১. আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,رَكْعَتَانِ مُقْتَصِدَتَانِ فِي تَفَكُّرٍ، خَيْرٌ مِنْ قِيَامِ لَيْلَةٍ وَالْقَلْبُ سَاهٍ، ‘অমনোযোগী মনে সারারাত ক্বিয়ামুল লায়ল আদায় করার চেয়ে চিন্তা-ভাবনাসহ দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করা উত্তম’।[1]
২. মুহাম্মাদ ইবনে কা‘ব আল-কুরাযী (রহঃ) বলেন, لَأَنْ أَقْرَأَ فِي لَيْلَتِي حَتَّى أُصْبِحَ بِإِذَا زُلْزِلَتِ، وَالْقَارِعَةُ لَا أَزِيدُ عَلَيْهِمَا، وَأَتَرَدَّدُ فِيهِمَا وَأَتَفَكَّرُ، أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَهُذَّ الْقُرْآنَ لَيْلَتِي هَذًّا، يعني: أَنْثُرَهُ نَثْرًا، ‘কুরআন গদ্যের মতো তাড়াতাড়ি পড়ে রাত শেষ করার চেয়ে আমি যদি রাতের শুরু থেকে সকাল পর্যন্ত কেবল সূরা যিলযাল ও সূরা ক্বারি‘আহ তেলাওয়াত করি, এর চেয়ে আর বেশী কিছু না তেলাওয়াত করে শুধু এদু’টিরই পুনরাবৃত্তি করতে থাকি এবং এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে থাকি, তাহ’লে এটাই আমার নিকটে অধিকতর পসন্দনীয়’।[2]
৩. আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ) বলেন, لَا يَنْبُلُ الرَّجُلُ بِنَوْعٍ مِنْ الْعِلْمِ مَا لَمْ يُزَيِّنْ عِلْمَهُ بِالْأَدَبِ، ‘মানুষ কোন জ্ঞানের মাধ্যমেই মহৎ হ’তে পারে না, যতক্ষণ না সে তার জ্ঞানকে আদব দ্বারা সেŠন্দর্যমন্ডিত করে’।[3]
৪. সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন,ثَلَاثٌ مِنَ الصَّبْرِ: أَلَّا تُحَدِّثَ بِوَجَعِكَ، وَلَا بِمُصِيبَتِكَ، وَلَا تُزَكِّيَ نَفْسَكَ، ‘তিনটি কাজ ধৈর্যের অন্তর্ভুক্ত : (১) নিজের কষ্টের কথা অন্যকে বলো না (২) নিজের বিপদের কথা অন্যকে জানিও না এবং (৩) আত্মপ্রশংসা করো না’।[4]
৫. আব্দুল্লাহ ইবনে শুব্রুমাহ (রহঃ) বলেন,عَجبتُ لِلنَّاسِ يَحْتِمُوْنَ مِنَ الطَّعَامِ مَخَافَةَ الدَّاءِ، وَلاَ يَحتِمُوْنَ مِنَ الذُّنوبِ مَخَافَةَ النَّارِ، ‘আমি ঐ সকল লোকদের দেখে আশ্চর্য হয়ে যাই, যারা রোগের ভয়ে খাবার-দাবার থেকে বিরত থাকতে পারে (অর্থাৎ ডায়েট কন্ট্রোল করতে পারে), কিন্তু জাহান্নামের ভয়ে পাপ থেকে বিরত থাকতে পারে না’।[5]
৬. শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বলেন, المرأة الصالحة في الدنيا يعني الزوجة تكون خيرا من الحور العين في الآخرة وأطيب وأرغب لزوجها، فإن النبي صلى الله عليه وعلى آله وسلم أخبر أن أَوَّلُ زُمْرَةٍ تَدْخُلُ الجَنَّةَ علَى صُورَةِ القَمَرِ لَيْلَةَ البَدْرِ ‘দুনিয়ার নেককার স্ত্রী আখেরাতে তার স্বামীর জন্য আনত নয়না হুরদের চেয়েও উত্তম, পবিত্রা ও আকর্ষণীয়া হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো সমুজ্জ্বল (মুসলিম হা/১৯১)।[6]
