জামা‘আতে গোরাবায়ে আহলেহাদীছ প্রতিষ্ঠা :

শারঈ ইমারতের ভিত্তিতে জামা‘আত গঠনের মাধ্যমে ইসলামী শরী‘আতের বিধান অনুযায়ী সার্বিক জীবন পরিচালনার চিরন্তন সুন্নাত মুসলিম সমাজ ভুলতে বসেছিল।[1] তারা বিচ্ছিন্ন জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ফলে শিরকী, বিদ‘আতী ও অনৈসলামী সামাজিক নেতৃত্বের অধীনে তাদের ঈমান-আমল সব প্রায় খুইয়ে বসেছিল। এই অবস্থা দর্শনে মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব মুহাদ্দিছ দেহলভী খুবই ব্যথিত হ’লেন এবং রেওয়াজপন্থী আলেম সমাজ ও শরী‘আত অনভিজ্ঞ সমাজনেতাদের সকল ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে প্রথমে কিঞ্চিদধিক ১২ জন ভক্ত সাথীকে নিয়ে ১৮৯৫/১৩১৩ হিজরী সনে ‘জামা‘আতে গোরাবায়ে আহলেহাদীছ’ কায়েম করেন।[2] অথচ তখনও তাঁর উস্তাদ খ্যাতিমান মুহাদ্দিছ মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভী (১২২০-১৩২০ হিঃ) বহাল তবিয়তে বেঁচে আছেন। এর ফলে তাঁকে অমানুষিক নির্যাতনের সম্মুখীন হ’তে হয়। যেমন খাবার দাওয়াত দিয়ে খাদ্যে বিষ প্রয়োগে হত্যা ও দাড়ি চেঁছে দেওয়ার চেষ্টা, বিভিন্ন তোহমত ও কুৎসা রটনা করা, হত্যার জন্য গুন্ডা ভাড়া করা ও রাস্তায় ওঁৎ পেতে থাকা, সমাজনেতাদের ইংগিতে আলেমদের পক্ষ হ’তে তাকে ‘কাফের’ ইত্যাদি ফৎওয়া দেওয়া প্রভৃতি।[3]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,بَدَأَ الْإِسْلاَمُ غَرِيبًا وَسَيَعُودُ كَمَا بَدَأَ فَطُوبَى لِلْغُرَبَاءِ ‘ইসলাম শুরু হয়েছে অল্পসংখ্যক লোকের মাধ্যমে এবং অতিশীঘ্র সে তার শুরুর অবস্থায় ফিরে আসবে। অতএব সুসংবাদ হ’ল সেই অল্পসংখ্যক লোকদের জন্য’।[4] উক্ত হাদীছে বর্ণিত فَطُوبَى لِلْغُرَبَاءِ অনুসারে এই জামা‘আতের নাম ‘জামা‘আতে গোরাবায়ে আহলেহাদীছ’ রাখা হয়।[5] আক্বীদা ও আমলের দিক থেকে আহলেহাদীছদের মধ্যে এটি কোন নতুন জামা‘আত ছিল না। বরং হাদীছে চিরকাল একটি দল হকের উপরে বিজয়ী থাকবে[6] বলে যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে তারই ফলশ্রুতি ছিল। এটাই ছিল আল্লামা শাহ ইসমাঈল শহীদ ও সাইয়িদ আহমাদ ব্রেলভী প্রতিষ্ঠিত জামা‘আতে মুজাহিদীনের পরে ভারতের প্রথম ইমারতভিত্তিক ইসলামী জামা‘আত। এই জামা‘আত শরী‘আতবিরোধী কোন রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে না। অবশ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদি, যা সরাসরি মুসলিম উম্মাহর সাথে সাধারণভাবে এবং জামা‘আতের সাথে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত, সে সকল বিষয়ে এই জামা‘আত মতামত ব্যক্ত করে। এই জামা‘আতের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিগণ পাশ্চাত্য গণতন্ত্র সমর্থন করেন না।[7]

পত্রিকা প্রকাশ :

মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব কুরআন ও হাদীছের প্রচার-প্রসারের জন্য ১৩৩৮ হিজরীর (১৯২০ খ্রিঃ) শা‘বান মাসে ‘আহলেহাদীছ’ নামে দিল্লী থেকে একটি মাসিক পত্রিকা বের করেন। এটি ছিল ‘জামা‘আতে গোরাবায়ে আহলেহাদীছ’-এর মুখপত্র। একই নামে মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরীও অমৃতসর থেকে পত্রিকা প্রকাশ করছিলেন। তাই তাঁর পরামর্শে পত্রিকার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘হামদরদে আহলেহাদীছ’। কিছুদিন এ নামেই পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু ‘আহলেহাদীছ’ নামে সরকারী রেজিস্ট্রেশন থাকায় ১৩৪০ হিজরীতে উক্ত নাম পরিবর্তন করে ‘ছহীফায়ে আহলেহাদীছ’ রাখা হয়। সুদীর্ঘ ৯৫ বছর যাবৎ এ পত্রিকাটি চালু আছে। বর্তমানে এটি করাচী থেকে পাক্ষিক হিসাবে প্রকাশিত হচ্ছে। ভারতীয় উপমহাদেশের কোন দৈনিক, অর্ধসাপ্তাহিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা এর চেয়ে বেশী আয়ু লাভ করেনি। বর্তমানে এর প্রধান সম্পাদক মাওলানা আব্দুল জাববার সালাফী এবং তত্ত্বাবধায়ক হলেন আমীরে জামা‘আত মাওলানা আব্দুর রহমান সালাফী।[8]

