হজ্জ ইসলামের পঞ্চমস্তম্ভের চতুর্থ স্তম্ভ। যা সম্পাদনের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য হাছিল, গোনাহ থেকে পরিত্রাণ ও জান্নাত লাভ করা যায়। অনুরূপ ওমরাহও মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু এ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হজ্জ ও ওমরাহর ক্ষেত্রেও মানুষ নানা ভুল-ত্রুটি করে থাকে। সংক্ষিপ্ত পরিসরে সেগুলো তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।-
ইহরাম বাঁধার পূর্বের ত্রুটি সমূহ :
বিবাহ উপযুক্ত ছেলে-মেয়ে রেখে হজ্জ করা যাবে না এমন বিশ্বাস :
হজ্জ আর্থিক ও শারীরিক ইবাদত। উভয়টিতে যারা সামর্থ্যবান তাদের উপর হজ্জ আদায় করা ফরয। মহান আল্লাহ বলেন, وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا ‘আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্জ করা ঐ ব্যক্তির উপর ফরয করা হ’ল, যার এখানে আসার সামর্থ্য রয়েছে’ (আলে ইমরান ৩/৯৭)।
বিবাহ উপযুক্ত ছেলে-মেয়ে রেখে হজ্জ করা যাবে না এ বিশ্বাসের সাথে শরী‘আতের কোন সম্পর্ক নেই। মূলতঃ এটি একটি সামাজিক কুসংস্কার। কিন্তু এটাকে শরী‘আতের বিধান ভেবে হজ্জ পালনে বিলম্ব করলে তা ভুল হবে। অনেকেই এ ভ্রান্ত বিশ্বাসের কারণে হজ্জ পালনে গড়িমসি করেন। শেষ পর্যন্ত হজ্জ পালন করা অনেকের ভাগ্যে জুটে না। কেননা তার আগেই তার মৃত্যু হয়।
বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় সূরা আলে ইমরানের শেষাংশ, আয়াতুল কুরসী, সূরা ক্বদর, সূরা ফাতিহা পাঠ :
হজ্জের উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় ইহকাল পরকালের প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে সূরা আলে ইমরানের শেষাংশ, আয়াতুল কুরসী, সূরা ক্বদর, সূরা ফাতিহা পাঠ করা বিদ‘আত।[1] শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন, وفي ذلك حديث مرفوع ولكنه باطل كما في "التذكرة" ‘এ সম্পর্কে একটি মারফূ‘ হাদীছ রয়েছে, কিন্তু তা বাতিল। যেমনটি ‘তাযকিরাতুল হুফফায’ গ্রন্থে এসেছে।[2]
প্রত্যেক অবতরণ স্থলে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা :
হজ্জের উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে বের হওয়ার পর প্রত্যেক অবতরণ স্থলে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা এবং তাতে اللهم أنزلني منزلا مباركا وأنت خير المنزلين ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আনযিলনী মুনযিলাম মুবারাকান ওয়া আনতা খায়রুল মুনযিলীন’ এ দো‘আ পাঠ বিদ‘আত।[3]
নিয়ত পাঠ :
যেকোন আমলে ছালেহ আল্লাহর নিকট গৃহীত হওয়ার আবশ্যিক পূর্বশর্ত হ’ল ‘ইখলাছুন নিয়্যাহ’ তথা নিয়তের একনিষ্ঠতা।[4] অতএব নিয়ত করতে হয়, বলতে হয় না। নিয়ত করা সুন্নাত, ক্ষেত্র বিশেষ ওয়াজিব।[5] আর নিয়ত পাঠ বা মুখে উচ্চারণ করে বলা ভুল। অনেকেই মনে করেন অন্যান্য ইবাদতের ক্ষেত্রে নিয়ত বলা বা পাঠ করা বিদ‘আত হ’লেও হজ্জের ক্ষেত্রে এটা জায়েয। মূলতঃ এ মতবাদের ভিত্তি হ’ল অনেকেই ‘তালবিয়া’ পাঠকেই নিয়ত মনে করেন। কিন্তু এটা সঠিক নয়। নিয়ত ও তালবিয়া দু’টি আলাদা বিষয়। নিয়ত হ’ল পুরো হজ্জ ও ওমরাহর ভিত্তি আর তালবিয়া হ’ল ইহরাম বেঁধে হজ্জে প্রবেশের দ্বার।
বোন ও বোনের স্বামী বা কোন গায়রে মাহরামের সাথে হজ্জ ও ওমরায় গমন করা :
মহিলাদের হজ্জ অথবা ওমরাহ পালনের ক্ষেত্রে অন্যতম শর্ত হচ্ছে স্বামী অথবা মাহরাম সাথে থাকা। অনেক মহিলা বোন ও বোনের স্বামীর সাথে হজ্জ অথবা ওমরায় গমন করে। এমন একটি বিষয়ে জনৈক মহিলা শায়খ উছায়মীন (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে জবাবে তিনি বলেন, এদের সাথে ওমরায় যাওয়া জায়েয হবে না। কেননা বোনের স্বামী মাহরাম নয়। ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনেছি নবী করীম (ছাঃ) খুৎবায় বলেছেন,
لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ، وَلاَ تُسَافِرَنَّ امْرَأَةٌ إِلاَّ وَمَعَهَا مَحْرَمٌ. فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ، اكْتُتِبْتُ فِى غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا، وَخَرَجَتِ امْرَأَتِى حَاجَّةً. قَالَ اذْهَبْ فَحُجَّ مَعَ امْرَأَتِكَ.
‘কোন পুরুষ যেন কোন নারীর সাথে নির্জন না হয়। মাহরাম ছাড়া কোন নারী যেন সফর না করে’। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমার স্ত্রী হজ্জ আদায় করার জন্য বের হয়ে গেছে। আর আমি অমুক যুদ্ধের জন্য নাম লিখিয়েছি। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, ‘তুমি চলে যাও এবং তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্জ পালন কর’।[6] নবী করীম (ছাঃ) তার কাছে কোন ব্যাখ্যা চাইলেন না তোমার স্ত্রীর সাথে কি অন্য কোন নারী আছে না নেই? সে কি যুবতী না বৃদ্ধা? রাস্তায় সে কি নিরাপদ না অনিরাপদ?
প্রশ্নকারী এই নারী মাহরাম না থাকার কারণে যদি ওমরায় না যায়, তবে তার কোন গুনাহ হবে না। যদিও ইতিপূর্বে সে কখনো ওমরা না করে থাকে। কেননা হজ্জ-ওমরাহ ফরয হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে নারীর মাহরাম থাকা।[7]
ইহরাম ও তালবিয়া সংশ্লিষ্ট ত্রুটি সমূহ
বিমানবন্দর অথবা হাজী ক্যাম্প থেকে ইহরাম বাঁধা :
হজ্জ ও ওমরাহর জন্য ইহরাম বাঁধার নির্দিষ্ট স্থানের নাম মীক্বাত। যা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,
وَقَّتَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لأَهْلِ الْمَدِينَةِ ذَا الْحُلَيْفَةِ، وَلأَهْلِ الشَّأْمِ الْجُحْفَةَ، وَلأَهْلِ نَجْدٍ قَرْنَ الْمَنَازِلِ، وَلأَهْلِ الْيَمَنِ يَلَمْلَمَ، فَهُنَّ لَهُنَّ وَلِمَنْ أَتَى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِ أَهْلِهِنَّ، لِمَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ، فَمَنْ كَانَ دُونَهُنَّ فَمُهَلُّهُ مِنْ أَهْلِهِ، وَكَذَاكَ حَتَّى أَهْلُ مَكَّةَ يُهِلُّونَ مِنْهَا.
