৫. হালাল-হারাম নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা :
যে কোন কাজের শুরুতে ভেবে দেখা উচিত সেই কাজটি ভালো না-কি মন্দ; হালাল না-কি হারাম। ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকুরী থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণের আগে চিন্তা-ভাবনা করা যরূরী। কেউ যদি কোন পদক্ষেপ গ্রহণের আগে চিন্তার ইবাদতের প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব না দেয়, তাহ’লে খুব সহজেই সে হারাম ও পাপের চোরাবালিতে নিমজ্জিত হবে। বিশেষ করে অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে চিন্তার অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ، لاَ يُبَالِي المَرْءُ مَا أَخَذَ مِنْهُ، أَمِنَ الحَلاَلِ أَمْ مِنَ الحَرَامِ، ‘এমন এক যুগ আসবে, যখন মানুষ কোনই পরওয়া করবে না যে, সে কোত্থেকে উপার্জন করছে। সেটা হালাল পথে নাকি হারাম পথে’।[1] এর কারণ হচ্ছে অধিকাংশ সময় উপার্জনের হারাম উৎসগুলো খুব চমকপ্রদ হয়ে থাকে। সেখানে অল্প সময়ে ধনবান হওয়ার চটকদার প্ররোচনা থাকে। সুপরামর্শ না পেলে ও মনের চোখ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা না হ’লে সাধারণ মানুষের কাছে হারাম জিনিসও অনেক সময় হালাল মনে হ’তে পারে।
হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন,رَحِمَ اللهُ عَبْدًا وَقَفَ عِنْدَ هَمِّهِ، فَإِنْ كَانَ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ مَضَى، وَإِنْ كَانَ لِغَيْرِ اللهِ أَمْسَكَ، ‘আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি রহম করুন! যে কাজের শুরুতে থেমে গিয়ে একটু ভেবে নেয়। কাজটা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়, তবে তা করে ফেলে। আর যদি কাজটা আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে হয়, তবে সে (কাজটি করা থেকে) বিরত থাকে’।[2]
তাবেঈ মাইমূন ইবনে মিহরান (রহঃ) বলেন,لَا يَكُونُ الرَّجُلُ تَقِيًّا حَتَّى يُحَاسِبَ نَفْسَهُ مُحَاسَبَةَ شَرِيكِهِ، وَحَتَّى يَنْظُرَ مِنْ أَيْنَ مَلْبَسُهُ وَمَطْعَمُهُ وَمَشْرَبُهُ وَمَكْسَبُهُ، ‘মানুষ কখনো মুত্তাক্বী হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার শরীক থেকে কঠিন হৃদয় হয়ে হিসাব নেওয়ার মতো করে নিজের নফসের হিসাব গ্রহণ করবে। এমনকি কোত্থেকে তার পোষাক-পরিচ্ছদ, খাদ্য-পানীয় ও আয়-রোযগার হচ্ছে তাও সে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে’।[3]
সুতরাং সার্বিক জীবনে যে কোন কাজ শুরু করার আগে সেই ব্যাপারে ভেবে দেখা খুবই যরূরী। কেননা যখন মানুষ চিন্তার ইবাদতে রত হয়ে কোন ব্যাপারকে পর্যবেক্ষণ করে, তখন আল্লাহ তার অন্তরজগতে দূরদর্শিতার নূর জ্বালিয়ে দেন। তখন ভালো-মন্দ ও হালাল-হারামের পার্থক্যটা তার কাছে দিবালোকের মতো সস্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফলে সে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয় এবং সেই কাজে আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত হয়।
৬. দুনিয়া ও আখেরাত নিয়ে চিন্তা করা :
দুনিয়া ও আখেরাতের জীবন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা ঈমানের অপরিহার্য দাবী। এটা চিন্তার ইবাদতের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিভিন্ন হাদীছের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের মাঝে পার্থক্য করা শিখিয়েছেন। যেমন তিনি এক হাদীছে বলেন,وَاللهِ مَا الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا مِثْلُ مَا يَجْعَلُ أَحَدُكُمْ إِصْبَعَهُ فِي الْيَمِّ، فَلْيَنْظُرْ بِمَ يَرْجِعُ؟ ‘আল্লাহর কসম! দুনিয়ার সাথে আখেরাতের পার্থক্য এতটুকুই যে, তোমাদের কেউ সাগরের মাঝে তার আঙুলটা ডুবিয়ে দিক। তারপর দেখুক সে আঙুলে কতটুকু পানি তুলে আনতে পারে’।[4] অর্থাৎ বিশাল পানিরাশির সেই মহাসমুদ্র হ’ল তার আখেরাতের জীবন এবং আঙুলের সাথে লেগে থাকা অতি নগণ্য পানিটুকু তার দুনিয়ার জীবন।
উপমা দিয়ে এবং চিন্তার জগতকে নাড়া দিয়ে রাসূল (ছাঃ) যেভাবে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, কেউ যদি এগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে তবে তার জীবন পরকালমুখী হয়ে যাবে। সে কখনো আখেরাতের উপরে পার্থিব স্বার্থকে প্রাধান্য দিবে না।
