পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । শেষ পর্ব ।
শিক্ষকতা :
ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) মাত্র ১৮ বছর বয়সে ১৩৪৫ হিঃ/১৯২৭ খৃষ্টাব্দে দারুল হাদীছ রহমানিয়া, দিল্লী ফারেগ হয়ে সে বছরই সেখানে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন।[1] এত অল্প বয়সে তদানীন্তন ভারতবর্ষে ইলমে দ্বীন চর্চার নাভিমূলে শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হওয়া সত্যিই বিস্ময়কর। কারণ রহমানিয়া মাদরাসা তখন ভারতবর্ষে আহলেহাদীছদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। প্রতিষ্ঠাতাদের ঐকান্তিকতা, শিক্ষকদের যোগ্যতা, শিক্ষার মান, যুগোপযোগী পাঠ্যক্রম, নিয়ম-কানূন প্রভৃতি কারণে অল্প সময়ের ব্যবধানেই ভারতবর্ষ ও বহির্বিশ্বে এ মাদরাসার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলে আধুনিক সঊদী আরবের হিজায ও নাজদ সহ অন্যান্য দেশ থেকেও ছাত্ররা এখানে পড়তে আসত।[2]
রহমানিয়া মাদরাসায় অধ্যয়নের সময় মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আতাউর রহমান ও অন্যান্য খ্যাতিমান শিক্ষকগণ তাঁর তীক্ষ্ণ মেধা, ফলাফল ও পান্ডিত্যে বিমুগ্ধ-বিমোহিত হয়েই তাঁকে শিক্ষক হিসাবে সাদরে বরণ করে নেন। মুবারকপুরীর ছাত্র জীবনের সোনালী দিনগুলো যেখানে কেটেছে, সেখানে শিক্ষকতা করার চেয়ে পরম আনন্দের আর কী হ’তে পারে!
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় দিল্লী ও অন্যান্য শহরে সৃষ্ট দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে রহমানিয়া মাদরাসার তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল ওয়াহ্হাব (প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আতাউর রহমানের ছেলে) পাকিস্তানের করাচীতে হিজরত করার কারণে মাদরাসাটি বন্ধ হয়ে যাওয়া[3] পর্যন্ত সুদীর্ঘ বিশ বছর মুবারকপুরী সেখানে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন। মাঝখানে দু’বছর আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (রহঃ)-কে তিরমিযীর ভাষ্য ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’ প্রণয়নে সহযোগিতার জন্য তিনি মুবারকপুরে অবস্থান করেন। এরপর পুনরায় স্বীয় কর্মস্থলে ফিরে পূর্বের ন্যায় পাঠ দানে মনোনিবেশ করেন।
দীর্ঘ ২০ বছরের শিক্ষকতা জীবনে তিনি ছহীহ বুখারী, ছহীহ মুসলিম, তিরমিযী, আবূদাঊদ, মুওয়াত্তা মালেক ও বুলূগুল মারাম ছাড়াও শরহে বেকায়া, শরহে মুল্লা জামী প্রভৃতি গ্রন্থ পড়ান। সাথে সাথে ফৎওয়া প্রদানও অব্যাহত থাকে।[4]
মুবারকপুরী অত্যন্ত পরিশ্রমী শিক্ষক ছিলেন। পূর্ণ প্রস্ত্ততি নিয়ে তবেই ক্লাসে যেতেন। ক্লাসের প্রস্ত্ততি নেয়ার জন্য রাত্রে তিনি গভীর অধ্যয়নের সাগরে ডুবে যেতেন নিবিষ্টচিত্তে। কখনো কখনো অধ্যয়নরত অবস্থায় ফজরের আযান হয়ে যেত। ফজরের ছালাতের পরপরই তিনি ছহীহ বুখারীর দরস দিতেন। তদীয় ছাত্র, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মাওলানা আব্দুল গাফফার হাসান রহমানী (১৯১৩-২০০৭) বলেন, ‘শায়খ ওবায়দুল্লাহ রহমানী মুওয়াত্তা মালেক-এর দরস দেয়ার জন্য যুরকানী কৃত মুওয়াত্তার শরাহ, শাহ অলিউল্লাহ দেহলভী (১৭০৩-১৭৬২) লিখিত মুওয়াত্তার ব্যাখ্যাগ্রন্থ মুসাউওয়া ও মুছাফফা ও অন্যান্য ব্যাখ্যাগ্রন্থ অধ্যয়ন করতেন এবং তাঁর সূক্ষ্ম হস্তলিপি দ্বারা টীকা-টিপ্পনী ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুওয়াত্তার হাশিয়ায় লিপিবদ্ধ করতেন’।[5]
