আল্লাহ্
বলেন, ‘জলে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, মানুষের কৃতকর্মের জন্য, আল্লাহ্
তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাত চান, যাতে তারা ফিরে আসে’ (রূম ৩০/৪১)।
সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ‘বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন’। যাকে কেন্দ্র করে কেউ পাহাড়ের উপরে (নেপাল), কেউবা সমুদ্রের নীচে (মালদ্বীপ) বৈঠক করছে। আবার কেউবা বিশ্ব নেতাদের মুখোশ পরে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে প্রতিবাদ করছে। এছাড়া সেমিনার, সিম্পোজিয়াম তো আছেই। বাংলাদেশ রয়েছে নেতৃত্বের আসনে। কখনও ফোন দিচ্ছে ওবামা, আবার কখনওবা ব্রাউন। অন্যদিকে কেউ একে এনার্জি ভিক্ষার বুলি বলে মন্তব্য করছে। এমনই এক উত্তপ্ত প্রেক্ষাপট নিয়ে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ১২ দিন ব্যাপী বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। আর একটি সম্মেলন হ’তে যাচ্ছে মেক্সিকোতে।
প্রশ্ন হ’তে পারে, কেন এই শতাব্দীতে জলবায়ু এত সমালোচিত বিষয়? উন্নত দেশগুলো এই আলোচনা শুরু করেছে কেন? জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রকৃত কারণগুলো আসলে কি? এই বিপর্যয় থেকে রক্ষার উপায় কি? ইত্যাদি, ইত্যাদি...।
এই শতাব্দীর পূর্বে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কোন আলোচনা শোনা যায়নি। এই শতাব্দীতে জলবায়ুর এমন কি হ’ল? হ্যাঁ, হয়েছে। এই শতাব্দীর শুরুতে ১৯১৪-১৮ সালে হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ১৯৩৯-৪৫ সালে হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যার ভয়াবহতার সাক্ষী জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকি। সেখানে আজকেও যে শিশুটির জন্ম হয়, সে বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম নেয়।
এই শতাব্দীতে পৃথিবীব্যাপী শুরু হয় নিউক্লিয়ার টেস্টের মহোৎসব। আমেরিকা ১০৩০টি এবং রাশিয়া ৭১৫টি পরীক্ষা চালায় বিভিন্ন স্থানে অথবা এন্টার্কটিকায়, যার ফলে বরফ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যায় বলে বিজ্ঞানীদের অভিমত। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্লাস্টার বোমা নিক্ষেপ, সুপারসনিক বোমা, মানুষবিহীন ড্রোন বিমান সহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভব তো রয়েছেই।
অপরদিকে বিশ্বে ব্যাপক শিল্পায়ন হচ্ছে। ২০০৮ সালের এক পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে, বিশ্বের খাদ্য চাহিদা ১.৫ বিলিয়ন মেট্রিক টন হ’লেও উৎপাদন ২.৩ বিলিয়ন মেট্রিক টন। দ্বিগুণ প্রায়। গাড়ী, টিভি, ভিসিআর, কম্পিউটার, ফ্রিজ প্রভৃতি বিলাসদ্রব্যের একটা মডেল আজকে আসলে কালকে তা পুরাতন বা বাতিল হয়ে যাচ্ছে। গত কয়েকশ’ বছরে ১০০০ বছরের দ্বিগুণ কার্বন নির্গমন হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। যার ফলে মানুষ অক্সিজেনের পরিবর্তে নিশ্বাসে কার্বন নিচ্ছে। সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসার আগে তাকে যে বাধা বা লেয়ার অতিক্রম করতে হয়, তার পুরুত্ব বা গাড়ত্ব বেড়ে যাচ্ছে, যাকে গ্রীণ হাউজ ইফেক্ট বলে।
আলোচনার সুবিধার্থে পুরো আলোচনাকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।
