ছাহীহাইন’ বিষয়ে আয়োজিত মহাসম্মেলনে উপস্থাপিত গবেষণাপত্র, পৃ. ১০-১৩।
[26]. বুখারী হা/১৩৬; মিশকাত হা/২৯০।
[27]. ফাৎহুল বারী, ১/২৩৬।
[28]. ইবনুল ক্বাইয়িম, হাদীউল আরওয়াহ ইলা বিলাদিল আফরাহ (বৈরুত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিইয়াহ, তাবি), পৃ. ১৩৭।
[29]. সিলসিলা যঈফাহ, ৩/১০৬।
[30]. মানহাজুল আল্লামা আলবানী ফী তা‘লীলিল হাদীছ, পৃ. ৩৩২-৩৩৫।
[31]. বুখারী, ৭/৭৮, হা/১৮৩৭; মুসলিম, ৯/১৪৩, হা/১৪১০।
[32]. আলবানী, শারহুল ‘আক্বীদাতিত ত্বাহাবিয়াহ, পৃ. ২৩।
[33]. আলবানী, সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর, অডিও রেকর্ড নং ০৭১।
[34]. ঐ, অডিও রেকর্ড নং ২২৫, ৭৩৯।
[35]. আবূদাঊদ, ১/৫৭১, হা/১৮৪৫, সনদ ছহীহ।
[36]. ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ (বৈরূত : মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ২৭তম প্রকাশ, ১৯৯৪ খ্রি.), ৫/১০২-১০৫।
[37]. ইবনু রজব, শারহু ‘ইলালিত তিরমিযী, ১/৪৪২, ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া, ১৮/৭৩, ‘আব্দুর রঊফ আল-মুনাবী, আল-ইওয়াক্বীত ওয়াদ দুরার শারহি নুখবাতিল ফিকার, (রিয়াদ : মাকতাবাতুর রুশদ, ১ম প্রকাশ, ১৯৯৯ খ্রি.), পৃ. ১/৪৭৭।
[38]. ছহীহ মুসলিম, ২/১০৩০, হা/১৪০৯।
[39]. ছহীহ মুসলিম, ২/১০৩২, হা/১৪১১।
[40]. আবূদাউদ, ৫/৪৫৭, হা/১৮৪৩, সনদ ছহীহ।
[41]. মুসনাদে আহমাদ, ৪৫/১৭৪, হা/২৭১৯৭, সনদ হাসান।
[42]. মুহাম্মাদ ইবনু হিববান, ছহীহ ইবনু হিববান, (বৈরূত : মুআসসাসাতুর রিসালা, ২য় প্রকাশ, ১৯৯৩ খ্রি.), ৯/৪৩৮।