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনাবাসীদের জন্যে ‘যুল-হুলায়ফাহ’-কে, শাম বা সিরিয়াবাসীদের জন্য ‘জুহফাহ’-কে আর নাজদবাসীদের জন্য ‘ক্বারনুল মানাযিল’-কে এবং ইয়ামানবাসীদের জন্য ‘ইয়ালামলাম’-কে মীক্বাত নির্ধারণ করেছেন। এসব স্থানগুলো এ সকল স্থানের লোকজনের জন্য আর অন্য স্থানের লোকেরা যখন এ স্থান দিয়ে আসবে তাদের জন্য, যারা হজ্জ বা ওমরার ইচ্ছা করে। আর যারা এ সীমার ভিতরে অবস্থান করবে, তাদের ইহরামের স্থান হবে তাদের ঘর, এভাবে ক্রমান্বয়ে কাছাকাছি লোকেরা স্বীয় বাড়ি হ’তে এমনকি মক্কাবাসীরা ইহরাম বাঁধবে মক্কা হ’তেই’।[8]
ইবনে ওমর (রাঃ)-কে (যুল হুলায়ফার নিকটবর্তী একটি স্থান) বায়যা থেকে ইহরাম বাঁধার কথা বলা হ’লে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কেবলমাত্র যুল হুলায়ফার মসজিদের নিকট থেকেই ইহরাম বাঁধতেন।[9] ছাহাবী ইমরান বিন হুছাইন (রাঃ) বছরা থেকে ইহরাম বাঁধলে ওমর (রাঃ) তা অপসন্দ করেন এবং খোরাসান বিজয়ের পর আব্দুল্লাহ বিন আমের (রাঃ) নিশাপুর থেকে ইহরাম বাঁধলে ওছমান (রাঃ) তাঁকে তিরষ্কার করেন।[10]
অতএব হজ্জ ও ওমরা পালনকারীগণ ইহরামের কাপড় সাথে নিয়ে বিমানে আরোহণ করবেন এবং বিমান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মীক্বাতের ঘোষণা আসার পর বিমানের মধ্যে ইহরামের কাপড় পরিধান করবেন। মনে রাখতে হবে ইহরাম পরিধান ও তালবিয়া পাঠ একত্রে হ’তে হবে।[11]
তান‘ঈম অথবা জি‘ইর্রানাহ নামক স্থান থেকে ইহরাম বেঁধে বারবার ওমরাহ করা :
অনেক হাজী ছাহেব মসজিদুল হারাম হ’তে ৬ কিঃমিঃ উত্তরে মসজিদে আয়েশা বা তান‘ঈম মসজিদ থেকে, আবার কেউ ১৬ কিঃমিঃ পূর্বে জি‘ইর্রানাহ মসজিদ হ’তে ইহরাম বেঁধে বারবার ওমরাহ করে থাকেন। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কাজ। এ দুই মসজিদের পৃথক কোন গুরুত্ব নেই। এসব স্থান থেকে মক্কায় বসবাসকারীগণ ওমরাহর জন্য ইহরাম বেঁধে থাকেন, মক্কার বাইরের লোকেরা নন।
শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায (রহঃ) বলেন, ‘কিছু সংখ্যক লোক হজ্জের পর অধিক সংখ্যক ওমরাহ করার আগ্রহে ‘তান‘ঈম’ বা জি‘ইর্রানাহ নামক স্থানে গিয়ে ইহরাম বেঁধে আসেন। শরী‘আতে এর কোনই প্রমাণ নেই।[12]
শায়খ ছালেহ আল-উছায়মীন (রহঃ) বলেন, এটি জায়েয নয়, বরং বিদ‘আত। কেননা এর পক্ষে একমাত্র দলীল হ’ল বিদায় হজ্জের সময় আয়েশা (রাঃ)-এর ওমরাহ। অথচ ঋতু এসে যাওয়ায় প্রথমে হজ্জে ক্বিরান-এর ওমরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় হজ্জের পরে তিনি এটা করেছিলেন। তাঁর সাথে ‘তান‘ঈম’ গিয়েছিলেন তাঁর ভাই আব্দুর রহমান। কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি পুনরায় ওমরাহ করেননি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথী অন্য কোন ছাহাবীও এটা করেননি।[13] শায়খ আলবানী (রহঃ) একে নাজায়েয বলেছেন এবং একে ‘ঋতুবতীর ওমরাহ’ (عمرة الحائض) বলে আখ্যায়িত করেছেন।[14] হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) একে নাজায়েয বলেছেন।[15]
‘ত্বাওয়াফে কুদূম’ ব্যতীত অন্য সময়ও ইযতিবা‘ করা :
الاضطباع ‘ইযত্বিবা‘ হ’ল ইহরামে পরিধানকৃত চাদর ডান বগলের নীচ দিয়ে বের করে বাম কাঁধের উপর রাখা, যাতে ডান কাঁধ উন্মুক্ত থাকে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) শুধু ‘তাওয়াফে কুদূমে’র সময় ইযত্বিবা‘ করতেন।[16]
অতএব ত্বাওয়াফে ইফাযাহ, ত্বাওয়াফে বিদা বা অন্যান্য নফল ত্বাওয়াফে ইযত্বিবা‘ করা সুন্নাত পরিপন্থী কাজ।[17] আবার অনেক হাজী রয়েছেন যারা ইযত্বিবা‘ তথা ডান কাঁধকে উন্মুক্ত রেখেই ছালাত আদায় করেন। অথচ কাঁধ উন্মুক্ত অবস্থায় ছালাত বিশুদ্ধ হবে না।[18]
সম্মিলিতভাবে তালবিয়া পাঠ :
মীকবাত থেকে ইহরাম বেঁধে স্ব স্ব তালবিয়া পাঠ করতে হয়। কিন্তু অনেকেই সম্মিলিতভাবে তালবিয়া পাঠ করে থাকে। এ সম্পর্কে শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বলেন, ‘কিছু কিছু হাজী সম্মিলিতভাবে তালবিয়া পাঠ করে থাকেন। তাদের মধ্যকার কেউ সামনে অথবা মাঝখানে অথবা পিছনে থেকে তালবিয়া পাঠ করেন এবং অন্যরা একই আওয়াজে তা অনুসরণ করেন। এমনটি কোন ছাহাবী থেকে বর্ণিত হয়নি। বরং আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমরা বিদায় হজ্জের দিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম আমাদের মধ্যে কেউ তাকবীর পাঠ করছিল, কেউ তাহলীল কেউবা তালবিয়া পাঠ করছিল। আর এটাই মুসলমানদের জন্য শরী‘আতসিদ্ধ কাজ যে প্রত্যেকেই পৃথকভাবে তালবিয়া পাঠ করবে এবং অন্যের তালবিয়ার সাথে সংযুক্ত হবে না’।[19] শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ)[20] এবং সঊদী আরবের সর্বোচ্চ ফাতাওয়া বোর্ড ‘আল-লাজনা আদ-দায়িমা’ একে বিদ‘আত বলেছেন।[21]
নিম্নস্বরে তালবিয়া পাঠ :
উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করাই হ’ল সুন্নাত।[22] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘জিবরাঈল (আঃ) আমার নিকট এসে বললেন, হে মুহাম্মাদ (ছাঃ) আপনি আপনার ছাহাবীগণকে নির্দেশ দিন, তাঁরা যেন উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করে। কেননা এটা হজ্জের অন্যতম শে‘আর বা নিদর্শন’।[23]
বাড়ী, হাজী ক্যাম্প অথবা বিমানবন্দর থেকে তালবিয়া পাঠ করা :
বাড়ী, হাজী ক্যাম্প অথবা বিমানবন্দর থেকে তালবিয়া পাঠ করা যাবে না। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এবং ছাহাবায়ে কেরাম থেকে এ ধরনের কোন দলীল পাওয়া যায় না। বরং মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধার পর থেকে তালবিয়া পাঠ করবে’।[24]
ত্বাওয়াফ সংশ্লিষ্ট ত্রুটি সমূহ
ত্বাওয়াফ শুরুর প্রাক্কালে উচ্চারণ করে নিয়ত পাঠ :
ত্বাওয়াফ শুরু করার প্রাক্কালে উচ্চারণ করে নিয়ত পাঠ করা সুন্নাত নয়। এ সম্পর্কে শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বলেন, ‘হজ্জের সময় দেখা যায় ত্বাওয়াফ করার প্রাক্কালে হাজারে আসওয়াদ মুখী দাঁড়িয়ে অনেকেই উচ্চারণ করে নিয়ত বলে থাকে। যেমন- ‘হে আল্লাহ! আমি ওমরাহর জন্য সাতপাক ত্বাওয়াফ করার নিয়ত করছি’ অথবা (বলে) ‘হে আল্লাহ! আমি হজ্জের জন্য সাতপাক ত্বাওয়াফ করার জন্য নিয়ত করছি’ অথবা (বলে) ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নৈকট্য লাভের জন্য সাতপাক ত্বাওয়াফ করার জন্য নিয়ত করছি’। এভাবে উচ্চারণ করে নিয়ত করা বিদ‘আত। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এমনটি করেননি, এভাবে নিয়ত করার জন্য তাঁর উম্মতকে নির্দেশনাও দেননি। আর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যে ইবাদত নিজে করেননি এবং করার জন্য তাঁর উম্মতকে নির্দেশ দেননি, এমন ইবাদত যে করবে সে আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে বিদ‘আত সৃষ্টি করল। অতএব তাওয়াফের সময় উচ্চারণ করে নিয়ত পাঠ করা ভুল এবং বিদ‘আত’।[25]
হজ্জ ও ওমরাহর সময় মাসজিদুল হারামের নির্দিষ্ট দরজা দিয়ে প্রবেশ করা :
হজ্জ ও ওমরাহর সময় মাসজিদুল হারামে নির্দিষ্ট দরজা দিয়ে প্রবেশ করাকে বাধ্যতামূলক ও শরী‘আতের বিধান মনে করা বিদ‘আত। এ সম্পর্কে শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বলেন, ‘কিছু মানুষ মনে করে হজ্জ ও ওমরাকারীর মাসজিদুল হারামে নির্দিষ্ট দরজা ব্যতীত প্রবেশ করা উচিত নয়। কিছু মানুষকে দেখা যায়, যারা মনে করে ওমরাকারীর ‘বাবে ওমরাহ’ ব্যতীত অন্য দরজা দিয়ে প্রবেশ করা উচিত নয়, এটা এমন একটি বিষয় যা অবশ্য পালনীয় এবং শরী‘আত নির্ধারিত বিষয়। আবার অন্য আরেক দল আছে যারা মনে করে ‘বাবুস সালাম’ ব্যতীত প্রবেশ করা উচিত নয়। এটা ব্যতীত অন্য কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করা পাপ এবং অপসন্দনীয়। এমন বিশ্বাস ও কর্মকান্ডের ইসলামী শরী‘আতে কোন ভিত্তি নেই। অতএব হজ্জ ও ওমরাকারীর উচিত যেকোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করা’।[26]
