অমর বাণী

১. ইমাম গাযালী (রহঃ) বলেন,أَنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا أَرَادَ بِعَبْدٍ خَيْرًا بَصَّرَهُ بِعُيُوبِ نَفْسِهِ فَمَنْ كَانَتْ بَصِيرَتُهُ نَافِذَةً لَمْ تَخْفَ عَلَيْهِ عُيُوبُهُ فَإِذَا عَرَفَ الْعُيُوبَ أَمْكَنَهُ الْعِلَاجُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ الْخَلْقِ جَاهِلُونَ بِعُيُوبِ أَنْفُسِهِمْ يَرَى أَحَدُهُمُ الْقَذَى فِي عَيْنِ أَخِيهِ وَلَا يَرَى الْجِذْعَ فِي عَيْنِ نَفْسِهِ، ‘মহান আল্লাহ যখন কারো কল্যাণ চান, তখন তিনি তার দৃষ্টিকে তার দোষ-ত্রুটির দিকে ফিরিয়ে দেন। ফলে যার অন্তর্দৃষ্টি প্রখর হয়, তার কাছে নিজের ত্রুটি-বিচ্যুতি গোপন থাকে না। আর যখন সে নিজের দোষ জেনে যায়, তখন এর প্রতিকারও সম্ভব হয়। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ নিজেদের দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে অপর ভাইয়ের চোখে সামান্য খড়-কুটো বড় করে দেখে, কিন্তু নিজের চোখে কাঠের গুঁড়িও দেখতে পায় না’।[1]

২. আবূ হাযেম (রহঃ) বলেন, قد رضي علماء زماننا هذا بالكلام، وتركوا العمل. وقد كان السلف يفعلون ولا يقولون، ثم صار الذين بعدهم يفعلون ويقولون، ثم صار الذين بعدهم يقولون ولا يفعلون، وسيأتي زمان أهله لا يقولون ولا يفعلون، ‘আমাদের যুগের আলেমরা শুধু বক্তব্য দিয়েই আত্মতৃপ্ত থাকে, আমল করে না। অথচ সালাফগণ বলার চেয়ে আমল করতেন বেশী। সালাফদের পরে এমন প্রজন্মের আবির্ভাব ঘটে- যারা আমলও করতেন, ওয়াযও করতেন। আর বর্তমান যুগের লোকেরা শুধু ওয়ায করে, আমল করে না। অচিরেই এমন একটি যুগ আসবে, যে যুগের লোকেরা মানুষকে বলবেও না এবং নিজেরাও আমল করবে না’।[2]

৩. ফুযাইল ইবনে ইয়ায (রহঃ) বলেন, ‌إِذَا ‌لَمْ ‌تَقدِرْ ‌عَلَى ‌قِيَامِ ‌اللَّيْلِ، وَصِيَامِ النَّهَارِ، فَاعْلَمْ أَنَّكَ مَحْرُوْمٌ، كَبَّلَتْكَ خَطِيئَتُكَ، ‘যদি তুমি রাতে তাহাজ্জুদ না আদায় করতে পার এবং দিনে ছিয়াম পালন করতে না পার, তবে জেনে রেখ! তুমি (ইবাদতের বরকত থেকে) বঞ্চিত হয়েছ, তোমার গুনাহ-খাতা তোমাকে বন্দী করে রেখেছে’।[3]

৪. ইবনু কুদামা মাক্বদেসী (রহঃ) বলেন,مقام العدل في الأكل رفع اليدين ‌مع ‌بقاء ‌شىء ‌من ‌الشهوة، ‘খাবারের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা হ’ল খাবারের প্রতি কিছুটা আগ্রহ থাকা অবস্থাতেই (দস্তরখানা থেকে) হাত উঠিয়ে নেওয়া’।[4]

৫. ইবনে সীরীন (রহঃ) বলেন, من الغيبة المحرمة التي لا يشعر بها أكثر الناس قولهم: إن فلانا أعلم من فلان، فإن المفضول يتكدر من ذلك، ومن المعلوم أن حد الغيبة أن يذكر الشخص أخاه بما يكره، ‘হারাম গীবতের একটি ধরন আছে, যেটাকে অধিকাংশ মানুষ গীবতই মনে করে না। তাদের বক্তব্য, অমুকের চেয়ে অমুক বেশী জ্ঞানী। এই কথার মাধ্যমে যাকে কম জ্ঞানী মনে করা হয় তাকে হেয় করা হয়। আর এটা তো জানা কথা যে, গীবত হ’ল কারো পিছনে এমন কথা বলা যা সে অপসন্দ করে’।[5]

৬. ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,الْمَقْدُورُ يَكْتَنِفُهُ أَمْرَانِ: التَّوَكُّلُ قَبْلَهُ، وَالرِّضَا بَعْدَهُ، ‌فَمَنْ ‌تَوَكَّلَ ‌عَلَى ‌اللهِ ‌قَبْلَ ‌الْفِعْلِ. وَرَضِيَ بِالْمَقْضِيِّ لَهُ بَعْدَ الْفِعْلِ فَقَدْ قَامَ بِالْعُبُودِيَّةِ، ‘ভাগ্য দু’টি বিষয় দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে: কাজের শুরুতে তাওয়াক্কুল এবং শেষে সন্তুষ্টি। সুতরাং যে ব্যক্তি কাজ করার শুরুতে আল্লাহর উপর ভরসা করল এবং কাজের শেষে আল্লাহর ফায়ছালায় সন্তুষ্ট থাকল, সে যেন পূর্ণভাবে আল্লাহর দাসত্ব করল’।[6]

৭. ফুযাইল ইবনে ইয়ায (রহঃ) বলেন,الْحُبُّ أَفْضَلُ مِنَ الْخَوْفِ، أَلَا تَرَى إِذَا كَانَ لَكَ عَبْدَانِ أَحَدُهُمَا يُحِبُّكَ، وَالْآخَرُ يَخَافُكَ، فَالَّذِيْ يُحِبُّكَ مِنْهُمَا يَنْصَحُكَ شَاهِدًا كُنْتَ أَوْ غَائِبًا لِحُبِّهِ إِيَّاكَ، وَالَّذِيْ يَخَافُكَ عَسَى أَنْ يَنْصَحَكَ إِذَا شَهِدْتَ لِمَا يَخَافُ وَيَغُشُّكَ إِذَا غِبْتَ وَلَا يَنْصَحُكَ، ‘ভয়ের চেয়ে ভালবাসা উত্তম। তুমি কি দেখনি যদি তোমার দু’জন দাস থাকে, যাদের একজন তোমাকে ভালবাসে এবং অপরজন তোমাকে ভয় করে। যে তোমাকে ভালবাসে সে তোমার উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতিতে তোমার হিতাকাঙ্ক্ষী থাকে। তোমার প্রতি তার ভালবাসা থাকার কারণে এমনই হয়। আর যে তোমাকে ভয় করে সে হয়ত ভয়ের কারণে প্রকাশ্যে তোমার প্রতি আন্তরিক থাকে, কিন্তু তোমার অনুপস্থিতিতে তোমাকে ধোঁকা দেয় এবং তোমার কল্যাণ কামনা করে না’।[7]

৮. ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,أَنَّ مَنْ أَسَاءَ إِلَيْكَ، ثُمَّ جَاءَ يَعْتَذِرُ مِنْ إِسَاءَتِهِ، فَإِنَّ التَّوَاضُعَ يُوجِبُ عَلَيْكَ قَبُولَ مَعْذِرَتِهِ، حَقًّا كَانَتْ أَوْ بَاطِلًا، ‌وَتَكِلُ ‌سَرِيرَتُهُ ‌إِلَى ‌اللهِ تَعَالَى، ‘আপনার সাথে যদি কেউ খারাপ আচরণ করে। তারপর আপনার কাছে এসে সেই মন্দ আচরণের ব্যাপারে ওযর পেশ করে, তবে বিনয়-নম্রতার দাবী অনুযায়ী সেই ওযর কবুল করে নেওয়া আবশ্যক। চাই সেই ওযর সঠিক হোক বা বেঠিক হোক। আর তার গোপনীয় বিষয় আল্লাহর কাছেই ন্যস্ত করবেন’।[8]


[1]. গাযালী, ইহ্য়াউ উলূমিদ্দীন, ৩/৬৪।

[2]. আব্দুল ওয়াহ্হাব শা‘রানী, তাম্বীহুল মুগতার্রীন, পৃ. ১৫৬।

[3]. যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৮/৪৩৫।

[4]. ইবনু কুদামা, মুখতাছার মিনহাজুল ক্বাছিদীন, পৃ. ১৬৩।

[5]. আব্দুল ওয়াহ্হাব শা‘রানী, তাম্বীহুল মুগতার্রীন, পৃ. ২১২।

[6]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন, ২/১২২।

[7]. ইবনু রজব হাম্বলী, জামে‘উল উলূম ওয়াল হিকাম, ১/২১৯।

[8]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন, ২/৩২১।






বিষয়সমূহ: বিবিধ
আরও
আরও
.