১. মালেক ইবনু দীনার (রহঃ) বলেন, بِقَدْرِ مَا تَحْزَنُ لِلدُّنْيَا كَذَلِكَ يَخْرُجُ هَمُّ الْآخِرَةِ مِنْ قَلْبِكَ، وَبِقَدْرِ مَا تَحْزَنُ لِلْآخِرَةِ كَذَلِكَ يَخْرُجُ هَمُّ الدُّنْيَا مِنْ قَلْبِكَ ‘তুমি দুনিয়া নিয়ে যতটুকু পেরেশান হবে, তোমার হৃদয় থেকে ততটুকু আখেরাতের চিন্তা উধাও হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে আখেরাতের ব্যাপারে তুমি যতটুকু চিন্তা-ভাবনা করবে, সেই পরিমাণ পার্থিব দুশ্চিন্তা তোমার হৃদয় থেকে বের হয়ে যাবে’।[1]

২. মুহাম্মাদ বিন সূক্বাহ (রহঃ) বলেন, أَمْرَانِ لَوْ لَمْ نُعَذَّبْ إِلَّا بِهِمَا لَكُنَّا مُسْتَحِقِّينَ بِهِمَا الْعَذَابَ: أَحَدُنَا يَزْدَادُ فِي دُنْيَاهُ فَيَفْرَحُ فَرَحًا مَا عَلِمَ اللهُ مِنْهُ قَطُّ أَنَّهُ فَرِحَ بِشَيْءٍ قَطُّ زِيدَ فِي دِينِهِ مِثْلَهُ، وَأَحَدُنَا يُنْقَصُ مِنْ دُنْيَاهُ فَيَحْزَنُ حُزْنًا مَا عَلِمَ اللهُ مِنْهُ قَطُّ أَنَّهُ حَزِنَ عَلَى شَيْءٍ نُقِصَهُ مِنْ دِينِهِ مِثْلَهُ، ‘যদি আমাদেরকে দু’টি কারণে শাস্তি দেওয়া হ’ত, তাহ’লে আমরা সেই দু’টি কারণেই শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত হয়ে যেতাম। (১) আমাদের কেউ কেউ দুনিয়ার ধন-সম্পদ বৃদ্ধিতে আনন্দিত হয়, অথচ আল্লাহ কখনো তাকে দ্বীনের পাথেয় বৃদ্ধিতে এতটা খুশি দেখেননি। (২) আমাদের কেউ কেউ দুনিয়াবী ক্ষতির সম্মুখীন হ’লে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়, অথচ দ্বীনের কোন ঘাটতিতে আল্লাহ কখনো তাকে ততটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখেন না’।[2]

৩. হযরত আবূবকর ছিদ্দীক্ব (রাঃ) যখন ওমর (রাঃ)-কে খলীফা নিযুক্ত করেন, তখন তাকে অছিয়ত করে বলেন, إِنَّ أَوَّلَ مَا أُحَذِّرُكَ نَفْسُكَ الَّتِي بَيْنَ جَنْبَيْكَ، ‘সর্বপ্রথম আমি আপনাকে আপনার নফসের ব্যাপারে সতর্ক করছি, যে নফসের অবস্থান আপনার মাঝেই’।[3]

৪. মুহাম্মাদ বিন ওয়াসে‘ (রহঃ) বলেন, حفظ اللسان أشد على الناس من حفظ الدينار والدرهم، ‘দীনার-দিরহাম সংরক্ষণের চেয়ে জিহবার হেফাযত করা অত্যন্ত কঠিন’।[4]

৫. সুফিয়ান ইবনে ‍উয়ায়না (রহঃ) বলেন,أَشَدُّ النَّاسِ حَسْرَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثَلَاثَةٌ: رَجُلٌ كَانَ لَهُ عَبْدٌ فَجَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَفْضَلَ عَمَلًا مِنْهُ، وَرَجُلٌ لَهُ مَالٌ فَلَمْ يَتَصَدَّقْ مِنْهُ فَمَاتَ فَوَرِثَهُ غَيْرُهُ فَتَصَدَّقَ مِنْهُ , وَرَجُلٌ عَالِمٌ لَمْ يَنْتَفِعْ بِعِلْمِهِ فَعَلَّمَهُ غَيْرَهُ فَانْتَفَعَ بِهِ، ‘ক্বিয়ামতের দিন তিন প্রকার মানুষ সবচেয়ে বেশী আফসোস করবে- (১) এমন ব্যক্তি, যার একজন ক্রীতদাস ছিল, যে ক্বিয়ামতের দিন তার চেয়ে উত্তম আমল নিয়ে উপস্থিত হবে, (২) এমন ব্যক্তি, যার সম্পদ ছিল, কিন্তু সে তার জীবদ্দশায় তা থেকে দান-ছাদাক্বাহ করতে পারেনি, তবে সে মারা গেলে তার উত্তরাধিকারীরা তা থেকে দান করেছে এবং (৩) এমন ব্যক্তি, যে নিজে আলেম ছিল, কিন্তু সে তার ইলম দ্বারা উপকৃত হ’তে পারেনি, তবে সে অন্যদের শিক্ষা দিয়েছিল এবং তারা সেই ইলম দ্বারা উপকৃত হয়েছে’।[5]

