পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । শেষ পর্ব ।
৩. ঘুষের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ :
বর্তমান সমাজে সহজলভ্য বিষয় হচ্ছে ঘুষ বা উৎকোচ। কথায় বলে ‘ফুয়েল না দিলে
ফাইল চলে না’। অফিস আদালতের করুণ বাস্তবতা এটাই যে, টেবিলের উপরে থাকা
ফাইলও খুঁজে পাওয়া যায় না, যদি না এর জন্য ‘বখশিশ’ নামক কিছু মিলে। এটি এখন
‘ওপেন সিক্রেট’। সকলেই জানেন, দেখেন কিন্তু বলতে পারেন না। অপরদিকে
চাকুরীর বাযারে এটি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ঘুষ-দুর্নীতি আর দলীয়
ক্যাডার বাহিনীর চাপে নিদারুণভাবে বঞ্চিত হচ্ছে মেধাবীরা। ঘুষ এত জঘন্য
একটি অপরাধ যে, এর মাধ্যমে প্রভাবশালী শত যুলুম করেও রক্ষা পায়। অপরদিকে
মযলূম তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। আর এ কারণেই রাসূল (ছাঃ) ঘুষদাতা
ও গ্রহীতার প্রতি লা‘নত করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন,لَعَنَ
رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الرَّاشِى وَالْمُرْتَشِى، ‘রাসূল (ছাঃ)
ঘুষ দাতা ও গ্রহীতা উভয়কেই লা‘নত করেছেন’।[1] আল্লাহ বলেন,وَلاَ تَأْكُلُوا
أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى
الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ
وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ، ‘আর তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরের সম্পদ ভক্ষণ কর না
এবং অন্যের সম্পদ গর্হিত পন্থায় গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তোমরা জেনেশুনে তা
বিচারকদের নিকটে পেশ কর না’ (বাক্বারাহ ২/১৮৮)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বলেন, مَنْ شَفَعَ لِأَخِيهِ بِشَفَاعَةٍ فَأَهْدَى لَهُ هَدِيَّةً
عَلَيْهَا فَقَبِلَهَا فَقَدْ أَتَى بَابًا عَظِيمًا مِنْ أَبْوَابِ
الرِّبَا. ‘যে ব্যক্তি তার কোন ভাইয়ের জন্য সুফারিশ করল এবং সে এর বিনিময়ে
হাদিয়াস্বরূপ তাকে কিছু দিল। এমতাবস্থায় যদি সে তা গ্রহণ করে তাহ’লে সে
সূদের দরজাসমূহের বড় একটি দরজায় উপস্থিত হ’ল’।[2] তিনি আরো বলেন,مَنْ
اسْتَعْمَلْنَاهُ عَلَى عَمَلٍ فَرَزَقْنَاهُ رِزْقًا فَمَا أَخَذَ بَعْدَ
ذَلِكَ فَهُوَ غُلُولٌ. ‘আমি যাকে (ভাতার বিনিময়ে) কোন কাজে নিয়োজিত করি,
সে যদি তা ব্যতীত অন্য কিছু (উৎকোচ) গ্রহণ করে, তাহ’লে তা হবে খিয়ানাত’।[3]
৪. ইয়াতীমদের মাল আত্মসাতের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ : ইয়াতীমদের ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশ অত্যন্ত কঠোর। পবিত্র কুরআনের যেখানেই সদয়, সহানুভূতি ও ভাল আচরণের কথা এসেছে, সেখানেই ইয়াতীমদের কথা এসেছে। মহান আল্লাহ তাঁর ইবাদত ও শিরক থেকে বাঁচার পাশাপাশি পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও নিঃস্বদের প্রতি সদয় হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি বলেন,وَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُورًا. ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর ও তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক কর না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত, নিকট-প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সংগী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদের প্রতি সদাচরণ কর। নিশ্চয়ই আললাহ দাম্ভিক, অহংকারীকে পসন্দ করেন না’ (নিসা ৪/৩৬)। ইয়াতীমের অসম্মান করাকে আল্লাহ মানুষের মন্দ স্বভাব হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,كَلَّا بَلْ لَا تُكْرِمُونَ الْيَتِيمَ. وَلَا تَحَاضُّونَ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِينِ. ‘কখনোই নয়। বস্ত্ততঃ তোমরা ইয়াতীমকে সম্মান কর না এবং অভাবগ্রস্তকে খাদ্যদানে পরস্পরকে উৎসাহিত কর না’ (ফাজর ৮৯/১৭-১৮)। এখানে ‘সম্মান করা’ কথাটি বলার মাধ্যমে ইয়াতীমের যথাযথ হক আদায় করা ও তার প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দেওয়ার প্রতি ইয়াতীমের অভিভাবক ও সমাজের প্রতি নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।[4] কেননা ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎকারীর শাস্তি অত্যন্ত মর্মান্তিক। দুনিয়াতে ক্ষমতার দাপটে ইয়াতীমের সম্পদ গ্রাস করা সম্ভব হ’লেও পরকালে ঐ ব্যক্তির বাঁচার কোন উপায় থাকবে না। অন্যান্য পাপীদের ন্যায় সেও বাম হাতে আমলনামা পেয়ে সেদিন আফসোস করে বলতে থাকবে-يَا لَيْتَنِي لَمْ أُوْتَ كِتَابِيَهْ. وَلَمْ أَدْرِ مَا حِسَابِيَهْ. يَا لَيْتَهَا كَانَتِ الْقَاضِيَةَ. مَا أَغْنَى عَنِّي مَالِيَهْ. هَلَكَ عَنِّي سُلْطَانِيَهْ. ‘হায়! আমাকে যদি আমার আমলনামা না দেওয়া হ’ত। আমি যদি আমার হিসাব কি তা না জানতাম! হায়! আমার মৃত্যুই যদি আমার শেষ হ’ত! (আজ) আমার ধন-সম্পদ আমার কোনই কাজে আসল না। আমার ক্ষমতা আজ ধ্বংস হয়ে গেছে’ (হা-ক্কাহ ৬৯/২৫-২৯)।
ইয়াতীমের সম্পদ যাতে আত্মসাৎ করা না হয় সেজন্য অতি সাবধান করতঃ ইয়াতীমের সম্পদের নিকটবর্তী হ’তেও মহান আল্লাহ তা‘আলা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, وَلاَ تَقْرَبُوْا مَالَ الْيَتِيْمِ إِلاَّ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ حَتَّى يَبْلُغَ أَشُدَّهُ. ‘আর ইয়াতীমের বয়োঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সদুদ্দেশ্য ব্যতীত তার বিষয় সম্পত্তির কাছেও যেও না’ (আন‘আম ১৫২)। তিনি আরও বলেন,وَلاَ تَقْرَبُوْا مَالَ الْيَتِيْمِ إِلاَّ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ حَتَّى يَبْلُغَ أَشُدَّهُ وَأَوْفُوْا بِالْعَهْدِ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُوْلاً. ‘আর ইয়াতীমের বয়োঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সদুদ্দেশ্য ব্যতীত তাদের বিষয় সম্পত্তির কাছেও যেও না এবং তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ কর। নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে’ (বানী ইসরাঈল ১৭/৩৪)। আলোচ্য আয়াতদ্বয়ে ‘ইয়াতীমের সম্পদের কাছেও যেও না’ অর্থ ইয়াতীমের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ কর না। যেমনটি হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ)-কে সৃষ্টির পর নিষিদ্ধ গাছের ফল ভক্ষণে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, وَلاَ تَقْرَبَا هَـذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُوْنَا مِنَ الْظَّالِمِيْنَ ‘তোমরা এই বৃক্ষের নিকটেও যেও না। (যদি যাও) তাহ’লে তোমরা যালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’ (বাক্বারাহ ২/৩৫)। মূলতঃ ইয়াতীমের সম্পদের হেফাযত ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব যাদের উপর অর্পিত হবে তাদেরকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে আয়াতদ্বয়ে একথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ কোনভাবেও যেন ইয়াতীমদের সম্পদ আত্মসাৎ করা না হয়। কেননা ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর।