পবিত্র কুরআনে দুনিয়া ও পরকালকে নিয়ে ভাবতে বলা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন,كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُوْنَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، ‘এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য নিদর্শনাবলী বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা-গবেষণা করতে পার দুনিয়া ও আখেরাতকে নিয়ে’ (বাক্বারাহ ২/২১৯-২২০)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,لعلكم تتفكرون في زوال الدنيا وفنائها وإقبال الآخرة، وبقائها، ‘যেন তোমরা পার্থিব জীবনের অবসান ও তার বিলুপ্তি নিয়ে এবং আখেরাতে আগমন ও তার স্থায়িত্ব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে পার’।[5]
ইউসুফ ইবনে আসবাত্ব (রহঃ) বলেন, إن الدنيا لم تخلق لينظر إليها، بل لينظر بها إلى الآخرة، ‘দুনিয়াকে শুধু দেখার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি; বরং এর মাধ্যমে আখেরাতের জীবনকে পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে’।[6]
৭. মৃত্যুকে নিয়ে চিন্তা করা :
মৃত্যু মানবজীবনের এক অমোঘ বাস্তবতা এবং চিন্তার ইবাদতের এক শক্তিশালী ক্ষেত্র। মৃত্যু নিয়ে যার চিন্তা যত বেশী, তার জীবন তত পরিচ্ছন্ন, সুন্দর ও গোছালো। দুনিয়া লাভের প্রতিযোগিতা থেকে সে সর্বদা দূরে থাকে, কিন্তু আখেরাতের জন্য থাকে সদা উদ্গ্রীব ও পাগলপারা। ফলে তার মাধ্যমে মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয় না। মৃত্যুর ভাবনা তাদেরকে সর্বদা আল্লাহর ইবাদতে ব্যস্ত রাখে। দুনিয়ার সকল কাজের উপরে তারা আল্লাহর অনুগত্যকে সর্বাধিক প্রধান্য দিয়ে থাকেন।
দুনিয়াতে যারা যত বেশী কৌশল করে টাকা ইনকাম করতে পারে, রাজনীতি ও অর্থনীতির ময়দানে বুদ্ধির মারপ্যাচে স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করতে পারে এবং চিন্তা ও যুক্তির ফাঁদে ফেলে মানুষকে বোকা বানাতে পারে, জনমুখে তারাই সুশীল, বিচক্ষণ, বুদ্ধিজীবী, দূরদর্শী প্রভৃতি বিশেষণে ভূষিত হন। অথচ প্রকৃত সত্য কথা হ’ল- যারা চিন্তার ইবাদতে রত হয়ে মৃত্যুকে বেশী বেশী স্মরণ করতে পারে এবং পরকালের জন্য উত্তম পাথেয় সঞ্চয় করতে পারে, দুনিয়াতে তারাই সবচেয়ে বুদ্ধিমান। তাদেকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে হাবাগোবা ও সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ মনে হ’লেও রাসূল (ছাঃ) দৃষ্টিতে তারাই সবচেয়ে দূরদর্শী ও বিচক্ষণ।
আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে একবার জিজ্ঞেস করা হ’ল-أَيُّ الْمُؤْمِنِينَ أَكْيَسُ؟ ‘সবচেয়ে বুদ্ধিমান মুমিন কারা?’ উত্তরে তিনি বললেন,أَكْثَرُهُمْ لِلْمَوْتِ ذِكْرًا، وَأَحْسَنُهُمْ لِمَا بَعْدَهُ اسْتِعْدَادًا، أُولَئِكَ الْأَكْيَاسُ، ‘যারা মৃত্যুকে সবচেয়ে বেশী স্মরণ করে এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্য উত্তম প্রস্ত্ততি গ্রহণ করে, তারাই সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান’।[7] জনৈক সালাফ ইবাদতে খুব উদ্যোমী থাকতেন। কোন ইবাদতের সুযোগই তিনি হাত ছাড়া করতেন না। তাকে বলা হ’ত আপনি ইবাদতের শক্তি কোথায় থেকে লাভ করেন? তিনি বলতেন চিন্তার ইবাদত ও মৃত্যুকে স্মরণ করার মাধ্যমে। তিনি বলতেন,إِنِّي تَفَكَّرْتُ فِي الْمَوْتِ فَرَأَيْتُ الْمَوْتَ لَا يَتْرُكُ الْكَبِيرَ وَلَا يَرْحَمُ الصَّغِيرَ، ‘আমি মৃত্যুকে নিয়ে চিন্তা করে দেখেছি যে, এই মৃত্যু বড়দেরও ছাড় দেয় না এবং ছোটদের প্রতিও রহম করে না’।[8]
সুতরাং দামী দামী রিসোর্ট, পিকনিক স্পট, বনভোজন ও নৌভ্রমণে না গিয়ে মাঝে মধ্যে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে বা একাকী কবর যিয়ারতে যাওয়া উচিত। হাযার হাযার টাকা খরচ করে নামকরা স্থাপনা ও জায়গা পরিদর্শনের চেয়ে বাড়ির পাশের কবরস্থান যিয়ারত করা বেশী উপকারী ও কার্যকর। কেউ যদি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ভাবে এই কবরবাসী একদিন আমার মত এই পৃথিবীর বাসিন্দা ছিল। আমার মতই তার পরিবার-পরিজন ও প্রিয় মানুষ ছিল। আমাদের মতই সে ব্যবসা-বাণিজ্য বা চাকরী-বাকরী করত। কিন্তু আজ সে কবরের বাসিন্দা। তার আমল করার সুযোগ চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ আল্লাহ আমাকে এখনো এই পৃথিবীতে জীবিত রেখেছেন এবং আখেরাতের পাথেয় সঞ্চয়ের সুযোগ দিয়েছেন। যে কোন সময় আমাকেও এই মাটির ঘরে পাড়ি জমাতে হবে। আমি আমার সারা জীবনে কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে যে বাড়ি নির্মাণ করেছি। আমার মৃত্যুর পরে সেই বাড়িতে আর একদিনের জন্যও আমার ঠাঁই হবে না। যে পিতা-মাতা, প্রিয়তমা স্ত্রী ও নয়নের পুত্তলী সন্তানদের জন্য তিলে তিলে এত কিছু সঞ্চয় করেছি। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সারাটা জীবন উপার্জন করেছি। তারা এক মুহূর্তের জন্যেও আমাকে তাদের কাছে রাখবে না। আমাকে তারা কপর্দকশূন্য অবস্থায় রেখে দিবে এই নির্জন-নিঠুর সংকীর্ণ কবর গৃহে। আমার কাপড়-চোপড়, ব্যবহার্য জিনিস-পত্র, বিছানা-বালিশ, চেয়ার-টেবিল, আলমারী, শো-কেচ সবই অন্যরা দখল করে নিবে। কিছুদিন হয়তো তারা আমার জন্য কান্না-কাটি করবে। অল্পকাল পরেই তারা আমাকে ভুলে যাবে। পৃথিবীতে আমার অনুপস্থিতি তাদের নিরন্তর পথচলায় কোন ছেদ ঘটাবে না। এটাই পৃথিবীর অমোঘ বাস্তবতা।
