পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ । পর্ব ৭ । পর্ব ৮ । পর্ব ৯ । শেষ পর্ব ।
সুন্নাহর দিকে ফিরে যাওয়ার আবশ্যকতা এবং এর বিরোধিতা করার নিষিদ্ধতা :
সম্মানিত ভ্রাতৃমন্ডলী! প্রথম যুগের সকল মুসলমানের নিকট এ কথা সর্বজনবিদিত ছিল যে, জীবনের সকল দিক ও বিভাগে রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত ইসলামী শরী‘আতের দ্বিতীয় ও শেষ উৎস। চাই তা গায়েবী আক্বীদাগত বিষয়ে হোক অথবা আমলগত বিধি-বিধান হোক অথবা রাজনৈতিক বা নৈতিক বিধানগত বিষয়ে হোক। কোন রায়, ইজতিহাদ বা ক্বিয়াসের ভিত্তিতে উপরোক্ত কোন ক্ষেত্রেই এর বিরোধিতা করা কোনভাবেই জায়েয নয়। যেমন ইমাম শাফেঈ (রহঃ) তাঁর ‘আর-রিসালাহ’ গ্রন্থের শেষে বলেছেন,لَا يَحِلُّ الْقِيَاسُ وَالْخَبَرُ مَوْجُوْدٌ ‘খবর (হাদীছ) মওজূদ থাকতে ক্বিয়াস বৈধ নয়’। পরবর্তী উছূলবিদগণেরও একই অভিমত। যেমন তারা বলেন, إِذَا وَرَدَ الْأَثَرُ بَطَلَ النَّظَرُ ‘হাদীছ পেলে রায় বাতিল হয়ে যাবে’। لَا اِجْتِهَادَ فِيْ مَوْرِدِ النَّصِّ- ‘(কুরআন-সুন্নাহর) দলীল থাকতে ইজতিহাদ চলে না’। পবিত্র কিতাব ও সুন্নাতই এক্ষেত্রে তাদের ভরসা।
কুরআন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাতের কাছে ফায়ছালা চাওয়ার নির্দেশ দেয় :
এ বিষয়ে কুরআনে অনেক আয়াত রয়েছে। আমি স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যে ভূমিকায় কিছু আয়াত উল্লেখ করাই যথেষ্ট মনে করেছি। فَإِنَّ الذِّكْرَى تَنْفَعُ الْمُؤْمِنِيْنَ ‘কেননা স্মরণ করিয়ে দেওয়া মু’মিনদের উপকারে আসবে’ (যারিয়াত ৫১/৫৫)।
(১) মহান আল্লাহ বলেন,وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُولُهُ أَمْراً أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلالاً مُبِيْناً- ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে ফায়ছালা দিলে কোন মুমিন পুরুষ বা নারীর সে বিষয়ে নিজস্ব কোন ফায়ছালা দেওয়ার এখতিয়ার নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে, সে ব্যক্তি স্পষ্ট ভ্রান্তিতে পতিত হবে’ (আহ্যাব ৩৩/৩৬)।
(২) তিনি বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا لا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللهِ وَرَسُوْلِهِ وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আগে বেড়োনা। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন’ (হুজুরাত ৪৯/১)।
(৩) তিনি আরো বলেন,قُلْ أَطِيْعُوْا اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللهَ لا يُحِبُّ الْكَافِرِيْنَ ‘তুমি বল, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। যদি তারা এতে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহ’লে (তারা জেনে রাখুক যে) আল্লাহ কাফিরদের ভালবাসেন না’ (আলে ইমরান ৩/৩২)।
(৪) তিনি আরো বলেন,وَأَرْسَلْنَاكَ لِلنَّاسِ رَسُولاً وَكَفَى بِاللهِ شَهِيْداً، مَنْ يُطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ تَوَلَّى فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظاً- ‘বস্ত্ততঃ আমরা তোমাকে মানব জাতির জন্য রাসূল হিসাবে প্রেরণ করেছি। আর (এজন্য) সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে, সে আল্লাহর আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাদের উপর আমরা তোমাকে রক্ষক হিসাবে প্রেরণ করিনি’ (নিসা ৪/৭৯-৮০)।