ইয়াতীমের মাল আত্মসাৎ করা অর্থ আগুন ভক্ষণ করা। আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِيْنَ يَأْكُلُوْنَ أَمْوَالَ الْيَتَامَى ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُوْنَ فِيْ بُطُوْنِهِمْ نَارًا وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيْرًا. ‘নিশ্চয়ই যারা ইয়াতীমদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে, তারা তাদের উদরে অগ্নি ভর্তি করে এবং সত্বরই তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ (নিসা ৪/১০)।
আবুহুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,اِجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوْبِقَاتِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيْمِ وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ. ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় হ’তে বেঁচে থাক। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) সেগুলি কী? রাসূল (ছাঃ) বললেন, আল্লাহর সাথে শিরক করা, যাদু করা, মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা, সূদ খাওয়া, ইয়াতীমের মাল আত্মসাৎ করা, যুদ্ধক্ষেত্র হ’তে পলায়ন করা ও মুমিন সতীসাধ্বী মহিলার উপর যেনার অপবাদ দেয়া’।[5] অতএব ধ্বংস থেকে রক্ষা ও জাহান্নামের মর্মন্তুদ শাস্তি থেকে মুক্তির স্বার্থে ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
৫. মদ-জুয়া-লটারীর মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ : যা পান করলে মত্ততা আসে, তাই মদ। জাহেলী আরবে মদের প্রচলন ছিল ব্যাপক। যে কোন অনুষ্ঠান-আয়োজনের শেষে মদ পরিবেশন ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। মদ বিনে পুরো আয়োজনই যেন অসম্পূর্ণতায় পর্যবসিত হ’ত। ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুসলমানদের মধ্যেও মদের প্রচলন ছিল। অতঃপর যখন মদের অপকারিতা ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হ’তে লাগল, তখন মহান আল্লাহ তা‘আলা মদ হারাম করে দেন। তবে তৎকালীন সমাজে বহুল প্রচলিত সর্বপ্রসিদ্ধ এই বস্ত্তটি তিনি একদিনে হারাম করেননি। ধাপে ধাপে পর্যায়ক্রমে লোকেদের জন্য সহনীয় করে হারাম করেছেন।
মদ নিষিদ্ধের জন্য পরপর তিনটি আয়াত নাযিল হয়। বাক্বারাহ ২১৯, নিসা ৪৩ ও সবশেষে মায়েদাহ ৯০-৯১। প্রতিটি আয়াত নাযিলের মধ্যে সংক্ষিপ্ত বিরতি ছিল এবং মানুষের মানসিকতা পরিবর্তনের অবকাশ ছিল। প্রতিটি আয়াতই একেকটি ঘটনা উপলক্ষে নাযিল হয়। যাতে মানুষ নিষেধাজ্ঞার গুরুত্ব উপলব্ধি করে তাকে সহজে গ্রহণ করে নিতে পারে।
রাসূল (ছাঃ)-এর মদীনায় হিজরতের পর একদিন কতিপয় ছাহাবী এসে মদের অপকারিতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি এ বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশ কামনা করেন। তখন নাযিল হয়, يَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيْهِمَا إِثْمٌ كَبِيْرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا- ‘তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। আপনি বলে দিন যে, এ দু’টির মধ্যে রয়েছে বড় পাপ ও মানুষের জন্য রয়েছে কিছু উপকারিতা। তবে এ দু’টির পাপ এ দু’টির উপকারিতার চাইতে অধিক’ (বাক্বারাহ ২/২১৯)। এ আয়াত নাযিলের ফলে বহু লোক মদ-জুয়া ছেড়ে দেয়।
