সীমালংঘন ও দুনিয়াপূজা : জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার দুই প্রধান কারণ

পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ । পর্ব ৭ ।  শেষ পর্ব । 

মহান আল্লাহর অগণিত সৃষ্টির মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠতম। আর মানুষের প্রয়োজনেই জগতের অনেক কিছু সৃষ্টি করা হয়েছে। উদ্দেশ্য, আল্লাহ প্রদত্ত নে‘মত ভোগ করে মানুষ নে‘মতদাতার শুকরিয়া আদায় করবে। তাঁর নির্দেশিত পথে চলবে। জান্নাত থেকে নেমে আসা মানুষ পুনরায় জান্নাতে ফিরে যাবে। সে লক্ষ্যেই তার সামগ্রিক জীবনের সমস্ত প্রচেষ্টা নিয়োজিত করবে। কিন্তু না, মানুষ উল্টো পথে চলতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। যেখানে নিষেধাজ্ঞা সেখানেই মানুষের পদচারণা অহর্নিশ। যেটা হারাম তার প্রতিই মানুষের ঝোঁক বেশী। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পাপীদের সংখ্যা, বিষাক্ত হচ্ছে সমাজ, দীর্ঘ হচ্ছে জাহান্নামীদের সারি। অথচ রাসূল (ছাঃ)-এর নবুঅতি যিন্দেগীর সাধনা ছিল উম্মাতকে জাহান্নামের হুতাশন থেকে রক্ষা করা। তিনি বলেন, أَنَا آخِذٌ بِحُجَزِكُمْ عَنِ النَّارِ، هَلُمَّ عَنِ النَّارِ، هَلُمَّ عَنِ النَّارِ فَتَغْلِبُونِي تَقَحَّمُونَ فِيهَا ‘আমি জাহান্নাম থেকে রক্ষার জন্য তোমাদের কোমরবন্ধ ধরে রাখি (এবং বলি,) জাহান্নাম থেকে দূরে থাক, জাহান্নাম থেকে দূরে থাক। কিন্তু তোমরা আমাকে ছাড়িয়ে জাহান্নামে ঢুকে পড়ছ’।[1]

প্রশ্ন হচ্ছে- কেন মানুষ জাহান্নামে যাবে? কি কারণে? কোন্ সে বস্ত্ত, যার মোহ তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করতে পারছে না? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সূরা নাযে‘আতে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার দু’টি প্রধান কারণ তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন,فَأَمَّا مَنْ طَغَى وَآثَرَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا- فَإِنَّ الْجَحِيمَ هِيَ الْمَأْوَى- ‘অতঃপর যে সীমালংঘন করেছে এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম’ (নাযেআত ৭৯/৩৭-৩৯)। অর্থাৎ (১) সীমালংঘন ও (২) দুনিয়ার মোহ বা দুনিয়াপূজা, এ দু’টিই হচ্ছে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার প্রধানতম কারণ। আর এ দু’টি কারণের মধ্যে লুক্কায়িত আছে আরো অনেক বিষয়। আমরা যেহেতু জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চাই এবং জান্নাতে যাওয়ার উদগ্র বাসনা নিয়ে ইবাদত-বন্দেগী করে থাকি সেকারণ আমাদেরকে উক্ত দু’টি বিষয়ের আদ্যোপান্ত ওয়াকিফহাল থাকা আবশ্যক। আলোচ্য নিবন্ধে আমরা উক্ত বিষয়ে আলোকপাত করার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।-

