পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ । পর্ব ৭ । পর্ব ৮ । পর্ব ৯ । শেষ পর্ব । 

ভূমিকা : কুফরী ও ভ্রষ্টতার প্রবল স্রোত মুসলিম উম্মাহর উপর ছড়ি ঘুরাতে এবং তাদেরকে ধ্বংসের অতল গহবরে নিক্ষেপ করতে সদা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নব্য জাহিলিয়াতের দোসররা তাদের সাধনা অব্যাহত রেখেছে এবং সুপ্রতিষ্ঠিত মুসলিম উম্মাহকে তাদের আক্বীদা-বিশ্বাস থেকে বিচ্ছিন্ন করার এবং তাদের জীবন দর্শন হ’তে ইসলামী আদর্শকে উপড়ে ফেলার লক্ষে নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য সঞ্চয় করছে। এতদসত্ত্বেও ঘটনা সমূহের পর্যবেক্ষকগণ উজ্জ্বল আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। যা ঐ নবোদ্ভূত প্রবাহের প্রতিনিধিত্ব করছে যা হামাগুড়ি দিচ্ছে ও নড়েচড়ে বসার চেষ্টা করছে এবং পথ তালাশ করছে। যাতে ধ্বংসাত্মক এই প্রচন্ড স্রোতকে দমন করতে পারে, এটিকে পশ্চাতে স্বস্থলে ফেরৎ পাঠাতে পারে এবং এর ভয়াবহ পরিণতি ও কুফল হ’তে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করা যায়।

সেই কাঙ্খিত জাগরণই হ’ল পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এ সকল কুঁড়ি ও প্রস্ফূটিত ফুলসদৃশ মুসলিম ও মুমিন যুবক বা যারা জীবনের চোখ উন্মীলন করার পর কিছু দাঈ ও সমাজ সংস্কারকদের আহবানে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়েছে। তারা তাদের মাঝে আত্মসম্মানবোধ ও আত্মরক্ষার চেতনা জাগ্রত করেছে এবং তাদের মাঝে জাগিয়ে তুলেছে ধর্মীয় অনুভূতি ও গর্বিত মানসিকতা। আর ঐ সকল যুবক দীর্ঘ পশ্চাৎপদতার পর জাতিকে নাড়া দেয় এবং শত্রু ও বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে তাদেরকে রক্ষার চেষ্টা করে। সে লক্ষে তারা নিষ্ঠার সাথে কাজও করছে। নির্ভয়ে তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। কিন্তু তারা দ্রুততার সাথে দেখতে পাচ্ছে, তারা যেখানে ছিল সেখানেই পড়ে আছে। দীর্ঘ পথ চলা ও কঠোর পরিশ্রম করার পরও তারা যেখান থেকে আন্দোলন ও জাগরণ শুরু করেছিল ঠিক সেখানেই আবার ফিরে এসেছে। ফলে তারা আফসোস করে ও বিচলিত হয়ে পড়ে। তাদের কেউ কেউ হতাশ হয়ে বসে পড়ে। আবার অন্যরা নতুন উদ্যমে চেষ্টা করে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এবং কাজ করে। কিন্তু তাদের অভিজ্ঞতার ফল পূর্বের চেয়ে ভাল কিছু বয়ে আনে না। আগের চেয়ে উত্তম কিছু অর্জিত হয় না। এভাবেই বারবার একই অবস্থা চলতে থাকে।

হ্যাঁ, এটিই হ’ল বর্তমান যুগে অধিকাংশ দাঈর অবস্থা। কেবল কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা, ক্ষতি, বিভ্রান্তি ও অস্পষ্টতা, বিশৃঙ্খলা ও অপরিণামদর্শিতা এবং নিষ্ফল প্রচেষ্টা বৈ কিছুই নয়। তারা সঠিক রাস্তাও চিনে না, দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোকদের দ্বারা পথও দেখে নেয় না, যিনি তাদের কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা হ’তে রক্ষা করবে ও গোলকধাঁধা হ’তে মুক্ত করবে, তাদের চেষ্টা-প্রচেষ্টাসমূহকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে, তাদের কর্মসমূহকে উপকারী ও সন্তোষজনক ক্ষেত্রে কাজে লাগাবে, যা অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছে দিবে ও কাঙ্খিত লক্ষ বাস্তবায়ন করতে সহায়ক হবে। 

