পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ । পর্ব ৭ । পর্ব ৮ । শেষ পর্ব ।
আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে কতিপয় অভিযোগ ও তার জবাব
ছহীহ আক্বীদাসম্পন্ন মুহাদ্দিছীনে কেরাম এবং তাক্বলীদ ব্যতীত সালাফে ছালেহীনের বুঝ অনুযায়ী কুরআন ও সুন্নাহর অনুসারীদের উপাধি ও বৈশিষ্ট্যগত নাম ‘আহলেহাদীছ’। আহলেহাদীছদের নিকটে কুরআন মাজীদ, ছহীহ হাদীছসমূহ (সালাফে ছালেহীনের বুঝ অনুযায়ী) এবং ইজমা হ’ল শারঈ দলীল। এগুলিকে ‘আদিল্লায়ে শারঈয়াহ’ও বলা হয়ে থাকে। ‘আদিল্লায়ে শারঈয়াহ’ দ্বারা ইজতিহাদের বৈধতা প্রমাণিত। আর ইজতিহাদের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে।
১. কুরআন ও সুন্নাহর ‘উমূম’ (ব্যাপকতা) ও ‘মাফহূম’ (মর্ম) দ্বারা দলীল পেশ করা।
২. সালাফে ছালেহীনের আছার দ্বারা দলীল প্রদান করা।
৩. আদিল্লায়ে শারঈয়াহর বিরোধী নয় এমন ক্বিয়াস।
৪. মাছালিহে মুরসালাহ প্রভৃতি।[1]
আহলেহাদীছদের নিকটে ইজতিহাদ জায়েয। এজন্য তিনটি শারঈ দলীল দ্বারা দলীল পেশের পরে চতুর্থ দলীলের উপরেও আমল জায়েয রয়েছে। এ শর্তে যে, তা কুরআন, হাদীছ, ইজমা ও সালাফে ছালেহীনের আছার-এর বিরোধী হবে না। অন্য কথায় আহলেহাদীছদের নিকটে আদিল্লায়ে আরবা‘আহ (কুরআন, হাদীছ, ইজমা, ইজতিহাদ) উপরোল্লিখিত মর্মানুসারে হুজ্জাত বা দলীল।
সতর্কীকরণ : ইজতিহাদ আকস্মিক ও সাময়িক হয়ে থাকে। এজন্য ইজতিহাদকে স্থায়ী বিধানের মর্যাদা দেয়া যায় না। আর না একজন ব্যক্তির ইজতিহাদকে অন্য ব্যক্তির জন্য স্থায়ী ও অপরিহার্য দলীল হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া যায়। উক্ত ভূমিকার পরে কিছু মানুষের আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে কতিপয় অভিযোগ ও ধোঁকাবাজির জবাব পেশ করা হ’ল।
সমালোচনা-১ : ‘আহলেহাদীছদের নিকটে শারঈ দলীল স্রেফ দু’টি। ১. কুরআন ২. হাদীছ। তৃতীয় কোন দলীল নেই’।
জবাব : নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, لا يجمع الله أمتي على ضلالة أبدا ‘আল্লাহ আমার উম্মতকে কখনো গোমরাহীর উপরে ঐক্যবদ্ধ করবেন না’।[2] এই হাদীছ দ্বারা ইজমায়ে উম্মত (উম্মতের ইজমা)-এর দলীল হওয়া প্রমাণিত হয়।[3]
হাফেয
আব্দুল্লাহ গাযীপুরী মুহাদ্দিছ (মৃঃ ১৩৩৭ হিঃ) বলেন, ‘এর দ্বারা কেউ যেন
এটা না বুঝেন যে, আহলেহাদীছরা ইজমায়ে উম্মত ও ক্বিয়াসে শারঈকে অস্বীকার
করে। কেননা যখন এ দু’টি বস্ত্ত কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত হবে, তখন
কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করলেই ইজমা ও ক্বিয়াসকে মানা হয়ে যাবে’।[4]
প্রমাণিত হ’ল যে, আহলেহাদীছদের নিকটে ইজমায়ে উম্মত (যদি প্রমাণিত হয়) শারঈ দলীল। এ কারণেই মাসিক ‘আল-হাদীছ’ (হাযরো) পত্রিকার প্রায় প্রত্যেক সংখ্যাতেই লেখা থাকত যে, ‘কুরআন, হাদীছ ও ইজমার বার্তাবাহক’। এটাও স্মরণ রাখা দরকার যে, আহলেহাদীছদের নিকটে ইজতিহাদ জায়েয। যেমনটা ভূমিকায় আলোচনা করা হয়েছে। আল-হামদুলিল্লাহ।
সমালোচনা-২ : আহলেহাদীছদের নিকটে প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাধীনতা রয়েছে যে, সে সালাফে ছালেহীনের বুঝের পরিবর্তে ব্যক্তিগত বুঝ অনুযায়ী কুরআন ও হাদীছ বুঝার চেষ্টা করবে।
জবাব :
এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুল। বরং এর বিপরীতে হাফেয আব্দুল্লাহ রোপড়ী (মৃঃ ১৩৮৪
হিঃ) বলেন, ‘সারকথা এই যে, আমরা তো একটা কথাই জানি। তা এই যে, সালাফের
খেলাফ (বিপরীত) করা নাজায়েয’।[5]
প্রতীয়মান হ’ল যে, আহলেহাদীছদের নিকটে সালাফে ছালেহীনের বুঝ অনুযায়ী কুরআন ও হাদীছকে বুঝতে হবে এবং সালাফে ছালেহীনের বুঝের বিপরীতে ব্যক্তিগত বুঝকে দেয়ালে ছুঁড়ে মারতে হবে। এ কারণেই মাসিক ‘আল-হাদীছ’ পত্রিকার প্রায় প্রত্যেক সংখ্যার শেষে লেখা থাকত যে, ‘সালাফে ছালেহীনের সর্বসম্মত বুঝের প্রচার’।
সমালোচনা-৩ : আহলেহাদীছদের নিকটে শুধু ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিমই দলীল। তাঁরা অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থসমূহকে মানে না।
জবাব : এই অভিযোগও ভিত্তিহীন। কারণ আহলেহাদীছদের নিকটে ছহীহ হাদীছ সমূহ দলীল। চাই সেগুলো ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিমে থাকুক বা সুনানে আবু দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ, মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ ও অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থ সমূহে ছহীহ ও হাসান লি-যাতিহি সনদে মওজুদ থাকুক। মাসিক ‘আল-হাদীছ’ সহ আমাদের সকল গ্রন্থ এ কথার সাক্ষী যে, আমরা ছহীহায়েনের পাশাপাশি অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থাবলীর ছহীহ বর্ণনা সমূহ দ্বারাও দলীল পেশ করে থাকি।
সমালোচনা-৪ : আহলেহাদীছরা তাক্বলীদ করে না।
জবাব :
