ছাদাক্বার ন্যায় ফযীলতপূর্ণ আমল

ভূমিকা :

ছাদাক্বা একটি অতুলনীয় ইবাদত। আল্লাহর নৈকট্য হাছিলে এবং তাঁর ক্রোধ প্রশমনে ছাদাক্বার ভূমিকা অনন্য। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে বারবার দান-খয়রাত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর যারা ফরয যাকাত আদায় করে না, তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ছাদাক্বার মাধ্যমে বান্দার পাপরাশি ক্ষমা করা হয়, তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ দেওয়া হয় এবং তাকে জান্নাত লাভের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। এজন্য জান্নাত পিয়াসী ও পরহেযগার বান্দাগণ আল্লাহর রাহে নিজেদের অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে থাকেন। কেননা এর মধ্যেই প্রোথিত আছে ইসলামী অর্থনীতির বুনিয়াদ এবং পরকালে নাজাত লাভের গ্যারান্টি। তবে মহান আল্লাহ দান-ছাদাক্বার বিধান দেওয়ার পাশাপাশি এমন কিছু ইবাদত ও নেক আমলের বিধান দিয়েছেন, যার মাধ্যমে মুমিন বান্দা অর্থ-সম্পদ ব্যয় না করেও ছাদাক্বার নেকী লাভ করতে পারে। বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত এই যে, সচ্ছল-অসচ্ছল নির্বিশেষে সকল মুমিন বান্দা এই আমলগুলোর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছাদাক্বার প্রতিদান ও পুরস্কারে নিজেদের শামিল করে নিতে পারে। বক্ষমাণ নিবন্ধে ছাদাক্বার ন্যায় ফযীলতপূর্ণ এমন কতিপয় নেক আমলের বর্ণনা তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ।

ছাদাক্বার কতিপয় ফযীলত :

ছাদাক্বার মতো মর্যাদাপূর্ণ নেক আমলের বিবরণ দেওয়ার আগে ছাদাক্বার মর্যাদা ও ফযীলত আলোকপাত করা উচিত, যাতে আমরা এর মাধ্যমে সেই আমলগুলো করতে প্রবলভাবে উৎসাহিত হ’তে পারি। দান-ছাদাক্বার নানাবিধ ফযীলত ও উপকারিতা রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি ফযীলত উল্লেখ করা হ’ল।-

১. ছাদাক্বা শয়তানকে বিতাড়িত করে :

মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু শয়তান। ছাদাক্বার মাধ্যমে বান্দা শয়তান থেকে নিরাপত্তা লাভ করতে পারে। বুরাইদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,‌مَا ‌يُخْرِجُ ‌رَجُلٌ ‌شَيْئًا ‌مِنَ ‌الصَّدَقَةِ حَتَّى يَفُكَّ عَنْهَا لَحْيَيْ سَبْعِينَ شَيْطَانًا، ‘বান্দা যখন কিছু ছাদাকবা প্রদান করে, তখন সে যেন তার দু’চোয়াল থেকে সত্তর জন শয়তান বিতাড়িত করে’।[1]

২. ছাদাক্বার মাধ্যমে ফেরেশতাদের দো‘আ লাভ করা যায় :

ফেরেশতাদের দো‘আয় শামিল হ’তে পারা বড়ই সৌভাগ্যের ব্যাপার। দানশীল বান্দাগণ আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাদের দো‘আ লাভে ধন্য হন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ مَلَكًا بِبَابٍ مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ يَقُولُ: مَنْ يُقْرِضِ الْيَوْمَ يُجْزَ غَدًا، وَمَلَكٌ بِبَابٍ آخَرَ يَقُولُ: اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا، وَأَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا، ‘জান্নাতের দরজাসমূহের একটি দরজায় (প্রতিদিন) একজন ফেরেশতা বলতে থাকেন- যে আজ ঋণ দিবে (অর্থাৎ আল্লাহর পথে দান করবে), আগামীতে সে তার প্রতিদান পাবে। আর অপর দরজায় আরেক জন ফেরেশতা বলতে থাকনে- হে আল্লাহ! দানশীলকে উত্তম প্রতিদান দিন এবং কৃপণকে ধ্বংস করুন’।[2] অপর বর্ণনায় এসেছে, প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা পৃথিবীতে আগমন করে। একজন দানশীলদের জন্য উত্তম প্রতিদানের দো‘আ করে। আর অপরজন কৃপণদের জন্য ধ্বংস কামনা করে।[3]

৩. আল্লাহর রাগ প্রশমিত করে :

গোপন ছাদাক্বার মাধ্যমে যত দ্রুত আল্লাহর রাগ প্রশমিত হয়, অন্য কোন আমলের মাধ্যমে তা হয় না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,صَنَائِعُ الْمَعْرُوفِ تَقِي مَصَارِعَ السُّوءِ، وَصَدَقَةُ السِّرِّ تُطْفِئُ غَضَبَ الرَّبِّ، وَصِلَةُ الرَّحِمِ تَزِيدُ فِي الْعُمُرِ، ‘সৎকর্ম সমূহ মন্দ পরিণতি থেকে রক্ষা করে। গোপন ছাদাক্বা আল্লাহর ক্রোধ নিভিয়ে দেয়। আর আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করলে বয়স বৃদ্ধি পায়’।[4]

৪. রোগ-ব্যাধি দূর করে :

বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধি থেকে সুস্থতা লাভের অন্যতম মাধ্যম হ’ল ছাদাক্বা। ছাদাক্বার মাধ্যমে এমন জটিল রোগেরও নিরাময় হয়, কোটি টাকা খরচ করেও যার নিরাময় সম্ভব হয় না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,دَاوُوْا مَرْضَاكُمْ بِالصَّدَقَةِ، وَحَصِّنُوْا أَمْوَالَكُمْ بِالزَّكَاةِ، وَأَعِدُّوْا لِلْبَلاَءِ الدُّعَاءَ، ‘তোমরা তোমাদের পীড়িতদের চিকিৎসা কর ছাদাক্বার মাধ্যমে, তোমরা তোমাদের সম্পদকে সুরক্ষিত কর যাকাত দানের মাধ্যমে এবং বালা-মুছীবত থেকে বাঁচার চেষ্টা কর দো‘আর মাধ্যমে’।[5]

৫. গুনাহ মাফ হয় এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি মেলে :

