পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ । পর্ব ৭ । পর্ব ৮ । শেষ পর্ব ।
জামা‘আতুল মুসলিমীন এবং তাদের ইমামকে অাঁকড়ে ধরবে :
ফিরক্বায়ে মাসঊদিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মাসঊদ ছাহেব নিজেকে এই হাদীছের সত্যায়ন
হিসাবে মনে করছেন। অর্থাৎ ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’ দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল তার
নতুন গজিয়ে ওঠা দল এবং ‘ইমাম’ দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল স্বয়ং তিনি নিজেই। অতঃপর
তিনি এই জামা‘আতকে তাগূত সরকারের নিকট থেকে একাধিকবার রেজিস্ট্রেশনও
করিয়েছেন।
সম্মানিত শায়খ ডঃ আবূ জাবের আব্দুল্লাহ দামানভী (আল্লাহ তাঁকে হেফাযত করুন) স্বীয় ‘ফিরক্বায়ে জাদীদাহ’ গ্রন্থে মাসঊদ ছাহেবের এই ভেল্কিবাজি নস্যাৎ করে দিয়েছেন এবং অকাট্য দলীল ও প্রমাণাদি দ্বারা এটি সাব্যস্ত করেছেন যে, ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’ দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল মুসলমানদের সরকার ও ইমারত এবং ‘ইমাম’ দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল খলীফা ও সুলতান। প্রকাশ থাকে যে, মাসঊদ ছাহেবের ফিরক্বা না কোন হুকূমত ও ইমারতের উপরে শামিল রয়েছে, আর না খলীফা ও সুলতানের উপরে। এজন্য তিনি এই হাদীছের সত্যায়নকারী নন।
সংক্ষেপে নিবেদন হ’ল, আহলে ইলম বা আলেমদের এ ব্যাপারে ঐক্যমত (ইজমা) রয়েছে যে, এই ‘জামা‘আত’ দ্বারা মাসঊদ ছাহেবের জামা‘আত উদ্দেশ্য নয়। বরং হয় ইমারত ও হুকূমত বিশিষ্ট রাজনৈতিক জামা‘আত অথবা ছাহাবা (রাঃ) ও আহলুল হক্ব (অর্থাৎ আহলুল হাদীছ)-এর জামা‘আত।
ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ) উক্ত হাদীছকে ‘বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধ’ (قتال أهل البغي) অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন।[1] যার দ্বারা প্রতীয়মান হ’ল যে, বায়হাক্বীর নিকটেও উক্ত হাদীছের সম্পর্ক রাজনৈতিক বিষয়াবলীর সাথে। নতুবা জামা‘আত না থাকার কি উদ্দেশ্য হ’তে পারে? অথচ উম্মতের একটি দল (অর্থাৎ হক্বপন্থীদের জামা‘আত) কিয়ামত পর্যন্ত সর্বদা নিরবচ্ছিন্নভাবে অবশিষ্ট থাকবে। হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ)ও এর দ্বারা ‘আমীর’ উদ্দেশ্য সাব্যস্ত করেছেন। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় আমীর।
تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِيْنَ وَإِمَامَهُمْ ‘মুসলমানদের জামা‘আত এবং তাদের ইমামকে অাঁকড়ে ধরবে’-এর ব্যাখ্যায় আরয হ’ল, জামা‘আতুল মুসলিমীন (جماعة المسلمين) দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল মুসলমানদের খেলাফত এবং ‘তাদের ইমাম’ (إمامهم) দ্বারা ‘খলীফা’ (خليفتهم) উদ্দেশ্য। এ ব্যাখ্যার দু’টি দলীল নিম্নরূপ :
১. (সুবাই‘ বিন খালেদ) আল-ইয়াশকুরী-এর
সনদে বর্ণিত আছে যে, হুযায়ফা (রাঃ) বলেছেন, فَإِنْ لَمْ تَجِدْ يَوْمَئِذٍ
خَلِيْفَةً فَاهْرَبْ حَتَّى تَمُوْتَ ‘যদি তুমি তখন কোন খলীফা না পাও,
তাহ’লে মৃত্যু অবধি পালিয়ে থাকবে’।[2]
এই হাদীছের রাবীদের (বর্ণনাকারীদের) সংক্ষিপ্ত তাওছীক্ব (সত্যায়ন) নিম্নরূপ :
১. সুবাই‘ বিন খালেদ আল-ইয়াশকুরী (রহঃ) :
ইবনু হিববান, ইমাম ইজলী, হাকিম, আবূ ‘আওয়ানা এবং যাহাবী তাঁকে ছিক্বাহ
(নির্ভরযোগ্য) ও ছহীহুল হাদীছ বলেছেন। আর এ শক্তিশালী তাওছীক্বের পর তাঁকে
‘মাজহূল’ (অজ্ঞাত) বা ‘মাসতূর’ বলা ভুল।[3]
সতর্কীকরণ : এই তাওছীক্বের বিপরীতে সুবাই‘ বিন খালেদ (রহঃ)-এর ব্যাপারে কোন উল্লেখযোগ্য সমালোচনা বিদ্যমান নেই।[4]
২. ছাখর বিন বদর আল-ইজলী (রহঃ) : ইবনু হিববান এবং আবূ ‘আওয়ানাহ তাঁকে ছিক্বাহ ও ছহীহুল হাদীছ বলেছেন। আর এই তাওছীক্বের পরে শায়খ আলবানীর তাঁকে ‘মাজহূল’ বলা ভুল ।
৩. আবুত-তাইয়াহ ইয়াযীদ বিন হুমায়েদ (রহঃ) : ছহীহায়েন এবং সুনানে আরবা‘আর রাবী এবং ছিক্বাহ-ছাবত (নির্ভরযোগ্য) ছিলেন।
৪. আব্দুল ওয়ারিছ বিন সাঈদ (রহঃ) : ছহীহায়েন এবং সুনানে আরবা‘আর রাবী এবং ছিক্বাহ-ছাবত ছিলেন।
৫. মুসাদ্দাদ বিন মুসারহাদ (রহঃ) : ছহীহ বুখারী ও অন্যান্য গ্রন্থের রাবী এবং ছিক্বাহ হাফেয ছিলেন।
প্রমাণিত
হ’ল যে, এ সনদটি হাসান লি-যাতিহি। আর ক্বাতাদার (ছিক্বাহ মুদাল্লিস) নাছর
বিন আছিম থেকে সুবাই‘ বিন খালেদ সূত্রের বর্ণনাটি ছাখর বিন বদরের হাদীছের
শাহেদ বা সমর্থক। যেটি মাসঊদ আহমাদ বিএসসির ‘উছূলে হাদীছ’-এর আলোকে সুবাই‘
বিন খালেদ (রহঃ) পর্যন্ত ছহীহ।[5]
এই ‘হাসান’ বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হল যে, হুযায়ফা (রাঃ)-এর হাদীছে ইমাম দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল খলীফা। স্মর্তব্য যে, হাদীছ হাদীছের ব্যাখ্যা করে। এই হাদীছ দ্বারা ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’ এবং তাদের ইমাম অর্থাৎ খলীফার আলোচনার অকাট্য ফায়ছালা হয়ে যায়।
ফায়েদা : ইমাম ইজলী নির্ভরযোগ্য ইমাম ও ন্যায়পরায়ণ ছিলেন। তাঁকে শৈথিল্যবাদী আখ্যায়িত করা ভুল।[6]
২.
হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِيْنَ
وَإِمَامَهُمْ ‘মুসলমানদের জামা‘আতকে এবং তাদের ইমামকে অাঁকড়ে ধরবে’-এর
ব্যাখ্যায় বলেছেন,قَالَ الْبَيْضَاوِيُّ : الْمَعْنَى إِذَا لَمْ يَكُنْ
فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةٌ فَعَلَيْكَ بِالْعُزْلَةِ وَالصَّبْرِ عَلَى
تَحَمُّلِ شِدَّةِ الزَّمَانِ وَعَضُّ أَصْلِ الشَّجَرَةِ كِنَايَةٌ عَنْ
مُكَابَدَةِ الْمَشَقَّةِ ‘বায়যাবী (মৃঃ ৬৮৫ হিঃ) বলেছেন, এর অর্থ হ’ল,
যখন যমীনে কোন খলীফা থাকবে না, তখন তোমার কর্তব্য হ’ল বিচ্ছিন্ন থাকা এবং
যুগের কষ্ট সহ্য করার ব্যাপারে ধৈর্যধারণ করা। আর গাছের শিকড় কামড়ে থাকা
দ্বারা কষ্ট সহ্য করার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে’।[7]
হাফেয
ইবনু হাজার মুহাম্মাদ বিন জারীর বিন ইয়াযীদ আত-ত্বাবারী (মৃঃ ৩১০ হিঃ)
থেকে বর্ণনা করেছেন যে, وَالصَّوَابُ أَنَّ الْمُرَادَ مِنَ الْخَبَرِ
لُزُومُ الْجَمَاعَةِ الَّذِينَ فِي طَاعَةِ مَنِ اجْتَمَعُوا عَلَى
تَأْمِيرِهِ فَمَنْ نَكَثَ بَيْعَتَهُ خَرَجَ عَنِ الْجَمَاعَةِ، قَالَ :
وَفِي الْحَدِيثِ أَنَّهُ مَتَى لَمْ يَكُنْ لِلنَّاسِ إِمَامٌ فَافْتَرَقَ
النَّاسُ اَحْزَابًا فَلَا يَتَّبِعُ أَحَدًا فِي الْفُرْقَةِ
وَيَعْتَزِلُ الْجَمِيْعَ إِنِ اسْتَطَاعَ ذَلِكَ ‘সঠিক হ’ল, হাদীছ দ্বারা
উদ্দেশ্য ঐ জামা‘আতকে অাঁকড়ে ধরা, যে (দলটি) তার (ইমাম)-এর ইমারতের
ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আর যে ব্যক্তি তার বায়‘আতকে ভঙ্গ করল, সে জামা‘আত
থেকে বের হয়ে গেল। তিনি (ইবনে জারীর) বলেন, আর হাদীছটিতে (এইও) আছে যে,
যখন মানুষের কোন ইমাম থাকবে না এবং লোকেরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে,
তখন সে কোন দলেরই অনুসরণ করবে না এবং সক্ষম হলে সব দল থেকে বিচ্ছিন্ন
থাকবে’।[8]
ছহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাতা আল্লামা
আলী বিন খালাফ বিন আব্দুল মালেক বিন বাত্ত্বাল কুরতুবী (মৃঃ ৪৪৯ হিঃ)
বলেছেন, وفيه حجة لجماعة الفقهاء فى وجوب لزوم جماعة المسلمين وترك القيام
على أئمة الجور- ‘এ হাদীছে ফক্বীহদের জন্য মুসলমানদের জামা‘আতকে অাঁকড়ে
ধরার এবং যালিম শাসকদের বিরোধিতা না করার দলীল রয়েছে’।[9]
হাফেয
ইবনু হাজার উক্ত হাদীছের একটি অংশের ব্যাখ্যায় বলেছেন,وَهُوَ كِنَايَةٌ
عَنْ لُزُومِ جَمَاعَةِ الْمُسْلِمِينَ وَطَاعَةِ سَلَاطِينِهِمْ وَلَوْ
عَصَوْا ‘এটি মুসলমানদের জামা‘আতকে অাঁকড়ে ধরা এবং তাদের শাসকদের আনুগত্য
করার ইঙ্গিতবাহী। যদিও তারা (শাসকবর্গ) নাফরমানী করে’।[10]