এক- সীমালংঘন

আরবী طغى শব্দের অর্থ হচ্ছে সীমালংঘন বা সীমা অতিক্রম করা। تَجَاوَزَ الْحَدَّ فِي الْعِصْيَانِ ‘অবাধ্যতার মাধ্যমে সীমা অতিক্রম করা’ (কুরতুবী)। جاوز الحدَّ في الكفر والعصيان ‘কুফরী ও অবাধ্যতার মাধ্যমে সীমা অতিক্রম করা’ (ছাফওয়াতুত তাফাসীর)। উক্ত শব্দটি কুরআনুল কারীমের অন্যান্য স্থানেও এসেছে। যেমন- আল্লাহ বলেন,اذْهَبَا إِلَى فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَى، فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا لَعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى- ‘তোমরা দু’জন ফিরআউনের নিকটে যাও, কেননা সে সীমালংঘন করেছে। তোমরা তার সাথে নম্র কথা বল। হয়তোবা সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে’ (ত্বোয়াহা ২০/৪৩-৪৪)। এখানো ‘ত্বাগা’ দ্বারা কুফরী বা অস্বীকৃতি বুঝানো হয়েছে। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَى، مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغَى- ‘যখন বৃক্ষটিকে আচ্ছাদিত করে রেখেছিল যা তাকে আচ্ছাদিত করে, এতে তার দৃষ্টি বিভ্রম ঘটেনি বা তা সীমালংঘনও করেনি’ (নাজম ৫৩/১৬-১৮)। إِنَّا لَمَّا طَغَى الْمَاءُ حَمَلْنَاكُمْ فِي الْجَارِيَةِ، ‘যখন পানি সীমা অতিক্রম করল বা উথলে উঠল, তখন আমরা তোমাদেরকে (নূহের) কিশতীতে আরোহণ করালাম’ (আল-হা-ক্কবাহ ৬৯/১১)। অর্থাৎ সীমাতিক্রম করা, সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া বা সীমালংঘন করা ইত্যাদি অর্থে শব্দটি ব্যবহৃত হয়। পরিভাষায় ‘ত্বাগা’ হচ্ছে ধর্মীয় ও বৈষয়িক জীবনে শরী‘আত নির্দেশিত বিধিনিষেধ অমান্য করে নিজের খেয়াল-খুশী মত চলা।

সীমালংঘনের ধরন :

আমরা মহান আল্লাহর অতি ক্ষুদ্র ও দুর্বলতম সৃষ্টি। আমাদের সবকিছুতেই সীমাবদ্ধতা আছে। জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, জানার সীমাবদ্ধতা, কর্মক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, শক্তিমত্তার সীমাবদ্ধতা, নেতৃত্ব-কর্তৃত্বের সীমাবদ্ধতা, আরো কত কি? অথচ সকল সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে যিনি, সকল শক্তির অাঁধার যিনি, যিনি মুখাপেক্ষীহীন, যাঁর জ্ঞানের বাইরে একটি পত্রপল্লবও ঝরে পড়ে না, যিনি জীবন-মৃত্যুর মালিক; তিনি মানব কল্যাণে যে বিধান দিয়েছেন, আক্বীদা-আমলের যে নির্দেশনা বিধিবদ্ধ করেছেন, চলন-বলন, উঠা-বসা ও জীবন পরিচালনার যে সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তা অস্বীকার ও অবাধ্যতা করাই হচ্ছে সীমালংঘন। মানব জীবনে এমন বহু বিষয় রয়েছে, যেগুলোতে সীমালংঘন করা হয়। ধর্মে ও কর্মে, পারিবারিক ও সামাজিক পরিমন্ডলে, চাকরী-বাকরী, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় চলে অবিরাম সীমালংঘন। যার পরিণতি ভয়াবহ। নিম্নে সীমালংঘনের উল্লেখযোগ্য কিছু দিক তুলে ধরা হ’ল।-

(১) ঈমানের ক্ষেত্রে সীমালংঘন :

আল্লাহ বলেন, يَاأَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمُ الرَّسُولُ بِالْحَقِّ مِنْ رَبِّكُمْ فَآمِنُوا خَيْرًا لَكُمْ وَإِنْ تَكْفُرُوا فَإِنَّ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَكَانَ اللهُ عَلِيمًا حَكِيمًا، ‘হে মানবজাতি! তোমাদের নিকট রাসূল এসেছেন সত্য সহকারে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ হ’তে। অতএব তোমরা তাঁর উপর ঈমান আনয়ন কর, তোমাদের কল্যাণের জন্য। আর যদি অবিশ্বাস কর, তবে (মনে রেখ) নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর। বস্ত্ততঃ আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়’ (নিসা ৪/১৭০)। তিনি বলেন,فَآمِنُوا بِاللهِ وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللهِ وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ، ‘অতএব তোমরা ঈমান আনয়ন কর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর, যিনি নিরক্ষর নবী। যিনি বিশ্বাস স্থাপন করেছেন আল্লাহ ও তাঁর বাণী সমূহের উপর। তোমরা তার অনুসরণ কর যাতে তোমরা সুপথপ্রাপ্ত হ’তে পার’ (আ‘রাফ ৭/১৫৮)। স্বীয় রাসূলকে নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন,قُلْ يَاأَيُّهَا النَّاسُ إِنَّمَا أَنَا لَكُمْ نَذِيرٌ مُبِينٌ، فَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ- ‘বল, হে মানবজাতি! আমি তোমাদের জন্য স্পষ্ট সতর্ককারী বৈ কিছুই নই। অতএব যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্মসমূহ সম্পাদন করে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা’ (হজ্জ ২২/৪৯-৫০)

