পর্ব ১। পর্ব ২। পর্ব ৩। পর্ব ৪। পর্ব ৫। পর্ব ৬। পর্ব ৭। পর্ব ৮। পর্ব ৯। পর্ব ১০। পর্ব ১১। পর্ব ১২। পর্ব ১৩। পর্ব ১৪। পর্ব ১৫। পর্ব ১৬

মানুষের জন্মগত মর্যাদা ও অধিকার :

জাতিসংঘ সার্বজনীন মানবাধিকার সনদ : Article-1

All Human beings are born free and equal in dignity and rights. They are endowed with Reason and conscience and should act towards one another in a sprit of brotherhood.[1] ‘সব মানুষ স্বাধীনতা, সমমর্যাদা ও সমান অধিকার নিয়ে জন্মায় এবং তার বিচার বুদ্ধি ও বিবেক থাকায় তার উচিৎ ভাই-ভাইয়ের মনোভাব নিয়ে পরস্পরের সাথে সেরূপ আচরণ করা’ (অনুচ্ছেদ-১)।

উপরোক্ত অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে সকল মানুষ স্বাধীনতা, সমান মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। বিধায় কেউ কারও প্রতি কোন যুলুম বা অসদাচরণ করবে না এবং কেউ কারো কোন প্রকার মর্যাদা হানিকর কাজ করবে না।

ইসলামের আলোকে বিশ্লেষণ : আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম আদম ও হাওয়া (আঃ)-কে যথাক্রমে আদি পিতা ও মাতা হিসাবে এই ধরণীর বুকে প্রেরণ করেছিলেন। যা শুধু ইসলাম ধর্মে নয়; বরং প্রায় সকল ধর্মে ও মতে স্বীকৃত। পৃথিবীতে যখন মানব শিশু জন্মগ্রহণ করে তখন প্রত্যেক মানুষকে নিষ্পাপ সমান মর্যাদা দিয়ে প্রেরণ করা হয়, যা আল-কুরআনে সুস্পষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُم مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ-  ‘হে মানুষ! তোমরা একান্তভাবে ভয় কর তোমাদের সেই রবকে, যিনি তোমাদের একই মানব সত্ত্বা থেকে সৃষ্টি করেছেন’ (নিসা ১)

এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِّنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوْباً وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوْا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ- ‘হে মানুষ! আমরা তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, শুধু তোমাদের পারস্পরিক পরিচিতির জন্য। তবে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক আল্লাহ ভীরু ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত। আল্লাহ সবকিছুর খবর রাখেন (হুজুরাত ১৩)

উক্ত আয়াতদ্বয় থেকে বুঝা যায় যে, পৃথিবীতে যত মানুষ এসেছে তা এক পিতা ও এক মাতা তথা আদম ও হাওয়া (আঃ) থেকে এসেছে। পৃথিবীর সকল মানুষ এক ঔরসজাত ও বংশোদ্ভূত। আর মানুষকে বিভিন্ন জাতি, বর্ণ, গোত্রে বিভক্ত করা হয়েছে পারস্পরিক পরিচিতির জন্য। তা ব্যতীত মানুষের জন্মগতভাবে উঁচু-নিচু, ছোট-বড় ভাবার কোন অবকাশ নেই। এর পরেও সুদূর অতীত এবং জাহেলী যুগে মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে বিশেষ করে কুরায়েশ ও অন্যান্য জাতির মধ্যে যখন বংশগৌরব, অহংকার বোধ, ভেদাভেদ ও পার্থক্য দেখা দিল, তখন আল্লাহ তা‘আলা মানবাধিকারের শ্রেষ্ঠ রূপকার মুহাম্মাদ (ছাঃ) মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন-

يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٍ إنَّ اللهَ قَدْ أَذْهَبَ عَنْكُمْ نَخْوَةَ الْجَاهِلِيَّةِ وَتَعَظَّمَهَا بِالْآبَاءِ النَّاسُ مِنْ آدَمَ وَآدَمُ مِنْ تُرَابٍ-

‘হে কুরাইশ বংশের লোকেরা! আল্লাহ তোমাদের জাহিলী যুগের অহংকার-গৌরব ও পূর্ব বংশীয় শ্রেষ্ঠত্ব বোধকে সম্পূর্ণ নিঃশেষ করে দিয়েছেন’।[2]

