পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ । পর্ব ৭ । পর্ব ৮ । পর্ব ৯ । শেষ পর্ব ।
ইলমের ফায়েদা দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্য খবরের ওপর শারঈ খবরকে ক্বিয়াস করা বাতিল :
ইবনুল
ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘বাতিল ক্বিয়াসের মাধ্যমে ‘খবরে ওয়াহিদ’ ইলমের
ফায়েদা দেওয়ার বিষয়টিকে অস্বীকার করা হয়েছে। কেননা সে ব্যক্তি রাসূল
(ছাঃ)-এর পক্ষ থেকে উম্মতের জন্য শারঈ খবরকে অথবা আল্লাহ রাববুল আলামীনের
গুণাবলী সমূহের কোন গুণ সম্পর্কিত কোন খবরকে নির্দিষ্ট কোন বিষয়ের ব্যাপারে
সাক্ষীর দেওয়া খবরের ওপর ক্বিয়াস করেছে। অথচ এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে বিস্তর
পার্থক্য। কেননা রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষ থেকে সংবাদবাহককে যদি ধরে নেওয়া হয়
যে, সে স্বেচ্ছায় অথবা ভুলে মিথ্যা বলেছে যদিও তার মিথ্যা স্পষ্ট নাও বুঝা
যায় তবুও তা দ্বারা সৃষ্টিকে পথভ্রষ্ট করা আবশ্যক হয়। যেহেতু উম্মত সে
খবরকে গ্রহণ করেছে, তদনুযায়ী আমল করেছে, তা দ্বারা সৃষ্টির গুণাবলী ও কর্ম
সমূহকে সাব্যস্ত করেছে, সেহেতু শারঈভাবে যে খবরগুলি গ্রহণ করা ওয়াজিব হয় তা
মূলতঃ বাতিল হ’তে পারে না। বিশেষ করে সকল উম্মত যদি তা গ্রহণ করে। এভাবেই
শারঈভাবে যেসকল দলীলের অনুসরণ করা ওয়াজিব সে সকল দলীলের ক্ষেত্রে এটা বলাও
ওয়াজিব যে, তা হক ব্যতীত কিছুই নয়। সুতরাং তা দ্বারা সাব্যস্ত বিষয়ও মূলতঃ
প্রমাণিত বলে সাব্যস্ত হবে। এটা হবে আল্লাহ তা‘আলার বিধান, তাঁর গুণাবলী
সম্পর্কে আমরা যা পেয়েছি সেসব বিষয়ে। কিন্তু দুনিয়াবী কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে
নির্দিষ্ট সাক্ষী দেওয়ার ক্ষেত্রে এর বিপরীত হবে। কেননা যে বিষয়ে সাক্ষী
দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে তা সাব্যস্ত নাও হ’তে পারে।[1]
মাসআলাটির তাৎপর্য হ’ল, যে খবরের মাধ্যমে উম্মত আল্লাহর ইবাদত করে এবং যা আল্লাহর নামসমূহ সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে তাঁর রাসূলের যবানে তাদের নিকট পৌঁছেছে তা মূলতঃ মিথ্যা ও বাতিল হ’তে পারে না। কেননা তা বান্দাদের উপর আল্লাহর অন্যতম প্রমাণ। আর আল্লাহর প্রমাণাদি মিথ্যা ও বাতিল হ’তে পারে না। বরং তা আসলে হক ব্যতীত কিছুই নয়। হক ও বাতিলের দলীলগুলি সমান হওয়াও জায়েয নয়। যে অহি আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের ওপর অবতীর্ণ করেছেন এবং তা দ্বারা তাঁর সৃষ্টির ওপর ইবাদতের বিধান দিয়েছেন তার প্রতি সন্দেহ করতঃ আল্লাহ, তাঁর শরী‘আত ও দ্বীনের ওপর মিথ্যারোপ করাও জায়েয নয় এই দাবীতে যে, এটা ওটা থেকে আলাদা করা সম্ভব নয়! কেননা হক ও বাতিল, সত্য ও মিথ্যা, শয়তানের অহি ও আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ে আসা ফেরেশতার অহি-র মাঝে যে পার্থক্য তা একটি আরেকটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ার চেয়ে বেশি স্পষ্ট। সাবধান! আল্লাহ তা‘আলা হককে সূর্যের আলোর মত স্পষ্ট করে দিয়েছেন, যা উজ্জ্বল ও চক্ষুষ্মানদের জন্য খুবই স্পষ্ট। আর বাতিলকে রাতের অন্ধকারের ন্যায় অন্ধকার দ্বারা আচ্ছাদিত করেছেন। অনস্বীকার্য যে, অন্ধের নিকট রাত দিনের মত লাগতেই পারে। তদ্রুপ মনের দিক থেকে যে অন্ধ তার নিকট হক বাতিলের মত মনে হ’তে পারে।
মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) তাঁর ফায়ছালায় বলতেন,
تَلَقَّ الْحَقَّ مِمَّنْ قَالَهُ فَإِنَّ عَلَى الْحَقِّ نُوْرًا-
‘যে হক বলে তুমি তার নিকট থেকেই সেটি গ্রহণ কর। কেননা হকের উপর আলো রয়েছে’। কিন্তু অন্তর যখন গাঢ় অন্ধকারে আচ্ছাদিত হ’ল, রাসূল (ছাঃ)-এর আনীত বিধান হ’তে বিমুখ হওয়ার কারণে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে মানুষ অন্ধ হয়ে গেল, লোকদের মতামতকে যথেষ্ট মনে করার কারণে অন্ধকার বৃদ্ধি পেল; তখন এ ধরণের মানুষের নিকট হক বাতিলের সাথে মিশে গেল। ফলে অন্ধকারাচ্ছন্ন হৃদয়গুলি রাসূল (ছাঃ)-এর যে সকল ছহীহ হাদীছ উম্মতের শ্রেষ্ঠ ন্যায়পরায়ণ ও সত্যবাদী রাবীগণ বর্ণনা করেছেন সেগুলিকেও মিথ্যার দোষে দোষী বলার বৈধতা দিয়ে দিল! পক্ষান্তরে বাতিল, মিথ্যা ও বানোয়াট হাদীছগুলিকে সত্য হওয়ার অনুমোদন দিয়ে সেগুলিকেই দলীল হিসাবে গ্রহণ করতে শুরু করল। তিনি বলেন,
وَإِنَّمَا الْمُتَكَلِّمُوْنَ أَهْلُ ظُلْمٍ وَجَهْلٍ يَقِيسُونَ خَبَرَ الصِّدِّيقِ وَالْفَارُوقِ وَأُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ بِأَخْبَارِ آحَادِ النَّاسِ، مَعَ ظُهُورِ الْفَرْقِ الْمُبِينِ بَيْنَ الْمُخْبِرِيْنَ، فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ سَوَّى بَيْنَ خَبَرِ الْوَاحِدِ مِنَ الصَّحَابَةِ وَخَبَرِ الْوَاحِدِ مِنْ أَفْرَادِ النَّاسِ فِي عَدَمِ إِفَادَةِ الْعِلْمِ، وَهَذَا بِمَنْزِلَةِ مَنْ سَوَّى بَيْنَهُمْ فِي الْعِلْمِ وَالدِّينِ وَالْفَضْلِ-
‘ধর্মতাত্ত্বিকরা যালেম ও মূর্খ জাতি। তারা ছিদ্দীক্ব,
ফারূক্ব ও উবাই বিন কা‘বের দেওয়া খবরকে সাধারণ মানুষের খবর দেওয়ার সাথে
তুলনা করে। অথচ দু’য়ের মাঝের পার্থক্য স্পষ্ট। সুতরাং ঐ ব্যক্তির চেয়ে বড়
যালেম আর কে হ’তে পারে, যে ছাহাবীগণের কারো খবরের মাঝে ও ইলমের ফায়েদা দেয়
না এমন বিষয়ে কোন সাধারণ ব্যক্তির খবরের মাঝে সমতা কায়েম করার দাবী করে?![2]
এরূপ দাবীকারী ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে ইলম, দ্বীন ও শ্রেষ্ঠত্বের দিক থেকে ছাহাবী ও সাধারণ মানুষের মাঝে সমতার দাবী করে।
‘আহাদ হাদীছ ইলমের ফায়েদা দেয় না’ তাদের এমন দাবীর মূল কারণ সুন্নাত সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা :
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, যদি তারা বলে যে, রাসূল (ছাঃ)-এর ছহীহ হাদীছ সমূহ ইলমের ফায়েদা দেয় না, তাহ’লে একথার মাধ্যমে তারা নিজেদের সম্পর্কে এ সংবাদই দিল যে, তারা তা থেকে কোন জ্ঞানই লাভ করতে পারেনি। আর তারা নিজেদের সম্পর্কে যা বলেছে তাতে তারা সত্যবাদী। কিন্ত এ সংবাদ দানের ক্ষেত্রে তারা মিথ্যাবাদী যে, তা আহলেহাদীছ ও আহলে সুন্নাতের জন্যও ইলমের ফায়েদা দেয় না। =(ঐ ২/৩৭৯)। তিনি আরো বলেন, আহলে সুন্নাত তা দ্বারা যে ফায়েদা লাভ করেছেন তা যদি ওরা লাভ করতে না পারে তাহ’লে তাদের ‘আমরা তা দ্বারা ইলমী ফায়েদা পাইনি’ এই কথার ভিত্তিতে সাধারণভাবে তাকে নাকচ করা আবশ্যক হয় না। এটা ঐ দলীল গ্রহণের ন্যায়, যে ব্যক্তি জানা কিছু পেয়েছে সে কিন্তু ঐ ব্যক্তির মত নয় যে কিছু জানেও না, কিছু পায়ওনি। সে হ’ল ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে নিজে ব্যথা অথবা কষ্ট অথবা ভালবাসা অথবা ঘৃণা অনুভব করেছে, কিন্তু এটাকে সে ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করছে, যে ব্যথা অথবা কষ্ট অথবা ভালবাসা অথবা ঘৃণা কোনকিছুই অনুভব করেনি। ফলে তার মনে সন্দেহের মাত্রা আরো প্রবল হয় যে, তুমি যা পেয়েছ আমি তো তা পাইনি। যদি সত্যিই হ’ত তাহ’লে তো অবশ্যই আমি-তুমি দু’জনই তাতে শরীক হ’তাম। এটা নিরেট মিথ্যা ও বাতিল। কতই না সুন্দর কথা বলা হয়েছে!
أَقُوْلُ لِلاَئِمِ الْمُهْدِيْ مُلَامَتَهُ + ذُقِ الْهَوَى فَإِنِ اسْتَطَعْتَ الْمَلَامِ لُمِ-
‘আমি
এমন তিরস্কারকারীকে বলি যাকে তার তিরস্কারের পথ দেখানো হয়েছে, তুমি
প্রবৃত্তির স্বাদ আস্বাদন কর, আর যদি তিরস্কার করতে পার তাহ’লে কর’।[3]
যে
ব্যক্তি ‘খবরে ওয়াহিদে’র ইলমের ফায়েদা দেওয়াকে অস্বীকার করে তাকে বলতে
হবে, রাসূল (ছাঃ) যা নিয়ে এসেছেন তার প্রতি মনোযোগী হও, যত্নবান হও, তার
অনুসরণ কর, তা সংগ্রহ কর, সেই হাদীছের বর্ণনাকারীদের অবস্থা ও সীরাত
সম্পর্কে ভালভাবে জ্ঞানলাভ কর এবং হাদীছ ব্যতীত অন্য সবকিছু থেকে মুখ
ফিরিয়ে নাও, সেটিকে তোমার চাওয়া-পাওয়ার লক্ষ্যবস্ত্ত নির্ধারণ কর। বরং তাঁর
প্রতি এতটা আগ্রহী হও যেমন মাযহাবের অনুসারীরা তাদের অনুসরণীয় ইমামদের
মাযহাব সম্পর্কে এমনভাবে জানতে আগ্রহী হয় যে, তাদের যরূরী ইলম অর্জিত হয় এ
মর্মে যে, তা তাদেরই মাযহাব ও সেগুলি তাদেরই অভিমত। যদি কোন অস্বীকারকারী
তাদের এটাকে অস্বীকার করে তাহ’লে তারা তাকে তিরস্কার করে। তখনই তুমি জানতে
পারবে রাসূলের হাদীছসমূহ ইলমের ফায়েদা দেয় কি-না? পক্ষান্তরে তুমি তা থেকে
এবং তা চাওয়া থেকে যদি মুখ ফিরিয়ে নাও তাহ’লে তা তোমাকে কখনো কোন ইলমের
ফায়েদা দিবে না। যদি তুমি বল যে, খবরে ওয়াহিদ থেকে তুমি ধারণার ফায়েদাটুকুও
লাভ করতে পারনি, তাহ’লে তা থেকে তোমার প্রাপ্য অংশ সম্পর্কে সত্য কথাটিই
তুমি বলেছ!’[4]
হাদীছ সম্পর্কে কিছু ফক্বীহর অবস্থান এবং সুন্নাত সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতার দু’টি দৃষ্টান্ত :
