১. ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন,رَأَيْتُ كَثِيْرًا مِّنَ النَّاسِ يَتَحَرَّزُوْنَ مِنْ رَشَاشِ نَجَاسَةٍ، وَلَا يَتَحَاشَوْنَ مِنْ غِيْبَةٍ! وَيَكْثُرُوْنَ مِنَ الصَّدَقَةِ، وَلَا يُبَالُوْنَ بِمُعَامَلاَتِ الرِّبَا! وَيَتَهَجَّدُوْنَ بِاللَّيْلِ، وَيُؤَخِّرُوْنَ الْفَرِيْضَةَ عَنِ الْوَقْتِ- ‘আমি অনেক মানুষকে দেখেছি, যারা নাপাকীর ছিটা-ফোঁটা থেকে খুব সতর্ক থাকে, কিন্তু গীবত থেকে দূরে থাকে না। তারা অনেক দান-ছাদাক্বাহ করে, কিন্তু সূদী লেনদেনের ব্যাপারে কোন পরোয়া করে না। তারা রাতে তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় করে, কিন্তু ফরয ছালাত আওয়াল ওয়াক্ত থেকে বিলম্ব করে আদায় করে’।[1]
২. শায়খ মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আলে উছায়মীন (রহঃ) বলেন,إذَا كَانَ التُّجَّارُ لاَ يَنَامُوْنَ حَتَّى يُرَاجِعُوا دَفَاتِرَ تِجَارَتِهِمْ، مَاذَا صَرَفُوا، وَمَاذَا أَنْفَقُوا، وَمَاذَا كَسَبُوا، فَإِنَّ تُجَّارَ الْآخِرَةِ يَنْبَغِي أَنْ يَكُونُوا أَشَدَّ اهْتِمَاماً؛ لِأَنَّ تِجَارَتَهُم أَعْظَمُ مِنْ تِجَارَةِ أَهْلِ الدُّنْيَا، ‘যখন ব্যবসায়ীরা তাদের খাতায় ব্যবসার খরচপাতি এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ না করা পর্যন্ত কখনো ঘুমাতে যায় না, তখন আখেরাতের ব্যবসায়ীদের উচিত তাদের ব্যবসার প্রতি আরো অধিক মনোনিবেশ করা। কেননা দুনিয়াবাসীদের ব্যবসার চেয়ে তাদের ব্যবসা অনেক বড়’।[2]
৩. ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, لَوْ عَلِمَ النَّاسُ مَا فِيْ قِرَاءَةِ الْقُرْآنِ بِالتَّدَبُّرِ لَاشْتَغَلُوا بِهَا عَنْ كُلِّ مَا سِوَاهَا، ‘মানুষ যদি জানত অনুধাবন করে কুরআন তেলাওয়াতের মাঝে কি কল্যাণ নিহিত আছে, তাহ’লে তারা সকল কাজ ছেড়ে দিয়ে কুরআন পাঠে মশগূল হয়ে পড়ত’।[3]
৪. ইমাম সাহনূন (রহঃ) বলেন,أَجْرَأُ النَّاسِ عَلَى الفُتْيَا أَقَلُّهُمْ عِلْماً، مَا وَجَدْتُ مَنْ بَاعَ آخِرَتَهُ بِدُنْيَا غَيْرَهِ إِلاَّ الـمُفْتِي، سُرْعَةُ الجَوَابِ بِالصَّوَابِ أَشَدُّ فِتْنَةً مِنْ فِتْنَةِ الـمَالِ، ‘ফৎওয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে দুঃসাহসী মানুষ তারাই, যাদের জ্ঞান সবচেয়ে কম। মুফতী ছাড়া অন্য কাউকে আমি দুনিয়ার বিনিময়ে আখেরাতকে বিক্রি করতে দেখিনি। (প্রশ্ন করার সাথে সাথে) দ্রুত উত্তর দেওয়ার প্রবণতা সম্পদের চেয়েও ভয়ংকর ফেৎনা’।[4]
৫. শায়খ উছায়মীন (রহঃ) বলেন,النِّعَمُ إذَا لَمْ تَشْكُرْ زَالَتْ، وَأَكْبَرُ نِعْمَةٍ أَنْعَمَ اللهُ بِهَا عَلىٰ عِبَادِهِ هِيَ نِعْمَةُ الدِّيْنِ، فَإذَا لَمْ تَشْكُرْ فَإنَّهَا تَزُوْلُ كَغَيْرِهِ مِنَ النِّعَمِ، ‘আপনি যদি নে‘মতের শুকরিয়া আদায় না করেন, তাহ’লে সেই নে‘মত বিলীন হয়ে হয়ে যাবে। আর বান্দার প্রতি আল্লাহর সবচেয়ে বড় নে‘মত হ’ল- দ্বীনের নে‘মত। সুতরাং (সঠিক দ্বীন পেয়ে) আপনি যদি শুকরিয়া আদায় না করেন, তাহ’লে অন্যান্য নে‘মতের মতো এটাও বিলীন হয়ে যাবে’।[5]
৬. ইয়াহ্ইয়া ইবনে মু‘আয (রহঃ) বলেন,الدُّنْيَا أَمِيرٌ مَنْ طَلَبَهَا وَخَادِمٌ مَنْ تَرَكَهَا، الدُّنْيَا قَنْطَرَةُ الْآخِرَةِ، فَاعْبُرُوْهَا وَلَا تَعْمُرُوْهَا، لَيْسَ مِنَ الْعَقْلِ بُنْيَانُ الْقُصُوْرِ عَلَى الْجُسِورِ، ‘যে দুনিয়া তালাশ করে, দুনিয়া তার আমীর বা পরিচালক হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি দুনিয়াকে পরিত্যাগ করে, দুনিয়া তার খাদেম হয়ে যায়। দুনিয়া হচ্ছে আখেরাতের সাঁকো। তোমরা এই সাঁকো পার হয়ে চলে যাও। এখানে বসতি স্থাপন করতে যেয়ো না। কেননা সাঁকোর উপরে প্রাসাদ নির্মাণ করা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় নয়’।[6]
৭. ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, أَصْلُ كُلِّ فِتْنَةٍ إنَّمَا هُوَ مِنْ تَقْدِيْمِ الرَأْيِ عَلَى الشَّرْعِ، وَالْهَــوَى عَلَى الْعَقْلِ، ‘সকল ফেৎনার মূল উৎস হ’ল শরী‘আতের উপরে রায় বা মানুষের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া এবং বিবেকের উপরে প্রবৃত্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া’।[7]
৮. ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,كُلَّمَا كَانَ الرَّجُلُ عَنِ الرَّسُولِ أَبْعَدَ كَانَ عَقْلُهُ أَقَلَّ وَأَفْسَدَ، فَأَكْمَلُ النَّاسِ عُقُولًا اتِّبَاعُ الرُّسُلِ وَأفْسَدُهُمْ عُقُولًا الْمَعْرِضُ عَنْهُم وَعَمَّا جَاءُوا بِهِ وَلِهَذَا كَانَ أَهْلُ السُّنَّةِ وَالْحَدِيْثِ أَعْقَلُ الْأُمَّةِ وَهُمْ فِي الطَّوَائِفِ كَالصَّحَابَةِ فِي النَّاسِ- ‘মানুষ রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত থেকে যতই দূরে সরে যায়, ততই তার বুদ্ধি হ্রাসপ্রাপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। সুতরাং নবী-রাসূলদের অনুসারীরাই পূর্ণ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী। আর নবী-রাসূল ও তাদের আনীত বিধান থেকে বিমুখ ব্যক্তিরাই অকেজো বুদ্ধির অধিকারী। সেকারণ আহলুস সুন্নাত ও আহলুল হাদীছ উম্মতের মাঝে সবচেয়ে বুদ্ধিমান। বিভিন্ন দলের মাঝে তাদের মর্যাদা ঠিক তেমন, মানুষের মাঝে ছাহাবীদের মর্যাদা যেমন’।[8]
৯. ‘আওন ইবনে আব্দুল্লাহ (রহঃ) বলেন, كَفَى بِكَ مِنَ الكِبْرِ أَنْ تَرَى لَكَ فَضْلاً عَلَى مَنْ هُوَ دُونَكَ، ‘তোমার অহংকারী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, তুমি অন্যদের চেয়ে তোমাকে উত্তম মনে করবে’।[9]
[1]. ইবনুল জাওযী, ছায়দুল খাত্বের, পৃ. ১৭৭।
[2]. উছায়মীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ, ৫/৭৯।
[3]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মিফতাহু দারিস সা‘আদাহ, ১/১৮৭।
[4]. যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ৯/৪৬৩, ৪৬৫।
[5]. উছায়মীন, তাফসীর সূরা নূর, পৃ. ৩৬৬।
[6]. আবূ নু‘আইম, হিলয়াতুল আওলিয়া, ১০/৫৩।
[7]. ইবনুল ক্বাইয়িম, ইগাছাতুল লাহ্ফান, ২/১৬৭।
[8]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আছ-ছাওয়াইকুল মুরসালাহ, ৩/৮৬৪।
[9]. ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়া, ২/৫৮।