উপরোক্ত আয়াতগুলোতে মহান আল্লাহ মানবজাতিকে ঈমান আনার নির্দেশ প্রদান করেছেন। আরো বহু আয়াতে একই মর্মে আহবান জানানো হয়েছে। নবী-রাসূলগণের সকলেরই প্রথম দাওয়াত ছিল ঈমানের। অতঃপর আমলের। অর্থাৎ আগে বিশ্বাস, পরে কর্ম। কেননা ইবাদতের পূর্বশর্ত হচ্ছে ঈমান। ঈমানহীন আমলের কোন গুরুত্ব নেই। অনুরূপভাবে আমল বিনে ঈমানও মূল্যহীন। পৃথিবীর দিকভ্রান্ত ও ঈমানহীন মানবতাকে ঈমানের নূরে আলোকিত করার জন্যই যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ প্রেরিত হয়েছিলেন। তাঁরা তাদের অবিরাম মেহনত-মুজাহাদা কাজে লাগিয়েছেন ঈমানের পিছনে। তারপরও দুনিয়ার বিবেচনায় অনেক নবী সফলতা লাভ করতে পারেননি। যদিও রিসালাতের দায়িত্ব পালনে কোন নবীই ব্যর্থ ছিলেন না। ফলে লোকেদের ঈমানহীনতা ও অবাধ্যতার কারণে বিগত যুগে বহু কওমকে আসমানী গযবে ধ্বংস করা হয়েছে। নূহ (আঃ) সাড়ে নয়শত বছরের দীর্ঘ হায়াত পেয়ে দিনে-রাতে প্রকাশ্যে-গোপনে দাওয়াত দিয়ে যখন ব্যর্থ হ’লেন তখন আল্লাহর কাছে তার অবাধ্য কওম সম্পর্কে ফায়ছালা কামনা করলেন (শু‘আরা ২৬/১১৮)। আল্লাহ তখন প্লাবন দিয়ে গোটা কওমকে ডুবিয়ে মারলেন। এমনকি নূহ (আঃ)-এর অবাধ্য ছেলেও রেহাই পেল না (হূদ ১১/৩৮-৪৩)। ঈমানের ক্ষেত্রে সীমালংঘন তথা ঈমানহীনতা ও অবাধ্যতার কারণেই তাদের এই করুণ পরিণতি হয়েছিল।

উল্লেখ্য যে, হৃদয়ে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়নের সমন্বিত রূপ হচ্ছে ঈমান। যা আনুগত্যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় ও অবাধ্যতায় হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। বিশ্বাস হ’ল মূল ও কর্ম হ’ল শাখা। এটিই হচ্ছে ঈমানের প্রকৃত পরিচয়। কিন্তু ঈমানের ক্ষেত্রে ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণকারী বড় দু’টি বিভ্রান্ত ফিরক্বা হচ্ছে- খারেজী ও মুর্জিয়া। খারেজিরা বিশ্বাস, স্বীকৃতি ও কর্ম তিনটিকেই ঈমানের মূল হিসাবে গণ্য করে। ফলে তাদের মতে কবীরা গোনাহগার ব্যক্তি কাফের ও চিরস্থায়ী জাহান্নামী। যুগে যুগে সকল চরমপন্থী ভ্রান্ত মুসলমান এই মতের অনুসারী। এরাই হযরত আলী (রাঃ)-কে কাফের বলেছিল ও তাঁর রক্ত হালাল মনে করে তাঁকে হত্যা করেছিল। পক্ষান্তরে মুর্জিয়ারা কেবলমাত্র বিশ্বাস অথবা বিশ্বাস ও স্বীকৃতিকে ঈমানের মূল হিসাবে গণ্য করে। যার কোন হ্রাস-বৃদ্ধি নেই। তাদের মতে আমল ঈমানের অংশ নয়। আমলের ক্ষেত্রে সকল যুগের শৈথিল্যবাদী ভ্রান্ত মুসলমান এই আক্বীদার অনুসারী। খারেজী ও মুর্জিয়া দুই চরমপন্থী ও শৈথিল্যবাদী আক্বীদার মধ্যবর্তী হ’ল আহলেসুন্নাত ওয়াল জামা‘আত তথা আহলেহাদীছের আক্বীদা। যাদের নিকটে বিশ্বাস ও স্বীকৃতি হ’ল মূল এবং কর্ম হ’ল শাখা।[2] সুতরাং ঈমানহীনতা যেমন সীমালংঘন তেমনি ঈমানের অপব্যাখ্যা বা মনগড়া ব্যাখ্যাও সীমালংঘন।

এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে, ঈমানের ৬টি ভিত্তির কোন একটি সম্পর্কে সামান্যতম সন্দেহ পোষণ করলে আর ঈমান থাকবে না। ভিত্তি ছয়টি হচ্ছে- ১. আল্লাহর উপরে ঈমান ২. তাঁর ফিরিশতাগণের উপরে ঈমান ৩. আল্লাহপ্রেরিত কিতাব সমূহের উপরে ঈমান ৪. তাঁর রসূলগণের উপরে ঈমান ৫. বিচার দিবসের উপরে ও ৬. তাক্বদীরের ভাল-মন্দের উপরে ঈমান’।

(২) আক্বীদার ক্ষেত্রে সীমালংঘন :

‘আক্বীদা’ শব্দটি اَلْعُقْدَةٌ (উকদাতুন) শব্দমূল হ’তে উদ্গত। আভিধানিক অর্থ বন্ধন বা গিরা। পরিভাষায় সেই সুদৃঢ় বিশ্বাসকে আক্বীদা বলা হয়, যাকে ধারণ করে মানুষের জীবন পরিচালিত হয়। সঠিক আক্বীদা পোষণ করা ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা বিশুদ্ধ আক্বীদা ব্যতীত কোন আমল গ্রহণযোগ্য নয়। আক্বীদাভ্রষ্ট আমলকারীদের সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,يَخْرُجُ فِيكُمْ قَوْمٌ تَحْقِرُونَ صَلاَتَكُمْ مَعَ صَلاَتِهِمْ، وَصِيَامَكُمْ مَعَ صِيَامِهِمْ، وَعَمَلَكُمْ مَعَ عَمَلِهِمْ، وَيَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لاَ يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ، يَمْرُقُونَ مِنَ الدِّينَ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ- ‘শেষ যামানায় এমন সব লোকের আগমন ঘটবে, যাদের ছালাতের তুলনায় তোমাদের ছালাতকে, তাদের ছিয়ামের তুলনায় তোমাদের ছিয়ামকে এবং তাদের আমলের তুলনায় তোমাদের আমলকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা কুরআন পাঠ করবে, কিন্তু তা তাদের কন্ঠনালী অতিক্রম করবে না। এরা দ্বীন (ইসলাম) থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমনভাবে নিক্ষিপ্ত তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়’।[3]

দুর্ভাগ্য যে, আমরা যে মহান প্রভুর সান্নিধ্যে আমাদের উন্নত ললাট অবনমিত করি, যে রাজাধিরাজের হুযূরে যাবতীয় আবেদন-নিবেদন পেশ করি সে মহান স্রষ্টা সম্পর্কে এবং তাঁর প্রেরিত রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ) সম্পর্কে আমাদের অধিকাংশের আক্বীদা দুরস্ত নয়। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আজ ভ্রান্ত আক্বীদার সয়লাব। আমাদের কোমলমতি সোনামণিদেরকেও শেখানো হচ্ছে ভুল আক্বীদা। এমনকি সরকারী বই-পুস্তকের চিত্র আরও করুণ। আরেকদল তো রাসূলের মেকি আশেক সেজে যাচ্ছেতাই করে বেড়াচ্ছে। এরা আপাদমস্তক শিরক-বিদ‘আতে নিমজ্জিত। এরা নিজেরা যেমন আখেরাত হারাচ্ছে, তেমনি হাযার হাযার ভক্তেরও আখেরাত নষ্ট করছে। সুতরাং বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ না করে অশুদ্ধ বা বাতিল আক্বীদা পোষণ করাই হচ্ছে আক্বীদার ক্ষেত্রে সীমালংঘন। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হ’ল-

(ক) আল্লাহ সম্প©র্ক আক্বীদা :