জ্বী হ্যাঁ। আহলেহাদীছরা তাক্বলীদ করে না। কারণ তাক্বলীদ জায়েয বা ওয়াজিব
হওয়ার কোন প্রমাণ কুরআন, হাদীছ ও ইজমায় নেই। আর সালাফে ছালেহীনের আছার সমূহ
দ্বারাও তাক্বলীদ প্রমাণিত নয়। বরং মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) বলেছেন,وأما زلة
عالم ، فإن اهتدى فلا تقلدوه دينكم ‘আলেমের ভুলের ব্যাপারে বক্তব্য হ’ল,
যদি তিনি হেদায়াতের উপরেও চলেন, তবুও তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে তার
তাক্বলীদ করো না’।[6] আহলে সুন্নাতের উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইদরীস আশ-শাফেঈ (রহঃ) নিজের এবং অন্যদের তাক্বলীদ করতে নিষেধ করেছেন।[7]
আহলে
সুন্নাতের প্রসিদ্ধ আলেম হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেছেন যে, وإنما
حدثت هذه البدعة في القرن الرابع ‘এই (তাক্বলীদের) বিদ‘আত চতুর্থ (হিজরী)
শতকে সৃষ্টি হয়েছে’।[8]
প্রকাশ থাকে যে, কুরআন ও সুন্নাহর উপরে আমল করা এবং বিদ‘আত থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই ইহকাল ও পরকালে সফলতা লাভের নিশ্চয়তা রয়েছে।
সমালোচনা-৫ : ওয়াহীদুয্যামান হায়দারাবাদী এটা লিখেছেন এবং নওয়াব ছিদ্দীক্ব হাসান খান ওটা লিখেছেন। নূরুল হাসান এটা লিখেছেন এবং বাটালভী ওটা লিখেছেন।
জবাব : ওয়াহীদুযযামান, নওয়াব ছিদ্দীক্ব হাসান খান, নূরুল হাসান, বাটালভী যেই হোন না কেন, এদের কেউই আহলেহাদীছদের আকাবের-এর অন্তর্ভুক্ত নন। যদি হ’তেন তবুও আহলেহাদীছরা আকাবের পূজারী নয়।
ওয়াহীদুযযামান ছাহেব তো একজন প্রত্যাখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন।[9]
দেওবন্দী মুক্বাল্লিদ মাস্টার আমীন উকাড়বী এ কথা স্বীকার করেছেন যে,
আহলেহাদীছ আলেম-ওলামা ও সাধারণ জনগণ সর্বসম্মতিক্রমে ওয়াহীদুযযামান ও
অন্যদের গ্রন্থগুলোকে ভুল আখ্যা দিয়ে সেগুলোকে নাকচ করেছেন।[10]
শাববীর আহমাদ ওছমানী দেওবন্দীর নিকটে ওয়াহীদুযযামান-এর (ছহীহ বুখারীর) অনুবাদ পসন্দনীয় ছিল।[11] ওয়াহীদুযযামান ছাহেব সাধারণ মানুষের জন্য তাক্বলীদকে ওয়াজিব মনে করতেন।[12]
এজন্য ওয়াহীদুযযামানের সকল উদ্ধৃতি দেওবন্দী ও তাক্বলীদপন্থীদের বিপক্ষে
পেশ করা উচিত। নওয়াব ছিদ্দীক্ব হাসান খান ছাহেব (তাক্বলীদ না করা) হানাফী
ছিলেন।[13]
নূরুল হাসান একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি এবং তার দিকে সম্পর্কিত গ্রন্থসমূহ আহলেহাদীছদের নিকটে গ্রহণযোগ্য গ্রন্থসমূহের তালিকাতে নেই। বরং এ সকল গ্রন্থে ফাতাওয়া বিহীন ও আমলবিহীন বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকার কারণে সেগুলো প্রত্যাখ্যাত।
মুহাম্মাদ
হুসাইন বাটালভী (রহঃ) আহলেহাদীছ আলেম ছিলেন। তবে তিনি আকাবের-এর মধ্যে
ছিলেন না। বরং একজন সাধারণ আলেম ছিলেন। যিনি সর্বপ্রথম মির্যা গোলাম আহমাদ
কাদিয়ানীর বিরুদ্ধে কাফের ফৎওয়া দিয়েছিলেন। তাঁর ‘আল-ইক্বতিছাদ’ গ্রন্থটি
পরিত্যাজ্য গ্রন্থ সমূহের অন্তর্ভুক্ত। বাটালভী ছাহেবের জন্মের শত শত বছর
পূর্ব থেকেই দুনিয়ার বুকে আহলেহাদীছ মওজুদ ছিল।[14]
সারকথা এই যে, উক্ত আলেম-ওলামা ও অন্যান্য ছোট-খাটো আলেমদের বক্তব্যকে আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে পেশ করা মস্তবড় যুলুম। যদি কিছু পেশ করতেই হয় তাহ’লে আহলেহাদীছদের বিপক্ষে কুরআন মাজীদ, ছহীহ হাদীছ সমূহ, ইজমা এবং সালাফে ছালেহীন যেমন ছাহাবী, নির্ভরযোগ্য তাবেঈ ও তাবে তাবেঈ এবং বড় বড় মুহাদ্দিছগণের বক্তব্য পেশ করুক। অন্যথায় দাঁতভাঙ্গা জবাব পাবে ইনশাআল্লাহ।
সতর্কীকরণ : আহলেহাদীছদের নিকটে কুরআন, হাদীছ ও ইজমার সুস্পষ্ট বিরোধী সকল বক্তব্যই প্রত্যাখ্যাত। চাই সেগুলোর বর্ণনাকারী অথবা সেগুলোর লেখক যত উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিই হোন না কেন।
সমালোচনা-৬ :
‘মুফতী’ আব্দুল হাদী দেওবন্দী ও অন্যেরা লিখেছেন যে, ‘এটা একটা ঐতিহাসিক
সত্য যে, গায়ের মুক্বাল্লিদীনের (যারা নিজেদেরকে আহলেহাদীছ বলে) অস্তিত্ব
ইংরেজদের আমলের আগে ছিল না’।[15]
জবাব : দুই শ্রেণীর লোকদেরকে আহলেহাদীছ বলা হয়। ১. ছহীহ আক্বীদাসম্পন্ন (নির্ভরযোগ্য ও সত্যবাদী) মুহাদ্দিছীনে কেরাম, যারা তাক্বলীদের প্রবক্তা নন। ২. মুহাদ্দিছীনে কেরামের অনুসারী ছহীহ আক্বীদাসম্পন্ন সাধারণ জনগণ। যারা তাক্বলীদ ছাড়াই কুরআন ও সুন্নাহর উপরে আমল করে। এই দুই শ্রেণী খায়রুল কুরূন (সোনালী যুগ) থেকে অদ্যাবধি প্রত্যেক যুগেই বিদ্যমান রয়েছে।
প্রথম দলীল :
ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) থেকে তাক্বলীদে শাখছী ও তাক্বলীদে গায়ের শাখছীর কোন
সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই। বরং মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) বলেছেন, ‘আলেমের ভুলের
ব্যাপারে বক্তব্য হ’ল, যদি তিনি হেদায়াতের উপরেও চলেন, তবুও তোমাদের