তাঁর অন্য আরেকজন ছাত্র মুহাম্মাদ মুরতাযা বলেন, ‘দরস দেয়ার প্রস্ত্ততি গ্রহণ করার সময় তিনি যে বিষয়ে দরস দিবেন সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভের জন্য নাহু, ছরফ, ইলমুল মা‘আনী, বায়ান, তাফসীর ও অন্যান্য বিষয়ের গ্রন্থ অধ্যয়ন করতেন’।[6]
উল্লেখ্য, মুবারকপুরী দারুল হাদীছ রহমানিয়ায় শিক্ষকতাকালে তাঁর পরিবার-পরিজনকে দিল্লীতে নিয়ে যাননি। আব্দুস সালাম রহমানীকে লেখা একটি পত্রে এর কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বাইরে কর্মজীবন অতিবাহিত করার সময় পরিবার-পরিজনকে সাথে নিয়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে প্রশান্তির কারণ। কিন্তু একই সাথে তা ব্যস্ততাও বাড়িয়ে দেয়। এতে ইলমী কর্মকান্ড বিশেষতঃ অধ্যয়ন ও পাঠদানে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। এজন্য আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও দিল্লীতে অবস্থানের সময় পরিবার-পরিজনকে সাথে নিয়ে যাইনি’।[7]
এভাবে পরিপূর্ণ প্রস্ত্ততি নিয়ে ক্লাসে গিয়ে তিনি তাঁর জ্ঞান সাগরের মূল্যবান মণি-মুক্তা-পান্না ছাত্রদের মাঝে ঢেলে দিতেন এবং বইয়ের পাঠাংশের বিশদ ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে তার দুর্বোধ্যতা ও জটিলতার বদ্ধ দুয়ার উন্মোচন করতেন। ছাত্ররা পাঠদানকৃত বিষয়টি যথাযথভাবে অনুধাবন করতে সমর্থ হয়েছে- এ ধারণা বদ্ধমূল হবার পরই কেবল তিনি অন্য বিষয়ে পাঠদানে উদ্যত হ’তেন। তাঁর হাদীছ পড়ানোর নিয়ম এরূপ ছিল- প্রথমতঃ কোন একজন ছাত্র তিনটি হাদীছ পড়ত। অতঃপর তিনি হাদীছের তাখরীজ ও সনদ বর্ণনা করার পর মতন (Text) ব্যাখ্যা করতেন। হাদীছ ব্যাখ্যা করার সময় ফকীহদের মতামত ও দলীল বর্ণনা করে সঠিক মতটি উপস্থাপন করতেন। সাথে সাথে পঠিত হাদীছগুলো পরস্পর বিরোধী হ’লে তাদের মাঝে সুন্দরভাবে সমন্বয় সাধন করতেন। অবশ্য কখনো কখনো পঠিতব্য বইয়ের পাদটীকায় লিখিত নিজস্ব টীকা-টিপ্পনীর সহযোগিতা নিতেন।[8]
শরহে বেকায়াহ পড়ানোর পদ্ধতি সম্পর্কে তাঁর জনৈক ছাত্র বলেন, ‘শায়খ মুবারকপুরী আমাদেরকে শরহে বেকায়াহ-এর প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড পড়াতেন। তিনি পূর্ণ প্রস্ত্ততি নিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করতেন। প্রত্যেক বিষয়ে তিনি গভীর মনীষার অধিকারী ছিলেন বিধায় পূর্ণ যোগ্যতার সাথেই পাঠদান করতেন। তিনি বইয়ের হাশিয়ায় টীকা-টিপ্পনী ও অধ্যয়নের সারাংশ লিখতেন। পড়ানোর সময় মুচকি হাসতেন এবং ক্লাসের সকল ছাত্রের দিকে দৃষ্টি দিতেন। ছাত্ররা কতটুকু পড়া বুঝেছে তা পরখ করতেন। তিনি ফিকহের ক্লাসে হাদীছ ও সালাফে ছালেহীনের মানহাজ (পদ্ধতি) এবং হাদীছের ক্লাসে মুহাদ্দিছগণের মতামত বিশেষ করে হাফেয ইবনু হাজার আসকালানীর (৭৭৩-৮৫২ হিঃ) মতামত ও দলীলাদি উল্লেখ করতেন’।[9]