কিতাব ও সুন্নাতের রাস্তা ব্যতীত দ্বিতীয় কোন সঠিক পথ নেই। এ দু’টিকে বুঝতে হবে সালাফে ছালেহীনের মানহাজ অনুসারে, সে অনুযায়ী আমল করতে হবে এবং সেদিকেই দাওয়াত দিতে হবে। এদু’টির নির্দেশনার ওপর অবিচল থাকতে হবে। কিতাব ও সুন্নাতের অনুসারী আলেমগণ, এ দু’টি অনুযায়ী একনিষ্ঠ আমলকারীগণ ও এর হেদায়াতের আলোকে হেদায়াতপ্রাপ্তরা ব্যতীত দক্ষ পথ প্রদর্শক আর কেউ নেই।

এপথ অনুসরণ না করেই কিছু মুসলিম যুবক ইসলামকে বিজয়ের পানে পৌঁছাতে ও মুসলিমদের মর্যাদা রক্ষার জন্য ব্যর্থ চেষ্টা করে। ঐ সমস্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ পথপ্রদর্শকের সহযোগিতা ছাড়াই ইসলামী আন্দোলনসমূহও কাঙ্খিত লক্ষ্য বাস্তবায়নের ব্যর্থ চেষ্টা করছে।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন। অফুরন্তু প্রশংসা, দয়া, মহান করুণা ও নে‘মত কেবল তাঁরই। তিনি আমাদের জন্য একজন আলেম সৃষ্টি করেছেন, যিনি প্রকৃত অর্থে সালাফে ছালেহীন ও সুপথপ্রাপ্ত ইমামগণের অন্তর্ভুক্ত। তিনি আমাদেরকে কিতাব ও সুন্নাতের জ্ঞানের পথ দেখিয়েছেন। লোকেরা যে বিষয়ে মতভেদ করেছে, সে বিষয়ে সত্য ও সঠিক পথ আমাদেরকে স্বীয় অনুকম্পায় তার মাধ্যমে দেখিয়েছেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বাণীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মূল্যবান গুপ্তধন ও মণি-মাণিক্য সম্পর্কে তিনি আমাদেরকে অবহিত করেছেন। ফলে আমরা দীর্ঘ ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত হওয়ার পর প্রশান্তি ও আরামের শীতলতা অনুভব করতে পেরেছি। আমরা দীর্ঘ কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা ও বিপথগামিতার পর পূর্ণ পরিতৃপ্তি ও সঠিক জ্ঞান লাভ করতে পেরেছি। তাই আমরা মনে করি, আমাদের ওপর সাধারণভাবে উম্মতের হক এবং মুসলিম যুবকদের বিশেষ হক হ’ল আমাদের পক্ষ থেকে তাদেরকে সেই কল্যাণের পথ দেখানো, মহান আল্লাহ তার মাধ্যমে যে পথ আমাদেরকে দেখিয়েছেন। তাদেরকে মুক্তির পথ দেখানো। যে পথপানে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নিয়ে এসেছেন। যাতে আমরা তাদের হাত ধরে হেদায়াতের পথে তুলে দিতে পারি, গোলকধাঁধা ও ধ্বংসের কারণ থেকে বাঁচার ক্ষেত্রে তাদেরকে সহযোগিতা করতে পারি। আল্লাহ তা‘আলাই সর্বদা সকল তাওফীক ও শক্তির মালিক।