ত্বাওয়াফের সময় প্রতিটি চক্করে আলাদা আলাদা নির্দিষ্ট দো‘আ পাঠ :
বায়তুল্লাহ ত্বাওয়াফের সময় প্রতিটি চক্করের জন্য আলাদা আলাদা নির্দিষ্ট দো‘আ করার বিধান ইসলামী শরী‘আতে নেই। হাদীছ থেকে শুধু এতটুকু জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী-এর মধ্যবর্তী স্থানে ‘রববানা আ-তিনা ফিদদুনইয়া হাসানাতাঁও ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াক্বিনা ‘আযা-বাননা-র’ এ দো‘আটি পড়েছেন।[27]
এ সম্পর্কে শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বলেন, ‘কিছু মানুষ ত্বাওয়াফের প্রতিটি চক্করে বিশেষ কিছু নির্দিষ্ট দো‘আ পাঠ করে থাকে, যা বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও তাঁর সাথীবর্গ থেকে কোন কিছু (নির্ধারিত দো‘আ) বর্ণিত হয়নি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) প্রতিটি চক্করের নির্দিষ্ট কোন দো‘আ পাঠ করেননি।[28]
অতএব বই দেখে প্রতি চক্করের জন্য নির্ধারিত বানোয়াট দো‘আ না পড়ে নিজের যে সকল দো‘আ জানা আছে সেগুলো পড়া উচিত।[29]
ত্বাওয়াফে ক্বুদূমের সময় প্রথম তিন চক্করে ‘রমল’ না করা অথবা প্রতি চক্করেই রমল করা :
বায়তুল্লাহ ত্বাওয়াফের সময় প্রথম তিন চক্করে রমল করা বা জোরে হাঁটা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাজারে আসওয়াদ থেকে শুরু করে আবার হাজারে আসওয়াদ পর্যন্ত তিন চক্কর রমল করেছেন এবং চার চক্কর স্বাভাবিকভাবে চলেছেন’।[30]
জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মক্কায় এলেন, হাজারে আসওয়াদের নিকট গেলেন এবং একে স্পর্শ করলেন। তারপর এর ডানদিকে ঘুরে তিন চক্কর রমল (কা‘বাকে বামে রেখে) করলেন আর চার চক্কর স্বাভাবিকভাবে হেঁটে ত্বাওয়াফ করলেন’।[31]
এ সম্পর্কিত সকল হাদীছ থেকে প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) ত্বাওয়াফের সময় প্রথম তিন চক্করে রমল করতেন এবং পরের চার চক্কর স্বাভাবিকভাবে চলতেন। অতএব এর বিপরীত করা সুন্নাত পরিপন্থী।
ত্বাওয়াফ করার উদ্দেশ্যে কা‘বা গৃহে প্রবেশ করে তাহিয়াতুল মসজিদ আদায় করা :
সাধারণত কা‘বা গৃহে বা যেকোন মসজিদে প্রবেশ করে তাহিয়াতুল মসজিদ দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতে হয়।[32] কিন্তু ত্বাওয়াফের উদ্দেশ্যে কা‘বা গৃহে প্রবেশ করে প্রথমে তাহিয়াতুল মসজিদ আদায় করার কোন বিধান নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) কা‘বা গৃহে প্রবেশ করে প্রথমে ত্বাওয়াফ করতেন।[33] অতএব ত্বাওয়াফের উদ্দেশ্যে কা‘বা গৃহে প্রবেশ করে প্রথমে তাহিয়াতুল মসজিদ দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা সুন্নাহ পরিপন্থী কাজ।[34]
রুকনে ইয়ামানী চুম্বন করা :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করেছেন। সুতরাং করুনে ইয়ামানী স্পর্শ করা সুন্নাত, চুম্বন করা বিদ‘আত।[35] আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, لَمْ أَرَ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم يَسْتَلِمُ مِنَ الْبَيْتِ إِلاَّ الرُّكْنَيْنِ الْيَمَانِيَيْنِ. ‘আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে ইয়ামানী দু’রুকন ব্যতীত অন্য কোন রুকন স্পর্শ করতে দেখিনি’।[36]
উল্লেখ্য, হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ[37], চুম্বন[38] অপারগতায় ইশারায় অথবা কোন কিছুর সাহায্যে স্পর্শ করা সুন্নাত’।[39]
শায়েখ উছায়মীন (রহঃ) বলেছেন, ‘রুকনে ইয়ামানী চুম্বন করার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে কোন দলীল সাব্যস্ত হয়নি। কোন ইবাদতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে কোন প্রমাণ সাব্যস্ত না হ’লে তা বিদ‘আত হিসাবে গণ্য হয় এবং তা নৈকট্য লাভের মাধ্যম হয় না। এ কারণে রুকনে ইয়ামানী চুম্বন করা শরী‘আত সম্মত নয়। কেননা এর স্বপক্ষে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে কোন বিধান প্রমাণিত হয়নি। যদিও এ ব্যাপারে একটি যঈফ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, যা দ্বারা কোন বিধান প্রতিষ্ঠিত করা যায় না’।[40]
রমলের সময় নিম্নোক্ত দো‘আ পাঠ :
রমলের সময় নির্দিষ্ট কোন দো‘আ পাঠের বিধান নেই। অতএব রমলের সময় নিম্নোক্ত দো‘আ পাঠ বিদ‘আত।[41]
اللهم اجعله حجا مبرورا وذنبا ومغفورا وسعيا مشكورا وتجارة لن تبور يا عزيز يا غفور،
‘আল্লা-হুম্মা আজ‘আলহু হাজ্জান মাবরূরা, ওয়া যানবান মাগফূরা, ওয়া সা‘ইয়াম মাশকূরা ওয়া তিজারাতান লান তাবূরা, ইয়া আযীযুন ইয়া গাফূর’।[42]
হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ বা চুম্বনের সময় নির্দিষ্ট দো‘আ পাঠ :
হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ, চুম্বন অথবা ইশারার সময় بسم الله والله أكبر ‘বিসমিল্লা-হি ওয়াল্লা-হু আকবার’[43] অথবা শুধু ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে হয়।[44] এতদ্ব্যতীত অন্য কোন দো‘আ বলার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। অতএব হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ, চুম্বন অথবা ইশারার সময় প্রচলিত বানাওয়াট দো‘আ পাঠ করা যাবে না।[45]
রুকনে ইরাক্বী ও রুকনে শামী স্পর্শ করা :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রুকনে ইরাক্বী ও রুকনে শামী স্পর্শ করেননি। তিনি শুধু রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ এবং হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ ও চুম্বন করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, لَمْ أَرَ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم يَسْتَلِمُ مِنَ الْبَيْتِ إِلاَّ الرُّكْنَيْنِ الْيَمَانِيَيْنِ. ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ইয়ামানী দু’রুকন (রুকনে ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদ) ব্যতীত অন্য কোন রুকন স্পর্শ করতে দেখিনি’।[46] অনেকে রুকনে ইরাক্বী ও শামীকে চুম্বন করে থাকে, যা বিদ‘আত।[47]
রুকনে ইয়ামানীর দিকে ইশারা করা ও তাকবীর বলা :
রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করা সুন্নাত।[48] কিন্তু অত্যধিক ভিড় অথবা অন্য কোন কারণে স্পর্শ করতে না পারলে ইশারা করার এবং তাকবীর বলার কোন বিধান নেই। এতদসত্ত্বেও কেউ যদি এগুলো করে তবে তা সুন্নাত বিরোধী আমল হবে। এ ব্যাপারে শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানি তাতে রুকনে ইয়ামানীর প্রতি ইশারা করার দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য কোন কিছু বর্ণিত হয়নি। কষ্টকর না হ’লে যথাসম্ভব একে হাত দ্বারা স্পর্শ করতে হয়, চুম্বন করতে হয় না এবং বলবে ‘বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার’ অথবা ‘আল্লাহু আকবার’। আর রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করা কঠিন হ’লে ভিড় ঠেলে, হুড়াহুড়ি করে এটা স্পর্শ করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে ইশারা ও তাকবীর ব্যতীতই ত্বাওয়াফ চালিয়ে যাবে। কেননা ইশারা ও তাকবীর পাঠের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) থেকে কোন কিছু বর্ণিত হয়নি।[49]
হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করে দু’হাত উঁচু করে সগর্বে আল্লাহু আকবার বলা :