কাদিয়ানী ফিৎনা দমনে ভূমিকা :

যে সময় কাদিয়ানী ফিৎনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে সে সময় মাওলানা দেহলভী দিল্লীতে হাদীছের দরস প্রদান করছিলেন। তিনি তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে তাওহীদ ও সুন্নাহর বাণীকে সমুন্নত করেন এবং ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। এ প্রেক্ষিতে তিনি মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর ভ্রান্ত ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে অবগত হলে তার মূলোৎপাটনে মাঠে নামেন। তিনি তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে মির্যা কাদিয়ানীর মিথ্যা নবুঅত দাবীর মুখোশ উন্মোচন করে দেন। এজন্য সে ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা মাওলানাকে তাদের কঠিন বিরোধী মনে করত। একারণেই মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী পীর মোহর আলী শাহ গোলড়াবীর বিরুদ্ধে যে ইশতেহার প্রকাশ করে সকল আলেমকে তাফসীর লেখার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল, তাতে ৩৫ নম্বরে মাওলানার নাম ছিল।[9] কাদিয়ানী ফিৎনা নির্মূলে আহলেহাদীছগণের অবদানের উপরে বিশিষ্ট গবেষক ড. বাহাউদ্দীন বলেন, ‘তিনি খতমে নবুঅত আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে তাতে শামিল হয়ে গিয়েছিলেন। মির্যা গোলাম আহমাদ পীর মোহর আলী শাহ ছাহেবের সাথে যেসব আলেমকে ১৯০০ সালে লাহোরে তাফসীর লেখার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল, তাতে তিনিও শামিল ছিলেন’।[10]

হজ্জ পালন :

মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব সারাজীবনে মোট ৭ বার হজ্জব্রত পালন করেছেন। ১ম হজ্জ ১৩২১ হিজরীতে, ২য় ১৩২৫ হিজরীতে, ৩য় ১৩২৭ হিজরীতে, ৪র্থ ১৩২৯ হিজরীতে, ৫ম ১৩৩১ হিজরীতে, ষষ্ঠ ১৩৪০ হিজরীতে এবং ৭ম ১৩৪৭ হিজরীতে।[11]

সন্তান-সন্তুতি :

মাওলানা বিভিন্ন সময়ে ১১টি বিবাহ করেন। তাঁর পুত্র ৯ জন এবং কন্যা ৬ জন। কয়েকজন সন্তান অল্প বয়সেই মারা যায়।[12] তাঁর পুত্রদের মধ্যে তিনজনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিম্নরূপ :

১. মাওলানা হাফেয আব্দুস সাত্তার দেহলভী : তিনি কুরআনের হাফেয, মুফাসসিরে কুরআন ও খ্যাতিমান মুহাদ্দিছ ছিলেন। ১৩২০ হিঃ/১৯০৫ সালে তিনি দিল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৬৬ সালের ৯ই আগস্ট করাচীতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি প্রায় ৩৪ বছর ‘জামা‘আতে গোরাবায়ে আহলেহাদীছ’-এর আমীর ছিলেন। তিনি ছিলেন এই জামা‘আতের দ্বিতীয় আমীর। ‘তাফসীরে সাত্তারী’, ছহীহ বুখারীর উর্দূ অনুবাদ ও ব্যাখ্যা ‘নুছরাতুল বারী’ এবং ‘ফাতাওয়া সাত্তারিয়া’ তাঁর অন্যতম রচনা।

২. মাওলানা হাফেয আব্দুল ওয়াহিদ সালাফী দেহলভী : তিনি খ্যাতিমান আলেমে দ্বীন, শিক্ষক, গ্রন্থকার ও মুবাল্লিগ ছিলেন। ১৩৩৩হিঃ/১৯১৪ সালে তিনি দিল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন। ফারেগ হওয়ার পর দরস-তাদরীস ও দাওয়াত-তাবলীগে নিমগ্ন হন। দেশ বিভাগের পর শুভাকাঙ্খীদের অনুরোধে তিনি দিল্লীতেই থেকে যান এবং জামা‘আতে গোরাবায়ে আহলেহাদীছ, হিন্দ-এর আমীর নিযুক্ত হন। আমৃত্যু তিনি পিতার প্রতিষ্ঠিত ‘দারুল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ’ মাদরাসায় শায়খুল হাদীছ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ সালের ২৭শে আগস্টে তিনি দিল্লীতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ছোট-বড় ৪টি পুস্তক লিখেছেন।