হাদীছ ব্যাখ্যাকারকদের (ইবনু জারীর ত্বাবারী, ক্বাযী বায়যাবী, ইবনু বাত্ত্বাল ও হাফেয ইবনু হাজার) উক্ত ব্যাখ্যাসমূহ (সালাফে ছালেহীনের বুঝ অনুপাতে) দ্বারা প্রমাণিত হ’ল যে, উল্লেখিত হাদীছ (জামা‘আতুল মুসলিমীন ও তাদের ইমাকে অাঁকড়ে ধরবে) দ্বারা প্রচলিত জামা‘আত ও দলসমূহ (যেমন মাসঊদ আহমাদ বিএসসির জামা‘আতুল মুসলিমীন রেজিস্টার্ড) উদ্দেশ্য নয়। বরং মুসলমানদের সর্বসম্মত খেলাফত ও খলীফা উদ্দেশ্য।
একটি হাদীছে এসেছে যে, مَنْ مَاتَ وَلَيْسَ
لَهَّ إِمَامٌ مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً ‘যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে
এমতাবস্থায় যে তার কোন ইমাম (খলীফা) নেই, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল’।[11]
এই
হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) তাঁর এক ছাত্রকে বলেছেন
যে, تدري ما الإمام؟ الذي يجتمع المسلمون عليه كلهم يقول: هذا إمام، فهذا
معناه ‘তুমি কি জান (উক্ত হাদীছে বর্ণিত) ইমাম কাকে বলে? ইমাম তিনিই, যার
ইমাম হওয়ার ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহ ঐক্যমত পোষণ করেছে। প্রতিটি লোকই বলবে
যে, ইনিই ইমাম (খলীফা)। এটাই উক্ত হাদীছের মর্মার্থ।[12]
এই ব্যাখ্যা দ্বারাও এটাই প্রমাণিত হয় যে, ‘তাদের ইমাম’(إما مهم) দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল ঐ ইমাম (খলীফা), যার খেলাফতের ব্যাপারে সকল মুসলমানের ইজমা হয়ে গেছে। যদি কারো ব্যাপারে প্রথম থেকেই মতানৈক্য হয়, তবে তিনি এই হাদীছে উদ্দেশ্য নন। এজন্য ফিরক্বায়ে মাসঊদিয়ার (জামা‘আতুল মুসলিমীন রেজিস্টার্ড) উক্ত হাদীছ দ্বারা নিজের তৈরী ও নতুন গজিয়ে ওঠা ফিরক্বাকে উদ্দেশ্য নেয়া ভুল, বাতিল এবং অনেক বড় ধোঁকাবাজি।
আপনারা তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন যে,
কোন নির্ভরযোগ্য ও সত্যবাদী ইমাম, মুহাদ্দিছ, হাদীছের ভাষ্যকার অথবা আলেম
খায়রুল কুরূনের (স্বর্ণ) যুগ, হাদীছ সংকলনের যুগ এবং হাদীছ ব্যাখ্যাতাদের
যুগে (১ম হিজরী শতক থেকে ৯ম হিজরীশতক পর্যন্ত) কেউ কি এ হাদীছ দ্বারা এই
দলীল সাব্যস্ত করেছেন যে, জামা‘আতুল মুসলিমীন দ্বারা খেলাফত উদ্দেশ্য নয়
এবং ‘তাদের ইমাম’ দ্বারা খলীফা উদ্দেশ্য নয়। বরং কাগুজে রেজিস্টার্ড
জামা‘আত এবং তার কাগুজে অসমর্থিত আমীর উদ্দেশ্য? যদি এর কোন প্রমাণ থাকে
তবে যেন পেশ করে। অন্যথায় সাধারণ মুসলমানদেরকে যেন বিভ্রান্ত না করে।
বিস্তারিত আলোচনার জন্য দেখুন : মুহতারাম আবূ জাবের আব্দুল্লাহ দামানভী
হাফিযাহুল্লাহর গ্রন্থ ‘আল-ফিরক্বাতুল জাদীদাহ’।[13]
আহলে সুন্নাতের বিরুদ্ধে মাসঊদ ছাহেবের কতিপয় শিশুসুলভ সমালোচনা :
‘মাযাহিবে খামসাহ’ (পঞ্চ মাযহাব) নামক পুস্তিকার ৩২ পৃষ্ঠায় মাসঊদ ছাহেব এই দাবী করেছেন যে, ছালাতে ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন আযাবি জাহান্নাম....’ পাঠ করা ফরয এবং ‘ছালাতুর রাসূল’ গ্রন্থের ২৭৮ পৃষ্ঠা থেকে হাকীম মুহাম্মাদ ছাদেক শিয়ালকোটী (রহঃ)-এর একটি ইবারত থেকে এই ফলাফল গ্রহণ করে যে ‘উল্লেখিত দো‘আটি পড়া যরূরী নয়’ আহলুস সুন্নাহকে (আহলেহাদীছ) দোষারোপ করার হীন প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।
