২২. পিতামাতার সাথে সদাচরণ করা :
পিতা-মাতার মাধ্যমে মানুষ দুনিয়াতে আসে। তাই তাদের প্রতি সদাচরণ করা প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য করণীয়। এটা আল্লাহর নিকটে সর্বাধিক পসন্দনীয় আমলও বটে। এর বিনিময় হচ্ছে জান্নাত। আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল!
أَيُّ الْعَمَلِ أَحَبُّ إِلَى اللهِ قَالَ الصَّلاَةُ عَلَى وَقْتِهَا قَالَ ثُمَّ أَيٌّ قَالَ ثُمَّ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ، قَالَ ثُمَّ أَيٌّ قَالَ الْجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ-
‘আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পসন্দনীয় আমল কি? রাসূল (ছাঃ) বললেন, সময়মত ছালাত আদায় করা। আবার জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কি? তিনি বললেন, পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করা। আবার জিজ্ঞেস করলাম, এরপর কি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা’।[1]
অন্যত্র তিনি বলেন,رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ قِيْلَ مَنْ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ مَنْ أَدْرَكَ أَبَوَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا فَلَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ- ‘তার নাক ধূলায় মলিন হোক (একথা তিনি তিনবার বললেন)। বলা হ’ল, সে ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে অথবা দু’জনের একজনকে পেল (তাদের সেবা-যত্নের মাধ্যমে) অথবা সে জান্নাত লাভ করতে পারল না’।[2]
পিতামাতার সেবা করা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। মু‘আবিয়া ইবনু জাহিমা হ’তে বর্ণিত একদা আমার পিতা জাহিমা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বললেন,
يَا رَسُولَ اللهِ أَرَدْتُ الْغَزْوَ وَجِئْتُكَ أَسْتَشِيْرُكَ فَقَالَ هَلْ لَكَ مِنْ أُمٍّ قَالَ نَعَمْ فَقَالَ الْزَمْهَا فَإِنَّ الْجَنَّةَ عِنْدَ رِجْلِهَا-
‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি জিহাদে যেতে ইচ্ছুক। আমি আপনার নিকট পরামর্শ নিতে এসেছি। তখন রাসূল (ছাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মাতা আছেন কি? লোকটি বললেন, হ্যাঁ। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি তাঁর সেবা কর, তাঁর পায়ের নিকটে জান্নাত রয়েছে’।[3]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবু উমামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে বললেন,يَا رَسُولَ اللهِ مَا حَقُّ الْوَالِدَيْنِ عَلَى وَلَدِهِمَا قَالَ هُمَا جَنَّتُكَ وَنَارُكَ- ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সন্তানের উপর পিতামাতার কি হক? তিনি বললেন, তারা উভয় তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম’।[4]
২৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা :
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা জান্নাতে প্রবেশ করার অন্যতম মাধ্যম। আবূ আইয়ূব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত যে, জনৈক ছাহাবী নবী করীম (ছাঃ)-কে বললেন,أَخْبِرْنِىْ بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِى الْجَنَّةَ. قَالَ مَا لَهُ مَا لَهُ وَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم أَرَبٌ مَالَهُ، تَعْبُدُ اللهَ، وَلاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيْمُ الصَّلاَةَ، وَتُؤْتِى الزَّكَاةَ، وَتَصِلُ الرَّحِمَ. ‘আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘তার কী হয়েছে! তার কী হয়েছে! এবং বললেন, তার দরকার রয়েছে তো। তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে অপর কোন কিছুকে শরীক করবে না। ছালাত আদায় করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখবে’।[5]
আবূ আইঊব আনছারী (রাঃ) বলেন, জনৈক বেদুঈন নবী করীম (ছাঃ)-এর এক ভ্রমণকালে তাঁর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করল,أَخْبِرْنِيْ مَا يُقَرِّبُنِيْ مِنَ الْجَنَّةِ، وَيُبَاعِدُنِيْ مِنَ النَّارِ؟ قَالَ تَعْبُدُ اللهَ وَلا تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيْمُ الصَّلاةَ، وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ، وَتَصِلُ الرَّحِم- ‘যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী এবং জাহান্নাম হ’তে দূরবর্তী করবে, সে সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। তিনি বললেন, ইবাদত করবে আল্লাহর এবং তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে না। ছালাত কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে’।[6]