(৩) মাওলানা হাফেয আব্দুল কাহহার সালাফী : তিনিও সারাজীবন দরস-তাদরীস, দাওয়াত-তাবলীগ ও গ্রন্থ রচনায় ব্যস্ত থাকেন। তিনি কুরআন মাজীদের তাফসীর লিখেন এবং কতিপয় হাদীছ গ্রন্থের উর্দূ অনুবাদ করেন। হাফেয মুনযিরীর ‘আত-তারগীব ওয়াত তারহীব’ গ্রন্থের উর্দূ অনুবাদ তাঁর অন্যতম কীর্তি। এটি ৬ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ২০০৬ সালের ৩১শে মে ৮৪ বছর বয়সে তিনি করাচীতে মৃত্যুবরণ করেন এবং ইউসুফপুরা কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।[13]

রচনাবলী :

দরস-তাদরীস এবং দাওয়াত ও তাবলীগের ব্যস্ততার মাঝেও মাওলানা নিম্নোক্ত গ্রন্থগুলো রচনা করেন- (১) হাশিয়া মিশকাতুল মাছাবীহ (আরবী)। এটি অত্যন্ত উপকারী হাশিয়া। দিল্লীর ফারূকী প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছে। (২) মুকাম্মাল নামায। ১৩০৪ হিঃ/১৯৮৪ সালে করাচীর মাকতাবা ইশা‘আতুল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ থেকে এটির ১৭তম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। এতে তদীয় পুত্র মাওলানা আব্দুস সাত্তার দেহলভী ও মাওলানা হাফেয আব্দুল কাহহার সালাফীর টীকা সংযোজিত হয়েছে। মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ৪৮০। (৩) ইকামাতুল হুজ্জাহ আলা আন্না লা ফারকা বায়না ছালাতিল মারয়ি ওয়াল মারআহ (উর্দূ)। নারী-পুরুষের ছালাতে যে কোন মৌলিক পার্থক্য নেই এতে তা আলোচনা করা হয়েছে। (৪) বর্তমান যুগের প্রচলিত নিয়ম-কানূন সংবলিত কুরআন মাজীদের বিপরীতে প্রাথমিক যুগের ন্যায় নুকতা-হরকতবিহীন ‘মু‘আররা’ কুরআন মাজীদ। (৫) আমরুল কুল্লী ফী কাওলির রাসূল ছাল্লূ কামা রাআইতুমূনী উছল্লী। এর পান্ডুলিপি হারিয়ে গেছে। (৬) আদ-দালায়িলুল ওয়াছিকা ফী মাসাইলে ছালাছাহ।[14]

মৃত্যু :

মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব ১৩৫১ হিজরীর ৮ই রজব (১৯৩৩ খ্রিঃ) সোমবার দিবাগত রাত ১১-টায় ৭০ বছর বয়সে দিল্লীতে মৃত্যুবরণ করেন। সাথে সাথে তাঁর মৃত্যুর খবর দিল্লী ও তার আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং সকল মাদরাসায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। এমনকি হানাফীদের মাদরাসাও ঐদিন বন্ধ রাখা হয়। তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে ঘোর বিরোধী স্বগোত্রীয় ও হানাফী আলেমগণ এই বলে পড়ানো থেকে বিরত থাকেন যে, آج هند ميں حديث كا چراغ    بجه گيا هے ‘আজ হিন্দুস্তান থেকে হাদীছের প্রদীপ নিভে গেল’। দলমত নির্বিশেষে বহু মানুষ তাঁর জানাযায় অংশগ্রহণ করে। স্বীয় শিক্ষক মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভীর কবরের পূর্বপার্শ্বে শীদীপুরা কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।[15]

জীবনের নানা দিক :

জুম‘আর খুৎবার মোহিনীশক্তি :

মাওলানা অত্যন্ত শুদ্ধভাষী ও বলিষ্ঠ বাগ্মী ছিলেন। তাঁর কণ্ঠ ছিল সুমিষ্ট। তাওহীদ সম্পর্কে তিনি অত্যন্ত চমৎকার বক্তব্য দিতেন। এ বিষয়ে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। তাঁর বক্তব্য কুরআন ও হাদীছের দলীল দ্বারা সুসজ্জিত হ’ত। অত্যন্ত চমৎকার করে কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত করতেন। শ্রোতাবৃন্দ তাঁর বক্তব্য শ্রবণ করে এতটাই প্রভাবিত হ’ত যে, কেউ উঠার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করত না। সবাই তন্ময় হয়ে তাঁর বক্তব্য শ্রবণ করত।[16] মাওলানা আব্দুল জলীল সামরূদী তাঁর বক্তব্য সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি দিল্লীর কালাঁ মসজিদে (বড় মসজিদ) জুম‘আর খুৎবা দিতেন। তাঁর ভাই মৌলভী নূর মুহাম্মাদ দরাজকণ্ঠ ছিলেন। অধিকাংশ সময় তিনিই জুম‘আর আযান দিতেন। মসজিদের আঙ্গিনায় শামিয়ানা টাঙ্গানো হত। আঙ্গিনাসহ পুরা মসজিদ ভরে যেত। তাঁর বক্তব্যের পদ্ধতি এই ছিল যে, ‘রিয়াযুছ ছালেহীন’-এর একটি হাদীছ পড়তেন। অতঃপর বক্তব্য শুরু হ’ত। ১৩২২ হিজরীতে আমি যখন তাঁর দারুল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ মাদরাসায় ভর্তি হই, তখনও ‘রিয়াযুছ ছালেহীন’-এর ভূমিকা চলছিল। নিম্নোক্ত কবিতার আলোচনা হচ্ছিল-