জবাব-১ : মুহতারাম হাকীম মুহাম্মাদ ছাদেক শিয়ালকোটী (রহঃ)-এর প্রতিটি কথাই আহলেহাদীছদের জন্য দলীল নয়। আর না কোন আহলেহাদীছ তাঁর প্রত্যেক কথাকে দলীল মনে করে। এজন্য অভিযোগটি গোড়াতেই খতম হয়ে গেছে।
জবাব-২ :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,ثُمَّ لْيَتَخَيَّرْ مِنَ الدُّعَاءِ أَعْجَبَهُ
إِلَيْهِ فَيَدْعُو ‘অতঃপর মুছল্লী যেন নিজের জন্য যে কোন দো‘আ পসন্দ করে
এবং দো‘আ করে’।[14]
প্রতীয়মান হ’ল যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তো মুছল্লীকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। কিন্তু মাসঊদ ছাহেব সেই স্বাধীনতাকে হরণ করছেন।
জবাব-৩ :
ইমাম বুখারী (রহঃ) উক্ত হাদীছের উপরে এই অনুচ্ছেদটি বেঁধেছেন,بَابُ مَا
يُتَخَيَّرُ مِنَ الدُّعَاءِ بَعْدَ التَّشَهُّدِ وَلَيْسَ بِوَاجِبٍ ‘তাশাহহুদের পরে যে দো‘আটি বেছে নেয়া হয়, অথচ তা আবশ্যক নয়’।[15]
যদি মাসঊদ ছাহেব তার লকবসহ কোন ফৎওয়া প্রদান করেন, তবে তার ফৎওয়ার টার্গেটে ইমাম বুখারী (রহঃ)ও এসে যাচ্ছেন। (আমরা মুসলমানদেরকে কাফের আখ্যাদান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি)।
জবাব-৪ : ধরুন যে, হাকীম মুহাম্মাদ ছাদেক ও ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর ভুল হয়েছে। তবে এটা তাদের ইজতিহাদী ভুল। আহলুল হাদীছদের নিকটে হক্বের মানদন্ড এবং দলীল তিনটি- ১. কুরআন মাজীদ ২. ছহীহ হাদীছসমূহ ৩. উম্মতের ইজমা।
সতর্কীকরণ : কুরআন মাজীদ ও ছহীহ হাদীছ সমূহ দ্বারা এটা প্রতীয়মান হয় যে, উম্মতের ইজমাও শরী‘আতের দলীল এবং হুজ্জাত বা প্রমাণ। উপরন্তু ইজতিহাদের বৈধতাও প্রমাণিত রয়েছে। আর সালাফে ছালেহীনের আছার দ্বারা দলীল গ্রহণ সর্বোত্তম ইজতিহাদ।
এভাবে মাসঊদ ছাহেব এবং তার দল যুগের কলংক ‘আল-মুসলিম’ নামক পত্রিকায় (নামটি হওয়া উচিৎ ছিল এর বিপরীত) আহলেহাদীছ ও আহলে আছারদের (অর্থাৎ মুহাদ্দিছগণ এবং তাদের সাথীগণ) বিরুদ্ধে ‘দসতূরুল মুত্তাকী’ নামক গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে অপবাদ আরোপ করে রেখেছেন। অথচ আহলেহাদীছদের নিকটে ‘দসতূরুল মুত্তাকী’ না কুরআন, আর না ছহীহ হাদীছসমূহের সংকলন। এজন্য এই গ্রন্থের প্রত্যেকটি উদ্ধৃতি আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে দলীল নয়। এতে কুরআন মাজীদের যে আয়াতসমূহ এবং যে ছহীহ হাদীছ সমূহ রয়েছে, সেগুলি দলীল। এ গ্রন্থের লেখকের নিজস্ব রায় সমূহ কোন আহলেহাদীছের নিকটেই দলীল নয়। সুতরাং কেন আহলেহাদীছদেরকে দোষারোপ করা হচ্ছে?
