পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ ।

পৃথিবীর প্রতিটি জিনিস ধ্বংস হওয়ার পূর্বে সেটি দুর্বল হওয়ার আলামতগুলো প্রকাশ পায়। আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীকে ধ্বংস করার পূর্বে কিছু আলামত প্রকাশ করবেন। যাতে পৃথিবীতে বসবাসরত মানুষগুলো সতর্ক হয় এবং পরকালের স্থায়ী জীবনের জন্য পূর্ণ প্রস্ত্ততি গ্রহণ করে। তিনি এর মাধ্যমে সৎকর্মশীলদেরকে পুরস্কৃত করবেন এবং সীমালংঘনকারীদেরকে শাস্তি দিবেন। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা এ পৃথিবীতে এসেছি। আবার তাঁর ইচ্ছাতেই এ সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব। একদল আসছে, অন্য দল প্রস্থান করছে। কিন্তু এমন এক সময় আসবে যেদিন পৃথিবীতে বসবাসরত সকল মানুষ একসাথে নিঃশেষ হয়ে যাবে। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। সূর্যকে আলোহীন করা হবে। নক্ষত্র রাজি খসে পড়বে। পাহাড়সমূহ উড়তে থাকবে। সমুদ্রগুলিকে অগ্নিময় করা হবে। আকাশকে আবরণমুক্ত করা হবে। সাগরের ঢেউ থেমে যাবে। নদ-নদীর পানি শুকিয়ে যাবে। সেদিন সকলকে নতুন এক জগতে ফিরে যেতে হবে। সেখানে মানুষের পার্থিব কাজের হিসাব নেয়া হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর তোমরা সেদিনকে ভয় কর, যেদিন কেউ কারো কোন উপকারে আসবে না এবং কারো পক্ষে কোন সুফারিশ কবুল করা হবে না। কারো কাছ থেকে বিনিময় নেয়া হবে না এবং কেউ কোনরূপ সাহায্য পাবে না’ (বাক্বারাহ ২/৪৮)। তিনি আরো বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমরা তোমাদের যে রূযী দান করেছি তা থেকে তোমরা (আল্লাহর পথে) ব্যয় কর সেদিন আসার পূর্বেই, যেদিন নেই কোন মালের বিনিময়, নেই কোন বন্ধুত্ব, নেই কোন সুফারিশ। আর কাফেররাই হ’ল যালেম’ (বাক্বারাহ ২/২৫৪)। আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, আর তোমরা ঐ দিনকে ভয় কর, যেদিন তোমরা সকলে আল্লাহর নিকটে ফিরে যাবে। অতঃপর সেদিন প্রত্যেকে স্ব স্ব কর্মের ফল পুরোপুরি পাবে এবং তাদের প্রতি কোনরূপ অবিচার করা হবে না’ (বাক্বারাহ ২/২৮১)

অপরদিকে আল্লাহ তা‘আলা জিবরীল (আঃ)-এর মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ)-কে বলেন, হে মুহাম্মাদ! যতদিন খুশী জীবন যাপন কর। কিন্তু মনে রেখ তুমি মৃত্যুবরণ করবে। যার সাথে খুশী বন্ধুত্ব কর। কিন্তু মনে রেখ তুমি তাকে ছেড়ে যাবে। যা খুশী আমল কর। কিন্তু মনে রেখ তুমি তার ফলাফল পাবে। জেনে রেখ, মুমিনের মর্যাদা হ’ল ইবাদতে রাত্রি জাগরণ করায় এবং তার সম্মান হ’ল মানুষের মুখাপেক্ষী না হওয়ার মধ্যে’।[1] অন্যদিকে আল্লাহ সরাসরি স্বীয় নবীকে বলেন,إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُمْ مَيِّتُونَ ‘নিশ্চয়ই তুমি মরবে এবং তারাও মরবে’ (যুমার ৩৯/৩০)। বিশ্ব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানুষটিকে আল্লাহ নিজে এবং জিব্রীলকে পাঠিয়ে পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। অতএব পরকালের কথা স্মরণ করা ও স্মরণ করিয়ে দেওয়া দু’টিই মুমিনের জন্য অবশ্য কর্তব্য। আলোচ্য নিবন্ধে ক্বিয়ামতের আলামত সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।

কিয়ামত দু’ভাগে বিভক্ত। ব্যক্তির মৃত্যুই তার জন্য ক্বিয়ামত। আরেকটি ক্বিয়ামত যখন ইসরাফীল (আঃ) শিঙ্গায় ফুৎকার দিবেন তখন পুরো বিশ্ব একই সাথে ধ্বংস হয়ে যাবে।

ক্বিয়ামতের আলামত অবহিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা :

এই দিনকে কুরআনে বিভিন্ন নামে উল্লেখ করা হয়েছে। কোথাও আখেরাত দিবস, কোথাও বিচার দিবস, কোথাও মহান দিবস, কোথাও ক্বিয়ামত দিবস, আবার কোথাও মহাপ্রলয় ইত্যাদি। ক্বিয়ামত দিবস এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস ঈমানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুকন। ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি এবং আখেরাতের শাস্তি কিংবা নে‘মতের উপর বিশ্বাসই মানুষকে সকল প্রকার কল্যাণের পথে নিয়ে যায় এবং সকল অন্যায় পথ হ’তে বিরত রাখে। এজন্যই পবিত্র কুরআনে বারবার ক্বিয়ামত দিবসের কথা আলোচনা করা হয়েছে। মানুষের চরিত্র সংশোধনের জন্যে এবং তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্যে পরকালের প্রতি ঈমানের যে প্রভাব রয়েছে, মানব রচিত কোন বিধানেই তা খুঁজে পাওয়া যাবে না। এজন্যেই আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস এবং আল্লাহ ও পরকালে অবিশ্বাসী ব্যক্তি উভয়ের মাঝে আকাশ-পাতাল পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

১. ক্বিয়ামতের আলামতের প্রতি বিশ্বাস করা ঈমানের পরিচয় : ক্বিয়ামতের আলামতের প্রতি ঈমান আনয়ন করা আখেরাতের উপর ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ক্বিয়ামতের আলামত সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আবশ্যক। কারণ কোন ঘটনার পূর্বে তার সময়কাল জানা গেলে সেজন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা যায়। অধিক নেক আমল করার মাধ্যমে নিজেকে জান্নাতের জন্য প্রস্ত্তত করা যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ছয়টি ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পূর্বে তোমরা নেক আমলের প্রতিযোগিতা কর, (তাহ’ল) পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া অথবা ধোঁয়া অথবা দাজ্জাল কিংবা দাববাতুল আরয, মানুষরূপী পশু অথবা তোমাদের কারো খাছ বিষয় (অর্থাৎ মৃত্যু) ও আম (ব্যাপক) বিষয় অর্থাৎ ক্বিয়ামত’।[2]