কোন বান্দা যদি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে এই চিন্তা-ভাবনায় হৃদয়কে মশগূল করতে পারে, তাহ’লে সাথে সাথে তার হৃদয়ে জ্বলে উঠবে ঈমান-ইয়াক্বীনের আলো। তার অন্তরের দৃষ্টি খুলে যাবে। তখন তার মনে হবে এই দুনিয়ার পিছনে ছুটে চলাটা কত বড় বোকামী। তখন তার ভাবনাগুলো উদাস হয়ে যাবে। সে উপলব্ধি করবে, মাত্র কয়েক বছর বসবাসের জন্য এই দুনিয়ার গৃহকে কত আসবাবপত্র দিয়ে সাজিয়েছি, রঙ-বেরঙের কত লাইটিং-এর ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু লক্ষ-হাযার বছর বসবাসের জন্য নির্ধারিত সাড়ে তিন হাত কবরকে আলোকিত করার ও সাজাবার জন্য কোন কিছুই আমার করা হয়নি। ফলে তার তনু-মন আল্লাহর আনুগত্যে প্রণত হবে। সে যদি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে স্বীয় স্ত্রী, সন্তানাদি ও ছোট্ট সোনামণির সাথে এই ভাবনাগুলো শেয়ার কারতে পারে এবং আখেরাতের চিরস্থায়ী জীবনের প্রস্ত্ততি নেওয়ার উপদেশ দিতে পারে। তাহ’লে এটা হবে সবচেয়ে কার্যকর উপদেশ। যত কঠোর হৃদয়ের মানুষ হোক না কেন, কেউ যদি কবরের পাশে গিয়ে চিন্তার ইবাদতে রত হয়ে মৃত্যুকে স্মরণ করতে পারে, তাহ’লে পাষাণ হৃদয়ের বরফ গলবেই ইনশাআল্লাহ। আর কেউ যদি নিয়মিত কবর যিয়ারত করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে, তাহ’লে এটা হবে তার পার্থিব জীবনের সবচেয়ে উপকারী ও শ্রেষ্ঠ অভ্যাস।
হাতেম আল-আ‘ছাম (রহঃ) কবর যিয়ারত করতেন ও বলতেন,من مر بِفنَاء الْقُبُور وَلم يتفكر فِي نَفسه وَلم يدع لَهُم فقد خَان نَفسه وخانهم، ‘যে ব্যক্তি কবরস্থানের পাশ দিয়ে চলে গেল, কিন্তু নিজের মৃত্যু নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করল না এবং করববাসীর জন্য দো‘আও করল না; সে নিজেকে এবং কবরবাসীকে ধোঁকা দিল’।[9] মহান আল্লাহ আমাদের হৃদয়ে সর্বদা মৃত্যুর ভাবনা জাগরুক রাখুন- আমীন!
চিন্তা-ভাবনার সীমানা
যেসব ক্ষেত্র নিয়ে আলোকপাত করা হ’ল চিন্তার পরিসর এগুলোর মাধ্যেই সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ চিন্তা-গবেষণা কেবল আল্লাহর সৃষ্টিরাজির মাঝেই নির্ধারিত রাখতে হবে। এর বাইরে নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,تَفَكَّرُوْا فِي خَلْقِ اللهِ وَلاَ تَفَكَّرُوْا فِي اللهِ، ‘তোমরা আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা কর, কিন্তু আল্লাহর সত্তাকে নিয়ে চিন্তা করো না’।[10] ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, تَفَكَّرُوا فِيْ كُلِّ شَيْءٍ وَلَا تَفَكَّرُوْا فِيْ ذَاتِ اللهِ، ‘তোমরা প্রতিটি বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করো, কিন্তু আল্লাহর সত্তাকে নিয়ে নয়’।[11]
মূলতঃ এটা একটা শয়তানী ওয়াওয়াসা, যা চিন্তার ইবাদতে চরমভাবে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, يَأْتِي الشَّيْطَانُ أَحَدَكُمْ فَيَقُولُ: مَنْ خَلَقَ كَذَا؟ مَنْ خَلَقَ كَذَا؟ حَتَّى يَقُولَ: مَنْ خَلَقَ رَبَّكَ؟ فَإِذَا بَلَغَهُ فَلْيَسْتَعِذْ بِاللَّهِ وَلْيَنْتَهِ، ‘শয়তান তোমাদের মধ্যে কারো কারো নিকটে এসে বিভিন্ন প্রশ্ন করে থাকে- এটা কে সৃষ্টি করেছে? ওটা কে সৃষ্টি করেছে? এমনকি অবশেষে সে এটাও বলে বসে যে, তোমার রবকে কে সৃষ্টি করেছে? শয়তান যখন এ পর্যায়ে পৌঁছে, তখন সে যেন আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং এমন চিন্তা থেকে নিবৃত্ত থাকে’।[12] ইমাম ত্বীবী (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীছে আল্লাহর জাত সম্পর্কে যে কোন চিন্তা-ভাবনা অন্তরে ঠাঁই দিতে নিষেধ করা হয়েছে এবং আল্লাহর কাছে শয়তানের এমন কুমন্ত্রণা থেকে আশ্রয় চাইতে বলা হয়েছে।[13]
সুতরাং বুঝা গেল, অন্যান্য ইবাদতের মত চিন্তার ইবাদতেও শয়তান মানুষকে ওয়াসওয়াসা দিয়ে থাকে, যাতে মানুষ চিন্তার ইবাদতে রত হয়ে আল্লাহমুখী না হ’তে পারে। সেকারণ চিন্তার সীমানা অতিক্রম করা নিষিদ্ধ। শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন, قد نهينا عن التفكر في الله، وأمرنا بالتفكر في خلقه الدال عليه، ‘আমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে চিন্তা করতে নিষেধ করা হয়েছে। আর তাঁর অস্তিত্বের প্রমাণ বহনকারী সৃষ্টিকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে’।[14]