মাওলানা আব্দুল গাফফার হাসান রহমানী বলেন, ‘শায়খ মুবারকপুরী ইলমে হাদীছে পূর্ণ দক্ষতা রাখতেন। ভগ্নস্বাস্থ্য সত্ত্বেও তিনি পূর্ণ প্রস্ত্ততি নিয়ে গুরুত্বের সাথে দরস দিতেন। তিনি ছাত্রদের নিকট শারঈ ও বুদ্ধিবৃত্তিক দলীল উপস্থাপন করে তাদের তথ্যভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতেন ও জ্ঞানতৃষ্ণা নিবারণ করতেন। তিনি উপকারী তথ্যাবলী একত্রিত করে ক্লাসে উপস্থাপন করতেন।[10]
তাঁর হাদীছের দরসের দারুণ খ্যাতি ছিল। ফলে তাঁর কাছ থেকে এ বিষয়ে বিশেষ করে ছহীহ বুখারী, আবূদাঊদ ও তিরমিযীর দরস গ্রহণ করার জন্য দারুল হাদীছের ছাত্ররা ছাড়াও অন্যান্য মাদরাসার শিক্ষক ও শায়খুল হাদীছরাও উপস্থিত হতেন।[11] তাঁর দরসে যে সকল প্রথিতযশা আলেম উপস্থিত হ’তেন তাঁদের মধ্যে ‘তারাজিমে ওলামায়ে হাদীছ হিন্দ’ গ্রন্থের লেখক ইমাম খান নওশাহরাবী[12] ও মাওলানা আব্দুল হাসান নাদভী (হানাফী) অন্যতম। ইমাম খান নওশাহরাবী মাঝে-মধ্যে দারুল হাদীছ পরিদর্শন করতেন এবং মুবারকপুরীর দরসে বসতেন।[13]
‘সীরাতে সাইয়িদ আহমাদ শহীদ’ গ্রন্থের লেখক আব্দুল হাসান নাদভী (১৯১৪-২০০০) বলেন, ‘যখন শায়খ মুবারকপুরী দিল্লীতে হাদীছ পাঠদানের বরকতমন্ডিত কাজে মশগুল ছিলেন, তখন আমি তাঁর দরসে উপস্থিত হয়ে খুবই সৌভাগ্যবান ও আনন্দিত হয়েছি এবং তাঁর জ্ঞানের গভীরতা, সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গি ও ইলমে হাদীছে অপরিসীম যোগ্যতা অনুধাবন করেছি’।[14]
ছাত্রমন্ডলী :
সুদীর্ঘ ২০ বছরের শিক্ষকতা জীবনে ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরীর কাছে অসংখ্য ছাত্র দরস গ্রহণ করেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কতিপয় ছাত্র হচ্ছেন-
১. মাওলানা আব্দুর রউফ ঝান্ডানগরী : মাওলানা আব্দুর রউফ বিন নে‘মাতুল্লাহ বিন মোতী খান বিন বখতিয়ার খান নেপালের কপিলবস্ত্ত যেলার ঝান্ডানগর হ’তে ২০ কিলোমিটার উত্তরে কাদারবাটুয়া গ্রামের এক হানাফী আলেম পরিবারে ১৯১০ খৃষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। গৃহশিক্ষক মিয়াঁ মালেক আলীর কাছে পাঠ গ্রহণ শেষে তিনি পিতার প্রতিষ্ঠিত ঝান্ডানগর মাদরাসায় ভর্তি হন। এখানে মাওলানা খলীল আহমাদ বিসকূহারীর নিকটে মীযান, মুনশা‘আব পড়েন। অতঃপর বেনারসের মদনপুরা মাদরাসায় ভর্তি হয়ে মাওলানা মুনীর আহমাদের ছাত্রত্ব গ্রহণ করেন। এখানে অধ্যয়নরত অবস্থায় মায়ের অসুখের খবর পেয়ে নেপালে ফিরে আসেন এবং ঝান্ডানগরে বিখ্যাত আরবী সাহিত্যিক মাওলানা আব্দুল গফূর ও অন্যান্য শিক্ষকমন্ডলীর নিকট পড়তে থাকেন। এখানে ৬ষ্ঠ জামা‘আত শেষ করার পর তিনি ‘দারুল হাদীছ রহমানিয়া’ দিল্লী গমন করেন। এ প্রতিষ্ঠানে তিনি শায়খুল হাদীছ আহমাদুল্লাহ প্রতাপগড়ী, নাযীর আহমাদ আমলুবী (মৃঃ ১৯৬৮ খৃঃ), ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী প্রমুখের ছাত্রত্ব গ্রহণ করেন। ফারেগ হওয়ার পর তিনি রহমানিয়া মাদরাসাতেই শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। সেখানে বছরখানেক শিক্ষকতা করার পর ঝান্ডানগরের ‘সিরাজুল উলূম’ মাদরাসায় যোগ দেন। সেখানে দু’বছর শিক্ষকতা করার পর জামে‘আ রহমানিয়া মদনপুরা, বেনারসে নিয়োগ পেয়ে তিন বছর শিক্ষকতা করার পর পুনরায় ঝান্ডানগরে ফিরে আসেন। পিতার মৃত্যুর পর তার সুদক্ষ পরিচালনায় সিরাজুল উলূম মাদরাসাটি একটি খ্যাতনামা দ্বীনী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।
