পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ । পর্ব ৭ । পর্ব ৮ । শেষ পর্ব 

[সালাফে ছালেহীন ও তাক্বলীদ]

১১. হারামের উস্তাদ আবুবকর মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম ইবনুল মুনযির আন-নিশাপুরী (মৃঃ ৩১৮ হিঃ) সম্পর্কে হাফেয যাহাবী বলেছেন, وكان مجتهدا لا يقلد أحدا ‘তিনি মুজতাহিদ ছিলেন। তিনি কারো তাক্বলীদ করতেন না’।[1]

ইমাম নববী বলেছেন, ولا يلتزم التقيد فى الاختيار بمذهب أحد بعينه، ولا يتعصب لأحد، ولا على أحد على عادة أهل الخلاف، بل يدور مع ظهور الدليل ودلالة السنة الصحيحة، ويقول بها مع من كانت، ومع هذا فهو عند أصحابنا معدود من أصحاب الشافعى- ‘তিনি মাসআলা নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট মাযহাব অাঁকড়ে ধরাকে আবশ্যক মনে করতেন না। আর মতভেদকারীদের অভ্যাস মতো কারো জন্য গোঁড়ামি করতেন না। বরং তিনি সুস্পষ্ট দলীল ও ছহীহ হাদীছের সাথে চলতেন। দলীল যার নিকটেই থাক না কেন তিনি তার প্রবক্তা ছিলেন। এতদসত্ত্বেও আমাদের সাথীগণের নিকটে তিনি ইমাম শাফেঈর অনুসারীদের মধ্যে গণ্য’।[2]

নববীর বক্তব্যের একটি অংশ উল্লেখ করে হাফেয যাহাবী বলেছেন, مَا يَتَقَيَّدُ بِمَذْهَبٍ وَاحِدٍ إِلاَّ مَنْ هُوَ قَاصِرٌ فِي التَّمَكُّنِ مِنَ العِلْمِ، كَأَكْثَرِ عُلَمَاءِ زَمَانِنَا، أَوْ مَنْ هُوَ مُتَعَصِّبٌ ‘একজনের মাযহাব মানার বাধ্যবাধকতা সেই আরোপ করে যে ইলম অর্জনে অক্ষম। যেমন আমাদের যুগের অধিকাংশ আলেমগণ। অথবা যে গোঁড়া ও পক্ষপাতদুষ্ট’।[3]

উক্ত উদ্ধৃতি সমূহ হ’তে দু’টি বিষয় প্রতিভাত হয়-

ক. মাযহাবগুলোর তাক্বলীদ সেই করে যে অজ্ঞ অথবা গোঁড়া।

খ. মাযহাবসমূহের তাক্বলীদকারীরা কতিপয় আলেমকে স্ব স্ব ত্বাবাক্বাতে উল্লেখ করেছেন। অথচ উল্লেখিত আলেমদের মুক্বাল্লিদ হওয়া প্রমাণিত নয়। বরং তারা তাক্বলীদের বিরোধী ছিলেন। সুতরাং মুক্বাল্লিদদের রচিত ত্বাবাক্বাত গ্রন্থসমূহের কোনই মূল্য নেই।

১২. সত্যবাদী ও হাসানুল হাদীছ-এর মর্যাদায় অভিষিক্ত আবূ আলী আল-হাসান বিন সা‘দ বিন ইদরীস আল-কুতামী আল-কুরতুবী (মৃঃ ৩৩১ হিঃ) সম্পর্কে হাফেয যাহাবী বলেছেন, وكان علامة مجتهدًا لا يقلد ويميل إلى أقوال الشافعي. ‘তিনি আল্লামা ও মুজতাহিদ ছিলেন। কারো তাক্বলীদ করতেন না। তিনি শাফেঈর বক্তব্যের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন’।[4]

১৩. ইমাম আওযাঈ (মৃঃ ১৫৭ হিঃ)-এর খ্যাতিমান ছাত্র এবং (স্পেনের) আমীর (খলীফা) হিশাম বিন আব্দুর রহমান বিন মু‘আবিয়া আল-আন্দালুসীর বিচারক আবূ মুছ‘আব বিন ইমরান আল-কুরতুবী সম্পর্কে ইবনুল ফারাযী বলেছেন,وكان لايقلد مَذْهَباً ويقضى ما رآه صَوَاباً وكان خيراً فاضلاً. ‘তিনি কোন মাযহাবের তাক্বলীদ করতেন না। তিনি যা সঠিক মনে করতেন সে অনুযায়ী ফায়ছালা দিতেন। তিনি সৎ ও মর্যাদাবান ব্যক্তি ছিলেন’।[5]

১৪. আবূ জা‘ফর মুহাম্মাদ বিন জারীর বিন ইয়াযীদ আত- ত্বাবারী আস-সুন্নী (মৃঃ ৩১০ হিঃ) সম্পর্কে হাফেয যাহাবী বলেছেন, وكان مجتهداً لا يقلد أحداً. ‘তিনি মুজতাহিদ ছিলেন। কারো তাক্বলীদ করতেন না’।[6]

ঐতিহাসিক ইবনু খাল্লিকান বলেছেন, وكان من الأئمة المجتهدين، لم يقلد أحدا، ‘তিনি মুজতাহিদ ইমামদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি কারো তাক্বলীদ করেননি’।[7]

১৫. সত্যবাদী ও হাসানুল হাদীছ ক্বাযী আবুবকর আহমাদ বিন কামিল বিন খালাফ বিন শাজারাহ আল-বাগদাদী (মৃঃ ৩৫০ হিঃ) সম্পর্কে হাফেয যাহাবী বলেছেন, كَانَ يختَارُ لِنَفْسِهِ، وَلاَ يُقَلِّد أَحداً ‘তিনি নিজের জন্য (প্রাধান্যযোগ্য মতকে) নির্বাচন করতেন। কারো তাক্বলীদ করতেন না’।[8]

১৬. আবুবকর মুহাম্মাদ বিন দাঊদ বিন আলী আয-যাহেরী  (মৃঃ ২৯৭ হিঃ) সম্পর্কে হাফেয যাহাবী বলেছেন,وَكَانَ يَجْتَهِدُ وَلاَ يُقَلِّدُ أَحَداً. ‘তিনি ইজতিহাদ করতেন এবং কারো তাক্বলীদ করতেন না’।[9]

১৭. আবূ ছাওর ইবরাহীম বিন খালিদ আল-কালবী আল- বাগদাদী আল-ফক্বীহ (মৃঃ ২৪০ হিঃ) সম্পর্কে হাফেয যাহাবী বলেছেন, وبرع في العلم ولم يقلد أحداً ‘তিনি ইলমে পারদর্শী হয়েছিলেন এবং কারো তাক্বলীদ করেননি’।[10]

১৮. শায়খুল ইসলাম হাফেয ইবনু তায়মিয়াহ আশ-শামী (মৃঃ ৭২৮ হিঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘বুখারী, মুসলিম, আবূদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, আবূদাঊদ আত-ত্বায়ালিসী, দারেমী, বায্যার, দারাকুৎনী, বায়হাক্বী, ইবনু খুযায়মাহ এবং আবূ ইয়া‘লা আল-মূছিলী এরা কি মুজতাহিদ ছিলেন? কোন একজন ইমামের তাক্বলীদ করেননি? নাকি তারা মুক্বাল্লিদ ছিলেন’? তখন হাফেয ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) জবাব দিয়েছিলেন,

الحمد لله رب العالمين، أَمَّا الْبُخَارِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ فَإِمَامَانِ فِي الْفِقْهِ مِنْ أَهْلِ الْاِجْتِهَادِ. وَأَمَّا مُسْلِمٌ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَه وَابْنُ خُزَيْمَةَ وَأَبُو يَعْلَى وَالْبَزَّارُ وَنَحْوُهُمْ فَهُمْ عَلَى مَذْهَبِ أَهْلِ الْحَدِيثِ. لَيْسُوا مُقَلِّدِينَ لِوَاحِدٍ بِعَيْنِهِ مِنَ الْعُلَمَاءِ وَلَا هُمْ مِنَ الْأَئِمَّةِ الْمُجْتَهِدِينَ عَلَى الْإِطْلَاقِ-