২. দ্বীনের উপরে সুদৃঢ় থাকার উপায় : ক্বিয়ামতের আলামত সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে দ্বীনের উপর সুদৃঢ় থাকা যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘অন্ধকার রাতের মত ফিৎনা আসার আগেই তোমরা নেক আমলের প্রতি অগ্রসর হও। সে সময় সকালে একজন মুমিন হ’লে বিকালে কাফির হয়ে যাবে। বিকালে মুমিন হ’লে সকালে কাফির হয়ে যাবে। দুনিয়ার সামগ্রীর বিনিময়ে সে তার দ্বীন বিক্রি করে বসবে’।[3]

৩. আল্লাহর ইবাদত ও নেক আমলে উদ্বুদ্ধ করে : ক্বিয়ামতের আলামত ইবাদত পালনে উদ্বুদ্ধ করে। এমনকি যখন অবস্থা করুণ হবে ও ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চলবে তখনও সৎ লোকেরা ইবাদত পালনে লিপ্ত থাকবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ফিতনা-দুর্যোগের সময় ইবাদত করা আমার নিকট হিজরত করার সমতুল্য।[4]

এছাড়া ক্বিয়ামতের আলামতের জ্ঞান মানুষকে নেক আমল করতে উৎসাহিত করে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম বা শেষ দশ আয়াত পাঠ করবে সে দাজ্জালের ফেৎনা থেকে রক্ষা পাবে’।[5] যখন কোন ব্যক্তি জানবে ক্বিয়ামত নিকটে এবং দাজ্জালের আগমন সন্নিকটে তখন সে এই আয়াতগুলো পাঠ করবে এবং অর্থ অনুধাবন করবে। সে ফিৎনা থেকে নিজেকে রক্ষা করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘শীঘ্রই ফিতনার রাশি আসতে থাকবে। ঐ সময় উপবিষ্ট ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির চেয়ে উত্তম (নিরাপদ), দাঁড়ানো ব্যক্তি পদাচারী ব্যক্তি হ’তে অধিক রক্ষিত আর পদাচারী ব্যক্তি ধাবমান ব্যক্তির চেয়ে অধিক বিপদমুক্ত। যে ব্যক্তি ফিতনার দিকে চোখ তুলে তাকাবে ফিতনা তাকে গ্রাস করবে। তখন যদি কোন ব্যক্তি তার দ্বীন রক্ষার জন্য কোন ঠিকানা অথবা নিরাপদ আশ্রয় পায়, তবে সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করাই উচিত হবে।[6]

৪. মানুষের সীমিত জ্ঞানের প্রমাণ : ক্বিয়ামতের আলামত শিক্ষা দেয় যে, মানুষের জ্ঞান সীমাবদ্ধ। ক্বিয়ামত কখন ঘটবে কেউ বলতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তারা তোমাকে প্রশ্ন করছে ক্বিয়ামত কখন হবে? বলে দাও, এর জ্ঞান কেবল আমার প্রতিপালকের কাছেই রয়েছে। তার নির্ধারিত সময় কেবল তিনিই প্রকাশ করে দিবেন। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে সেটি হবে একটি ভয়ংকর বিষয়। যা তোমাদের নিকটে আসবে আকস্মিকভাবে’ (আ‘রাফ ৭/১৮৭)

৫. ঈমান বৃদ্ধির কারণ : ক্বিয়ামতের আলামত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ পাওয়া মুমিনের ঈমানকে বৃদ্ধি করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘এটা তো তাই, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদেরকে যার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সত্য বলেছেন। আর এটি তাদের ঈমান ও আনুগত্যকে আরও বৃদ্ধি করল’ (আহযাব ৩৩/২২)। ক্বিয়ামতের আলামত লোকদের হালাল উপার্জনে উদ্বুদ্ধ করে। কারণ রাসূল (ছাঃ) এব্যাপারে সতর্ক করে বলেন, ক্বিয়ামতের পূর্বে ব্যাপক হারে সূদ প্রকাশ পাবে।[7] তিনি আরো বলেন, মানুষের উপর এমন এক যুগ অবশ্যই আসবে, যখন মানুষ পরোয়া করবে না যে কিভাবে সে সম্পদ উপার্জন করল, হালাল উপায়ে না হারাম উপায়ে।[8]

৬. নির্লোভ হওয়ার ও অল্পে তুষ্ট থাকার শিক্ষা : ক্বিয়ামতের আলামত মানুষকে লোভ ত্যাগ করতে ও অল্পে তুষ্ট থাকতে শিখায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামত ততক্ষণ পর্যন্ত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না ফুরাত তার মধ্যস্থিত স্বর্ণের পাহাড় বের করে দেয়। লোকেরা এ নিয়ে যুদ্ধ করবে এবং একশতের মধ্যে নিরানববই জন মৃত্যুবরণ করবে। তাদের সকলেই বলবে, আমার মনে হয় আমি জীবন্ত থাকব।[9] 

হারিছ ইবনু নওফল (রহঃ) বলেন, আমি উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-এর থেকে দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলাম। এমতাবস্থায় তিনি বললেন, বিভিন্ন প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে মানুষ পার্থিব সম্পদ উপার্জনের কাজে সর্বদা নিয়োজিত থাকবে। আমি বললাম, হ্যঁা, ঠিকই। তখন তিনি বললেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, অচিরেই ফোরাত তার মধ্যস্থিত স্বর্ণের পাহাড় বের করে দিবে। একথা শুনামাত্রই লোকজন সেদিকে চলতে আরম্ভ করবে। সেখানকার লোকেরা বলবে, আমরা যদি লোকদেরকে ছেড়ে দেই তবে তারা সবই নিয়ে চলে যাবে। এ নিয়ে তারা পরস্পর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে এবং এতে একশতের মধ্যে নিরানববই জন লোকই নিহত হবে। বর্ণনাকারী আবু কামেল (রহঃ) তার হাদীছে উল্লেখ করেছেন যে, আমি ও উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) হাসসানের কিল্লার ছায়ায় দাঁড়ানো ছিলাম।[10]