(৫) তিনি আরো বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا أَطِيْعُوْا اللهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيْلاً-
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের ও তোমাদের নেতৃবৃন্দের। অতঃপর যদি কোন বিষয়ে তোমরা বিতন্ডা কর, তাহ’লে বিষয়টি আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। এটাই কল্যাণকর ও পরিণতির দিক দিয়ে সর্বোত্তম’ (নিসা ৪/৫৯)।
(৬) তিনি আরো বলেন,وَأَطِيعُوا اللهَ وَرَسُولَهُ وَلا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ وَاصْبِرُوا إِنَّ اللهَ مَعَ الصَّابِرِيْنَ ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। আপোষে ঝগড়া কর না। তাহ’লে তোমরা হীনবল হয়ে যাবে ও তোমাদের শক্তি উবে যাবে। তোমরা ধৈর্য ধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন’ (আনফাল ৮/৪৬)।
(৭) তিনি আরো বলেন, وَأَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَاحْذَرُوا فَإِنْ تَوَلَّيْتُمْ فَاعْلَمُوا أَنَّمَا عَلَى رَسُولِنَا الْبَلاغُ الْمُبِيْنُ- ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসূলের আনুগত্য কর এবং (হারাম থেকে) সাবধান থাক। অতঃপর যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে জেনে রেখ আমাদের রাসূলের দায়িত্ব কেবল স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া’ (মায়েদাহ ৫/৯২)।
(৮) তিনি আরো বলেন,
لا تَجْعَلُوا دُعَاءَ الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاءِ بَعْضِكُمْ بَعْضاً قَدْ يَعْلَمُ اللهُ الَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنْكُمْ لِوَاذاً فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيْبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ-
‘রাসূলের প্রতি আহবানকে তোমরা পরস্পরের প্রতি আহবানের ন্যায় গণ্য করো না। আল্লাহ তাদেরকে জানেন যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে চলে যায়। অতএব যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সাবধান হৌক যে, ফিৎনা তাদেরকে গ্রাস করবে অথবা মর্মন্তুদ শাস্তি তাদের উপর আপতিত হবে’ (নূর ২৫/৬৩)।
(৯) তিনি আরো বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيْكُمْ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللهَ يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِهِ وَأَنَّهُ إِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আহবানে সাড়া দাও। যখন তিনি তোমাদের আহবান করেন ঐ বিষয়ের দিকে যা তোমাদের (মৃত অন্তরে) জীবন দান করে। জেনে রেখ, আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের মাঝে অন্তরায় হয়ে থাকেন (অর্থাৎ তাঁর অনুমতিক্রমেই মানুষ মুমিন ও কাফির হয়ে থাকে)। পরিশেষে তাঁর কাছেই তোমাদের সমবেত করা হবে’ (আনফাল ৮/২৪)।
(১০) তিনি আরো বলেন,
وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ، وَمَنْ يَعْصِ اللهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَاراً خَالِداً فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِيْنٌ-
‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদী সমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর এটাই হ’ল মহা সফলতা’। ‘পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে এবং তাঁর সীমাসমূহ লংঘন করবে, তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে চিরদিন থাকবে। আর তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি’ (নিসা ৪/১৩-১৪)।
(১১) তিনি আরো বলেন,
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِيْنَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلالاً بَعِيْداً، وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنْزَلَ اللهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنْكَ صُدُوداً-
‘তুমি কি তাদের দেখনি, যারা ধারণা করে যে, তারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে যা আপনার উপর নাযিল হয়েছে তার উপর এবং যা আপনার পূর্বে নাযিল হয়েছে তার উপর। তারা ত্বাগূতের নিকট ফায়ছালা পেশ করতে চায়। অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তাকে অস্বীকার করার জন্য। বস্ত্ততঃ শয়তান তাদেরকে দূরতম ভ্রষ্টতায় নিক্ষেপ করতে চায়। যখন তাদেরকে বলা হয়, এসো আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে, তখন তুমি কপট বিশ্বাসীদের দেখবে যে, তারা তোমার থেকে একেবারেই মুখ ফিরিয়ে নিবে’ (নিসা ৪/৬০-৬১)।
(১২) তিনি আরো বলেন,
إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِيْنَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللهَ وَيَتَّقْهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَائِزُوْنَ-
‘অথচ মুমিনদের কথা তো কেবল এটাই হ’তে পারে যে, যখন তাদেরকে আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকে ডাকা হয় তাদের মধ্যে ফায়ছালা করে দেওয়ার জন্য, তখন তারা বলবে আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম। আর এরাই হল সফলকাম। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে এবং আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর অবাধ্যতা হতে বেঁচে থাকে, তারাই হ’ল কৃতকার্য’ (নূর ২৪/৫১-৫২)।
(১৩) তিনি আরো বলেন, وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ- ‘আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা হ’তে বিরত থাক। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা’ (হাশর ৫৯/৭)।
(১৪) তিনি আরো বলেন, لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْراً- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসকে কামনা করে ও অধিকহারে আল্লাহকে স্মরণ করে তার জন্য’ (আহ্যাব ৩৩/২১)।
(১৫) তিনি আরো বলেন, وَالنَّجْمِ إِذَا هَوَى، مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوَى، وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى، إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى- ‘শপথ নক্ষত্ররাজির যখন তা অস্তমিত হয়। তোমাদের সাথী পথভ্রষ্ট হননি বা বিভ্রান্ত হননি। তিনি নিজ খেয়াল-খুশীমত কোন কথা বলেন না। এটি কেবল তাই যা তার নিকট অহি করা হয়’ (নাজম ৫৩/১-৪)।