প্রথমত: বর্তমানে যে আদর্শের নেতৃত্বে পুরো পৃথিবী চলছে সেই পুঁজিবাদের দৃষ্টিতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ ও সমাধান। দ্বিতীয়ত: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকৃত কারণগুলো উদ্ঘাটন। তৃতীয়ত: আল্লাহর দেয়া জীবনব্যবস্থা ইসলামের দৃষ্টিতে জলবায়ু সমস্যার সমাধান।
সারা বিশ্বে দু’টি আদর্শ বিদ্যমান ও সক্রিয় রয়েছে। এর একটি পুঁজিবাদ, যার নেতৃত্বে আমেরিকা। অন্যটি ইসলাম, যা বিশ্ব নেতৃত্বের অপেক্ষায়। বর্তমান পুঁজিবাদী আদর্শের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে- (১) উৎপাদন (২) প্রযুক্তিগত উন্নয়ন। তাছাড়া পুঁজিবাদের মতে, পরিবেশ বিপর্যয় উন্নয়নের ‘সুযোগ ব্যয়’। অর্থনীতির ভাষায়- একটি পাওয়ার জন্য অন্যটি পরিত্যাগ। অর্থাৎ উন্নয়ন করতে হ’লে পরিবেশকে ছাড় দিতে হবে।
পুঁজিবাদী আদর্শ সমাধান হিসাবে দু’টি বিষয় উপস্থাপন করছে :
(১) Quota System : প্রত্যেক দেশের কার্বন নির্গমনের জন্য কোটা আছে। যেসব দেশ তার কার্বন নির্গমনের কোটা অতিক্রম করেছে, তাদের তা কমানোর জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হওয়া উচিত। আর যারা অতিক্রম করেনি তারা তা বিক্রি বা ব্যবহার করতে পারে। যেমন- বাংলাদেশ তার বরাদ্দ কোটা আমেরিকা বা ব্রিটেনের কাছে বিক্রি করতে পারে। এর ফলে আমেরিকা বা ব্রিটেন বাংলাদেশে তার শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের পক্ষ হয়ে তারা কার্বন নির্গমন করছে। ফলে কার্বন নির্গমনে ভারসাম্য আসবে বলে Kyoto Agreement, EU-Emission Trading Scheme, US Acid Rain Program, Copenhagen (Cop15) Agreement-এ স্পষ্ট করে উল্লেখ আছে এবং সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সম্মেলন থেকে এই আহবান জানানো হয় যে, উন্নত দেশগুলো যেন দুই ডিগ্রী সেলসিয়াস কার্বন নির্গমন কমানোর চেষ্টা করে।
(২) Clean Development Project : কোন দেশকে কার্বন নির্গমন কোটার কারণে তার উৎপাদন কমাতে হবে না। সে তার বর্জ্য পদার্থ অন্য দেশে স্থানান্তর করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ভারতের গুজরাটে Fluro Chemical Ltd নামে একটি কেমিকেল ফ্যাক্টরী আছে, যার প্রধান শাখা লন্ডনে। এই কোম্পানী Clean Development Project-এর মাধ্যমে বিষাক্ত কেমিকেলগুলো এখানে উৎপাদন করে। যার ফলে গুজরাটে এই ফ্যাক্টরীর আশেপাশে পানি দূষিত ও জমিগুলো চাষের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে কার্বন নির্গমন হ’লেও তা ভারত থেকে হচ্ছে বলে ধরা হচ্ছে। এভাবে বাংলাদেশের Ship Breaking Industry যা চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডু উপকূলকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপের দেশগুলো তাদের কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য তা বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়ে Clean Development Project এর যথাযথ ব্যবহার করছে।
উপরের আলোচনায় আমরা শুধু পুঁজিবাদের দৃষ্টিতে সমস্যা ও সমাধান দেখলাম। তাদের এই সমাধান সম্পর্কে কোপেনহেগেনে আসা ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের অন্যতম টুভ্যালুর প্রতিনিধি ইয়ান ফ্রাই বলেন, ‘এই সমাধান বাইবেলের সাথে বেঈমানি। এটা দেখে মনে হচ্ছে যে, আমাদের ৩০টি রূপার টুকরো উপহার দেয়া হচ্ছে যেন তার বিনিময়ে আমরা আমাদের জনগণ এবং ভবিষ্যতের সঙ্গে বেঈমানি করি’।