দ্বীনের ব্যাপারে তার তাক্বলীদ করবে না’।[16] ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেছেন, لاتقلدوا دينكم الرجال ‘তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে লোকদের তাক্বলীদ করো না’।[17]
কোন ছাহাবীই তাদের বক্তব্যের বিরোধী নেই। এজন্য প্রমাণিত হ’ল যে, এ বিষয়ে ছাহাবীগণের ইজমা রয়েছে যে, তাক্বলীদ নিষিদ্ধ। আর এটাও প্রমাণিত হ’ল যে, সকল ছাহাবী আহলেহাদীছ ছিলেন। স্মর্তব্য যে, এই ইজমার বিরোধিতাকারী ও অস্বীকারকারীরা যেসব দলীল-প্রমাণ পেশ করে থাকেন, তাতে ‘তাক্বলীদ’ শব্দটি নেই।
দ্বিতীয় দলীল : প্রসিদ্ধ উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন
তাবেঈ ইমাম শা‘বী (রহঃ) বলেছেন, ما حدثوك هؤلاء عن رسول الله صلى الله عليه
وسلم فخذ به وما قالوه برأيهم فالقه في الحش ‘এ সকল ব্যক্তি রাসূল
(ছাঃ)-এর যে হাদীছ তোমার কাছে বর্ণনা করে, তুমি সেটাকে (মযবূতভাবে) ধরো। আর
তারা স্বীয় রায় থেকে (কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী) যেসব কথা বলে, তা আবর্জনার
(স্তূপে) ছুঁড়ে মারো’।[18]
ইবরাহীম নাখঈর
সামনে জনৈক ব্যক্তি সাঈদ বিন জুবায়ের (রহঃ)-এর মন্তব্য পেশ করলে তিনি বলেন,
ما تصنع بحديث سعيد بن جبير مع قول رسول الله صلى الله عليه وسلم ‘রাসূল
(ছাঃ)-এর হাদীছের মোকাবিলায় সাঈদ বিন জুবায়ের-এর বক্তব্য দিয়ে তুমি কি
করবে?’[19]
কোন একজন তাবেঈ থেকেও তাক্বলীদ জায়েয বা ওয়াজিব হওয়া প্রমাণিত নয়। এজন্য উক্ত উদ্ধৃতি সমূহ এবং অন্যান্য উক্তি দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয় যে, তাক্বলীদ নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে তাবেঈগণেরও ইজমা রয়েছে। আর এটা একথার সুস্পষ্ট দলীল যে, সকল ছহীহ আক্বীদাসম্পন্ন নির্ভরযোগ্য তাবেঈগণ আহলেহাদীছ ছিলেন।
তৃতীয় দলীল :
তাবে তাবেঈ হাকাম বিন উতায়বা বলেন, ليس أحد من الناس إلا وأنت آخذ من قوله
أو تارك إلا النبي صلى الله عليه وسلم ‘তুমি প্রত্যেক ব্যক্তির কথাকে
গ্রহণ করতে পারো, আবার বর্জনও করতে পারো। কেবল রাসূল (ছাঃ)-এর কথা ব্যতীত’।[20]
তাবে তাবেঈনের কোন একজন নির্ভরযোগ্য তাবে তাবেঈ থেকে তাক্বলীদে শাখছী ও তাক্বলীদে গায়ের শাখছীর কোন প্রমাণ নেই। এজন্য এ বিষয়েও ইজমা রয়েছে যে, সকল নির্ভরযোগ্য ও ছহীহ আক্বীদাসম্পন্ন তাবে তাবেঈন আহলেহাদীছ ছিলেন।
চতুর্থ দলীল :
তাবে তাবেঈনের অনুসারীদের মধ্য হ’তে একটি জামা‘আত তাক্বলীদ থেকে নিষেধ
করেছেন। যেমন ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইদরীস আশ-শাফেঈ (রহঃ)
নিজের এবং অন্যদের তাক্বলীদ করতে নিষেধ করেছেন।[21] ইমাম শাফেঈ বলেছেন, لا تقلدوني‘তোমরা আমার তাক্বলীদ করো না’।[22] ইমাম আহমাদ বলেছেন,لا تقلد دينك أحدا من هؤلاء ‘তোমার দ্বীনের ব্যাপারে তাদের মধ্য হ’তে কোন একজনেরও তাক্বলীদ করো না’।[23]
একটি
ছহীহ হাদীছে আছে যে, ত্বায়েফাহ মানছূরাহ (হক্বপন্থীদের প্রকৃত দল) সর্বদাই
হক্বের উপরে বিজয়ী থাকবে। এর ব্যাখ্যায় ইমাম বুখারী বলেন, ‘অর্থাৎ এর
দ্বারা উদ্দেশ্য হ’ল আহলেহাদীছ’।[24]
ইমাম
কুতায়বা বিন সাঈদ বলেছেন, إذا رأيت الرجل يحب أهل الحديث، ... فإنه على
السنة ‘তুমি যদি কোন ব্যক্তিকে আহলেহাদীছদেরকে ভালোবাসতে দেখ, ... (তখন
জানবে যে,) সেই ব্যক্তি সুন্নাতের উপরে আছে’।[25]
ইমাম
আহমাদ বিন সিনান আল-ওয়াসিত্বী বলেছেন, لَيْسَ فِى الدُّنْيَا مُبْتَدِعٌ
إِلاَّ وَهُوَ يَبْغَضُ أَهْلَ الْحَدِيْثِ- ‘দুনিয়াতে এমন কোন বিদ‘আতী
নেই, যে আহলেহাদীছদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে না’।[26]
প্রমাণিত হ’ল যে, সকল ছহীহ আক্বীদাসম্পন্ন এবং নির্ভরযোগ্য আতবায়ে তাবে তাবেঈন (তাবে তাবেঈগণের অনুসারীগণ) আহলেহাদীছ ছিলেন এবং তাঁরা তাক্বলীদ করতেন না। বরং তাঁরা অন্যদেরকেও তাক্বলীদ থেকে নিষেধ করতেন।
পঞ্চম দলীল : হাফেয ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) লিখেছেন,
أَمَّا الْبُخَارِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ فَإِمَامَانِ فِي الْفِقْهِ مِنْ أَهْلِ الْاِجْتِهَادِ. وَأَمَّا مُسْلِمٌ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَه وَابْنُ خُزَيْمَةَ وَأَبُو يَعْلَى وَالْبَزَّارُ وَنَحْوُهُمْ فَهُمْ عَلَى مَذْهَبِ أَهْلِ الْحَدِيثِ. لَيْسُوا مُقَلِّدِينَ لِوَاحِدٍ بِعَيْنِهِ مِنَ الْعُلَمَاءِ وَلَا هُمْ مِنَ الْأَئِمَّةِ الْمُجْتَهِدِينَ عَلَى الْإِطْلَاقِ-
‘ইমাম বুখারী ও
আবুদাঊদ ফিক্বহের ইমাম ও মুজতাহিদ (মুত্বলাক্ব) ছিলেন। পক্ষান্তরে ইমাম
মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, ইবনে খুযায়মাহ, আবু ই‘য়ালা, বাযযার
প্রমুখ আহলেহাদীছ মাযহাবের উপরে ছিলেন। তারা কোন নির্দিষ্ট আলেমের
মুক্বাল্লিদ ছিলেন না। আর তারা মুজতাহিদ মুত্বলাক্বও ছিলেন না’।[27]
প্রমাণিত