‘যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। অতঃপর বুখারী ও আবুদাঊদ ফিক্বহের ইমাম ও মুজতাহিদ (মুত্বলাক্ব) ছিলেন। পক্ষান্তরে মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, ইবনু খুযায়মাহ, আবু ইয়া‘লা, বাযযার প্রমুখ আহলেহাদীছ মাযহাবের উপরে ছিলেন। তারা কোন নির্দিষ্ট আলেমের মুক্বাল্লিদ ছিলেন না। আর তারা মুজতাহিদ মুত্বলাক্বও ছিলেন না’।[11]

এই তাহক্বীক্ব ও সাক্ষ্য থেকে চারটি বিষয় প্রতীয়মান হয়-

১. হাফেয ইবনু তায়মিয়াহর নিকটে ইমাম বুখারী ও আবূদাঊদ মুজতাহিদ মুত্বলাক্ব ছিলেন। এজন্য তাদেরকে হানাফী, শাফেঈ, হাম্বলী বা মালেকী আখ্যা দেয়া ভুল।

২. ইমাম মুসলিম, তিরমিযী ও নাসাঈ প্রমুখ সবাই আহলেহাদীছের মাযহাবের উপরে ছিলেন এবং কারো মুক্বাল্লিদ ছিলেন না। সুতরাং তাঁদেরকে তাবাক্বাতে শাফেঈয়াহ প্রভৃতি ত্বাবাক্বাতের গ্রন্থসমূহে উল্লেখ করা ভুল।

৩. মুহাদ্দিছীনে কেরামের মধ্য থেকে কেউই মুক্বাল্লিদ ছিলেন না।

৪. মুজতাহিদগণের দু’টি স্তর রয়েছে। ১. মুজতাহিদ মুত্বলাক্ব[12] এবং ২. মুজতাহিদ ‘আম।[13]

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)-এর উক্ত তাৎপর্যপূর্ণ উক্তি দ্বারা প্রমাণিত হ’ল যে, ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল-বুখারী (মৃঃ ২৫৬ হিঃ) মুক্বাল্লিদ ছিলেন না। বরং মুজতাহিদ মুত্বলাক্ব ছিলেন।

হাফেয যাহাবী ইমাম বুখারী সম্পর্কে বলেছেন,وكان إماما حافظا حجة رأسا في الفقه والحديث مجتهدا من أفراد العالم مع الدين والورع والتأله-  ‘তিনি ইমাম, হাফেয, হুজ্জাত, ফিক্বহ ও হাদীছের নেতা, মুজতাহিদ এবং দ্বীনদারী, পরহেযগারিতা ও আল্লাহভীরুতার সাথে সাথে দুনিয়ার অনন্য সাধারণ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন’।[14]

এ ধরনের অসংখ্য সাক্ষ্যের সমর্থনে আরয হ’ল যে, ‘ফায়যুল বারী’র ভূমিকা লেখক গোঁড়া দেওবন্দী বলেছেন, واعلم أن البخارى مجتهد لاريب فيه ‘জেনে নাও যে, নিশ্চয়ই বুখারী একজন মুজতাহিদ। এতে কোন সন্দেহ নেই’।[15]

সালীমুল্লাহ খান দেওবন্দী (মুহতামিম, জামে‘আ ফারূক্বিয়া দেওবন্দিয়া, করাচী) বলেছেন, ‘বুখারী হ’লেন মুজতাহিদ মুত্বলাক্ব’।[16]

মুজতাহিদ সম্পর্কে এ মূলনীতি রয়েছে যে, মুজতাহিদ তাক্বলীদ করেন না। নববী বলেছেন, ‘কেননা নিঃসন্দেহে মুজতাহিদ মুজতাহিদের তাক্বলীদ করেন না’।[17]

১৯. ইমাম আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ আন- নিশাপুরী আল-কুশায়রী (মৃঃ ২৬১ হিঃ) সম্পর্কে হাফেয ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেছেন, তিনি আহলেহাদীছের মাযহাবের উপরে ছিলেন। কোন নির্দিষ্ট আলেমের মুক্বাল্লিদ ছিলেন না (১৮ নং উক্তি দ্রঃ)। ইমাম মুসলিম বলেছেন, قَدْ شَرَحْنَا مِنْ مَذْهَبِ الْحَدِيثِ وَأَهْلِهِ  ‘আমরা হাদীছ এবং আহলেহাদীছদের মাযহাব-এর ব্যাখ্যা করেছি’।[18]

সতর্কীকরণ : ইমাম মুসলিমের মুক্বাল্লিদ হওয়া কোন একজন নির্ভরযোগ্য ইমাম থেকেও সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত নেই।

২০. ইমাম আবুবকর মুহাম্মাদ বিন ইসহাক্ব ইবনু খুযায়মাহ আন-নিশাপুরী (মৃঃ ৩১১ হিঃ) সম্পর্কে হাফেয ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেছেন, তিনি আহলেহাদীছের মাযহাবের উপরে ছিলেন। নির্দিষ্ট কোন ইমামের মুক্বাল্লিদ ছিলেন না’।[19]

আব্দুল ওয়াহ্হাব বিন আলী বিন আব্দুল কাফী আস-সুবকী (মৃঃ ৭৭১ হিঃ) বলেছেন, قلت : المحمدون الْأَرْبَعَة مُحَمَّد بن نصر وَمُحَمّد بن جرير وَابْن خُزَيْمَة وَابْن الْمُنْذر من أَصْحَابنَا وَقد بلغُوا دَرَجَة الِاجْتِهَاد الْمُطلق، وَلم يخرجهم ذَلِك عَن كَونهم من أَصْحَاب الشافعى المخرجين على أُصُوله المتمذهبين بمذهبه لوفاق اجتهادهم اجْتِهَاده، بل قد ادّعى من هُوَ بعد من أَصْحَابنَا الخلص كالشيخ أَبى على وَغَيره أَنهم وَافق رَأْيهمْ رأى الإِمَام الْأَعْظَم فتبعوه ونسبوا إِلَيْهِ لَا أَنهم مقلدون... ‘আমি বলেছি, চার মুহাম্মাদ- মুহাম্মাদ বিন নাছর, মুহাম্মাদ বিন জারীর, ইবনু খুযায়মাহ ও ইবুনল মুনযির আমাদের সাথীদের মধ্যে ছিলেন। তাঁরা মুজতাহিদ মুত্বলাক্বের স্তরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। আর এ বিষয়টি তাদেরকে শাফেঈর সাথীদের থেকে বের করে দেয়নি। তারা ইমাম শাফেঈর উছূল (মূলনীতি) অনুযায়ী তাখরীজকারী এবং তার মাযহাবকে পসন্দকারী। কেননা তাদের ইজতিহাদ তাঁর (ইমাম শাফেঈ) ইজতিহাদের অনুকূলে ছিল। বরং তাদের পরে আমাদের একনিষ্ঠ সাথীবৃন্দ যেমন- আবূ আলী ও অন্যরা দাবী করেছেন যে, তাদের রায় ইমামে আযমের (ইমাম শাফেঈ) রায়ের সাথে মিলে গিয়েছিল। তাই তারা তার অনুসরণ করেছেন এবং তার দিকে সম্পর্কিত হয়েছেন। এজন্য নয় যে, তারা মুক্বাল্লিদ ছিলেন’।[20]

المتمذهبين بمذهبه   (তার মাযহাব গ্রহণকারীগণ) কথাটুকু তো সুবকী নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য বলেছেন। তবে তাঁর স্বীকারোক্তি থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হ’ল যে, তার নিকটে মুহাম্মাদ বিন নাছর আল-মারওয়াযী, মুহাম্মাদ বিন জারীর ত্বাবারী, মুহাম্মাদ বিন ইসহাক্ব বিন খুযায়মাহ, মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম ইবনুল মুনযির ও আবূ আলী সকলেই গায়ের মুক্বাল্লিদ (এবং আহলেহাদীছ) ছিলেন।