এখানে রাসূল (ছাঃ)-এর আগমনের পূর্বে আরবে এবং সারা বিশ্বে মানুষের মধ্যে যে শ্রেণীবৈষম্য, জাতিভেদ ও দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার-নির্যাতন বিদ্যমান ছিল তা চুরমার করে দেয়া হয়েছে। মানুষে মানুষে যে কোন বিভেদ ও একে অপরের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পৃথিবীতে অতীতের নমরূদ, ফেরাঊনের ন্যায় অত্যাচারী শাসকদের মত আজও যারা শক্তিমত্তার যে দাবী করে থাকে তার কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই বলে প্রতীয়মান হয়। অথচ তথাকথিত মানবাধিকার রক্ষাকারী পরাশক্তিরা বিশ্ব মানবতার সাথে উল্টো কাজ করে যাচ্ছে। এখানে স্পষ্ট বাণী যে, একে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্বেরও কোন সুযোগ নেই। কারণ সবাই এক আদম সন্তান ও মাটি থেকে সৃষ্ট। একইভাবে মানুষের মৌল সৃষ্টি এক ও অভিন্ন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُم مِّنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُّطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ يُخْرِجُكُمْ طِفْلاً ثُمَّ لِتَبْلُغُوْا أَشُدَّكُمْ ثُمَّ لِتَكُونُوْا شُيُوْخاً وَمِنْكُم مَّنْ يُتَوَفَّى مِنْ قَبْلُ وَلِتَبْلُغُوْا أَجَلاً مُّسَمًّى وَلَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ-

‘তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা হ’তে, পরে শুক্রবিন্দু হ’তে, তারপর জমাট রক্তপিন্ড হ’তে, তারপর তোমাদেরকে বের করেন শিশুরূপে। অতঃপর যেন তোমরা উপনীত হও তোমাদের যৌবনে, তারপর হয়ে যাও বৃদ্ধ। আর তোমাদের মধ্যে কারো মৃত্যু ঘটে এর পূর্বেই! যাতে তোমরা নির্ধারিতকাল প্রাপ্ত হও এবং যেন তোমরা অনুধাবন করতে পার’ (মুমিন ৬৭)

অন্যত্র আল্লাহ পাক বলেন,

وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِيْ آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيْلاً-

‘আর আমরা নিঃসন্দেহে আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি এবং তাদেরকে স্থল ও জলভাগে চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তাদেরকে পবিত্র প্রকৃষ্ট দ্রব্যাদি রিযিক হিসাবে দিয়েছি। আর আমরা সৃষ্টিকুলের অনেক কিছুরই ওপর তাদেরকে অধিক মর্যাদা দিয়েছি’ (বানী ইসরাঈল ৭০)

এখানে মানুষের জন্মগত মর্যাদা, স্বাধীনতা, জীবিকা নির্বাহের ও অধিকার স্বীকৃত। কিন্তু তাই বলে পুঁজিবাদী দর্শনে একদিকে যেমন- মানুষের মর্যাদা ও সম্পদের পাহাড়সম পার্থক্য ও বৈষম্য অন্যদিকে কমিউনিজ্যম মতবাদে মর্যাদা ও অর্থনীতির পার্থক্য একবারে বিলীন করে দিয়েছে। যা প্রকৃত পক্ষে বাস্তব সম্মত ও যথার্থ নয়। কারণ মানুষের যোগ্যতা, সক্ষমতা ও অর্থনৈতিক অর্জন পৃথিবীতে যেমন উচুঁ নিচুও হ’তে পারে, তেমনি সকলের যোগ্যতা সমান হবে এমনও নয়। আল্লাহ পাক এ ব্যাপারে একটা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দিয়েছেন। এই সম্পর্কে তিনি বলেন,

قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِيْنَ يَعْلَمُوْنَ وَالَّذِيْنَ لاَ يَعْلَمُوْنَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُوْا الْأَلْبَابِ-

‘বল হে নবী! যারা শিক্ষিত জ্ঞানী আর যারা অশিক্ষিত জ্ঞানহীন তারা কি সমান হ’তে পারে? অর্থাৎ সমান নয়’ (যুমার ৯)

অর্থাৎ আমরা যেমন- একজন উচ্চ শিক্ষিত জ্ঞানী ব্যক্তির সাথে একজন মূর্খ কুলি অথবা মূর্খ শ্রমিকের তুলনা করতে পারি না; তেমনি তাদের অর্জিত অধিকার ও মর্যাদা এক রকম হ’তে পারে না। তবে মানুষ হিসাবে তারা সম মর্যাদার অধিকারী হবে। যা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অমীয় বাণী থেকে জানা যায়।