হ’ল যে, সকল ছহীহ আক্বীদাসম্পন্ন এবং নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিছগণ তাক্বলীদ
করতেন না। বরং তাঁরা আহলেহাদীছ ছিলেন। বর্তমানে কিছু মানুষ এ দাবী করে যে,
যারা মুজতাহিদ নন তাদের উপরে তাক্বলীদ ওয়াজিব। হাফেয ইবনু তায়মিয়ার
উপরোল্লিখিত উক্তি দ্বারা তাদের দাবী নাকচ হয়ে যায়। কেননা উল্লিখিত
মুহাদ্দিছগণ হাফেয ইবনু তায়মিয়ার দৃষ্টিতে না মুজতাহিদ মুত্বলাক্ব ছিলেন,
আর না তাক্বলীদ করতেন। স্মর্তব্য যে, ঐ সকল উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন
মুহাদ্দিছগণের মুজতাহিদ না হওয়ার ব্যাপারটি অগ্রহণযোগ্য।[28]
ষষ্ঠ দলীল :
হিজরী তৃতীয় শতকের শেষের দিকে মৃত্যুবরণকারী ইমাম ক্বাসেম বিন মুহাম্মাদ
আল-কুরতুবী (মৃঃ ২৭৬ হিঃ) তাক্বলীদের প্রতিবাদে ‘আল-ঈযাহ ফির রাদ্দি আলাল
মুক্বাল্লিদীন’ (الإيضاح فى الرد على المقلدين) শীর্ষক একটি গ্রন্থ রচনা
করেছেন।[29]
সপ্তম দলীল : চতুর্থ হিজরী শতকে মৃত্যুবরণকারী সত্যবাদী ইমাম আবু বকর আব্দুল্লাহ বিন আবুদাঊদ আস-সিজিস্তানী (মৃঃ ৩১৬ হিঃ) বলেছেন,
ولا تك من قوم تلهو بدينهم * فتطعن في أهل الحديث وتقدح
‘তুমি ঐ লোকদের দলভুক্ত হয়ো না, যারা স্বীয় দ্বীনকে নিয়ে খেল-তামাশা করে। নতুবা তুমিও আহলেহাদীছদেরকে তিরষ্কার ও দোষারোপ করবে’।[30]
অষ্টম দলীল : ৫ম হিজরী শতকে হাফেয ইবনু হাযম যাহেরী আন্দালুসী দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন যে, ‘তাক্বলীদ হারাম’।[31]
নবম দলীল :
হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযিয়াহ ঘোষণা করেছেন, وإنما حدثت هذه البدعة في
القرن الرابع المذموم على لسان رسول الله ‘(তাক্বলীদের) এই বিদ‘আত চতুর্থ
শতাব্দীতে সৃষ্টি হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর (পবিত্র) যবানে যেই শতক
নিন্দিত’।[32]
হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম স্বীয় প্রসিদ্ধ ক্বাছীদাহ ‘নূনিয়াহ’তে বলেছেন,
يا مبغضا أهل الحديث وشاتما * أبشر بعقد ولاية الشيطان
‘হে আহলেহাদীছদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী ও গালি প্রদানকারী! তুমি শয়তানের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনের সুসংবাদ গ্রহণ কর’।[33]
দশম দলীল :
৫ম হিজরী শতকে মৃত্যুবরণকারী আবু মানছূর আব্দুল ক্বাহের বিন ত্বাহের
আত-তামীমী আল-বাগদাদী (মৃঃ ৪২৯ হিঃ) স্বীয় গ্রন্থে বলেছেন,فِيْ ثُغُوْرِ
الرُّوْمِ وَالْجَزِيْرَةِ وَثُغُوْرِ الشَّامِ وَثُغُوْرِ آذَرْبَيْجَانَ
وَبَابِ الْأَبْوَابِ كُلُّهُمْ عَلَى مَذْهَبِ أَهْلِ الْحَدِيْثِ مِنْ
أَهْلِ السُّنَّةِ ‘রোম সীমান্ত, আলজেরিয়া, সিরিয়া, আযারবাইজান এবং বাবুল
আবওয়াব (মধ্য তুর্কিস্তান) প্রভৃতি এলাকার সকল মুসলিম অধিবাসী আহলে
সুন্নাতের মধ্য থেকে আহলেহাদীছ মাযহাবের উপরে ছিলেন’।[34]
উল্লেখিত (ও অন্যান্য) দলীলসমূহ দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হ’ল যে, আহলেহাদীছগণ ‘আহলে সুন্নাত’-এর অন্তর্ভুক্ত এবং নবী করীম (ছাঃ)-এর যুগ থেকে শুরু করে সর্বযুগেই আহলেহাদীছগণ ছিলেন। আল-হামদুলিল্লাহ।
এক্ষণে কতিপয় ইলযামী দলীল-প্রমাণ উপস্থাপন করা হ’ল :
প্রমাণ-১ : ‘মুফতী’ রশীদ আহমাদ লুধিয়ানবী দেওবন্দী লিখেছেন, ‘কাছাকাছি দ্বিতীয়-তৃতীয় হিজরী শতকে হক্বপন্থীদের মাঝে শাখা-প্রশাখাগত মাসআলা সমূহের সমাধানকল্পে সৃষ্ট মতভেদের প্রেক্ষিতে পাঁচটি মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ চার মাযহাব ও আহলেহাদীছ। তৎকালীন সময় হ’তে অদ্যাবধি উক্ত পাঁচটি তরীকার মধ্যেই হক্ব সীমাবদ্ধ রয়েছে বলে মনে করা হয়’।[35] এই দেওবন্দীর স্বীকারোক্তি দ্বারা প্রতীয়মান হ’ল যে, আহলেহাদীছগণ ১০১ এবং ২০১ হিজরী থেকে পৃথিবীর বুকে বিদ্যমান রয়েছেন।
প্রমাণ-২ :
তাফসীরে হক্কানীর লেখক আব্দুল হক্ব হক্কানী দেহলভী বলেছেন, ‘শাফেঈ,
হাম্বলী, মালেকী, হানাফী মাযহাবের অনুসারীগণ আহলে সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত।
আর আহলেহাদীছগণও আহলে সুন্নাতের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত’।[36] এই গ্রন্থটি কাসেম নানূতুবীর পসন্দনীয়।[37]
প্রমাণ-৩ :
উপরোল্লেখিত উদ্ধৃতির আলোকে মুহাম্মাদ ক্বাসেম নানূতুবী দেওবন্দীও
আহলেহাদীছদেরকে আহলে সুন্নাত হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। আর আহলে
সুন্নাত সম্পর্কে হাফেয ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) লিখেছেন, ومن أهل السنة
والجماعة مذهب قديم معروف قبل أن يخلق الله أبا حنيفة ومالكا والشافعي
وأحمد فإنه مذهب الصحابة ‘আবু হানীফা, মালেক, শাফেঈ ও আহমাদকে আল্লাহ
সৃষ্টি করার পূর্ব থেকেই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মধ্যে একটি প্রসিদ্ধ ও
প্রাচীন মাযহাব বিদ্যমান রয়েছে। আর সেটি হ’ল ছাহাবীগণের মাযহাব’।[38]