অনুরূপভাবে যে বিষয়ে সৃষ্টিগতভাবে মানুষের কোন জ্ঞান নেই, সেই সম্পর্কে চিন্তায় মগ্ন হওয়া সমীচীন নয়। আল্লাহ বলেন, وَنُنْشِئَكُمْ فِي مَا لَا تَعْلَمُونَ ‘আমরা তোমাদেরকে এমনভাবে সৃষ্টি করি, যা তোমরা জান না’ (ওয়াক্বিয়া ৫৬/৬১)।
এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, মানুষের সৃষ্টির পিছনে এমন অনেক নিগূঢ় রহস্য আছে, যা মানুষের নিকট থেকে গোপন রাখা হয়েছে। আর সেটা জানাও মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এসব বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে সময় নষ্ট করা বৈধ নয়। ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি ও পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির মাঝে যতগুলো পার্থক্য আছে, তন্মধ্যে এটি অন্যতম। নাস্তিক পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে সকল কিছু জানা ও সকল কিছুর অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি হ’ল, আল্লাহর সৃষ্টিতত্ত্বের এমন অনেক গোপন রহস্য আছে, যা জানা সম্ভব নয়। আর চিন্তা-ভাবনার এমন অনেক সীমানা রয়েছে, যা পার করে যাওয়া আমাদের জন্য জায়েয নয়। যেমন, রূহ বা আত্মা নিয়ে গবেষণা করা। এ বিষয়ে গবেষণা করতে গিয়ে কাফেররা তাদের অনেক সময় অপচয় করেছে। গলদঘর্ম হয়েছে। কিন্তু কোন রহস্য আবিষ্কার করতে পারেনি। যদি তারা জানতে পারত যে, মহান আল্লাহ আত্মার রহস্য কেবল নিজের মাঝে সীমাবদ্ধ রেখেছেন, তবে তারা এ সীমানায় এসে থেমে যেত। আর সময়, সম্পদ ও শক্তি নষ্ট না করে গবেষণা থামিয়ে দিত। মহান আল্লাহ বলেন, وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي وَمَا أُوتِيتُمْ مِنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا- ‘আর ওরা তোমাকে প্রশ্ন করছে ‘রূহ’ সম্পর্কে। তুমি বলে দাও, রূহ আমার প্রতিপালকের একটি আদেশ মাত্র। বস্ত্ততঃ এ বিষয়ে তোমাদের অতি সামান্যই জ্ঞান দেওয়া হয়েছে’ (ইসরা ১৭/৮৫)।
অন্যদিকে এমন কিছু অদৃশ্যের খবর রয়েছে, যার রহস্য উদ্ঘাটন করা বস্ত্তবাদী জ্ঞানের জন্য সম্ভব নয়। যেমন ফেরেশতাদের জগৎ। ফেরেশতাদের সম্পর্কে কুরআন ও হাদীছে যতটুকু তথ্য দেওয়া হয়েছে, এর বাইরে কোন কিছু জানা মানুষের পক্ষে অসম্ভব। সুতরাং এই বিষয়গুলোতে চিন্তা-ভাবনা বন্ধ করা আবশ্যক। এর সীমানা অতিক্রম না করা ওয়াজিব। কারণ এগুলো অদৃশ্যের বিষয়, যা চিন্তা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বোঝা সম্ভব নয়।
অনুরূপভাবে এমন কিছু বিষয় আছে, যে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা বর্জন করা উচিত। যেমন দুনিয়া অর্জনের পন্থা নিয়ে চিন্তা করা, জীবনের জন্য অপকারী ও অনর্থক বিষয় নিয়ে চিন্তা করা, পাপ কাজ করার কৌশল নিয়ে চিন্তা করা। এগুলো মন্দ চিন্তা-ভাবনা, যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। আবুল লায়েছ সামারকান্দি (রহঃ) বলেন,لَا تَتَفَكَّرْ فِي ثَلَاثَةِ أَشْيَاءَ: لَا تَتَفَكَّرْ فِي الْفَقْرِ فَيَكْثُرَ هَمُّكَ وَغَمُّكَ، وَيَزِيدَ فِي حِرْصِكَ، وَلَا تَتَفَكَّرْ فِي ظُلْمِ مَنْ ظَلَمَكَ فَيَغْلُظَ قَلْبُكَ، وَيَكْثُرَ حِقْدُكَ، وَيَدُومَ غَيْظُكَ، وَلَا تَتَفَكَّرْ فِي طُولِ الْبَقَاءِ فِي الدُّنْيَا، فَتُحِبَّ الْجَمْعَ، وَتُضَيِّعَ الْعُمْرَ، وَتُسَوِّفَ فِي الْعَمَلِ، ‘তিনটি বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে না। (১) দরিদ্রতা সম্পর্কে চিন্তা করবে না, তাহ’লে তোমার দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠা বেড়ে যাবে এবং লোভ-লালসা বৃদ্ধি পাবে। (২) যালেমের যুলুম সম্পর্কে তুমি চিন্তা করবে না, তাহ’লে তোমার অন্তর শক্ত হয়ে যাবে, হিংসা-বিদ্বেষ বৃদ্ধি পাবে এবং তোমার রাগ স্থায়ীরূপ নিবে। (৩) দুনিয়াতে দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকা নিয়ে চিন্তা করবে না, তাহ’লে তুমি সম্পদ সঞ্চয়ে উদ্গ্রীব হয়ে পড়বে, সময় নষ্ট করবে এবং আমল সম্পাদনে বিলম্বে করবে’।[15]
সুতরাং চিন্তার ইবাদতে আত্মনিয়োগ করার আগে চিন্তার সীমানা সম্পর্কে অবগত হওয়া যরূরী। যাতে চিন্তার ইবাদত করতে গিয়ে আল্লাহর অবাধ্যতা না হয়ে যায়। মহান আল্লাহ আমাদেরকে চিন্তার সীমানা অতিক্রম করা থেকে বিরত রাখুন। সর্বদা চিন্তার ইবাদতে মগ্ন থেকে তাঁর রেযামন্দি হাছিল করার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!