অতঃপর কিছুদিন পর জনৈক ছাহাবীর বাড়ীতে মেযবানী শেষে মদ্যপান করে একজন অজ্ঞান হয়ে পড়েন। অন্যজন ছালাতে ইমামতি করতে গিয়ে সূরা কাফিরূণেنَحْنُ نَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ পড়েন। যার অর্থ ‘আমরা ইবাদত করি তোমরা যাদের ইবাদত কর’। যাতে আয়াতের মর্ম একেবারেই পরিবর্তিত হয়ে যায়। তখন নাযিল হয়,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَقْرَبُوا الصَّلاَةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى حَتَّى تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছালাতের নিকটবর্তী হয়ো না। যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার’ (নিসা ৪/৪৩)। এ আয়াত নাযিলের পর মদ্যপায়ীর সংখ্যা আরও হ্রাস পায়।
অতঃপর
আরও কিছুদিন পর একদিন এক ছাহাবীর বাড়ীতে খানাপিনার পর মদ্যপান শেষে কিছু
মেহমান অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এ সময় জনৈক মুহাজির ছাহাবী নিজের বংশ গেŠরব
কাব্যাকারে বলতে গিয়ে আনছারদের দোষারোপ করে কবিতা বলেন। তাতে একজন আনছার
যুবক তার মাথা লক্ষ্য করে উটের হাড্ডি ছুঁড়ে মারেন। তাতে তার নাক
মারাত্মকভাবে আহত হয়। পরে বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট পেশ করা হয়।
তখন মদ নিষিদ্ধের চূড়ান্ত নির্দেশ সম্বলিত সূরা মায়েদাহর ৯০-৯১ নম্বর আয়াত
নাযিল হয়। যাতে মহান আল্লাহ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন,يَا أَيُّهَا
الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأَنصَابُ
وَالأَزْلاَمُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ
لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ- إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُوْقِعَ
بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاء فِيْ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ
وَيَصُدَّكُمْ عَن ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلاَةِ فَهَلْ أَنْتُم
مُّنْتَهُوْنَ- ‘হে বিশ্বাসীগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, বেদী ও শুভাশুভ নির্ণয়ের
তীর সমূহ নাপাক ও শয়তানী কাজ। অতএব তোমরা এসব থেকে বিরত থাকো যাতে তোমরা
কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো কেবল চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের
মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও ছালাত হ’তে
তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব এক্ষণে তোমরা নিবৃত্ত হবে কি?’ (মায়েদাহ ৫/৯১)। তখন ওমর ফারূক (রাঃ) বলে ওঠেন, انْتَهَيْنَا ‘আমরা বিরত হ’লাম’।[6]
উল্লেখ্য
যে, সূরা বাক্বারাহ ও নিসার আয়াত দু’টি নাযিল হ’লে প্রতিবারে ওমর (রাঃ) মদ
সম্পর্কে আল্লাহর নিকটে এই বলে প্রার্থনা করেন যে,اللهُمَّ بَيِّنْ لَنَا
فِى الْخَمْرِ بَيَانًا شَافِيًا ‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে মদ সম্পর্কে
স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিন’। তখন সূরা মায়েদার ৯০-৯১ আয়াত দু’টি নাযিল হয়।[7]
