১. আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন,إِنَّ اللهَ يُعْطِي الدُّنْيَا مَنْ يُحِبُّ وَمَنْ لَا يُحِبُّ، وَلَا يُعْطِي الْإِيمَانَ إِلَّا مَنْ يُحِبُّ، فَإِذَا أَحَبَّ اللهُ عَبْدًا أَعْطَاهُ الْإِيْمَانْ، ‘আল্লাহ যাকে ভালবাসেন এবং যাকে ভালবাসেন না উভয়কেই দুনিয়া দান করেন। কিন্তু তিনি যাকে ভালবাসেন একমাত্র তাকেই ঈমান দান করেন। সুতরাং আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন, তখন তাকে ঈমান দান করেন’।[1]
২. কাযী শুরাইহ (রহঃ) বলেন,ما أُصِيْبَ عبدٌ بمصيبة الا كان لله عليه فيها ثلاث نعم: ألا تكون كانت في دينه، وألا تكون أعظم مما كانت، وأنها لا بد كائنه فقد كانت، ‘বান্দা কোন বিপদে পড়েও আল্লাহর তিনটি নে‘মত পেয়ে থাকে: (১) বিপদটা তার দ্বীনী বিষয়ে আসেনি; (বরং দুনিয়াবী বিষয়ে এসেছে)। (২) যে বিপদ এসেছে, তার চেয়েও বড় বিপদ আসতে পারত। (৩) যে বিপদটা অবশ্যই আসত, তা এখনই ঘটে গেল (সামনে আর আসবে না)।[2]
৩. হাস্সান ইবনু সিনান (রহঃ) বলেন, بَادِرِ انْقِطَاعَ عَمَلِكَ، فَإِنَّ الْمَوْتَ إِذَا جَاءَ انْقَطَعَ الْبُرْهَانُ، ‘আমলের দরজা বন্ধ হওয়ার আগেই দ্রুত আমল কর। কারণ যখন মৃত্যু এসে যাবে, তখন সব যুক্তি-তর্ক বন্ধ হয়ে যাবে’।[3]
৪. আবূ সুলাইমান আদ-দারানী (রহঃ) বলেন, إِنَّ قَوْمًا طَلَبُوا الْغِنَى فَحَسِبُوا أَنَّهُ فِي جَمْعِ الْمَالِ أَلَا وَإِنَّمَا الْغِنَى فِي الْقَنَاعَةِ، وَطَلَبُوا الرَّاحَةَ فِي الْكَثْرَةِ وَإِنَّمَا الرَّاحَةُ فِي الْقِلَّةِ، وَطَلَبُوا الْكَرَامَةَ مِنَ الْخَلْقِ أَلَا وَهِيَ فِي التَّقْوَى، وَطَلَبُوا النِّعْمَةَ فِي اللِّبَاسِ الرَّقِيقِ وَاللَّيِّنِ وَفِي طَعَامٍ طَيِّبٍ، وَالنِّعْمَةُ فِي الْإِسْلَامِ السِّتْرُ وَالْعَافِيَةُ، ‘লোকজন প্রাচুর্য তালাশ করে। তারা মনে করে, ধন-সম্পদ জমানোর মাঝে প্রাচুর্য রয়েছে। অথচ প্রাচুর্য রয়েছে অল্পে তুষ্টির মাঝে। তারা আধিক্যের মাঝে সুখ-শান্তি খোঁজে, অথচ প্রশান্তি রয়েছে অল্পের মাঝে। তারা সৃষ্টির কাছে সম্মান তালাশ করে, অথচ সম্মান নিহিত আছে তাক্বওয়ার মাঝে। তারা নরম-মসৃণ পোষাক এবং ভাল খাদ্যসামগ্রীর মাঝে নে‘মত অন্বেষণ করে, কিন্তু নে‘মত নিহিত আছে ইসলাম, দোষ-ত্রুটি গোপন থাকা ও সুস্থতার মাঝে’।[4]
৫. রাগেব ইসফাহানী (রহঃ) বলেন, ذكر الموت يطرد فضول الأمل ويقل من غرور المنى، ويهون المصائب، ويحول بين الإنسان والطغيان، ‘মৃত্যুকে স্মরণ অতিরিক্ত কামনা-বাসনা দূর করে, আকাঙ্ক্ষার প্রবঞ্চনা হ্রাস করে, বিপদাপদকে হালকা করে দেয় এবং (স্রষ্টার) অবাধ্যতা ও ব্যক্তির মাঝে অন্তরায় সৃষ্টি করে দেয়’।[5]