মাওলানা ঝান্ডানগরী খ্যাতিমান বাগ্মী ছিলেন। তাঁর বাগ্মিতা মন্ত্রমুগ্ধ করত শ্রোতামন্ডলীকে। নেপালে আহলেহাদীছ আন্দোলনের প্রচার-প্রসারে তাঁর অবদান অবিসংবাদিত। ১৯৯১ সালের ৫ নভেম্বরে ‘জমঈয়তে আহলেহাদীছ নেপাল’ গঠিত হ’লে তিনি আমীর নিযুক্ত হন। ছিয়ানাতুল হাদীছ (দুই খন্ড, মোট পৃষ্ঠা ৪০০), নুছরাতুল বারী ফী তায়ীদে ছহীহিল বুখারী প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৪টি।[15]
২. মাওলানা আব্দুল গাফফার হাসান রহমানী ওমরপুরী : মাওলানা আব্দুল গাফফার হাসান রহমানী ওমরপুরী ভারতের মুযাফফরনগর যেলার ওমরপুরের ওমরী খান্দানের কৃতীসন্তান। তিনি ১৯১৩ সালের ২০ জুলাই দিল্লীর নিকটবর্তী ‘রোহতাক’ নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর দাদা আব্দুল জববার ওমরপুরী (১২৭৭-১৩৩৪ হিঃ/১৯১৬ খৃঃ) ও বাবা আব্দুস সাত্তার ওমরপুরী (১৩০৮ হিঃ-৬ মার্চ ১৯১৬) দু’জনই খ্যাতিমান আলেম, শিক্ষক ও গ্রন্থ রচয়িতা ছিলেন। জন্মের তিন বছর পর (১৯১৬ সালে) দাদা, বাবা মা ও ছোট ভাই আব্দুল কাহ্হারকে হারিয়ে তিনি দাদির তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত হন। মাওলানা আব্দুল গাফফার দ্বীনী ইলম অর্জনের জন্য দিল্লীর কিশানগঞ্জে অবস্থিত আল-হুদা মাদরাসায় ভর্তি হন। সেখানে প্রাথমিক বইপত্র অধ্যয়নের পর তিনি কলকাতার দারুল হাদীছ মাদরাসায় ভর্তি হন। এরপর দিল্লীর রহমানিয়া মাদরাসায় গিয়ে প্রখ্যাত শিক্ষকদের কাছে জ্ঞানার্জন করে ১৯৩৩ সালের ডিসেম্বরে ফারেগ হন। এখানে তিনি ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরীর ছাত্রত্ব গ্রহণ করেন। রহমানিয়া মাদরাসা থেকে ফারেগ হওয়ার পর কিছুদিন সেখানেই শিক্ষকতা করেন। ১৯৩৫ সালে তিনি লক্ষ্ণৌ ইউনিভার্সিটি থেকে ‘ফাযেলে আদব’ (আরবী) এবং ১৯৪০ সালে পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে ‘মৌলবী ফাযেল’ (আরবী) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৩৬-৪২ পর্যন্ত বেনারসের মাদরাসা রহমানিয়াতে তাফসীর, হাদীছ, আরবী সাহিত্য ও অন্যান্য বিষয়ে পাঠদান করেন। ১৯৪২-১৯৪৮ পর্যন্ত পূর্ব পাঞ্জাবের মালিরকোটলা কাওছারুল উলূম মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানে চলে যান। ১৯৪৮-৬৪ সাল পর্যন্ত লাহোর, সিয়ালকোট, রাওয়ালপিন্ডি, ফয়ছালাবাদ, সাহীওয়াল ও করাচীতে পাঠদান করেন।
১৯৬৪-১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৮১-৮৫ সাল পর্যন্ত জামে‘আ তা‘লীমাতে ইসলামিয়া ফয়ছালাবাদে বুখারীর দরস দেন। অনলবর্ষী আহলেহাদীছ বাগ্মী আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর (১৯৪০-২৩ মার্চ ১৯৮৭) তাঁর খ্যাতিমান ছাত্র ছিলেন। আযমাতে হাদীছ, ইন্তেখাবে হাদীছ, মি‘য়ারী খাতূন, দ্বীন মেঁ গুলু, হাকীকাতে দো‘আ, হাকীকাতে রামাযান প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য রচনা। ১৯৮৯ সালের দিকে তিনি আহলেহাদীছ ওলামায়ে কেরামের সমন্বয়ে গবেষণা পরিষদ গঠন করেন। জেনারেল যিয়াউল হকের সময় তিনি ‘ইসলামী নাযরিয়াতী কাউন্সিল’-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ২২ মার্চ ২০০৭-এ দুপুর ১১-টায় ৯৪ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। পরের দিন ইসলামাবাদে তাকে দাফন করা হয়।[16]