৭. বিধর্মীদের সাদৃশ্য অবলম্বন থেকে বিরত থাকা : ক্বিয়ামতের আলামত আমাদের ইহুদী-খৃষ্টানদের সাদৃশ্য পোষণ থেকে দূরে রাখে এবং স্বতন্ত্র ইসলামী জীবন যাপনে অভ্যস্ত হ’তে সহায়তা করে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ক্বিয়ামত ক্বায়েম হবে না যে পর্যন্ত না আমার উম্মত পূর্বযুগের লোকেদের নীতি পদ্ধতিকে আচার-অভ্যাসকে বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে গ্রহণ না করবে। বলা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! পারসিক ও রোমকদের মত কি? তিনি বললেন, এরা ছাড়া মানুষের মধ্যে অন্য আর কারা?[11] অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ইহুদী ও খৃষ্টানদের অনুকরণ করবে।[12]

৮. বড়দের নিকট থেকে জ্ঞানার্জন করা : ক্বিয়ামতের আলামত আমাদের বড়দের থেকে জ্ঞান অর্জন করতে নির্দেশনা দেয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কিয়ামতের অন্যতম আলামত হ’ল ‘লোকেরা জ্ঞান অন্বেষণ করবে তুচ্ছ লোকদের থেকে’।[13] ফলে সমাজ অজ্ঞতায় ভরে যাবে। অল্প বিদ্যায় পারদর্শীরা বিদ‘আত ও শিরক দ্বারা সমাজকে কলুষিত করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘শেষ যামানায় এমন মিথ্যুক দাজ্জাল লোক হবে, যারা তোমাদের কাছে এমন সব (মনগড়া) হাদীছ নিয়ে উপস্থিত হবে যা তোমরা শুননি, তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেননি। অতএব সাবধান! তাদের থেকে দূরে থাকবে, যাতে তারা তোমাদেরকে গুমরাহ করতে বা বিপদে ফেলতে না পারে’।[14]

৯. ওলামায়ে কেরামের শরণাপন্ন হওয়া : ক্বিয়ামতের আলামত লোকদের ভয়ংকর বিপদের সময় আলেমগণের শরণাপন্ন হ’তে সহায়তা করে। একবার কূফা নগরীতে লাল ঝঞ্ঝা বিশিষ্ট বায়ু প্রবাহিত হ’ল। এমন সময় জনৈক লোক কূফায় এসে বলল যে, হে আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ! সতর্ক হও, ক্বিয়ামত এসে গেছে। ইবনু মাসঊদ হেলান দিয়ে ছিলেন। সোজা হয়ে বসে বললেন, ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না উত্তরাধিকার সম্পদ অবণ্টিত থাকবে... ’।[15]

১০. সবার সাথে উত্তম আচরণ করতে শিক্ষা দেয় : ক্বিয়ামতের আলামত আমাদেরকে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে, সুন্দর প্রতিবেশী হ’তে ও সালামের ব্যাপক প্রচার- প্রসার করতে শিক্ষা দেয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘কিয়ামতের নিকটবর্তীকালে লোক বিশেষকে নির্দিষ্ট করে সালাম দেয়ার প্রচলন হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। ফলে স্বামীর ব্যবসায়ে স্ত্রীও সহযোগিতা করবে। রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তা ছিন্ন করা হবে।[16]

১১. মানুষকে আমানতদার হ’তে শিক্ষা দেয় : ক্বিয়ামতের পূর্বে আমানতদারী উঠে যাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যখন আমানত নষ্ট হয়ে যাবে তখন ক্বিয়ামতের অপেক্ষা করবে। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমানত কিভাবে নষ্ট হবে? তিনি বললেন, যখন কোন অযোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্বশীল নিয়োগ করা হবে, তখনই ক্বিয়ামতের অপেক্ষা করবে’।[17]

১২. পরিবারকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার শিক্ষা : ক্বিয়ামতের আলামত আমাদের পরিবারকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে শেখায় এবং স্ত্রী ও সন্তানদের পর্দার ব্যাপারে সতর্ক হ’তে শেখায়। কারণ নারীদের পর্দা ব্যবস্থা পরিহার করা ক্বিয়ামতের অন্যতম নিদর্শন। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘অচিরেই শেষ যামানায় আমার উম্মতের এমন কিছু লোক আগমন করবে যাদের নারীরা কাপড় পরবে অথচ উলঙ্গ থাকবে এবং তারা পুরুষদের দিকে আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথার চুলের খোঁপা বুখতী উটের হেলে পড়া কুঁজের ন্যায় হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। যদিও তার সুঘ্রাণ দূর-দূরান্ত হ’তে পাওয়া যাবে’।[18]

১২. ফিৎনা-ফাসাদ থেকে দূরে থাকতে শেখায় : ক্বিয়ামতের পূর্বে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে যে, যেখানে সেখানে ফিৎনা-ফাসাদ ছড়িয়ে পড়বে। হত্যাকারী জানবে না কেন সে হত্যা করল। আবার নিহত ব্যক্তিও জানবে না কেন তাকে হত্যা করা হ’ল। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ঐ সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, মানুষের নিকট এমন এক সময় আসবে, যখন হত্যাকারী জানবে না যে, কি অপরাধে সে হত্যা করেছে এবং নিহত ব্যক্তিও জানবে না যে, কি অপরাধে সে নিহত হয়েছে’।[19]

১৩. দুনিয়ার চাকচিক্যে মেতে উঠতে বাধা দেয় : ক্বিয়ামতের পূর্বে এমন অবস্থা সৃষ্টি হবে যে, লোকেরা বড় বড় দালান-কোঠা নিয়ে প্রতিযোগিতা করবে। রাসূল (ছাঃ) ক্বিয়ামতের আলামত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘উটের নগণ্য রাখালেরা যখন বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণে প্রতিযোগিতা করবে’।[20]

ক্বিয়ামতের আলামত সমূহ

ক্বিয়ামতের আলামত সমূহের মধ্যে কিছু রয়েছে যা ঘটে গেছে। আবার এমন কিছু আলামত রয়েছে যা প্রকাশ পেয়েছে এবং দিন দিন এর পরিমাণ বাড়ছে। কিছু আলামত রয়েছে, যা এখনও ঘটেনি। সেগুলো ক্বিয়ামতের বড় আলামত হিসাবে প্রকাশিত হবে।

ক্বিয়ামতের ছোট আলামত যেগুলো প্রকাশিত হয়েছে :

১। শেষ নবীর আগমন : নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পৃথিবীতে আগমন ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত। হাদীছে এসেছে,

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِىِّ صَاحِبِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللهِ  صلى الله عليه وسلم :بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةُ كَهَذِهِ مِنْ هَذِهِ أَوْ كَهَاتَيْنِ. وَقَرَنَ بَيْنَ السَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى-