(১৬) তিনি আরো বলেন,وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ ‘আর আমরা তোমার নিকটে নাযিল করেছি কুরআন, যাতে তুমি মানুষকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে দাও যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যেন তারা চিন্তা-গবেষণা করে’ (নাহল ১৬/৪৪)। এ রকম অনেক আয়াত রয়েছে।
সকল বিষয়ে নবীর অনুসরণের প্রতি আহবানকারী হাদীছ সমূহ :
এমন অনেক ছহীহ হাদীছ রয়েছে যেগুলি ধর্মীয় সকল বিষয়ে নবীর ‘আম (সাধারণ) ইত্তেবাকে আমাদের ওপর ওয়াজিব করে দেয়। তন্মধ্যে কিছু ছহীহ দলীল আমরা আপনাদের খেদমতে এখানে পেশ করছি :
(১) আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ إِلَّا
مَنْ أَبَى، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَنْ يَأْبَى؟ قَالَ: مَنْ
أَطَاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى- ‘অস্বীকৃতি
জ্ঞাপনকারী ব্যক্তি (আবা) ব্যতীত আমার উম্মতের সকলেই জানণাতে প্রবেশ করবে।
ছাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! অস্বীকৃতি
জ্ঞাপনকারী কে? তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল সে জান্নাতে
প্রবেশ করল, আর যে আমার অবাধ্যতা করল সেই ‘আবা’ বা অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী’।[1]
(২) জাবির বিন আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,
جَاءَتْ مَلاَئِكَةٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ نَائِمٌ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ: إِنَّهُ نَائِمٌ، وَقَالَ بَعْضُهُمْ: إِنَّ العَيْنَ نَائِمَةٌ، وَالقَلْبَ يَقْظَانُ، فَقَالُوا: إِنَّ لِصَاحِبِكُمْ هَذَا مَثَلًا، فَاضْرِبُوا لَهُ مَثَلًا، فَقَالَ بَعْضُهُمْ: إِنَّهُ نَائِمٌ، وَقَالَ بَعْضُهُمْ: إِنَّ العَيْنَ نَائِمَةٌ، وَالقَلْبَ يَقْظَانُ، فَقَالُوا: مَثَلُهُ كَمَثَلِ رَجُلٍ بَنَى دَارًا، وَجَعَلَ فِيهَا مَأْدُبَةً وَبَعَثَ دَاعِيًا، فَمَنْ أَجَابَ الدَّاعِيَ دَخَلَ الدَّارَ وَأَكَلَ مِنَ المَأْدُبَةِ، وَمَنْ لَمْ يُجِبِ الدَّاعِيَ لَمْ يَدْخُلِ الدَّارَ وَلَمْ يَأْكُلْ مِنَ المَأْدُبَةِ، فَقَالُوا: أَوِّلُوهَا لَهُ يَفْقَهْهَا، فَقَالَ بَعْضُهُمْ: إِنَّهُ نَائِمٌ، وَقَالَ بَعْضُهُمْ: إِنَّ العَيْنَ نَائِمَةٌ، وَالقَلْبَ يَقْظَانُ، فَقَالُوا: فَالدَّارُ الجَنَّةُ، وَالدَّاعِي مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَمَنْ أَطَاعَ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ، وَمَنْ عَصَى مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ عَصَى اللهَ، وَمُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرْقٌ بَيْنَ النَّاسِ، أَخْرَجَهُ الْبُخَارِيُّ أَيْضًا-
‘একদল
ফেরেশতা নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকটে আসলেন। তখন তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। তাদের কেউ
কেউ বললেন, তিনি ঘুমন্ত। আবার কেউ বললেন, নিশ্চয়ই তার চোখ ঘুমন্ত কিন্তু
অন্তর জাগ্রত। অতঃপর তারা বলাবলি করল, তোমাদের এই সাথীর একটি দৃষ্টান্ত
রয়েছে। সুতরাং তোমরা তার দৃষ্টান্ত পেশ কর। তাদের কেউ বলল, তিনি তো ঘুমিয়ে
আছেন। আবার কেউ বলল, তার চোখ ঘুমিয়ে আছে, কিন্তু তার অন্তর জাগ্রত। তারা