৩. ড. আফতাব আহমাদ রহমানী : ড. আফতাব আহমাদ রহমানী ১৯৩৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশের দিনাজপুর যেলার বিরল থানার অন্তর্গত মুরাদপুর (সাত ভাইয়া পাড়া) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৌলভী মুহাম্মাদ ওমর মোল্লা। দেশে দরসে নিযামীর পাঠ গ্রহণ করে তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে ১৯৩৯ সালের শেষের দিকে ‘জামে‘আ নাযীর হুসাইন’ (ফাটক হাবাশ খাঁ, দিল্লী) মাদরাসায় ভর্তি হন। এখানে এক বছর তিনি মিশকাতুল মাছাবীহ, শরহে জামী, সাব‘আ মু‘আল্লাকা প্রভৃতি অধ্যয়ন করেন। তিনি ১৯৪৪ সালে দারুল হাদীছ রহমানিয়া, দিল্লী থেকে ফারেগ হন। এখানে ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী সহ অন্যান্য শিক্ষকদের কাছে বিভিন্ন বিষয় অধ্যয়ন করেন। রহমানিয়া থেকে ফারেগ হওয়ার পর তিনি দিল্লী জামে মসজিদের পূর্ব-দক্ষিণে ‘মছলিওয়ালান’ রোডে অবস্থিত জামে আ‘যম (বর্তমান নাম রিয়াযুল উলূম, প্রতিষ্ঠা : ১৩০২ হিঃ) মাদরাসায় এক বছর শিক্ষকতা করেন। ১৯৪৬ সালে রহমানিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতার নিয়োগপত্র পান। কিন্তু তদানীন্তন রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দিল্লীতে যাওয়া থেকে নিবৃত্ত থাকেন। ১৯৪৬ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৌলভী পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৯ সালে দিনাজপুর হাই মাদরাসা থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান, ১৯৫১ সালে সিরাজগঞ্জ ইসলামিক ইন্টারমেডিয়েট কলেজ থেকে আই.এ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান, ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ সম্মান (আরবী) পরীক্ষায় এবং ১৯৫৬ সালে এম.এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এম.এ-র রেজাল্ট হওয়ার আগেই ১৯৫৬ সালে তিনি দিনাজপুর যেলার পার্বতীপুর থানার নূরুল হুদা হাই মাদরাসার সুপারিনটেন্ডেন্ট-এর দায়িত্ব পান।
১৯৬০ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিভাগে আরবীর সহকারী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন। তিনি "Hafiz Ibn Hajar al-Asqalani and His Contribution to Hadith Literature" বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে পিএইচ.ডি ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি লন্ডনের ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে "The life and Works of Ibn Hajar Al-Asqalani (Accompanied by a critical edition of certain sections of Al-Sakhawi's Al-Jawahir wa Al-Durar)" শিরোনামে গবেষণা করে দ্বিতীয় বার পিএইচ.