ফায়েদা : যেভাবে হানাফী আলেমগণ নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য অথবা কতিপয় আলেম ইমাম আবূ হানীফাকে ‘ইমামে আযম’ বলেন, সেভাবে শাফেঈ আলেমগণও ইমাম শাফেঈকে ‘ইমামে আযম’ বলে থাকেন। যেমন- তাজুদ্দীন আব্দুল ওয়াহ্হাব বিন তাকিউদ্দীন আস-সুবকী বলেছেন,  مُحَمَّد بْن الشَّافِعِي إمامنا، الإِمَام الْأَعْظَم المطلبي أَبِي عَبْد اللَّه مُحَمَّد بْن إِدْرِيس ‘মুহাম্মাদ বিন শাফেঈ হ’লেন আমাদের ইমাম। তিনি ইমামে আযম (বড় ইমাম) আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইদরীস আল-মুত্ত্বালিবী’।[21]

আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন সালামাহ আল-ক্বালয়ূবী (মৃঃ ১০৬৯ হিঃ) বলেছেন, قوله (الشافعى): هو الإمام الأعظم ‘তার বক্তব্য (আশ-শাফেঈ) : তিনিই হ’লেন আল-ইমামুল আ‘যম (মহান ইমাম)’।[22]

ক্বাসত্বালানী (শাফেঈ) ইমাম মালেককে ‘ইমামে আ‘যম’ (الإمام الأعظم) বলেছেন।[23]

ক্বাসত্বালানী ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল সম্পর্কে বলেছেন, ‘আল-ইমামুল আ‘যম’ (الإمام الأعظم)।[24]

হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) মুসলমানদের খলীফাকে (ইমাম) ইমামে আ‘যম (الإمام الأعظم) বলেছেন।[25]

এক্ষণে এই মুক্বাল্লিদরা ফায়ছালা করুক যে, তাঁদের মধ্যে প্রকৃত ইমামে আ‘যম কে?

আবূ ইসহাক্ব আশ-শীরাযী কতিপয় ব্যক্তি সম্পর্কে বলেছেন,  وَالصَّحِيحُ الَّذِي ذَهَبَ إلَيْهِ الْمُحَقِّقُونَ مَا ذَهَبَ إلَيْهِ أَصْحَابُنَا وَهُوَ أَنَّهُمْ صَارُوا إلَى مَذْهَبِ الشَّافِعِيِّ لَا تَقْلِيدًا لَهُ، بَلْ لَمَّا وَجَدُوا طُرُقَهُ فِي الِاجْتِهَادِ وَالْقِيَاسِ أَسَدَّ الطُّرُقِ ‘আর ছহীহ সেটাই যেদিকে মুহাক্কিকগণ গিয়েছেন এবং যেদিকে আমাদের সাথীগণ গিয়েছেন। আর সেটা হ’ল তারা তাক্বলীদ করার জন্য শাফেঈ মাযহাবের প্রবক্তা হননি; বরং ইজতিহাদ ও ক্বিয়াসে তাঁর (ইমাম শাফেঈ) পদ্ধতিকে সবচেয়ে সঠিক পেয়েছিলেন তাই’।[26]

এরপর নববী বলেছেন,

وَذَكَرَ أَبُو عَلِيٍّ السِّنْجِيُّ بِكَسْرِ السِّينِ الْمُهْمَلَةِ نَحْوَ هَذَا فَقَالَ اتَّبَعْنَا الشَّافِعِيَّ دُونَ غَيْرِهِ لِأَنَّا وَجَدْنَا قَوْلَهُ أَرْجَحَ الْأَقْوَالِ وَأَعْدَلَهَا لَا أَنَّا قَلَّدْنَاهُ-

‘আবূ আলী আস-সিনজী (সীন বর্ণে যের) এমনটিই উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা অন্যদের বাদ দিয়ে ইমাম শাফেঈর অনুসরণ করেছি। কারণ আমরা তাঁর মতামতকে সবচেয়ে অগ্রগণ্য ও সঠিক পেয়েছি। এজন্য নয় যে, আমরা তাঁর তাক্বলীদ করেছি’।[27]

প্রমাণিত হ’ল যে, আলেমদের নামের সাথে শাফেঈ, হানাফী মালেকী প্রভৃতি লকব থাকার উদ্দেশ্য আদৌ এটা নয় যে, তাঁরা মুক্বাল্লিদ ছিলেন। বরং সঠিক এটাই যে, তাঁরা মুক্বাল্লিদ ছিলেন না। বরং তাদের ইজতিহাদ উল্লেখিত নিসবতকৃত ইমামের ইজতিহাদের সাথে মিলে গিয়েছিল।

২১. জমহূর বিদ্বানের নিকটে নির্ভরযোগ্য ক্বাযী আবুবকর মুহাম্মাদ বিন ওমর বিন ইসমাঈল দাঊদী (মৃঃ ৪২৯ হিঃ) ইবনে শাহীন বাগদাদী নামে পরিচিত আবূ হাফছ ওমর বিন আহমাদ বিন ওছমান (মৃঃ ৩৮৫ হিঃ) সম্পর্কে বলেছেন, وكان أيضا لا يعرف من الفقه قليلا ولا كثيرا، وكان إذا ذكر له مذاهب الفقهاء كالشافعي وغيره، يَقُولُ: أنا محمدي المذهب، ‘তিনিও (তাক্বলীদী) ফিক্বহ বিষয়ে কম বা বেশী কিছুই জানতেন না (অর্থাৎ তিনি উক্ত তাক্বলীদী ফিক্বহকে কোন গুরুত্বই দিতেন না)। যখন তার সামনে ফক্বীহদের মাযহাব যেমন শাফেঈ ইত্যাদি উল্লেখ করা হ’ত তখন তিনি বলতেন, ‘আমি মুহাম্মাদী মাযহাবের’।[28]

২২. হাফেয ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) সুনানে আবূদাঊদের রচয়িতা ইমাম আবূদাঊদ সিজিস্তানী সুলায়মান বিন আশ‘আছ (মৃঃ ২৭৫ হিঃ)-কে মুক্বাল্লিদদের দল থেকে বের করে মুজতাহিদ মুত্বলাক্ব আখ্যা দিয়েছেন (১৮নং উক্তি দ্রঃ)

২৩. সুনানে তিরমিযীর রচয়িতা ইমাম আবূ ঈসা মুহাম্মাদ বিন ঈসা বিন সাওরাহ আত-তিরমিযী (মৃঃ ২৭৯ হিঃ) সম্পর্কে হাফেয ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেছেন, তিনি আহলেহাদীছদের মাযহাবের উপরে ছিলেন এবং কোন নির্দিষ্ট আলেমের মুক্বাল্লিদ ছিলেন না (১৮নং উক্তি দ্রঃ )

২৪. সুনানে নাসাঈর লেখক ইমাম আহমাদ বিন শু‘আইব আন-নাসাঈ (মৃঃ ৩০৩ হিঃ) সম্পর্কে হাফেয ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেছেন, তিনি আহলেহাদীছদের মাযহাবের উপরে ছিলেন এবং কোন নির্দিষ্ট আলেমের মুক্বাল্লিদ ছিলেন না (১৮নং উক্তি দ্রঃ)

২৫. সুনানে ইবনে মাজাহর লেখক ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইয়াযীদ বিন মাজাহ আল-ক্বাযবীনী (মৃঃ ২৭৩ হিঃ) সম্পর্কে হাফেয ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেছেন, তিনি আহলেহাদীছদের মাযহাবের উপরে ছিলেন এবং কোন নির্দিষ্ট আলেমের মুক্বাল্লিদ ছিলেন না (১৮নং উক্তি দ্রঃ)

২৬. ইমাম আবূ ইয়া‘লা আহমাদ বিন আলী ইবনুল মুছান্না আল-মূছিলী (মৃঃ ৩০৭ হিঃ) সম্পর্কে হাফেয ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেছেন, তিনি আহলেহাদীছদের মাযহাবের উপরে ছিলেন। নির্দিষ্ট কোন আলেমের মুক্বাল্লিদ ছিলেন না (১৮ নং উক্তি দ্রঃ)