আদী ইবনু হাতেম (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের বললেন, اتَّقُوا النَّارَ ‘তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ’। এরপর তিনি পিঠ ফিরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। আবার বললেন, ‘তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ’। এরপর তিনি পিঠ ফিরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। আবার বললেন, ‘তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ’। এরপর তিনি পিঠ ফিরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। তিনবার এরূপ করলেন। এমনকি আমরা ভাবছিলাম যে, তিনি হয়তো জাহান্নাম সরাসরি দেখছেন। তিনি আবার বললেন,اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ، فَمَنْ لَمْ يَجِدْ، فَبِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ، ‘তোমরা এক টুকরা খেজুর দিয়ে (ছাদাক্বা করে) হ’লেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। আর কেউ যদি সেটাও না পায়, তাহ’লে উত্তম কথার দ্বারা হ’লেও সে যেন জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচে’।[6] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,تَصَدَّقُوا وَلَوْ بِتَمْرَةٍ، فَإِنَّهَا ‌تَسُدُّ ‌مِنَ ‌الْجَائِعِ، وَتُطْفِئُ الْخَطِيئَةَ، كَمَا يُطْفِئُ الْمَاءُ النَّارَ، ‘তোমরা একটি খেজুর হ’লেও ছাদাক্বা কর। কেননা ছাদাক্বা অনাহারীর ক্ষুধা নিবারণ করে এবং পাপকে মিটিয়ে দেয়, যেমনভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়’।[7]

৬. ছাদাক্বাকারী আরশের ছায়ায় আশ্রয় লাভ করবে :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, سَبْعَةٌ يُّظِلُّهُمُ اللهُ فِى ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ...وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ، ‘আল্লাহ সাত শ্রেণীর লোককে (ক্বিয়ামদের দিন) নিজের ছায়ায় ছায়া দান করবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না। ... (তন্মধ্যে অনত্যম সেই ব্যক্তি), যে গোপনে দান করে, এমনকি তার বাম হাত জানতে পারে না, তার ডান হাত কি দান করল’।[8] অন্যত্র তিনি বলেন,إِنَّ الصَّدَقَةَ لَتُطْفِئُ عَنْ أَهْلِهَا حَرَّ الْقُبُورِ، وَإِنَّمَا يَسْتَظِلُّ الْمُؤْمِنُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِي ظِلِّ صَدَقَتِهِ،...حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ، ‘নিশ্চয়ই ছাদাক্বা কবরের উত্তাপ নিভিয়ে দেয় এবং ক্বিয়ামতের দিন মুমিন তার ছাদাক্বার ছায়াতলে আশ্রয় পাবে... মানুষের বিচারকার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত’।[9] তিনি আরো বলেন, إِنَّ ظِلَّ الْمُؤْمِنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَدَقَتُهُ، ‘ক্বিয়ামতের দিন মুমিনের ছায়া হবে তার ছাদাক্বা’।[10]

ছাদাক্বার ন্যায় ফযীলতপূর্ণ আমল

১. চাশতের ছালাত আদায় করা :

চাশতের ছালাতকে আরবীতে ‘ছালাতুয যোহা’ এবং ‘ছালাতুল ইশরাক্ব’ বলা হয়। ভোরবেলা সূর্য স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে উক্ত ছালাতের সময় শুরু হয়। সূর্যোদয়ের পরপরই পড়লে তাকে ‘ছালাতুল ইশরাক্ব’ বলে এবং কিছু পরে দ্বিপ্রহরের পূর্বে পড়লে তাকে ছালাতুয যোহা বা চাশতের ছালাত বলা হয়।[11] চাশতের ছালাতের মাধ্যমে বান্দা ছাদাক্বা করার ফযীলত অর্জন করতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,فِي الْإِنْسَانِ ثَلَاثُ مِائَةٍ وَسِتُّونَ مَفْصِلًا، فَعَلَيْهِ أَنْ يَتَصَدَّقَ عَنْ كُلِّ مَفْصِلٍ مِنْهُ بِصَدَقَةٍ...فَإِنْ لَمْ تَجِدْ فَرَكْعَتَا الضُّحَى تُجْزِئُكَ، ‘মানুষের শরীরে তিনশত ষাটটি (হাড়ের) জোড়া আছে। আর প্রতিটি জোড়ার জন্য একটি করে ছাদাক্বা করা প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য। তুমি যদি (ছাদাক্বা দেওয়ার মতো) কোন জিনিস না পাও, তবে দুই রাক‘আত যোহার ছালাত আদায় করে নেয়া তোমার জন্যে যথেষ্ট’।[12] আবূ যার গিফারী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ سُلَامَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ، فَكُلُّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ، وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ، وَنَهْيٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى، ‘তোমাদের কেউ যখন সকালে উপনীত হয়, তার (দেহের) প্রতিটি হাড়ের জোড়ার পক্ষ থেকে একটি করে ছাদাক্বা দেওয়া কর্তব্য হয়ে যায়। অতএব প্রতিটা তাসবীহ বা ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা ছাদাক্বাহ, প্রতিটা তাহমীদ বা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা ছাদাক্বা, প্রতিটা তাহলীল বা ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ বলা ছাদাক্বা, প্রতিটা তাকবীর বা ‘আল্লাহু আকবার’ বলা ছাদাক্বা, সৎ কাজের নির্দেশ দেওয়া ছাদাক্বা, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা ছাদাক্বা। আর এ সবের পরিবর্তে দু’রাক‘আত যোহার ছালাত আদায় করে নেওয়া যথেষ্ট’।[13] অর্থাৎ কেউ যদি দু’রাক‘আত যোহা বা চাশতের ছালাত আদায় করে, তবে তার দেহের ৩৬০টি হাড়ের জোড়ার পক্ষ থেকে একটি করে ছাদাক্বা আদায় করা হয়ে যায়, প্রতিদিন সকালে যে ছাদাক্বার জন্য সে দায়বদ্ধ থাকে। উল্লেখ্য যে, চাশতের ছালাত ২, ৪, ৮, ১২ রাক‘আত পর্যন্ত পড়া যায়।

২. যিকর-আযকার :

যিকরের মাধ্যমে ছাদাক্বা করার নেকী লাভ করা যায়। পূর্বে বর্ণিত হাদীছের মাধ্যমে বোঝা যায় যে, যিকিরের প্রত্যেক বাক্যের বিনময়ে একটি করে ছাদাক্বা করার ছওয়াব লাভ করা যায়। এ ব্যাপারে আরো অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাহাবায়ে কেরামকে বললেন,أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِخَيْرِ أَعْمَالِكُمْ وَأَزْكَاهَا عِنْدَ مَلِيكِكُمْ؟ وَأَرْفَعِهَا فِي دَرَجَاتِكُمْ؟ وَخَيْرٍ لَكُمْ مِنْ إِنْفَاقِ الذهبِ والوَرِقِ؟ وخيرٍ لكم مِنْ أَنْ تَلْقَوْا عَدُوَّكُمْ فَتَضْرِبُوا أَعْنَاقَهُمْ وَيَضْرِبُوا أَعْنَاقَكُمْ؟ ‘আমি কি তোমাদেরকে সর্বোত্তম আমল সম্পর্কে অবহিত করব না? যে আমল তোমাদের মালিকের কাছে অতীব পবিত্র এবং তোমাদের মর্যাদা বৃদ্ধির ব্যাপারে অধিক কার্যকর। আমলটি তোমাদের জন্য সোনা-রূপা দান করার চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এমনকি এমন যুদ্ধের চেয়েও উত্তম যেখানে তোমরা শত্রুর মুকাবিলা করে তাদের গলায় আঘাত হানবে আর তারাও তোমাদের গলায় আঘাত হানবে’। ছাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন! সেই আমলটি কি? তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ذِكْرُ اللهِ ‘আল্লাহর যিক্র’।[14] অত্র হাদীছে সোনা-রূপা দান করা এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করার চেয়েও আল্লাহর যিকরকে অধিক ফযীলতপূর্ণ আমল হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে।