সাহল ইবনু সা‘দ-সাঈদী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল  (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি প্রেরিত হয়েছি এমন সময় যে, আমি ও ক্বিয়ামত এই দু’টি আঙ্গুলের মত কাছাকাছি। এটা বলে তিনি শাহাদত ও মধ্যমা দু’টি আঙ্গুল মিলিয়ে দেখালেন’।[21] ইমাম কুরতুবী বলেন, ক্বিয়ামতের প্রথম আলামত নবী করীম (ছাঃ)-এর আগমন। কারণ তিনি শেষ যামানার নবী। আর তিনি চলে এসেছেন। তাঁর মাঝে ও ক্বিয়ামতের মাঝে কোন নবী নেই।[22]

২। শেষ নবী (ছাঃ)-এর মৃত্যু : শেষ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) মৃত্যুবরণ করাও ক্বিয়ামতের একটি আলামত। হাদীছে এসেছে,  

عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: اعْدُدْ سِتًّا بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ مَوْتِي، ثُمَّ فَتْحُ بَيْتِ المَقْدِسِ، ثُمَّ مُوْتَانٌ يَأْخُذُ فِيكُمْ كِقِعَاصِ الغَنَمِ، ثُمَّ اسْتِفَاضَةُ المَالِ حَتَّى يُعْطَى الرَّجُلُ مِائَةَ دِينَارٍ فَيَظَلُّ سَاخِطًا، ثُمَّ فِتْنَةٌ لَا يَبْقَى بَيْتٌ مِنَ العَرَبِ إِلَّا دَخَلَتْهُ، ثُمَّ هُدْنَةٌ تَكُونُ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ بَنِي الأَصْفَرِ، فَيَغْدِرُونَ فَيَأْتُونَكُمْ تَحْتَ ثَمَانِينَ غَايَةٍ، تَحْتَ كُلِّ غَايَةٍ اثْنَا عَشَرَ الفًا-

আওফ ইবনু মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামতের আগের ছয়টি নিদর্শন গণনা করে রাখ। আমার মৃত্যু, অতঃপর বায়তুল মুক্বাদ্দাস বিজয়, অতঃপর তোমাদের মধ্যে মহামারী ঘটবে, বকরীর পালের মহামারীর মত, সম্পদের প্রাচুর্য, এমনকি এক ব্যক্তিকে একশ’ দীনার দেয়ার পরেও সে অসন্তুষ্ট থাকবে। অতঃপর এমন এক ফিৎনা আসবে যা আরবের প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করবে। অতঃপর যুদ্ধ বিরতির চুক্তি, যা তোমাদের ও বানী আসফার বা রোমকদের মধ্যে সম্পাদিত হবে। অতঃপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং আশিটি পতাকা উড়িয়ে তোমাদের বিপক্ষে আসবে; প্রত্যেক পতাকার নীচে থাকবে বার হাযার সৈন্য’।[23]

৩। বায়তুল মুক্বাদ্দাস বিজয় : মুসলমান কর্তৃক বায়তুল মুক্বাদ্দাস তথা জেরুযালেম বিজয় হওয়া ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত, যা ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর যুগে ঘটেছিল। যেমন হাদীছে এসেছে,

عن عَوْفُ بْنُ مَالِكٍ الأَشْجَعِىُّ قَالَ أَتَيْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ فِىْ غَزْوَةِ تَبُوْكَ وَهُوَ فِىْ خِبَاءٍ مِنْ أَدَمٍ فَجَلَسْتُ بِفِنَاءِ الْخِبَاءِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ادْخُلْ يَا عَوْفُ. فَقُلْتُ بِكُلِّى يَا رَسُولَ اللهِ! قَالَ: بِكُلِّكَ. ثُمَّ قَالَ: يَا عَوْفُ احْفَظْ خِلاَلاً سِتًّا بَيْنَ يَدَىِ السَّاعَةِ إِحْدَاهُنَّ مَوْتِى. قَالَ فَوَجَمْتُ عِنْدَهَا وَجْمَةً شَدِيدَةً. فَقَالَ: قُلْ إِحْدَى ثُمَّ فَتْحُ بَيْتِ الْمَقْدِسِ ثُمَّ دَاءٌ يَظْهَرُ فِيكُمْ يَسْتَشْهِدُ اللهُ بِهِ ذَرَارِيَّكُمْ وَأَنْفُسَكُمْ وَيُزَكِّى بِهِ أَمْوَالَكُمْ... -

আওফ ইবনে মালেক আল-আশজাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, তাবূক যুদ্ধকালে আমি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি একটি চামড়ার তাঁবুর ভিতরে ছিলেন। আমি তাঁবুর আঙ্গিনায় বসে পড়লাম। রাসূল (ছাঃ) বললেন, হে আওফ! ভেতরে এসো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি সম্পূর্ণ প্রবেশ করব? তিনি বলেন, হ্যঁা, সম্পূর্ণভাবে এসো। অতঃপর তিনি বললেন, হে আওফ! ক্বিয়ামতের পূর্বেকার ছয়টি আলামত স্মরণ রাখবে। সেগুলো একটি হচ্ছে আমার মৃত্যু। আওফ (রাঃ) বলেন, আমি একথায় অত্যন্ত মর্মাহত হ’লাম ।তিনি বললেন, তুমি বল, প্রথমটি। অতঃপর বায়তুল মুক্বাদ্দাস বিজয়। অতঃপর তোমাদের মধ্যে এক মহামারী ছড়িয়ে পড়বে, যার দ্বারা আল্লাহ তোমাদের বংশধরকে ও তোমাদেরকে শাহাদত নছীব করবেন এবং তোমাদের আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করবে...।[24] ১৬ হিজরীতে ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর আমলে বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয় হয়। তিনি নিজে সেখানে গমন করেন এবং মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করেন। তিনি সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করেন যে দরজা দিয়ে রাসূল (ছাঃ) মে‘রাজের রাতে উক্ত মসজিদে প্রবেশ করেছিলেন। তিনি সৈন্যদের নিয়ে জামা‘আতে ফজরের ছালাত আদায় করেন।[25]

৪। মহামারী : বিভিন্ন প্রকারের মারাত্মক রোগ-ব্যাধি ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়াও ক্বিয়ামতের আলামত। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: اعْدُدْ سِتًّا بَيْنَ يَدَي السَّاعَةِ، منها : مُوتَانٌ يَأْخُذُ فِيْكُمْ كِقُعَاصِ الغَنَمِ-