বলল, তার দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে একটি বাড়ী নির্মাণ করল। সেখানে
খাবারের ব্যবস্থা করে একজন আহবায়ককে পাঠাল লোকদেরকে আহবান করতে। যে
আহবায়কের ডাকে সাড়া দিল, সে গৃহে প্রবেশ করল এবং খাবার খেল। পক্ষান্তরে যে
আহবায়কের ডাকে সাড়া দিল না, সে গৃহে প্রবেশও করল না এবং খাবারও খেল না।
অতঃপর তারা বলল, তোমরা এর ব্যাখ্যা করে দাও যাতে তিনি বুঝতে পারেন। তাদের
কেউ বলল, তিনি ঘুমন্ত। আবার কেউ বলল, নিশ্চয়ই তার চোখ ঘুমন্ত কিন্তু অন্তর
জাগ্রত। তারপর তারা বলল, গৃহটি হ’ল জান্নাত আর দাঈ বা আহবায়ক হ’লেন
মুহাম্মাদ (ছাঃ)। সুতরাং যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের আনুগত্য করল, সে আল্লাহর
আনুগত্য করল। আর যে তার অবাধ্যতা করল, সে আল্লাহর অবাধ্যতা করল। মুহাম্মাদ
(ছাঃ) হ’লেন লোকদের মধ্যে হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী মানদন্ড’।[2]
(৩) আবু মূসা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) বলেন,
إِنَّمَا مَثَلِي وَمَثَلُ مَا بَعَثَنِي اللهُ بِهِ، كَمَثَلِ رَجُلٍ أَتَى قَوْمًا فَقَالَ: يَا قَوْمِ، إِنِّي رَأَيْتُ الجَيْشَ بِعَيْنَيَّ، وَإِنِّي أَنَا النَّذِيرُ العُرْيَانُ، فَالنَّجَاءَ فَأَطَاعَهُ طَائِفَةٌ مِنْ قَوْمِهِ، فَأَدْلَجُوا، فَانْطَلَقُوا عَلَى مَهَلِهِمْ فَنَجَوْا، وَكَذَّبَتْ طَائِفَةٌ مِنْهُمْ، فَأَصْبَحُوا مَكَانَهُمْ، فَصَبَّحَهُمُ الجَيْشُ فَأَهْلَكَهُمْ وَاجْتَاحَهُمْ، فَذَلِكَ مَثَلُ مَنْ أَطَاعَنِي فَاتَّبَعَ مَا جِئْتُ بِهِ، وَمَثَلُ مَنْ عَصَانِي وَكَذَّبَ بِمَا جِئْتُ بِهِ مِنَ الحَقِّ-
‘আমার ও আমাকে আল্লাহ যা
দিয়ে পাঠিয়েছেন এ দু’য়ের দৃষ্টান্ত হ’ল ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে কোন এক
সম্প্রদায়ের নিকট এসে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! আমি নিজ চোখে শত্রুবাহিনীকে
দেখলাম। নিশ্চয়ই আমি একজন স্পষ্ট সতর্ককারী। সুতরাং বাঁচো বাঁচো। ফলে তার
সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ তার কথা মান্য করল। তারা রাতেই পথ চলল এবং সময়
থাকতেই নিরাপদ স্থানে চলে গেল। ফলে তারা বেঁচে গেল। আর তাদের মধ্যে একদল
তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল এবং তারা তাদের স্বস্থানেই ভোর করল। ফলে
শত্রুবাহিনী সকালে সেখানে তাদেরকে পেয়ে নির্মূল করল। এটিই হ’ল ঐ
দু’ব্যক্তির দৃষ্টান্ত যে আমার ইত্তেবা করল এবং আমি যা নিয়ে এসেছি তার
অনুসরণ করল আর যে আমার অবাধ্যতা করল এবং আমি যে হক নিয়ে এসেছি তাকে মিথ্যা
প্রতিপন্ন করল’।[3]
(৪) আবু রাফে‘ (রাঃ) হ’তে
বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَا أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ
مُتَّكِئًا عَلَى أَرِيكَتِهِ يَأْتِيهِ الْأَمْرُ مِنْ أَمْرِي مِمَّا
أَمَرْتُ بِهِ أَوْ نَهَيْتُ عَنْهُ فَيَقُولُ لَا نَدْرِي مَا وَجَدْنَا
فِي كِتَابِ اللهِ اتَّبَعْنَاهُ (وإلا فلا)- ‘আমি তোমাদের কাউকে তার
নকশাখচিত খাটে হেলান দেয়া অবস্থায় পাব। তার নিকটে যখন এমন কোন বিষয় আসবে যে
ব্যাপারে আমি (সুনির্দিষ্ট) নির্দেশনা প্রদান করেছি অথবা তা করতে আমি