৩. মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা :

একজন মুসলিমের সম্মান ও অধিকার অপর মুসলিমের প্রতি আমানত স্বরূপ। সেজন্য কোন মুসলিমকে কষ্ট দেওয়া তো দূরের কথা অন্যায়ভাবে কোন পশু-পাখিকে কষ্ট দেওয়াও ঠিক না। যারা এই অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকে, মহান আল্লাহ তাদেরকে দান-ছাদাক্বা করার নেকী প্রদান করেন। আবূ যার (রাঃ) বলেন, আমি নবী কারীম (ছাঃ)-কে আমি জিজ্ঞেস করলাম, يَا رَسُولَ اللهِ، أَيُّ الْأَعْمَالِ أَفْضَلُ؟ ‘হে আল্লাহর রাসূল! সর্বোত্তম আমল কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁর পথে জিহাদ করা’। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কোন ধরনের গোলাম আযাদ করা উত্তম?’ তিনি বললেন, ‘যে গোলামের মূল্য অধিক এবং যে গোলাম তার মনিবের কাছে অধিক আকর্ষণীয়’। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমি যদি এটা করতে না পারি? তিনি বললেন, ‘তাহ’লে কাজের লোককে (তার কাজে) সাহায্য করবে কিংবা বেকারকে কাজের সংস্থান করে দিবে’। আমি (আবারও) বললাম, যদি আমি এটাও করতে না পারি? তিনি বললেন,تَكُفُّ شَرَّكَ عَنِ النَّاسِ فَإِنَّهَا صَدَقَةٌ مِنْكَ عَلَى نَفْسِكَ، ‘মানুষকে তোমার অনিষ্টতা থেকে মুক্ত রাখবে। বস্ত্তত এটা তোমার নিজের জন্য তোমার পক্ষ থেকে ছাদাক্বা’।[15] ইবনু হুবাইরা (রহঃ) বলেন, মানুষ যখন পাপ ও অন্যায় কাজ করে, তখন সে নিজেকে আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন করে। আর যখন সে অন্যায় থেকে দূরে থাকে, তখন সে শাস্তির সম্ভাবনা থেকে নিজেকে মুক্তি দান করে। সুতরাং দান-খয়রাতের মাধ্যমে বান্দা যেমন নিজেকে আল্লাহর আযাব থেকে হেফাযত করে, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে নিজেকে অন্যায় থেকে বিরত রাখলে সে দান-ছাদাক্বার নেকী লাভ করে।[16] অনলাইনে এবং অফলাইনে মানুষের সামনের অনেক পাপের রাস্তা খোলা থাকে, সেই মুহূর্তে তিনি যদি পরহেযগারিতার বর্ম পরে নিজেকে সেই পাপ থেকে রক্ষা করতে পারেন, তবে সেই বান্দা সাথে সাথে বড় ধরনের একটি ছাদাক্বা করার নেকী লাভ করতে পারেন।

৪. হাসিমুখে কথা বলা :

অপর ভাইয়ে সাথে হাসি মুখে কথা বলা নেক আমলের অন্তর্ভুক্ত। আর সেটা কোন ছোট-খাট আমল নয়; বরং ছাদাক্বার মত মহান ইবাদতের ন্যায় ফযীলতপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,لَا تَحْقِرَنَّ مِنَ الْمَعْرُوْفِ شَيْئًا، وَلَوْ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلْقٍ، ‘তোমরা কোন সৎ আমলকে তুচ্ছ জ্ঞান করো না; এমনকি তোমার ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে সাক্ষাৎ করাকেও’।[17] অন্যত্র তিনি বলেন,تَبَسُّمُكَ ‌فِي ‌وَجْهِ ‌أَخِيكَ ‌لَكَ صَدَقَةٌ، ‘হাস্যোজ্জ্বল মুখে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য ছাদাক্বা স্বরূপ’।[18] অর্থাৎ দ্বীনী ভাইয়ের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হ’লে তার সাথে হাসিমুখে কথা বলার মাধ্যমে আল্লাহর পথে দান-খয়রাত করার নেকী অর্জিত হয়।[19] হাসি মুখে কথা এমন দান-ছাদাক্বার সমতুল্য নেক আমল, যার মাধ্যমে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَبِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ، ‘তোমরা একটা টুকরা খেজুর (ছাদাক্বা) দিয়ে হ’লেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা কর। আর যদি তা সম্ভব না হয়, তবে উত্তম কথার দ্বারা হ’লেও (জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা কর)’।[20] ইমাম মুসলিম (রহঃ) যে পরিচ্ছেদে এই হাদীছটি বর্ণনা করেছেন, তার শিরোনাম দিয়েছেন,الصدقة ولو بشق تمرة أو كلمة طيبة ‌وأنها ‌حجاب ‌من ‌النار ‘ছাদাকবা যদি এক টুকরা খেজুর বা ভালো কথার মাধ্যমেও হয়, তবুও সেটা জাহান্নামের আগুন থেকে আড়াল হবে’।[21]

৫. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ :

সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের মধ্যেই ইসলামের মূল ভিত্তি প্রোথিত আছে। এ কাজের জন্যই মানুষের উত্থান ঘটানো হয়েছে। এতে রয়েছে অপরিমেয় পুরস্কার ও প্রতিদান। তন্মধ্যে অন্যতম প্রতিদান হচ্ছে- সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর পথে দান-ছাদাক্বা করার নেকী হাছিল করতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,‌وَأَمْرُكَ بِالمَعْرُوفِ وَنَهْيُكَ عَنِ المُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وَإِرْشَادُكَ الرَّجُلَ فِي أَرْضِ الضَّلَالِ لَكَ صَدَقَةٌ، ‘তোমার সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ হ’তে বিরত থাকার নির্দেশও ছাদাক্বা স্বরূপ। পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেওয়া তোমার জন্য ছাদাক্বা স্বরূপ’।[22] রাসূলুল্লাহ আরো বলেছেন,وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ، وَنَهْيٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ، ‘সৎ কাজের নির্দেশ দেওয়া ছাদাক্বা এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করাও ছাদাক্বা’।[23] শায়খ ওছায়মীন (রহঃ) বলেন, فإن الأمر بالمعروف، والنهي عن المنكر من أفضل الصدقات؛ لأن هذا هو الذي فضل الله به هذه الأمة على غيرها، ‘সৎ কাজের আদেশ করা এবং অসৎ কাজে নিষেধ করা সর্বোত্তম ছাদাক্বার অন্তর্ভুক্ত। কেননা এই বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমেই আল্লাহ অন্যান্য জাতির উপর মুসলিম জাতিকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। আল্লাহ বলেন, كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ ‘তোমরাই হ’লে শ্রেষ্ঠ জাতি। যাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য। তোমরা সৎকাজের আদেশ দিবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর উপর বিশবাস রাখবে’ (আলে ইমরান ৩/১১০)[24]