এজন্যই আমরা যে সকল উপকারী ইলম ও সঠিক শিক্ষা লাভ করি তা সর্বদা মুসলমানদের নিকট পেশ করার চেষ্টা করেছি, যা তাদের নিকট সঠিক ইসলামকে স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করে যেখানে কোন অস্পষ্টতা থাকে না, সহজভাবে যেখানে কোন জটিলতা থাকে না। নিষ্কলুষ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রূপে যেখানে কোন অপরিচ্ছন্নতা থাকে না, সকল মাসআলা দলীলভিত্তিক, মতামতগুলি উৎস সহ উপস্থাপন করে। যা জ্ঞান অন্বেষণকারীদেরকে বড় বড় অনেক গ্রন্থ থেকে অমুখাপেক্ষী করবে, তাদেরকে উজ্জ্বল দলীল ও সুস্পষ্ট প্রমাণাদি দ্বারা সন্তুষ্ট করবে। তাদেরকে ধ্বংস, বিনাশ, মতভেদ ও কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা হ’তে দূরে রাখবে। তাদের মাঝে চিন্তার ঐক্য সৃষ্টি করবে, যা একক অনুভূতি হ’তে সৃষ্টি হয়ে থাকে। অতঃপর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা, তা বাস্তবায়ন ও প্রচার-প্রসারের জন্য প্রচেষ্টা ও সারাবিশ্বে তাকে

শক্তিশালী করতে বড় সহায়ক হবে- ইনশাআল্লাহ।

আমরা চাই এ সমস্ত কিতাব ও পুস্তিকার মাধ্যমে বিশুদ্ধ ইলমী জাগরণ শুরু হোক এবং ইসলামের দাঈদের জন্য এগুলিই শক্তিশালী চিন্তার ভিত্তি হেŠক। এজন্যই আমরা এগুলিকে ইসলামী চিন্তাবিদ মুসলিম ওলামা ও মুমিন দাঈদের নিকট পেশ করছি, যাতে এ বিষয়ে তারা গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। আমরা সকল প্রকার গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানাই এবং সমালোচককে কৃতজ্ঞচিত্তে বরণ করি এবং সেটিকে আমাদের কর্মকে সফল করার ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত ও কার্যকরী অংশগ্রহণ হিসাবে মনে করি। আমরা ফলপ্রসূ ও পরিপক্কতার পর্যায়ে পৌঁছার সোপান হিসাবে সেটাকে মনে করি। কিন্তু আমরা মনে করি, প্রত্যেকটি সমালোচনা লিখিত হোক অথবা প্রকাশিত তাতে নিম্নোক্ত তিনটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকা আবশ্যক:

  1. ইখলাছ তথা তা একমাত্র আল্লাহর সন্তষ্টির জন্যই হ’তে হবে। সমালোচকের উদ্দেশ্য হ’তে হবে হক-এর সন্ধান পাওয়া ও নছীহতের অরিহার্য দায়িত্ব পালন করা।
  2. সমালোচনা হ’তে হবে বিশুদ্ধ জ্ঞান ও বুঝের আলোকে যা আল্লাহর কিতাব ও নবীর সুন্নাতের মত দ্বীনের দু’টি মৌলিক ও সুস্পষ্ট রুকন ভিত্তিক হবে।
  3. সমালোচনা ইসলামী মহান আদর্শ ও বস্ত্তনিষ্ঠ জ্ঞানসুলভ পদ্ধতিতে হ’তে হবে, যা খ্যাতি লাভ ও অন্যকে অবজ্ঞা করা, বোকা বানানো ও মূর্খতা প্রমাণ করার মত হীন উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত হবে। আল্লাহর নিকট পানাহ চাই। তবে যে সীমালঙ্ঘন ও যুলুম করে এবং দুর্ব্যবহার ও মিথ্যারোপ করে তার ব্যাপারটা ভিন্ন।

‘আল-হাদীছু হুজ্জাতুন বিনাফসিহী ফিল-আক্বায়েদ ওয়াল-আহকাম’ (الحديث حجة بنفسه في العقائد والأحكام) শীর্ষক যে পুস্তিকাটি আমি আজ পেশ করছি তা আমাদের উসতাদ আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) সংকলিত। এটি মূলত বর্তমান খৃষ্টীয় স্পেনের : পূর্বে যার নাম ছিল আন্দালুস গ্রানাডা নগরীতে ১৩৯২ হিঃ সনের রজব মাস মোতাবেক ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে ‘মুসলিম ছাত্রদের ঐক্য’ শীর্ষক সম্মেলনে প্রদত্ত একটি ভাষণ।