এই উদ্ধৃতি দ্বারা প্রতীয়মান হ’ল যে, আহলেহাদীছগণ আহলে সুন্নাত ভুক্ত এবং চার মাযহাবের অস্তিত্ব লাভের পূর্ব থেকে ধরার বুকে বিদ্যমান রয়েছে। আল-হামদুলিল্লাহ।
প্রমাণ-৪ : ‘মুফতী’ কিফায়াতুল্লাহ
দেহলভী দেওবন্দী একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে লিখেছেন, ‘হ্যাঁ,
আহলেহাদীছগণ মুসলমান এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্তর্ভুক্ত। তাদের
সাথে বিয়ে-শাদীর বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয। শুধু তাক্বলীদ বর্জন করাতে
ইসলামে কোন যায় আসে না। এমনকি তাক্বলীদ বর্জনকারী ব্যক্তি আহলে সুন্নাত
ওয়াল জামা‘আত থেকেও খারিজ হয়ে যায় না’।[39]
প্রমাণ-৫ :
আশরাফ আলী থানভী দেওবন্দী লিখেছেন, ‘যদিচ এ বিষয়ে ইজমা উল্লেখ করা হয়েছে
যে, চার মাযহাবকে বর্জন করে পঞ্চম মাযহাব সৃষ্টি করা জায়েয নয়। অর্থাৎ যে
মাসআলাটি চার মাযহাব অনুসারীদের বিরোধী হবে, তার উপরে আমল করা জায়েয নয়।
কারণ এই চার মাযহাবের মধ্যেই হক সীমাবদ্ধ ও সীমিত রয়েছে। কিন্তু এর পক্ষেও
কোন দলীল নেই। কেননা আহলে যাহের বা যাহেরী মতবাদের লোকজন প্রত্যেক যুগেই
বিদ্যমান রয়েছে। আর এটাও নয় যে, তারা প্রত্যেকে প্রবৃত্তিপূজারী এবং উক্ত
ঐক্যমত থেকে আলাদা থাকবে। দ্বিতীয়তঃ যদি ইজমা সাব্যস্তও হয়ে যায়, তবুও
তাক্বলীদে শাখছীর উপরে তো কখনো ইজমা-ই হয়নি’।[40]
পর্যালোচনার সারসংক্ষেপ : ‘মুফতী’ আব্দুল হাদী ও অন্যান্য মিথ্যুকদের বক্তব্য ‘ইংরেজদের আমলের পূর্বে আহলেহাদীছদের অস্তিত্ব ছিল না’ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বাতিল। হক্বপন্থী আলেম-ওলামার উদ্ধৃতি এবং তাক্বলীদপন্থীদের স্বীকারোক্তি ও বর্ণনার মাধ্যমে প্রমাণ করা হয়েছে যে, তাক্বলীদ না করা আহলেহাদীছদের অস্তিত্ব পুণ্যময় প্রথম হিজরী শতক থেকে শুরু করে প্রত্যেক যুগেই বিদ্যমান আছে। অন্যদিকে দেওবন্দী ও তাক্বলীদপন্থী ফির্কাগুলোর অস্তিত্ব খায়রুল কুরূন-এর বরকতময় যুগ অতিবাহিত হওয়ার পরে বিভিন্ন যুগে সৃষ্টি হয়েছে। যেমন ইংরেজদের আমলে ১৮৬৭ সালে দেওবন্দী মাযহাবের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে।
আশরাফ আলী থানভী দেওবন্দীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, যদি আপনাদের হুকুমত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, তাহ’লে ইংরেজদের সাথে কেমন আচরণ করবেন? তিনি উত্তর দেন,
محكوم بنا كر ركهيں كيونكہ جب خدا نے حكومت دي تو محكوم ہی بنا كر ركهيں گے مگر ساتھ ہى اسكے نہايت راحت اور آرام سے ركھا جاےٴ گا اس لئے كہ انهوں نے ہميں آرام ٍٍپہونچايا ہے اسلام كى بهى تعليم ہے اور اسلام جيسى تعليم تو دنيا كے كسى مذہب ميں نہيں مل سكتى-
‘প্রজা বানিয়ে রাখব। কেননা যখন আল্লাহ
হুকুমত দিবেন তখন তো প্রজা বানিয়েই রাখব। তবে সাথে সাথে তাদেরকে অত্যন্ত
আরাম-আয়েশের মধ্যে রাখা হবে। এজন্য যে, তারা (ইংরেজরা) আমাদেরকে শান্তি
দিয়েছে। (এটা) ইসলামেরও শিক্ষা। আর পৃথিবীর অন্য কোন ধর্মে ইসলামের মতো
শিক্ষা পাওয়া যাবে না’।[41]
প্রতীয়মান হ’ল যে, ইংরেজরা দেওবন্দীদেরকে অনেক আরাম-আয়েশের মধ্যে রেখেছিল। একজন ইংরেজ যখন দেওবন্দ মাদরাসা পরিদর্শন করেন, তখন এই মাদরাসার ব্যাপারে অত্যন্ত সুধারণা প্রকাশ করে তিনি লিখেন,
يہ مدرسہ خلاف سركار نہيں بلكہ موافق سركار ممد معاون سركار ہے
‘এই মাদরাসাটি সরকার বিরোধী নয়। বরং সরকারের অনুকূলে এবং সরকারের মদদদাতা ও সাহায্যকারী’।[42]
ইংরেজ সরকারের মদদদাতা ও অনুকূল (রক্ষাকারী ও আনুকূল্য প্রদানকারী) এবং সাহায্যকারী মাদরাসা সম্পর্কে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি। যেটি স্বয়ং দেওবন্দীগণ লিখেছেন এবং কেউ এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করেনি।
সমালোচনা-৭ : ‘মুফতী’ আব্দুল হাদী দেওবন্দী ও অন্যরা বলে যে, সকল মুহাদ্দিছই মুক্বাল্লিদ ছিলেন।
জবাব :
ইংরেজদের আমলে প্রতিষ্ঠিত দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ক্বাসেম নানূতুবীর
জন্মের শত শত বছর পূর্বে হাফেয ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ) মুহাদ্দিছগণের
(মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ প্রমুখ) সম্পর্কে লিখেছেন, ‘তাঁরা আহলেহাদীছ
মাযহাবের উপরে ছিলেন। তাঁরা না কোন নির্দিষ্ট আলেমের মুক্বাল্লিদ ছিলেন, আর
না তাঁরা মুজতাহিদ মুত্বলাক্ব ছিলেন’।[43]
শুধু
এই একটি উদ্ধৃতির মাধ্যমেও আব্দুল হাদী (এবং তার সকল পৃষ্ঠপোষকের)
মিথ্যাবাদী হওয়া প্রমাণিত হয়। স্মর্তব্য যে, নির্ভরযোগ্য ও ছহীহ
আক্বীদাসম্পন্ন মুহাদ্দিছগণের মধ্য থেকে কোন একজনেরও মুক্বাল্লিদ হওয়া
প্রমাণিত নয়। ‘ত্বাবাকাতে হানাফিয়া’ প্রভৃতি গ্রন্থের উদ্দেশ্য কস্মিনকালেও
এটা নয় যে, ঐ সকল গ্রন্থে উল্লিখিত সকল ব্যক্তি মুক্বাল্লিদ ছিলেন। আয়নী
হানাফী (!) বলেছেন, ‘মুক্বাল্লিদ ভুল করে এবং মুক্বাল্লিদ অজ্ঞতার পাপ করে।