৬. তাহাজ্জুদের নিয়তে রাতে ঘুমাতে যাওয়া :

যারা তাহাজ্জুদের নিয়তে রাতে ঘুমিয়ে পড়েন নিয়তের কারণে তাদের ঘুম ইবাদতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। আর সেই ইবাদত হয় দান-ছাদাক্বার ন্যায় ফযীলতপূর্ণ ও মর্যাদাবান। আবূদ্দারদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেছেন,مَنْ أَتَى فِرَاشَهُ وَهُوَ يَنْوِي أَنْ يَقُومَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ، فَغَلَبَتْهُ عَيْنَاهُ حَتَّى أَصْبَحَ كُتِبَ لَهُ مَا نَوَى، وَكَانَ نَوْمُهُ صَدَقَةً عَلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ، ‘যে ব্যক্তি বিছানায় শয়নকালে এই নিয়ত করবে যে, সে ঘুম থেকে জেগে রাতের ছালাত (তাহাজ্জুদ) আদায় করবে, অতঃপর ঘুমের আধিক্যের কারণে যদি সকাল হয়ে যায়, তবুও সে যার নিয়ত করেছে, তার নেকী পেয়ে যাবে। আর আল্লাহর কাছে তার সেই ঘুমটা ছাদাক্বা হিসাবে গৃহীত হবে’।[25] অন্যত্র তিনি বলেছেন, مَا مِنَ امْرِئٍ تَكُونُ لَهُ صَلَاةٌ بِلَيْلٍ، يَغْلِبُهُ عَلَيْهَا نَوْمٌ، إِلَّا كُتِبَ لَهُ أَجْرُ صَلَاتِهِ، وَكَانَ نَوْمُهُ عَلَيْهِ صَدَقَةً، ‘যে ব্যক্তি রাতে ছালাত আদায়ের ইচ্ছা করা সত্ত্বেও ঘুম তাকে পরাভূত করে দিল, তার আমলনামায় রাতে ছালাত আদায়ের ছওয়াবই লিখা হবে। আর তার ঘুমকে তার জন্য ছাদাক্বা হিসাবে গণ্য করা হবে’।[26] অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নিয়ত থাকার কারণে সে সারা রাত ঘুমিয়েও তাহাজ্জুদের নেকী লাভ করবে। আর রাতের ঘুমটা ছাদাক্বার মত মহান ইবাদতে পরিণত হয়ে যাবে। সুতরাং একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ ছালাতে অভ্যস্ত তাদের প্রতি রাতের ঘুমের মাধ্যমে তারা বিশাল অঙ্গের ছাদাক্বা করার প্রতিদান লাভ করে থাকেন।

৭. কর্যে হাসান দেওয়া :

ইসলামী অর্থনীতির অন্যতম একটি ভিত্তি হ’ল সূদমুক্ত ঋণ ব্যবস্থা। যাকে আরবীতে ‘কর্যে হাসানা’ বা ‘উত্তম ঋণ’ বলা হয়। বান্দা যখন স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোন ভাইকে ঋণ প্রদান করে, তখন তিনি ছাদাক্বার ফযীলত লাভ করে থাকেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُقْرِضُ مُسْلِمًا قَرْضًا مَرَّتَيْنِ إِلَّا كَانَ كَصَدَقَتِهَا مَرَّةً، ‘কোন মুসলিম যখন অপর কোন মুসলিমকে দুই বার ঋণ প্রদান করে, তবে সেই ঋণ একবার ছাদাক্বা কারার সমতুল্য (আমল) হিসাবে গণ্য হয়’।[27] অন্যত্র তিনি বলেছেন, إِنَّ السَّلَفَ يَجْرِي مَجْرَى شَطْرِ الصَّدَقَةِ ‘নিশ্চয়ই ঋণ দেওয়া অর্ধেক ছাদাক্বার মতো’।[28] অর্থাৎ কেউ যদি এক লক্ষ টাকা কর্যে হাসানা দেয়, তবে সে ৫০ হাযার টাকা আল্লাহর পথে দান করার নেকী লাভ করবে।

৭. অসচ্ছল ঋণগ্রস্থকে অবকাশ দেওয়া :

ইসলাম আর্ত মানবতার পাশে দাড়ানো জন্য মানুষকে দারুণভাবে উৎসাহিত করেছে। যারা অসচ্ছল ও অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাদের জন্য রয়েছে সীমাহীন পুরস্কার। যেমন ঋণদাতা যদি অক্ষম ঋণগ্রস্তকে দেনা পরিশোধে ছাড় দেন, তাহ’লে তিনি এর মাধ্যমে আল্লাহর পথে দান-ছাদাক্বা করার নেকী অর্জন করবেন। বুরাইদা আল-আসলামী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا كَانَ لَهُ بِكُلِّ يَوْمٍ صَدَقَةٌ، وَمَنْ أَنْظَرَهُ بَعْدَ حِلِّهِ كَانَ لَهُ مِثْلُهُ، فِي كُلِّ يَوْمٍ صَدَقَةٌ، ‘যে ব্যক্তি (ঋণগ্রস্ত) অভাবী ব্যক্তিকে অবকাশ দিবে, সে (অবকাশ দেওয়ার) প্রত্যেক দিন দান-ছাদাক্বার ছওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও সময় বাড়িয়ে দিবে, সেও প্রতিদিন দান-ছাদাক্বা করার নেকী লাভ করবে’।[29] অর্থাৎ পাওনাদার যদি ঋণগ্রহণকারীকে দেনা পরিশোধের সময় এক মাস বাড়িয়ে দেন, তাহ’লে ঋণপ্রদানকারীর আমলনামায় এই একমাস যাবৎ প্রতিদিন দান-ছাদাক্বা করার নেকী লেখা হবে।

৯. মানুষের মধ্যকার বিবাদ মীমাংসা করা :