২৭. আবুবকর আহমাদ বিন আমর বিন আব্দুল খালেক আল-বাযযার আল-বাছরী (সত্যবাদী ও হাসানুল হাদীছ) (মৃঃ ২৯২ হিঃ) সম্পর্কে হাফেয ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেছেন, তিনি আহলেহাদীছদের মাযহাবের উপরে ছিলেন। নির্দিষ্ট কোন আলেমের মুক্বাল্লিদ ছিলেন না (১৮ নং উক্তি দ্রঃ)

২৮. হাফেয আবু মুহাম্মাদ আলী বিন আহমাদ বিন সাঈদ বিন হাযম আল-আন্দালুসী আল-কুরতুবী (মৃঃ ৪৫৬ হিঃ) তাক্বলীদ সম্পর্কে বলেছেন, والتقليد حرام ... والعامي والعالم في ذلك سواء وعلى كل أحد حظه الذي يقدر عليه من الاجتهاد. ‘তাক্বলীদ হারাম...। এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষ ও আলেম সমান। আর প্রত্যেকের উপরে স্বীয় সামর্থ্য অনুযায়ী ইজতিহাদ যরূরী’।[29]

হাফেয ইবনু হাযম স্বীয় আক্বীদা সংক্রান্ত গ্রন্থে বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তির জন্য তাক্বলীদ করা বৈধ নয়। চাই জীবিত ব্যক্তির তাক্বলীদ হোক অথবা মৃত ব্যক্তির’।[30]

হাফেয ইবনু হাযম দু‘আ করতে গিয়ে বলেছেন, وأن يعصمنا من بدعة التقليد المحدث بعد القرون الثلاثة المحمودة. آمين، ‘আল্লাহ যেন আমাদেরকে প্রশংসিত তৃতীয় শতকের পরে সৃষ্ট তাক্বলীদের (অর্থাৎ চার মাযহাবের বিদ‘আত) বিদ‘আত থেকে রক্ষা করেন।-আমীন’।[31]

২৯. হাফেয ইবনু আব্দিল বার্র আন্দালুসী (মৃঃ ৪৬৩ হিঃ) স্বীয় বিখ্যাত গ্রন্থে অনুচ্ছেদ বেঁধেছেন- باب فساد التقليد ونفيه والفرق بين التقليد والاتباع ‘তাক্বলীদের অপকারিতা ও তার নাকচ হওয়া এবং তাক্বলীদ ও ইত্তিবার মধ্যে পার্থক্য’ অনুচ্ছেদ।[32]

হাফেয ইবনু আব্দিল বার্র-এর মুক্বাল্লিদ হওয়া অকাট্যভাবে প্রমাণিত নয়। বরং হাফেয যাহাবী বলেছেন, فإنه ممن بلغ رتبة الأئمة المجتهدين ‘নিশ্চয়ই তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত, যারা মুজতাহিদ ইমামগণের স্তরে পৌঁছে গিয়েছিলেন’।[33]

আর এটা সাধারণ মানুষও জানে যে, মুজতাহিদ কখনো মুক্বাল্লিদ হন না (৫ নং উক্তি দ্রঃ)

হাফেয ইবনু আব্দিল বার্র আন্দালুসী (রহঃ) স্বয়ং বলেছেন, لا فرق بين مقلد وبهيمة ‘মুক্বাল্লিদ ও চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই’।[34]

সতর্কীকরণ : হাফেয ইবনু আব্দিল বার্র, খত্বীব বাগদাদী প্রমুখ কতিপয় ইবারতে সাধারণ মানুষের জন্য (জীবিত) আলেমের তাক্বলীদ করাকে জায়েয বলেছেন। যার উদ্দেশ্য স্রেফ এটা যে, মূর্খ ব্যক্তি আলেমের কাছ থেকে মাসআলা জিজ্ঞাসা করে তার উপরে আমল করবে। আমরাও এটা বলি যে, মূর্খ ব্যক্তির উপরে এটা যরূরী যে, সে কুরআন ও সুন্নাহর ছহীহ আক্বীদাসম্পন্ন আলেমের নিকট থেকে মাসআলা জিজ্ঞাসা করে তার উপরে আমল করবে। কিন্তু এটাকে তাক্বলীদ বলা ভুল। উছূলে ফিক্বহের প্রসিদ্ধ মাসআলা রয়েছে যে, সাধারণ মানুষের মুফতীর (আলেম) দিকে প্রত্যাবর্তন করা তাক্বলীদ নয়।[35]

৩০. আমীরুল মুমিনীন খলীফা আবু ইউসুফ ই‘য়াকূব বিন ইউসুফ বিন আব্দুল মুমিন বিন আলী আল-ক্বায়সী আল-কূমী আল-মার্রাকুশী আয-যাহেরী আল-মাগরেবী (মৃঃ ৫৯৫ হিঃ) স্বীয় সাম্রাজ্যে শরী‘আতের বিধি-বিধান বাস্তবায়ন করেন, জিহাদের ঝান্ডা বুলন্দ করেন, ন্যায়পরায়ণতার সাথে দন্ডবিধি বাস্তবায়ন করেন এবং ন্যায়ের মানদন্ড কায়েম করেন।

তাঁর সম্পর্কে ঐতিহাসিক ইবনু খাল্লিকান লিখেছেন, ‘তিনি একজন দানশীল বাদশাহ এবং পবিত্র শরী‘আতকে ধারণকারী ছিলেন। তিনি নির্ভয়ে ও পক্ষপাতহীনভাবে সৎ কাজের আদেশ করতেন এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করতেন, যেমনটি উচিৎ। তিনি লোকদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত পড়াতেন এবং পশমের পোষাক পরিধান করতেন। নারী ও দুর্বলের পাশে দাঁড়াতেন এবং তাদের হক আদায় করে দিতেন। তিনি অছিয়ত করেন, তাকে যেন রাস্তার মাঝে অর্থাৎ নিকটে দাফন করা হয়। যাতে তার পাশ দিয়ে অতিক্রমকারীরা তার জন্য রহমতের দো‘আ করে’।[36]

এই মুজাহিদ ও ছহীহ আক্বীদাসম্পন্ন খলীফা (রহঃ) সম্পর্কে ইবনু খাল্লিকান আরো লিখেছেন, وأمر برفض فروع الفقه، وأن العلماء لا يفتون إلا بالكتاب العزيز والسنة النبوية، ولا يقلدون أحداً من الأئمة المجتهدين المتقدمين، بل تكون أحكامهم بما يؤدي إليه اجتهادهم من استنباطهم القضايا من الكتاب والحديث والإجماع والقياس.  ‘তিনি ফিক্বহের শাখা-প্রশাখাগত বিষয়গুলি (মালেকী ফিক্বহের গ্রন্থসমূহ) পরিত্যাগ করতে এবং আলেমগণকে কেবল কুরআন ও হাদীছ দ্বারা ফৎওয়া দেওয়ার আদেশ দেন। আর তারা যেন পূর্ববর্তী মুজতাহিদ ইমামদের মধ্য থেকে কারু তাক্বলীদ না করেন। বরং কুরআন, হাদীছ, ইজমা ও কিয়াস দ্বারা ইস্তিমবাতের মাধ্যমে ইজতিহাদ দ্বারা যেন তাদের ফায়ছালা হয়’।[37]

ঠিক এটাই হ’ল আহলেহাদীছদের (আহলে সুন্নাত) মানহাজ (পদ্ধতি), মাসলাক (পথ) ও দাওয়াত। আলহামদুল্লিাহ।

আহলেহাদীছদেরকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ইংরেজ আমলের সৃষ্ট আখ্যায়িতকারীরা একটু চোখ খুলে ৬ষ্ঠ হিজরীর এই গায়ের মুক্বাল্লিদ খলীফার জীবনী পড়ুক। যাতে তাদের নযরে কিছু আসে।

এই মুজাহিদ খলীফা সম্পর্কে হাফেয যাহাবী লিখেছেন যে, তিনি মুক্বাল্লিদ সম্পর্কে বলেছেন, কুরআন ও সুনানে আবুদাউদের উপরে আমল কর। নতুবা এই তলোয়ার প্রস্ত্তত রয়েছে’।[38]