চিন্তা-ভাবনার উপকারিতা ও ফলাফল
১. আল্লাহর পরিচয় লাভ করা যায় :
আল্লাহর পরিচয় জানার অর্থ হ’ল তাওহীদের জ্ঞান অর্জন করা। কবরে প্রত্যেক আদম সন্তানকে মৌলিক যে তিনটি প্রশ্ন করা হবে তন্মধ্যে প্রথম প্রশ্ন হবে তার রব সম্পর্কে। অর্থাৎ তাকে সর্বপ্রথম তাওহীদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বান্দা যদি দুনিয়াতে তাওহীদের জ্ঞান অর্জন না করে থাকে, তাহ’লে সে কোনভাবেই মুনকার-নাকীরের প্রশ্নের জবাব দিতে সক্ষম হবে না। ফলে তার কবরটা জাহান্নামের টুকরায় পরিণত হবে। সুতরাং জীবদ্দশায় আল্লাহর পরিচয় লাভ করা তথা তাওহীদের জ্ঞান অর্জন করা ফরযে আইন। আর আল্লাহর পরিচর জানার প্রধান উপায় হ’ল- চারপাশের সৃষ্টিরাজি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। যিনি যত বেশী চিন্তা-ভাবনা করবেন, তত দ্রুত ও সহজে আল্লাহর পরিচয়, বড়ত্ব ও মহত্ত্ব তার সামনে উদ্ভাসিত হবে। ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহঃ) বলেন,إن أول ما أوجب الله على العبد معرفته، والثاني: .. النظر والاستدلال، المؤديان إلى معرفة الله تعالى، ‘আল্লাহ সর্বপ্রথম যে বিষয়টি বান্দার উপর ফরয করেছেন, তা হ’ল তাঁর পরিচয় জানা। আর দ্বিতীয়টি হ’ল ... (তাঁর সৃষ্টিরাজি) পর্যবেক্ষণ করা এবং তাঁর অস্তিত্বের প্রমাণ খুঁজে বের করা। আল্লাহর পরিচয় জানতে এই দু’টি বিষয়ই মোক্ষম ভূমিকা পালন করে থাকে’।[16]
আল্লাহ বলেন, وَيَتَفَكَّرُوْنَ فِيْ خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَٰذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ- ‘আর তারা আসমান ও যমীনের সৃষ্টি বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে এবং বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি এগুলিকে অনর্থক সৃষ্টি করনি। মহা পবিত্র তুমি। অতএব তুমি আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও!’ (আলে ইমরান ৩/১৯০-১৯১)। এই আয়াতে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, যারা প্রকৃত অর্থে চিন্তার ইবাদত করে এবং আল্লাহর সৃষ্টিরাজি নিয়ে ভাবে, তারা সৃষ্টিকর্তার পরিচয় লাভ করতে পারে এবং তাঁকে ভয় করতে শিখে। আর যারা চিন্তা করে না তারা তাদের সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে অজ্ঞই থেকে যায়। ফলে তারা ঈমান আনে না; বরং কুফরী করে। আল্লাহ বলেন,وَالَّذِينَ كَفَرُوا عَمَّا أُنْذِرُوا مُعْرِضُونَ- ‘বস্ত্ততঃ কাফেরদের যা থেকে সতর্ক করা হয়, তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়’ (আহক্বাফ ৪৬/৩)। ইমাম তাবারী (রহঃ) বলেন, والذين جحدوا وحدانية الله عن إنذار الله إياهم معرضون، لا يتعظون به، ولا يتفكرون فيعتبرون، ‘যারা আল্লাহর সতর্কবাণীর ব্যাপারে তাঁর একত্বকে অস্বীকার করে, তারা (আল্লাহর নির্দেশনাবলী থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারা এর মাধ্যমে উপদেশ হাছিল করে না, চিন্তা-ভাবনা করে না এবং শিক্ষা লাভ করে না’।[17]
তাওহীদের জ্ঞান লাভ করার জন্য আল্লাহ নিজেদের নিয়েও চিন্তা-গবেষণা করতে বলেছেন। তিনি বলেন, وَفِي أَنْفُسِكُمْ أَفَلَا تُبْصِرُونَ، ‘আর নিদর্শন রয়েছে তোমাদের মাঝেও, তোমরা কি দেখ না’? (যারিয়াত ৫১/০৮)। ক্বাতাদাহ (রহঃ) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,من سار في الأرض رأى آيات وعبرا، ومن تفكر في نفسه علم أنه خلق ليعبد الله، ‘যে ব্যক্তি যমীনে চলাচল করবে, সে অসংখ্য নিদর্শন ও উপদেশ লাভের খোরাক পেয়ে যাবে। আর যে নিজেকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে, সে বুঝতে পারবে যে, তাকে সত্যিকারার্থে আল্লাহর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে’।[18] ইমাম তাবারী (রহঃ) বলেন,أفلا تنظرون في ذلك فتتفكروا فيه، فتعلموا حقيقة وحدانية خالقكم؛ ‘তোমরা কি নিজেরদের দিকে তাকিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে না? তবেই তো তোমরা তোমাদের সৃষ্টিকর্তার একত্বের সত্যতা অনুধাবন করতে পারবে’।[19] ইবনে আশুর (রহঃ) বলেন,فَإِنَّ حَقَّ النَّظَرِ الْمُؤَدِّي إِلَى مَعْرِفَةِ الْوَحْدَانِيَّةِ، ‘প্রকৃত চিন্তাদৃষ্টি (বান্দাকে) তাওহীদের জ্ঞানের দিকে ধাবিত করে’।[20]
