১. সর্বাধিক হাদীছজ্ঞ ছাহাবী আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর শিষ্য খ্যাতনামা তাবেঈ ওহাব বিন মুনাবিবহ (রহঃ) বলেন, لَنْ يَبْلُغَ الْعَبْدُ حَقِيقَةَ الْإِيمَانِ حَتَّى يَكُونَ فِيهِ عَشْرُ خِصَالٍ ‘কোন ব্যক্তি ঈমানের হাকীকত বা মূল বিষয়ে পৌঁছতে পারবে না, যতক্ষণ না তার মধ্যে ১০টি অভ্যাস সৃষ্টি হবে। (১) সর্বদা হেদায়াতের আকাঙ্ক্ষী থাকবে (২) অহংকার হ’তে বিরত থাকবে (৩) ইয্যত পাওয়ার চেয়ে বিনয়ী হওয়াকে অধিক প্রিয় মনে করবে (৪) প্রাচুর্যের চেয়ে দারিদ্র্য অধিক প্রিয় হবে (৫) নিজের অধিক নেকীর কাজকে সর্বদা কম মনে করবে (৬) অন্যের কম নেকীর কাজকে সর্বদা অধিক মনে করবে (৭) কোন প্রার্থীকে মন্দ ধারণা করবে না (৮) জীবনের শেষদিন পর্যন্ত জ্ঞানার্জনে লিপ্ত থাকবে (৯) বেঁচে থাকার মত রূযী অধিকতর প্রিয় হবে উদ্বৃত্ত রূযীর চাইতে (১০) ঘর থেকে বের হয়ে সকলকে নিজের চাইতে উত্তম মনে করবে’।[1]
২. ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন,تِلَاوَةُ الْقُرْآنِ تَعْمَلُ فِي أَمْرَاضِ الْفُؤَادِ مَا يَعْمَلُهُ الْعَسَلُ فِي عِلَلِ الْأَجْسَادِ، ‘মধু যেমন শারীরিক রোগ-ব্যাধি থেকে মানুষকে সুস্থ করে তোলে, তেমনি কুরআন তেলাওয়াত অন্তরের রোগের নিরাময় করে’।[2]
৩. আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন,لَا تَهُذُّوا الْقُرْآنَ هَذَّ الشِّعْرِ، وَلَا تَنْثُرُوهُ نَثْرَ الدَّقَلِ، وَقِفُوْا عِنْدَ عَجَائِبِهِ، وَحَرِّكُوا بِهِ الْقُلُوبَ، وَلَا يَكُنْ هَمُّ أَحَدِكُمْ آخِرَ السُّورَةِ، ‘তোমরা কবিতার মতো দ্রুত কুরআন তেলাওয়াত করো না এবং এটাকে নষ্ট খেজুরের মতো ছিটিয়ে দিয়ো না। এর আশ্চর্য বিষয় নিয়ে একটু ভাবো। কুরআন দিয়ে হৃদয়কে একটু নাড়া দাও। (তেলাওয়াতের সময়) সূরা শেষ করাই যেন তোমাদের কারো একমাত্র চিন্তা না হয়’।[3]
৪. সুফয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন,يهتف العلم بالعمل فإن أجابه حل وإلا ارتحل، ‘ইলম আমলকে কানে কানে আহবান জানায়। আমল যদি তার ডাকে সাড়া দেয়, তবে সে উপস্থিত থাকে, অন্যথায় সে (ব্যক্তির কাছ থেকে) প্রস্থান করে’।[4]
৫. ইউনুস ইবনে ওবাইদ (রহঃ) বলেন,ثَلاَثَةٌ احْفَظُوهُنَّ عَنِّي: لاَ يَدْخُلْ أَحَدُكُم عَلَى سُلْطَانٍ يَقْرَأُ عَلَيْهِ القُرْآنَ، وَلاَ يَخْلُوَنَّ أَحَدُكُم مَعَ امْرَأَةٍ يَقْرَأُ عَلَيْهَا القُرْآنَ، وَلاَ يُمَكِّنْ أَحَدُكُم سَمْعَهُ مِنْ أَصْحَابِ الْأَهْوَاءِ، ‘তোমরা আমার কাছ থেকে তিনটি বিষয় শিখে নাও, (১) তোমাদের কেউ যেন কুরআন পাঠ করে শোনানোর উদ্দেশ্যেও রাজদরবারে প্রবেশ না করে। (২) তোমাদের কেউ যেন কুরআন শিখানোর জন্য হ’লেও কোন নারীর সাথে একান্তে মিলিত না হয়। (৩) তোমাদের কেউ যেন প্রবৃত্তিপরায়ণ লোকের কথার দিকে কর্ণপাত না করে’।[5]
৬. ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,الشيطان أعظم ما يتحكم من الإنسان إذا ملأ بطنه من الطعام، ‘শয়তান একজন মানুষের উপর তখনই সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়, যখন সে খাবার দিয়ে তার পেট পূর্ণ করে’।[6]
৭. আবূ হাফ্ছ (রহঃ) আবূ ওছমান নিশাপুরী (রহঃ)-কে উপদেশ দিয়ে বলেন, إِذَا جَلَسْتَ لِلنَّاسِ فَكُنْ وَاعِظًا لِقَلْبِكَ وَنَفْسِكَ. وَلَا يَغُرَّنَّكَ اجْتِمَاعُهُمْ عَلَيْكَ. فَإِنَّهُمْ يُرَاقِبُونَ ظَاهِرَكَ. وَاللهُ يُرَاقِبُ بَاطِنَكَ، ‘যখন তুমি মানুষের সামনে (উপদেশ দেওয়ার জন্য) বসবে, তখন নিজের অন্তর ও নফসকেই উপদেশ দেওয়ার ইচ্ছা করবে। আর তোমার কাছে লোকজনের সমবেত হওয়া যেন তোমাকে ধোঁকায় না ফেলে। কেননা তারা তোমার বাহিরের অবস্থা দেখে, আর আল্লাহ দেখেন তোমার ভেতরের অবস্থা’।[7]
৮. বকর ইবনে আব্দুল্লাহ মুযানী (রহঃ) বলেন,الْمُسْتَغْنِي بِالدُّنْيَا عَنِ الدُّنْيَا كَالْمُطْفِئِ النَّارَ بِالتِّبْنِ، ‘যে ব্যক্তি আখেরাত থেকে বিমুখ হয়ে শুধু দুনিয়াকে নিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হ’তে চায়, সেই তো ঐ ব্যক্তির মতো, যে খড়-কুটো দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে’।[8]
৯. মালেক ইবনু দীনার (রহঃ) বলেন,مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ لِنَفْسِهِ فَالْقَلِيلُ مِنْهُ يَكْفِي، وَمَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ لِحَوَائِجِ النَّاسِ فَحَوَائِجُ النَّاسِ كَثِيرَةٌ، ‘যে ব্যক্তি নিজের জন্য ইলম অর্জন করে, তার জন্য অল্প ইলমই যথেষ্ট হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি মানুষের প্রয়োজনের জন্য ইলম শিখে, সে যেন জেনে রাখে, মানুষের প্রয়োজন অফুরন্ত’।[9]
১০. আব্দুল্লাহ আর-রাযী (রহঃ) বলেন,إِنْ سَرَّكَ أَنْ تَجِدَ حَلاوَةَ الْعِبَادَةِ وَتَبْلُغَ ذُرْوَةَ سَنَامِهَا؛ فَاجْعَلْ بَيْنَكَ وَبْيَنَ شَهَوَاتِ الدُّنْيَا حَائِطًا مِنْ حَدِيدٍ، ‘যদি তুমি ইবাদতের স্বাদ আস্বাদন করতে চাও এবং আনুগত্যের উচ্চ শিখরে আরোহণ করে আনন্দিত হ’তে চাও, তবে তোমার এবং পার্থিব কামনা-বাসনার মাঝে লোহার প্রাচীর দাঁড় করিয়ে দাও’।[10]
[1]. মুহাম্মাদ বিন ইয়াহ্ইয়া আল-‘আদানী, কিতাবুল ঈমান, ১২০ পৃ.।
[2]. ইবনুল জাওযী, আত-তাবছিরাহ, ১/৭৯।
[3]. ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ, ১/৩২৯।
[4]. ইবনু কুতায়বা, উয়ূনুল আখবার, ২/১৪০।
[5]. যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৬/২৯৩।
[6]. ইবনুল ক্বাইয়িম, বাদায়েউল ফাওয়াইদ ২/২৭৩।
[7]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালিকীন, ২/৬৬।
[8]. আহমাদ আদ-দীনওয়ারী, আল-মুজালাসাহ ওয়া জাওয়াহিরুল ইলম, ২/৩৭৮।
[9]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশক্ব, ৫৬/৪৩৩; ইবনু হাম্বল, আয-যুহদ, পৃ. ২৬২।
[10]. আল-মুজালাসাহ ও জাওয়াহিরুল ইলম, ৩/৫৩৩।