২৪. প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করা :
প্রতিবেশীর সাথে উত্তম ব্যবহার করার জন্য রাসূল (ছাঃ) বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, জিবরীল (আঃ) এসেই আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে উপদেশ দেন। মনে হচ্ছিল তিনি যেন প্রতিবেশীকে আমার উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবেন। মানুষ অধিকহারে নফল ছালাত-ছিয়াম আদায় ও দান-ছাদাক্বা করেও যদি প্রতিবেশীর সাথে দুর্ব্যবহার করে তাহ’লে সে জান্নাতে যেতে পারবে না। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা জনৈক ব্যক্তি বলল,
يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ فُلاَنَةَ تُذْكَرُ مِنْ كَثْرَةِ صَلاَتِهَا وَصِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا غَيْرَ أَنَّهَا تُؤْذِيْ جِيْرَانَهَا بِلِسَانِهَا قَالَ هِيَ فِي النَّارِ، قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَإِنَّ فُلاَنَةَ تُذْكَرُ مِنْ قِلَّةِ صِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا وَصَلَاتِهَا وَإِنَّهَا تَصَدَّقُ بِالْأَثْوَارِ مِنْ الْأَقِطِ وَلَا تُؤْذِيْ بِلِسَانِهَا جِيْرَانَهَا قَالَ هِيَ فِي الْجَنَّةِ-
‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! অমুক মহিলা অধিক ছালাত পড়ে, ছিয়াম রাখে এবং দান-ছাদাক্বাহ করার ব্যাপারে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তবে সে নিজের মুখের দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীদেরকে কষ্ট দেয়। তিনি বললেন, সে জাহান্নামী। লোকটি আবার বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! অমুক মহিলা যার সম্পর্কে জনশ্রুতি আছে যে, সে কম ছিয়াম পালন করে, দান-ছাদাক্বাও কম করে এবং ছালাতও কম আদায় করে। তার দানের পরিমাণ হ’ল পনীরের টুকরা বিশেষ। কিন্তু সে নিজের মুখ দ্বারা স্বীয় প্রতিবেশীদেরকে কষ্ট দেয় না। তিনি বললেন, সে জান্নাতী’।[7]
প্রতিবেশীকে কষ্ট দানকারী ব্যক্তি মুমিন নয় বলে রাসূল (ছাঃ) ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, واللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ قِيلَ : مَنْ يَا رَسُول الله؟ قَالَ الَّذِي لاَ يَأمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ- ‘আল্লাহর কসম! সে ঈমানদার নয়। আল্লাহর কসম! সে ঈমানদার নয়। আল্লাহর কসম! সে ঈমানদার নয়। জিজ্ঞেস করা হ’ল হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সে কে? তিনি বললেন, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট হ’তে নিরাপদ নয়’।[8] এ ধরনের লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তিনি বলেন, لاَ يَدْخُلُ الجَنَّةَ مَنْ لاَ يَأمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ- ‘সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট হ’তে নিরাপদ নয়’।[9]
২৫. ইয়াতীম প্রতিপালন করা :
সমাজের অনাথ-ইয়াতীম শিশুরা হয়ে থাকে অবহেলিত। তাদের দেখা-শুনা ও প্রতিপালনের কেউ থাকে না। ফলে তারা হয়ে ওঠে দুষ্টু চরিত্রের। বখাটেপনা তাদের পেয়ে বসে। এদের দ্বারা সমাজ কলুষিত হয়। রাসূল (ছাঃ) এদের রক্ষার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের প্রতিপালনে অশেষ ছওয়াবের কথাও উল্লেখ করেছেন। সেই সাথে আরেক শ্রেণী আছে স্বামীহীনা বিধবা মহিলা। তাদের ভরণ-পোষণ, জৈবিক চাহিদা পূরণ এবং অনেক ক্ষেত্রে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণেরও ব্যবস্থা থাকে না। এ শ্রেণীর মানুষকে রক্ষার জন্য রাসূল (ছাঃ) বিশেষভাবে আদেশ দিয়েছেন। এদের দেখাশুনায়ও অনেক ছওয়াব রয়েছে। তিনি বলেন,السَّاعِي عَلَى الأَرْمَلَةِ وَالْمِسْكِيْنِ كَالسَّاعِيْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، وَأحْسِبُهُ قَالَ كَالْقَائِمِ لاَ يَفْتُرُ وَكَالصَّائِمِ النَّهَارِ لاَ يُفْطِرُ- ‘বিধবা ও মিসকীনের তত্ত্বাবধানকারী আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর মত। রাবী বলেন, আমার ধারণা, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এটাও বলেছেন, রাত্রি জাগরণকারী যে অলসতা করে না এবং ঐ ছিয়াম পালনকারীর মত যে কখনও ছিয়াম ভঙ্গ করে না’।[10]
রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ كَهَاتَيْنِ فِى الْجَنَّةِ. وَقَرَنَ بَيْنَ أُصْبُعَيْهِ الْوُسْطَى وَالَّتِى تَلِى الإِبْهَامَ ‘আমি ও ইয়াতীমের প্রতিপালনকারী জান্নাতে এদু’টির মত থাকব। আর তিনি স্বীয় মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলির পার্শ্ববর্তী (শাহাদত) আঙ্গুলি একত্র করলেন।[11] অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, كَافِلُ الْيَتِيمِ لَهُ أَوْ لِغَيْرِهِ أَنَا وَهُوَ كَهَاتَيْنِ فِى الْجَنَّةِ ‘নিজের অথবা অন্যের ইয়াতীমের প্রতিপালক ও আমি জান্নাতে এ দু’টির মত থাকব’। বর্ণনাকারী মালেক বলেন, তিনি মধ্যমা ও শাহাদত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করলেন।[12]
২৬. কন্যা সন্তান প্রতিপালন করা :
কন্যা সন্তানকে সমাজে হীন দৃষ্টিতে দেখা হয়। অথচ কন্যা সন্তান প্রতিপালন করা জান্নাত লাভের উপায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ حَتَّى تَبْلُغَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنَا وَهُوَ. وَضَمَّ أَصَابِعَهُ. ‘যে ব্যক্তি দু’টি কন্যাকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত প্রতিপালন করে, আমি ও সে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন এভাবে থাকব। এটা বলে তিনি স্বীয় আঙ্গুল একত্রিত করলেন’।[13] তিনি আরো বলেন, مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ دَخَلْتُ أَنَا وَهُوَ الْجَنَّةَ كَهَاتَيْنِ. وَأَشَارَ بِأَصْبُعَيْهِ. ‘যে ব্যক্তি দু’টি কন্যাকে প্রতিপালন করে, আমি ও সে ব্যক্তি জান্নাতে এ দু’টির মত থাকব। আর তিনি স্বীয় দু’আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করলেন’।[14]
২৭. আল্লাহর জন্য ভালবাসা স্থাপন করা :
সমাজের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একে অপরের সাথে সম্প্রীতি-সৌহার্দ্যের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এই সম্পর্ক যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মানসে হয়ে থাকে তাহ’লে তার বিনিময় হচ্ছে জান্নাত। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
قَالَ اللهُ تَعَالَى: وَجَبَتْ مَحَبَّتِىْ لِلْمُتَحَابِّيْنَ فِىَّ، وَالْمُتَجَالِسِيْنَ فِىَّ وَالْمُتَزَاوِرِيْنَ فِىَّ، وَالْمُتَبَاذِلِيْنَ فِىَّ.
‘আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘যারা আমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পরস্পরকে ভালবাসে, আমার উদ্দেশ্যে সমাবেশে মিলিত হয়, আমার উদ্দেশ্যে পরস্পরে সাক্ষাৎ করে এবং আমার উদ্দেশ্যেই নিজেদের মাল-সম্পদ ব্যয় করে, আমার ভালবাসা তাদের জন্য অবধারিত’।[15] তিনি আরো বলেন, إِنَّ اللهَ يَقُوْلُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَيْنَ الْمُتَحَابُّوْنَ بِجَلاَلِىْ؟ اَلْيَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِىْ ظِلِّىْ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلِّىْ. ‘ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, আমার সুমহান ইয্যতের খাতিরে যারা পরস্পরে ভালবাসা স্থাপন করেছে, তারা কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার বিশেষ ছায়ায় স্থান দিব। আজ আমার ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া নেই’।[16]
অন্য হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন,
أَنَّ رَجُلاً زَارَ أَخًا لَّهُ فِىْ قَرْيَةٍ أُخْرَى، فَأََرْصَدَ اللهُ لَهُ عَلَى مَدْرَجَتِهِ مَلَكًا فَلَمَّا أَتَي عَلَيْهِ قَالَ أَيْنَ تُرِيْدُ؟ قَالَ أُرِيْدُ أَخًا لِّىْ فِىْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ، قَالَ: هَلْ لَّكَ عَلَيْهِ مِنْ نِّعْمَةٍ تَرُبُّهَا؟ قَالَ: لاَ غَيْرَ أَنِّىْ أَحْبَبْتُهُ فِى اللهِ قَالَ فَإِنِّىْ رَسُوْلُ اللهِ إِلَيْكَ بِأَنَّ اللهَ قَدْ أَحَبَّكَ كَمَا أَحْبَبْتَهُ فِيْهِ-