আওফ বিন মালেক হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলছেন, ক্বিয়ামতের আগের ছয়টি নিদর্শন গণনা করে রাখ। .....অতঃপর তোমাদের মধ্যে মহামারী ঘটবে, বকরীর পালের মহামারীর মত’।[26] এই আলামতও ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর আমলে বায়তুল মুক্বাদ্দাস বিজয় হওয়ার দু’বছর পরে ঘটেছে। এই ঘটনাটি ১৮ হিজরীতে ঘটে। পরে সিরিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং এই মহামারীতে বহু ছাহাবী ও অন্যান্য লোক মারা যান। বলা হয়, এতে প্রায় পঁচিশ হাযার মুসলমান মৃত্যুবরণ করেন। যার মধ্যে আবু ওবায়দাহ বিন আমের বিন জাররাহ অন্যতম ছিলেন। আওফ বিন মালেক (রাঃ) মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ)-কে বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাকে ক্বিয়ামতের ছয়টি আলামত গণনা করতে বলেন, এর মধ্যে তিনটি ঘটেছে। তন্মধ্যে রাসূল (ছাঃ)-এর মুত্যু, বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয় এবং মহামারী। আর বাকী তিনটির জন্য অপেক্ষা  করছি’।[27]

৫। মু‘আবিয়া ও আলী (রাঃ)-এর মধ্যে যুদ্ধ : ইসলামের চতুর্থ খলীফা আলী বিন আবী তালিব ও রাসূল (ছাঃ)-এর অন্যতম শ্যালক মু‘আবিয়া বিন আবু সুফিয়ানের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হওয়া ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত। দু’টিই ইসলামী দল। দু’টি দলেরই দাবী তারা হকের উপরে বিদ্যমান। রাসূল (ছাঃ) এরূপ দু’টি ইসলামী দলের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হওয়াকে ক্বিয়ামতের আলামত বলে উল্লেখ করেছেন। ওছমান (রাঃ)-এর হত্যাকারীদের বিচার নিয়ে ইসলামের চতুর্থ খলীফা আলী ও মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধেই আম্মার বিন ইয়াসার (রাঃ) আলীর পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে শাহাদত বরণ করেন। যার ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘হে আম্মার! সুখবর গ্রহণ কর, বিদ্রোহী দলটি তোমাকে হত্যা করবে’।[28] তিনি আরো বলেন, ‘আম্মারের জন্য বড় দুঃখ হয়, বিদ্রোহী দল তাকে হত্যা করবে। আম্মার (রাঃ) তাদেরকে আল্লাহর দিকে আহবান করবে এবং তারা আম্মারকে জাহান্নামের পথে ডাকবে’।[29] এতে এক লাখ বিশ হাযার ইরাকী সৈন্য যোগদান করে। তার মধ্যে চল্লিশ হাযার শাহাদত বরণ করেন। অপরদিকে  ষাট হাযার  শামবাসী যোগদান করে যাদের বিশ হাযার শাহাদত বরণ করেন।[30] হাদীছে এসেছে, 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَقْتَتِلَ فِئَتَانِ عَظِيْمَتَانِ تَكُوْنُ بَيْنَهُمَا مَقْتَلَةٌ عَظِيمَةٌ دَعْوَتُهُمَا وَاحِدَةٌ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)  বলেছেন,  ক্বিয়ামত ঐ পর্যন্ত সংঘটিত হবে না, যে পর্যন্ত না দু’টি বড় দল পরস্পর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধ হবে। অথচ তাদের উভয়ের দাবী হবে একই’।[31]

হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, দু’টি বড় দল দ্বারা উদ্দেশ্য আলী ও তার সৈন্যরা এবং মু‘আবিয়া ও তার সৈন্যরা।[32]

৬। হিজায থেকে ভয়ঙ্কর আগুন বের হওয়া : ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত হ’ল মদীনার পার্শবর্তী হিজায থেকে আগুনের আবির্ভাব। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَخْرُجَ نَارٌ مِنْ أَرْضِ الحِجَازِ تُضِيءُ لَهَا أَعْنَاقُ الإِبِلِ بِبُصْرَى-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)  বলেছেন, ‘ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না হিজাযের যমীন থেকে এমন আগুন বের হবে, যা বছরার উটগুলোর গর্দান আলোকিত করে দিবে’।[33] এই আগুন হিজরী সপ্তম শতাব্দীতে প্রকাশিত হয়েছে। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, আমাদের যুগে ৬৫৪ হিজরীতে এই আগুনের আবির্ভাব ঘটে। এটি ভয়ংকার আগুন ছিল। যা মদীনার পূর্ব ও হাররার পিছনে দেখা গিয়েছিল। এব্যাপারে সকল সিরিয়াবাসী ও শহরবাসীর নিকট নিরঙ্কুষ সংবাদ পৌঁছেছে এবং মদীনার প্রত্যক্ষদর্শীরা আমাকে সংবাদ দিয়েছে।[34]

ইমাম কুরতুবী বলেন, মদীনার পার্শ্ববর্তী হিজায থেকে আগুন বের হয়। এর সূচনা হয়েছিল মারাত্মক একটি ভূমিকম্পের মাধ্যমে। যা ৬৫৪ হিজরীর জুমাদাল আখিরাহ মাসের তৃতীয় দিন বুধবার রাতে এশার পরে ঘটেছিল। এটি শুক্রবার দিপ্রহর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তা হাররার পার্শ্ববর্তী কুরায়যা থেকে বের হয়। যখন তা বের হয় তখন মনে হয়েছিল যেন এটি একটি বড় শহর। যাকে বেষ্টন করে আছে প্রাচীর এবং যার মধ্যে রয়েছে বড় বড় প্রাসাদ, দুর্গ ও মিনার। আর কিছু একে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যখনই কোন পাহাড় অতিক্রম করছিল তা ভেঙ্গে চুরমার করে সমতল করে দিচ্ছিল। তার মাঝ থেকে বের হচ্ছিল লাল ও নীল অগ্নিশিখা। সাথে ছিল বজ্রের মত গর্জন। সামনে পড়ে থাকা পাথরগুলো উড়িয়ে নিয়ে ইরাক সীমান্তে নিক্ষেপ করছিল। আর তাতেই তা পাহাড়ের মত সুদৃঢ় প্রাচীরে পরিণত হয়েছিল। এটি মদীনার পাশেই সমাপ্ত হয়েছিল। অথচ সেখানে ঠান্ডা লু হাওয়া বইছিল। এই আগুন সমুদ্রের ঢেউয়ের মত উথলিয়ে উঠছিল। আমার কতিপয় বন্ধু বর্ণনা করেছেন যে, আমরা পাঁচদিন যাবত এই আগুন মহাশূন্যে উড়তে দেখেছি। আমি আরো শুনেছি, এই আগুন মক্কা ও বছরার পাহাড় থেকে দেখা গিয়েছিল।[35]