হাফেয যাহাবী আরো বলেছেন,وعظم صيت العباد والصالحين في زمانه، وكذلك أهل الحديث، وارتفعت منزلتهم عنده فكان يسألهم الدعاء. وانقطع في أيامه علم الفروع، وخاف منه الفقهاء، وأمر بإحراق كتب المذهب بعد أن يجرد ما فيها من الحديث، فأحرق منها جملة في سائر بلاده، كالمدوَّنة، وكتاب ابن يونس، ونوادر ابن أبي زيد، والتهذيب للبرادعي، والواضحة لابن حبيب.  ‘তাঁর আমলে ইবাদতগুযার ও সৎ লোকদের সুখ্যাতি বৃদ্ধি পেয়েছিল। অনুরূপভাবে আহলেহাদীছদের মর্যাদাও বৃদ্ধি পেয়েছিল। তিনি তাদের (আহলেহাদীছদের) নিকট দো‘আ চাইতেন। তাঁর শাসনামলে প্রশাখাগত ইলমের অবসান হয়েছিল (অর্থাৎ তাক্বীলীদী ফিক্বহ শেষ হয়ে গিয়েছিল)। (মুক্বাল্লিদ) ফক্বীহগণ তাকে ভয় পেতেন। তিনি হাদীছসমূহকে আলাদা করার পরে মাযহাবী গ্রন্থসমূহ পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অতঃপর সমগ্র দেশে অনেক মাযহাবী গ্রন্থ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। যেমন-আল-মুদাউওয়ানাহ, কিতাবু ইবনে ইউনুস, ইবনু আবী যায়েদের আন-নাওয়াদির, বারাদিঈর আত-তাহযীব ও ইবনু হাবীবের আল-ওয়াযিহাহ’।

قال محيي الدين عبد الواحد بن علي المراكشي في كتاب المعجب له: ولقد كنت بفاس، فشهدت يؤتى بالأحمال منها فتوضع ويطلق فيها النار. মুহিউদ্দীন আব্দুল ওয়াহিদ বিন আলী আল-মার্রাকুশী তার ‘আল-মু‘জাব’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘আমি ফাস (নগরীতে) ছিলাম। আমি দেখেছি যে, (ফেক্বহী) কেতাবসমূহের বোঝা এনে রাখা হ’ত এবং সেগুলিতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হ’ত’।[39]

হে আল্লাহ! এই মুজাহিদ খলীফা ও আমীরুল মুমিনীনকে জান্নাতে উচ্চমর্যাদা নছীব করুন এবং আমাদের গোনাহখাতা মাফ করে স্বীয় দয়া ও অনুগ্রহে এরূপ ছহীহ আক্বাদীসম্পন্ন মুজাহিদ ও মুমিনদের সাহচর্য দান করুন-আমীন!

৩১. জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী (মৃঃ ৯১১ হিঃ) বলেছেন, ‘অতঃপর তাদের পরে এমন ব্যক্তিরা আগমন করেছিলেন, যারা তাদের হেদায়াতকে অাঁকড়ে ধরেছেন ও তাদের পথে চলেছেন। যেমন- ইয়াহ্ইয়া বিন সাঈদ আল-ক্বাত্ত্বান, আব্দুর রহমান বিন মাহদী, বিশর ইবনুল মুফায্যাল, খালেদ ইবনুল হারিছ, আব্দুর রায্যাক, ওয়াকী‘, ইয়াহ্ইয়া বিন আদম, হুমায়েদ বিন আব্দুর রহমান আর-রাওয়াসী, ওয়ালীদ বিন মুসলিম, হুমায়দী, শাফেঈ, ইবনুল মুবারক, হাফছ বিন গিয়াছ, ইয়াহ্ইয়া বিন যাকারিয়া বিন আবু যায়েদাহ, আবুদাঊদ ত্বায়ালিসী, আবুল ওয়ালীদ ত্বায়ালিসী, মুহাম্মাদ বিন আবু ‘আদী, মুহাম্মাদ বিন জা‘ফর, ইয়াহ্ইয়া বিন ইয়াহ্ইয়া নিশাপুরী, ইয়াযীদ বিন যুরা‘ই, ইসমাঈল বিন ‘উলাইয়াহ, আব্দুল ওয়ারিছ বিন সাঈদ এবং তার পুত্র আব্দুছ ছামাদ, ওয়াহাব বিন জারীর, আযহার বিন সা‘দ, ‘আফফান বিন মুসলিম, বিশর বিন ওমর, আবূ আছিম আন-নাবীল, মু‘তামির বিন সুলায়মান, নাযর বিন শুমাইল, মুসলিম বিন ইবরাহীম, হাজ্জাজ বিন মিনহাল, আবু ‘আমের আল-আক্বাদী, আব্দুল ওয়াহ্হাব আছ-ছাক্বাফী, ফিরইয়াবী, ওয়াহাব বিন খালিদ, আব্দুল্লাহ বিন নুমায়ের ও অন্যান্যগণ। এঁদের কেউই তাঁদের পূর্বের কোন ইমামের তাক্বলীদ করেননি’ (ما من هؤلاء أحد قلد إماما كان قبله)।[40]

জানা গেল যে, ইমাম আহমাদ, ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী, ইমাম ইয়াহ্ইয়া বিন মাঈন প্রমুখের শিক্ষক, নির্ভরযোগ্য, মুতক্বিন, হাফেয, আদর্শবান ইমাম আবু সা‘ঈদ ইয়াহ্ইয়া বিন সা‘ঈদ বিন ফার্রূখ আল-ক্বাত্তবান আল-বাছরী (মৃঃ ১৯৮ হিঃ) মুক্বাল্লিদ ছিলেন না।

ফায়েদা : ইয়াহ্ইয়া বিন সাঈদ আল-ক্বাত্তবান তাবেঈ সুলায়মান বিন ত্বারখান আত-তায়মী (রহঃ) সম্পর্কে বলেছেন, তিনি আমাদের নিকটে আহলেহাদীছদের অন্তর্ভুক্ত’।[41]

৩২. ছিক্বাহ, ছাবত, হাফেয, রিজাল ও হাদীছের গভীর জ্ঞানসম্পন্ন ইমাম আবু সাঈদ আব্দুর রহমান বিন মাহদী আল-বাছরী (মৃঃ ১৯৮ হিঃ) সুয়ূত্বীর ভাষ্য অনুযায়ী মুক্বাল্লিদ ছিলেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৩৩. ছিক্বাহ, ছাবত, আবেদ, ইমাম আবু ইসমাঈল বিশর ইবনুল মুফায্যাল বিন লাহিক্ব আর-রাক্বাশী আল-বাছরী (মৃঃ ১৮৬ অথবা ১৮৭ হিঃ) সুয়ূত্বীর বক্তব্য মতে মুক্বাল্লিদ ছিলেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৩৪. ছিক্বাহ, ছাবত, ইমাম আবু ওছমান খালেদ ইবনুল হারিছ বিন ওবায়েদ বিন মুসলিম আল-হুজায়মী আল-বাছরী (মৃঃ ১৮৬ হিঃ) সুয়ূত্বীর কথা মতে মুক্বাল্লিদ ছিলেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৩৫. জমহূর বিদ্বানগণের নিকট নির্ভরযোগ্য, সত্যবাদী ইমাম আব্দুর রায্যাক বিন হুমাম আছ-ছান‘আনী আল-ইয়ামানী (মৃঃ ২১১ হিঃ) সুয়ূত্বীর বক্তব্য অনুযায়ী তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৩৬. নির্ভরযোগ্য, হাফেয, আবেদ, ইমাম আবু সুফিয়ান ওয়াকী‘ ইবনুল জার্রাহ বিন মুলাইহ আর-রাওয়াসী আল-কূফী (মৃঃ ১৯৭ হিঃ) সুয়ূত্বীর ভাষ্যমতে তাক্বলীদকারী ছিলেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৩৭. বিশ্বস্ত, হাফেয, ফাযেল, আবু যাকারিয়া ইয়াহ্ইয়া বিন আদম বিন সুলায়মান আল-কূফী (মৃঃ ২০৩ হিঃ) সম্পর্কে সুয়ূত্বী বলেছেন যে, তিনি তাঁর পূর্বের কোন একজন ইমামেরও তাক্বলীদ করেননি (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৩৮. ছিক্বাহ ইমাম আবু আওফ হুমায়েদ বিন আব্দুর রহমান বিন হুমায়েদ আর-রাওয়াসী আল-কূফী (মৃঃ ১৮৯ হিঃ) সুয়ূত্বীর কথানুসারে তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৩৯. ছিক্বাহ, সত্যবাদী, মুদাল্লিস, ইমাম আবুল আববাস ওয়ালীদ বিন মুসলিম আল-কুরাশী আদ-দিমাশক্বী (মৃঃ ১৯৪ হিঃ) সুয়ূত্বীর মতে তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৪০. ইমাম বুখারীর শিক্ষক ছিক্বাহ, হাফেয, ফক্বীহ, ইমাম আবুবকর আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের বিন ঈসা আল-হুমায়দী আল-মাক্কী (মৃঃ ২১৯ হিঃ) সুয়ূতবীর কথানুসারে তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৪১. ছিক্বাহ, ছাবত, ফক্বীহ, আলেম, দানশীল, মুজাহিদ, ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক আল-মারওয়াযী (মৃঃ ১৮১ হিঃ) সুয়ূত্বীর কথানুপাতে তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৪২. ছিক্বাহ, সত্যবাদী, ফক্বীহ আবু ওমর হাফছ বিন গিয়াছ বিন ত্বালক্ব বিন মু‘আবিয়া আল-কূফী আল-ক্বাযী (মৃঃ ১৯৫ হিঃ) সুয়ূত্বীর বক্তব্যানুপাতে তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