আনাস (রাঃ) বলেন, একদিন আমি আবূ তালহার বাড়ীতে (মেযবানী শেষে) লোকজনকে মদ পান করাচ্ছিলাম। সেদিন উন্নতমানের ‘ফাযীখ’ (الفَضِيخَ) মদ পান চলছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এক ব্যক্তিকে এই মর্মে ঘোষণা দেওয়ার জন্য পাঠালেন যে, أَلاَ إِنَّ الْخَمْرَ قَدْ حُرِّمَتْ ‘সাবধান! নিশ্চয়ই মদ হারাম করা হয়েছে’। রাবী (আনাস) বলেন, আবূ তালহা আনছারী তখন আমাকে বললেন, اخْرُجْ فَأَهْرِقْهَا ‘বাইরে যাও এবং সমস্ত মদ ঢেলে দাও’। আনাস (রাঃ) বলেন, فَخَرَجْتُ فَهَرَقْتُهَا، فَجَرَتْ فِى سِكَكِ الْمَدِينَةِ ‘আমি বাইরে গেলাম এবং সমস্ত মদ ঢেলে দিলাম। অতঃপর সেদিন মদীনার অলিগলিতে মদের প্লাবন বয়ে গেল’।[8] অন্য বর্ণনায় আছে, আবূ তালহা বললে قُمْ يَا أَنَسُ فَأَهْرِقْهَا ‘ওঠো হে আনাস! মদ ঢেলে দাও’।[9] এভাবে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্বিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল বনু আদমের উপর মদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ সেই নিষিদ্ধ বস্ত্তটিই মুসলিম রাষ্ট্রের কর্ণধাররা সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় বৈধতা দিয়েছে। শহরে-বন্দরে আজকাল ‘সরকার অনুমোদিত বাংলা মদের দোকান’ বা ‘বাংলা মদের কারখানা’ ইত্যাদি সাইনবোর্ড দেখা যায়। যত সব তন্ত্র-মন্ত্রের দোহাই দিয়ে আল্লাহ কৃত হারামকে আজ হালাল করা হচ্ছে। যা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট ইহুদী-নাছারাদের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
উল্লেখ্য
যে, মদ পান করা যেমন হারাম তেমনি এর ক্রয়-বিক্রয়ও হারাম। আয়েশা (রাঃ) হ’তে
বর্ণিত তিনি বলেন,لَمَّا أُنْزِلَ الآيَاتُ مِنْ سُورَةِ الْبَقَرَةِ فِى
الرِّبَا، خَرَجَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم إِلَى الْمَسْجِدِ،
فَقَرَأَهُنَّ عَلَى النَّاسِ، ثُمَّ حَرَّمَ تِجَارَةَ الْخَمْرِ- ‘যখন
সূদ সম্পর্কিত সূরা বাক্বারাহর আয়াতসমূহ নাযিল হ’ল, তখন নবী করীম (ছাঃ)
মসজিদে গমন করলেন এবং লোকেদেরকে সে সব আয়াত পাঠ করে শুনালেন। অতঃপর তিনি
মদের ব্যবসা হারাম করে দিলেন’।[10]
আবূ সাঈদ
খুদরী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে মদীনায় খুৎবা দিতে শুনেছি।
তিনি বলেছেন যে, ‘হে লোক সকল! আল্লাহ তা‘আলা মদ নিষেধের ব্যাপারে পরোক্ষ
ইঙ্গিত দিয়েছেন। হয়ত এ ব্যাপারে খুব শীঘ্রই কোন সুস্পষ্ট নির্দেশ দান
করবেন। সুতরাং কারো নিকটে এর কিছু থাকলে সে যেন বিক্রি করে দেয় অথবা কাজে
লাগায়’। রাবী বলেন, অল্প কিছুদিন পরেই রাসূল (ছাঃ) ঘোষণা করলেন যে,إِنَّ
اللهَ تَعَالَى حَرَّمَ الْخَمْرَ فَمَنْ أَدْرَكَتْهُ هَذِهِ الآيَةُ
وَعِنْدَهُ مِنْهَا شَىْءٌ فَلاَ يَشْرَبْ وَلاَ يَبِعْ. قَالَ
فَاسْتَقْبَلَ النَّاسُ بِمَا كَانَ عِنْدَهُ مِنْهَا فِى طَرِيقِ
الْمَدِينَةِ فَسَفَكُوهَا. ‘আল্লাহ তা‘আলা মদ হারাম করে দিয়েছেন। সুতরাং
যার নিকট এই আয়াত পৌঁছে গেছে এবং তার কাছে এর কিছু অবশিষ্ট থাকে, সে যেন তা
পান না করে এবং বিক্রি না করে’। রাবী বলেন, অতঃপর যাদের নিকট মদ অবশিষ্ট
ছিল তারা তা নিয়ে মদীনার রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ল এবং তা ঢেলে দিল।[11]