মাসঊদ ছাহেবের এই শিশুসুলভ কর্মকান্ডের দ্বারা কারা উপকৃত হবে? তিনি কি মুহাদ্দিছদের শত্রুদের হাতকে শক্তিশালী করছেন না?
যেমন- আহলুল হাদীছ নামটি তার নিকটে বিদ‘আত মনে হয়েছে। তাই তার মূলনীতি অনুযায়ী ইমাম বুখারী ও অন্যরা বিদ‘আতী সাব্যস্ত হয়েছেন। কেননা তাঁরা এই নামটি ব্যবহার করেছেন। (আল্লাহর কাছে পানাহ চাই)। বিদ‘আতের এই সুর কোথায় গিয়ে শেষ হবে?
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদিন খুৎবায় বলেন, أَلاَ إِنَّ رَبِّى
أَمَرَنِى أَنْ أُعَلِّمَكُمْ مَا جَهِلْتُمْ مِمَّا عَلَّمَنِى يَوْمِى
هَذَا كُلُّ مَالٍ نَحَلْتُهُ عَبْدًا حَلاَلٌ وَإِنِّى خَلَقْتُ عِبَادِى
حُنَفَاءَ كُلَّهُمْ وَإِنَّهُمْ أَتَتْهُمُ الشَّيَاطِينُ
فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِينِهِمْ وَحَرَّمَتْ عَلَيْهِمْ مَا أَحْلَلْتُ
لَهُمْ ‘আমার রব আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি তোমাদেরকে ঐ সকল বিষয়
শিক্ষা দিব যেগুলি তোমরা অবগত নও এবং যা আমার প্রভু আজ আমাকে শিক্ষা
দিয়েছেন। (আল্লাহ বলেন,) আমি আমার কোন বান্দাকে যে সকল সম্পদ দান করি, তা
হালাল। আমি আমার সকল বান্দাকে ‘হুনাফা’ (হানীফ[16]-এর বহুবচন) করে সৃষ্টি
করেছি। কিন্তু শয়তান তাদের নিকটে এসে তাদেরকে পদস্খলিত করে। আর যে সকল
বস্ত্ত আমি তাদের জন্য হালাল করেছি, সেগুলিকে তাদের জন্য হারাম সাব্যস্ত
করে’।[17]
আল্লাহর কাছে দো‘আ রইল যে, তিনি যেন এসব পথভ্রষ্টকারী শয়তানগুলো থেকে আমাদেরকে স্বীয় হেফাযতে রাখেন এবং আহলুল হাদীছদেরকে (অর্থাৎ মুহাদ্দিছগণ) এই পৃথিবীতে রাজনৈতিক বিজয় দিয়ে তাঁর জামা‘আতুল মুসলিমীন এবং এর ইমাম তথা খলীফাকে ক্বায়েম করে দেন- আমীন!