সতর্কীকরণ : হাফছ বিন গিয়াছ (রহঃ) বলেছেন,كنت أجلس إلى أبي حنيفة فأسمعه يسأل عن مسألة في اليوم الواحد فيفتي فيها بخمسة أقاويل، فلما رأيت ذلك تركته وأقبلت على الحديث ‘আমি আবু হানীফার কাছে বসতাম। একটি মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হ’লে সে বিষয়ে তাঁকে এক দিনে পাঁচ রকম ফৎওয়া দিতে শুনলাম। যখন আমি এটা দেখলাম, তখন তাকে ত্যাগ করলাম এবং হাদীছের প্রতি মনোনিবেশ করলাম’।[42] ইবরাহীম বিন সাঈদ আল-জাওহারী (রহঃ) থেকে এই বর্ণনার রাবী আবুবকর আহমাদ বিন জা‘ফর বিন মুহাম্মাদ বিন সালম ছিক্বাহ বা নির্ভরযোগ্য ছিলেন।[43]

আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন হাম্বল[44] এবং আহমাদ বিন ইয়াহ্ইয়া বিন ওছমান[45] উভয়েই তার মুতাবা‘আত করেছেন। অর্থাৎ তাঁরা উক্ত রেওয়ায়াতকে ইমাম ইবরাহীম বিন সাঈদ আল-জাওহারী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।

প্রতীয়মান হ’ল যে, ইমাম হাফছ বিন গিয়াছ আল-কূফী আহলে রায়-এর মাযহাব ছেড়ে আহলেহাদীছদের মাযহাবকে গ্রহণ করেছিলেন। আল্লাহ তাঁর উপরে রহম করুন!

৪৩. ছিক্বাহ, মুতক্বিন, ইমাম আবু সাঈদ ইয়াহ্ইয়া বিন যাকারিয়া বিন আবী যায়েদাহ আল-হামাদানী আল-কূফী (মৃঃ ১৮৪ হিঃ) সুয়ূত্বীর মতে তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৪৪. ছিক্বাহ ও সত্যবাদী, হাফেয আবুদাঊদ সুলায়মান বিন দাঊদ ইবনুল জারূদ আত-ত্বায়ালিসী আল-বাছরী (মৃঃ ২০৪ হিঃ) সুয়ূত্বীর মতে তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৪৫. ছিক্বাহ, ছাবত, ইমাম আবুল ওয়ালীদ হিশাম বিন আব্দুল মালিক আল-বাহিলী আত-ত্বায়ালিসী আল-বাছরী (মৃঃ ২২৭ হিঃ) সুয়ূত্বীর মতে তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৪৬. ছিক্বাহ ইমাম আবু ‘আমর মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম বিন আবু ‘আদী আল-বাছরী (মৃঃ ১৯৪ হিঃ) সুয়ূত্বীর মতে তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৪৭. গুনদার নামে পরিচিত নির্ভরযোগ্য ও সত্যবাদী, জমহূর যাকে ছিক্বাহ বলেছেন, ইমাম মুহাম্মাদ বিন জা‘ফর আল-হুযালী আল-বাছরী (মৃঃ ১৯৪ হিঃ) সুয়ূত্বীর মতে তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৪৮. ছিক্বাহ, ছাবত, ইমাম আবু যাকারিয়া ইয়াহ্ইয়া বিন ইয়াহ্ইয়া বিন বকর বিন আব্দুর রহমান আত-তামীমী আন-নিশাপুরী (মৃঃ ২২৬ হিঃ) সুয়ূত্বীর মতে তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৪৯. ছিক্বাহ, ছাবত, ইমাম আবু মু‘আবিয়া ইয়াযীদ বিন যুরাই‘ আল-বাছরী (মৃঃ ১৮২ হিঃ) সুয়ূত্বীর কথানুসারে মুক্বাল্লিদ ছিলেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৫০. ইবনু উলাইয়াহ নামে পরিচিত ছিক্বাহ, হাফেয, ইমাম আবু বিশর ইসমাঈল বিন ইবরাহীম বিন মিক্বসাম আল-আসাদী আল-বাছরী (মৃঃ ১৯৩ হিঃ) সুয়ূতবীর মতানুসারে কারো তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৫১. ছিক্বাহ, ছাবত, সুন্নী, ইমাম আবু ওবায়দা আব্দুল ওয়ারিছ বিন সাঈদ বিন যাকওয়ান আল-আমবারী আত-তান্নূরী আল-বাছরী (মৃঃ ১৮০ হিঃ) সুয়ূত্বীর মতে মুক্বাল্লিদ ছিলেন না।

৫২. ছিক্বাহ, সত্যবাদী, ইমাম আবু সাহল আব্দুছ ছামাদ বিন আব্দুল ওয়ারিছ বিন সাঈদ আল-বাছরী (মৃঃ ২০৭ হিঃ) সুয়ূত্বীর মতে তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৫৩. ছিক্বাহ, ইমাম আবুল আববাস ওয়াহাব বিন জারীর বিন হাযেম বিন যায়েদ আল-বাছরী আল-আযদী (মৃঃ ২০৬ হিঃ) সুয়ূত্বীর মতে কারো তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৫৪. ছিক্বাহ ইমাম আবুবকর আযহার বিন সাঈদ আস-সাম্মান আল-বাহেলী আল-বাছরী (মৃঃ ২০৩ হিঃ) সুয়ূত্বীর মতে মুক্বাল্লিদ ছিলেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৫৫. ছিক্বাহ, ছাবত, ইমাম আবু ওছমান ‘আফফান বিন মুসলিম বিন আব্দুল্লাহ আল-বাহেলী আছ-ছাফ্ফার আল-বাছরী (মৃঃ ২১৯ হিঃ) সুয়ূত্বীর মতে কারো মুক্বাল্লিদ ছিলেন না।

৫৬. ছিক্বাহ, ইমাম আবু মুহাম্মাদ বিশর বিন ওমর ইবনুল হাকাম আয-যাহরানী আল-আযদী আল-বাছরী (মৃঃ ২০৯ হিঃ) সুয়ূত্বীর মতে কারো তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৫৭. ছিক্বাহ, ছাবত, ইমাম আবু ‘আছেম যাহহাক বিন মাখলাদ বিন যাহ্হাক বিন মুসলিম আশ-শায়বানী আন-নাবীল আল-বাছরী (মৃঃ ২১২ হিঃ) সুয়ূতবীর মতে কারো তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৫৮. ছিক্বাহ, ইমাম আবু মুহাম্মাদ মু‘তামির বিন সুলায়মান বিন ত্বারখান আত-তায়মী আল-বাছরী (মৃঃ ১৮৭ হিঃ) সুয়ূত্বীর মতে তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৫৯. ছিক্বাহ, ছাবত, ইমাম আবুল হাসান নাযর বিন শুমাইল আল-মাযেনী আল-বাছরী আন-নাহবী (মৃঃ ২০৪ হিঃ) সুয়ূত্বীর মতে তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৬০. ছিক্বাহ, ইমাম আবূ আমর মুসলিম বিন ইবরাহীম আল-আযদী আল-ফারাহীদী আল-বাছরী (মৃঃ ২২২ হিঃ) সুয়ূত্বীর মতে কারো তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৬১. ছিক্বাহ, ফাযেল, ইমাম আবু মুহাম্মাদ হাজ্জাজ বিন মিনহাল আল-আনমাত্বী আস-সুলামী আল-বাছরী (মৃঃ ২১৭ হিঃ) সুয়ূতবীর মতানুসারে তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৬২. ছিক্বাহ, ইমাম আবু আমের আব্দুল মালেক বিন আমর আল-ক্বায়সী আল-আক্বাদী (মৃঃ ২০৫ হিঃ) সুয়ূতবীর মতে কারো তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৬৩. ছিক্বাহ, সত্যবাদী, ইমাম আবু মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াহ্হাব বিন আব্দুল মাজীদ আছ-ছাক্বাফী আল-বাছরী (মৃঃ ১৯৪ হিঃ) সুয়ূতবীর মতে কারো তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৬৪. ছিক্বাহ, সত্যবাদী, ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ বিন ওয়াক্বিদ আয-যাববী আল-ফিরইয়াবী (মৃঃ ২১২ হিঃ) সুয়ূত্বীর মতে তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

ইমাম ফিরইয়াবী নিজের এবং নিজের সাথীদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমরা আহলেহাদীছদের একটা জামা‘আত ছিলাম’।[46]

৬৫. ছিক্বাহ, সত্যবাদী, ইমাম আবুবকর ওহায়েব বিন খালেদ বিন আজলান আল-বাহিলী আল-বাছরী (মৃঃ ১৬৫ হিঃ) সুয়ূতবীর মতে কারো তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

সতর্কীকরণ : মূল কপিতে ওয়াহাব বিন খালেদ লিখিত আছে। যেটি লেখক বা কপিকারীর ভুল বলে অনুমিত হয়। আর যদি এটি ভুল না হয় তাহলে এই ত্বাবাক্বাতে আবু খালেদ বিন ওয়াহাব বিন খালেদ আল-হুমায়রী আল-হিমছী ছিক্বাহ ছিলেন।[47]

৬৬. আহলে সুন্নাতের নির্ভরযোগ্য ইমাম আবু হিশাম আব্দুল্লাহ বিন নুমায়ের আল-কূফী আল-হামাদানী (মৃঃ ১৯৯ হিঃ) সুয়ূত্বীর মতে কারো তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৬৭. জালালুদ্দীন আব্দুর রহমান বিন আবুবকর সুয়ূত্বী (মৃঃ ৯১১ হিঃ) আরো বলেছেন, ‘অতঃপর তাদের পরে আগমন করেছিলেন আহমাদ বিন হাম্বল, ইসহাক্ব বিন রাহওয়াইহ, আবু ছাওর, আবু ওবায়েদ, আবু খায়ছামাহ, আবু আইয়ূব আল-হাশেমী, আবু ইসহাক্ব আল-ফাযারী, মাখলাদ ইবনুল হুসায়েন, মুহাম্মাদ বিন ইয়াহ্ইয়া আয-যুহলী, আবু শায়বার পুত্রদ্বয় আবুবকর ও ওছমান, সাঈদ বিন মানছূর, কুতায়বা, মুসাদ্দাদ, ফাযল বিন দুকায়েন, মুহাম্মাদ ইবনুল মুছান্না, বুনদার, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন নুমায়ের, মুহাম্মাদ ইবনুল ‘আলা, হাসান বিন মুহাম্মাদ আয-যা‘ফারানী, সুলায়মান বিন হারব, ‘আরেম ও তাদের মতো অন্যেরা। ليس منهم أحد قلد رجلاً، وقد شاهدوا من قبلهم ورأوهم فلو رأوا آنفسهم فى سعة من أن يقلدوا دينهم أحدًا منهم لقلّدوا তাদের মধ্যে কেউই কোন ব্যক্তির তাক্বলীদ করনেনি। তারা তাদের পূর্বের লোকদেরকে দেখেছিলেন এবং তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। যদি তারা তাদের দ্বীনে কারো তাক্বলীদ করা জায়েয মনে করতেন, তবে তারা তাদের (পূর্ববর্তীদের) তাক্বলীদ করতেন’।[48]

সুয়ূত্বীর এই সুস্পষ্ট উদ্ধৃতি থেকে প্রতীয়মান হ’ল যে, ইবনু রাহওয়াইহ নামে পরিচিত নির্ভরযোগ্য ইমাম আবু মুহাম্মাদ ইসহাক্ব বিন ইবরাহীম বিন মাখলাদ আল-হানযালী আল-মারওয়াযী (মৃঃ ২৩৮ হিঃ) মুক্বাল্লিদ ছিলেন না। তার (ইমাম ইসহাক্ব বিন রাহওয়াইহ) সম্পর্কে হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী লিখেছেন, مجتهد قرين أحمد بن حنبل ‘তিনি মুজতাহিদ, আহমাদ বিন হাম্বলের সাথী’।[49]

৬৮. ছিক্বাহ, ফাযেল, ইমাম আবু ওবায়েদ আল-ক্বাসেম বিন সাল্লাম আল-বাগদাদী (মৃঃ ২২৪ হিঃ) সুয়ূত্বীর বক্তব্যানুপাতে তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৬৯. ছিক্বাহ, ছাবত, ইমাম আবু খায়ছামাহ যুহায়ের বিন হারব বিন শাদ্দাদ আন-নাসাঈ আল-বাগদাদী (মৃঃ ২৩৪ হিঃ) সুয়ূত্বীর বক্তব্য অনুযায়ী কারো তাক্বলীদ করতেন না (৩১ নং উক্তি দ্রঃ)

৭০. ছিক্বাহ, জলীলুল কদর ইমাম আবু আইয়ূব সুলায়মান বিন দাঊদ বিন দাঊদ বিন আলী আল-হাশেমী আল-ফক্বীহ আল-বাগদাদী (মৃঃ ২১৯ হিঃ) সুয়ূত্বীর মতে কারো তাক্বলীদ করতেন না (৬৭ নং উক্তি দ্রঃ)

৭১. ছিক্বাহ, হাফেয, ইমাম আবু ইসহাকব ইবরাহীম বিন মুহাম্মাদ ইবনুল হারেছ আল-ফাযারী (মৃঃ ১৮৯ হিঃ) সুয়ূত্বীর মতে কারো তাক্বলীদ করতেন না (৬৭ নং উক্তি দ্রঃ)

৭২. ছিক্বাহ, ফাযেল, ইমাম আবু মুহাম্মাদ মাখলাদ ইবনুল হুসায়েন আল-মুহাল্লাবী আল-বাছরী (মৃঃ ১৯১ হিঃ) সুয়ূতবীর মতে তাক্বলীদ করতেন না (৬৭ নং উক্তি দ্রঃ)

৭৩. ছিক্বাহ, হাফেয, ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইয়াহ্ইয়া বিন আব্দুল্লাহ বিন খালেদ আয-যুহলী আন-নিশাপুরী (মৃঃ ২৬৮ হিঃ) সুয়ূতবীর মতে কারো তাক্বলীদ করতেন না (৬৭ নং উক্তি দ্রঃ)

৭৪. ছিক্বাহ, হাফেয ইমাম, আবুবকর আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আবু শায়বাহ ইবরাহীম বিন ওছমান আল-ওয়াসেত্বী আল-কূফী (মৃঃ ২৩৫ হিঃ) সুয়ূত্বীর বক্তব্য অনুযায়ী কারো তাক্বলীদ করতেন না (৬৭ নং উক্তি দ্রঃ)