আর তাক্বলীদের কারণে সকল বস্ত্তর বিপদ’।[44]
যায়লাঈ হানাফী (!) বলেছেন, ‘বস্ত্ততঃ মুক্বাল্লিদ ভুল করে এবং অজ্ঞতার অপরাধ করে থাকে’।[45]
সমালোচনা-৮ : ইংরেজ আমলের আগে হিন্দুস্তানে আহলেহাদীছদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।
জবাব :
হিজরী চতুর্থ শতকের ঐতিহাসিক মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন আবুবকর আল-বিশারী
আল-মাক্বদেসী (মৃঃ ৩৭৫ হিঃ) মানছূরার (সিন্ধু) অধিবাসীদের সম্পর্কে বলেছেন,
مذاهبهم : أكثرهم أصحاب حديث ورأيت القاضي أبا محمد المنصوري داوديًا
إمامًا في مذهبه وله تدريس وتصانيف، قد صنف كتبًا عدةً حسنةً- ‘তাদের
মাযহাব হ’ল তারা অধিকাংশই আছহাবুল হাদীছ। আমি কাযী আবু মুহাম্মাদ মানছূরীকে
দেখেছি, যিনি দাঊদী ও স্বীয় মাযহাবের ইমাম ছিলেন। তিনি পাঠদান ও গ্রন্থ
প্রণয়নে নিমগ্ন ছিলেন। তিনি বেশকিছু চমৎকার গ্রন্থ রচনা করেছেন’।[46]
দাঊদ বিন আলী আয-যাহেরীর মানহাজের উপরে আমলকারীদেরকে যাহেরী বলা হ’ত। তারা তাক্বলীদ থেকে দূরে ছিলেন।
আহমাদ
শাহ দুর্রানীকে পরাজিতকারী মুগল বাদশাহ আহমাদ শাহ বিন নাছিরুদ্দীন
মুহাম্মাদ শাহ (শাসনকাল : ১১৬১-১১৬৭হিঃ/১৭৪৮-১৭৫৩ খ্রিঃ)-এর আমলে
মৃত্যুবরণকারী শায়খ মুহাম্মাদ ফাখের ইলাহাবাদী (মৃঃ ১১৬৪ হিঃ/১৭৫১ ইং)
বলেছেন যে, ‘জমহূর বিদ্বানগণের নিকটে নির্দিষ্ট কোন মাযহাবের তাক্বলীদ করা
জায়েয নয়। বরং ইজতিহাদ ওয়াজিব। হিজরী চতুর্থ শতকে তাক্বলীদের বিদ‘আত সৃষ্টি
হয়েছে’।[47]
শায়খ মুহাম্মাদ ফাখের আরো
বলেছেন,لكن أحق مذاهب اهل حديث است ‘কিন্তু আহলেহাদীছদের মাযহাব অন্যান্য
মাযহাবের চেয়ে বেশী হক্ব-এর উপরে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে’।[48]
প্রতীয়মান
হ’ল যে, দেওবন্দ ও ব্রেলভী মাদরাসা প্রতিষ্ঠার অনেক আগে থেকেই
হিন্দুস্তানে আহলেহাদীছরা মওজুদ ছিল। এজন্য ‘ইংরেজদের আমলের আগে
আহলেহাদীছদের অস্তিতেবর প্রমাণ পাওয়া যায় না’- এমনটা বলা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও
ভ্রান্ত।[49]
সমালোচনা-৯ :
আব্দুর রহমান পানিপথী বলেছেন যে, (প্রসিদ্ধ আহলেহাদীছ আলেম) আব্দুল হক্ব
বেনারসী (সাইয়েদা) আয়েশা (রাঃ)-কে মুরতাদ বলতেন এবং বলতেন যে, আমাদের চেয়ে
ছাহাবীগণের ইলম কম ছিল।[50]
জবাব : আব্দুর রহমান পানিপথী একজন কট্টর ফির্কবাবাজ মুক্বাল্লিদ এবং মাওলানা আব্দুল হক্ব বেনারসীর কঠিন বিরোধী ছিলেন। উক্ত পানিপথী উল্লেখিত অভিযোগের কোন সূত্র মাওলানা আব্দুল হক্বের কোন গ্রন্থ থেকে পেশ করেননি। আর না এ ধরনের কোন বক্তব্য বেনারসীর কোন গ্রন্থে আছে। এজন্য আব্দুর রহমান পানিপথী গোঁড়ামি ও বিরোধিতা প্রকাশ করতে গিয়ে মাওলানা আব্দুল হক্ব বেনারসী (রহঃ)-এর নামে মিথ্যাচার করেছেন। মুক্বাল্লিদ আব্দুল খালেকও মাওলানা আব্দুল হক্ব-এর বিরোধী গোষ্ঠীর একজন ব্যক্তি ছিলেন।
মিয়াঁ সাইয়েদ নাযীর হুসাইন দেহলভী (রহঃ)-এর শ্বশুর হওয়ার মানে আদৌ এটা নয় যে, আব্দুল খালেক ছহীহ আক্বীদাসম্পন্ন ও সত্যবাদী ছিলেন। বহু দেওবন্দী শ্বশুর রয়েছেন, যাদের জামাই আহলেহাদীছ। এ কথা সাধারণ মানুষ জানে যে, কোন ব্যক্তির স্বীয় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সূত্রবিহীন ও অপ্রমাণিত বক্তব্য পরিত্যাজ্য হয়।
মাওলানা
আব্দুল হক্ব বেনারসী সম্পর্কে আবুল হাসান নাদভীর পিতা হাকীম আব্দুল হাই
(মুক্বাল্লিদ) লিখেছেন, الشيخ العالم المحدث المعمر... أحد العلماء
المشهورين- ‘তিনি শায়খ, আলেম, বয়োজ্যেষ্ঠ মুহাদ্দিছ ... এবং বিখ্যাত
আলেমদের একজন’।[51]
এরপর হাকীম আব্দুল হাই
মাওলানা আব্দুল হক্ব-এর বিরুদ্ধে কিছু ঔদ্ধত্যপূর্ণ অসার বাক্য লিপিবদ্ধ
করে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল আযীয আয-যায়নাবী থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ولم أر
بعيني أفضل منه- ‘আমি আমার দু’চোখে তাঁর (আব্দুল হক্ব বেনারসী) চেয়ে উত্তম
আর কাউকে দেখিনি’।[52]
‘নায়লুল আওত্বার’
গ্রন্থের লেখক মুহাম্মাদ বিন আলী আশ-শাওকানী স্বীয় ছাত্র আব্দুল হক্ব
বেনারসী সম্পর্কে লিখেছেন, الشيخ العلامة... كثر الله فوائده بمنه وكرمه
ونفع بمعارفه- ‘শায়খ, আল্লামা... আল্লাহ স্বীয় দয়া ও অনুগ্রহে তার
কল্যাণকারিতা বৃদ্ধি করে দিন এবং তার জ্ঞান দ্বারা উপকৃত করুন’।[53]
সাইয়েদ
আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল-আমীর আছ-ছান‘আনী লিখেছেন,الولد
العلامة زينة أهل الاسةقامة ذو الطريقة الحميدة والخصال الشريفة المعمورة-
‘পুত্র, আল্লামা, অবিচল বান্দাদের সৌন্দর্য, প্রশংসনীয় পথের অনুসারী এবং
উত্তম চরিত্রের অধিকারী’।[54]
আলেমদের এসব প্রশংসাসূচক বক্তব্যের পরে মাওলানা আব্দুল হক্ব বেনারসী (মৃঃ ১২৭৬ হিঃ/১৮৬০ খ্রিঃ)-এর বিরুদ্ধে আব্দুর রহমান পানিপথী, আব্দুল খালেক এবং তাক্বলীদপন্থীদের মিথ্যা প্রচারণার কি মূল্য রয়েছে?