নিষেধ করেছি, তখন সে বলে, (এতো কিছু) আমি জানি না, আমি যা কিছু আল্লাহর
কিতাবে পেয়েছি তারই অনুসরণ করব। এছাড়া অন্য কিছুর অনুসরণ করব না’।[4]
(৫) মিক্বদাম বিন মা‘দীকারিব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন,
أَلَا إِنِّي أُوتِيتُ الْقُرْآنَ، وَمِثْلَهُ مَعَهُ أَلَا يُوشِكُ رَجُلٌ شَبْعَانُ عَلَى أَرِيكَتِهِ يَقُولُ عَلَيْكُمْ بِهَذَا الْقُرْآنِ فَمَا وَجَدْتُمْ فِيهِ مِنْ حَلَالٍ فَأَحِلُّوهُ، وَمَا وَجَدْتُمْ فِيهِ مِنْ حَرَامٍ فَحَرِّمُوهُ، أَلَا لَا يَحِلُّ لَكُمْ لَحْمُ الْحِمَارِ الْأَهْلِيِّ، وَلَا كُلُّ ذِي نَابٍ مِنَ السَّبُعِ، وَلَا لُقَطَةُ مُعَاهِدٍ، إِلَّا أَنْ يَسْتَغْنِيَ عَنْهَا صَاحِبُهَا، وَمَنْ نَزَلَ بِقَوْمٍ فَعَلَيْهِمْ أَنْ يَقْرُوهُ فَإِنْ لَمْ يَقْرُوهُ فَلَهُ أَنْ يُعْقِبَهُمْ بِمِثْلِ قِرَاهُ-
‘জেনে রাখো! আমি কুরআন প্রাপ্ত হয়েছি
ও তার ন্যায় আরেকটি বস্ত্ত। সাবধান! এমন একটি সময় আসছে যখন বিলাসী মানুষ
তার গদিতে বসে বলবে, তোমাদের জন্য এ কুরআনই যথেষ্ট। সেখানে যা হালাল পাবে,
তাকেই হালাল জানবে এবং সেখানে যা হারাম পাবে, তাকেই হারাম জানবে। যদিও
আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) সেই পরিমাণই হারাম করেছেন, যেই পরিমাণ আল্লাহ হারাম
করেছেন। সাবধান! তোমাদের জন্যে গৃহপালিত গাধা বৈধ নয়, প্রত্যেক নখওয়ালা
হিংস্র প্রাণীও নয়, অঙ্গীকারাবদ্ধ কাফেরের কুড়িয়ে পাওয়া হারানো বস্ত্তও নয়,
তবে মালিক যদি তা প্রয়োজন মনে না করে। কেউ যদি কোন কওমের নিকট অতিথি
হিসাবে অবতরণ করে, তাহ’লে তাদের উচিত তার আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা। আর যদি
তারা তাকে আপ্যায়ন না করে, তাহ’লে সে তার আতিথেয়তার মতই তাদের নিকট থেকে
বদলা নিবে’।[5]
(৬) আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন,تَرَكْتُ فِيْكُمْ شَيْئِيْنِ لَنْ تَضِلُّوا بَعْدَهُمَا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّتِيْ وَلَنْ يَتَفَرَّقَا حَتىَّ يَرِدَا عَلىَ الْحَوْضِ- ‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা এ দু’টিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকবে ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না। তা হ’ল আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাত। হাওযে কাওছারে আমার নিকট উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত
এ দু’টি কখনো পৃথক হবে না’।[6]
উল্লেখিত আয়াত ও হাদীছসমূহের সারসংক্ষেপ :
কুরআন মাজীদের উপরোক্ত আয়াত সমূহ ও হাদীছ সমূহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় রয়েছে। এর সারনির্যাস নিম্নরূপ:
(১) আল্লাহর ফায়ছালা এবং তাঁর রাসূলের ফায়ছালার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। এদু’য়ের কোনটিরই বিরোধিতা করার এখতিয়ার মুমিনের নেই। রাসূল (ছাঃ)-এর অবাধ্যতা করা আল্লাহর অবাধ্যতা করার মতই এবং এটা সুস্পষ্ট গোমরাহী।
(২)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আগে বাড়া যেমন জায়েয নয়, তেমনি আল্লাহ তা‘আলার আগে
বাড়াও জায়েয নয়। এতে সুন্নাতের বিরোধিতা করা নাজায়েয হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া