অনেকেই হাজারে আসওয়াদকে স্পর্শ ও চুম্বন করাকে অনেক গর্ব মনে করেন। তাই হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ ও চুম্বন করে দু’হাত উঁচু করে সগর্বে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিয়ে সকলকে জানিয়ে দেয় আমি পেরেছি। এ ধরনের কর্মকান্ডের স্বপক্ষে কোন দলীল নেই। বিধায় এরূপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।[50] অবশ্য হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ, চুম্বন অথবা ইশারা যেটাই সম্ভব হোক না কেন স্বাভাবিক স্বরে ‘আল্লাহু আকবার’[51] অথবা ‘বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার’[52] বলা মুস্তাহাব।[53]
কা‘বা ঘরের গিলাফ ধরে দো‘আ ও কান্নাকাটি করা :
কা‘বা ঘরের গিলাফ ধরে বরকত কামনা করা বা দো‘আ বা কান্নাকাটি করা সিদ্ধ নয়। কেননা এ কাজ নবী করীম (ছাঃ) থেকে প্রমাণিত নয়। তবে মুলতাযাম অর্থাৎ কা‘বা ঘরের দরজা ও হাজারে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থান স্পর্শ করে দো‘আ করা ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) থেকে প্রমাণিত।[54]
ত্বাওয়াফের সময় সম্মিলিত দো‘আ পাঠকরা :
ত্বাওয়াফের সময় প্রত্যেকেই নিজে নিজে দো‘আ পাঠ করবে। এ সময়ে একজনে উচ্চৈঃস্বরে বলবে অন্যরা তার সাথে অংশগ্রহণ করবে অথবা একজনে দো‘আ করবে ও অন্যরা আমীন আমীন বলবে, এরূপ সম্মিলিত দো‘আ পাঠ সুন্নাত বিরোধী কাজ। এ বিষয়ে শায়খ ছালেহ ইবনে ফাওয়ান আল-ফাওযান বলেন, ‘ত্বাওয়াফের সময় সম্মিলিত দো‘আ করা বিদ‘আত। এভাবে দো‘আ করার কারণে অন্যান্য ত্বাওয়াফকারীদের ত্বাওয়াফে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। এ সময় দো‘আ করার শরী‘আত সম্মত পদ্ধতি হ’ল- আওয়াজ উঁচু না করে প্রত্যেকেই নিজে নিজে দো‘আ করবে’।[55]
মাক্বামে ইবরাহীমে দীর্ঘ সময় দো‘আ করা :
মাক্বামে ইবরাহীম ও হাজারে আসওয়াদ জান্নাতের ইয়াকূত সমূহের মধ্যে দু’টি ইয়াকূত।[56] আল্লাহ মাক্বামে ইবরাহীমকে ছালাতের স্থান বানানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى ‘মাক্বামে ইবরাহীমকে তোমরা ছালাতের স্থান বানাও’ (বাক্বারাহ ২/১২৫)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ত্বাওয়াফ শেষে মাক্বামে ইবরাহীমের দিকে অগ্রসর হ’তেন এবং কুরআনের এ আয়াত পাঠ করতেন, وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى অতঃপর তথায় দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন।[57] সুতরাং মাক্বামে ইবরাহীমে একাকী অথবা সম্মিলিতভাবে দীর্ঘ সময় দো‘আ করা যাবে না। শায়খ উছায়মীন (রহঃ) একে বিদ‘আত বলেছেন।[58]
বিদায়ী ত্বাওয়াফ শেষে কা‘বা ঘরের দিকে মুখ রেখে পিছন দিকে হেঁটে আসা :
কা‘বা ঘরকে অত্যধিক সম্মান জানাতে গিয়ে অনেকেই বিদায়ী ত্বাওয়াফ শেষে কা‘বা ঘরের দিকে মুখ রেখে পিছন দিকে হেঁটে আসেন। মূলতঃ এটা কবর ও মাযার পূজারীদের কাজ। তারা কবর ও মাযার যিয়ারত শেষে এভাবে পিছপা হয়ে ফিরে আসে। পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে না এগুলোর অসম্মান হবে ভেবে। শায়খ ওছায়মীন (রহঃ) এ ধরনের কাজকে বিদ‘আত বলেছেন।[59] শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ)ও একে বিদ‘আত আখ্যায়িত করেছেন।[60]
সাঈ সংশ্লিষ্ট ত্রুটি সমূহ
সাঈ শুরুর পূর্বে উচ্চারণ করে নিয়ত পাঠ :
কিছু কিছু হাজী ছাফা পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় অথবা তাতে আরোহণের সময় বলে থাকে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সাতপাক সাঈ করার নিয়ত করছি। এভাবে উচ্চারণ করে নিয়ত পাঠ বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা স্বরবে হোক বা নীরবে কোনভাবেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উচ্চারণ করে নিয়ত বলতেন না’।[61]
অধিক ছওয়াবের প্রত্যাশায় সাঈ শুরুর পূর্বে ওযূ করা :
অনেকেই অধিক ছওয়াবের প্রত্যাশায় সাঈ শুরু করার পূর্বে ওযূ করে। এ সম্পর্কে একটি বর্ণনা নিম্নরূপ-من توضأ فأحسن الوضوء ثم مشى بين الصفا والمروة كتب له بكل قدم سبعون ألف درجة ‘যে ব্যক্তি ভালভাবে ওযূ করে ছাফা-মারওয়ার মধ্যখানে চলবে, আল্লাহ তা‘আলা তার প্রত্যেক ক্বদমের বদলে সত্তর হাযার মর্যাদা দান করবেন’।[62] হাদীছটি জাল। জাল হাদীছের উপর ভিত্তি করে আমল করলে সেটা সুন্নাত হয় না, বরং বিদ‘আত হয়। শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) সহ অনেকেই একে বিদ‘আত বলেছেন’।[63]
সাঈ করার সময় প্রত্যেক চক্করে নির্দিষ্ট দো‘আ করা :
বাজারে প্রচলিত কিছু হজ্জ শিক্ষা বইয়ে সাত চক্করের প্রতিটি চক্করের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নির্দিষ্ট দো‘আ সন্নিবেশিত করা হয়েছে। যা দেখে দেখে অনেক হাজী ছাহেব ঐ সমস্ত বানোয়াট দো‘আগুলো পড়ে থাকেন। এ সম্পর্কে শায়খ ওছায়মীন (রহঃ) বলেন, ‘কিছু মানুষ রয়েছে যারা সাঈ-এর সময় প্রতিটি চক্করে নির্দিষ্ট দো‘আ পড়েন। যা বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত’।[64]
ছাফা ও মারওয়ার মাঝখানে বাত্বনে ওয়াদীতে মাহিলাদের দ্রুত চলা :
ছাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝখানে বাত্বনে ওয়াদীতে (বর্তমানে ‘সবুজ লাইট’ দ্বারা চিহ্নিত করা আছে) দ্রুত চলা পুরুষদের জন্য সুন্নাত।[65] কিন্তু মহিলাদের দ্রুত চলার প্রয়োজন নেই। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, لَيْسَ عَلَى النِّسَاءِ رَمَلٌ بِالْبَيْتِ، وَلاَ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ. ‘মহিলাদের জন্য বায়তুল্লাহ ও ছাফা-মারওয়ার মাঝে রমল (দ্রুত চলা) নেই’।[66]
হজ্জ ও ওমরা ব্যতীত সাঈ করা :
কেউ কেউ হজ্জ ও ওমরাহর নিয়ত ও ইহরাম ব্যতীত নফল ইবাদতের নিমিত্তে ছাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করে। يظن أن التطوع بالسعي مشروع كالتطوع بالطواف، ‘তারা মনে করে ত্বাওয়াফের ন্যায় নফল সাঈ করা শরী‘আত সম্মত’। আসলে এটি শরী‘আত সম্মত নয় বরং বিদ‘আত। শায়খ ওছায়মীন (রহঃ) একে বিদ‘আত বলেছেন।[67] অনুরূপভাবে হজ্জ অথবা ওমরাহ-এর সময় (নির্ধারিত সাঈ ব্যতীত) বারবার সাঈ করাও বিদ‘আত।[68]
সাঈ শেষে ছালাত আদায় করা :
অনেক হাজীদের দেখা যায়, ত্বাওয়াফের মত সাঈ শেষেও মারওয়া পাহাড়ে গিয়ে ছালাতে মগ্ন হন। এটা সুন্নাত পরিপন্থী। ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ)[69] ও শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) সাঈ শেষে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করাকে বিদ‘আত বলেছেন’।[70]
কংকর নিক্ষেপ সংশ্লিষ্ট ত্রুটিসমূহ
কংকর ধৌত করা :
হজ্জের সময় দেখা কোন কোন হাজী ছাহেব জামরায় কংকর নিক্ষেপের পূর্বে অধিক সতর্কতা ও বরকত লাভের উদ্দেশ্যে সংগৃহীত কংকরসমূহ ধৌত করে নেয়। শায়খ ওছায়মীন (রহঃ)[71] ও শায়খ আলবানী (রহঃ) নিক্ষেপের পূর্বে পাথরগুলো ধৌত করাকে বিদ‘আত বলেছেন’।[72]
বড় আকারের কংকর নিক্ষেপ করা :
অনেকেই তুলনামূলক বড় পাথর নিক্ষেপ করেন। অতি উৎসাহী এমন কিছু হাজী ছাহেবকে দেখা যায় জোশ ও আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে পায়ের জুতা খুলে নিক্ষেপ করে। এগুলো সুন্নাত পরিপন্থী কাজ।[73] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, عَلَيْكُمْ بِحَصَى الْخَذْفِ الَّذِى يُرْمَى بِهِ الْجَمْرَةُ ‘তোমরা খাযফ-এর ন্যায় ছোট পাথর জামরাতে মারার জন্য নেও’।[74] জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন,رَأَيْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم رَمَى الْجَمْرَةَ بِمِثْلِ حَصَى الْخَذْفِ. ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জামরায় খাযফ-এর মতো ছোট পাথর মারতে দেখেছি’।[75] খাযফ হ’ল খেজুরের অাঁটির মতো ছোট’।[76]