আমি (আলবানী) বলি, এটি একটি বাস্তব কথা যা ইলমে হাদীছ চর্চাকারী, এর বিভিন্ন সূত্র, শব্দ নিয়ে গবেষণাকারী এবং কিছু রেওয়ায়াত সম্পর্কে কিছু ফক্বীহর অবস্থান সম্পর্কে যারা অবগত তারা অনুভব করতে পারেন। এ বিষয়ে আমি দু’টি দৃষ্টান্ত পেশ করব, যার একটি পুরাতন এবং অন্যটি নতুন।
প্রথম উদাহরণ
: রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ
الكِتَابِ ‘ঐ ব্যক্তির ছালাত সিদ্ধ নয়, যে ব্যক্তি সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করে
না’।[5]
এই হাদীছটি ছহীহাইন তথা বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হওয়া সত্ত্বেও হানাফীরা এটাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এই দাবীতে যে, তা কুরআনের বাহ্যিক অর্থের বিরোধী। তা হ’ল আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ ‘অতএব তোমাদের পক্ষে যতটুকু সহজ হয় ততটুকু পাঠ কর’ (মুয্যাম্মিল ৭৩/২০)। তাই তারা এটাকে তাদের দাবী অনুযায়ী আহাদ হাদীছ হিসাবে ব্যাখ্যা করেছে। অথচ হাদীছ শাস্ত্রের আমীর খ্যাত ইমাম বুখারী (রহঃ) তাঁর কিতাব ‘জুযউল ক্বিরাআতে’র (جزء القراءة) শুরুতেই হাদীছটি রাসূল (ছাঃ) হ’তে মুতাওয়াতির সূত্রে প্রমাণিত হওয়ার বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। তাদের কি উচিত ছিল না যে, হাদীছ বিশেষজ্ঞ এই ইমামের ইলম থেকে ফায়দা নেওয়া এবং হাদীছটিকে আহাদ বলার মত পরিবর্তন করা এবং সেটিকে আয়াতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তা দ্বারা আয়াতটিকে ‘খাছ’ করা। তাছাড়াও জ্ঞাতব্য যে, উল্লেখিত আয়াতটি রাতের (নফল) ছালাতের সাথে সম্পর্কিত; ছালাতে ফরয ক্বিরাআতের বিষয়ে নয়।
দ্বিতীয় উদাহরণ : শেষ যামানায় ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ প্রসঙ্গে হাদীছ, যা ছহীহাইনেও বর্ণিত হয়েছে। এ বিষয়ে কয়েক বছর ধরে আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শায়খগণকে জিজ্ঞেস করা হ’লে তাদেরই একজন ‘আর-রিসালা’ নামক পত্রিকায় জবাব দেন যে, হাদীছটি ‘আহাদ’ এবং এর সনদ কেবল ওয়াহ্ব বিন মুনাবিবহ ও কা‘ব আল-আহবার কেন্দ্রিক।
অথচ বাস্তব কথা হ’ল আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ বিশেষজ্ঞ ও পন্ডিতগণ সেটিকে মুতাওয়াতির হাদীছ বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আমি নিজেই এর সনদগুলি যাচাই করে যা পেয়েছি তা হ’ল ৪০ জন ছাহাবী তা রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে কমপক্ষে ২০টির সনদ ছহীহ এবং এর কিছু সনদ অনেকের নিকট একাধিক সূত্রে ছহীহ প্রমাণিত হয়েছে, যা ছহীহাইন, সুনান, মাসানীদ, মা‘আজিম প্রভৃতি হাদীছের গ্রন্থে রয়েছে। বিস্ময়কর বিষয় হ’ল এই সনদগুলিতে ওয়াহ্ব ও কা‘ব এর কথা মোটেই উল্লেখ করা হয়নি।
এ বিষয়ে আমি যাচাই-বাছাই করে এর সারমর্ম দু’পৃষ্ঠায় লিখে তা তখনই ‘আর-রিসালা’ পত্রিকা কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়েছিলাম এই আশায় যে, ইলমের খেদমতের আশায় তা যেন প্রকাশ করা হয়। কিন্ত সেই দুই পৃষ্ঠা আর প্রকাশ করা হয়নি!!