যায়। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,أَيْ لَا تَقُولُوا حَتَّى يَقُولَ، وَلَا
تَأْمُرُوا حَتَّى يَأْمُرَ، وَلَا تُفْتُوا حَتَّى يُفْتِيَ، وَلَا
تَقْطَعُوا أَمْرًا حَتَّى يَكُونَ هُوَ الَّذِي يَحْكُمُ فِيهِ وَيَمْضِي-
‘অর্থাৎ তিনি না বলা পর্যন্ত তোমরা বল না, তিনি আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত
তোমরা আদেশ দিও না, তিনি ফৎওয়া না দেওয়া পর্যন্ত তোমরা ফৎওয়া দিও না, তোমরা
কোন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করো না, যতক্ষণ না তিনি সে বিষয়ে
সিদ্ধান্ত দেন এবং তা বাস্তবায়ন করেন’।[7]
(৩) রাসূল (ছাঃ)-এর আনুগত্য হ’তে বিমুখ হওয়া কাফেরদের স্বভাব।
(৪) রাসূল (ছাঃ)-এর আনুগত্যকারী মূলতঃ আল্লাহরই আনুগত্যকারী।
(৫) দ্বীনের কোন বিষয়ে মতভেদ ও বিরোধ দেখা দিলে সে বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তন করা আবশ্যক। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আনুগত্য করতে এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ অর্থাৎ ‘আনুগত্য করো’ ক্রিয়াটিকে পুনরায় উল্লেখ করেছেন একথা বুঝানোর জন্য যে, স্বতন্ত্রভাবে রাসূলের আনুগত্য করা ওয়াজিব এবং তার নির্দেশকে কুরআনের নিকট পেশ করার প্রয়োজন নেই। বরং তিনি কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে তা নিঃশর্তভাবে পালন করা ওয়াজিব। সে বিষয়ে কুরআনে কোন নির্দেশনা থাকুক বা না থাকুক। কেননা তাঁকে কুরআন দেওয়া হয়েছে এবং তার সাথে অনুরূপ কিছু (হাদীছ) দেওয়া হয়েছে’। কিন্তু ‘উলুল আমর’-এর আনুগত্য নিঃশর্তভাবে করতে আদেশ করেননি। বরং ক্রিয়াটিকে বিলুপ্ত করে তাদের আনুগত্যকে রাসূলের আনুগত্যের আওতাভুক্ত করেছেন’।[8] আর এ বিষয়ে আলেমগণ একমত যে, আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার অর্থ হ’ল তাঁর কিতাবের দিকে ফিরে যাওয়া। আর রাসূলের দিকে ফিরে যাওয়া বলতে তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর নিকট যাওয়া এবং তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর সুন্নাতের দিকে ফিরে যাওয়া বুঝানো হয়েছে। এটি ঈমানের অন্যতম শর্তও বটে।
(৬) মতানৈক্যের সময় তা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সুন্নাহর দিকে ফিরে না গিয়ে মতভেদকে মেনে নেওয়াই শারঈ দৃষ্টিকোণে মুসলমানদের সকল চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়া এবং তাদের শৌর্য-বীর্য শক্তি-সামর্থ্য হারানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
(৭) রাসূল (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধাচরণ হ’তে সতর্ক করা হয়েছে। কেননা এতে দুনিয়া ও আখেরাতে অশুভ পরিণতি রয়েছে।
(৮) রাসূল(ছাঃ)-এর নির্দেশ অমান্যকারীরা দুনিয়াতে ফিৎনা-ফাসাদ এবং আখিরাতে মর্মান্তিক শাস্তির অধিকারী হয়ে যায়।
(৯) রাসূল(ছাঃ)-এর দাওয়াত ও তাঁর আদেশ মেনে চলা ওয়াজিব। আর এটি দুনিয়া ও আখিরাতে পবিত্র জীবন ও সফলতার চাবিকাঠি।
(১০) নবীর আনুগত্য জান্নাতে প্রবেশ এবং মহা সফলতার মাধ্যম। পক্ষান্তরে তাঁর অবাধ্যতা এবং তার নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করা জাহান্নামে প্রবেশ ও লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি ভোগের কারণ।
