সঊদী আরবের প্রিন্স আল-ওয়ালীদ বিন তালাত একজন পুরুষই বটে। তাঁর বক্তব্য, তিনি লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হতে চান না। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী যাঁরা হ’তে চান, তাঁরা সবাই এই একই কথা বলেন। কিন্তু ওয়ালীদ সত্যিই টাকার মালিক। ‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিনের হিসাব মতে, ২০০৫ সালের পর থেকে তাঁর ব্যাংক ব্যালান্স ২৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার থেকে নেমে এসেছে ১৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে। কিন্তু সম্প্রতি তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ভবন তিনি তৈরি করবেন। এক কিলোমিটার উঁচু ভবনের পাশে গত মাসে উদ্বোধন করা দুবাইয়ের ২৫ হাযার ফুট উঁচু বুর্জ খলীফা একটি বামনে পরিণত হবে। বাদশা আব্দুল­াহর ভাগ্নে আল-ওয়ালীদ তাঁর কোম্পানির মানানসই নাম রেখেছেন কিংডম হোল্ডিংস। তিনি একই সঙ্গে রুপার্ট মারডকের নতুন কোম্পানিরও শেয়ারহোল্ডার। সে কারণে এ কথাগুলো আপনি দি টাইমসে পড়তে পারবেন না। আমি বলি, দীর্ঘজীবী হোক এই কিংডম হোল্ডিংস।

গতকাল সকালে আমি আল-জাজিরা টেলিভিশনের এক রিপোর্টারকে নিয়ে আটকে পড়া, বিক্ষুব্ধ, নোংরা, ঘিঞ্জি সাব্রা এবং শাতিলা রিফিউজি ক্যাম্পের বস্তিতে গিয়েছিলাম। এ ক্যাম্প বৈরূতে আমার বাসা থেকে খুব একটা দূরে নয়। দারিদ্র্যপীড়িত পাথুরে উপত্যকায় মানুষ বাস করছে। সাব্রা এবং শাতিলা, হ্যাঁ এখানেই ১৯৮২ সালের কুখ্যাত গণহত্যা ঘটিয়েছিল লেবাননের ক্রিশ্চিয়ান মিলিশিয়া বাহিনী ইসরায়েলের সঙ্গে অাঁতাত করে। তারা ১৭ হাযার ফিলিস্তীনী বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছিল। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ক্যাম্পটিকে ঘিরে রেখে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে সে হত্যাকান্ড প্রত্যক্ষ করেছে! ১৯৪৮ সালে জাতিগত গণহত্যা থেকে যারা বেঁচে গিয়েছিলেন, তাদেরই নাতিপুতি লেবাননের গ্যালিলিতে ‘আপাতত’ আশ্রয় নিয়েছিল। ক্যাসাব­াংকা ছবির সেই ভিসাপ্রার্থীর মতো তারপর থেকে অপেক্ষা-অপেক্ষা আর অপেক্ষার পালা। এ অপেক্ষার পালা আর কখনোই তাদের শেষ হবে না।

লোহিত সাগরের বন্দর শহর জেদ্দায় নতুন টাওয়ার নির্মাণের ঘোষণা দেয়ার সময় যুবরাজ আল-ওয়ালীদ বলেন, ‘আমি খুবই আশাবাদী, আমরা সবসময় নতুন আবিষ্কারের ব্যাপারে আগ্রহী’। এখন আমি ভালই জানি, আরব উপসাগরে অনেক মানবতাপ্রেমী মানুষ আছেন, যাদের মধ্যে আল-ওয়ালীদও একজন! কিন্তু অবস্থাটা কি? আফগানিস্তান রক্তে ভাসছে; ইরাক এমন একটি রাষ্ট্র হয়ে আছে যেখানে প্রায় গৃহযুদ্ধ চলছে। ইসরায়েলীরা সমানেই আরবদের ভূমি চুরি করে চলেছে, যে সম্পত্তির মালিক শুধু আরবরাই।  আর,  প্রিন্স  আল-ওয়ালীদ  ভবন নির্মাণ করে এক কিলোমিটার ওপরে উঠতে চাচ্ছেন! যে সঊদীরা তালিবানদের অঢেল উপহার দিয়েছেন, তাদের কি সামান্যতম ধারণাও নেই যে, তাদের চারপাশে কী ঘটছে?