উল্লিখিত হাদীছসমূহ হ’তে প্রমাণিত হয় যে, খেজুরের অাঁটির মত ছোট পাথর দিয়ে কংকর নিক্ষেপ করা সুন্নাত। আর এর বিপরীত হ’ল বিদ‘আত।
কংকর নিক্ষেপের পূর্বে গোসল করা :
কংকর নিক্ষেপের পূর্বে গোসল করার কোন বিধান নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম কংকর নিক্ষেপের পূর্বে গোসল করতেন না। অতএব ইসলামী শরী‘আত সিদ্ধ কাজ মনে করে অধিক ছাওয়াবের প্রত্যাশায় কংকর নিক্ষেপের পূর্বে গোসল করা ভুল।[77]
কংকর নিক্ষেপের সময় তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করা :
কংকর নিক্ষেপের সময় তাকবীর দেয়া সুন্নাত।[78] কিন্তু অনেকেই তাকবীরের পরিবর্তে তাসবীহ তাহলীল পড়ে থাকে। শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) তাকবীরের স্থলে যিকির করাকে বিদ‘আত বলেছেন।[79]
সূর্যোদয়ের পূর্বে কংকর নিক্ষেপ করা :
জামরায় কংকর নিক্ষেপের উত্তম সময় হ’ল দ্বিপ্রহরের আগে ও পরে। সূর্যোদয়ের পূর্বে কংকর নিক্ষেপ করতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন,لاَ تَرْمُوا الْجَمْرَةَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ‘তোমরা সূর্যোদয়ের পূর্বে কংকর নিক্ষেপ করো না’।[80] জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কুরবানীর দিন সকাল বেলা জামরায় কংকর নিক্ষেপ করেছেন এর পরবর্তী দিনগুলোতে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর নিক্ষেপ করেছেন’।[81]
অতএব সূর্যোদয়ের পূর্বে জামরাতে কংকর নিক্ষেপ করা সুন্নাত বিরোধী কাজ। তবে যদি কেউ শারঈ ওযর বশতঃ সন্ধ্যার মধ্যে কংকর মারতে ব্যর্থ হন, তাহ’লে বাধ্যগত অবস্থায় তিনি সূর্যাস্তের পর হ’তে ফজরের আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কংকর মারতে পারেন।[82] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সাওদা (রাঃ)-কে রাত্রে মিনায় পৌঁছে ফজরের পূর্বে কংকর নিক্ষেপে অনুমতি দিয়েছিলেন তিনি ভারী ও স্থূলদেহী হওয়ার কারণে।[83]
আরাফাহ সংশ্লিষ্ট ত্রুটিসমূহ
আরাফাহ ময়দানে একাধিক খুৎবা :
অনেকে আরাফাহ ময়দানের খুৎবা শ্রবণ করতে না পারলে নিজ নিজ তাঁবুতে খুৎবাসহ ছালাত আদায় করে থাকে। এভাবে আরাফাহ ময়দানে একাধিক খুৎবা দেয়া সম্পর্কে শায়খ ছালেহ ইবনু ফাওযান আল-ফাওযান বলেন, আরাফাহ দিবসের খুৎবা একটি, যা মুসলমানদের ইমাম অথবা তাঁর প্রতিনিধি একই স্থান তথা মসজিদে নামিরাহ থেকে প্রদান করে থাকেন। হাজীদের প্রত্যেক কাফেলাতে খুৎবা দেয়া শরী‘আত সম্মত নয়।[84]
আরাফাহ ময়দানে যোহর ও আছরের ছালাত জমা ও ক্বছর না করা :
আরাফাহ ময়দানে যোহর ও আছরের ছালাত যোহরের সময় জমা ও ক্বছর করে আদায় করা সুন্নাত।[85] কিন্তু অনেক মু‘আল্লিম ও হাজী ছাহেব আছেন যারা কোনভাবেই এ সুন্নাতের দিকে ভ্রূক্ষেপ করেন না; বরং তারা যোহর ও আছরের ছালাত যথাসময়ে আদায় করেন। ছালাতের ব্যাপারে বেশী একাগ্রতা দেখিয়ে ক্বছরও আদায় করেন না। যা সুন্নাহ পরিপন্থী কাজ।
আরাফাহ ময়দানে যোহর ও আছর ছালাতের আগে-পরে কোন সুন্নাত অথবা নফল ছালাত আদায় করা :
আরাফাহ ময়দানে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের যোহর ও আছর ছালাতের বিবরণ দিতে গিয়ে জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন,ثُمَّ أَذَّنَ بِلاَلٌ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الظُّهْرَ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الْعَصْرَ وَلَمْ يُصَلِّ بَيْنَهُمَا شَيْئًا ‘অতঃপর বেলাল (রাঃ) আযান ও ইক্বামাত দিলেন। নবী করীম (ছাঃ) যোহরের ছালাত আদায় করলেন। বেলাল (রাঃ) আবার ইক্বামত দিলেন। নবী করীম (ছাঃ) আছরের ছালাত আদায় করলেন। এর মাঝে অন্য কোন (সুন্নাত-নফল) মিলালেন না’।[86] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরাফাহ ময়দানে যোহর ও আছর ছালাতের সাথে কোন নফল-সুন্নাত ছালাত আদায় করেননি একথা হাদীছে স্পষ্ট উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও অধিক পরহেযগারিতা দেখাতে গিয়ে সুন্নাত অথবা নফল ছালাত আদায় করা সুন্নাত বিরোধী আমল।[87]
সূর্যাস্তের পূর্বেই আরাফাহ ময়দান ত্যাগ করা :
সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাহ ময়দানে অবস্থান করা সুন্নাত। জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আরাফাহ ময়দানে অবস্থানের বর্ণনা দিয়ে বলেন,وَجَعَلَ حَبْلَ الْمُشَاةِ بَيْنَ يَدَيْهِ وَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ فَلَمْ يَزَلْ وَاقِفًا حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ وَذَهَبَتِ الصُّفْرَةُ قَلِيلًا حَتَّى غَابَ الْقُرْصُ وَأَرْدَفَ أُسَامَةَ وَدَفَعَ حَتَّى أَتَى الْمُزْدَلِفَةَ، ‘এবং এখানে এর পিছন দিক (জাবালে রহমতের নীচে) পাথরসমূহের দিকে এবং হাবলুল মুশাত-কে নিজের সম্মুখে করে ক্বিবলার দিকে ফিরলেন। সূর্য না ডুবা ও পিত রং কিছুটা না চলে যাওয়া পর্যন্ত এভাবে তিনি (রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এখানে দাঁড়িয়ে রইলেন। এরপর সূর্যের গোলক পরিপূর্ণ নীচের দিকে অদৃশ্য হয়ে গেল। এরপর তিনি উসামা (রাঃ)-কে নিজের সওয়ারীর পেছনে বসালেন এবং মুযদালিফা পৌঁছা পর্যন্ত সওয়ারী চালাতে থাকলেন’।[88]
অনেক হাজী ছাহেব প্রখর খরতাপে আরাফাহ ময়দানে অবস্থান করাকে অনেক কষ্টকর মনে করেন। তাই তাঁরা তড়িঘড়ি করে সূর্যাস্তের পূর্বেই আরাফাহ ময়দান ত্যাগ করেন অথচ হজ্জের মূল আনুষ্ঠানিকতা হ’ল আরাফাহ ময়দানে অবস্থান করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, الحج الحج يوم عرفة ‘হাজ্জ-হাজ্জ হচ্ছে আরাফাহ ময়দানে উপস্থিত হওয়া’।[89] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেছেন, خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ، ‘সর্বোত্তম দো‘আ হ’ল আরাফাহ দিনের দো‘আ’।[90]
আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ فِيهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ وَإِنَّهُ لَيَدْنُو عَزَّ وَجَلَّ ثُمَّ يُبَاهِى بِهِمُ الْمَلاَئِكَةَ فَيَقُولُ مَا أَرَادَ هَؤُلاَءِ. ‘এমন কোন দিন নেই, যেদিন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে আরাফার দিনের চেয়ে জাহান্নাম থেকে বেশী মুক্তি দিয়ে থাকেন। তিনি সেদিন বান্দাদের খুব নিকটবর্তী হন, তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ববোধ করে বলেন, এরা কি চায়? (অর্থাৎ যা চায় আমি তাদেরকে তাই দেব)’।[91]
গোনাহ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির সবচেয়ে বড় একটি ইবাদত হ’ল আরাফাহ ময়দানে অবস্থান করা এবং অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে কাকুতি-মিনতিসহকারে দো‘আ করা। এতদসত্ত্বেও আরাফাহ ময়দানের সাময়িক কষ্ট অনেক হাজী ছাহেবের সহ্য হয় না। তাই তারা সূর্যাস্তের পূর্বেই আরাফাহ ময়দান ত্যাগ করেন। যা হজ্জের ত্রুটি ও সুন্নাতবিরোধী আমল।[92]
জাবালে রহমত-এর শীর্ষে উঠে ছালাত আদায় করা, স্পর্শ করা :
অনেকেই জাবালে আরাফাহ তথা জাবালে রহমতের শীর্ষে উঠে তথায় ছালাত আদায় করা এবং স্পর্শ করাকে আবশ্যক মনে করে। অথচ ইসলামী শরী‘আতে এর কোনই ভিত্তি নেই। শায়খ ওছায়মীন (রহঃ) একে বিদ‘আত গণ্য করেছেন।[93]
আরাফাহ ময়দানে অবস্থান সংক্রান্ত বিবিধ ত্রুটি :