সম্মানিত লেখক এখানে সুন্নাত, এর মর্যাদা ও প্রামাণ্যতা সম্পর্কে একজন মুসলমানের সঠিক অবস্থান কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি পুস্তকটিকে চারটি অধ্যায়ে সুবিন্যস্ত করেছেন। প্রথম অধ্যায়ে ইসলামে সুন্নাতের মর্যাদা, সুন্নাতের দিকে ফিরে যাওয়া মুসলমাদের ওপর ওয়াজিব এবং এটিকেই শারঈ বিষয়ে বিচারিক মানদন্ড হিসাবে গ্রহণ করা ও এর বিরোধিতা করা হ’তে সতর্ক করা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।

দ্বিতীয় অধ্যায়ে পরবর্তীদের সুন্নাতের বিরোধিতা করার নানা অপচেষ্টা এবং এজন্য তারা যে সকল ক্বিয়াস ও উছূল বা মূলনীতি তৈরী করেছে এবং এগুলির কারণে সুন্নাতকে দেয়ালে ছুঁড়ে ফেলেছে তা বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন।

প্রাচীন ধর্মতাত্ত্বিকরা যে সকল কায়েদা (নিয়ম) তৈরী করেছে এবং আধুনিক কিছু আলেম ও দাঈ সেগুলি প্রচার করছে, সেসব কায়েদাকে বাতিল প্রমাণ করার জন্য তৃতীয় অধ্যায়কে মনোনীত করেছেন। আর তা হ’ল, ওদের দাবী ‘আহাদ হাদীছ দ্বারা আক্বীদা সাব্যস্ত হয় না’। এই কায়েদার প্রবক্তার গলদটি তিনি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। কেননা এর  কারণেই তারা স্পষ্ট কোন ছহীহ দলীল ছাড়াই কেবল ধারণা ও কল্পনার ভিত্তিতে আক্বীদা বিষয়ক হাদীছসমূহ ও আহকাম বিষয়ক হাদীছসমূহের মাঝে পার্থক্য করেছে।

একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা ভাল মনে করছি তা হ’ল আমাদের উস্তাদ এ বিষয়টিকে এখানে সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন। কেননা উল্লিখিত রায়কে বাতিল প্রমাণ করার জন্য তিনি এ বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা করে তা থেকে সংক্ষেপে গুরুত্বপূর্ণ দলীলগুলি উল্লেখ করেছেন حديث الآحاد والعقيدة ‘আহাদ হাদীছ ও আক্বীদা’ শিরোনামে তাঁর অন্য একটি পুস্তিকায়। যেটি প্রায় পনের বছর আগে দামেশকে সচেতন মুসলিম যুবকদের সমাবেশে উপস্থাপিত তার আরেকটি বক্তৃতা, যা উল্লিখিত রায়ের প্রসারকে দুর্বল করা ও শিক্ষিত মহলের মাঝে এর প্রচারকারী ও প্রচলনকারীদেরকে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভাল প্রভাব ফেলে। মহান আল্লাহ তা‘আলা যেন সে আলোচনাটিকেوجوب الأخذ بحديث الآحاد في العقيدة ‘আক্বীদার ক্ষেত্রে আহাদ হাদীছ গ্রহণ করা ওয়াজিব’ শিরোনামে প্রকাশের পথকে সহজ করে দেন-ফালিল্লা-হিল হাম্দ।