‘এক ব্যক্তি অন্য এক গ্রামে তার মুসলমান ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে বের হ’ল। আল্লাহ তা‘আলা তার গমন পথে একজন অপেক্ষমান ফেরেশতা বসিয়ে রাখলেন। লোকটি যখন সেখানে পৌঁছল, তখন ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে বলল, ঐ গ্রামে একজন ভাই আছে, তার সাথে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছি। ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন, তার কাছে তোমার কোন অনুগ্রহ আছে কি, যার বিনিময় লাভের জন্য তুমি যাচ্ছ? সে বলল, না, আমি তাকে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভালবাসি। তখন ফেরেশতা বললেন, আমি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তোমার কাছে এই সংবাদ দেওয়ার জন্য প্রেরিত হয়েছি যে, আল্লাহ তোমাকে অনুরূপ ভালবাসেন, যেরূপ তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তাকে ভালবাস’।[17] তিনি আরো বলেন,
إِنَّ مِنْ عِبَادِ اللهِ لَأُنَاسًا مَّا هُمْ بِأَنْبِيَاءَ وَلاَشُهَدَاءَ، يَغْبِطُهُمُ الْأَنْبِيَاءُ وَالشُّهَدَاءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِمَكَانِهِمْ مِّنَ اللهِ. قَالُوْا: يَارَسُوْلَ اللهِ تُخْبِرُنَا مَنْ هُمْ؟ قَالَ: هُمْ قَوْمٌ تَحَابُّوْا بِرَوْحِ اللهِ عَلَى غَيْرِ أَرْحَامٍ بَيْنَهُمْ، وَلاَ أَمْوَالٍ يَّتَعَاطَوْنَهَا، فَوَاللهِ إِنَّ وُجُوْهَهُمْ لَنُوْرٌ وَّإِنَّهُمْ لَعَلَى نُوْرٍ، لاَيَخَافُوْنَ إِذَا خَافَ النَّاسُ، وَلاَيَحْزَنُوْنَ إِذَا حَزِنَ النَّاسُ، وَقَرَأَ هَذِهِ الْآيَةَ: أَلاَ إِنَّ أَوْلِيْاءَ اللهِ لاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَهُمْ يَحْزَنُوْنَ-
‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন কতিপয় লোক আছে, যারা নবীও নন এবং শহীদও নন। কিন্তু ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাদের মর্যাদা দেখে নবী-শহীদগণও ঈর্ষা করবেন। ছাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদেরকে বলুন, তারা কারা? তিনি বললেন, তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা শুধু আল্লাহর রূহ (কুরআনের সম্পর্ক) দ্বারা পরস্পরকে ভালবাসে। অথচ তাদের মধ্যে কোন প্রকার আত্মীয়তা নেই এবং তাদের পরস্পরে মাল-সম্পদের লেনদেনও নেই। আল্লাহর কসম! তাদের চেহারা হবে জ্যোতির্ময় এবং তারা উপবিষ্ট হবেন নূরের উপর। তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হবে না, যখন সমস্ত মানুষ ভীত থাকবে। তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না, যখন সকল মানুষ দুশ্চিন্তায় নিমগ্ন থাকবে। অতঃপর তিনি কুরআনের এই আয়াত তেলাওয়াত করেন, ‘জেনে রাখ! নিশ্চয়ই আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না’।[18]
২৮. মুসলিম ভাইয়ের কষ্ট দূরীভূত করা :
দুনিয়াতে মুসলিম ভাইয়ের দুঃখ-দুর্দশা দূর করা বা তার কোন কষ্ট লাঘব করা আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা লাভ করার মাধ্যম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, وَمَنْ كَانَ فِىْ حَاجَةِ أَخِيْهِ كَانَ اللهُ فِىْ حَاجَتِهِ، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُّسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার অভাব মোচনে সাহায্য করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তার বিপদ সমূহের কোন একটি বড় বিপদ দূর করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবেন’।[19]
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনের পার্থিব দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ ক্বিয়ামতে তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন সংকটাপন্ন ব্যক্তির সংকট নিরসন করবে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় সংকট নিরসন করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার সাহায্য করে থাকেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা নিজ ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে’।[20]
তিনি আরো বলেন,مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفَّسَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِّنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহের কোন একটি বিপদ দূর করে দিবেন’।[21]
২৯. ছয়টি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়া :
ছয়টি এমন গুণ ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে, কোন ব্যক্তি সেগুলির অধিকার হ’লে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তিনি বলেন,
اضْمَنُوْا لِيْ سِتًّا مِنْ أَنْفُسِكُمْ، وَأَضْمَنْ لَكُمُ الْجَنَّةَ اُصْدُقُوْا إِذَا حَدَّثْتُمْ، وَأَوْفُوْا إِذَا وَعَدْتُمْ، وَأَدُّوْا إِذَا ائْتُمِنْتُمْ، وَاحْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ، وَغُضُّوْا أَبْصَارَكُمْ، وَكُفُّوْا أَيْدِيَكُمْ.