যেমন তিনি বলেন, لاَ فَضْلَ لِعَرَبِىٍّ عَلَى أَعْجَمِىٍّ وَلاَ لِعَجَمِىٍّ عَلَى عَرَبِىٍّ وَلاَ لِأَحْمَرَ عَلَى أَسْوَدَ وَلاَ أَسْوَدَ عَلَى أَحْمَرَ إِلاَّ بِالتَّقْوَى- ‘আরবের উপরে অনারবের, অনারবের উপরে আরবের, কালোর উপরে লালের এবং লালের উপরে কালোর কোন প্রাধান্য নেই, কেবল আল্লাহ ভীতি ছাড়া’।[3]

এ সম্পর্কে আল্লাহ পাক অন্যত্রে বলেন,

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوْا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوْا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ-

‘মুমিন লোকেরা পরস্পর ভাই ভাই। অতএব ভাইদের মধ্যে কল্যাণকর সম্পর্ক স্থাপন কর। আর আল্লাহকে ভয় কর। আশা করা যায়, তোমাদের প্রতি রহমত নাযিল করা হবে’ (হুজুরাত ১০)

পর্যালোচনা :

জাতিসংঘ সনদের ১নং অনুচ্ছেদের চমৎকার সমাধান ইসলামে বহু পূর্বেই ঘোষিত হয়েছে। তাঁরা কুরআনকে সঠিক গবেষণা করেনি অথবা করলেও বিক্ষিপ্তভাবে অত্যন্ত সংকীর্ণতার পরিচয় দিয়েছে।

ইসলামে যে মানবাধিকার ঘোষিত হয়েছে, কোন ধর্মে তার নযীর নেই। তাছাড়া অন্যান্য ধর্মে শ্রেণীবৈষম্য, বর্ণবাদ অত্যন্ত প্রকট। জাতিসংঘ সেদিকে নযর দিচ্ছে না। যেমন-হিন্দুদের মনুশাস্ত্রের মতে, সৃষ্টিকর্তা তার মাথা থেকে ব্রাহ্মণদেরকে, দুই হাত থেকে কায়স্তদেরকে, দুই উরু থেকে বৈষ্ণদেরকে এবং পা থেকে শুদ্রদেরকে সৃষ্টি করেন। তাই সমাজে শুদ্রদের একটাই দায়িত্ব হচ্ছে উপরস্থ তিন শ্রেণীর লোকদের সেবা করা। শুদ্রদের নিজেদের কোন অধিকার নেই। তারা পশুর চেয়েও নিম্ন মর্যাদার অধিকারী ও কুকুরের চেয়েও নিকৃষ্ট। শুদ্ররা নিজেরা কোন সম্পদ সঞ্চয় করতে পারবে না। কারণ এটা ব্রাহ্মণদেরকে কষ্ট দেয়। কোন ব্রাহ্মণ যদি কোন শুদ্রকে হত্যা করে তাহ’লে তার কোন শাস্তি হবে না। মাত্র কিছু কাফফারা দেয়া ছাড়া। কিন্তু কোন শুদ্র যদি কোন ব্রাহ্মণকে মারধর করে তাহ’লে সে শুদ্রের হাত-পা কেটে ফেলতে হবে। কেউ যদি ব্রাহ্মণের পাশে গিয়ে বসে, তাহ’লে তার উরুতে আগুনের শেক দিতে হবে এবং দেশ থেকে বিতাড়ন করতে হবে। শুদ্রদের জন্য ধর্মীয় কোন শাস্ত্র অধ্যয়ন করা বৈধ নয়।[4] শ্রেণীগত ও জাতিগত মর্যাদার বৈষম্য কত যে মারাত্মক ছিল তা প্রাচীন হিন্দু ধর্মীয় পুস্তকের এ উক্তিগুলো পড়লেই বুঝা যায়। একইভাবে অতীতে ইহুদী, খৃষ্টান, বৌদ্ধদের মধ্যে দেখা যায় জাতিগত ও মর্যাদাগত চরম বৈষম্য।

তদ্রূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন অনেক অঙ্গরাজ্য রয়েছে যেখানে স্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গের বিবাহ অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। এমনকি এরূপ বিবাহের পক্ষে যদি কেউ উৎসাহ দেয়, কোন উৎসাহব্যঞ্জক কথা ছাপিয়ে প্রচার করে, সেটা একটা অপরাধ বলে গণ্য হয়। আর সে অপরাধের শাস্তিস্বরূপ অনুর্ধ্ব পাঁচশত ডলার জরিমানা কিংবা অনুর্ধ্ব ছয় মাসের কারাদন্ড অথবা উভয় ধরনের শাস্তি হ’তে পারে।[5] যে আমেরিকা ১৭৭৬ সালে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, সেখানে ১৯৫৭ সালের পূর্বে কৃষ্ণাঙ্গদের কোন ভোটাধিকার ছিল না।