إِنَّ لِلّهِ عِبَادًا فُطُنًا * طَلَّقُوا الدُّنْيَا وَخَافُوا الْفِتَنَا

‘আল্লাহর কিছু বিচক্ষণ বান্দা রয়েছেন, যারা ফিৎনার আশংকায় দুনিয়াকে পরিত্যাগ করেছেন’।

তাঁর বর্ণনাভঙ্গি সম্পর্কে আমি আর কী বলব। বক্তব্যের  মধ্যে যে সাবলীলতা থাকত এবং যে মজা শ্রোতারা লাভ করত তা অবর্ণনীয়। আয়াত, হাদীছ ও যুদ্ধের প্রেক্ষাপট সমূহ এমনভাবে বর্ণনা করছিলেন যে, মনে হচ্ছিল এখনি কুরআন মাজীদ নাযিল হচ্ছে। সত্য বলতে কি, তাঁর খুৎবায় যে মজা পাওয়া যেত তা তার ওয়াযে ছিল না। খুৎবা দেয়ার সময় তিনি সাধারণতঃ ক্লান্ত হতেন না। যে ব্যক্তি একবার তার পিছনে জুম‘আ পড়ত সেই তার ভক্ত হয়ে যেত। তাঁর জুম‘আর খুৎবার বদৌলতে দিল্লীতে বহু মানুষ আহলেহাদীছ হয়েছে। যে একবার তাঁর জুম‘আর খুৎবা শ্রবণ করত সে আল্লাহর হুকুমে হানাফী থাকতে পারত না। তাঁর বক্তব্যে আল্লাহ এমনি আকর্ষণ সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন।[17]

তাঁর বক্তব্যের প্রভাব সম্পর্কে দু’টি ঘটনা নিম্নরূপ :

১. দিল্লীর সদর পোস্ট অফিসের নিকটে এক বৃদ্ধ পাঞ্জাবী বসবাস করতেন। হানাফী হওয়ার কারণে তিনি জুম‘আর ছালাত হাফেয বান্না মসজিদে পড়তে যেতেন। একদিন উক্ত মসজিদে জুম‘আর ছালাত শেষ হয়ে গেলে মসজিদে কালাঁয় নিজ ছেলেকে নিয়ে আসেন। খুব কষ্টে আঙ্গিনায় জায়গা পেয়ে মাত্র ১৫ মিনিট মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাবের খুৎবা শুনেন। এতে তিনি এতটাই প্রভাবিত হন যে, পরবর্তী জুম‘আয় ছেলেকে নিয়ে আগেভাগে এসে আঙ্গিনায় শামিয়ানার নিচে জায়গা পান। এ জুম‘আয় তিনি রাফ‘উল ইয়াদায়েন করেন এবং আমীন জোরে বলেন। এরপর নিয়মিতভাবে উক্ত মসজিদে জুম‘আ ও জামা‘আতে হাযির হতে থাকেন এবং পাক্কা আহলেহাদীছ হয়ে যান।[18]

২. বাশীর নামে জনৈক ব্যক্তি কল্যাণ ভাটিয়ারে-এর নিকট রুটি তৈরী করত। সে খুব ভাল কারিগর ছিল। ছালাত-ছিয়াম তো দূরে থাক ভোরে উঠে সে মুখ পর্যন্ত ধৌত করত না। মাওলানা দেহলভীর ছাত্রদেরকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করত। মাওলানা কালাঁ মসজিদ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর মসজিদের পাশের গুদামে দরস ও ছালাত অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। সংকীর্ণ গলি হওয়ার কারণে জুম‘আর দিন ড্রেনের উপর কাঠ পেতে চাটাই বিছানো হ’ত। দেয়ালের পাশ দিয়ে মাত্র একজন ব্যক্তি যাওয়ার মতো রাস্তা রাখা হ’ত। বাশীরের মাছ শিকারের নেশা ছিল। সে ওখলা যাওয়ার জন্য একদিন বের হয়ে এই রাস্তা দিয়ে যায়। তখন মসজিদে দ্বিতীয় খুৎবা চলছিল। যাওয়ার সময় তাঁর কর্ণকুহরে কিছু কথা আসে। সে সেখান থেকে কিছু দূর গিয়ে পুনরায় ফিরে আসে এবং দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে মাত্র ৫/১০ মিনিট মাওলানার বক্তব্য শ্রবণ করে। জামা‘আত শুরু হ’লে সে সেখান থেকে প্রস্থান করে। পরবর্তী জুম‘আয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করে আগেভাগে মসজিদে হাযির হয়। এবার সে পুরা খুৎবা শুনে। দেখে দেখে ছালাত আদায় করে। কারণ সে ছালাত আদায় করতেই জানত না। এরপর নিয়মিত মসজিদ ও মাদরাসায় যাতায়াত করতে থাকে এবং আহলেহাদীছ হয়ে যায়।[19]