দু’টি উদাহরণ দিলাম। আরো শত শত উদাহরণ রয়েছে যা আমাদেরকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, ইসলামী শরী‘আতের দ্বিতীয় মৌলিক উৎস নবীর হাদীছও কিছু আহলে ইলমের নিকট তেমন মর্যাদা পায়নি, যা তাদের ওপর ওয়াজিব। অথচ এটা ব্যতীত প্রথম ও প্রধান উৎস তথা কুরআন মাজীদকে সঠিকভাবে বুঝা সম্ভব নয়। যেমনটা আল্লাহ ইচ্ছা করেন। এসব কারণেই তারা নবীর হাদীছগুলি সম্পর্কে চরম অজ্ঞতায় নিপতিত হয়েছে। এমন আচরণ হাদীছকে সত্যায়ন করার ব্যাপারে স্পষ্ট পদস্খলনের প্রমাণ বহন করে। অথচ রাসূল (ছাঃ) যা নিয়ে এসেছেন তা অকাট্যভাবে বিশ্বাস করা যরূরী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا ‘আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা হ’তে বিরত থাক’ (হাশর ৫৯/৭)।
অথচ তারা এর কিছু অংশকে গ্রহণ করেছে আর কিছু অংশকে পরিত্যাগ করেছে!
فَمَا جَزَاءُ مَنْ يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنْكُمْ إِلَّا...
‘তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে, পার্থিব জীবনে তাদের দুর্গতি ছাড়া কিছুই পাওয়ার নেই...’ (বাক্বারাহ ২/৮৬)।
সারকথা হ’ল মুসলিমের ওপর ওয়াজিব হল, আহলে ইলমের নিকট রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষ থেকে যে হাদীছই প্রমাণিত হবে তার প্রতি পূর্ণ ঈমান আনা। চাই তা আক্বীদা বিষয়ক হোক অথবা আহকাম। মুতাওয়াতির হোক অথবা আহাদ। চাই আহাদ তার নিকট ইলম ও ইয়াক্বীনের ফায়েদা দিক অথবা প্রবল ধারণার ফায়েদা দিক। এ বিষয়ে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। এসব বিষয়ে ঈমান আনা ও তা মেনে নেওয়া ওয়াজিব। এর মাধ্যমেই সে ব্যক্তি সত্যিকার ভাবে নিজের মাঝে আল্লাহ তা‘আলার নিমেণাক্ত আদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে বুঝা যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيكُمْ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللهَ يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِهِ وَأَنَّهُ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ-
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আহবানে সাড়া দাও। যখন তিনি তোমাদের আহবান করেন ঐ বিষয়ের দিকে যা তোমাদের (মৃত অন্তরে) জীবন দান করে। জেনে রেখ, আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের মাঝে অন্তরায় হয়ে থাকেন (অর্থাৎ তাঁর অনুমতিক্রমেই মানুষ মুমিন ও কাফির হয়ে থাকে)। পরিশেষে তাঁর কাছেই তোমাদের সমবেত করা হবে’ (আনফাল ৮/২৪)।
আরোও অনেক আয়াত রয়েছে, যা এ প্রসঙ্গে আলোচনার শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহর নিকট আশাবাদী, তিনি যেন এর মাধ্যমে কল্যাণ দান করেন এবং তা স্রেফ তাঁরই সন্তষ্টির জন্য এবং তাঁর কিতাবের সাহায্যকারী ও তাঁর নবীর সুন্নাতের খেদমত হিসাবে কবুল করেন। রাসূল (ছাঃ)-এর উপর অসংখ্য দরূদ ও সালাম বর্ষিত হৌক!
[চলবে]
[1]. মুখতাছার ছাওয়ায়েকুল মুরসালাহ ২/৩৬৮।
[2]. মুখতাছার ছাওয়ায়েকুল মুরসালাহ পৃঃ ৫৬৪।
[3]. ইবনুল ক্বাইয়েম, মুখতাছার ছাওয়ায়েকুল মুরসালাহ পৃঃ ৬০৪।
[4]. ঐ ২/৪৩২।
[5]. বুখারী হা/৭৫৬; মুসলিম হা/৩৯৪।