আমাদের পুস্তিকার চতুর্থ ও সর্বশেষ অধ্যায়ে লেখক তৃতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় উল্লেখ করেছেন যা মানুষকে সুন্নাতের মর্যাদাকে দুর্বল করার দিকে ধাবিত করেছে এবং সে অনুযায়ী আমল করাকে বাতিল করেছে। সেটি হ’ল তাক্বলীদ, যা কয়েক শতাব্দী যাবৎ মুসলিম বিশ্বে জীবন দর্শন ও চিন্তা-চেতনার সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে ও আচ্ছন্ন করে ফেলেছে এবং তা মানুষের বিবেক-বুদ্ধি ও অন্তঃকরণে আসন গেড়ে বসেছে। ফলে এর মধ্যকার উদ্ভাবন ক্ষমতাকে তিরোহিত করে ফেলেছে, প্রতিভাসমূহকে হত্যা করেছে, মেধার কবর রচনা করেছে, মানুষকে তাদের রবের হেদায়াতের পথ থেকে বঞ্চিত করেছে, মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মাধ্যমে তাদের নিকট আসা কল্যাণ দ্বারা উপকার লাভের পথ তাদের জন্য রুদ্ধ করেছে। তারা যে সকল আলেমের ইজতিহাদ সমূহের ওপর নির্ভরশীল তারাও এটা অপসন্দ করেছেন যে, তাদের ছাত্ররা যেকোন বিষয়ে না জেনেই তাদের তাক্বলীদ করুক। বরং তারা সবাই পরবর্তীদেরকে এ মর্মে নছীহত করেছেন যে, তারা যেন কারো কোন কথা, রায় ও ইজতিহাদকে আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাতের ওপর অগ্রাধিকার না দেয়, সে যেই হোক না কেন। তেমনিভাবে তারা প্রত্যেক কথা অথবা ইজতিহাদ অথবা ফৎওয়া যা আল্লাহ তা‘আলার বাণী ও তাঁর রাসূলের কথা বিরোধী তা থেকে তাদের জীবদ্দশায় ও মরণের পরে নিজেদেরকে দায়মুক্ত ঘোষণা করেছেন।

আলোচনার শেষে আমাদের শ্রদ্ধেয় উসতাদ সকল মুসলিম যুবককে এ মর্মে আহবান জানিয়েছেন যে, তারা যেন কিতাব ও সুন্নাতের যা কিছু তাদের নিকট পৌঁছায় সেসব বিষয়ে এ দু’টির দিকে ফিরে যায়, সাধ্যমত ও যতদূর সম্ভব নিজেদের অন্তরে ইত্তেবার মর্যাদাকে বাস্তবায়ন করতে তার উপর আমল করে। এর মাধ্যমেই তারা এককভাবে রাসূল (ছাঃ)-এর ইত্তেবা করতে পারবে যেমন ইবাদতের ক্ষেত্রে তারা আল্লাহ তা‘আলাকে একক মানে। এর মাধ্যমেই তারা শাহাদাতায়েন তথা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ এবং ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর সত্যিকার অর্থ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। এর মাধ্যমেই তারা ‘হুকুমত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা’র স্লোগানটিকে নিজেদের অন্তরে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। এটিকে প্রতীক হিসাবে ঘোষণা দেওয়া ও মুখে তার স্লোগান তোলার পর। এর মাধ্যমেই তারা কুরআনমুখী অনন্য প্রজন্ম সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে; যে প্রজন্ম আল্লাহ তা‘আলার আদেশে কাঙ্খিত ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে।

যে সকল মুসলিম ছাত্ররা মনোযোগ সহকারে এই আলোচনাটি শ্রবণ করেছেন তাদের অধিকাংশের অন্তরে এটি দারুণ রেখাপাত করেছে। তারা এতে বস্ত্তনিষ্ঠ ও গবেষণালব্ধ পর্যালোচনা এবং সঠিক মতামত দেখতে পেয়ে তা প্রকাশের আবেদন জানিয়ে সম্মানিত লেখকের নিকট অনেক পত্র পাঠিয়েছেন। যাতে এর মাধ্যমে সে সকল খাঁটি ও আগ্রহী মুসলিম উপকার লাভ করেন যারা হক তালাশ করেন ও তা অাঁকড়ে ধরে চলতে চান।