মূলতঃ তাওহীদ এর অর্থ হ’ল আল্লাহকে এক ও একক জানা। অর্থাৎ গোটা বিশ্বমন্ডলের সৃষ্টি, রাজত্ব, পরিচালনায় আল্লাহকে এক ও অদ্বিতীয় হিসাবে বিশ্বাস করা, যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগী কেবল তাঁরই জন্য সুনির্দিষ্ট করা এবং কোন অপব্যাখ্যা না করে আল্লাহর সুন্দর নাম ও সুউচ্চ গুণাবলীর ব্যাপারে পূর্ণ বিশ্বাস রেখে তাঁকে যাবতীয় দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র ও মুক্ত ঘোষণা করা। আল্লাহ মানুষ ও জিন জাতিকে এই তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। যেমন তিনি বলেন, وَما خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ- ‘আমি জিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছি কেবল এজন্য যে, তারা আমার ইবাদত করবে’ (যারিয়াত ৫১/৫৬)। মুফারস্সিরগণ বলেন, অত্র আয়াতে لِيَعْبُدُونِ -এর অর্থ হ’ল لِيُوَحِّدُوْنِ (তারা আমার একত্বের স্বীকৃতি দিবে)।[21] নাছিরুদ্দীন বায়যাবী (রহঃ) বলেন,أن الطريق إلى معرفة الله تعالى والعلم بوحدانيته واستحقاقه للعبادة، النظر في صنعه والاستدلال بأفعاله، ‘আল্লাহর পরিচয় জানা, তাঁর তাওহীদের জ্ঞান লাভ করা এবং তাঁকে ইবাদতের একমাত্র উপযুক্ত সাব্যস্ত করার উপায় হ’ল তাঁর সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করা এবং তাঁর কার্যাবলীর মাধ্যমে এর প্রমাণ খঁজে নেওয়া’।[22]
২. ঈমানের জ্যোতি বৃদ্ধি পায় :
বান্দার জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ হ’ল ঈমান। পৃথিবীর সবকিছু হারিয়ে গেলেও হৃদয়ে যদি ঈমানের আলো প্রজ্বলিত থাকে, তাহ’লে তার যেন কিছুই হারায়নী। কেননা যার সীনাতে ঈমানের চিহ্ন আছে, আল্লাহ তার পাশে থাকেন। আর আল্লাহ যার সহায় হয়ে যান, তার কোন কিছু হারানোর ভয় থাকে না। সুতরাং মুমিন বান্দা জীবনের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে হ’লেও তার ঈমানকে হেফাযত করেন। তার শরীরে আঘাত লাগতে পারে, কিন্তু ঈমানকে তিনি আঘাতপ্রপ্ত হ’তে দেন না। তার গায়ের পোষাক ময়লা হয়ে যেতে পারে, ঈমানের উপর তিনি পাপের ময়লা জমতে দেন না। জান্নাতের জন্য পাগলপারা একজন মুমিন বান্দা পৃথিবীর সবকিছুর বিনিময়ে হ’লেও বুকের পিঞ্জরে স্বীয় ঈমানের আলো জ্বালিয়ে রাখেন। এই যে ঈমানের আলোয় আলোকিত হওয়ার নিরন্তর কোশেশ, জান্নাতের পথে নিরবধি ছুটে চলার প্রচেষ্টা, দ্বীনের পথে অবিচল থাকার দৃঢ় শক্তি, এগুলোর অধিকাংশই চিন্তার ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা লাভ করে থাকেন। তিনি যখন দুনিয়া ও পরকালের স্থায়িত্ব, মৃত্যু, জান্নাত-জাহান্নাম, আল্লাহর সৃষ্টিরাজি প্রভৃতি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেন, তখন তার পরহেযগারিতা ঊর্ধ্বগামী হয়ে যায়, হৃদয়ে বিকীর্ণ হয় ঈমানের প্রদীপ্ত আলো। আমের ইবনু আব্দে ক্বায়েস (রহঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর একাধিক ছাহাবীকে বলতে শুনেছি যে, إِنَّ ضِيَاءَ الْإِيمَانِ التَّفَكُّرُ ‘চিন্তা-ভাবনা হ’ল ঈমানের আলো’।[23] ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, مفتاحُ الإيمانِ: التَّفكرُ فِيمَا دَعَا اللهُ عِبَادَهُ إلى التَّفَكُر فيهِ، ‘ঈমানের চাবিকাঠি হ’ল আল্লাহ যে ব্যাপারে চিন্তা করতে বলেছেন, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা’।[24] আল্লামা শাওক্বানী (রহঃ) বলেন,الفكر إذا كان صادقا أوصلهم إلى الإيمان ‘নির্মল চিন্তা মানুষকে ঈমানের কাছে পৌঁছে দেয়’।[25]
খলীফা আল-আবদী (রহঃ) বলেন, ‘যদি আল্লাহর ইবাদত না করা হ’ত, এমনকি কেউ যদি আল্লাহর ইবাদত হ’তে নাও দেখত, তবুও মুমিনগণ রাতের আগমন নিয়ে চিন্তা করত; যখন রাত এসে সকল কিছুকে ছেয়ে ফেলে, সবকিছুকে (অাঁধারে) ঢেকে ফেলে। দিবসকে নিয়ে চিন্তা করত- যখন দিন এসে রাতের প্রভাব একেবারে মুছে দেয়। তারা যমীন ও আসমানের মাঝে ভাসমান মেঘমালা নিয়ে চিন্তা করত। আকাশের তারকারাজি ও শীত-গ্রীষ্ম নিয়ে চিন্তা করত। আল্লাহর কসম! যদি মুমিনগণ রবের এসব সৃষ্টিরাজি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করত, তাহ’লে অবশ্যই তাদের অন্তরগুলো তাদের রবের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী হয়ে যেত’।[26]
৩. আল্লাহভীতি অর্জন :
চিন্তার ইবাদতের একটি বড় উপকারিতা হ’ল এর মাধ্যমে বান্দার বিবেক উন্মুক্ত হয়। ফলে হৃদয়ে প্রবেশ করে আল্লাহভীতি। যাতে তার সারা দেহে অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে যে, আল্লাহর হক্বগুলো আদায়ের ক্ষেত্রে কমতি করা হয়েছে, জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচার জন্য তার পাথেয় নেই বললেই চলে, জান্নাতে যাওয়ার রসদ তার জোগাড় করা হয়নি। এই ভাবনাগুলো তার ভিতরে পরহেযগারিতা ও নেক আমলের বীজ বপন করে দেবে। ফলে তার অন্তর পরিবর্তিত হবে। বাহ্যিক আমল উন্নত হবে। ইবনে আওন (রহঃ) বলেন,الْفِكْرَةُ تُذْهِبُ الْغَفْلَةَ وَتُحْدِثُ لِلْقَلْبِ الْخَشْيَةَ كَمَا يُحْدِثُ الْمَاءُ لِلزَّرْعِ النَّبَاتَ، ‘চিন্তা-ভাবনা উদাসীনতা দূর করে দেয়, আর অন্তরে আল্লাহভীতি পয়দা করে, যেমনভাবে পানি বীজ থেকে উদ্ভিদের জন্ম দেয়’।[27] হাতেম আল-আ‘ছাম (রহঃ) বলেন, مِنَ الْعِبْرَةِ يَزِيدُ الْعِلْمُ وَمِنَ الذكر يزيد يَزِيدُ الْحُبُّ وَمِنَ التَّفَكُّرِ يَزِيدُ الْخَوْفُ ‘উপদেশের মাধ্যমে জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। যিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। আর চিন্তা-ভাবনা করলে আল্লাহভীতি বৃদ্ধি পায়’।[28]