সঊদী বাদশাহকে পত্র লিখন :

মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব দেহলভী তাওহীদ ও সুন্নাতের উপর শক্তভাবে আমল করতেন। অন্যদেরকেও এর দাওয়াত দিতেন এবং তাওহীদপন্থীদের সাথে অপরিসীম ঈমানী ভালবাসা রাখতেন। মাওলানা তানযীল ছিদ্দিকী হুসাইনী লিখেছেন, সুলতান ইবনে সঊদ যখন হিজাযের (সঊদী আরব) কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন, তখন ভারতে মাওলানা তাকে সমর্থন জানান। এটা ছিল সেই সময় যখন বহু হানাফী আলেম বিশেষত ব্রেলভী আক্বীদার আলেমগণ, মাওলানা মুহাম্মাদ আলী জাওহার, মাওলানা শওকত আলী প্রমুখ সুলতান ইবনে সঊদের বিরুদ্ধে আটঘাট বেঁধে ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব ঐ সমস্ত আলেমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যারা এই অবস্থায় সুলতান ইবনে সঊদকে সমর্থন দেন। তিনি সুলতান ইবনে সঊদের বিজয় উপলক্ষে অনেক অভিনন্দনমূলক পত্রও প্রেরণ করেন। তন্মধ্যে একটি পত্র নিম্নরূপ-

بسم الله الرحمن الرحيم

الةحية والةذكرة

من أبى محمد عبد الوهاب إمام جماعة غرباء أهل حديث إلى الغازى السلطان عبد العزيز بن سعود وحزبه المحمود وفقهم الله الودود فى تنفيذ أحكامه والحدود.

سلام عليكم يا عصابة أهل التوحيد ورحمة الله وبركاته إلى يوم الوعد والوعيد.

أما بعد! فنحمد ربنا، الذى جعلنا وإياكم بفضله ورحمته من اهل التوحيد ومتبعى سنة رسوله الكريم. ونحيكم بفتح الحجاز مكة المكرمة ثم المدينة المنورة وخصوصًا جدة الماجدة يا عسكر الإسلام. ونذكركم خاصة أمير النجدية قوله تعالى لخليله عليه السلام (وَأَذِّن فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالاً وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِن كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ)

‘বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম’।

অভিনন্দন ও উপদেশ

জামা‘আতে গোরাবায়ে আহলেহাদীছের নেতা আবু মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াহ্হাব-এর পক্ষ থেকে গাযী সুলতান আব্দুল আযীয বিন সঊদ ও তাঁর প্রশংসিত দলের প্রতি। আল্লাহ তাঁদেরকে তাঁর বিধি-বিধান ও হুদূদ (দন্ডবিধি) কায়েমের তাওফীক দিন।

হে তাওহীদপন্থীদের দল! কিয়ামত পর্যন্ত আপনাদের উপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত নাযিল হোক।

অতঃপর, আমরা আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন করছি, যিনি আমাদেরকে ও আপনাদেরকে তাঁর নিজ অনুগ্রহ ও রহমতে তাওহীদপন্থী এবং তাঁর সম্মানিত রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতের অনুসারীদের মধ্যে শামিল করেছেন। হে ইসলামের  সৈনিকগণ! হিজায তথা মক্কা মুকাররমা, অতঃপর মদীনা মুনাউওয়ারাহ এবং বিশেষত জেদ্দা বিজয় উপলক্ষে আমরা আপনাদেরকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আর আপনাদেরকে বিশেষ করে নাজদের আমীরকে ইবরাহীম (আঃ)-এর উদ্দেশ্যে নাযিলকৃত আল্লাহর বাণীকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি- ‘মানুষের মধ্যে হজ্জের জন্য ঘোষণা প্রচার কর। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে আরোহণ করে দূর-দূরান্ত থেকে’ (হজ্জ ২২/২৭)।[20]

গ্রন্থ সংগ্রহ :

দুর্লভ গ্রন্থ সংগ্রহে তিনি অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। অনেক সময় দুর্লভ হাদীছ গ্রন্থ নিজ হাতে কপি করতেন। ‘মুস্তাদরাকে হাকেম’ ও ইমাম বায়হাকীর ‘খেলাফিয়াত’ পুরোটা এবং ‘মাজমাঊয যাওয়াইদ’-এর অধিকাংশ নিজ হাতে কপি করেন।[21]

ছাত্রদের উপর প্রভাব :