অক্সফাম-এর তথ্যানুযায়ী এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারত। অথচ বিশ্বে প্রতি চারজন ক্ষুধার্ত মানুষের মধ্যে একজন ভারতীয়। অধিক জনসংখ্যার কারণে বিশ্বে স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজনের শিশুদের মধ্যে ৪২ ভাগই ভারতে। দেশটির ৩১ ভাগ শিশুই অপুষ্টির শিকার।[6] অথচ বিশ্বের সবচেয়ে ধনীদের বসবাস এখন ভারতে।

কথিত গণতন্ত্রকামী ও বিশ্বশান্তিতে নোবেল বিজয়ী পার্শ্ববর্তী দেশ বার্মার অবিসংবাদিত নেত্রী (?) বলে পরিচিত অং সান সূচী রোহিঙ্গাদের উপর (সংখ্যালঘু মুসলমান বলে) জাতিগত হত্যা, নিপীড়ন, দেশ থেকে বের করে দেয়ার যে অমানবিক বর্বরতা দেখাচ্ছে, তা অবর্ণনীয়। এ কারণে জাতিসংঘ মিয়ানমারের প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গাকে বিশ্বের সবচেয়ে হয়রানির শিকার সংখ্যালঘু হিসাবে বর্ণনা করেছে।[7]

তদ্রূপ দক্ষিণ আফ্রিকা, উত্তর আয়ারল্যান্ড, ভারত চীন প্রভৃতি দেশে বর্ণ বৈষম্য শ্রেণীগত সংঘাতের কথা জানা যায়। কিন্তু ইসলাম এর ঘোর বিরোধী এবং মানুষের জন্মগত মর্যাদা, স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সোচ্চার ও আপোষহীন ভূমিকা রেখে চলেছে প্রায় ১৫’শ বছর ধরে। অতএব আমরা দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি যে, জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার সনদের ১নং অনুচ্ছেদটি এক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ বিধায় এটি অচল বলে প্রতীয়মান হয়। বরং মানুষের জন্মগত মর্যাদা, স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার সকল ব্যবস্থাই ইসলামে সংরক্ষিত রয়েছে।

আইনের দৃষ্টিতে সমতা (equality before law) :

জাতিসংঘ মানবাধিকার সনদ : Article-2 :

Everyone is entitled to all the rights and freedoms set forth in this Declaration, without distinction of any kind, such as race, colour, sex, language, religion, Political or other opinion, national or social origin, property, birth or other status.

Furthere more, no distinction shall be made on the basis of political, Jurisdictional or international status of the country or territory to which a person belongs, whether it be independent, trust, non-self, governing or under any other limitation of sovereignty.[8]

‘সকল প্রকার ভেদাভেদ ছাড়াই প্রত্যেকে এ ঘোষণার প্রেক্ষিতে সব ধরনের অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগের অধিকারী। এতদ্ব্যতীত স্থান কাল পাত্র ভেদে কোন প্রকার ভেদাভেদ করা যাবে না (অনুচ্ছেদ ২)

অর্থাৎ এখানে বলা হয়েছে যে, মানুষ জন্মের পর পৃথিবীতে জাতি, বর্ণ, ধর্ম মতে সকলে সমান। কোন বিষয়ে পার্থক্য বা কম-বেশী করা যাবে না বা শ্রেণীভেদ করা যাবে না সে যে জাতিরই হোক না কেন।

ইসলামের আলোকে বিশ্লেষণ : জাতিসংঘের উপরোক্ত অনুচ্ছেদের আলোচনা বহু পূর্বে ইসলামে সংরক্ষিত রয়েছে। কেননা ইসলাম বিশ্বমানবতার এক মহাসনদ, যেখানে জাতি, বর্ণ, গোত্র ভেদ, উচু-নিচু বলে কোন পরিচয় নেই। এ মর্মে পৃথিবীর সকল মানুষ একই ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ এবং আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমানভাবে তার অধিকার ভোগ করবে। এ সম্পর্কে পূর্বে কিছু আলোচনা করা হয়েছে। যেমন সূরা হুজুরাতের ১৩ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে- ‘হে মানব! আমি তোমাদের এক পুরুষ এবং এক নারী হতে সৃষ্টি করেছি এবং বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে যেন তোমরা একে অন্যকে চিনতে পার’। একই পুরুষ-নারী থেকে যারা জন্ম লাভ করে তাদের ‘পূর্ণ ভাই-বোন’ (Full brothers-sisters) বলা হয়। সুতরাং পৃথিবীর সকল মানুষ একে অন্যের ভাই-বোন। এ কথাটিই প্রতিভাত হয়েছে। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘একজন অনারবের ওপর একজন আরবের, একজন আরবের ওপর অনারবের, কালো মানুষের ওপর লাল মানুষের, লাল মানুষের ওপর কালো মানুষের আল্লাহ ভীতি ব্যতীত কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই’।[9]