(১১) মুনাফিকরা যারা বাহ্যিকভাবে নিজেদেরকে মুসলিম পরিচয় দেয়, কিন্ত অন্তরে কুফরী লালন করে তাদের বৈশিষ্ট্য হ’ল যখন তাদেরকে মীমাংসার জন্য রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর সুন্নাতের দিকে আহবান করা হয়, তখন তারা তাতে সাড়া দেয় না। বরং তা থেকে কঠিনভাবে মানুষদেরকে বাধা দেয়।
(১২) মুমিনগণ মুনাফিকদের বিপরীত। কেননা যখন তাদেরকে রাসূলের
নিকট ফায়ছালার জন্য আহবান জানানো হয় তখন তারা দ্রুত সাড়া দেন এবং তৎক্ষণাৎ
অন্তরে ও মুখে বলেন, سَمِعْنَا وَأَطَعْناَ ‘আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম’।
ফলে তারা সফলকাম ও জান্নাতুন নাঈম লাভে ধন্য হন।
(১৩) রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে যা কিছু করতে আদেশ করেছেন তার অনুসরণ করা আমাদের ওপর ওয়াজিব। তেমনি তিনি যা কিছু থেকে আমাদেরকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বেuঁচ থাকাও ওয়াজিব।
(১৪) আমরা যদি আল্লাহ ও পরকালকে চাই তাহ’লে আমাদের দ্বীনী সকল বিষয়ে তিনি আমাদের আদর্শ ও নমুনা।
(১৫) যা কিছু রাসূল (ছাঃ)-এর যবান থেকে নির্গত হয়েছে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে অহী। চাই তা দ্বীন সম্পর্কিত হোক বা এমন অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে হোক, যা বিবেক ও অভিজ্ঞতা দ্বারা জানা যায় না। আগে-পিছে কোন দিক থেকেই বাতিল তাকে স্পর্শ করতে পারে না।
(১৬) রাসূলের সুন্নাত তাঁর ওপর নাযিলকৃত কুরআনের ব্যাখ্যা।
(১৭) কুরআন সুন্নাহ থেকে বিমুখ করে না; বরং সুন্নাহর অনুসরণ ও অনুকরণ কুরআনের মতই ওয়াজিব। যে ব্যক্তি সুন্নাহ হ’তে বিমুখ সে রাসূলের বিরোধী এবং তাঁর অবাধ্য। এর মাধ্যমে সে পূর্বোল্লেখিত আয়াতগুলিরও বিরোধী সাব্যস্ত হবে।
(১৮) আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) যা হারাম করেছেন তা আল্লাহ কর্তৃক হারাম করার মতই। অনুরূপ তিনি যা কিছু নিয়ে এসেছেন যা কুরআনে নেই তা কুরআনে থাকার মতই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَلَا إِنِّي أُوتِيتُ الْقُرْآنَ، وَمِثْلَهُ مَعَهُ ‘সাবধান! আমাকে কুরআন দেয়া হয়েছে এবং তার সাথে অনুরূপ কিছু (অর্থাৎ হাদীছ) দেয়া হয়েছে’।
(১৯) কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরাই পদস্খলন ও ভ্রষ্টতা থেকে নিরাপদ থাকার উপায়। এ বিধান ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে। সুতরাং আল্লাহর কিতাব (কুরআন) ও তাঁর নবীর সুন্নাতের মাঝে পার্থক্য করা জায়েয নয়।
[চলবে]
[1]. বুখারী হা/৭২৮০; আহমাদ হা/৮৫১১।
[2] .বুখারী হা/৭২৮১।
[3]. বুখারী হা/৭২৮৩; হা/ মুসলিম হা/২২৮৩।
[4] .আহমাদ; আবুদাঊদ হা/৪৬০৫; তিরমিযী হা/২৬৬৩; ইবনু মাজাহ হা/১৩; ত্বাহাবী, শারহু মা‘আনিল আছার হা/৬৪১২-১৩, সনদ ছহীহ।
[5]. আবুদাঊদ হা/৪৬০৪; তিরমিযী হা/২৬৬৩-৬৪; হাকেম (হা/৩৭১) ছহীহ বলেছেন। আহমাদ (১৭২১৩) ছহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।
[6]. মালেক (হা/৩৩৩৮) মুরসাল সূত্রে ও হাকেম (হা/৩১৯) মুসনাদ সূত্রে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি একে ছহীহ বলেছেন।
[7]. ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন ১/৫৮।
[8]. ঐ, ১/৫৪।