৭. প্রখ্যাত তাবেঈ আহনাফ ইবনে ক্বায়েস (রহঃ) বৃদ্ধ বয়সেও (নফল) ছিয়াম রাখতেন। তাকে বলা হ’ল,إنك شيخ كبير وإن الصيام يضعفك، ‘আপনি তো বৃদ্ধ মানুষ, ছিয়াম তো আপনাকে আরো দুর্বল করে দিচ্ছে’। প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন,إني أعده لسفر طويل، والصبر على طاعة الله سبحانه أهون من الصبر على عذابه، ‘আমি দীর্ঘ সফরের (পাথেয়) জন্য ছিয়ামকে প্রস্ত্তত করছি। কারণ আল্লাহর আযাবে ধৈর্য ধারণ করার চেয়ে তাঁর আনুগত্যে ধৈর্য ধারণ করা অনেক সহজ’।[7]
৮. ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,الْفِكر يُثمر لصَاحبه الْمحبَّة والمعرفة فَإِذا فكر فِي الْآخِرَة وشرفها ودوامها وَفِي الدُّنْيَا وخستها وفنائها أثمر لَهُ ذَلِك الرَّغْبَة فِي الْآخِرَة والزهد فِي الدُّنْيَا وَكلما فكّر فِي قصر الأمل وضيق الْوَقْت أورثه ذَلِك الجدّ وَالِاجْتِهَاد وبذل الوسع فِي اغتنام الْوَقْت، ‘চিন্তা-ভাবনা বান্দার মাঝে জ্ঞান ও ভালবাসা সৃষ্টি করে। যখন সে আখেরাত, এর মর্যাদা এবং এর স্থায়িত্ব নিয়ে চিন্তা করে; দুনিয়া, এর নিকৃষ্টতা এবং নশ্বরতা নিয়ে চিন্তা করে, তখন এই চিন্তা-ভাবনা তার মাঝে আখেরাতের প্রতি আগ্রহ এবং দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্ততা সৃষ্টি করে। সুতরাং যখনই বান্দা দুনিয়ার ক্ষীণ আশা ও স্বল্প সময় নিয়ে চিন্তা করবে, তখন এই চিন্তা তাকে কষ্ট ও সাধনার প্রতি ধাবিত করবে এবং সময়ের সদ্ব্যবহারে সে সর্বশক্তি ব্যয় করবে’।[8]
৯. হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন,إِذَا أَظْهَرَ النَّاسُ الْعِلْمَ، وَضَيَّعُوا الْعَمَلَ، وَتَحَابُّوا بِالْأَلْسُنِ، وَتَبَاغَضُوا بِالْقُلُوبِ، وَتَقَاطَعُوا بِالْأَرْحَامِ، لَعَنَهُمُ اللهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ، ‘মানুষ যখন ইলম যাহির করে এবং আমলে দুর্বল হয়ে পড়ে, কথার মাধ্যমে অন্যকে ভালবাসে, কিন্তু অন্তর দিয়ে ঘৃণা করে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর লা‘নত করেন, তাদেরকে বধির এবং দৃষ্টিহীন করে দেন’।[9]
[1]. ইবনুল মুবারাক, আয্-যুহদু ওয়ার রাক্বায়েক্ব ১/৯৭।
[2]. তদেব।
[3]. সাফারীনী, গিযাউল আলবাব ১/৩৬।
[4]. তাফসীর ইবনু কাছীর ৪/৩৭৫।
[5]. যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৬/৩৪৮।
[6]. ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ৪/২।
[7]. গাযালী, ইহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন ১/২৩৬।
[8]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফাওয়ায়েদ, পৃ. ১৯৮।
[9]. সামারকান্দী, তাম্বীহুল গাফেলীন, পৃ. ১৩৭।