ডি ডিগ্রী লাভ করেন। এ থিসিসটি ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে ২০০০ সালের জুলাইয়ে প্রকাশিত হয়েছে (মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ৫৯৩)। তাঁর পিএইচ.ডির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন প্রখ্যাত প্রাচ্যবিদ প্রফেসর এ.জে আরবেরী (The Seven Odes গ্রন্থের লেখক)। তাঁর মৃত্যুর পর প্রফেসর আর.বি সার্জেন্ট ও প্রফেসর ড. আব্দুল মুঈদ খান তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ক্যাম্ব্রিজে অধ্যয়নকালে তিনি প্রিয় শিক্ষক ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরীকে একটি চিঠি লিখেন, যেটি ‘জমঈয়তে আহলেহাদীছ হিন্দ’-এর মুখপত্র পাক্ষিক ‘তারজুমান’-এ (দিল্লী) হুবহু প্রকাশিত হয়। ১৯৭২ সালে তিনি দেশে ফিরে পুনরায় ভাষা বিভাগে যোগদান করেন এবং এ সালেই সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৯৮১ সালের ২২ জুন প্রফেসর পদে উন্নীত হন। তিনি ১৯৭৩-৭৬ পর্যন্ত ভাষা বিভাগের সভাপতি এবং ২৫.০৮.১৯৭৮ থেকে ২৪.০৮.১৯৮১ সাল পর্যন্ত আরবী ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আরবী বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যাকাত বোর্ডের সদস্য, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর সদস্য, মাসিক তর্জুমানুল হাদীস-এর সম্পাদক এবং ‘বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলেহাদীস’-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। Islamic Literature (লাহোর, পাকিস্তান), তর্জুমানুল হাদীস (ঢাকা), দৈনিক আজাদ (ঢাকা),مجلة المؤسسة الإسلامية (ইফাবা. ঢাকা), প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় তাঁর ৩৩টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তিনি ১৯৮৪ সালের ২১ এপ্রিল শনিবার ভোর ৫-টায় বিনোদপুরস্থ নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন।[17]
৪. মাওলানা আহমাদুল্লাহ রহমানী : মাওলানা আহমাদুল্লাহ রহমানী বাংলা ১৩২৯ সালের ১২ জ্যৈষ্ঠ (২৯ রামাযান) মুর্শিদাবাদের অদ্বতনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালে তিনি পার্শববর্তী ইসলামপুর গ্রামে মাওলানা নিযামুদ্দীনের কাছে আরবী ও ফার্সীর প্রাথমিক পাঠ গ্রহণ করেন। এরপর পশ্চিম দিনাজপুর ও বর্ধমানের উড়িষ্যায় পড়াশুনা করার পর দিল্লীর রহমানিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন। এখানে তিনি ভারতের খ্যাতিমান আহলেহাদীছ আলেম, তাফসীর ইবনে কাছীরের উর্দূ অনুবাদক মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী প্রমুখের কাছে দরস গ্রহণ করেন। রহমানিয়া মাদরাসায় তিনি ড. আফতাব আহমাদ রহমানীর সহপাঠী ছিলেন। রহমানিয়া ও জামে‘আ সালাফিয়া, বেনারস থেকে শিক্ষা গ্রহণ শেষে তিনি মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গা ও সাদরদিঘী মাদরাসা, বিহারের আব্দুল্লাহপুর ও দিলালপুর এবং জামে‘আ সালাফিয়া বেনারসে শিক্ষকতা করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি বাংলাদেশে চলে আসেন। ১৯৮০-২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি মাদরাসা মুহাম্মাদীয়া আরাবিয়া, যাত্রাবাড়ীতে মুহাদ্দিছ ও প্রিন্সিপ্যাল হিসাবে কর্মরত ছিলেন। জীবনের দীর্ঘ সময় ব্যাপী তিনি ছহীহ বুখারীর দরস দেন। তিনি ২০০৮ সালের ২ মার্চ সকাল ৯-টায় চাঁপাই নবাবগঞ্জ যেলার আলীনগরে নিজ বাসভবনে প্রায় ৮৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।[18]