মানুষ হিসাবে পৃথিবীর সকল সম্প্রদায়ের সকল মানুষের স্বাধীনতা ও আইনী অধিকার সমান, এটা কেবল ইসলামেই রয়েছে। জাতিসংঘ ইতিপূর্বে এ বাক্যের সাথে পরিচিত ছিল না। এ সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, মুহাম্মাদের মেয়ে ফাতেমাও যদি চুরি করতো, তবে আমি তাঁর হাত কেটে দিতাম।[10]

অধিকার সংরক্ষণে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে ভেদাভেদের কোন অবকাশ নেই। আবুবকর (রাঃ) খলীফার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম ভাষণে বলেছিলেন, জেনে রেখো! যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল, আমি যতক্ষণ তার অধিকার আদায় করে দিতে না পারব, ততক্ষণ সে আমার কাছে সবচেয়ে শক্তিশালী। আর যে ব্যক্তি সবচেয়ে শক্তিশালী, তার কাছ থেকে যতক্ষণ অধিকার আদায় করতে না পারব, ততক্ষণ সে আমার কাছে সবচেয়ে দুর্বল।[11]

অর্থাৎ এ ভাষণে পৃথিবীর সকল মযলূম ও দুর্বল মানুষের নায্য অধিকার আদায়ের দিকটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এখানে প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকারের সুস্পষ্ট বক্তব্যও ফুটে উঠেছে। এখানে যুলমবাজদের স্থান নেই। ধর্ম-বর্ণ মতের কোন পার্থক্য করা হয়নি এখানে। আইনের দৃষ্টিতে প্রত্যেক নাগরিক যে সমান অধিকার লাভ করবে, মহান খলীফা আবুবকরের এই উক্তি থেকে তা প্রতিভাত হয়েছে।

এ সম্পর্কে বিদায় হজ্জ ভাষণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের সবাই আদমের সন্তান আর আদম মাটির তৈরী’।[12] মানবীয় মূল্যায়ন ও সম্মানে মানুষ যে সমান- সে সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘সকল মানুষের জন্য নিজ নিজ কাজ অনুপাতে মর্যাদা রয়েছে’ (কাহাফ ১৯)। হাদীছ এসেছে, ‘মুসলমানদের রক্তের বদলা নিতে হবে’।[13] মানুষের কর্মের ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে সমান সে সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, هُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ ذَلُوْلاً فَامْشُوْا فِيْ مَنَاكِبِهَا وَكُلُوْا مِنْ رِّزْقِهِ وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ- ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য ভূমিকে সুগম করে দিয়েছেন। অতএব তোমরা তার দিগ-দিগন্তে বিচরণ কর এবং তাঁর প্রদত্ত জীবনোপকরণ হতে আহার্য গ্রহণ কর। পুনরুত্থান তো তাঁরই নিকট’ (মূলক ১৫)

‘অতপব ছালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে’ (জুম‘আ ১০)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْراً يَرَهُ- وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرّاً يَرَهُ- ‘যে ব্যক্তি কণা পরিমাণও ভাল কাজ করবে সে তা দেখবে, আর যে কণা পরিমাণও মন্দ কাজ করবে, সে তাও দেখবে’ (যিলযাল ৭-৮)

ফেরাঊন বলেছিল, ‘নিশ্চয়ই ফেরাঊন দেশে পরাক্রমশালী হয়েছিল এবং তথাকার অধিবাসীদেরকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে তাদের একটি শ্রেণীকে সে হীনবল করেছিল, তাদের পুত্রদেরকে সে হত্যা করত এবং নারীদেরকে সে জীবিত রাখত। নিশ্চয়ই সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী’ (ক্বাছাছ ৪)

আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন মহামহিম আল্লাহ বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি রুগ্ন ছিলাম, তুমি আমার সেবা শুশ্রূষা করনি। বান্দা বলবেন, হে আমার প্রতিপালক! আমি কি করে আপনার সেবা-শুশ্রূষা করতে পারি? আপনি তো বিশ্বলোকের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা রোগাক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু তুমি তার সেবা করনি। তুমি কি জানতে না যে, তার সেবা করলে তুমি আমাকে তার কাছেই পেতে? মহান আল্লাহ বলবেন, আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম এবং তোমার নিকট খাবার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাওনি। আদম সন্তান বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি কি করে আপনাকে আহার করাতে পারি, অথচ আপনি হচ্ছেন গোটা সৃষ্টি লোকের রিযিক দাতা? মহান আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা খাবার চেয়েছিল? কিন্তু তুমি তাকে খাবার দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তাকে আহার করালে তুমি ঐ খাবার আমার নিকট পেতে? হে আদম সন্তান! আমি তোমার নিকট পানি চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পান করাওনি। সে বলবে, হে প্রভু! আমি আপনাকে কিভাবে পান করাতে পারি, অথচ আপনি হচ্ছেন গোটা সৃষ্টিকুলের প্রতিপালক? মহান আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক পিপাসার্ত বান্দা তোমার নিকট পানি চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে পান করাওনি। তুমি যদি তাকে পান করাতে তবে সেখানে তুমি আমাকে পেতে’।[14] অসহায়-দরিদ্র মানুষের অধিকারের কি অপূর্ব সমাধান ইসলাম দিয়েছে দেড় হাযার বছর আগেই।

একবার ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) দু’টি নতুন কাপড় পরে একটু দেরীতে মসজিদে এলেন। অতঃপর জুম‘আর খুৎবা দেওয়ার জন্য মিম্বরে বসলেন। সালমান ফারেসী (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের সবাইকে আপনি একটি করে কাপড় বণ্টন করেছেন। অথচ আপনার পরনে দু’টি কাপড় দেখছি? ওমর (রাঃ) তার বড় ছেলে আবদুল্লাহর দিকে ইঙ্গিত করলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বললেন, ওটি আমার অংশের কাপড় যা আববাকে দিয়েছি পায়জামা করার জন্য’। ওমরের কাপড়ে সাধারণতঃ ১২/১৪টি করে তালি লাগানো থাকত। নতুন কাপড়টি ছিল রাষ্ট্রীয় বায়তুল মাল থেকে সবার জন্য বণ্টিত অংশ মাত্র’।[15]

খুলাফায়ে রাশেদীন জাতির এই স্বাধীনতাকে কখনও খর্ব করতেন না। বরং আরও সাহস যোগাতেন। সবেমাত্র খেলাফতের দায়িত্ব পেয়েছেন, তখন আবুবকর (রাঃ) তাঁর স্বাগত ভাষণে বলেছিলেন, যদি আমি সঠিক পথে চলি তাহলে আপনারা আমাকে সাহায্য করবেন, আর যদি বাঁকা পথে ধাবিত হই তাহ’লে আমাকে সোজা করে দিবেন।[16]

এসব আলোচনা থেকে একথাই প্রতীয়মান হয় যে, জাতিসংঘ সনদের সার্বজনীন মানবাধিকার সনদের ২নং অনুচ্ছেদে যে মানুষের মধ্যে পার্থক্য ছাড়াই সকলের সমান মর্যাদা ও অধিকার প্রদান করা হয়েছে অর্থাৎ ‘আইনের দৃষ্টিতে সমতা’ নীতির কথা উল্লেখ রয়েছে তার বাস্তব প্রতিফলন প্রায় ১৫শ’ বছর পূর্বে আল্লাহপাক রাসূল (ছাঃ)-এর মাধ্যমে সমাধান দিয়ে গেছেন। অতএব বলা যায়, জাতিসংঘের এই সনদ নয়; ইসলামই মানুষের সমতা নীতি ও জবাবদিহিতার সুমহান উদহারণ রেখে গেছে। বিশ্বের কোন রাষ্ট্রনায়ক ও সমাজসেবী ব্যক্তি বা সংগঠন এরকম দৃষ্টান্ত দিতে পারেনি।