(১) চন্দ্রোদয়ের সংশয় নিরসনের জন্য আট তারিখে আরাফাহ ময়দানে অবস্থিত জাবালে রহমতে এক ঘণ্টা অবস্থান করা।[94] (২) রাতের বেলায় মিনা থেকে আরাফাহ-এর দিকে যাত্রা করা।[95] (৩) আরাফাহ ময়দানে অবস্থানের জন্য গোসল করা।[96] (৪) আরাফাহ ময়দান থেকে জাবালে রহমতের নিকটবর্তী হ’লে জাবালের রহমতের দিকে দৃষ্টিপাত করে সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়া লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লা-হু আকবার’ বলা।[97] (৫) আরাফাহ ময়দানে একশ’ বার ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা’ বলা, একশ’ বার সূরা ইখলাছ পাঠ করা, অতঃপর রাসূলুলাহ (ছাঃ)-এর প্রতি একশ’ বার দরূদ পাঠ করা, যার শেষাংশে ‘ওয়া আলাইনা মা‘আহুম’ বৃদ্ধি করা।[98] (৬) দো‘আ না পড়ে আরাফাহ ময়দানে নীরব থাকা।[99] (৭) খুৎবার পূর্বে যোহর ও আছরের ছালাত আদায় করা।[100] (৮) আরাফাহ ময়দানে খতীবের খুৎবাহ শেষ হওয়ার পূর্বে যোহর ও আছর ছালাতের আযান দেয়া।[101] (৯) আরাফাহ ময়দানে ক্বছর ছালাত আদায় শেষে মক্কাবাসীদের উদ্দেশ্যে ইমামের একথা বলা যে, ‘আপনারা আপনাদের ছালাত পূর্ণ করুন। কেননা আমরা মুসাফির’।[102]
মুযদালিফায় অবস্থান সংশ্লিষ্ট ত্রুটিসমূহ
আরাফাহ ও মুযদালিফার মধ্যবর্তী গিরিপথে ছালাত আদায় করা :
আরাফাহ ও মুযদালিফার মধ্যবর্তী স্থানে একটি গিরিপথ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরাফাহ হ’তে ফেরার পথে প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য সেখানে অবতরণ করেছিলেন। প্রয়োজন শেষে সেখানে ওযূ করেছিলেন। ছালাত আদায় করেননি। উসামা ইবনু যায়েদ (রাঃ) বলেন, ‘নবী করীম (ছাঃ) যখন আরাফাহ হ’তে প্রত্যাবর্তন করছিলেন তখন তিনি একটি গিরিপথের দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রাকৃতিক প্রয়োজন মিটিয়ে ওযূ করলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আপনি ছালাত আদায় করবেন? তিনি বললেন, ছালাত আরো সামনে’।[103] অথচ অনেক হাজী ছাহেব এখানে অবতরণ করে ছালাত আদায় করেন। যা সুন্নাত পরিপন্থী ও বিদ‘আত।
মুযদালিফায় মাগরিব ও এশার সুন্নাত ছালাত আদায় :
মুযদালিফায় মাগরিব ও এশার সুন্নাত ছালাত আদায় করা বিদ‘আত।[104] কেননা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে,
جَمَعَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ بِجَمْعٍ، كُلُّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا بِإِقَامَةٍ، وَلَمْ يُسَبِّحْ بَيْنَهُمَا وَلاَ عَلَى إِثْرِ كُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا.
‘নবী করীম (ছাঃ) মাগরিব ও এশার ছালাত মুযদালিফায় একত্রে আদায় করেছেন। প্রত্যেক ছালাতের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ইক্বামাত দিয়েছেন এবং এ দুই ছালাতের মাঝে কোন নফল ছালাত আদায় করেননি এবং পরেও আদায় করেননি’।[105]
মুযদালিফায় মাগরিব ও এশা জমা এবং এশার ছালাত ক্বছর না করা :
মুযদালিফায় মাগরিব ও এশার ছালাত জমা (একত্রিত) এবং এশার ছালাত ক্বছর করে আদায় করার বিষয়ে সুস্পষ্ট হাদীছ রয়েছে। ওবায়দুল্লাহ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেছেন,جَمَعَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ بِجَمْعٍ لَيْسَ بَيْنَهُمَا سَجْدَةٌ وَصَلَّى الْمَغْرِبَ ثَلاَثَ رَكَعَاتٍ وَصَلَّى الْعِشَاءَ رَكْعَتَيْنِ. ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুযদালিফায় মাগরিব ও এশার ছালাত একত্রে আদায় করেছেন। তিনি এ দুই ছালাতের মধ্যে অন্য কোন ছালাত (সুন্নাত বা নফল) আদায় করেননি। তিনি মাগরিব তিন রাক‘আত এবং এশা দু’রাক‘আত আদায় করেছেন’।[106]
এতদসত্ত্বেও কোন কোন হাজী ছাহেব মনে করেন ছালাত জমা ও ক্বছর করার চেয়ে যথাসময়ে পুরো ছালাত আদায় করায় নেকী বেশী। এজন্য তারা জমা ও ক্বছর করেন না। এটা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাতের সরাসরি বিরুদ্ধাচরণ ও বিদ‘আত।
বায়তুল্লাহ ত্বাওয়াফ, মুযদালিফায় অবস্থান ও কংকর নিক্ষেপের প্রাক্কালে গোসল করা :
হজ্জের সময় তিন স্থানে গোসল করা মুস্তাহাব। যথা- ইহরাম বাঁধার পূর্বে, মক্কায় প্রবেশের প্রাক্কালে ও আরাফার দিনে। এতদ্ব্যতীত অন্যান্য স্থানে যথা- কংকর নিক্ষেপে প্রাক্কালে, ত্বাওয়াফের পূর্বে, মুযদালিফায় অবস্থানের পূর্বে মুস্তাহাব মনে করে গোসল করা বিদ‘আত। এ সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেছেন,
وَمَا سِوَى ذَلِكَ كَالْغُسْلِ لِرَمْيِ الْجِمَارِ وَلِلطَّوَافِ وَالْمَبِيتِ بمزدلفة فَلَا أَصْلَ لَهُ لَا عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا عَنْ أَصْحَابِهِ وَلَا اسْتَحَبَّهُ جُمْهُورُ الْأَئِمَّةِ لَا مَالِكٍ وَلَا أَبُو حَنِيفَةَ وَلَا أَحْمَد وَإِنْ كَانَ قَدْ ذَكَرَهُ طَائِفَةٌ مِنْ مُتَأَخِّرِي أَصْحَابِهِ. بَلْ هُوَ بِدْعَةٌ،
‘এটা (ইহরাম, মক্কায় প্রবেশ, আরাফাহ দিবস) ব্যতীত হজ্জের সময় অন্য কোন আমলের প্রাক্কালে গোসলের বিধান নেই। যেমন কংকর নিক্ষেপ, ত্বাওয়াফ ও মুযদালিফায় অবস্থানের জন্য গোসল করার বিষয়ে শরী‘আতে কোন ভিত্তি নেই। নবী করীম (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) কারো থেকে এ বিষয়ে কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি। ইমাম আহমাদ, ইমাম মালেক, ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) বা জুমহূর ওলামা কেউ একে মুস্তাহাব বলেননি। যদিও তাদের পরবর্তী কেউ কেউ একে জায়েয হিসাবে উল্লেখ করেছেন কিন্তু এটা বিদ‘আত’।[107]
মুযদালিফায় অবস্থান সংক্রান্ত বিবিধ বিদ‘আত :
(১) আরাফাহ ময়দান থেকে তড়িঘড়ি করে মুযদালিফার দিকে যাত্রা করা।[108] (২) মাশ‘আরুল হারামের প্রতি নিষ্ঠা তথা সম্মান প্রদর্শনের জন্য মুযদালিফায় প্রবেশের সময় সওয়ারী থেকে অবতরণ করাকে মুস্তাহাব মনে করা।[109] (৩) মুযদালিফায় রাত্রি জাগরণ করা।[110] হাদীছ দ্বারা বুঝা যায়, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুযদালিফায় ছুবহে ছাদিক পর্যন্ত শুয়ে আরাম করেছেন। যেহেতু ১০ যিলহজ্জ হাজী ছাহেবকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে তাই নবী করীম (ছাঃ) মুযদালিফার রাতে আরাম করার বিধান রেখেছেন। সুতরাং হাজীদের জন্য মুযদালিফায় রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাতের পরিপন্থী।[111] (৪) রাত্রি যাপন ব্যতীত মুযদালিফায় অবস্থান করা।[112] (৫) ইয়াওমুন নাহার তথা কুরবানীর দিন কংকর নিক্ষেপের জন্য সাতটি পাথর মুযদালিফা থেকে কুড়িয়ে নেয়াকে সুন্নাত মনে করা এবং বাকী পাথর ‘ওয়াদীউল মুহাসসার’ থেকে সংগ্রহ করা।[113]
কুরবানী ও মাথা মুন্ডন সংশ্লিষ্ট ত্রুটি সমূহ
কুরবানী না করে সে অর্থ ছাদাক্বাহ করা :
হজ্জের সময় বা অন্য সময় কুরবানী করা সুন্নাত। কিন্তু হজ্জে কোন ভুল-ত্রুটি হ’লে তার কাফফারা স্বরূপ হাদী তথা কুরবানী ওয়াজিব। অনেকেই মনে করে কুরবানী না করে সে অর্থ ছাদাক্বা করা হয়ত উত্তম। একে শায়খ আলবানী (রহঃ) বিদ‘আত আখ্যায়িত করেছেন।[114]
ইয়াওমুন নাহারের পূর্বে কুরবানী করা :
কুরবানী করতে হয় ইয়াওমুন নাহার তথা ১০শে যিলহজ্জ কুরবানীর দিনে। কিন্তু তামাত্তু হজ্জ পালনকারী কিছু এমন হাজী রয়েছেন, যারা ইয়াওমুন নাহারের পূর্বেই হাদী কুরবানী করে থাকেন। যা বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত।[115]
মাথা মুন্ডন সংক্রান্ত বিবিধ বিদ‘আত :
(১) মাথার বাম পাশ থেকে মুন্ডন শুরু করা।[116] (২) মাথার চার ভাগের একভাগ মুন্ডন করা।[117] (৩) ক্বিবলামুখী হয়ে মাথা মুন্ডন করাকে সুন্নাত মনে করা।[118]
শেষ কথা : হজ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরয ইবাদত। যার মাধ্যমে নিষ্পাপ হওয়া যায়। কিন্তু রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাহ মোতাবেক ও ত্রুটিবিহীনভাবে হজ্জ সম্পন্ন না হ’লে তা কবুল হয় না। এজন্য সুন্নাতী পদ্ধতিতে হজ্জ করার চেষ্টা করতে হবে। আললাহ সবাইকে কবুল হজ্জ করার তাওফীক দান করুন- আমীন!