অনুরূপভাবে বান্দা যখন কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করবে, তখন তার ঈমান ও তাক্বওয়া উর্ধ্বমুখী হবে। নবী করীম (ছাঃ)-এর ছাহাবায়ে কেরাম কুরআন নিয়ে চিন্তা করতেন এবং প্রভাবিত হ’তেন। আবুবকর (রাঃ) ছিলেন একজন নরম দিলের মানুষ। তিনি যখন কুরআন তেলাওয়াত করতেন, তখন কান্না সংবরণ করতে পারতেন না। ওমর (রাঃ)-এর অবস্থাও ছিল একই রকম। একবার তিনি কুরআন তেলাওয়াত করতে গিয়ে এই আয়াতে পৌঁছেন,إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ لَوَاقِعٌ، مَا لَهُ مِنْ دَافِعٍ- ‘আপনার পালনকর্তার শাস্তি অবশ্যম্ভাবী, তা থেকে কেউ প্রতিরোধ করতে পারবে না’ (তূর ৫২/৭-৮)। এই আয়াত পাঠ করার পর তিনি আল্লাহর ভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমনকি ছালাতে যখন কুরআন তেলাওয়াত করা হ’ত এবং আল্লাহর আযাব ও জাহান্নাম সংক্রান্ত আয়াত আসত, তিনি ভয়ে কাঁদতে থাকতেন। একেবারে পিছনের কাতারে অবস্থানকারী মুছল্লীরাও তার কান্নার আওয়াজ শুনতে পেতেন’।[29]
আলী ইবনে ফুযাইল (রহঃ) একটি আয়াত তেলাওয়াত করতে গিয়ে তো ভয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন। একবার তিনি সূরা আন‘আম তেলাওয়াত করছিলেন। যখন তিনি এই আয়াতে পৌঁছলেন,وَلَوْ تَرَى إِذْ وُقِفُوا عَلَى النَّارِ فَقَالُوا يَالَيْتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِآيَاتِ رَبِّنَا وَنَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ- ‘যদি তুমি তাদের সেই সময়ের অবস্থা দেখতে, যখন তাদেরকে জাহান্নামের কিনারে দাঁড় করানো হবে। অতঃপর তারা বলবে, হায় যদি আমাদের পুনরায় (দুনিয়ায়) ফিরিয়ে দেওয়া হ’ত, তাহ’লে আমরা আমাদের প্রতিপালকের আয়াত সমূহে মিথ্যারোপ করতাম না এবং আমরা বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম’ (আন‘আম ৬/২৭)। ইবরাহীম ইবনে বাশার (রহঃ) বলেন, এই আয়াতে এসে তিনি থমকে দাঁড়ান এবং মৃত্যুবরণ করেন। আমি তার জানাযা ছালাতে অংশগ্রহণ করেছিলাম’।[30] তারা কত গভীরভাবে কুরআনের আয়াত হৃদয়ে ধারণ করতেন, কত প্রবলভাবে আল্লাহর ভয়ে ভীত হ’তেন ও উক্ত ঘটনা থেকে তা সহজেই অনুধাবন করা যায়। অথচ আমরাও এই আয়াতগুলো তেলাওয়াত করি, কিন্তু চিন্তা-গবেষণা না করার জন্য সালাফদের অনুপরিমাণ অনুভূতিও আমাদের ভিতরে জাগ্রত হয় না। আল্লাহ আমাদেকে তাঁর কালামে পাক অনুধাবন করার নে‘মত দান করুন। চিন্তার ইবাদতের মাধ্যমে সর্বাবস্থায় তাঁর ভয়ে ভীত হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!
৪.নেক আমলের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায় :
আমাদের জীবনের মূল দায়িত্বই হ’ল আল্লাহর ইবাদত করা এবং নেক আমল করা। কারো যদি নেক আমলে গাফলতি আসে এবং ইবাদতের আগ্রহে ভাটা পড়ে, তবে তাকে চিন্তার ইবাদতে খুব বেশী জোর দেওয়া উচিত। কেননা এর মাধ্যমে বান্দার অন্তরে ইবাদতের প্রতি এক ঐকান্তিক অভিনিবেশ তৈরী হয়। নেক আমল সম্পাদনের স্পৃহা বহুগুণ বেড়ে যায়। যেমন চিন্তার যেসব ক্ষেত্র নিয়ে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে যদি কেউ চিন্তা-ভাবনা করে, তখন তার মনের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে ঈমানের আলো জ্বলে উঠবে। তার হৃদয় আল্লাহমুখী হয়ে যাবে। ফলে ইবাদত সম্পাদনে তার ভিতরে প্রেরণা জেগে উঠবে।
অনুরূপভাবে আমরা যখন ফযীলতপূর্ণ বা ভীতি মূলক কোন হাদীছ শুনি এবং সেটা নিয়ে একটু চিন্তা করি, তখন ঐ হাদীছের প্রতি আমল করার আগ্রহ অনেক গুণ বেড়ে যায়। জান্নাত পাওয়ার আকাঙক্ষায় অথবা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার আশায় ইবাদতের গতি একটু হ’লেও বাড়ে। যার চিন্তা শক্তি যত বেশী, ইবাদত-বন্দেগী ও নেক আমল সম্পাদনে তার আগ্রহ-উদ্দীপনা তত বেশী হয়ে থাকে। ওহাব ইবনু মুনাবিবহ (রহঃ) বলেন,مَا طَالَتْ فِكْرَةُ امرِئ قَطُّ إِلَّا فَهِمَ، وَمَا فَهِمَ امْرُؤٌ قَطُّ إِلَّا عَلِمَ، وَمَا عَلِمَ امْرُؤٌ قَطُّ إلا عمل، ‘যখনই কোন ব্যক্তির চিন্তা প্রলম্বিত হয়, তখন সে বুদ্ধিমান হয়। আর যে বুদ্ধিমান হয়, সে জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়। আর যে জ্ঞানী হয়, সে আমল করে’।