৭৫. ছিক্বাহ, হাফেয, ইমাম আবুল হাসান ওছমান বিন আবী শায়বাহ আল-‘আবসী আল-কূফী (মৃঃ ২৩৯ হিঃ) সুয়ূতবীর মতে কারো তাক্বলীদ করতেন না।

[চলবে]


[1]. তাযকিরাতুল হুফফায, ৩/৭৮২, জীবনী ক্রমিক নং ৭৭৫; তারীখুল ইসলাম, ২৩/৫৬৮

[2]. তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত, ২/ ১৯৭

[3]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ১৪/৪৯১

[4]. তাযকিরাতুল হুফফায, ৩/৮৭০, জীবনী ক্রমিক নং ৮৪০

[5]. তারীখু ওলামাইল আন্দালুস, ১/১৮৯; অন্য সংস্করণ, ২/১৩৩; আরো দেখুন : তারীখু কুযাতিল আন্দালুস ১/৪৭, ১৪২; ইবনু সাঈদ আল-মাগরিবী, আল-মুগরিব ফি হুলাল মাগরিব, ১/৩২

[6]. আল-ইবার ফি খাবারি মান গাবার, ১/৪৬০

[7]. ওফায়াতুল আ‘য়ান, ৪/১৯১, জীবনী ক্রমিক নং ৫৭০

[8]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ১৫/৫৪৫; তারীখুল ইসলাম, ২৫/৪৩৫

[9]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ১৩/১০৯

[10]. আল-ইবার ফি খাবারি মান গাবার, ১/৩৩৯

[11]. মাজমূ‘ঊ ফাতাওয়া, ২০/৩৯-৪০।  

[12]. মুজতাহিদ মুত্বলাক্ব তিনি যিনি ইজতিহাদের সকল শর্ত পূরণ করেছেন এবং শরী‘আতের প্রতিটি বিষয়েই ফৎওয়া প্রদান করার যোগ্যতা রাখেন ও ফৎওয়া প্রদান করেন।- অনুবাদক।

[13]. যিনি সকল ফিক্বহী মাসায়েল সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখেন তাকে মুজতাহিদ ‘আম বলা হয়।-অনুবাদক।

[14]. আল-কাশিফ ফী মা‘রিফাতি মান লাহু রিওয়াতুন ফিল কুতুবিস সিত্তাহ, ৩/১৮, ক্রমিক নং ৪৭৯০

[15]. মুক্বাদ্দামা ফায়যুল বারী, ১/৫৮

[16]. তাক্বরীয বা মুক্বাদ্দামা ফাযলুল বারী, ১/৩৬

[17]. নববী, শরহ ছহীহ মুসলিম, ১/২১০, হা/২১-এর অধীনে; ৫নং উক্তি দ্রঃ

[18]. মুক্বাদ্দামা ছহীহ মুসলিম, পৃঃ ৬

[19]. ১৮ নং উক্তি দ্রঃ; তাহক্বীক্বী মাক্বালাত, ২/৫৬৩

[20]. ত্বাবাক্বাতুশ শাফেঈয়া আল-কুবরা, ২/৭৮, ইবনুল মুনযির-এর জীবনী দ্রঃ

[21]. ঐ, ১/২২৫; অন্য সংস্করণ, ১/৩০৩

[22]. হাশিয়াতুল ক্বালয়ূবী আলা শারহি জালালুদ্দীন মহল্লী আলা মিনহাজিত ত্বালিবীন, ১/১০

[23]. ইরশাদুস সারী লিশরহে ছহীহিল বুখারী, ৫/৩০৭, হা/৩৩০০, ১০/১০৭, হা/৬৯৬২

[24]. ইরশাদুস সারী, ৫/৩৫, হা/৫১০৫

[25]. ফাৎহুল বারী, ৩/১১২, হা/৭১৩৮

[26]. আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহাযযাব, ১/৪৩

[27]. 

[28]. তারীখু বাগদাদ, ১১/২৬৭, রাবী ক্রমিক নং ৬০২৮, সনদ ছহীহ

[29]. আন-নুবযাতুল কাফিয়া ফী আহকামি উছূলিদ দ্বীন, পৃঃ ৭০-৭১; উপরন্তু দেখুন : ইবনু হাযম, আল-ইহকাম ও আল-মুহাল্লা ফী শারহিল মুজাল্লাহ বিল-হুজাজি ওয়াল-আছার

[30]. কিতাবুদ দুর্রাহ ফীমা ইয়াজিবু ই‘তিক্বাদুহু, পৃঃ ৪২৬৭; উপরন্তু দেখুন : দ্বীন মেঁ তাক্বলীদ কা মাসআলাহ, পৃঃ ৩৯

[31]. আর-রিসালাতুল বাহিরাহ, ১/৫

[32]. জামে‘উ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাযলিহি, ২/২১৮

[33]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ১৮/১৫৭

[34]. জামে‘উ বায়ানিল ইলম ওয়া ফাযলিহি, ২/২২৯

[35]. দেখুন : মুসাল্লামুছ ছুবূত, পৃঃ ২৮৯; দ্বীন মেঁ তাক্বলীদ কা মাসআলা, পৃঃ ৮-১১

[36]. ওফায়াতুল আ‘য়ান, ৭/১০

[37]. ঐ, ৭/১১।

[38]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ২১/৩১৪, সংক্ষেপায়িত

[39]. যাহাবী, তারীখুল ইসলাম, ৪২/২১৬

[40]. সুয়ূত্বী, আর-রাদ্দু আলা মান উখলিদা ইলাল আরয ওয়া জাহিলা আন্নাল ইজতিহাদা ফী কুল্লি ‘আছরিন ফারয, পৃঃ ১৩৬-১৩৭

[41]. দেখুন : মুসনাদে আলী ইবনুল জা‘দ, হা/১৩৫৪, সনদ ছহীহ; আল-জারহু ওয়াত-তা‘দীল, ৪/১২৫, সনদ ছহীহ; আমার গ্রন্থ : ইলমী মাক্বালাত, ১/১৬২

[42]. তারীখু বাগদাদ, ১৩/৪২৫, সনদ ছহীহ

[43]. দেখুন : আত-তানকীল বিমা ফী তা’নীবিল কাওছারী মিনাল আবাত্বীল, ১/১০৩, ক্রমিক  নং ১৩

[44]. আস-সুন্নাহ, হা/৩১৬।

[45]. কিতাবুল মা‘রিফাহ ওয়াত-তারীখ, ২/৭৮৯।

[46]. আল-জারহু ওয়াত-তা‘দীল, ১/৬০, সনদ ছহীহ; ইলমী মাক্বালাত, ১/১৬৪।

[47]. দেখুন : তাক্বরীবুত তাহযীব, রাবী নং ৭৪৭৪।

[48]. আর-রাদ্দু আলা মান উখলিদা ইলাল আরয, পৃঃ ১৩৭।

[49]. তাক্বরীবুত তাহযীব, রাবী নং ৩৩২।





আধুনিক বিজ্ঞানে ইসলামের ভূমিকা - ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
শাহ ইসমাঈল শহীদ (রহঃ)-এর সাথে একটি শিক্ষণীয় বিতর্ক - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
মানব জাতির প্রতি ফেরেশতাদের দো‘আ ও অভিশাপ (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - মুহাম্মাদ আবু তাহের, পরিচালক, কিউসেট ইনস্টিটিউট, সিলেট।
ঈদায়নের কতিপয় মাসায়েল - আত-তাহরীক ডেস্ক
জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপনের আবশ্যকতা (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
ধর্মদ্রোহিতা - মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান
দাঈর সফলতা লাভের উপায় - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত পরিচিতি (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
মুসলিম উম্মাহর পদস্খলনের কারণ (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - মীযানুর রহমান মাদানী
শারঈ ঝাড়-ফুঁক : একটি পর্যালোচনা - মুহাম্মাদ আবু তাহের, পরিচালক, কিউসেট ইনস্টিটিউট, সিলেট।
ছাদাক্বাতুল ফিতরের বিধান - লিলবর আল-বারাদী - যশপুর, তানোর, রাজশাহী
মহামনীষীদের পিছনে মায়েদের ভূমিকা (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আরও
আরও
.