ক্বামারুয্যামান বিন আব্দুল বারী
মুহাদ্দিছ, বেলটিয়া কামিল মাদ্রাসা, জামালপুর।
[1]. মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ ৪৫ পৃঃ।
[2]. হাজ্জাতুন নাবী (ছাঃ), ১০৭ পৃঃ টীকা দ্রষ্টব্য।
[3]. মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ ৪৬ পৃঃ।
[4]. বুখারী হা/১; মুসলিম হা/১৯০৭; তিরমিযী হা/১৬৩৭।
[5]. আবূদাঊদ হা/২৪৫৪; তিরমিযী হা/৭৩০; নাসাঈ হা/২৩৩৩, সনদ ছহীহ।
[6]. ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, ফৎওয়া নং ৪৫৯।
[7]. মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ, ৪৬ পৃঃ।
[8]. বুখারী হা/১৫২৬; মুসলিম হা/১১৮১; মিশকাত হা/২৫১৬।
[9]. মুসলিম হা/১১৮৬; বুখারী হা/১৫৪১।
[10]. বায়হাক্বী কুবরা হা/৯১৯৯; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা হা/১২৮৪২।
[11]. মাসিক আত-তাহরীক, সেপ্টেম্বর ২০১৬, প্রশ্নোত্তর নং ৩৬/৪৭৬; ফৎওয়া সংকলন, ১৯তম বর্ষ, ১২৭ পৃঃ।
[12]. দলীলুল হাজ্জ ওয়াল মু‘তামির, অনুবাদ : আব্দুল মতীন সালাফী ‘সংক্ষিপ্ত নির্দেশাবলী’ অনুচ্ছেদ, মাসআলা-২৪, ৬৫ পৃঃ।
[13]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া, প্রশ্নোত্তর নং ১৫৯৩।
[14]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৯৮৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।
[15]. যাদুল মা‘আদ ২/৮৯ পৃঃ গৃহীত: হজ্জ সম্পর্কিত ভুল-ত্রুটি ও বিদ‘আত সমূহ, ২ পৃঃ।
[16]. আবুদাউদ হা/১৮৮৪; আহমাদ হা/৩৫১২; বায়হাক্বী হা/৯২৫৭; মিশকাত হা/২৫৮৫, সনদ ছহীহ।
[17]. হজ্জ সম্পর্কিত ভুল-ত্রুটি ও বিদ‘আতসমূহ, পৃঃ ২।
[18]. বুখারী হা/৩৫৯; মুসলিম হা/৫১৬; মিশকাত হা/৭৫৫।
[19]. শায়খ মুহাম্মাদ বিন ছালিহ আল-উছায়মীন, ফিক্বহুল ইবাদাহ, ৩৪৩ পৃঃ, আল-বিদাউ‘ ওয়াল মুছদাছাত, ৩৯৪ পৃঃ।
[20]. মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ ১১২ পৃঃ; হাজ্জাতুন নাবী (ছাঃ) ৪৭ পৃঃ; সূরা আ‘রাফ ৫৫, ২০৫।
[21]. ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা, ফাতাওয়া নং ৫৬০৯।
[22]. বুখারী হা/১৫৪৮।
[23]. ইবনু মাজাহ হা/২৯২৩; নাসাঈ হা/২৭৫৩; আহমাদ হা/২১১৭০; ছহীহাহ হা/৮৩০, সনদ ছহীহ।
[24]. ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম ৫৭৫ পৃঃ।
[25]. ফিক্বহুল ইবাদাহ ৩৪৫ পৃঃ, আল-বিদাউ‘ ওয়াল মুহদাছাত ৪১২ পৃঃ।
[26]. আল-বিদাউ‘ ওয়াল মুহদাছাত ৩৮৪ পৃঃ।
[27]. আবু দাঊদ হা/১৮৯২; আহমাদ হা/১৫৩৯৯; মিশকাত হা/২৫৮১, সনদ হাসান।
[28]. ফিক্বহুল ইবাদাহ ৩৫০ পৃঃ; ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, ফাতওয়া নং ৫০২, ৫০৩।
[29]. মানাসিকুল হাজ্জ ১/৪৭ পৃঃ।
[30]. মুসলিম হা/১২৬৯, ১২৬২; আহমাদ হা/৫৭৩৭; বায়হাক্বী হা/৯২৮০।
[31]. মুসলিম হা/১২১৮; বায়হাক্বী হা/৯৩২২; মিশকাত হা/২৫৬৬।
[32]. বুখারী হা/১১৬৩; মুসলিম হা/৭১৪; মিশকাত হা/৭০৪।
[33]. বুখারী হা/১৬১৪-১৬১৫; মুসলিম হা/১২৩৫; মিশকাত হা/২৫৬৩।
[34]. হাজ্জাতুন নাবী (ছাঃ) ১১৪ পৃঃ।
[35]. আল-মাদখাল ৪/২২৪, মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ ১১৭ পৃঃ।
[36]. বুখারী হা/১৬০৯, ১৬৬।
[37]. বুখারী হা/১৬০৯, ১৬০৬, ১৬৬; মুসলিম হা/১২৬৮।
[38]. বুখারী হা/১৫৯৭, ১৬০৫; মুসলিম হা/১২৭০।
[39]. বুখারী হা/১৬০৭, ১৬১২, ১৬১৩; মুসলিম হা/১২৭২।
[40]. ফিক্বহুল ইবাদাহ ৩৪৮ পৃঃ; আল-বিদাউ‘ ওয়াল মুহদাছাত ৩৮৮ পৃঃ।
[41]. মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ ৪৯ পৃঃ।
[42]. হাজ্জাতুন নাবী (ছাঃ) ১১৬ পৃঃ।
[43]. বায়হাক্বী ৫/৭৯ পৃঃ, হজ্জ ও ওমরাহ ৬৪ পৃঃ।
[44]. বুখারী হা/১৬১৩; মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ ২০ পৃঃ।
[45]. হাজ্জাতুল নাবী (ছাঃ) ১১৫ পৃঃ; আল-মাদখাল ৪/২২৫ পৃঃ।
[46]. বুখারী হা/১৬০৯, ১৬৬।
[47]. ইক্বতিযাউছ ছিরাতিল মুস্তাক্বীম ২০৪ পৃঃ; মাজমূ‘আতুর রাসায়িল ২/৩৭১ পৃঃ।
[48]. বুখারী হা/১৬০৯, ১৬৬।
[49]. ফাতাওয়া ইসলামিয়া লি মাজমূ‘আতিম মিনাল ওলামাইল আফাযিল ১/৪৪০ পৃঃ; আল-বিদাউ‘ ওয়াল মুহদাছাত ৩৮৯ পৃঃ।
[50]. মানাসিকুল হাজ্জ ১/৪৭; কুল্লু বিদ‘আতিন যলালা ২০১ পৃঃ, আশরাফ ইবরাহীম ক্বাতক্বাত, আল-বুরহানুল মুবীন ১/৫৫৫ পৃঃ।
[51]. বুখারী হা/১৬১৩।
[52]. আত-তালখীছুল হাবীর ২/২৪৭।
[53]. ফাৎহুল বারী ৩/৫৪০ পৃঃ।
[54]. ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, ফৎওয়া নং ৫০৬।
[55]. ফাতাওয়া ছালেহ ইবনু ফাওযান আল-ফাওযান ২/৩০, আল-বিদাউ‘ ওয়াল মুহদাছাত ৩৯৮ পৃঃ।
[56]. তিরমিযী হা/৮৭৮; আহমাদ হা/৭০০০; ছহীতুত তারগীব হা/১১৪৭।
[57]. মুসলিম হা/১২১৮; আবু দাঊদ হা/১৯০৫; মিশকাত হা/২৫৫৫।
[58]. ফিক্বহুল ইবাদাহ, ৩৫৬ পৃঃ; আল-বিদাউ‘ ওয়াল মুহদাছাত ৩৯৯ পৃঃ।
[59]. আল-বিদাউ‘ ওয়াল মুহদাছাত ৩৯৯-৪০০ পৃঃ; ফিক্বহুল ইবাদাহ ৪০১ পৃঃ।