‘সমতা’ আলোচনায় ‘নারী’ প্রসঙ্গটি চলে আসে। আধুনিক ইতিহাসে দেখা যায়, নারীদের অধিকারের ব্যাপারে ইসলামই সর্বপ্রথম বাস্তব ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জাহেলী যুগের কন্যা সন্তান হত্যা বন্ধ, সম্পত্তির উত্তরাধিকার, বিবাহ, সম্মান, প্রভৃতির ক্ষেত্রে এতে তাদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।[17] ইসলামী উত্তরাধিকারী আইনে প্রথম শ্রেণীর উত্তরাধিকার ‘কুরআনী অংশীদারের’ ১২ জনের মধ্যে ৮ জন মহিলা (সূরা নিসা)। অথচ ইসলাম পূর্ব যুগে পৃথিবীর কোথাও তারা উত্তরাধিকার পেত না। স্ত্রীর প্রতি আচরণ বিষয়ে পুরুষের উদ্দেশ্যে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, أَسْكِنُوْهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنتُمْ مِّن وُجْدِكُمْ وَلاَ تُضَارُّوهُنَّ لِتُضَيِّقُوْا عَلَيْهِنَّ  ‘তোমরা তোমাদের সামর্থ অনুযায়ী যেরূপ গৃহে বাস কর, তাদেরকেও বসবাসের জন্য সেরূপ গৃহ দাও। তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সংকটাপন্ন কর না’ (তালাক ৬)

তাই তো সমতা বিধানে ইসলামী প্রচেষ্টায় মুগ্ধ হয়ে Dr. Ahmad Golwash তাঁর The Religion of Islam গ্রন্থে বলেন, Equallity of Right was the distinguishing feature of the Islamic Commonwealth. A Convert from a humbler can enjoyed the same rights and previleges as on who belonged to the noblest koraish.[18]

উল্লিখিত বিষয়ে রাসূল (ছাঃ) বিদায় হজ্জ ভাষণে বলেন, ‘তোমরা যা খাও ও পরিধান কর, দাসদেরও তা খেতে ও পরতে দাও’।[19] অর্থাৎ আইনের দৃষ্টিতে মানুষ মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই একথাই বলা হয়েছে।

এখানে উল্লেখ্য, জাতিসংঘ মানবাধিকার সনদ (UDHR)-এর ২নং অনুচ্ছেদে এবং বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭ ও ২৮ নং অনুচ্ছেদে নারী-পুরুষের সমতা বা সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে বাস্তব কথা হ’ল, সনদে নারী-পুরুষের সমতা বিধান বা সমান অধিকারের নামে দেশের পার্ক, রেষ্টুরেন্ট, উদ্যান, রাস্তা-ঘাট, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কাম্পাসে এমনকি স্কুলের উঠতি বয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের অবাধ চলাফেরা-মিলামেশা যেন এখন পাশ্চাত্যের দেশগুলোকেও হার মানিয়েছে। পরিস্থিতি এমনটা যে, এখন বেলেল্লাপনা ও নির্লজ্জ পরিবেশে পরিবার সহ কোথাও বেড়াতে যাওয়ার কারো উপায় নেই। তাই তো এসবের লালন-পালনকারী হল শতকরা ৯০ ভাগ মুসলিম দেশের কথিত মুসলিম সরকার। আমরা এমন সরকার চাই না। অনতিবিলম্বে এ জাতি ও তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে হবে, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

তাই তো বলি, এদের নাটের গুরু ভিনদেশী। এদেরই দেয়া দু’টো খুঁদ-কুড়া খেতে গিয়ে তাদেরকে অনুসরণ করতে হয়। যেমনটি- ২০১১ সালের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র নৈতিকভাবে নারী-পুরুষের সকল প্রকার যৌনসম্পর্ক, অভ্যাস বা রুচিকে সমর্থন দিয়ে যাবে। এক লিঙ্গে সমকাম, উভয়লিঙ্গে সমকাম, নারী সমকাম, পুরুষ সমকাম, একত্রে বসবাস (Live Together) ইত্যাদি সকল ধরনের যৌনতাই আমরা সমর্থন করি। সেখানে বিশ্বব্যাপী লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সচুয়াল, হোমো সেক্সচুয়াল, নারী-পুরুষকে তাদের অবাধ যৌন সংস্কৃতি নির্বিঘ্ন করার কাজে ৩০ লক্ষ ডলার তহবিল গঠনের কথাও মিসেস ক্লিনটন ঘোষণা করেন।২০ এদেরকে কেবল বাংলাদেশ কেন বিশ্বের প্রায় সকল দেশই অনুকরণ করে চলেছে। বলা যায় এদেরই তৈরী UDHR ২নং অনুচ্ছেদের। তাহ’লে জাতিসংঘ মানবাধিকার সনদের উক্ত ধারাটিকে আপনারা কিভাবে ব্যবহার করবেন? নিশ্চয়ই সুন্দর, মার্জিত ও কল্যাণের পথে ব্যবহার করবেন। কিন্তু সেখানে সেটা অনুপস্থিত। পক্ষান্তরে যার সার্বজনীন দিক নির্দেশনা কুরআন ও ছহীহ হাদীছে সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়েছে। সেখান থেকে সকলে হেদায়াত ও আলো গ্রহণ করলে মানবতা উপকৃত হবে। আল্লাহ সকলকে কুরআন-হাদীছের সে আলো নেয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন!