অনেক দেশই একই ধরনের উক্তি করেছেন। কেউ কেউ বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আমরা দায়ী নই। তাহ’লে আমরা এর ক্ষতির সম্মুখীন হব কেন? যদিও বাংলাদেশের মতামত ভিন্ন। উন্নত ও অনুন্নত দেশের দ্বি-মুখী বা মধ্যমুখী বক্তব্যের প্রেক্ষিত বিবেচনায় রেখে সমস্যার প্রকৃত কারণ কি তা গভীরভাবে অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।
পুঁজিবাদী আদর্শ, উন্নত দেশ; আমেরিকা-ব্রিটেন যে সমস্যা নির্ধারণ করেছে ও সমাধান দিয়েছে, তা যে জলবায়ু পরিবর্তনের কোন কারণ বা সমাধান নয় তা প্রাপ্তবয়ষ্ক সব সুস্থ লোকের পক্ষে বুঝা সম্ভব। তাদের সমাধান তাদের অবস্থাকে সমুন্নত রাখার রাজনৈতিক প্রয়াস মাত্র। যার বিরুদ্ধে কথা বলার যোগ্যতা বিশ্বের কারো নেই তা জনগণের কাছে পরিস্কার। প্রকৃতপক্ষে সমস্যার প্রধান কারণ মানুষের তৈরী জীবনাদর্শ পুঁজিবাদী ব্যবস্থা, যা তিনটি পয়েন্টের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করব।
(১) পুঁজিবাদ নিশ্চিত করে মানুষের আইন প্রয়োগের অধিকার। যার ফলে আমরা দেখি, যারা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী আমেরিকা-ইউরোপীয় ইউনিয়ন তারাই সমস্যার সমাধান দেয়। যাতে বাংলাদেশের মত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো ধ্বংস হয়ে গেলেও তাদের স্বার্থ রক্ষা হয়। যা সুস্পষ্ট হয়েছে কোটা সিস্টেমের মধ্যে। যেখানে বলা হয়েছে, কার্বন নির্গমন উন্নত দেশের অধিকার। যারা কার্বন নির্গমন করতে পারে না বা যাদের শিল্প কারখানা নেই তারা যেন ‘ক্ষতি পূরণের চুক্তি’ করে। যা বাংলাদেশ সহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে করতে বাধ্য করা হয়। যাতে দরিদ্র দেশগুলোর স্থায়ী দরিদ্রতা নিশ্চিত হয় এবং পুরো বিশ্ব বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোকে তার কলোনী হিসাবে ব্যবহার করা যায়। আর এর সার্বিক সহযোগিতায় আছেন গণতন্ত্র বা পুঁজিবাদের মানসকন্যারা। একইভাবে Clean Development Project-এর নামে অনুন্নত দেশগুলো উন্নত দেশের আবর্জনা বা বর্জ্য ফেলার স্থানে পরিণত হয়। যার বৈধ অধিকার অর্জনের জন্য কোপেনহেগেন সম্মেলনের মত অনন্য সম্মেলন আয়োজন করা হয়। যেখানে বাংলাদেশ সহ অন্যান্য দেশের কিছু বলার নেই, কেবল হুকুম পালন ছাড়া। এটা মানুষের সার্বভৌমত্ব ও আইন প্রণয়নের অধিকারের ফসল। যার ফলে চীনের তুলনায় আমেরিকা ছয় গুণ বেশি কার্বন নির্গমন করে (জনসংখ্যার ভিত্তিতে)।
(২) পুঁজিবাদী আদর্শের ভিত্তি হ’ল Freedom. যার মাধ্যমে সে তার স্বার্থ নিশ্চিত করে। যেখানে পরিবেশ বা অন্য কিছু বিবেচ্য বিষয় নয়।
* Freedom এর নমুনা হচ্ছে ৩ জন লোক পৃথিবীর ৪৭টি দেশের বাজেটের সমান আয় করে।
* হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বের ২০% লোক ৮৫% সম্পত্তির মালিক।
* বাংলাদেশের একটা শিশু যে জ্বালানী ব্যবহার করে, তার ৯০ ভাগ বেশি জ্বালানী আমেরিকার একটা শিশু ব্যবহার করে।
* Freedom-এর আরেকটি ভয়াবহ উদাহরণ হচ্ছে ডেনমার্ক। যেখানে কয়েকদিন আগে জলবায়ু সম্মেলন হ’ল। প্রতিবছর সেখানে Faroe Island-এ একটা ফেস্টিভাল হয়। যার নাম “Denmark Grusome Festival- Mass Killing Of Whales & Dolfin to Prove Adulthood” হাযার হাযার তিমি এবং ডলফিনকে মারা হয় শুধু মজার জন্য। অথচ এটা পরিবেশ বিপর্যয়ের একটা কারণ।