৬. হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন,إنما الفقيه الزاهد في الدنيا، الراغب في الآخرة، البصير بدينه، المداوم على عبادة ربه، الوَرِع الكافُّ عن أعراض المسلمين، العفيف عن أموالهم، الناصح لهم، ‘সত্যিকারের জ্ঞানী ব্যক্তি তো সে-ই, যে পার্থিব জীবনের প্রতি অনাগ্রহী, আখেরাতের জীবনের জন্য উন্মুখ, দ্বীন সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখে, নিয়মিত তার রবের ইবাদত করে, মুসলিমদের সম্মান লঙ্ঘন করা থেকে বিরত থাকে, তাদের সম্পদ কুক্ষিগত করা থেকে নিবৃত্ত থাকে এবং তাদেরকে দ্বীনের সদুপদেশ দেয়’।[6]

৭. আবূ সুলাইমান (রহঃ) বলেন, أهل الليل في ليلهم ألذ من أهل اللهو في لهوهم، ولولا الليل ما أحببت البقاء في الدنيا، ‘বিনোদন প্রেমী লোকের আমোদ-প্রমোদে ডুবে থাকার চেয়ে ইবাদতগুযার বান্দার জন্য রাতের ইবাদতে মগ্ন থাকা অধিকতর উপভোগ্য। যদি রাত না থাকত, তাহ’লে দুনিয়াতে বেঁচে থাকার ব্যাপারে আমার কোন ইচ্ছাই থাকত না’।[7]

৮. ওয়াহ্হাব ইবনু মুনাবিবহ (রহঃ) বলেন, مَثَلُ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ مَثَلُ ضَرَّتَيْنِ، إِنْ أَرْضَيْتَ إِحْدَاهُمَا أَسْخَطْتَ الْأُخْرَى، ‘দুনিয়া ও আখেরাতের তুলনা হ’ল দুই সতীনের মতো। তুমি যদি তাদের একজনকে সন্তুষ্ট রাখ, তাহ’লে অপরজনকে অবশ্যই অসন্তুষ্ট করতে হবে’।[8]

৯. সুফিয়ান আছ-ছাওরী (রহঃ) বলেন, لَا يَأْمُرُ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَى عَنِ الْمُنْكَرِ إِلَّا مَنْ كَانَ فِيهِ خِصَالٌ ثَلَاثٌ: رَفِيقٌ بِمَا يَأْمُرُ، رَفِيقٌ بِمَا يَنْهَى، عَدْلٌ بِمَا يَأْمُرُ، عَدْلٌ بِمَا يَنْهَى، عَالِمٌ بِمَا يَأْمُرُ، عَالِمٌ بِمَا يَنْهَى، ‘সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ কেবল সেই ব্যক্তিই কারতে পারে, যার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। (১) আদেশ-নিষেধের বিষয়ে কোমলতা, (২) আদেশ-নিষেধের ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতা এবং (৩) যে বিষয়ে আদেশ-নিষেধ করবে, সেই বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান থাকা’।[9]


[1]. আহমাদ ইবনু হাম্বল, আয্-যুহ্দ, পৃ. ২৫৯।

[2]. আবূ নু‘আইম ইছফাহানী, হিলয়াতুল আওলিয়া ৫/৪।

[3]. ইবনু রজব হাম্বলী, জামে‘উল ‘উলূম ওয়াল হিকাম, ১/৪৯০।

[4]. গাযালী, এহইয়াউ উলূমিদ্দীন, ৩/১১১।

[5]. আবূ নু‘আইম ইছফাহানী, হিলয়াতুল আউলিয়া ৭/২৮৮।

[6]. ইবনু কুদামাহ মাক্বদেসী, মুখতাছার মিনহাজুল ক্বাছেদীন, পৃ. ২১।

[7]. আবূ ত্বালেব মাক্কী, কূতুল কুলূব ফী মু‘আমালাতিল মাহবূব ১/৭১।

[8]. হিলয়াতুল আউলিয়া, ৪/৫১।

[9]. জামে‘উল ‘উলূম ওয়াল হিকাম ২/২৫৬।






আরও
আরও
.