হাফেয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, আমার নিকট যেটা বোধগম্য হয়েছে তা হ’ল- হাদীছে উল্লেখিত আগুনটি মদীনার পাশে প্রকাশ পেয়েছে। যেমনটি কুরতুবী ও অন্যান্যরা বুঝেছেন।[36] এই আগুন সেই আগুন নয় যা লোকদের তাড়িয়ে হাশরের ময়দানে নিয়ে যাবে। উল্লেখ্য যে, জাহেলী যুগেও এরূপ দাবানলের উদ্ভব ঘটেছিল যা খালিদ বিন সেনান নামক গোত্রপতি নিভিয়েছিলেন।[37] উল্লেখ্য যে, ক্বিয়ামতের পূর্বে আদন গুহা বা ইয়ামান থেকে আরেকটি আগুনের আবির্ভাব ঘটবে, যা সকল মানুষকে হাশরের মাঠে একত্রিত করবে।[38]

৭. তাতার ও তুর্কীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ : তুর্কীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুসলমানদের জড়িয়ে পড়া ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত। রাসূল (ছাঃ) তাদের মুখমন্ডলের যে বিবরণ দিয়েছেন তা তাতার ও তুর্কীদের সাথে মিলে যায়। তাতার ও তুর্কীরা একই বংশোদ্ভূত দু’টি জাতি। তুর্কীদের সহায়তায় তাতাররা বিশ্বজয় করতে সক্ষম হয়েছিল। বর্তমান তুর্কী জাতি ও তাতাররা ইয়াজূজ-মাজূজের বংশধর ছিল। বাদশাহ যুলকারনাইনের প্রাচীরের বাইরে থাকা লোকেরাই পরে তুর্কী, তাতারী বা মোগল নামে পরিচিত হয়ে পৃথিবীতে বহু ধ্বংসলীলা চালিয়েছে। তাদের ধ্বংসলীলা ভবিষ্যতে আগত ইয়াজূজ-মাজূজের ধ্বংসলীলার ভয়াবহতা স্মরণ করিয়ে দেয়। এদের অনেকে ইসলাম গ্রহণ করে এবং শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত হয়। এদেরই একটি অংশ তাতারদের যুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই করে ওছমানীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল’।[39] যেমন বিভিন্ন হাদীছে এসেছে-

عَنْ أَبِي هُـرَيْرَةَ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُـولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَـالَ: لَا تَقُومُ السَّـاعَةُ حَـتَّى يُقَـاتِلَ المُسْلِمُونَ التُّرْكَ، قَوْمًا وُجُوهُهُمْ كَالمَجَانِّ المُطْرَقَةِ، يَلْبَسُونَ الشَّعَرَ وَيَمْشُونَ فِي الشَّعَرِ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)  বলেছেন, ক্বিয়ামত সংগঠিত হবে না, যে পর্যন্ত মুসলিমরা তুর্কীদের সাথে যুদ্ধ না করবে। তারা এমন সম্প্রদায়, যাদের মুখমন্ডল হবে চামড়া জড়ানো ঢালের ন্যায় (গোশতবহুল)। তারা পশমী পোষাক পরবে এবং পশমের উপর (পশমযুক্ত জুতা পায়ে) হাঁটবে।[40]

عَنِ عَمْرُو بْنُ تَغْلِبَ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ  صلى الله عليه وسلم  : إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ تُقَاتِلُوْا قَوْمًا يَنْتَعِلُوْنَ نِعَالَ الشَّعَرِ، وَإِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ تُقَاتِلُوا قَوْمًا عِرَاضَ الْوُجُوهِ، كَأَنَّ وُجُوهَهُمُ الْمَجَانُّ الْمُطَرَّقَةُ-

আমর ইবনু তাগলিব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামতের আলামতসমূহের একটি এই যে, তোমরা এমন এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যারা পশমের জুতা পরিধান করবে। ক্বিয়ামতের আরেকটি আলামত এই যে, তোমরা এমন এক জাতির বিপক্ষে যুদ্ধ করবে, যাদের মুখমন্ডল হবে চওড়া, তাদের মুখমন্ডল যেন পিটানো চামড়ার ঢাল’।[41]

عَنِ أَبي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تُقَاتِلُوا التُّرْكَ صِغَارَ الأَعْيُنِ، حُمْرَ الْوُجُوهِ، ذُلْفَ الأُنُوفِ، كَأَنَّ وُجُوهَهُمُ الْمَجَانُّ الْمُطَرَّقَةُ، وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تُقَاتِلُوا قَوْمًا نِعَالُهُمُ الشَّعَرُ–

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)  বলেছেন, ততদিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতদিন তোমরা এমন তুর্কী জাতির বিপক্ষে যুদ্ধ না করবে, যাদের চোখ ছোট, চেহারা লাল, নাক চেপ্টা এবং মুখমন্ডল পেটানো চামড়ার ঢালের মত। আর ততদিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতদিন না তোমরা এমন এক জাতির বিপক্ষে যুদ্ধ করবে, যাদের জুতা হবে পশমের’।[42]

এই যুদ্ধ মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর আমলে একবার হয়েছে এবং পরে একাধিকবার হয়েছে। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক বর্ণিত গুণাবলী সম্পন্ন তুর্কীদের সাথে যুদ্ধ ঘটেছে। ...এসব কিছু আমাদের আমলেই হয়েছে। মুসলমানগণ একাধিকবার তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে এবং এখনও যুদ্ধ চলছে।[43] উল্লেখ্য যে, তাতারদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছে আববাসীয় খলীফা মুস্তা‘ছিম বিল্লাহ ও শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ)-এর আমলে। 

৮. চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়া : ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত হ’ল চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,اقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَانْشَقَّ الْقَمَرُ وَإِنْ يَرَوْا آيَةً يُعْرِضُوا وَيَقُولُوا سِحْرٌ مُسْتَمِرٌّ- ‘ক্বিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে এবং চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে। তারা যদি কোন নিদর্শন দেখে তাহ’লে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে যে, এটা তো চিরাচরিত যাদু’ (ক্বামার ৫৪/১-২)

হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার ঘটনা রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে ঘটেছিল। যা ছহীহ সনদে মুতাওয়াতির পর্যায়ের হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। এ বিষয়ে ওলামায়ে কেরামের ঐক্যমত রয়েছে যে, চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার ঘটনা রাসূল (ছাঃ)-এর যুগেই ঘটেছিল এবং এটি তার প্রকাশ্য মু‘জিযা।[44] হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رضى الله عنه أَنَّهُ حَدَّثَهُمْ أَنَّ أَهْلَ مَكَّةَ سَأَلُوْا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ يُرِيَهُمْ آيَةً، فَأَرَاهُمُ انْشِقَاقَ الْقَمَرِ-