স্মর্তব্য যে, ‘মিনা’-তে (মক্কা মুকাররমা) মৃত্যুবরণকারী মাওলানা বেনারসীর প্রতি তাক্বলীদপন্থীদের এই শত্রুতা ও ক্রোধ রয়েছে যে, তিনি তাক্বলীদের খন্ডনে ‘আদ-দুরারুল ফারীদ ফিল মানঈ আনিত তাক্বলীদ’ (الدرر الفريد فى المنع عن التقليد) নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন এবং তিনি তাক্বলীদের কট্টর বিরোধী ছিলেন। আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন!
সমালোচনা-১০ : আহলেহাদীছরা ইংরেজদেরকে সহায়তা করেছে।
জবাব :
১৮৫৭ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যখন মুসলমান ও কাফেররা স্বাধীনতা যুদ্ধ
করেছিল, তখন আলেমদেরকে জিহাদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। আলেমরা জিহাদের
ব্যাপারে ফৎওয়া দিয়েছিলেন যে, در صورت مرقومہ فرض عين ہے ‘বর্ণিত অবস্থায়
জিহাদ ফরযে আইন’। এই ফৎওয়ার উপরে একজন প্রসিদ্ধ আহলেহাদীছ আলেম সাইয়েদ
নাযীর হুসাইন মুহাদ্দিছ দেহলভীর (সাবেক হানাফী এবং তাহকীকের মাধ্যমে
আহলেহাদীছ) স্বাক্ষর দিবালোকের ন্যায় চমকাচ্ছে।[55]
এই
ফৎওয়া প্রদানের পর যখন ইংরেজরা হিন্দুস্তান দখল করে নিয়েছিল, তখন সাইয়েদ
নাযীর হুসাইনকে গ্রেফতার করে রাওয়ালপিন্ডি জেলে এক বছর যাবৎ বন্দী করে
রেখেছিল। অন্যদিকে রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী ও মুহাম্মাদ ক্বাসেম নানূতুবী
প্রমুখ সম্পর্কে আশিক ইলাহী মিরাঠী দেওবন্দী লিখেছেন, جيسا كہ آپ حضرات
اپنى مہربان سركار كے دلى خيرخواه تهے تازيست خير خواه ہی ثابت رہے-
‘যেমনভাবে তাঁরা তাদের মহানুভব সরকারের (ইংরেজ সরকার) আন্তরিক
হিতাকাঙ্ক্ষী ছিলেন, তেমনিভাবে সারাজীবন তারা (ইংরেজদের) হিতাকাঙ্ক্ষী
হিসাবেই থাকেন’।[56]
সারাজীবন ইংরেজ সরকারের
‘হিতাকাঙ্ক্ষী’ হিসাবে প্রমাণিত ব্যক্তিদের বুযর্গ ফযলুর রহমান গঞ্জে
মুরাদাবাদী লিখেছেন, لڑنے كا كيا فائده خضر كو تو ميں انگريزوں كى صف ميں
پارہا ہوں- ‘লড়াই করে কি লাভ? খিযিরকে তো আমি ইংরেজদের কাতারে দেখতে
পাচ্ছি’।[57]
এ কথা অত্যন্ত বিস্ময়কর যে, খিযির (আঃ) (তাঁর মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হয়ে) কিভাবে ইংরেজ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিলেন? দেওবন্দীদের খিযির (আঃ)-কে ইংরেজ সৈন্যদের মধ্যে শামিল করা, ইতিহাসের অত্যন্ত বড় মিথ্যাচার ও ধোঁকাবাজি।
সতর্কীকরণ : ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে ফৎওয়ায় একজন দেওবন্দীরও স্বাক্ষর নেই।
ইমাম
আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেছেন, صاحب الحديث عندنا من يستعمل الحديث
‘আমাদের নিকটে আহলেহাদীছ ঐ ব্যক্তি, যিনি হাদীছের উপরে আমল করেন’।[58]
[চলবে]
* সৈয়দপুর, নীলফামারী।
[1]. [এর অর্থ ঐসকল কর্ম যা কল্যাণ আনয়ন করে ও ক্ষতি প্রতিরোধ করে এবং যার আদেশে বা নিষেধে শরী‘আতে কোন দলীল পাওয়া যায় না। যেমন আবুবকর (রাঃ) ও ওছমান (রাঃ)-এর সময়ে কুরআন জমা করা এবং কুরায়শী ক্বিরাআত ব্যতীত কুরআনের অন্যান্য কপি পুড়িয়ে ফেলা, মসজিদের ক্বিবলা চিহ্নিত করার জন্য পরবর্তীতে মেহরাব নির্মাণ করা, মসজিদে মিনার নির্মাণ করা, মাইক লাগানো ইত্যাদি (আবুবকর আল-জাযায়েরী, আল-ইনছাফ (মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, তাবি), পৃঃ ২২-২৫।-স.স.]
[2]. হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ১/১১৬, হা/৩৯৯, সনদ ছহীহ।
[3]. দেখুন : মাসিক ‘আল-হাদীছ’, ১ম সংখ্যা, পৃঃ ৪, জুন ২০০৪ খ্রিঃ। [এখানে উম্মত বলতে ছাহাবায়ে কেরামকে বুঝানো হয়েছে। যেমন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১ হিঃ) বলেন, من ادعى الاجماع فهو كاذب ‘যে ব্যক্তি (ছাহাবীগণের পরে) ইজমা-এর দাবী করে সে মিথ্যাবাদী’ (ইলামুল মুওয়াকক্বেঈন ১/২৪)।-স.স.]
[4]. ইবরাউ আহলিল হাদীছ ওয়াল কুরআন, পৃঃ ৩২।
[5]. ফাতাওয়া আহলেহাদীছ, ১/১১১।
[6]. ইমাম ওয়াকী, কিতাবুয যুহদ, ১/৩০০, হা/৭১, সনদ হাসান; দ্বীন মেঁ তাক্বলীদ কা মাসআলা, পৃঃ ৩৮।
[7]. কিতাবুল উম্ম, মুখতাছারুল মুযানী, পৃঃ ১; দ্বীন মেঁ তাক্বলীদ কা মাসআলা, পৃঃ ৩৮।
[8]. ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন ২/২০৮; দ্বীন মেঁ তাক্বলীদ কা মাসআলা, পৃঃ ৩২।
[9]. দেখুন : মাসিক ‘আল-হাদীছ’ (হাযরো), সংখ্যা ২৩, পৃঃ ৩৬, ৪০।
[10]. তাহকীক মাসআলায়ে তাক্বলীদ, পৃঃ ৬।
[11]. দেখুন : মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া ছিদ্দীক্বী দেওবন্দী, ফাযলুল বারী, ১/২৩।
[12]. দেখুন : নুযুলুল আবরার, পৃঃ ৭, প্রকাশক : লাহোরের দেওবন্দীগণ।
[13]. মাআছিরে ছিদ্দীক্বী, ৪/১; হাদীছ আওর আহলেহাদীছ, পৃঃ ৮৪।
[14]. দেখুন : মাসিক ‘আল-হাদীছ’, সংখ্যা ২৯, পৃঃ ১৩-৩৩।
[15]. নফস কে পূজারী, পৃঃ ১।
[16]. ইমাম ওয়াকী,‘ কিতাবুয যুহদ, ১/৩০০, হা/৭১, সনদ হাসান; দ্বীন মেঁ তাক্বলীদ কা মাসআলা, পৃঃ ৩৬।
[17]. বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা, ২/১০, সনদ ছহীহ। আরো দেখুন : দ্বীন মেঁ তাক্বলীদ কা মাসআলা, পৃঃ ৩৫।
[18]. দারেমী ১/৬৭, হা/২০৬, সনদ ছহীহ; দ্বীন মেঁ তাক্বলীদ কা মাসআলা, পৃঃ ৩৭।
[19]. ইবনু হাযম, আল-ইহকাম, ৬/২৯৩, সনদ ছহীহ; দ্বীন মেঁ তাক্বলীদ কা মাসআলা, পৃঃ ৩৮।
[20]. আল-ইহকাম, ৬/২৯৩, সনদ ছহীহ।
[21]. কিতাবুল উম্ম, মুখতাছারুল মুযানী, পৃঃ ১।
[22]. ইবনু আবী হাতিম, আদাবুশ শাফেঈ ওয়া মানাকিবুহু, পৃঃ ৫১, সনদ হাসান।
[23]. মাসাইলু আবুদাঊদ, পৃঃ ২৭৭।
[24]. খতীব বাগদাদী, মাসআলাতুল ইহতিজাজ বিশ-শাফেঈ, পৃঃ ৪৭, সনদ ছহীহ।
[25]. ঐ, শারফু আছহাবিল হাদীছ, হা/১৪৩, পৃঃ ১৩৪, সনদ ছহীহ।
[26]. হাকেম, মা‘রিফাতু উলূমিল হাদীছ, পৃঃ ৪, সনদ ছহীহ। আরো সূত্রের জন্য দেখুন : মাসিক ‘আল-হাদীছ’, সংখ্যা ২৯, পৃঃ ১৩-৩৩।
[27]. মাজমূঊ ফাতাওয়া, ২০/৪০।
[28]. দেখুন : দ্বীন মেঁ তাক্বলীদ কা মাসআলা, পৃঃ ৫১।
[29]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ১৩/৩২৯।
[30]. আজুর্রী, কিতাবুশ শরী‘আহ, পৃঃ ৯৭৫, সনদ ছহীহ।
[31]. আন-নুবযাতুল কাফিয়াহ ফী আহকামি উছূলিদ্দীন, পৃঃ ৭০।
[32]. ই‘লামুল মুয়াক্কি‘ঈন, ২/২০৮।
[33]. আল-কাফিয়াতুশ শাফিয়াহ, পৃঃ ১৯৯।
[34]. উছূলুদ দ্বীন, পৃঃ ৩১৭।
[35]. আহসানুল ফাতাওয়া, ১/৩১৬; মওদূদী ছাহেব আওর তাখরীবে ইসলাম, পৃঃ ২০।
[36]. হক্কানী আক্বায়েদে ইসলাম, পৃঃ ৩।
[37]. দেখুন : ঐ, পৃঃ ২৬৪।
[38]. মিনহাজুস সুন্নাহ আন-নাবাবিইয়াহ (বৈরূত : দারুল কুতুব আল-ইলমিইয়াহ), ১/২৫৬।
[39]. কিফায়াতুল মুফতী, ১/৩২৫, উত্তর নং ৩৭০।
[40]. তাযকিরাতুর রশীদ, ১/১৩১।
[41]. মালফূযাতে হাকীমুল উম্মাত, ৬/৫৫, বচন নং ১০৭।
[42]. মুহাম্মাদ আইয়ূব কাদেরী, মুহাম্মাদ আহসান নানূতুবী, পৃঃ ২১৭; ফাখরুল ওলামা, পৃঃ ৬০।
[43]. মাজমূঊ ফাতাওয়া ২০/৪০।
[44]. আল-বিনায়া ফী শারহিল হেদায়া, ১/৩১৭।
[45]. নাছবুর রায়াহ, ১/২১৯। আরো দেখুন : দ্বীন মেঁ তাক্বলীদ কা মাসআলা, পৃঃ ৩৯, ৪৬।
[46]. আহসানুত তাক্বাসীম ফী মা‘রিফাতিল আক্বালীম, পৃঃ ৪৮১।
[47]. রিসালাহ নাজাতিয়া (উর্দূ অনুবাদ), পৃঃ ৪১, ৪২।
[48]. ঐ, পৃঃ ৪১।
[49]. আরো দেখুন : ৬ নং সমালোচনার জবাব।
[50]. দেখুন : পানিপথী রচিত গ্রন্থ ‘কাশফুল হিজাব’, পৃঃ ৪৬। আব্দুল খালেক্ব ‘তামবীহুয যল্লীন’ গ্রন্থের ১৩ পৃষ্ঠায় আব্দুল হক্ব বেনারসীর সমালোচনা করেছেন।
[51]. নুযহাতুল খাওয়াত্বির, ৭/২৬৬।
[52]. ঐ, ৭/২৬৭।
[53]. ঐ, ৭/২৬৮।
[54]. ঐ, ৭/২৭০।
[55]. দেখুন : মুহাম্মাদ মিয়াঁ দেওবন্দী রচিত ‘ওলামায়ে হিন্দ কা শানদার মাযী’ ৪/১৭৯; জানবায মির্যা দেওবন্দী প্রণীত ‘আংরেজ কে বাগী মুসলমান’, পৃঃ ২৯৩।
[56]. তাযকিরাতুর রশীদ, ১/৭৯।
[57]. হাশিয়া সাওয়ানিহে ক্বাসেমী, ২/১০৩; ওলামায়ে হিন্দ কা শানদার মাযী, ৪/২৮০।
[58]. খত্বীব বাগদাদী, আল-জামে‘, হা/১৮৩, ১/১৪৪, সনদ ছহীহ; ইবনুল জাওযী, মানাকিবুল ইমাম আহমাদ, পৃঃ ২০৮, সনদ ছহীহ।