এ প্রসঙ্গে দু’টি ভ্রান্ত আক্বীদা সমাজে চালু আছ। তা হচ্ছে- (১) আল্লাহ নিরাকার ও (২) তিনি সর্বত্র বিরাজমান। বিশুদ্ধ দলীলের আলোকে আমরা এই ভ্রান্ত আক্বীদার অসারতা প্রমাণ করব ইনাশাআল্লাহ।-

(১) আল্লাহ নিরাকার : মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযিকদাতা, জীবন ও মৃত্যুদাতা। তিনি তাঁর নিজের সম্পর্কে কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা দিয়েছেন। এ বিষয়ে ছহীহ হাদীছ থেকেও সুস্পষ্ট বিবরণ পাওয়া যায়। অতএব আল্লাহ সম্পর্কে ধারণাপ্রসূত কোন অশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করা নিঃসন্দেহে সীমালংঘন। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে তাঁর বিভিন্ন অঙ্গের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি শুনেন, দেখেন, কথা বলেন। তাঁর হাত, পা, চেহারা, চোখ ইত্যাদি আছে। তবে তাঁর সাথে কোন কিছুই তুলনীয় নয়। যেমন আল্লাহ বলেন, لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ- ‘তার কোন দৃষ্টান্ত নেই, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’ (শূরা ১১)।فَلَا تَضْرِبُوا لِلَّهِ الْأَمْثَالَ، ‘তোমরা আল্লাহর জন্য কোন দৃষ্টান্ত স্থাপন করো না’ (নাহল ১৬/৭৪)

আল্লাহর হাত : আল্লাহর হাত সম্পর্কে কুরআনী বর্ণনা হচ্ছে-

وَقَالَتِ الْيَهُودُ يَدُ اللهِ مَغْلُولَةٌ غُلَّتْ أَيْدِيهِمْ وَلُعِنُوا بِمَا قَالُوا بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوطَتَانِ- ‘ইহুদীরা বলে, আল্লাহর হাত মুষ্টিবদ্ধ। বরং তাদের হাতগুলিই বদ্ধ হয়ে আছে। তাদের এই কথার দরুণ তারা অভিশপ্ত হয়েছে। বরং তাঁর দু’হাত প্রসারিত’ (মায়েদা ৫/৬৪)। আল্লাহ বলেন,قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ أَسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنْتَ مِنَ الْعَالِيْنَ- ‘আল্লাহ বললেন, হে ইবলীস! আমি যাকে আমার দু’হাত দিয়ে সৃষ্টি করেছি, তাকে সিজদা করতে কোন্ বস্ত্ত তোমাকে বাধা দিল? তুমি কি অহংকার করলে, নাকি তুমি তার চাইতে বড় হয়ে গেলে?’ (ছোয়াদ ৩৮/৭৫)। আল্লাহ আরো বলেন,وَمَا قَدَرُوا اللهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالْأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّمَاوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ- ‘বস্ত্ততঃ তারা আল্লাহর মর্যাদা যথার্থভাবে উপলব্ধি করেনি। অথচ ক্বিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবীকে আমি হাতের মুঠোয় নেব এবং আকাশমন্ডলী থাকবে তাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা অবস্থায়। তিনি মহা পবিত্র এবং যাদেরকে তারা শরীক করে, তাদের থেকে তিনি বহু ঊর্ধ্বে’ (যুমার ৩৯/৬৭)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يَدُ اللهِ فَوْقَ أَيْدِيْهِمْ ‘আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর’ (ফাতহ ১০)

ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِنَّ اللهَ يَقْبِضُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْأَرْضَ وَتَكُوْنُ السَّمَاوَاتُ بِيَمِيْنِهِ ثُمَّ يَقُوْلُ أَنَا الْمَلِكُ- ‘আললাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবীকে তাঁর মুঠোতে ধারণ করবেন এবং সমস্ত আকাশকে স্বীয় ডান হাতে গুটিয়ে নিয়ে বলবেন, আমিই একমাত্র বাদশাহ’।[4]