সতর্কীকরণ : এই প্রবন্ধটি প্রথমে ‘আল-ফিরক্বাতুল জাদীদাহ’-এর শুরুতে প্রকাশিত হয়েছিল। বর্তমানে সংশোধন, সম্পাদনা ও অতিরিক্ত ফায়েদা সহ এটাকে দ্বিতীয় বার প্রকাশ করা হচ্ছে। আল-হামদুলিল্লাহ। (৬ই অক্টোবর, ২০১১ইং)।
[চলবে]
[1]. আস-সুনানুল কুবরা, ৮/১৫৬।
[2]. সুনানে আবু দাঊদ, হা/৪২৪৭, সনদ হাসান; মুসনাদে আবু ‘আওয়ানাহ, ৪/৪২০, হা/৭১৬৮।
[3]. কোন রাবীকে ছিক্বাহ হিসাবে আখ্যায়িত করাকে ‘তাওছীক্ব’ বলে। আর ‘মাজহূল’ শব্দটি দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল ঐ রাবী, যার ইলমী অবস্থা, ন্যায়পরায়ণতা ও স্মরণশক্তি সম্পর্কে মুহাদ্দিছগণ অবগত নন। মাজহূল রাবী দু’প্রকার। ১. মাজহূলুল ‘আইন : যার নাম জ্ঞাত হ’লেও অন্যান্য বিষয়াদি অজ্ঞাত এবং তার নিকট থেকে মাত্র একজনই হাদীছ বর্ণনা করেছেন, এমন রাবীকে ‘মাজহূলুল ‘আইন’ বলা হয়। তাওছীক না করা হলে এমন রাবীর বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়। ২. মাজহূলুল হাল : যে রাবী থেকে দুই কিংবা দু’জনের অধিক ব্যক্তি হাদীছ বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তার তাওছীক করা হয়নি তাকে মাজহূলুল হাল বা ‘মাসতূর’ বলা হয়। জমহূরের নিকটে এমন রাবীর বর্ণনা প্রত্যাখ্যাত (বিস্তারিত দ্রষ্টব্য: ড. মাহমূদ আত-তহহান, তায়সীরু মুছত্বালাহিল হাদীছ, পৃঃ ১২০-১২১; ডক্টর সুহায়েল হাসান, মু‘জামু ইছতিলাহাতিল হাদীছ, পৃঃ ৩০৪-৩০৬)।-অনুবাদক}
[4]. বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন : তাহক্বীক্বী মাক্বালাত, ৩/৩৪৫-৩৫০।
[5]. দেখুন : সুনানে আবু দাঊদ, হা/৪২৪৪; হাকেম (৪/৪৩২-৪৩৩) একে ছহীহ বলেছেন এবং যাহাবী তাঁর সাথে ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
[6]. দেখুন : তাহক্বীক্বী মাক্বালাত, ৩/৩৫১-৩৫৩।
[7]. ফাৎহুল বারী, ১৩/৩৬।
[8]. ফাৎহুল বারী, ১৩/৩৬।
[9]. ইবনু বাত্ত্বাল, শরহে ছহীহ বুখারী, ১০/৩৩।
[10]. ফাৎহুল বারী, ১৩/৩৬।
[11]. ছহীহ ইবনে হিববান, ১০/৪৩৪; হা/৪৫৭৩; হাদীছ হাসান।
[12]. সুওয়ালাতু ইবনে হানী, পৃঃ ১৮৫; অনুচ্ছেদ ২০১১; তাহকীকী মাকালাত ১/৪০৩।
[13]. প্রাপ্তিস্থান : ডঃ আবূ জাবের দামানভী, ব্লক-৩৮, বাড়ী-৬৪৭, কিমাড়ী, করাচী। পোস্ট কোড : ৭৫৬২০।
[14]. ছহীহ বুখারী, হা/৮৩৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৪০২।
[15]. বুখারী, হা/ ৮৩৫-এর পূর্বে।
[16]. ‘হানীফ’ অর্থ একনিষ্ঠ। ‘দ্বীনে হানীফ’ হ’ল ইসলাম ধর্ম। ইবরাহীম (আঃ)-এর ধর্মকে ‘দ্বীনে হানীফ’ বলা হয়। মূলতঃ একনিষ্ঠ মুসলমানগণই হ’লেন হানীফ।-অনুবাদক।
[17]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৬৫।