‘তোমরা নিজেদের পক্ষ হ’তে আমাকে ছয়টি বিষয়ের জামানত দাও, আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের যামিন হব। (১) তোমরা যখন কথাবার্তা বল, তখন সত্য বলবে। (২) যখন ওয়াদা কর তা পূর্ণ করবে। (৩) যখন তোমাদের কাছে আমানত রাখা হয় তা আদায় করবে। (৪) নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করবে। (৫) স্বীয় দৃষ্টিকে অবনমিত রাখবে এবং (৬) স্বীয় হস্তকে (অন্যায় কাজ হ’তে) বিরত রাখবে’।[22]
৩০. মহিলাদের জন্য স্বামীর আনুগত্য করা :
মুসলিম মহিলাদের জন্য স্বামীর আনুগত্য করা জান্নাত লাভের মাধ্যম। হুছায়েন ইবনে মেহছান তার ফুফু আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তার ফুফু একদা তার কোন প্রয়োজনে রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে গেলেন। রাসূল (ছাঃ) তার প্রয়োজন পূর্ণ করলেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, أَذَاتُ زَوْجٍ أَنْتِ قَالَتْ نَعَمْ قَالَ كَيْفَ أَنْتِ لَهُ قَالَتْ مَا أَلُوْهُ إِلاَّ مَا عَجَزْتُ عَنْهُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ أُنْظُرِيْ أَيْنَ أَنْتِ مِنْهُ فَإِنَّهُ جَنَّتُكِ وَنَارُكِ- ‘তোমার স্বামী আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ আছে। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি তার কেমন স্ত্রী? সে বলল, আমি তার খিদমত করতে কম করি না, তবে যদি আমি তার ব্যাপারে অপারগ হই। রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমি যা বলছ, সে ব্যাপারে চিন্তা কর, তুমি তার থেকে কোথায় যাবে? নিশ্চয়ই সে তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম’।[23] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,إِذَا صَلَّتْ خَمْسَهَا وَصَامَتْ شَهْرَهَا وَأَحْصَنَتْ فَرْجَهَا وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا فَلْتَدْخُلْ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شَاءَتْ- ‘কোন মহিলা যখন তার প্রতি নির্ধারিত পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে, রামাযান মাসের ছিয়াম পালন করে, নিজের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে ও স্বামীর অনুগত থাকে, তখন সে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে’।[24]
৩১. ঋণগ্রস্তকে অবকাশ দেওয়া :
ঋণগ্রস্তকে অবকাশ দানকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দিবেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, كَانَ رَجُلٌ يُدَايِنُ النَّاسَ، وَكَانَ يَقُوْلُ لِفَتَاهُ: إِذَا أَتَيْتَ مُعْسِرًا فَتَجَاوَزْ عَنْهُ، لَعَلَّ اللهَ أنْ يَّتَجَاوَزَ عَنَّا، فَلَقِيَ اللهَ فَتَجَاوَزَ عَنْهُ- ‘এক ব্যক্তি লোকদেরকে ঋণ দিত। সে তার কর্মচারীকে বলত, কোন ব্যক্তিকে ঋণ পরিশোধে অক্ষম দেখলে তাকে ক্ষমা করে দিও। হয়তো এ কাজের বিনিময়ে আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। রাসূল (ছাঃ) বললেন, ঐ ব্যক্তি মৃত্যুর পর আল্লাহর নিকট পৌঁছলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন’।[25] অন্যত্র তিনি বলেন,مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُنْجِيَهُ اللهُ مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلْيُنَفِّسْ عَنْ مُعْسِرٍ أَوْ يَضَعْ عَنْهُ- ‘যে ব্যক্তি এ কামনা করে যে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্বিয়ামতের দিন দুঃখ-কষ্ট হ’তে মুক্তি দেন, সে যেন ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তির প্রতি সহজ পন্থা অবলম্বন করে কিংবা মাফ করে দেয়’।[26] তিনি আরো বলেন,مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا أَوْ وَضَعَ لَهُ، أَنْجَاهُ اللهُ مِنْ كُرَبِ يَوْمِ القِيامَةِ- ‘যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তিকে অবকাশ দিবে অথবা ঋণ ক্ষমা করে দিবে, আল্লাহ তাকে ক্বিযামতের দিন দুঃখ-কষ্ট হ’তে মুক্তি দিবেন’।[27] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন, مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا، أَوْ وَضَعَ عَنْ مُعْسِرٍ أَظَلَّهُ اللهُ فِيْ ظِلِّهِ- ‘যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তিকে অবকাশ দিবে অথবা তার ঋণ মাফ করে দিবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্বিয়ামতের দিন রহমতের এক বিশেষ ছায়া দান করবেন’।[28]
৩২. গোলাম আযাদ করা :
কোন মুসলিম দাসকে মুক্ত করলে তা জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ লাভের উপায় হিসাবে গণ্য হয়। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, أَيُّمَا اِمْرِئٍ مُسْلِمٍ أَعْتَقَ اِمْرَأً مُسْلِمًا كَانَ فِكَاكُهُ مِنَ النَّارِ- ‘যে কোন মুসলমান দাসকে মুক্ত করবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে’।[29]