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, (মদ হারাম হওয়ার পর) জনৈক ব্যক্তি একদিন রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে এক মশক মদ হাদিয়া হিসাবে নিয়ে আসলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান না যে, আল্লাহ মদ হারাম করে দিয়েছেন? সে বলল, না। অতঃপর সে এক ব্যক্তির সাথে কানে কানে কথা বলল। রাসূল (ছাঃ) ঐ ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে গোপনে কি বললে? সে বলল, আমি তাকে তা বিক্রি করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,إِنَّ الَّذِى حَرَّمَ شُرْبَهَا حَرَّمَ بَيْعَهَا ‘যিনি তা পান করা হারাম করেছেন, তিনি এর বিক্রিও হারাম করে দিয়েছেন’। রাবী বলেন, অতঃপর লোকটি মশকের মুখ খুলে দিল এবং এর মধ্যে যা ছিল সব বের হয়ে গেল।[12] অর্থাৎ সমস্ত মদ ঢেলে দিল।
মদ্যপানের
শারীরিক ক্ষতিও অত্যন্ত ব্যাপক। গবেষকদের মতে, ১৫-৪৯ বছর বয়সী মানুষের ১০টি
মৃত্যুর মধ্যে একটি মৃত্যু ঘটে মদ্যপানের কারণে। নিয়মিত মদ্যপান শরীরের
বিভিন্ন অঙ্গ ও টিস্যুতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। মদে অভ্যস্ত মানুষ সহিংস হয়
এবং অনেক সময় নিজের ক্ষতি করে বসে। ২০১৬ সালের এক বৈশ্বিক তথ্যে দেখা গেছে,
২.২ শতাংশ নারী ও ৬.৮ শতাংশ পুরুষের অপরিণত বয়সে মৃত্যুর কারণ মূলত:
মদ্যপান।[13]
সুতরাং মদ পান ও এর ব্যবসা থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অত্যাবশ্যক। অন্যথায় দুনিয়াতে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির পাশাপাশি আখেরাতে মর্মান্তিক শাস্তি ভোগ করতে হবে।
অপরদিকে
জুয়া হচ্ছে এমন খেলা যাতে আর্থিক লাভ বা লোকসান হয়ে থাকে। জাহেলী যুগের
লোকেরা জুয়া খেলায় ভীষণ অভ্যস্ত ছিল। জুয়ার যে পদ্ধতি তাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ
ছিল তা হ’ল, তারা দশ জনে সমান টাকা দিয়ে একটা উট ক্রয় করত, সেই উটের গোশত
ভাগ-বাঁটোয়ারার জন্য জুয়ার তীর ব্যবহার করা হ’ত। ১০টি তীরের ৭টিতে কম-বেশী
করে বিভিন্ন অংশ লেখা থাকত এবং তিনটিতে কোন অংশই লেখা থাকত না। ফলে তিনজন
কোন অংশ পেত না এবং অন্য সাত জন তাদের প্রচলিত নিয়মে কম-বেশী অংশ পেত।
এভাবে তারা দশ জনের টাকায় কেনা উট সাত জনে ভাগ করে নিত।[14]
লটারীর মাধ্যমে ভাগ্য নির্ধারণ করাও হারাম। লটারীও জুয়ার অন্তর্ভুক্ত (মায়েদাহ ৯১)। লটারী বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচেছ, নির্দিষ্ট অংকের টাকা কিংবা দ্রব্য পুরস্কারের নামে প্রদানের বিনিময়ে নির্দিষ্ট নম্বরের কুপন বিক্রয় করা। নির্দিষ্ট তারিখে বিক্রিত কুপনগুলির ড্র অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম যে নম্বরের কুপনটি ওঠে সে প্রথম পুরস্কার পায়। এভাবে ক্রমানুযায়ী নির্ধারিত সংখ্যক পুরস্কার প্রদান করা হয়। অধিকাংশই বঞ্চিত হয়। মূলতঃ লটারীর নামে কুপন বিক্রির টাকা দিয়েই পুরস্কারের আয়োজন করা হয়। এমনকি আয়োজকদের পকেটেও ঢুকে মোটা অংকের টাকা। যার সম্পূর্ণটাই লটারীর নামে ভাগ্য যাচাইকারী ভাগ্যাহত আম জনতার টাকা। এই ধরনের লটারী ইসলামে সম্পূর্ণরূপে হারাম। এর মাধ্যমে অর্জিত অর্থও হারাম। কেননা লটারী ও জুয়া ধোঁকাবাজি ও প্রতারণা বৈ কিছুই নয়। আর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রতারণা থেকে স্বীয় উম্মাতকে সাবধান করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَرَّ عَلَى صُبْرَةِ طَعَامٍ فَأَدْخَلَ يَدَهُ فِيهَا فَنَالَتْ أَصَابِعُهُ بَلَلاً فَقَالَ مَا هَذَا يَا صَاحِبَ الطَّعَامِ قَالَ أَصَابَتْهُ السَّمَاءُ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ أَفَلاَ جَعَلْتَهُ فَوْقَ الطَّعَامِ كَىْ يَرَاهُ النَّاسُ مَنْ
غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّى- ‘একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
স্তূপীকৃত খাদ্যশস্যের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি স্তূপের ভিতরে হাত
ঢুকালেন। এতে তাঁর আঙ্গুলগুলো আর্দ্রতা স্পর্শ করল। তিনি এর মালিককে
জিজ্ঞেস করলেন, হে খাদ্যশস্যের মালিক, এটা কি? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল
(ছাঃ) এতে বৃষ্টি পড়েছিল। রাসূল (ছাঃ) বললেন, ভিজা অংশটি উপরে রাখলে না
কেন, যাতে লোকেরা দেখতে পেত? (সাবধান!) যে ব্যক্তি প্রতারণা করে, সে আমাদের
দলভুক্ত নয়’।[15]
তবে নেকীর কাজে প্রতিযোগিতা বা প্রয়োজনে লটারী করা জায়েয। যেমন ছালাতের জামা‘আতে প্রথম কাতারের নেকী বেশী। বারা (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর পিছনে ছালাত আদায় করতাম এবং তাঁর ডান দিকে দাঁড়াতে পসন্দ করতাম।[16] আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِى النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الأَوَّلِ، ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلاَّ أَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لاَسْتَهَمُوا، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِى التَّهْجِيرِ لاَسْتَبَقُوا إِلَيْهِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِى الْعَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا- ‘মানুষ যদি জানত আযানে এবং প্রথম কাতারে কি নেকী রয়েছে, আর লটারী ব্যতীত যদি এ সুযোগ লাভ করা সম্ভব না হ’ত, তাহ’লে তারা অবশ্যই এর জন্য লটারী করত। অনুরূপভাবে যোহরের ছালাত আউয়াল ওয়াক্তে আদায়ের কী ফযীলত রয়েছে তা যদি জানত, তাহ’লে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করত। আর এশা ও ফজরের ছালাত জামা‘আতে আদায়ের কী ফযীলত রয়েছে তা যদি জানত, তাহ’লে হামাগুড়ি দিয়ে হ’লেও তারা তাতে উপস্থিত হত’।[17] [চলবে]
[1]. আবূদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩৭৫৩, সনদ ছহীহ।
[2]. আবূদাঊদ, সনদ হাসান, মিশকাত, হা/৩৭৫৭।
[3]. আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৩৭৪৮।
[4]. তাফসীরুল কুরআন, (রাজশাহী : হাফাবা প্রকাশনী, ২য় সংস্করণ মে ২০১৩), ৩০তম পারা, পৃঃ ২৮৩।
[5]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫২ ‘ঈমান’ অধ্যায়।
[6]. আবূদাঊদ হা/৩৬৭০; তিরমিযী হা/৩০৪৯; নাসাঈ হা/৫৫৫৫।
[7]. আহমাদ হা/৩৭৮; নাসাঈ হা/৫৫৪০; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/২৮৯৭।
[8]. বুখারী হা/২৪৬৪; মুসলিম হা/১৯৮০।
[9]. বুখারী হা/৫৫৮২।
[10]. বুখারী হা/৪৫৯; মুসলিম হা/১৫৮০।
[11]. মুসলিম হা/১৫৭৮।
[12]. মুসলিম হা/১৫৭৯; ‘মদ বিক্রি হারাম’ অনুচ্ছেদ।
[13]. উইকিপিডিয়া, অনলাইন সংস্করণ।
[14]. মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ, অনুবাদ: আব্দুল মালেক, যে সকল হারমকে মানুষ হালকা মনে করে (রাজশাহী: হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ২০১৩), পৃ: ৫৪।
[15]. মুসলিম হা/১০২; মিশকাত হা/২৮৬০।
[16]. মুসলিম, মিশকাত হা/৯৪৭ ‘তাশাহুদ’ অধ্যায়।
[17]. বুখারী হা/৬১৫, মুসলিম হা/৪৩৭, মিশকাত হা/৬২৮ ‘ছালাতের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ।