অমর বা

১. ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন,صَحِبْتُ الصُّوفيّةَ، فَمَا انْتَفَعْتُ مِنهُم إلّا بِكَلِمَتَيْنِ سَمِعتُهم يقولُون:‌‌ ‌الوَقْتُ ‌سَيفٌ، فإنْ قَطَعْتَهُ وإلّا قَطَََعَك ونَفْسُكَ إنْ لمَ تَشْغَلْها بالحقِّ شَغَلَتْك بالبَاطِلِ، ‘আমি ছূফীদের সাথে মিশে তাদের কাছ থেকে শুধু দু’টি উপকারী কথা শিখেছি : (১) সময় হচ্ছে তরবারীর মতো। যদি তুমি একে কাটতে না পার, তবে সে তোমাকে কেটে ফেলবে (অর্থাৎ সময়ের সদ্ব্যবহার না করলে হারানো সময় আর ফিরে আসবে না এবং এজন্য আফসোস করেও কোন লাভ হবে না), (২) যদি তোমার নফসকে তুমি ভালো কাজে ব্যস্ত না রাখ, তবে সে তোমাকে অন্যায় কাজে ব্যস্ত রাখবে’।[1]

২. ওহাব আল-মাক্কী (রহঃ) বলেন, ‌لَأَنْ ‌أَدَعُ ‌الْغِيبَةَ ‌أَحَبُّ ‌إِلَيَّ ‌مِنْ ‌أَنْ ‌تَكُونَ ‌لِيَ ‌الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا، مُنْذُ خُلِقَتْ إِلَى أَنْ تَفْنَى، فَأَجْعَلُهَا فِي سَبِيلِ اللهِ تَعَالَى، لَأَنْ أَغُضَّ بَصَرِي عَمَّا حَرَّمَ اللهُ تَعَالَى، أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ تَكُونَ لِيَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا فَأَجْعَلُهَا فِي سَبِيلِ اللهِ تَعَالَى ‘দুনিয়ার সূচনালগ্ন থেকে লয়প্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত পার্থিব সকল ধন-সম্পদের মালিক হয়ে তার সবটুকু আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দেওয়ার চেয়েও গীবত পরিত্যাগ করতে পারা আমার নিকটে অধিকতর প্রিয়। পৃথিবীর বুকে যত অর্থবিত্ত আছে সব হস্তগত করে আল্লাহর রাস্তায় দান করার চেয়ে দৃষ্টির হেফাযত করতে পারাটা আমার কাছে অধিক পসন্দনীয়’।[2]

৩. ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,الْمَطْلُوبُ مِنْ الْقُرْآنِ هُوَ فَهْمُ مَعَانِيهِ، وَالْعَمَلُ بِهِ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ هَذِهِ هِمَّةَ حَافِظِهِ لَمْ يَكُنْ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ وَالدِّينِ ‘কুরআন পাঠের মূল উদ্দেশ্য হ’ল- এর অর্থ অনুধাবন করা এবং তদনুযায়ী আমল করা। কুরআনের বাহকের যদি এই অভিপ্রায় না থাকে, তবে সে আলেম ও দ্বীনদারদের অন্তর্ভুক্ত হবে না’।[3]

৪. ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,اَلْقَلْبُ الْحَيُّ هُوَ الَّذِي يَعْرِفُ الْحَقَّ وَيَقْبَلُهُ وَيُحِبُّهُ وَيُؤْثِرُهُ عَلَى غَيْرِهِ فَإِذَا مَاتَ الْقَلْبُ لَمْ يَبْقَ فِيهِ إِحْسَاسٌ وَلَا تَمْيِيْزَ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ ‘জীবন্ত অন্তর হ’ল- যা হক চিনে, সেটা গ্রহণ করে ও পসন্দ করে এবং সকল কিছুর উপর হককে প্রাধান্য দেয়। কিন্তু অন্তর যখন মরে যায়, তখন সেখানে হক ও বাতিলের পার্থক্য

করার অনুভূতিও অবশিষ্ট থাকে না’।[4]

৫. আব্দুল আযীয ইবনে আবূ রাওয়াদ (রহঃ) তাহাজ্জুদের সময় বিছানার উপর হাত রেখে বলতেন,مَا أَلْيَنْكَ وَلَكِنَّ فِرَاشَ الْجَنَّةِ أَلْيَنُ مِنْكَ ثُمَّ يَقُوْمُ إِلَى صَلَاتِهِ، ‘(হে বিছানা!) তুমি কত নরম! কিন্তু জান্নাতের বিছানা তোমার চেয়ে আরো বেশী নরম। একথা বলেই তিনি ছালাতে দাঁড়িয়ে যেতেন’।[5]

৬. ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, اِجتِنَابُ ‌المَعَاصِي، ‌وَتَرْكُ ‌مَا ‌لَا ‌يَعْنِيْكَ يُنَوِّرُ القَلْبَ، ‘গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এবং অনর্থক বিষয় পরিত্যাগ করা অন্তরকে ঈমানের আলোয় আলোকোজ্জ্বল করে তোলে’।[6]

৭. মুহাম্মাদ ইবনে কা‘ব আল-কুরাযী (রহঃ) বলেন,مَا عُبِدَ اللهُ بِشَيْءٍ أَحَبَّ إلَيْهِ مِنْ تَرْكِ الْمَعَاصِي، ‘আল্লাহর ইবাদত করা অপেক্ষা গোনাহ পরিত্যাগ করা তাঁর নিকটে অধিক প্রিয়’।[7]

৮. আইয়ূব সাখতিয়ানী (রহঃ) বলেন,‌إِذَا ‌رَأَيْتَ ‌الرَّجُلَ ‌يُنَافِسُ فِي الدُّنْيَا، فَنَافِسْهُ فِي الْآخِرَةِ، ‘যখন তুমি কাউকে দুনিয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে দেখবে, তখন তুমি তার সাথে আখেরাত নিয়ে প্রতিযোগিতা করবে’।[8]

৯. যাহ্হাক (রহঃ) বলেন,خُلَّتَانِ مَنْ كَانَتا فِيهِ هَنِئَاهُ دِينُهُ وَدُنْيَاهُ، ‌مَنْ ‌نَظَرَ ‌فِي ‌دِينِهِ إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَهُ، لَمْ تَزَلْ نَفْسُهُ تَتُوقُ إِلَى عَمَلِهِ، ‌وَمَنْ ‌نَظَرَ ‌فِي ‌دُنْيَاهُ إِلَى مَنْ هُوَ دُونَهُ، لَمْ تَسْمُ نَفْسُهُ، ‘দু’টি গুণ যার মাঝে থাকবে ও তার দ্বীন ও দুনিয়া উভয়টাই সুখময় হবে। যে ব্যক্তি দ্বীনের ক্ষেত্রে তার চেয়ে অগ্রগামী ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টি দিবে, তার মন সবসময় নেক আমলের প্রতি আগ্রহী থাকবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার ক্ষেত্রে তার চেয়ে অনগ্রসর ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টি দিবে, তার নফস কখনো আমলের ক্ষেত্রে উচ্চাকাংখী হবে না’।[9]

১০. শুজা‘ আল-কিরমানী বলেন,مَنْ عَمَّرَ ظَاهِرَهُ بِاتِّبَاعِ السُّنَّةِ، وَبَاطِنَهُ بِدَوَامِ الْمُرَاقَبَةِ، وَغَضَّ بَصَرَهُ عَنْ الْمَحَارِمِ، وَكَفَّ نَفْسَهُ عَنْ الشَّهَوَاتِ وأكَلَ مِنَ الحَلاَلِ؛ لَمْ تُخطِئ فِرَاسَتُهُ، ‘যে ব্যক্তি বাহ্যিকভাবে সুন্নাতের অনুসরণ করে, গোপনে সর্বদা আল্লাহকে ভয় করে, হারাম বিষয় থেকে দৃষ্টি অবনমিত রাখে, প্রবৃত্তির চাহিদা থেকে নিজেকে বিরত রাখে এবং হালাল খাবার খায়, তার বিচক্ষণতা সর্বদা অব্যর্থ প্রমাণিত হয়’।[10]

* এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


[1]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন, ৩/৫৪৬।

[2]. আবুল লাইছ সামারকান্দী, তাম্বীহুল গাফিলীন, পৃ. ১৬৬।

[3]. ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা ২/১৩৫।

[4]. ইবনুল কবাইয়িম, শিফাউল ‘আলীল, পৃঃ ১০৪।

[5]. আব্দুল ওয়াহ্হাব শা‘রানী, তাম্বীহুল মুগতার্রীন, পৃ. ৮৯।

[6]. যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ১০/৯৮।

[7]. ইবনু হাজার হায়তামী, আয-যাওয়াজির আন ইক্বতিরাফিল কাবায়ের, ১/২০।

[8]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, ৭/১৮৮।

[9]. ইবনুশ শাজারী, তারতীবুল আমালী, ২/৪৩২।

[10]. ইবনুল ক্বাইয়িম, রওযাতুল মুহিববীন, পৃ. ১৬১।






আরও
আরও
.