৫. মাওলানা আব্দুল মুঈদ বেনারসী (আমীনুন নাহু ও আমীনুছ ছীগাহ গ্রন্থদ্বয়ের লেখক)। ৬. যায়নুল্লাহ তৈয়বপুরী ৭. ‘জমঈয়তে আহলেহাদীছ হিন্দ’-এর সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল আব্দুল জলীল রহমানী (মৃঃ ১৭ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৬) ৮. মুহাম্মাদ ইকবাল রহমানী ৯. মুহাম্মাদ আকিল রহমানী ১০. মুহাম্মাদ ইদরীস আযাদ রহমানী (মৃঃ ১৯৭৭ খৃঃ) ১১. আব্দুর রহীম বাস্তাবী ১২. মুহাম্মাদ যামান রহমানী ১৩. আব্দুস সালাম বাস্তাবী ১৪. মুহাম্মাদ খলীল রহমানী ১৫. হেকিম ওবায়দুল্লাহ রহমানী ১৬. আব্দুল কাইয়ূম বাস্তাবী ১৭. আহমাদুল্লাহ রহমানী দিলালপুরী ১৮. মুহাম্মাদ ইউসুফ রহমানী ১৯. আব্দুস সাত্তার রহমানী মালদহী ২০. মুহাম্মাদ মুসলিম রহমানী মালদহী (আব্দুল মতীন সালাফীর শিক্ষক) ২১. আব্দুল হাকীম মৌবী ২২. মুহাম্মাদ আবেদ রহমানী (জামা‘আতে আহলেহাদীছ কী তাদরীসী খিদমাত গ্রন্থের লেখক) ২৩. মাওলানা আব্দুল হাই আনোয়ারী রহমানী (মৃঃ ২৩ ডিসেম্বর ১৯৯০; গ্রামঃ শেরকোল, পোঃ নাসিরগঞ্জ, থানাঃ বাগমারা, রাজশাহী) প্রমুখ।
[চলবে]
[1]. মির‘আতুল মাফাতীহ ১/৯; তারাজিম, পৃঃ ৩২৯; আল-বালাগ, মার্চ ’৯৪, পৃঃ ৪০; ছাওতুল উম্মাহ, ডিসেম্বর ’০৮, পৃঃ ১৮, জানুয়ারী ’০৯, পৃঃ ১৩।
[2]. জামা‘আতে আহলেহাদীছ কী তাদরীসী খিদমাত, পৃঃ ২৬; জুহূদ মুখলিছাহ, পৃঃ ২৫৪।
[3]. জামা‘আতে আহলেহাদীছ কী তাদরীসী খিদমাত, পৃঃ ২৭; মির‘আতুল মাফাতীহ ১/১০; জুহূদ মুখলিছাহ, পৃঃ ২৫৫।
[4]. মির‘আতুল মাফাতীহ ১/১০; ছাওতুল উম্মাহ, খন্ড ৪১, সংখ্যা ৫, মে ২০০৯, পৃঃ ২৩-২৪; আল-বালাগ, মার্চ ’৯৪, পৃঃ ৪০।
[5]. সাপ্তাহিক ‘আল-ই‘তিছাম’ (উর্দূ), লাহোর, পাকিস্তান, নভেম্বর ’৯৪, পৃঃ ২০-২১।
[6]. মুহাদ্দিছ, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৭৮।
[7]. মাকাতীবে রহমানী, পৃঃ ৩০।
[8]. মাসিক ‘ছিরাতে মুস্তাকীম’ (উর্দূ), বার্মিংহাম, লন্ডন, নভেম্বর-ডিসেম্বর ’৯৮, পৃঃ ১৫।
[9]. মুহাদ্দিছ, প্রাগুক্ত, পৃঃ ২০৬।
[10]. ছিরাতে মুস্তাকীম, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৫।
[11]. মুহাদ্দিছ, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৭৮।
[12]. মাওলানা আব্দুল গনী ওরফে আবূ ইয়াহ্ইয়া ইমাম খান নওশাহরাবী আলেম, ঐতিহাসিক, গ্রন্থকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিক ছিলেন। তিনি ১৮৯০ সালে নওশাহরাহ (পাকিস্তান) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নওশাহরাবীর দাদা নওশাহরাহ থেকে হিজরত থেকে গুজরানওয়ালা যেলার সোহদারাহতে থিতু হন। এখানেই তাঁর শিক্ষার হাতেখড়ি হয়। পন্ডিত দিনানাথের কাছে ফার্সী পড়ার পর তিনি ইলমে দ্বীন হাছিলের জন্য সোহদারাহ-এর ‘মাদরাসা হামীদিয়াহ’তে ভর্তি হন। এরপর তিন ওয়াযীরাবাদে গিয়ে হাফেয