এখানে আমরা একটি বিষয়ে সতর্ক করতে চাই, তাহ’ল আমাদের সম্মানিত উস্তাদের সুন্নাত সম্পর্কিত তৃতীয় আর একটি বক্তব্য রয়েছে, যেটি তিনি কাতারে মুসলিম যুবকদের সমাবেশে প্রায় দু’বছর পূর্বে প্রদান করেন। এতেও তিনি সুন্নাতে নববীর গুরুত্ব, ইসলামী শরী‘আতে এর মর্যাদা, কুরআন ও তাফসীর বুঝার ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আশা করি, খুব শীঘ্রই সেটিও প্রকাশ করা হবে ইনশাআল্লাহ (‘ইসলামে হাদীছের গুরুত্ব ও মর্যাদা’منز لة السنة فى الإسلام শিরোনামে এটিও প্রকাশিত হয়ে গেছে)।

এই মূল্যবান আলোচনাটি প্রকাশের অনেক আবেদন আসার প্রতি খেয়াল রেখে আমরা উস্তাদ মহোদয়ের নিকট তা প্রকাশের অনুমতি চেয়ে অনুমতি চাইলে তিনি সম্মতি জ্ঞাপন করেন। আল্লাহ তাকে উত্তম জাযা দান করুন। আমরাও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা এটি তার নিকট পড়েছি এবং তাঁর তত্ত্বাবধানে এর পরিমার্জন কাজ সম্পন্ন করেছি। এর মৌলিক বিষয়গুলির আলোকে ছোট ছোট শিরোনাম দিয়েছি যাতে পাঠকের জন্য সহজবোধ্য এবং বিষয়ের মৌলিক অংশগুলি বুঝতে সুবিধা হয়। লেখার ক্ষেত্রে এরূপ আধুনিক ও চমৎকার বিন্যাস পদ্ধতি উপকারী ও কল্যাণপ্রদ।

পুস্তিকার শুরুতে বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত কিছু হাদীছী পরিভাষা উল্লেখ করেছি, যা উপকারী মনে করি। মহান আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা, তিনি যেন এই পুস্তিকার মাধ্যমে অনেকের উপকার করেন এবং এর লেখক, প্রকাশক ও প্রচারকারী সবাইকে উত্তম জাযা দান করেন। সকল প্রকার তাওফীক ও সঠিকতার মালিক তিনিই এবং সকল প্রকার সাহায্য ও সহযোগিতা কেবল তাঁর পক্ষ থেকেই আসে।

-মুহাম্মাদ ঈদ আল-আববাসী।

(চলবে)







জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত - মুযাফফর বিন মুহসিন
আহলেহাদীছ জামা‘আতের বিরুদ্ধে কতিপয় মিথ্যা অপবাদ পর্যালোচনা (৫ম কিস্তি) - তানযীলুর রহমান - শিক্ষক, বাউটিয়া দাখিল মাদ্রাসা, রাজশাহী
জীবনের খেলা ঘরে - মাওলানা মুহিউদ্দীন খান - প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, মাসিক মদীনা
শিক্ষার্থীদের মুখস্থ করার গুরুত্ব - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
হিন্দু শব্দের শাব্দিক, পারিভাষিক ও ঐতিহাসিক স্বরূপ বিশ্লেষণ - আবু হিশাম মুহাম্মাদ ফুয়াদ, বগুড়া।
রামাযানকে আমরা কিভাবে অতিবাহিত করব? - ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম
বায়তুল মাক্বদিস মুসলমানদের নিকটে কেন এত গুরুত্ববহ? - ড. মুখতারুল ইসলাম
মুসলিম সমাজে মসজিদের গুরুত্ব (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
শোকর (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
মানব জাতির প্রতি ফেরেশতাদের দো‘আ ও অভিশাপ (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - মুহাম্মাদ আবু তাহের, পরিচালক, কিউসেট ইনস্টিটিউট, সিলেট।
পথশিশুদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব - মুহাম্মাদ আব্দুর রঊফ
আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
আরও
আরও
.