মুসলিমদের মধ্যে বিরাজিত পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদ মীমাংসা করে দেওয়ার মাধ্যমে একজন বান্দা একই সাথে ছিয়াম, ক্বিয়াম ও দান-ছাদাক্বার নেকী লাভ করতে পারে। আবূদ্দারদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِأَفْضَلَ مِنْ دَرَجَةِ الصِّيَامِ وَالصَّلَاةِ وَالصَّدَقَةِ، قَالُوا: بَلَى، قَالَ: صَلَاحُ ذَاتِ البَيْنِ، فَإِنَّ فَسَادَ ذَاتِ البَيْنِ هِيَ الحَالِقَةُ، وقَالَ: هِيَ الحَالِقَةُ لَا أَقُولُ تَحْلِقُ الشَّعَرَ، وَلَكِنْ تَحْلِقُ الدِّينَ، ‘আমি কি তোমাদেরকে ছালাত, ছিয়াম ও ছাদাক্বার চেয়ে উত্তম আমলের ব্যাপারে অবহিত করবো না? ছাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, পরস্পর সুসম্পর্ক স্থাপন করা। কারণ পরস্পর সুসম্পর্ক নষ্ট হওয়ার অর্থ হ’ল দ্বীনের মুন্ডনকারী (বিনাশকারী)। তিনি বলেন, এটা মুন্ডনকারী বলতে আমি বলছি না যে, তা মাথা মুড়িয়ে দেয়, বরং তা দ্বীনকে মুন্ডন করে দেয় (বিনাশ করে)’।[30] আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ বলেন, এই হাদীছে ‘ফাসাদ দ্বীনকে বিনষ্ট করে’ বলার মাধ্যমে ঝগড়া-বিবাদের ভয়াবহতা বর্ণনা করা হয়েছে এবং বিবাদ মীমাংসা করাকে মর্যাদার দিক দিয়ে ছিয়াম, ক্বিয়াম ও ছাদাক্বাহর চেয়েও উত্তম আমল গণ্য করা হয়েছে’।[31] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, كُلُّ سُلَامَى مِنَ النَّاسِ عَلَيْهِ صَدَقَةٌ كُلَّ يَوْمٍ تَطْلُعُ فِيهِ الشَّمْسُ، يَعْدِلُ بَيْنَ الِاثْنَيْنِ صَدَقَةٌ ‘সূর্য উদিত হয় এমন প্রত্যেক দিন শরীরের প্রতিটি জোড়ার জন্য একটি করে ছাদাক্বা দেয়া মানুষের কর্তব্য। দু‘জন ব্যক্তির মাঝে ন্যায়বিচার করাও ছাদাক্বা’।[32]

১০. পরোপকার করা :

পরোপকার করা সৎ আমলের অন্তর্ভুক্ত। এর অন্যতম ফযীলত হচ্ছে- বান্দা যে কোন মাধ্যমে অন্যের উপকার করে ছাদাক্বার নেকী অর্জন করতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,‌وَإِرْشَادُكَ الرَّجُلَ فِي أَرْضِ الضَّلَالِ لَكَ صَدَقَةٌ، وَبَصَرُكَ لِلرَّجُلِ الرَّدِيءِ البَصَرِ لَكَ صَدَقَةٌ، وَإِمَاطَتُكَ الحَجَرَ وَالشَّوْكَةَ وَالعَظْمَ عَنِ الطَّرِيقِ لَكَ صَدَقَةٌ، وَإِفْرَاغُكَ مِنْ دَلْوِكَ فِي دَلْوِ أَخِيكَ لَكَ صَدَقَةٌ ‘পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেওয়া তোমার জন্য ছাদাক্বা স্বরূপ। স্বল্প দৃষ্টি সম্পন্ন লোককে সঠিক পথ দেখানো তোমার জন্য ছাদাক্বা স্বরূপ। রাস্তা থেকে পাথর, কাটা ও হাড় সরিয়ে ফেলা তোমার জন্য ছাদাক্বা স্বরূপ। তোমার বালতি থেকে তোমার ভাইয়ের বালতিতে পানি ঢেলে দেওয়া তোমার জন্য ছাদাক্বা স্বরূপ’।[33] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,وَيُعِينُ الرَّجُلَ عَلَى دَابَّتِهِ فَيَحْمِلُ عَلَيْهَا، أَوْ يَرْفَعُ عَلَيْهَا مَتَاعَهُ صَدَقَةٌ، ‘কাউকে সাহায্য করে সাওয়ারীতে আরোহণ করিয়ে দেয়া বা তার উপরে তার মালপত্র তুলে দেয়াও ছাদাক্বা’।[34] জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, كُلُّ مَعْرُوفٍ صَدَقَةٌ وَإِنَّ مِنَ الْمَعْرُوفِ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلْقٍ وَأَنْ تُفْرِغَ مِنْ دَلْوِكَ فِي إِنَاءِ أَخِيكَ ‘প্রতিটি ভালকাজই ছাদাক্বারূপে গণ্য। আর ভালো কাজ হচ্ছে- হাসি মুখে তোমার ভাইয়ের সাথে তোমার সাক্ষাত করা এবং তোমার বালতি থেকে তোমার ভাইয়ের পাত্রে পানি ঢেলে দেওয়া’।[35]

১১. পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া :

পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করা মুমিনের উপর ফরয। আর ছালাতগুলো পুরুষের জন্য মসজিদে জামা‘আতের আদায় করাও অপরিহার্য। জামা‘আতের সাথে ছালাতের আদায়ের নানাবিধ ফযীলতের বর্ণনা এসেছে হাদীছে। তন্মধ্যে অন্যতম হ’ল যারা জামা‘আতে ছালাত আদায় করার জন্য মসজিদে হেঁটে যায়, তারা প্রতি কদমে একটি করে ছাদাক্বা করার ছওয়াব লাভ করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, وَكُلُّ خُطْوَةٍ يَخْطُوهَا إِلَى الصَّلاَةِ صَدَقَةٌ، وَيُمِيطُ الأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ صَدَقَةٌ ‘ছালাতের দিকে যাবার জন্য প্রতিটি কদম ছাদাক্বাতুল্য এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত অপসারণ করাও ছাদাক্বা স্বরূপ’।[36]

১২. মসজিদ পরিস্কার করা এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত দূর করা :

বুরায়দা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, فِي الْإِنْسَانِ ثَلَاثُمِائَةٍ وَسِتُّونَ مَفْصِلًا فَعَلَيْهِ أَنْ يَتَصَدَّقَ عَنْ كُلِّ مَفْصِلٍ مِنْهُ بِصَدَقَةٍ، ‘মানুষের শরীরে তিনশত ষাটটি জোড়া আছে। আর প্রতিটি জোড়ার জন্য একটি করে ছাদাক্বা করা প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য। ছাহাবীগণ আবেদন করলেন, وَمَنْ يُطِيقُ ذَلِكَ يَا نَبِيَّ اللهِ؟ ‘হে আল্লাহর নবী! এ কাজ করার সাধ্য কার আছে? তিনি বললেন, النُّخَاعَةُ فِي الْمَسْجِدِ تَدْفِنُهَا وَالشَّيْءُ تُنَحِّيهِ عَنِ الطَّرِيقِ فَإِنْ لَمْ تَجِدْ فَرَكْعَتَا الضُّحَى تُجْزِئُكَ، ‘মসজিদে পড়ে থাকা থুথু মুছে ফেলাও একটি ছাদাক্বা। রাস্তা থেকে কোন কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরিয়ে দেয়াও একটি ছাদাক্বা। তিনশত ষাট জোড়ার ছাদাক্বা দেবার মতো কোন জিনিস না পেলে যুহার দু’রাকা‘আত ছালাত আদায় করে নেয়া তোমার জন্যে যথেষ্ট’।[37] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, وَإِمَاطَتُكَ الحَجَرَ وَالشَّوْكَةَ وَالعَظْمَ عَنِ الطَّرِيقِ لَكَ صَدَقَةٌ، ‘আর রাস্তা থেকে পাথর, কাটা ও হাড় সরিয়ে ফেলা তোমার জন্য ছাদাক্বা স্বরূপ’।[38]