আব্দুল মান্নান ওয়াযীরাবাদী (১২৬৭-১৩৩৪ হিঃ) ও মাওলানা ওমরুদ্দীনের কাছে কিছু কিতাব পড়েন। তারপর অমৃতসর গিয়ে ‘মাদরাসা গযনবিয়াহ’তে ভর্তি হন। এখানে তিনি মাওলানা নেক মুহাম্মাদ, মাওলানা মুহাম্মাদ হুসাইন হাযারাবী এবং মাওলানা আব্দুল্লাহ ভূজিয়ানীর কাছে পাঠ গ্রহণ করেন। শিক্ষা গ্রহণ শেষে তিনি ১৯১৯ সালে সোহদারাহতে ফিরে আসেন। ১৯২১ সালে গুজরানওয়ালায় গিয়ে তিনি একটি পত্রিকায় চাকুরী নেন। এরপর জীবিকার তাগিদে ভারতে পাড়ি জমান। দেশ বিভাগের পর তিনি লাহোরে বসবাস শুরু করেন। কর্মজীবনে ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে তিনি সাপ্তাহিক আহলেহাদীছ (অমৃতসর), আখবারে মুহাম্মাদী (দিল্লী), আহলেহাদীছ গেজেট (দিল্লী), মাসিক যামানা (লক্ষ্ণৌ), মাসিক মা‘আরিফ (আযমগড়) সাপ্তাহিক আল-ই‘তিছাম (লাহোর, পাকিস্তান), সাপ্তাহিক চাটান (ঐ) প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখতে থাকেন। মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (১৮৬৮-১৯৪৮), মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী (১৮৯০-১৯৪১), মাওলানা সাইয়িদ মুহাম্মাদ দাঊদ গযনবী (মৃঃ ১৯৬৩ খৃঃ), মাওলানা মুহাম্মাদ ইসমাঈল সালাফী, মাওলানা মুহাম্মাদ হানীফ নাদভী, মাওলানা মুহাম্মাদ আতাউল্লাহ হানীফ ভূজিয়ানী (১৯০৯/১০-১৯৮৭) প্রমুখ আহলেহাদীছ ওলামায়ে কেরামের সাথে তাঁর গভীর সম্পর্ক ছিল। নওশাহরাবীর গ্রন্থের সংখ্যা ২৬টি। তারাজিমে ওলামায়ে হাদীছ হিন্দ, হিন্দুস্তান মেঁ আহলেহাদীছ কী ইলমী খিদমাত, হিন্দুস্তান মেঁ ইলমে হাদীছ, মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর জীবনী ‘নুকূশে আবুল ওয়াফা’ (২ খন্ড) প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম। আহলেহাদীছদের পরম হিতাকাঙ্খী এই আলেমে দ্বীন ১৬ জানুয়ারী ১৯৬৬ মোতাবেক ২৪ রামাযান ১৩৮৫ হিজরীতে সোহদারাহতে ইন্তেকাল করেন এবং সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। দ্র. মাসিক শাহাদত (উর্দূ), ইসলামাবাদ, পাকিস্তান, খন্ড ১৪, সংখ্যা ৫, মে ২০০৭, পৃঃ ৩০-৩১।
[13]. ছাওতুল উম্মাহ, মে ’০৯, পৃঃ ২৭।
[14]. মুহাদ্দিছ, প্রাগুক্ত, পৃঃ ২১।
[15]. জুহূদ মুখলিছাহ, পৃঃ ২৬১-৬২; আহলেহাদীছ আন্দোলন উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিত সহ, পৃঃ ৪৯০-৯৩, ৪৯৫।
[16]. জুহূদ মুখলিছাহ, পৃঃ ২৫৯-৬০; তারাজিম, পৃঃ ১৬০-৬১; পাক্ষিক ‘তারজুমান’, দিল্লী, খন্ড ২৭, সংখ্যা ১১, ১-১৫ জুন ২০০৭, পৃঃ ২৬-২৮।
[17]. আরবী বিভাগের সিনিয়র প্রফেসর ও ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর আমীর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব কর্তৃক ড. রহমানীর কাছ থেকে শ্রুত ও বিভিন্ন সূত্রে সংগৃহীত তথ্য; জুহূদ মুখলিছাহ, পৃঃ ২৬১; ড. মুহাম্মাদ শাহজাহান ও মো. শাহীদুর রহমান চৌধুরী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : ইতিহাস ও প্রতিভা (রাজশাহী : ২০০৬), পৃঃ ১৬২-৬৪; বার্ষিক প্রতিবেদন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৮৫-৮৬, পৃঃ ১১১।
[18]. সাপ্তাহিক আরাফাত, বর্ষ ৪৯, সংখ্যা ৩০, ১০ মার্চ ২০০৮, পৃঃ ৭-৮।