আবূ মূসা (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللَّيْلِ لِيَتُوبَ مُسِىءُ النَّهَارِ وَيَبْسُطُ يَدَهُ بِالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِىءُ اللَّيْلِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا-নিশ্চয়ই আল্লাহ রাত্রিকালে তাঁর হাত প্রসারিত করেন, দিনে যারা পাপ করেছে তাদের তওবা কবুল করার জন্য এবং দিনের বেলা হাত প্রসারিত করেন, রাত্রিকালীন অপরাধীদের তওবা কবুল করার জন্য[5] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ وَلاَ يَقْبَلُ اللهُ إِلاَّ الطَّيِّبَ وَإِنَّ اللهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِينِهِ، ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ كَمَا يُرَبِّى أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الْجَبَلِ- ‘যে ব্যক্তি তার পবিত্র উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ দান করে, আর আল্লাহ পবিত্র ব্যতীত গ্রহণ করেন না, নিশ্চয়ই আল্লাহ সেটি তাঁর ডান হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর সেটি দানকারী ব্যক্তির জন্য লালনপালন করে (বৃদ্ধি করতে থাকেন) যেমনভাবে তোমাদের কেউ তার ঘোড়ার বাচ্চাকে প্রতিপালন করে। এমনকি ঐ দানটি (নেকীতে) পাহাড়ের সমান হয়ে যায়[6]

আল্লাহর পা : এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَيُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ فَلَا يَسْتَطِيعُونَ- ‘(স্মরণ কর) যেদিন পায়ের নলা উন্মোচিত করা হবে এবং তাদেরকে সিজদা করার আহবান জানানো হবে। কিন্তু তারা তাতে সক্ষম হবে না’ (ক্বলম ৬৮/৪২)

আবূ সাঈদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, يَكْشِفُ رَبُّنَا عَنْ سَاقِهِ فَيَسْجُدُ لَهُ كُلُّ مُؤْمِنٍ وَمُؤْمِنَةٍ، وَيَبْقَى مَنْ كَانَ يَسْجُدُ فِى الدُّنْيَا رِئَاءً وَسُمْعَةً، فَيَذْهَبُ لِيَسْجُدَ فَيَعُودُ ظَهْرُهُ طَبَقًا وَاحِدًا- ‘আমাদের প্রতিপালক যখন তাঁর পায়ের নলা উন্মোচিত করবেন, তখন ঈমানদার নারী ও পুরুষ সবাই তাঁকে সিজদা করবে। কিন্তু যারা দুনিয়াতে লোকদেখানো ও প্রচারের জন্য সিজদা করত, তারা বাকী থাকবে। তারা সিজদা করতে যাবে, কিন্তু তাদের পিঠ একখন্ড কাঠের ন্যায় শক্ত হয়ে যাবে’।[7]

আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَ يَزَالُ يُلْقَى فِيهَا وَتَقُولُ هَلْ مِنْ مَزِيدٍ حَتَّى يَضَعَ فِيهَا رَبُّ الْعَالَمِينَ قَدَمَهُ فَيَنْزَوِى بَعْضُهَا إِلَى بَعْضٍ، ثُمَّ تَقُولُ قَدْ قَدْ بِعِزَّتِكَ وَكَرَمِكَ- ‘জাহান্নামীদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হ’তে থাকবে। তখন জাহান্নাম বলতে থাকবে আরো অধিক আছে কি? অবশেষে আল্লাহ রাববুল আলামীন তাঁর পা জাহান্নামে রাখবেন। তখন এর এক অংশ আরেক অংশের সাথে মিলিত হয়ে যাবে এবং বলবে, আপনার ইয্যত ও সম্মানের কসম! যথেষ্ট হয়েছে’।[8]

আল্লাহর চোখ, দর্শন ও শ্রবণ : আল্লাহ তা‘আলা বলেন,إِنَّ اللهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ، ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’ (হজ্জ ২২/৭৫)। মূসা (আঃ)-এর মা আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলহাম প্রাপ্ত হয়ে মূসার জন্মের পর তাকে সিন্ধুকে ভরে যখন নদীতে ফেলে দিল তখন আল্লাহ বললেন,وَأَلْقَيْتُ عَلَيْكَ مَحَبَّةً مِنِّي وَلِتُصْنَعَ عَلَى عَيْنِي، ‘আর (হে মূসা) আমি তোমার উপর আমার পক্ষ হ’তে মহববত ঢেলে দিয়েছিলাম (যাতে তোমাকে দেখে শত্রু দুর্বল হয়ে পড়ে) এবং যাতে তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হও’ (ত্বোয়াহা ২০/৩৯)। নূহ (আঃ)-এর মহাপ্লাবনের সময় নূহ ও তাঁর সঙ্গীদের কিশতিতে আরোহন প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,وَحَمَلْنَاهُ عَلَى ذَاتِ أَلْوَاحٍ وَدُسُرٍ تَجْرِي بِأَعْيُنِنَا جَزَاءً لِمَنْ كَانَ كُفِرَ، ‘আর আমরা নূহকে উঠালাম কাঠ ও পেরেক নির্মিত এক নৌযানে। যা আমাদের চোখের সামনে চলতে থাকল। এটি ছিল বদলা ঐ ব্যক্তির জন্য যাকে অস্বীকার করা হয়েছিল (অর্থাৎ নূহের জন্য)’ (ক্বামার ৫৪/১৩-১৪)। আল্লাহ তা‘আলা মূসা ও হারূণ (আঃ)-কে লক্ষ্য করে বলেন, لاَ تَخَافَا إِنَّنِيْ مَعَكُمَا أَسْمَعُ وَأَرَى ‘তোমরা ভয় করো না, আমি তো তোমাদের সঙ্গে আছি, আমি শুনি ও আমি দেখি’ (ত্বোহা ২০/৪৬)