[60]. মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ ৫৬ পৃঃ; মাজমূ‘আতুর রাসাইল ২/২৮৮; আল-মাদখাল ৪/২৩৮।
[61]. ফিক্বহুল ইবাদাহ ৩৫৯ পৃঃ, আল-বিদাউ‘ ওয়াল মুহদাছাত ৪১১ পৃঃ।
[62]. আল-ফাওয়ায়েদুল মাজমূ‘আহ ১/১১২, হা/২৫; তানযীহুশ শরী‘আহ ২/১৭৫ পৃঃ, তাযকিরাতুল হুফফায ৭৪ পৃঃ।
[63]. মানাসিকুল হাজ্জ পৃঃ ৫০; আল-বুরহানুল মুবীন ১/৫৫৫ পৃঃ।
[64]. ফিক্বহুল ইবাদাহ পৃঃ ৩৬২, আল-বিদাউ‘ ওয়াল মুহদাছাত পৃঃ ৩৮৫।
[65]. মুসলিম হা/১২১৮; আবূদাঊদ হা/১৯০৫; ইবনু মাজাহ হা/৩০৭৪; মিশকাত হা/২৫৫৫।
[66]. মুছান্নাফে আবী শায়বা হা/১৩১১০; দারাকুত্বনী হা/২/৯৯।
[67]. ফিক্বহুল ইবাদাহ ৩৬৪ পৃঃ; আল-বিদাউ‘ ওয়াল মুহদাছাত ৫০২ পৃঃ।
[68]. মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ ৫১ পৃঃ; হাজ্জাতুন নাবী (ছাঃ) ১২০ পৃঃ।
[69]. মাজমূ‘আতুল ফাতাওয়া ১৩/২৬৩ পৃঃ; আল-ক্বাওয়াছেল নূরানিয়্যাহ ১০১ পৃঃ।
[70]. হাজ্জাতুন নাবী (ছাঃ) ১২১ পৃঃ; মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ ৫১ পৃঃ।
[71]. আল-বিদাউ‘ ওয়াল মুহদাছাত ৪০৪-৫ পৃঃ; ফিক্বহুল ইবাদাহ ৬৪২ পৃঃ।
[72]. হাজ্জাতুন নাবী (ছাঃ) ১৩১ পৃঃ; মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরা ৫৪ পৃঃ।
[73]. মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ ৫৪ পৃঃ; হাজ্জাতুন নাবী (ছাঃ) ১৩২ পৃঃ।
[74]. মুসলিম হা/১২৮২; আহমাদ হা/১৮২১; মিশকাত হা/২৬১০।
[75]. মুসলিম হা/১২৯৯; নাসাঈ হা/৩০৭৪; তিরমিযী হা/৮৯৭।
[76]. তুহফাতুল আহওয়াযী ৩/৩৩২ পৃঃ।
[77]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/৩৮০ পৃঃ; হাজ্জাতুন নাবী (ছাঃ) ১৩১ পৃঃ।
[78]. মুসলিম হা/১২১৮; আবূদাঊদ হা/১৯০৫; নাসাঈ হা/২৭৬১; মিশকাত হা/২৫৫৫।
[79]. মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ ৫৪ পৃঃ; হাজ্জাতুন নাবী (ছাঃ) ১৩১ পৃঃ।
[80]. আবূদাঊদ হা/১৯৪০; তিরমিযী হা/৮৯৩; ইবনু মাজাহ হা/৩০২৫; মিশকাত হা/২৬১৩, সনদ ছহীহ।
[81]. মুসলিম হা/১২৯৯; নাসাঈ হা/৩০৬৩; মিশকাত হা/২৬২০।
[82]. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, হজ্জ ও ওমরাহ ১১০ পৃঃ; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/২৪৩ পৃঃ।
[83]. মুসলিম হা/১২৯০; বুখারী হা/১৬৮০, ১৬৮১।
[84]. শায়েখ ছালেহ ইবনু ফাওযান আল-ফাওযান, আল-ফাতাওয়া ২/২০ পৃঃ; আল-বিদাউ‘ ওয়াল মুহদাছাত ৪০৪ পৃঃ।
[85]. বুখারী হা/১৩৬২; মুসলিম হা/১২১৮; মিশকাত হা/২৫৫৫, ২৬১৭।
[86]. মুসলিম হা/১২১৮; আবূদাঊদ হা/১৯০৫; নাসাঈ হা/২৭৬১; মিশকাত হা/২৫৫৫।
[87]. হাজ্জাতুন নাবী (ছাঃ) ১২৬ পৃঃ; মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ ৫২ পৃঃ।
[88]. মুসলিম হা/১২১৮; আবু দাঊদ হা/১৯০৫;; মিশকাত হা/২৫৫৫।
[89]. আবূদাঊদ হা/১৯৪৯; নাসাঈ হা/৩০৪৪, ৩০১৬; তিরমিযী হা/৮৮৯; মিশকাত হা/২৭১৪, সনদ ছহীহ।
[90]. তিরমিযী হা/৩৫৮৫; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৫৩৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৩২৭৪; ছহীহাহ হা/১৫০৩।
[91]. মুসলিম হা/১৩৪৮; ইবনু মাজাহ হা/৩০১৪; ছহীহাহ হা/২৫৫১; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৭৯৬।
[92]. হাজ্জাতুন নাবী (ছাঃ) ১২৭ পৃঃ; মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ ৫২ পৃঃ।
[93]. আল-বিদাউ‘ ওয়াল মুহদাছাত ৩৭৯-৩৮০ পৃঃ; ফিক্বহুল ইবাদাহ ৩৩২ পৃঃ।
[94]. হাজ্জাতুন নাবী (ছাঃ), ১২২ পৃঃ।
[95]. আল মাদখাল ৪/২২৭।
[96]. মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ ৫১ পৃঃ।
[97]. হাজ্জাতুন নাবী (ছাঃ) ১২৪ পৃঃ।
[98]. মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ ৫১ পৃঃ।
[99]. আল মাদখাল ৪/২২৯ পৃঃ।
[100]. নাছবুর রা-য়াহ ৩/৫৯-৬০ পৃঃ; মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ ৫২ পৃঃ।
[101]. হাজ্জাতুন নাবী (ছাঃ) ১২৬ পৃঃ।
[102]. মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ ৫২ পৃঃ।
[103]. বুখারী হা/১৬৬৭, ১৬৬৮।
[104]. হাজ্জাতুন নাবী (ছাঃ) ১২৯ পৃঃ।
[105]. বুখারী হা/১৬৭৩; নাসাঈ হা/৩০২৮; মিশকাত হা/২৬০৭।
[106]. মুসলিম হা/১২৮৮; বুখারী হা/১৬৭৩, ১৬৭৪।
[107]. মাজমূ‘আতুল ফাতাওয়া ১৩/২৪২ পৃঃ।
[108]. হাজ্জাতুন নাবী (ছাঃ) ১২৮ পৃঃ।
[109]. মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ ৫৩ পৃঃ।
[110]. হাজ্জাতুন নাবী (ছাঃ) ১৩০ পৃঃ।
[111]. তাক্বওয়ার সফর হজ্জ-ওমরা ও যিয়ারত ৪২ পৃঃ।
[112]. আর রাওযাতুন নাদিইয়াহ ১/২৬৭ পৃঃ।
[113]. মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ ৫৪ পৃঃ; হাজ্জাতুন নাবী (ছাঃ) ১৩০-১৩১ পৃঃ।
[114]. হাজ্জাতুন নাবী (ছাঃ) ১৩২ পৃঃ।
[115]. মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ ৫৫ পৃঃ।
[116]. ঐ, ৫৫ পৃঃ।
[117]. হাজ্জাতুন নাবী (ছাঃ) ১৩৩ পৃঃ।
[118]. মানাসিকুল হাজ্জ ওয়াল ওমরাহ ৫৫ পৃঃ।