(৩) পুঁজিবাদী আদর্শের চালিকা শক্তি হ’ল লোভ। যা মানুষের কাছে না থাকলে এই আদর্শ চলবে না। পুঁজিবাদের প্রতিষ্ঠাতা যাকে আমরা অর্থনীতির জনক বলে জানি, সেই এ্যাডাম স্মিথ বলেন, ‘Greed is individual’s moral and this moral controls the economy’. যার ফলে প্রতি বছর ৪০ মিলিয়ন হাঙ্গরকে হত্যা করা হয় শুধু তাদের ডানা দিয়ে স্যুপ বানানোর জন্য। তারপর তাদের সমুদ্রে ফেলে দেয়া হয়। ডানা না থাকার কারণে পরবর্তীতে এরা মারা যায়। এই সব বিলাসী মানুষের বিনোদনের জন্য এন্টার্কটিকায় ট্যুরিজম ইন্ডাষ্ট্রি গড়ে তোলা হয়েছে। অথচ সেই এলাকা বরফী আচ্ছাদিত ও প্রচন্ড ঠান্ডা, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যেখানে অসম্ভব। সেখানে তারা বিমান অবতরণ করাচ্ছে। পরিবেশকে গরম রাখার জন্য বিভিন্ন জ্বালানী ব্যবহার করছে। এর ফলে বরফ গলে সমুদ্রে পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে, যা জলবায়ু বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ।
উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছি পুঁজিবাদী আদর্শ থেকে উদ্ভূত বিশ্বাস গণতন্ত্র বা মানুষের আইন প্রণয়নের অধিকার, Freedom ও লোভ যা পুঁজিবাদের ভিত্তি, এই আদর্শ মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করছে। যার ফলাফল হিসাবে বিশ্ব পরিবেশ আজ বিপর্যস্ত। মানুষের তৈরী এই জীবনব্যবস্থা সারা বিশ্বে কৃত্রিম খাদ্য সংকট তৈরি করছে, যা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা Life Support System-এর মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। সর্বশেষে আজ পরিবেশকে পর্যন্ত ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই পুঁজিবাদী মানসিকতাকে প্রত্যাখ্যান করা বা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আল্লাহ প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা ইসলামকে জীবনাদর্শ হিসাবে বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই।
এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ তা‘আলা পরিবেশ সম্পর্কে বলেন, ‘আমি ভূ-পৃষ্ঠকে বিস্তৃত করেছি ও তার উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে প্রত্যেক বস্ত্ত পরিমিতভাবে সৃষ্টি করেছি’ (হিজর ১৫/১৯)। তিনি আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক বস্ত্তকে প্রয়োজন মাফিক পর্যাপ্তরূপে সৃষ্টি করেছি’ (ক্বামার ৫৪/৪৯)।
ইসলাম পরিবেশকে উন্নয়নের সুযোগ ব্যয় হিসাবে দেখে না। ইসলাম মানুষ, পরিবেশ ও উন্নয়নকে আল্লাহর সৃষ্টি এবং সহযোগী হিসাবে দেখে। ইসলাম পরিবেশের উপাদানগুলোর সাথে যথাযথ সম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ দেয়। পানি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা কেউ বদ্ধ পানিতে প্রস্রাব করো না। কেননা তাতে তোমরা গোসল কর’ (বুখারী হা/২৩২)। এক্ষেত্রে আমরা ডেনমার্কের সেই ফেস্টিভালের কথা চিন্তা করতে পারি। যেখানে পানিকে রক্তে রঞ্জিত করে আনন্দে গোসল করা হয়। তাদের এ ধরনের আচরণের ফল হিসাবে বিশ্বে বর্তমানে মাত্র ৩% খাওয়ার যোগ্য পানি রয়েছে।
গাছপালা শস্য সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘যারা অনুর্বর জমি চাষ করে তা তার অধিকারে’ (আবুদাউদ)। আর এই আবাদের মাধ্যমে পরিবেশ ভাল থাকবে, খাদ্য সমস্যা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। অথচ আমেরিকা অতিরিক্ত খাদ্য বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করে।