আল্লাহর চেহারা : এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ- ‘ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে, সবই ধ্বংসশীল। কেবল অবশিষ্ট থাকবে তোমার প্রতিপালকের চেহারা। যিনি প্রতিপত্তি ও সম্মানের অধিকারী’ (আর-রহমান ৫৫/২৬-২৭)

আল্লাহর সাক্ষাৎ : আল্লাহ বলেন, وُجُوْهٌ يَّوْمَئِذٍ نَّاضِرَةٌ، إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ، ‘সেদিন অনেক মুখমন্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে’ (ক্বিয়ামাহ ২২, ২৩)। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ عِيَانًا ‘শীঘ্রই তোমাদের প্রতিপালককে তোমরা চাক্ষুসভাবে দেখতে পাবে’।[9]

লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ‘ক্বিয়ামতের দিন কি আমরা আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাব? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উত্তরে বললেন, পূর্ণিমা রাতে চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কোন কষ্ট হয়? তারা বলল, না, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি আরো বললেন, যখন আকাশ মেঘশূন্য ও সম্পূর্ণ পরিষ্কার থাকে তখন সূর্য দেখতে কি তোমাদের কোন কষ্ট হয়? উত্তরে তারা বলল, জ্বী না। তখন তিনি বললেন, এভাবেই তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে।[10]

ছুহায়েব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেন, জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, তোমাদের জন্য আমি আরো কিছু বৃদ্ধি করে দেই এটা কি তোমরা চাও? তারা উত্তরে বলবে, আপনি কি আমাদের মুখমন্ডল উজ্জ্বল করেননি, আমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাননি এবং জাহান্নাম হ’তে রক্ষা করেননি? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অতঃপর পর্দা সরে যাবে। তখন জান্নাতীদের দৃষ্টি তাদের প্রতিপালকের প্রতি পতিত হবে এবং তাতে তারা যে আনন্দ পাবে তা অন্য কিছুতেই পাবে না’। এই দীদারই হবে তাদের নিকটে সবচেয়ে প্রিয়। এটাকেই অতিরিক্ত বলা হয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিম্নের আয়াতটি পাঠ করেন, لِلَّذِيْنَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَى وَزِيَادَةٌ، ‘সৎ কর্মশীলদের জন্য রয়েছে জান্নাত এবং তার চেয়েও বেশী’ (ইউনুস ২৬)[11]

আল্লাহর কথা বলা : আল্লাহ মূসা (আঃ)-এর সাথে কথা বলেছেন। সূরা নিসায় উদ্বৃত হয়েছে, وَكَلَّمَ اللهُ مُوسَى تَكْلِيمًا ‘আর আল্লাহ মূসার সঙ্গে সরাসরি (পর্দার অন্তরাল থেকে) কথা বলেছেন’ (নিসা ৪/১৬৪)। আল্লাহ বলেন,وَلَمَّا جَاءَ مُوسَى لِمِيقَاتِنَا وَكَلَّمَهُ رَبُّهُ قَالَ رَبِّ أَرِنِي أَنْظُرْ إِلَيْكَ قَالَ لَنْ تَرَانِي- ‘অতঃপর যখন মূসা আমাদের নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে গেল এবং তার প্রভু তার সাথে কথা বললেন তখন সে বলল, হে প্রভু! আমাকে দেখা দাও, আমি তোমাকে দেখব। তিনি বললেন, তুমি কখনোই আমাকে দেখতে পাবে না’ (আ‘রাফ ৭/১৪৩)। উল্লেখ্য, এখানে আল্লাহ لَنْ تَرَانِىْ দ্বারা দুনিয়াতে না দেখার কথা বলেছেন, আখেরাতে নয়। কারণ বিশুদ্ধ দলীল দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আখেরাতে মুমিন বান্দাগণ আল্লাহকে দেখতে পাবে। মূসা (আঃ) আল্লাহকে দুনিয়াতে দেখতে চেয়েছিলেন। অথচ দুনিয়ার এই চোখ দ্বারা আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয়।