আমরা সবাই জানি, আমেরিকা তার জোটের দেশগুলোকে অস্ত্র সরবরাহ করে যাচ্ছে। তারা দক্ষিণ কোরিয়ায় এবং আরব উপসাগরে (সঊদী আরবে) অস্ত্রের ভান্ডার গড়ে তুলেছে। কিন্তু অতি সন্তর্পণে তারা ইসরাঈলে অস্ত্র সরবরাহও দ্বিগুণ করেছে। ৪০০ মিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৮০০ মিলিয়ন ডলার করেছে। ২০১২ সাল নাগাদ ইসরাঈলকে দেওয়া ওয়াশিংটনের উপহার ৯ বিলিয়ন ডলার অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করে বসতি স্থাপনে ব্যবহার করা হবে। বারাক ওবামা এখন নিস্তেজভাবে এ বিষয়টি এড়িয়ে যাবেন, তাঁর কিছু করার নেই। কিন্তু মোটেই  এ কথা ভাবার অবকাশ নেই যে, ইসরাঈল এটা তার সেনাবাহিনী বা বিমানবাহিনীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করবে না। ১৯৯১ সালে ইউএস মেরিন সঊদী আরবে ক্ষেপণাস্ত্র বয়ে নিয়েছিল ইরাকের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য। কিন্তু বাগদাদ-যুদ্ধে যোগদানের অংশ হিসাবে সে মিসাইল ঘটনাক্রমে ইসরাঈলের হাতে চলে যায়। পরবর্তী সময়ে এ মিসাইলই ১৯৯৬ সালে লেবাননের অ্যাম্বুলেন্সে নিক্ষেপ করে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করা হয়।

এখন নতুন করে আরবরা বিভিন্ন দিকে বাঁক নিচ্ছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, মিসরের সরকার সে দেশের এযাবতকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট (প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল স্বীকৃতিদানকালে আমেরিকা বলেছিল) ফিলিস্তীনের রাফাহকে ঘিরে দেয়াল তৈরি করছে, যাতে আটকেপড়া ফিলিস্তীনীদের হাতে খাদ্য, জ্বালানি পৌঁছতে না পারে।

ইসরাঈলের ডেপুটি ফরেন মিনিষ্টার তুরষ্কের রাষ্ট্রদূতকে চরমভাবে অপমান করেছেন তুর্কি টেলিভিশনে প্রচারিত একটি এন্টি-সেমিটিক সিরিজ নিয়ে। তিনি রাষ্ট্রদূতকে একটি নিচু সোফায় বসতে বাধ্য করেছেন। এমনকি তাঁর  সঙ্গে হাত মেলাতে পর্যন্ত অস্বীকার করেছেন। আমাদের প্রিয় বন্ধু পররাষ্ট্রমন্ত্রী মি. লিবারম্যানও একই অভ্যাস গড়ে তুলেছেন। এ নিয়ে আমেরিকার প্রতিনিধি বেচারা বৃদ্ধ জর্জ মিশেল বারবার প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও নেতানিয়াহু অপেক্ষাকৃত ভদ্রলোক; কিন্তু ইসরাঈলের এসব ঔদ্ধত্যপনা প্রমাণ করেছে যে, তারা মধ্যপ্রাচ্যের ব্যর্থ রাষ্ট্র (ব্যানানা রাজ) হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।

কিন্তু এটাই শেষ নয়। আরবের যুবরাজ, আমীর, খলীফা ও প্রেসিডেন্টরা হোটেল এবং টাওয়ার নিয়ে হয়রান হয়ে আছেন। তোমারটার চেয়ে আমার পেইন্টিংটা বড়, আমার পেনসিলটা তোমারটার চেয়ে ধারাল, রংপেনসিলটা তোমারটার চেয়ে বড়। আর বিশ্ব এই শিশুখেলার দুঃখজনক চিত্র দেখতে থাকবে করুণ চোখে। কিন্তু প্রশ্ন করতে হয়, সাব্রা ও শাতিলার শিশুদের কয়টি প্রকৃত রংপেনসিল আছে?

রবার্ট ফিস্ক

 দি ইনডিপেন্ডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি।

[সংকলিত]






বিষয়সমূহ: অর্থনীতি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় মুসলিম চেতনা - মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম, যশোর
ঈছালে ছওয়াব : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
আশূরায়ে মুহাররম - আত-তাহরীক ডেস্ক
গীবত : পরিণাম ও প্রতিকার (৩য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
মানবাধিকার ও ইসলাম (৫র্থ কিস্তি) - শামসুল আলম
আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন - মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান
সীমালংঘন ও দুনিয়াপূজা : জাহান্নামীদের দুই প্রধান বৈশিষ্ট্য (৪র্থ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
আল্লাহর সাথে আদব সমূহ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
মাদ্রাসার পাঠ্যবই সমূহের অন্তরালে (৬ষ্ঠ কিস্তি) - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সর্বনাশের সিঁড়ি - মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান
বৈঠকের আদব বা শিষ্টাচার - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
সুন্নাত আঁকড়ে ধরার ফযীলত (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান
আরও
আরও
.