১৩. হালাল ভাবে প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ করা :

মানবিক চাহিদাগুলোর মধ্যে জৈবিক চাহিদা প্রধান। আল্লাহ নর-নারীর জন্য হালাল পথে এই চাহিদা পূরণের জন্য বিবাহের ব্যবস্থা করেছেন। যখন কোন ছেলে-মেয়ের মাঝে বিবাহের মাধ্যমে পবিত্র বন্ধন রচিত হয়, তখন সেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার খুনসুটি, প্রেমালাপ, সহবাস সব কিছুই আল্লাহর দরবারে ছাদাক্বার মতো মহান ইবাদত হিসাবে পরিগণিত হয়। ছাহাবী আবূ যার (রাঃ)-এর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, فِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ، ‘স্ত্রীর সাথে মিলন করাও তোমাদের জন্য ছাদাক্বাহ স্বরূপ’। ছাহাবীগণ একটু বিস্ময় ভরে বললেন,يَا رَسُولَ اللهِ، أَيَأتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ؟ ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কেউ স্ত্রীর সাথে সংগম করে, তাতেও কি সে ছাওয়াব পাবে?’ তিনি বললেন,أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ؟ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِي الْحَلَالِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ، ‘তোমাদের কী মনে হয়- যদি সে হারাম পথে কামাচারে লিপ্ত হ’ত, তাহ’লে কি তার পাপ হ’ত না? অনুরূপভাবে যদি সে হালাল পথে যৌনসঙ্গম করে, তাতে সে ছাওয়াব পাবে’।[39] ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, الْجِمَاعُ يَكُونُ عِبَادَةً إِذَا نَوَى بِهِ قَضَاءَ حَقِّ الزَّوْجَةِ وَمُعَاشَرَتَهَا بِالْمَعْرُوفِ الَّذِي أَمَرَ اللهُ تَعَالَى بِهِ أَوْ طَلَبَ وَلَدٍ صَالِحٍ أَوْ إِعْفَافَ نَفْسِهِ أَوْ إِعْفَافَ الزَّوْجَةِ، ‘স্বামী-স্ত্রীর সহবাসও ইবাদত হিসাবে গণ্য হবে- যদি স্ত্রীর অধিকার আদায়ের নিয়ত করা হয়, আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় স্ত্রীর সাথে ন্যায়সঙ্গতভাবে মেলামেশা করা হয়, নেক সন্তান কামনা করা হয় এবং স্বামী-স্ত্রী উভয়ের চরিত্রের হেফাযতের জন্য এটা করা হয়’।[40]

১৪. বৃক্ষ রোপণ করা এবং অনাবাদী জমিতে চাষাবাদ করা :

গাছ লাগানো, জমিতে ফসল ফলানো এবং অনাবাদী জমিতে চাষাবাদ করা ছাদাক্বার অন্তর্ভুক্ত। আনাস (রাঃ)-এর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا أَوْ يَزْرَعُ زَرْعًا فَيَأْكُلُ مِنْهُ إِنْسَانٌ أَوْ طَيْرٌ أَوْ بَهِيمَةٌ إِلَّا كَانَت لَهُ صَدَقَة، ‘কোন মুসলিম যদি গাছ লাগায় কিংবা ফসল উৎপাদন করে, আর তা থেকে পাখী কিংবা মানুষ অথবা চতুষ্পদ জন্তু কিছু খায়- তবে সেটা তার জন্য ছাদাক্বা হিসাবে গণ্য হবে’।[41] অন্যত্র তিনি বলেন,مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْسًا إِلَّا كَانَ مَا أُكِلَ مِنْهُ لَهُ صَدَقَةً، وَمَا سُرِقَ مِنْهُ لَهُ صَدَقَةٌ، وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ مِنْهُ فَهُوَ لَهُ صَدَقَةٌ، وَمَا أَكَلَتِ الطَّيْرُ فَهُوَ لَهُ صَدَقَةٌ، وَلَا يَرْزَؤُهُ أَحَدٌ إِلَّا كَانَ لَهُ صَدَقَةٌ، ‘কোন মুসলিম গাছ লাগালে তা থেকে যা কিছু খাওয়া হয় তা তার জন্য ছাদাক্বা স্বরূপ। যা কিছু চুরি হয় সেটাও তার জন্য ছাদাক্বা স্বরূপ। সেই গাছ থেকে বন্য পশু যা খায় সেটাও ছাদাক্বা স্বরূপ। পাখী যা খায় তাও ছাদাক্বা স্বরূপ। আর কেউ যদি সেই গাছ বা ফসলের কোন প্রকার ক্ষতি সাধন করে, তবে সেটাও তার জন্য ছাদাক্বা হিসাবে গণ্য হবে’।[42] জাবের (রাঃ)-এর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, من أحيى أَرْضًا مَيِّتَةً فَلَهُ فِيهَا أَجْرٌ وَمَا أَكَلَتِ الْعَافِيَةُ مِنْهُ فَهُوَ لَهُ صَدَقَةٌ، ‘যে ব্যক্তি কোন অনাবাদী জমি আবাদ করে (অর্থাৎ ফসল উৎপাদনের উপযোগী করে), এ কাজে তার জন্য প্রতিদান রয়েছে। যদি এ জমি থেকে ক্ষুধার্ত কিছু খায়, তাহ’লে সেটা তার জন্য ছাদাক্বা হিসাবে গৃহীত হবে’।[43]

১৫. যথাযথভাবে পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা :

অনেকে শুধু গবীর-মিসকীনকে দান করাকেই ছাদাক্বা মনে করেন। অথচ বান্দা নিজ পরিবারের জন্য খরচ করেও দান-ছাদাক্বার নেকী পেতে পারেন। একজন পুরুষের উপরে তার পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তানের জন্য খরচ করা ফরয। অথচ তিনি যদি নিয়তটাকে খালেছ করেন, তবে তিনি পরিবারের জন্য চাল-ডাল, তরি-তরকারী, তেল-সাবান, কাপড়-চোপড়, ঔষধ-পত্র, লাইট-ফ্যান, আসবাবপত্র প্রভৃতি কেনার মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে ছাদাক্বার নেকী লাভ করতে পারেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِذا أَنْفَقَ الْمُسْلِمُ نَفَقَةً عَلَى أَهْلِهِ وَهُوَ يَحْتَسِبُهَا كَانَت لَهُ صَدَقَة، ‘কোন মুসলিম যখন ছওয়ার লাভের আশায় তার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করে, তখন এ খরচ তার জন্য ছাদাক্বা হিসেবে গণ্য হয়’।[44] স্মর্তব্য যে, পরিবারের ভরণপোষণ করা দায়িত্বশীল পুরুষের ওপর ওয়াজিব। তিনি যদি নেকী লাভের প্রত্যাশা না করে পরিবারের জন্য খরচ করেন, তবে তিনি ছাদাক্বার নেকী পাবেন না; শুধু তার ওয়াজিব দায়িত্বের দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবেন। আর যদি এই খরচের মাধ্যমে ছওয়াবের নিয়ত ও প্রত্যাশা করেন, তবে তিনি তার কর্তব্য পালনের পাশাপাশি দান-ছাদাক্বারও নেকী লাভ করতে পারবেন।[45] তবে খেয়াল রাখতে হবে, পরিবারের জন্য সেই খরচটা যেন অপচয়ের মধ্যে না পড়ে। অন্যথা ছাদাক্বার নেকী লাভের পরিবর্তে গুনাহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