তিনি আরো বলেন,أَيُّمَا رَجُلٍ أَعْتَقَ امْرَأً مُسْلِمًا اسْتَنْقَذَ اللهُ بِكُلِّ عُضْوٍ مِنْهُ عُضْوًا مِنْهُ مِنَ النَّارِ ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে মুক্ত করবে, আযাদ ব্যক্তির প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে আল্লাহ তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন’।[30]
৩৩. তওবা করা :
যে ব্যক্তি অপরাধ করার পর আল্লাহর নিকটে ক্ষমা চায় সে আল্লাহর ভালবাসা লাভ করে। এতে আল্লাহ যত বেশী খুশী হন, অন্য কোন ইবাদতে তিনি তত খুশী হন না। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, كُلُّ بَنِيْ آدَمَ خَطَّاءٌ وَخَيْرُ اَلْخَطَّائِيْنَ اَلتَّوَّابُوْنَ- ‘প্রত্যেক আদম সন্তানই অপরাধী। উত্তম অপরাধী তারাই যারা তওবা করে’।[31] রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ বলেন,
قَالَ يَا عِبَادِيْ إِنِّيْ حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلَى نَفْسِيْ وَجَعَلْتُهُ بَيْنَكُمْ مُحَرَّمًا فَلاَ تَظَالَمُوْا، يَا عِبَادِيْ كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلاَّ مَنْ هَدَيْتُهُ فَاسْتَهْدُوْنِيْ أَهْدِكُمْ يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ جَائِعٌ إِلاَّ مَنْ أَطْعَمْتُهُ فَاسْتَطْعِمُونِيْ أُطْعِمْكُمْ، يَا عِبَادِيْ كُلُّكُمْ عَارٍ إِلاَّ مَنْ كَسَوْتُهُ فَاسْتَكْسُوْنِيْ أَكْسُكُمْ، يَا عِبَادِيْ إِنَّكُمْ تُخْطِئُوْنَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا فَاسْتَغْفِرُوْنِيْ أَغْفِرْ لَكُمْ-
‘হে আমার বান্দারা! আমি যুলুমকে আমার জন্য হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা পরস্পর যুলুম করো না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই পথহারা কিন্তু আমি যাকে পথ দেখাই। সুতরাং তোমরা আমার নিকট সঠিক পথের সন্ধান চাও। আমি তোমাদেরকে পথ দেখাব। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই ক্ষুধার্ত কিন্তু আমি যাকে আহার দেই। অতএব তোমরা আমার নিকট খাদ্য চাও। আমি তোমাদেরকে খাদ্য দিব। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই নগ্ন বা বস্ত্রহীন কিন্তু আমি যাকে পরিধান করাই। সুতরাং তোমরা আমার নিকট পোশাক চাও। আমি তোমাদেরকে পরিধান করাব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা অপরাধ করে থাক রাত-দিন, আমি সমস্ত অপরাধ মাফ করে দেই। সুতরাং তোমরা আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিব’।[32]
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, والَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ، لَوْ لَمْ تُذْنِبُوْا، لَذَهَبَ اللهُ بِكُمْ، وَجَاءَ بِقَوْمٍ يُذْنِبُوْنَ، فَيَسْتَغْفِرُوْنَ اللهُ تَعَالَى، فَيَغْفِرُ لَهُمْ- ‘ঐ সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার আত্মা রয়েছে! যদি তোমরা গুনাহ না করতে আল্লাহ তোমাদের সরিয়ে দিতেন এবং এমন এক জাতিকে সৃষ্টি করতেন যারা গুনাহ করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত। আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন’।[33]
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, فَإِنَّ الْعَبْدَ إِذَا اعْتَرَفَ ثُمَّ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ- ‘যখন বান্দা গুনাহ স্বীকার করে এবং অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন’।[34]
বান্দা পাপ করার পর আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি অতি খুশি হন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
اَللَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِيْنَ يَتُوْبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتِهِ بِأَرْضِ فَلاَةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ فَأَيِسَ مِنْهَا فَأَتَى شَجَرَةً فَاضْطَجَعَ فِيْ ظِلِّهَا قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ هُوَ بِهَا قَائِمَةٌ عِنْدَهُ فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ اللَّهُمَّ أَنْتَ عَبْدِيْ وَأَنَا رَبُّكَ أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ-
‘আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবা ও ক্ষমা চাওয়াতে আনন্দিত হন, যখন সে তাঁর নিকট তওবা করে, তোমাদের মধ্যকার সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক যার বাহন একটি মরু প্রান্তরে তার নিকট হ’তে ছুটে পালায় যার পিঠে তার খাদ্য ও পানীয় ছিল। এতে লোকটি হতাশ হয়ে যায়। অতঃপর সে একটি গাছের নিকট এসে তার ছায়ায় শুয়ে পড়ে। সে তার বাহন সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিরাশ। এমতাবস্থায় সে হঠাৎ দেখে বাহন তার নিকট দাঁড়িয়ে আছে। সে তার লাগাম ধরে আনন্দের আতিশয্যে বলে ওঠে, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা আর আমি তোমার প্রতিপালক! সে ভুল করে আনন্দের আতিশয্যে এরূপ বলে ফেলে’।[35] অন্য হাদীছে এসেছে, তিনি বলেন,