মুজাহিদ নেতা ছূফী আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব-এর মধ্যে এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য বহুল পরিমাণে প্রদান করেছিলেন যে, যে ছাত্র তাঁর তত্ত্বাবধানে কয়েক সপ্তাহ কাটাত তিনি তার শিরা-উপশিরায় সুন্নাতের প্রতি ভালবাসা, হাদীছের মর্যাদা, তাওহীদের পক্কতা এবং হাদীছের প্রতি আমলের ভালবাসা সৃষ্টি করে দিতেন। এসবের প্রতি ভালবাসা হেতু তার মধ্যে সুন্নাহকে অাঁকড়ে ধরার জাযবা তরঙ্গায়িত হ’ত’।[22]

সাদাসিধে জীবন যাপন :

তিনি অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। অত্যন্ত সাধারণ পোষাক পরিধান করতেন। তিনি সাধারণত মাথায় ছোট হাল্কা-পাতলা পাগড়ি, সাধারণ পাঞ্জাবী ও সাদা পাজামা পরতেন। তবে জুম‘আর দিনে কাল পাগড়ি, জুববা, সাদা জামা ও পায়জামা পরতেন। কোন আগন্তুক আসলে ছাত্র ও তাঁর মাঝে পার্থক্য করতে পারত না। তিনি একদিন ছহীহ মুসলিমের দরস দিচ্ছিলেন। পাঞ্জাবী, বাঙ্গালী, হিন্দুস্তানী ও অন্যান্য ছাত্ররা দরসে বসা ছিল। কারো মাথায় ছিল পাগড়ি, কারো মাথায় টুপি ইত্যাদি। এক গ্রাম্য লোক এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘মৌলবী আব্দুল ওয়াহ্হাব কে’? ছাত্ররা তাকে দেখিয়ে দিলে সে তাকে চিনতে পারে।[23]

চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য :

ভদ্রতা-নম্রতা, সহিষ্ণুতা, মেহমানদারি ও সরলতা তাঁর হৃদয়গ্রাহী ব্যক্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল। তিনি ছিলেন উত্তম চরিত্রের নমুনা। সর্বদা মানুষের কল্যাণ করা এবং তাদের সাথে সদাচরণ করা ছিল তার অভ্যাস। মানুষজন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা তিনি মোটেই পসন্দ করতেন না। তিনি সর্বদা সাধারণ মানুষের মতো থাকতেন। কষ্টদানকারীকে ক্ষমা করে দিতেন। গরীব ব্যক্তিদের দাওয়াতে শরীক হতে পসন্দ করতেন এবং বড়লোকদের দাওয়াতে শরীক হওয়া থেকে বিরত থাকতেন। বাড়িতে খাওয়ার জন্য যা কিছু থাকত তা খেয়ে নিতেন। অনেক সময় নিজের খানা ছাত্রদেরকে সাথে নিয়ে খেতেন। মানুষের সাথে সহাস্য বদনে সাক্ষাৎ করতেন। সুন্নাতের অনুসরণের ব্যাপারে অত্যন্ত কট্টর এবং সাধারণ কথাবার্তায় অত্যন্ত নরম ছিলেন। ঝগড়া-বিবাদ থেকে যোজন যোজন দূরে থাকতেন। দ্বীনের প্রচার ও হাদীছের প্রসারে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। মোটকথা, তাঁর জীবনে ইলম ও আমলের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল।[24]

হত্যার ষড়যন্ত্র ও কারামত :

মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব যখন দিল্লীর কালাঁ মসজিদে খুৎবা দেয়া শুরু করেন, তখন দলে দলে হানাফীরা আহলেহাদীছ হতে থাকে। এতে তারা তাঁর বিরুদ্ধে নানারূপ ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। এমনকি তাঁকে হত্যার জন্য গুন্ডা পর্যন্ত ভাড়া করে। এ সম্পর্কে দু’টি ঘটনা নিম্নরূপ :

১. তিনি বিল্লিমারায় শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যেতেন। রাতে একাই ফিরতেন। এই সুযোগে এক রাতে শত্রুরা রাস্তায় তাঁকে হত্যার জন্য ওঁৎ পেতে থাকে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে তিনি শত্রুদের পাহারার মধ্যেই শ্বশুর বাড়ি বিল্লিমারা থেকে নিরাপদে বাড়ি ফিরে আসেন। শত্রুদের সামনে দিয়ে চলে আসলেও তারা তাঁকে একদম দেখতে পায়নি।