[31] শায়খ ছালেহ আল-উছাইমীন (রহঃ) বলেন,الذكر التام هو الذي يكون ذكرا لله باللسان وبالقلب، يعني انك تذكر الله بلسانك وتذكر الله بقلبك، فأحيانا يكون الذكر بالقلب انفع للعبد من الذكر المجرد، إذا تفكر الإنسان في نفسه وقلبه، في آيات الله الكونية والشرعية، بقدر ما يستطيع، حصل على خير كثير، ‘পূর্ণাঙ্গ যিকির হ’ল জিহবা ও হৃদয় দিয়ে আল্লাহর যিকির করা। এর অর্থ হ’ল- আপনি আপনার জিহবা ও হৃদয় দিয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবেন। কখনো কখনো নিছক স্বাভাবিক যিকিরের চেয়ে অন্তরের যিকির বান্দার জন্য বেশী উপকারী হয়। যখন মানুষ তার সাধ্যানুযায়ী আল্লাহর সার্বজনীন ও শারঈ নিদের্শনা নিয়ে হৃদয় দিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে, তখন সে প্রভূত কল্যাণ লাভ করতে পারবে’।[32]
অন্তর হ’ল মানব দেহের রাজধানী। অন্তর যখন চিন্তার ইবাদতে রত হয়, তখন তার প্রভাবে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রভাবিত হয় এবং নেক আমল সম্পাদনে ঝুঁকে পড়ে। সেজন্য চিন্তা-ভাবনাকে অন্তরের শ্রেষ্ঠ ইবাদত গণ্য করা হয়। ক্বাতাদা (রহঃ) বলেন,مَنْ تَفَكَّرَ فِي خَلْقِ نَفْسِهِ عَرَفَ أَنَّهُ إِنَّمَا خُلِقَ وَلُيِّنَتْ مَفَاصِلُهُ لِلْعِبَادَةِ؛ ‘যে ব্যক্তি নিজের সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে, সে জানতে পারবে যে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে, ফলে তার দেহ ইবাদতের জন্য অনুগত হয়ে যাবে’।[33] হাসান বছরী (রহঃ) বলেন,لَا فَقْرَ أَشَدُّ مِنَ الْجَهْلِ، وَلَا مَالَ أَعْودُ مِنَ الْعَقْلِ، وَلَا عُبَادَةَ كَالتَّفَكُّرِ، وَلَا حُسْنَ كَحُسْنِ الْخَلْقِ، وَلَا وَرَعَ كَالْكَفِّ، ‘মূর্খতার চেয়ে তীব্রতর কোন দরিদ্রতা নেই। বিবেকের চেয়ে অধিক উপকারী কোন সম্পদ নেই। চিন্তা-ভানার সমতুল্য কোন ইবাদত নেই। সদাচরণের মত কোন সৌন্দর্য নেই। নির্লোভের সমতুল্য কোন ধার্মিকতা নেই’।[34]
[ক্রমশঃ]
আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
এম.এ, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[1]. বুখারী হা/২০৫৯; মিশকাত হ/২৭৬১।
[2]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান ৯/৪১১; রাগেব ইছ্ফাহানী, আয-যারী‘আহ ইলা মাকারিমিশ শারী‘আহ, পৃ. ৯৪।
[3]. ওকী‘, কিতাবুয যুহ্দ, পৃ. ৫০১; ইবনু আবীদ্দুন্য়া, মুহাসাবাতুন নাফ্স, পৃ. ২৫।
[4]. মুসলিম হা/২৮৫৮; তিরমিযী হা/২৩২৩; মিশকাত হা/৫১৫৬।
[5]. তাফসীরে কুরতুবী ৩/৩২০; তাফসীরে ইবনে কাছীর ১/১৫৮।
[6]. ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়া, ২/৪০৯।
[7]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৫৯; ছহীহুত তারগীব হা/৩৩৩৫; সনদ হাসান।
[8]. হিলয়াতুল আওলিয়া ১০/৩২।
[9]. ইবনুল খার্রাত, আল-‘আকিবাহ ফী যিকরিল মাওত, পৃ. ১৯৫।
[10]. তাবারাণী আওসাত্ব হা/৬৩১৯; ছহীহুল জামে‘ হা/২৯৭৬, সনদ হাসান।
[11]. ইবনু বাত্তাহ, আল-ইবানাতুল কুবরা, ৭/১৫০ হা/১০৮; ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ১৩/৩৮৩, সনদ জাইয়িদ।
[12]. বুখারী হা/৩২৭৬; মুসলিম হা/১৩৪; মিশকাত হা/৬৫।
[13]. ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ, ১/১৪৪।
[14]. সিলসিলা ছহীহাহ ৭/১৩২৫।
[15]. আবুল লায়েছ সমরকান্দী, তাম্বীহুল গাফেলীন, পৃ. ৫৭২।
[16]. ইবনে তাইমিয়াহ, দার্উ তা‘আরুযিল আক্বলি ওয়ান নাক্বল, তাহ্ক্বীক্ব: ড. মুহাম্মাদ রাশেদ সালিম (সঊদী আরব: ইমাম মুহাম্মাদ বিন স‘উদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, দ্বিতীয় প্রকাশ, ১৪১১হি./১৯৯১খ্রি.) ৮ম খন্ড, পৃ. ০৫।
[17]. তাফসীরে তাবারী (জামে‘উল বায়ান), ২২/৮৯।
[18]. তাফসীরে কুরতুবী, ১৭/৪০।
[19]. তাফসীরে তাবারী, ২২/৪২০।
[20]. ইবনে আশূর আত-তূনুসী, আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর, ২১/৫২।
[21]. শাওক্বানী, তাফসীরে ফাৎহুল ক্বাদীর, ৫/১১০; তাফসীরে মাযহারী, ৯/৯১; তাফসীরে সা‘দী, পৃ. ৪৫।
[22]. তাফসীরে বায়যাবী (আনওয়ারুত তানযীল ওয়া আসরারুত তা’বীল), ১/৫৫।
[23]. তাফসীরে ইবনে কাছীর, ২/১৮৫।
[24]. ইবনুল ক্বাইয়িম, হাদিউল আরওয়াহ, পৃ. ৬৮।
[25]. শাওক্বানী, ফাৎহুল ক্বাদীর, ১/৪৭০।
[26]. জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী, আদ্দুর্রুল মানছূর, ৪/৩৪৩।
[27]. তাফসীরে বাগাভী, ২/১৫২।
[28]. গাযালী, ইহইয়াউ ‘উলূমিদ্দীন, ৪/৪২৫।
[29]. ইবনুল জাওযী, মানক্বিবে ওমর, পৃ. ১৬৭।
[30]. যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ৮/৪৪৬।
[31]. তাফসীরে ইবনে কাছীর, ২/১৮৪।
[32]. উছায়মীন, শারহু রিয়াযিছ ছালেহীন, ১/৫৮৩।
[33]. তাফসীরে ইবনে কাছীর, ৭/৪১৯।
[34]. ইবনু আবীদ্দুন্য়া, আল-ওরা‘উ, পৃ. ১২২।