আর যদি অভাবী লোককে দান করা ইচ্ছা হয়, তবে নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীকে দান করা উত্তম। কেননা এতে দ্বিগুণ নেকী পাওয়া যায়। এক. দান করার নেকী, দুই. আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার নেকী। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, الصَّدَقَةُ عَلَى الْمِسْكِينِ صَدَقَةٌ وَهِيَ عَلَى ذِي الرَّحِمِ ثِنْتَانِ: صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ، ‘মিসকীনকে দান-খয়রাত করা শুধু ছাদাক্বা বলেই গণ্য হয়। আর নিকটাত্মীয়ের কাউকে ছাদাক্বা দেওয়া দু’প্রকার ছাওয়াবের কারণ : একটি হচ্ছে ছাদাক্বা করার জন্য, আর অপরটি হচ্ছে আত্মীয়ের হক আদায় করার জন্য।[46] একবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, يَا رَسُولَ اللهِ أَيُّ الصَّدَقَةِ أَفْضَلُ؟ ‘হে আল্লাহর রাসূল! সর্বোত্তম দান কোনটি?’ তিনি বললেন,جُهْدُ الْمُقِلِّ وَابْدَأْ بِمَنْ تَعُولُ، ‘স্বল্প উপার্জনকারী ব্যক্তির (কষ্টার্জিত সম্পদ থেকে) দান। আর (দানের ক্ষেত্রে) তুমি তোমার অধীনস্থদের থেকে শুরু কর’।[47]

১৬. কুরআন তেলাওয়াত করা :

বান্দা কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর পথে দান-ছাদাক্বা করার নেকী লাভ করে। যদি প্রকাশ্যে তেলাওয়াত করে তবে প্রকাশ্যে ছাদাক্বা করার ছওয়াব পায়। আর যদি চুপিসারে তেলাওয়াত করে, তবে গোপন দানের ছওয়াব লাভ করে। উকবা ইবনে আমের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, الْجَاهِرُ بِالْقُرْآنِ كالجاهر بِالصَّدَقَةِ ولامسر بِالْقُرْآنِ كَالْمُسِرِّ بِالصَّدَقَةِ، ‘উচ্চৈঃস্বরে কুরআন পড়া প্রকাশ্যে ছাদাক্বা করার মতো। আর চুপে চুপে কুরআন পড়া গোপনে ছাদাক্বা করার মতো’।[48]

১৭. আল্লাহর অবাধ্যতা ও পাপ থেকে দূরে থাকা :

আল্লাহর অবাধ্যতা, পাপাচার এবং শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বান্দা যদি নিজেকে রক্ষা করতে পারে, তবে তার আমলনামায় ছাদাক্বার নেকী লিখে দেওয়া হয়। আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, নবী কারীম (ছাঃ) বলেছেন,عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ صَدَقَةٌ، قَالُوا: فَإِنْ لَمْ يَجِدْ؟ قَالَ: فَيَعْمَلُ بِيَدَيْهِ فَيَنْفَعُ نَفْسَهُ وَيَتَصَدَّقُ، قَالُوا: فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ أَوْ لَمْ يَفْعَلْ؟ قَالَ: فَيُعِينُ ذَا الحَاجَةِ المَلْهُوفَ، قَالُوا: فَإِنْ لَمْ يَفْعَلْ؟ قَالَ: فَيَأْمُرُ بِالخَيْرِ، أَوْ قَالَ: بِالْمَعْرُوفِ، قَالَ: فَإِنْ لَمْ يَفْعَلْ؟ قَالَ: فَيُمْسِكُ عَنِ الشَّرِّ فَإِنَّهُ لَهُ صَدَقَةٌ، ‘প্রতিটি মুসলিমেরই ছাদাক্বা করা উচিত। ছাহাবায়ে কেরাম বললেন যদি সে ছাদাক্বা করার মত কিছু না পায়। তিনি বললেন, তাহ’লে সে নিজের হাতে কাজ করবে। এতে সে নিজেও উপকৃত হবে এবং ছাদাক্বাও করতে পারবে। তারা বললেন, যদি সে সক্ষম না হয় অথবা যদি সে কাজ না করে? তিনি বললেন, তাহ’লে সে যেন বিপন্ন মাযলূমের সাহায্য করে। লোকেরা বললেন, সে যদি তা না করে? তিনি বললেন, তাহ’লে সে ছওয়াবের কাজের নির্দেশ করবে অথবা সৎ কাজের আদেশ করবে। তারা বলল, সে যদি তাও না করে? তিনি বললেন, তা’হলে সে খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকবে। তখন এটাই তার জন্য ছাদাক্বা হিসাবে গণ্য হবে’।[49]

উপসংহার :

প্রতিদিন প্রত্যেক বান্দা ছাদাক্বা করার জন্য আদিষ্ট এবং দায়াবদ্ধ। সেজন্য মহান আল্লাহ বিভিন্ন নেক আমলের মাধ্যমে ছাদাক্বার প্রতিদান লাভের ব্যবস্থা করেছেন। যেন বান্দা অর্থ-সম্পদ ব্যয় না করেও খুব সহজে ছাদাক্বার ইবাদতে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করে জান্নাতীদের কাতারভুক্ত হ’তে পারে। তবে এর মানে এটা নয় যে, আমরা টাকা-পয়সা খরচ না করে কেবল এই আমলগুলোর মাধ্যমে ছাদাক্বার নেকী তালাশ কবর; বরং সাধ্যানুযায়ী অর্থ-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করার পাশাপাশি এসব নেক আমলে আত্মনিয়োগ করব। মহান আল্লাহ আমাদেরকে আলোচিত আমলগুলো নিয়মিত সম্পাদন করার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ

এমফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়।


[1]. ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/২৪৫৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৮১৪; ছহীহাহ হা/১২৬৮, সনদ ছহীহ।

[2]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/৩৩৩৩; ছহীহাহ হা/৯২০, সনদ ছহীহ।

[3]. আহমাদ হা/১৮০৭২; মিশকাত হা/১৯২৫, সনদ ছহীহ।

[4]. ত্বাবারাণী, মু‘জামুল কাবীর হা/৮০১৪; ছহীহুত তারগীব হা/৮৮৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৭৯৭, সনদ হাসান।