২. তাঁকে হত্যার জন্য ৫০০ রূপী দিয়ে আব্দুল্লাহ মারওয়াড়ী নামে এক গুন্ডাকে ভাড়া করা হয়। এই ব্যক্তি এক জুম‘আর দিনে মাওলানার মাদরাসায় এসে কাঁদতে কাঁদতে তার অপরাধ স্বীকার করে বলে, মৌলভী ছাহেব! আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে ক্ষমা করুন! আপনাকে হত্যা করার জন্য ৫০০ রূপী পুরস্কার নির্ধারিত ছিল। আমি আপনাকে হত্যার সাহস করেছিলাম। লাহোরী দরজা ও কুতুব রোডের মাঝখানে সড়ক ও বাতি ছিল না। শধু নদীর উপরে একটি সেতু অন্ধকারে আচ্ছাদিত ছিল। সেখানে কাউকে মেরে ফেললে কোন হদিস পাওয়া যাবে না। লাইনের উপর দিয়ে মানুষজন যাতায়াত করত। আপনি বিল্লিমারা থেকে আসার পথে এখান দিয়ে যাওয়ার সময় মোক্ষম সুযোগ আসবে ভেবে অন্ধকার ও নির্জনতার সুযোগ নিয়ে আমি আপনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠি নিয়ে লাইনের উপরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি। ইতিমধ্যেই আপনি চলে আসেন। যখন আমি লাঠি নিয়ে সামনে অগ্রসর হই এবং আপনাকে মারার জন্য লাঠিটা উঠাই, ঠিক তখনি কে যেন আমার বুকে সজোরে এমন এক ঘুষি মারে যে, আমি কয়েক ধাপ পিছে সরে যাই। দ্বিতীয় ও তৃতীয়বারেও একই ঘটনা ঘটে। এরপর আমার আর সাহসে কুলায়নি। এরই মধ্যে আপনি চলে যান। মৌলভী ছাহেব! আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে মাফ করুন! মাওলানা সবার সামনে তাঁকে মাফ করে দেন। এ ঘটনা ঐ ব্যক্তি কয়েকবার জনসম্মুখে কেঁদে কেঁদে বর্ণনা করেছিল।[25]

ক্ষমাশীলতার অনন্য দৃষ্টান্ত :

তিনি অত্যন্ত ধৈর্যশীল ছিলেন। কোন যালেমের যুলুমের প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করতেন না। একবার তাঁকে ও তাঁর ছাত্রদেরকে পাঞ্জাবীরা দাওয়াত দেয়। চাবুক সওয়ারা গলিতে তারা থাকত। তারা তাদেরকে ১২-টার সময় দাওয়াত খাওয়ায়। অত্যন্ত ভদ্র আচরণ করে। মাওলানাকে বলা হয়, আছরের পরে মাগরিবের পূর্বে বিবাহ অনুষ্ঠিত হবে। আপনি অবশ্যই আসবেন। ওয়াদা পূরণের জন্য তিনি আছরের পর সেখানে যান। সেখানে গিয়ে বিয়ের কোন প্রস্ত্ততি দেখতে না পেয়ে বলেন, মাগরিবের ছালাতের সময় হয়ে গেছে। আমি ফিরাশখানা মসজিদে ছালাত আদায় করে আসছি। একথা বলে তিনি যেমনি বের হ’তে উদ্যত হয়েছেন, তেমনি দরজার পিছনে লুকিয়ে থাকা লোকজন বেরিয়ে তাকে ধাক্কা মেরে সামনে নিয়ে যায়। দরজা বন্ধ করে পিঠে বেদম প্রহার করে। তারা তার দাড়ি মুন্ডন করতে চাইলেও তাতে সফল হয়নি। তিনি মারের চোটে বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিলেন। ডাক্তার ডেকে চিকিৎসা করার পর অনেক রাতে জ্ঞান ফিরে আসে। হাফেয হামীদুল্লাহ দিল্লীর কমিশনারের নিকট মামলা দায়ের করলে তিনি নিজে অকুস্থল যীনাত মহলে এসে রক্তরঞ্জিত কাপড় উদ্ধার করেন। কমিশনার ছাহেব মাওলানার কাছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুমতি চান। কিন্তু মাওলানা এর বদলা দুনিয়াতে নিতে চাননি। তিনি এর মাধ্যমে ধৈর্যের পরীক্ষা দেন এবং ক্ষমাশীলতার এক অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।[26]

উপসংহার :

পরিশেষে বলা যায়, মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব মুহাদ্দিছ দেহলভী (রহঃ) একজন নির্লোভ মুত্তাক্বী আহলেহাদীছ আলেম ছিলেন। জীবনের নানা চড়াই-উতরাই ও কণ্টকাকীর্ণ পথ মাড়িয়ে তিনি কুরআন ও হাদীছের প্রভূত জ্ঞান অর্জন করে দরস-তাদরীস ও দাওয়াত-তাবলীগের ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এ পথে বাধা এসেছে। বিরোধীরা নানারূপ শত্রুতার জাল বুনেছে। এমনকি হত্যার জন্য গুন্ডা পর্যন্ত ভাড়া করেছে। কিন্তু আল্লাহর খাছ রহমতে তিনি নিরাপদ ও অক্ষত থেকেছেন। তিনি কখনো অধৈর্য হননি। বরং প্রবল হিম্মত নিয়ে সমাজ সংস্কারে অবতীর্ণ হয়েছেন। বহু মৃত সুন্নাত পুনর্জীবিত করেছেন। আহলেহাদীছদের জামা‘আতবদ্ধ জীবন-যাপনের ব্যাপারে অনাগ্রহ দেখে মর্মাহত-ব্যথিত হয়ে ‘জামা‘আতে গোরাবায়ে আহলেহাদীছ’ নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন। যেটি ভারতবর্ষের সবচেয়ে প্রাচীন আহলেহাদীছ সংগঠন। তাঁর সাদাসিধে ও অনাড়ম্বর জীবন-যাপন সোনালী যুগের সালাফে ছালেহীনের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। আহলেহাদীছ আন্দোলনের এই ত্যাগী কর্মবীরের জীবন ও কর্ম আমাদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে অনন্তকাল। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাঊস দান করুন-আমীন!!