আল্লাহর হাসি : রাসূল (ছাঃ) বলেন, يَضْحَكُ اللهُ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى إِلَى رَجُلَيْنِ يَقْتُلُ أَحَدُهُمَا الْآخَرَ يَدْخُلاَنِ الْجَنَّةَ، يُقَاتِلُ هَذَا فِيْ سَبيْلِ اللهِ فَيُقْتَلُ، ثُمَّ يَتُوْبُ اللهُ عَلَى القَاتِلِ فَيُسْتَشْهَدُ- ‘আল্লাহ তা‘আলা দু’ব্যক্তির কর্ম দেখে হাসেন। এদের একজন অপরজনকে হত্যা করে। অবশেষে তারা উভয়ে


জানণাতে প্রবেশ করে। একজন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে নিহত হয়। অতঃপর হত্যাকারী আল্লাহর নিকট তওবা করে। এরপর সেও শাহাদত বরণ করে’।[12]

উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা সুস্পষ্ট হয় যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার নিজস্ব আকার আছে। যা কারো সাথে তুলনীয় নয়। তাঁর হাত, পা, চোখ, কান, চেহারা ইত্যাদি অঙ্গ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বর্ণনা অনুযায়ী আমাদের ঈমান আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভিন্ন আক্বীদা পোষণ করা হবে আক্বীদার ক্ষেত্রে সীমালংঘন।

[ক্রমশঃ]


[1]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৯

[2]. ফিরক্বা নাজিয়াহ, (হা.ফা.বা. প্রকাশনা ৪র্থ প্রকাশ ২০২২), পৃ: ২৪-২৫

[3]. ছহীহ বুখারী হা/৫০৫৮; মিশকাত হা/৫৮৯৪

[4]. বুখারী হা/৭৪১২।

[5]. ছহীহ মুসলিম হা/৭১৬৫ ‘তওবা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫

[6]. বুখারী হা/১৪১০ ‘যাকাত’ অধ্যায়।

[7]. বুখারী হা/৪৯১৯ ‘তাফসীর’ অধ্যায়

[8]. ছহীহ বুখারী হা/৭৩৮৪ ‘তাওহীদ’ অধ্যায়

[9]. বুখারী হা/৭৪৩৫ ‘তাওহীদ’ অধ্যায়।

[10]. বুখারী হা/৭৪৩৭ ‘তাওহীদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৪।

[11]. মুসলিম হা/১৮১ ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮০।

[12]. বুখারী, হা/২৮২৬ ‘জিহাদ ও সিয়ার’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৮।






আদল : মানব জীবনের এক মহৎ গুণ - ড. মুহাম্মাদ আজিবার রহমান
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত (৩য় কিস্তি) - মুযাফফর বিন মুহসিন
দাস মুক্ত করার ন্যায় ফযীলতপূর্ণ আমল সমূহ - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
বিতর্কের ক্ষেত্রে করণীয়-বর্জনীয় (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মুসলিম সমাজে মসজিদের গুরুত্ব (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
শবেবরাত - আত-তাহরীক ডেস্ক
ভুল সংশোধনে নববী পদ্ধতি (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
এক হাতে মুছাফাহা : একটি তাত্ত্বিক পর্যালোচনা - তানযীলুর রহমান - শিক্ষক, বাউটিয়া দাখিল মাদ্রাসা, রাজশাহী
১৬ মাসের মর্মান্তিক কারা স্মৃতি (৫ম কিস্তি) - মাওলানা মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম
আল্লাহর নিদর্শন (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
ইসলামে দাড়ি রাখার বিধান - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
জ্যোতির্বিজ্ঞানের নিরিখে যেলাসমূহের মাঝে সময়ের পার্থক্যের কারণ - তাহসীন আল-মাহী
আরও
আরও
.