‘আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মক্কাবাসীরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে এরূপ নিদর্শন দেখাতে বলে। তখন তিনি তাদেরকে চন্দ্র দ্বিখন্ডিত করে দেখালেন’।[45] চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হয়ে হেরা পাহাড়ের দু’পাশে পড়ে যায়। অপর একটি হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِمِنًى إِذَا انْفَلَقَ الْقَمَرُ فِلْقَتَيْنِ فَكَانَتْ فِلْقَةٌ وَرَاءَ الْجَبَلِ وَفِلْقَةٌ دُونَهُ فَقَالَ لَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: اشْهَدُوا-

আব্দুল্লাহ্ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মিনায় আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। এমতাবস্থায় অকস্মাৎ চাঁদ দু’টুকরো হয়ে গেল। এক টুকরো পাহাড়ের পিছনে পতিত হ’ল এবং অপর টুকরো পাহাড়ের সামনে। তখন রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে বললেন, তোমরা সাক্ষী থাক’।[46]

عَنْ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ قَالَ انْشَقَّ الْقَمَرُ عَلَى عَهْدِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم حَتَّى صَارَ فِرْقَتَيْنِ عَلَى هَذَا الْجَبَلِ وَعَلَى هَذَا الْجَبَلِ، فَقَالُوا سَحَرَنَا مُحَمَّدٌ فَقَالَ بَعْضُهُمْ لَئِنْ كَانَ سَحَرَنَا مَا يَسْتَطِيعُ أَنْ يَسْحَرَ النَّاسَ كُلَّهُمْ-

জুবায়ের ইবনু মুতঈম (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে চাঁদ বিদীর্ণ হ’ল এবং দ্বিখন্ডিত হয়ে গেলে, এক অংশ এই পাহাড়ের উপর এবং অপর অংশ ঐ পাহাড়ের উপর পড়ে গেল। তারা (মক্কাবাসী কাফিররা) বলল, রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে যাদু করেছেন। কেউ কেউ বলল, তিনি আমাদের যাদু করে থাকলে সব মানুষকে যাদু করতে পারবেন না।[47] এত বড় ঘটনা চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ সত্ত্বেও কুরায়েশ নেতারা ঈমান আনল না। পরে বিভিন্ন এলাকা হ’তে আগত লোকদের কাছেও তারা একই ঘটনা শুনতে পায়। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, তারা বলল, এটা আবু কাবশার পুত্রের (মুহাম্মাদের) যাদু। সে তোমাদের যাদু করেছে। অতএব তোমরা বহিরাগত লোকদের জিজ্ঞেস কর। কেননা মুহাম্মাদ একসঙ্গে সবাইকে যাদু করতে পারবে না। অতএব বহিরাগতরা বললে সেটাই ঠিক। নইলে এটা স্রেফ যাদু মাত্র। অতঃপর চারদিক থেকে আসা মুসাফিরদের জিজ্ঞেস করলেন। তারা সবাই এ দৃশ্য দেখেছে বলে সাক্ষ্য দেয়’।[48]

কিন্তু যিদ ও অহংকার তাদেরকে ঈমান আনা হ’তে বিরত রাখল।  এ  প্রসঙ্গে  আল্লাহ  বলেন,    وَإِن يَّرَوْا آيَةً يُعْرِضُوا

وَيَقُولُوا سِحْرٌ مُّسْتَمِرٌّ، وَكَذَّبُوا وَاتَّبَعُوا أَهْوَاءَهُمْ وَكُلُّ أَمْرٍ مُّسْتَقِرٌّ، ‘তারা যদি কোন নিদর্শন (যেমন চন্দ্র দ্বিখন্ডিতকরণ) দেখে, তবে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে যে, এটা তো চলমান যাদু মাত্র। তারা মিথ্যারোপ করে এবং নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে। অথচ প্রত্যেক কাজের ফলাফল (ক্বিয়ামতের দিন) স্থিরীকৃত হবে’ (ক্বামার ৫৪/২-৩)

‘তারীখে ফিরিশতা’ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার এই দৃশ্য ভারতের মালাবারের জনৈক মহারাজা স্বচক্ষে দেখেন এবং তা নিজের রোজনামচায় লিপিবদ্ধ করেন। পরে আরব বণিকদের মুখে ঘটনা শুনে তখনকার রাজা ‘সামেরী’ উক্ত রোজনামচা বের করেন। অতঃপর তাতে ঘটনার সত্যতা দেখে তিনি মুসলমান হয়ে যান। যদিও সামরিক কর্মকর্তা ও সমাজনেতাদের ভয়ে তিনি ইসলাম গোপন রাখেন’।[49] ১৯৬৯ সালের ২০শে জুলাই চন্দ্রে প্রথম পদার্পণকারী দলের নেতা নেইল আর্মষ্ট্রং স্বচক্ষে চন্দ্রপৃষ্ঠের বিভক্তি রেখা দেখে বিস্ময়াভিভূত হন এবং ইসলাম কবুল করেন। কিন্তু মার্কিন প্রশাসনের ভয়ে তিনি একথা কয়েক বছর পরে প্রকাশ করেন।[50]

চন্দ্র দ্বিখন্ডিত হওয়ার ঘটনায় বড় শিক্ষণীয় এই যে, সূর্য-চন্দ্র-নক্ষত্র সবই আল্লাহর অনুগত এবং মানুষেরই কল্যাণে সৃষ্ট ও তাদেরই সেবায় নিয়োজিত। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞানীদের জন্য অফুরন্ত চিন্তার উৎস। আর তা এই যে, মহাশূন্যে ঘূর্ণায়মান নক্ষত্ররাজি কোনটাই নিজ ইচ্ছায় সৃষ্টি হয়নি এবং কোনটাই নিজ ইচ্ছায় চলে না। অবশ্যই এগুলির একজন সুনিপূণ ও সুদক্ষ পরিচালক ও ব্যবস্থাপক রয়েছেন। যিনি বিশ্ব চরাচরের ধারক।                                [চলবে]


[1]. হাকেম হা/৭৯২১; মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৪২৭৮; ছহীহাহ হা/৮৩১; ছহীহুত তারগীব হা/৬২৭, ৮২৪

[2]. মুসলিম হা/২৯৪৭; মিশকাত হা/৫৪৬৫

[3]. মুসলিম হা/১১৮; মিশকাত হা/৫৩৮৩

[4]. মুসলিম হা/২৯৪৮; মিশকাত হা/৫৩৯১

[5]. মুসলিম হা/৮০৯; ছহীহুত তারগীব হা/১৪৭২

[6]. বুখারী হা/৩৬০১; মুসলিম হা/২৮৮৬; মিশকাত হা/৫৩৮৪

[7]. ছহীহুত তারগীব হা/১৮৬১; ছহীহাহ হা/৩৪১৫

[8]. বুখারী হা/২০৮৩; মিশকাত হা/২৭৬১

[9]. মুসলিম হা/২৮৯৪; মিশকাত হা/৫৪৪৩

[10]. মুসলিম হা/২৮৯৫

[11]. বুখারী হা/৭৩১৯

[12]. মুসলিম হা/২৮৯৪

[13]. ছহীহাহ হা/৬৯৫; ছহীহুল জামে‘ হা/২২০৭

[14]. মুসলিম হা/৬; মিশকাত হা/১৫৪

[15]. মুসলিম হা/২৮৯৯; আহমাদ হা৩৬৪৩

[16]. আহমাদ হা/৩৮৭০; হাকেম হা/৮৩৭৮; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১০৪৯; ছহীহাহ হা/৬৪৭

[17]. বুখারী হা/৬৪৯৬; মিশকাত হা/৫৪৩৯

[18]. মুসলিম হা/২১২৮; মিশকাত হা/৩৫২৪ ছহীহাহ হা/২৬৮৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/২০৪৩

[19]. মুসলিম হা/২৯০৮; মিশকাত হা/৫৩৯০; ছহীহুল জামে‘ হা/৭০৭

[20]. বুখারী হা/৫০; মুসলিম হা/০৭

[21]. বুখারী হা/৪৯৩৬, ৬৫০৪; মুসলিম হা/৮৬৭; ইবনু মাজাহ হা/৪৫; তিরমিযী হা/২২১৪; মিশকাত হা/১৪০৭

[22]. আত-তাযকিরাতু বি-আহওয়ালিল মাওতা ওয়াল আখিরাহ ১/১২১৯

[23]. বুখারী হা/৩১৭৬; ইবনু মাজাহ হা/৪০৪২; মিশকাত হা/৫৪২০

[24]. ইবনু মাজাহ হা/৪০৪২; মিশকাত হা/৫৪২০; আহমাদ হা/২৪০১৭; ছহীহুল জামে‘ হা/১০৪৫

[25]. আল-বিদায়াহ ৭/৫৫

[26]. বুখারী হা/৩১৭৬; ইবনু মাজাহ হা/৪০৪২; মিশকাত হা/৫৪২০

[27]. হাকেম হা/৮৩০৩; ফাৎহুলবারী ৬/২৭৮-২৭৯

[28]. তিরমিযী হা/৩৮০০; ছহীহাহ হা/৭১০

[29]. বুখারী হা/২৮১২; মুসলিম হা/২৯১৬

[30]. আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৬/২১৪

[31]. বুখারী হা/৩৬০৯; মুসলিম হা/১৫৭; মিশকাত হা/৫৪১০

[32]. ফাৎহুলবারী ১৩/৮৫

[33]. বুখারী হা/৭১১৮; মুসলিম ৩৩/৪১, হা/২৯০২; আহমাদ ১৯৫৫৫; মিশকাত হা/৫৪৪৬

[34]. শারহুন নববী আলা মুসলিম ১৮২৮, উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য

[35]. আত-তাযকিরা ১/১২৩৬

[36]. ফাৎহুল বারী ১৩/৭৯-৮০

[37]. ফাৎহুল বারী ১৩/৮০

[38]. মুসলিম হা/২৯০১; মিশকাত হা/৫৪৬৪

[39]. ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ৬/১০৪; ২৯২৭ হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য; বদরুদ্দীন আইনী, ঊমদাতুল ক্বারী ১৪/২০০; বুখারী হা/৭২৯১-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য; তাফসীরে কুরতুবী, সূরা কাহাফের ৯৪-৯৮ আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য

[40]. মুসলিম হা/২৯১২; আবূদাউদ হা/৪৩০৩; নাসাঈ হা/৩১৭৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৪২৬

[41]. বুখারী হা/২৯২৭; মুসলিম হা/২৯১২; মিশকাত হা/৫৪১১

[42]. বুখারী হা/২৯২৮, ২৯২৯, ৩৫৮৭, ৩৫৯০, ৩৫৯১; মুসলিম ৫২/১৮ হা/২৯১২, আহমাদ ৭২৬৭; মিশকাত হা/৫৪১২

[43]. শারহুন নববী আলা মুসলিম ১৮/৩৮, অত্র হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য

[44]. তাফসীরে ইবনু কাছীর ৭/৪৭২, অত্র আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য

[45]. বুখারী হা/৩৬৩৭; মুসলিম হা/২৮০২; আহমাদ হা/১৩১৭৭

[46]. মুসলিম হা/২৮০০; তিরমিযী হা/৩২৮৫; আহমাদ হা/৪২৭০

[47]. তিরমিযী হা/৩২৮৯; আহমাদ হা/১৬৭৯৬, সনদ ছহীহ

[48]. তাফসীর ইবনু জারীর তাবারী হা/৩২৬৯৯; কুরতুবী হা/৫৭৩৭ প্রভৃতি, সনদ ছহীহ

[49]. মুহাম্মাদ ক্বাসেম হিন্দুশাহ ফিরিশতা, তারীখে ফিরিশতা (ফার্সী হ’তে উর্দূ অনুবাদ : লাক্ষ্ণৌ ছাপা, ১৩২৩/১৯০৫) ১১শ অধ্যায় ‘মালাবারের শাসকদের  ইতিহাস’ ২/৪৮৮-৮৯ পৃঃ।

[50]. আবূদাঊদ, ত্বায়ালেসী হা/২৪৪৭, সনদ ছহীহ; কুরতুবী হা/৫৭৩৭; ইবনু কাছীর; সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ১১৮ পৃঃ





হাদীছ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পরিক্রমা - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
বক্তার আধিক্য ও আলেমের স্বল্পতা - আছিফ রেযা, ছাত্র, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।
মানবাধিকার ও ইসলাম (৮ম কিস্তি) - শামসুল আলম
আল-কুরআনে বিজ্ঞানের নিদর্শন (৩য় কিস্তি) - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
ক্ষমা ও সহিষ্ণুতা : মুমিনের দুই অনন্য বৈশিষ্ট্য - ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম
দাওয়াত ও সংগঠন - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
তাহরীকে জিহাদ : আহলেহাদীছ ও আহনাফ (৫ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
ইসলামে তাক্বলীদের বিধান (শেষ কিস্তি) - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
দাওয়াত ও সংগঠন (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
মুনাফিকী (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
মানবাধিকার ও ইসলাম - শামসুল আলম
ইসলামে ভ্রাতৃত্ব (৪র্থ কিস্তি) - ড. এ এস এম আযীযুল্লাহ
আরও
আরও
.