অথচ খিলাফত আমলে মুসলিম রাষ্ট্র বিশ্বের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য উৎপাদন ও প্রযুক্তিতে ছিল শ্রেষ্ঠ অবস্থানে। তাই আগামীতেও মুসলিম রাষ্ট্র শিল্পায়নের পাশাপাশি তার পরিবেশকে আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের আদর্শ অনুযায়ী সংরক্ষণ করবে। ইসলামী রাষ্ট্রকে অবশ্যই শিল্পোন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হ’তে হবে, যাতে কোন কিছুর জন্য মুসলমানরা কাফের-মুশরিকদের উপর নির্ভরশীল না হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আল্লাহ কখনো মুসলমানদের উপর কাফেরদের নেতৃত্ব মেনে নেবেন না’ (নিসা ৪/১৪১)।
ইসলামী রাষ্ট্র পরিবেশ রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে মানুষের জবাবদিহিতার ভয়ে তাকওয়াপূর্ণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়ভাবে শারঈ আইন অনুযায়ী তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিবে। এজন্য রাষ্ট্রে তিন ধরনের বিচারালয় থাকবে-
ক) কাযী আল-হিসবাহ : যিনি বাজার, হাসপাতাল, ফ্যাক্টরী, কর্পোরেশনগুলো সরাসরি পর্যবেক্ষণ করবেন। অ্যালকোহল বা শরী‘আত নিষিদ্ধ কোন কিছু উৎপাদন হচ্ছে কি না, মনোপলি হচ্ছে কি-না বা অন্য কোনভাবে পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু পাওয়া মাত্র তাৎক্ষণিক বিচার করবেন।
খ) কাযী আল-খুসামাত: যিনি শ্রমিকরা পরিবেশের বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে কি-না তা দেখবেন। যদি হয় তার কারণ অনুসন্ধান করে শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করবেন।
গ) কাযী আল-মাযালিম : যিনি সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে কোন ক্ষতিকর বা পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোন কিছু হচ্ছে কি-না তা দেখবেন। যদি এমন কোন অভিযোগ পাওয়া যায়, তার জন্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে, এমনকি খলীফার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারবেন। যা একমাত্র ইসলামী রাষ্ট্রে সম্ভব। যা মানুষকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুন্দর পরিবেশ ও তাকওয়াপূর্ণ জীবন-যাপনের নিশ্চয়তা দিবে এবং নিশ্চিত করবে।
আজকে সময় এসেছে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। এই পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তাদের এজেন্টদের দালালির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার। যারা জনগণের সম্পদ ও অধিকারকে আমেরিকা ও ব্রিটেনের হাতে তুলে দিচ্ছে সামান্য কিছু টাকা ও ক্ষমতার জন্য। তাদেরকে প্রতিহত করতে সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। আজকে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হ’তে হবে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য। ঐক্যবদ্ধ হ’তে হবে এমন একজন শাসকের জন্য যিনি খলীফা ওমর ফারূক (রাঃ)-এর মত হবেন, যিনি ওমর বিন আব্দুল আযীযের মত হবেন কিংবা খলীফা আব্দুল হামীদের মত হবেন। তাকে যখন ফিলিস্তীনের একখন্ড ভূমি বিক্রির জন্য ১৫০ মিলিয়ন পাউন্ড প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছিল; তখন তিনি বলেছিলেন, ফিলিস্তীনের একখন্ড ভূমি দেয়ার চেয়ে আমি আমার শরীরের একটা অংশ দেয়াকে অধিক পসন্দ করব। ফিলিস্তীন মুসলমানদের সম্পদ, তা দেয়ার কোন অধিকার আমার নেই’।
আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) সত্য বলেছেন। তিনি বলেন, ‘পুনরায় আসবে খিলাফত নবুআতের আদলে’ (আহমাদ)। আল্লাহ্ মুসলমানদেরকে তাদের শত্রুকে চেনার এবং তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!
মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন তুহিন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।