إِنَّ عَبْدًا أَصَاب ذَنْبًا، وَرُبَّمَا قَالَ، أَذْنَبَ ذَنْبًا فَقَالَ: رَبِّ أَذْنَبْتُ وَرُبَّمَا قَالَ: أَصَبْتُ فَاغْفِرْ لِيْ فَقَالَ رَبُّهُ: أَعَلِمَ عَبْدِيْ أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُذُ بِهِ غَفَرْتُ لِعَبْدِيْ ثُمَّ مَكَثَ مَا شَاءَ اللهُ ثُمَّ أَصَابَ ذَنْبًا، أَوْ أَذْنَبَ ذَنْبًا فَقَالَ: رَبِّ أَذْنَبْتُ، أَوْ أَصَبْتُ آَخَرَ فَاغْفِرْهُ فَقَالَ: أَعَلِمَ عَبْدِيْ أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ، وَيَأْخُذُ بِهِ غَفَرْتُ لِعَبْدِيْ ثُمَّ مَكَثَ مَا شَاءَ اللهُ ثُمَّ أَذْنَبَ ذَنْبًا وَرُبَّمَا قَالَ: أَصَابَ ذَنْبًا قَالَ: قَالَ رَبِّ أَصَبْتُ أَوْ أَذْنَبْتُ آخَرَ فَاغْفِرْهُ لِيْ فَقَالَ: أَعَلِمَ عَبْدِيْ أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُذُ بِهِ غَفَرْتُ لِعَبْدِيْ ثَلاَثًا فَلْيَعْمَلْ مَا شَاءَ-
‘কোন বান্দা অপরাধ করল এবং বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি অপরাধ করেছি, তুমি তা ক্ষমা কর। তখন আল্লাহ বলেন, (হে আমার ফেরেশতাগণ!) আমার বান্দা কি জানে যে তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন অথবা অপরাধের কারণে শাস্তি দিবেন? (তোমরা সাক্ষী থাক) আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর আল্লাহ যতদিন চাইলেন ততদিন সে অপরাধ না করে থাকল। আবার অপরাধ করল এবং বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি আবার অপরাধ করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা কর। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা কি জানে যে তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন অথবা অপরাধের কারণে শাস্তি দিবেন? আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর সে অপরাধ না করে থাকল যতদিন আল্লাহ চাইলেন। আবার অপরাধ করল এবং বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি আবার আর এক অপরাধ করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা কর। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা কি জানে যে তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন অথবা অপরাধের কারণে শাস্তি দেন? আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। সে যা ইচ্ছা করুক’।[36]
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ক্ষমা প্রার্থনা করার শ্রেষ্ঠ দো‘আ হ’ল তোমার এরূপ বলা-
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّيْ لاَ إلهَ إلاَّ أنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وأبُوْءُ بِذَنْبِيْ، فَاغْفِرْ لِيْ، فَإنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إلاَّ أنْتَ. مَنْ قَالَهَا مِنَ النَّهَارِ مُوْقِناً بِهَا، فَمَاتَ مِنْ يَوْمِهِ قَبْلَ أَنْ يُمْسِيَ، فَهُوَ مِنْ أهْلِ الجَنَّةِ، وَمَنْ قَالَهَا مِنَ اللَّيْلِ، وَهُوَ مُوْقِنٌ بِهَا، فَمَاتَ قَبْلَ أنْ يُصْبِحَ، فَهُوَ مِنْ أهْلِ الجَنَّةِ-
‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ব্যতীত কোন মাবূদ নেই, তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার বান্দা, আমি আমার সাধ্যানুযায়ী তোমার চুক্তি ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার কৃতকর্মের মন্দ পরিণাম হ’তে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। আমার প্রতি তোমার অনুগ্রহকে আমি স্বীকার করি এবং আমার অপরাধকে স্বীকার করি। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত অপরাধ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, যে ব্যক্তি এ দো‘আর প্রতি বিশ্বাস রেখে দিনে বলবে আর সন্ধ্যার আগে মারা যাবে, সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে বিশ্বাস করে রাতে বলবে এবং সকাল হওয়ার আগে মারা যাবে সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে’।[37]
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,
قَالَ الله تَعَالَى يَا ابْنَ آدَمَ، إنَّكَ مَا دَعَوْتَنِيْ وَرَجَوْتَنِيْ غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ مِنْكَ وَلاَ أُبَالِي. يَا ابْنَ آدَمَ، لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوْبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ، ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِيْ غَفَرْتُ لَكَ وَلاَ أُبَالِيْ. يَا ابْنَ آدَمَ، إِنَّكَ لَوْ أتَيْتَنِيْ بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايَا، ثُمَّ لَقِيْتَنِيْ لاَ تُشْرِكْ بِيْ شَيْئاً، لأَتَيْتُكَ بقُرَابِهَا مَغْفِرَةً-
‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান! যতদিন তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার নিকট ক্ষমার আশা রাখবে আমি তোমাকে ক্ষমা করব, তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন। আমি কারো পরওয়া করি না। আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্তও পৌঁছে অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। আমি ক্ষমা করার ব্যাপারে কারও পরওয়া করি না। আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার দরবারে উপস্থিত হও এবং আমার সাথে কোন শরীক না করে আমার সামনে আস, আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হব’।[38] রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,
مَنْ لَزِمَ الاسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيْقٍ مَخْرَجاً، وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجاً، وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ-
‘যে ব্যক্তি সর্বদা ক্ষমা চায়, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য প্রত্যেক সংকীর্ণতা হ’তে একটি পথ বের করে দেন এবং প্রত্যেক চিন্তা হ’তে তাকে মুক্তি দেন। আর তাকে অকল্পনীয় উৎস হ’তে রিযিক দান করেন’।[39]
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বলল, أسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِيْ لاَ إلَهَ إلاَّ هُوَ الحَيُّ القَيُوْمُ وَأتُوْبُ إلَيْهِ، غُفِرَتْ ذُنُوْبُهُ، وإنْ كانَ قَدْ فَرَّ مِنَ الزَّحْفِ- (আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই। যিনি ব্যতীত কোন মাবূদ নেই। যিনি চিরঞ্জীব চির প্রতিষ্ঠাতা এবং তাঁর নিকট তওবাকারী।) আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন যদিও সে জিহাদের মাঠ হ’তে পালিয়ে গিয়ে থাকে’।[40]
উপরে বর্ণিত আমলগুলি কোন মুমিন পূর্ণ একনিষ্ঠতা সহকারে যথাযথভাবে আদায় করতে পারলে সে অবশ্যই জান্নাত লাভ করতে পারবে। আল্লাহর উপরে অবিচল আস্থা-বিশ্বাস ও তাঁর রহমত লাভের আশা নিয়ে এসব আমলের পাশাপাশি আরো যেসব আমলে আল্লাহ রাযী-খুশি ও সন্তুষ্ট হন সেগুলি সম্পাদন করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য অবশ্য করণীয়। আল্লাহ আমাদের সকলকে জান্নাতী আমলসমূহ সম্পাদন করে পরকালীন মুক্তি ও জান্নাত লাভ করার তাওফীক দান করুন-আমীন!
[1]. বুখারী ২/৮৮২; মুসলিম, মিশকাত হা/৫৬৮ ‘ছালাত’ অধ্যায়।
[2]. মুসলিম হা/২৫৫১; মিশকাত হা/৪৯১২, ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়।
[3]. আহমাদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৯৩৯; ছহীহুল জামে‘ হা/১২৪৯।
[4]. ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪৭২৪।
[5]. বুখারী হা/১৩৯৬।
[6]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪৯; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৫০৮।
[7]. আহমাদ, বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৪৯৯২; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/২৫৬০।
[8]. বুখারী হা/৬০১৬; মিশকাত হা/৪৯৬২।
[9]. মুসলিম হা/৪৬; মিশকাত হা/৪৯৬৩।
[10].বুখারী হা/৬০০৭; নাসাঈ, দারেমী, মিশকাত হা/৪৯৫১।
[11]. আবু দাউদ হা/৫১৫০, সনদ ছহীহ।
[12]. মুসলিম হা/২৯৮৩।
[13]. মুসলিম হা/২৬৩১; মিশকাত হা/৪৯৫০।
[14]. তিরমিযী হা/১৯১৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৯৭।
[15]. মুওয়াত্তা মালেক, মিশকাত, হা/৫০১১, সনদ ছহীহ।
[16]. মুসলিম হা/২৫৬৬, মিশকাত, হা/৫০০৬।
[17]. মুসলিম, হা/২৫৬৭; মিশকাত, হা/৫০০৭।
[18]. আবুদাঊদ হা/৩৫২৭, মিশকাত, হা/৫০১২, ছহীহ লি-গায়রিহি।
[19]. বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত, হা/৪৯৫৮।
[20]. মুসলিম, তিরমিযী হা/১৯৩০; আবুদাঊদ হা/৪৯৪৬।
[21]. মুসলিম হা/২৬৯৯; মিশকাত হা/২০৪।
[22]. আহমাদ, বায়হাক্বী, মিশকাত হা/৪৮৭০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪৭০; ছহীহুল জামে‘ হা/১০১৮।
[23]. মিশকাত হা/৪৯৪১; সিলসিলা ছহীহা হা/২৬১২, ১৯৩৪।
[24]. আবু নু‘আইম, মিশকাত হা/৩২৫৪, হাদীছ ছহীহ।
[25]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৯০১।
[26]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৯০২।
[27]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৯০৩।
[28]. মুসলিম, বাংলা মিশকাত হা/২২৭৮।
[29]. ইবনু মাজাহ হা/২৫২২; তিরমিযী হা/১৫৪৭; ছহীহাহ হা/১৮২৮।
[30]. বুখারী হা/২৫১৭; মুসলিম হা/১৫০৯।
[31]. আবু দাউদ, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/২৩৪০।
[32]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৬।
[33]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৮।
[34]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৩০।
[35]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৩২।
[36]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৩৩।
[37]. বুখারী, মিশকাত হা/২৩৩৫।
[38]. তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/২৩৩৬।
[39]. আহমাদ, মিশকাত হা/২৩৩৯।
[40]. তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/২৩৫৩।