[5]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবর, হা/৬৮৩২; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩৫৮, সনদ হাসান।

[6]. বুখারী হা/৬৫৪০; মুসলিম হা/১০১৬।

[7]. ছহীহুল জামে‘ হা/২৯৫১; ছহীহাহুত তারগীব হা/৮৬৫, সনদ ছহীহ।

[8]. বুখারী হা/৬৬০; মুসলিম হা/১০৩১; মিশকাত হা/৭০১।

[9]. ত্বাবারাণী কাবীর হা/৭৮৮; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৩৩১০; ছহীহাহ হা/৩৪৮৪।

[10]. আহমাদ হা/১৮০৭২, মিশকাত হা/১৯২৫, সনদ ছহীহ।

[11]. ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃ. ২৫৪।

[12]. আবূদাঊদ হা/৫২৪২; মিশকাত হা/১৩১৫, ছহীহ হাদীছ।

[13]. মুসলিম হা/৭২০; মিশকাতা হা/১৩১১।

[14]. তিরমিযী হা/৩৩৭৭; মিশকাত হা/২২৬৯, সনদ ছহীহ।

[15]. বুখারী হা/২৫১৮; মুসলিম হা/৮৪; শব্দাবলী মুসলিমের।

[16]. ইবনু হুবাইরা, আল-ইফছাহ ‘আন মা‘আনিছ ছিহাহ (মিসর : দারুল ওয়াত্বান, ১৪১৭হি.) ২/১৭২।

[17]. মুসলিম হা/২৬২৬।

[18]. তিরমিযী হা/১৯৬৫; ছহীহ ইবনু হিববান হা ৫২৯; ছহীহুত তারগীব হা/ ২৬৮৫, সনদ ছহীহ।

[19]. তুহফাতুল আহওয়াযী ৬/৭৬।

[20]. বুখারী হা/৬৫৪০; মুসলিম হা/১০১৬; মিশকাত হা/৫৫৫০।

[21]. ছহীহ মুসলিম ৩/৮৬।

[22]. তিরমিযী হা/১৯৬৫; ছহীহ ইবনু হিববান হা ৫২৯; ছহীহুত তারগীব হা/ ২৬৮৫, সনদ ছহীহ।

[23]. মুসলিম হা/৭২০; মিশকাতা হা/১৩১১।

[24]. শারহু রিয়াযিছ ছালিহীন ২/১৬২।

[25]. নাসাঈ হা/১৭৪৭; ইবনু মাজাহ হা/১৩৪৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৯৪১, সনদ হাসান।

[26]. আবূদাঊদ হা/১৩১৪; নাসাঈ হা/১৭৮৪, সনদ ছহীহ।

[27]. ছহীহুত তারগীব হা/৯০১; ছহীহাহ হা/১৫৫৩; ছহীহুল জামে‘ ৫৭৬৯, সনদ ছহীহ।

[28]. মুসনাদে আহমাদ হা/; ছহীহাহ হা/১৫৫৩, সনদ ছহীহ।

[29]. ইবনু মাজাহ হা/২৪১৮; মুস্তাদরাকে হাকেম হা/২২২৫; ছহীহাহ হা/৮৬, সনদ ছহীহ।

[30]. তিরমিযী হা/২৫০৯; আবূদাঊদ হা/৪৯১৯; মিশকাত হা/৫০৩৮, সনদ ছহীহ।

[31]. আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ, শারহু সুনানি আবীদাঊদ ২৮/২০৩।

[32]. বুখারী হা/২৯৮৯; মুসলিম হা/১০০৯; মিশকাত হা/১৮৯৬।

[33]. তিরমিযী হা/১৯৬৫; ছহীহ ইবনু হিববান হা ৫২৯; ছহীহুত তারগীব হা/ ২৬৮৫, সনদ ছহীহ।

[34]. বুখারী হা/২৯৮৯; মিশকাত হা/১৮৯৬।

[35]. তিরমিযী হা/১৯৭০; মিশকাত হা/১৯১০, ছহীহ হাদীছ।

[36]. বুখারী হা/২৯৮৯; মিশকাত হা/১৮৯৬।

[37]. আবূদাঊদ হা/৫২৪২; মিশকাত হা/১৩১৫; ছহীহ হাদীছ।

[38]. তিরমিযী হা/১৯৬৫; ছহীহ ইবনু হিববান হা ৫২৯; ছহীহুত তারগীব হা/ ২৬৮৫; সনদ ছহীহ।

[39]. মুসলিম হা/১০০৬; মিশকাত হা/১৮৯৮।

[40]. শারহুন নববী আলা মুসলিম ৭/৯২।

[41]. বুখারী হা/২৩২০; মিশকাত হা/১৯০০।

[42]. ছহীহ মুসলিম হা/১৫৫২।

[43]. মুসনাদে আহমাদ হা/১৪৫০০; ইবনু হিববান হা/৫২০৪; সুনানে দারেমী হা/২৬৬২; মিশকাত হা/১৯১৬; ছহীহ হাদীছ।

[44]. বুখারী হা/৫৩৫১; মুসলিম হা/১০০২; মিশকাতা হ/১৯৩০।

[45]. ওবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ ৬/৩৬৬; আব্দুর রহমান মুবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযী, ৬/৮৫।

[46]. তিরমিযী হা/৬৫৮; নাসাঈ হা/২৫৮২; মিশকাতা হ/১৯৩৯; সনদ ছহীহ।

[47]. আবূদাঊদ হা/১৬৭৭; মিশকাতা হা/১৯৩৮; সনদ ছহীহ।

[48]. আবূদাঊদ ১৩৩৩; তিরমিযী ২৯১৯; মিশকাত হা/২২০২; ছহীহ হাদীছ।

[49]. বুখারী হা/৬০২২; মুসলিম হা/২০০৮; মিশকাত হা/১৮৯৫।






বিষয়সমূহ: যাকাত ও ছাদাক্বা
শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কর্তব্য (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মুসলিম নারীর পর্দা ও চেহারা ঢাকার অপরিহার্যতা - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
আল্লাহর প্রতি ঈমানের স্বরূপ - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
মানবাধিকার ও ইসলাম (৬ষ্ঠ কিস্তি) - শামসুল আলম
মুসলিম সমাজে মসজিদের গুরুত্ব (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
ইসলামের দৃষ্টিতে তাবীয ও ঝাড়-ফুঁক - ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
পলাশী ট্রাজেডি এবং প্রাসঙ্গিক কিছু বাস্তবতা - ড. ইফতিখারুল আলম মাসঊদ
আশূরায়ে মুহাররম - আত-তাহরীক ডেস্ক
লজ্জাশীলতা উত্তম চরিত্রের ভূষণ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
ইখলাছ (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আত্মসমালোচনা : গুরুত্ব ও পদ্ধতি - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
সমাজ সংস্কারে ইমামগণের ভূমিকা - ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
আরও
আরও
.