[চলবে]

শামছুল আলম

শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।

[1]. Dr. Borhan Uddin Khan. Fifty years of the Universal Declaration of Human Rights. IDHRB, Ministry of Law, Jastice and Parliamentary Affairs, Dhaka 1998), p. 158.

[2]. যাদুল মা‘আদ ৩/৩৫৯; আল-বিদায়াহ ৪/৩০১; ইবনে হিশাম ২/৪১২।

[3]. মুসনাদে আহমাদ হা/২৪২০০৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭০০।

[4]. মনুশাস্ত্র ৮ম, ৯ম, ১০ম অধ্যায়; ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), ৪৬ বর্ষ ১ম সংখ্যা, জুলাই সেপ্টেম্বর ২০০৬, পৃঃ ৯৯-১০০।

[5]. মাওলানা আব্দুর রহীম, ইসলাম ও মানবাধিকার, (ঢাকা: ই.ফা.বা.), পৃঃ ১৪৩।

[6]. মাসিক আত-তাহরীক, জুলাই ’১১, পৃঃ ৪৪

[7]. দৈনিক প্রথম আলো, ২৬ জুলাই ’১২, পৃঃ ১০।

[8]. Dr. Borhan Uddin Khan, IDHRB, 10 December Dhaka 1998, P. 198.

[9]. মুসনাদে আহমাদ, ৫/৪১১; আবুদাঊদ, ৪/১৩২

[10]. আবুদাঊদ, ‘হুদুদ’ অধ্যায়, হা/৪৩৭৩। 

[11]. ডঃ মুহাম্মাদ আত-তাহের আর-রিযভী, মানবাধিকার ও দন্ডবিধি, অনুবাদ : হাফেয মাওলানা আকরাম ফারূক (ঢাকা: ইসলামিক ল’ রিসার্চ সেন্টার এন্ড লিগ্যাল এইড বাংলাদেশ ২০০৮), পৃঃ ৫৪।

[12]. আবু দাঊদ হা/৫১১৬, সনদ হাসান; তিরমিযী হা/৩৯৫৬।

[13]. ইবনে মাযাহ ২/৮৫৯; আবুদাঊদ ৩/৮০ নং ২৭৫১

[14]. মুসলিম, মিশকাত হা/১৫২৮ ‘জানাযা’ অধ্যায়

[15]. আইয়ামে খিলাফতে রাশেদাহ পৃঃ ১০৩-১০৪

[16]. সালাহ উদ্দীন, মৌলিক মানবাধিকার, (ঢাকা : ই.ফা.বা.), পৃঃ ১৮৪; ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব, পৃঃ ৩১২

[17]. মানবাধিকার আইন, সংবিধান ইসলাম এনজিও, পৃঃ ১২১

[18]. ডঃ রেবা মন্ডল ও ডঃ মোঃ শাহজাহান মন্ডল, মানবাধিকার আইন সংবিধান ইসলাম এনজিও (ঢাকা: শামস পাবলিকেশন্স, ২য় প্রকাশ ১লা আগষ্ট, ২০০৯), পৃঃ ১২৩

[19]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/৭৪০; আদাবুল মুফরাদ হা/১৮৮।

২০. ইসলামী আইন ও বিচার, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, বর্ষ ৮, সংখ্যা ২৯, (সম্পাদকীয়) ঢাকা







বিষয়সমূহ: শিষ্টাচার
অসুস্থ ব্যক্তির করণীয় ও বর্জনীয় - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
মুমিন কিভাবে রাত অতিবাহিত করবে - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
ধন-সম্পদ : মানব জীবনে প্রয়োজন, সীমালংঘনে দহন (৩য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
চিন্তার ইবাদত (৩য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
নববী চিকিৎসা পদ্ধতি (২য় কিস্তি) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
বিদ‘আত ও তার ভয়াবহতা - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
মুসলমানদের রোম ও কন্সটান্টিনোপল বিজয় (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর পাঁচ দফা মূলনীতি : একটি বিশ্লেষণ (৩য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
ধন-সম্পদ : মানব জীবনে প্রয়োজন, সীমালংঘনে দহন (১ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
শরী‘আহ আইন বনাম সাধারণ আইন : একটি পর্যালোচনা - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
পবিত্রতা অর্জন সম্পর্কিত বিবিধ মাসায়েল (৫ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
হকের পথে বাধা : মুমিনের করণীয় (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
আরও
আরও
.