* পিএইচ.ডি গবেষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


[1]. এক গবেষণায় দেখা গেছে, জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপনের ব্যাপারে সর্বমোট ৩০টি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে ২০টি হাদীছ ছহীহ, ৬টি হাসান এবং ৪টি যঈফ বা দুর্বল। দ্রঃ ড. হাফেয বিন মুহাম্মাদ আল-হাকামী, আল-আহাদীছুল ওয়ারিদাহ ফী লুযূমিল জামা‘আহ : দিরাসাতুন হাদীছিয়াহ ফিক্বহিয়া (রিয়ায : দারুছ ছুমায়ঈ, ১৪২৯হিঃ/২০০৮খ্রিঃ), পৃঃ ১১৮

[2]. এই জামা‘আত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা দ্রঃ আহলেহাদীছ আন্দোলন, পৃঃ ৩৬২-৬৭, ৩৯৭।

[3]. আহলেহাদীছ আন্দোলন, পৃঃ ৩৬২, ৩৯৭।

[4]. মুসলিম হা/১৪৫, ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৬৫; মিশকাত, হা/১৫৯, ‘ঈমান’ অধ্যায়, ‘কিতাব ও সুন্নাহকে অাঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ।

[5]. মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব আওর উনকা খান্দান, পৃঃ ৭৭; চার আল্লাহ কে অলি, পৃঃ ২৪।

[6]. মুসলিম হা/১৯২০।

[7]. আহলেহাদীছ আন্দোলন, পৃঃ ৩৬৩-৬৪

[8]. মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব আওর উনকা খান্দান, পৃঃ ৭৯-৮০; মুকাম্মাল নামায, পৃঃ ২৮-২৯; তাহরীকে খতমে নবুঅত ৩/৪১৫

[9]. মোহরে মুনীর, পৃঃ ২১৮

[10]. তাহরীকে খতমে নবুঅত ৩/৪১৬

[11]. মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব আওর উনকা খান্দান, পৃঃ ৮৩; নামাযে মুকাম্মাল, পৃঃ ৩১

[12]. মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব আওর উনকা খান্দান, পৃঃ ১০৩।

[13]. ঐ, পৃঃ ১০৩।

[14]. মুকাম্মাল নামায, পৃঃ ২৯-৩০; মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব আওর উনকা খান্দান, পৃঃ ৬৫; তাহরীকে খতমে নবুঅত ৩/৪১৫-১৬

[15]. মুকাম্মাল নামায, পৃঃ ৩২-৩৩; মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব আওর উনকা খান্দান, পৃঃ ১০৪; হায়াতে নাযীর, পৃঃ ১৩০; আহলেহাদীছ আন্দোলন, পৃঃ ৩৯৭।

[16]. মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব আওর উনকা খান্দান, পৃঃ ৫৩

[17]. ঐ, পৃঃ ১০৬-১০৭

[18]. ঐ, পৃঃ ১০৭-১০৮

[19]. ঐ, পৃঃ ১০৮

[20]. মাসিক ‘ছহীফায়ে আহলেহাদীছ’, দিল্লী, রজব ১৩৪৪ হিঃ। গৃহীত : তানযীল ছিদ্দীকী, আছহাবে ইলম ওয়া ফযল, পৃঃ ১৮০

[21]. মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব আওর উনকা খান্দান, পৃঃ ৩২, ৬৪; মুকাম্মাল নামায, পৃঃ ৩১

[22]. মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব আওর উনকা খান্দান, পৃঃ ৫১

[23]. মুকাম্মাল নামায, পৃঃ ৩০

[24]. মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব আওর উনকা খান্দান, পৃঃ ৮৩

[25]. ঐ, পৃঃ ১১০-১১১

[26]. ঐ, পৃঃ ১১১-১১২






যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (৭ম কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
ইমাম নাসাঈ (রহঃ) (২য় কিস্তি) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর - ড. নূরুল ইসলাম
শেরে পাঞ্জাব, ফাতিহে কাদিয়ান মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহঃ) (২য় কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী (রহঃ) (শেষ কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
মাওলানা আব্দুল্লাহ মাদানী ঝান্ডানগরী - ড. নূরুল ইসলাম
ইমাম নাসাঈ (রহঃ) (শেষ কিস্তি) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর (৩য় কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (৫ম কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
শেরে পাঞ্জাব, ফাতিহে কাদিয়ান মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (রহঃ) (৮ম কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব মুহাদ্দিছ দেহলভী - ড. নূরুল ইসলাম
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) (৩য় কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
আরও
আরও
.