৬. আবূ হামেদ গাযালী (রহঃ) বলেন, من ذكر الموت، تتولد القناعة بما رزق والمبادرة إلى التوبة، وترك المحاسدة والحرص على الدنيا، والنشاط في العبادة، ‘যে ব্যক্তি মৃত্যুকে স্মরণ করে, প্রাপ্ত রিযিক্বে তার পরিতৃপ্তি আসে, দ্রুত তওবা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়, হিংসা-বিদ্বেষ ও দুনিয়ার মোহ বিদূরিত হয় এবং ইবাদত-বন্দেগীতে উদ্যম সৃষ্টি হয়’।[6]
৭. ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, والعبدُ كُلَّمَا وَسَّعَ فِيْ أعمالِ البر وُسِّعَ لَهُ فِيْ الْجَنَّةِ، ‘বান্দা যখন নেকীর কাজে স্বীয় বক্ষ প্রসারিত করে, তার জন্য জান্নাতকে সম্প্রসারিত করা হয়’।[7]
৮. ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,مَنِ اعْتَادَ عَلَى التسبيْح قَبْلَ نَوْمِهِ، أَعْطَي نَشَاطاً وَقُوَّةً فِي قَضَاءِ حَاجَاتِهِ وَقُوُّةً فِيْ عِبَادَتِهِ، ‘যে ব্যক্তি ঘুমানোর আগে তাসবীহ পাঠে অভ্যস্ত হয়, আল্লাহ তাকে তার প্রয়োজন পূর্ণ করার শক্তিমত্তা এবং ইবাদত-বন্দেগীতে উৎসাহ-উদ্দীপনা দান করেন’।[8]
৯. জুনদুব আল-বাজালী (রাঃ) বলেন,مَثَلُ الَّذِيْ يَعِظُ النَّاسَ وَيَنْسَى نَفْسَهُ مَثَلُ الْمِصْبَاحِ يُضِيءُ لِغَيْرِهِ وَيَحْرِقُ نَفْسَهُ، ‘যে ব্যক্তি মানুষকে সৎ উপদেশ দেয় নিজেকে ভুলে থাকে, তার উপমা হ’ল সেই প্রদীপের ন্যায়, যে অন্যদের আলোকিত করে, কিন্তু নিজেকে পুড়িয়ে ফেলে’।[9]
১০. মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন,يُرِيدُ الْمُسْلِمَونَ إِقَاَمَةَ الدَّوْلَةِ الْمُسْلِمَةِ، وَلاَ يَسْتَطِيْعُونَ إِقَامَةَ مَسْجِدٍ عَلَى السُّنَّةِ، ‘মুসলমানরা ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়, অথচ তারা সুন্নাতের ভিত্তিতে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করতে পারে না’।[10]
আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
এম.এ (অধ্যয়নরত) আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[1]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৭/১০৫।
[2]. ইবনুল ক্বাইয়িম, উদ্দাতুছ ছাবেরীন ওয়া যাখীরাতুশ শাকেরীন, পৃ. ১২৩।
[3]. ইবনু আবিদ্দুনইয়া, ক্বাছরুল আমাল, পৃ. ১১১।
[4]. ঐ, পৃ. ৮১।
[5]. রাগেব ইসফাহানী, আয-যারী‘আহ ইলা মাকরিমিশ শারী‘আহ, পৃ. ২৩৯।
[6]. গাযালী, মীযানুল আমাল, পৃ. ৩৯৪।
[7]. ইবনুল ক্বাইয়িম, হাদিউল আরওয়াহ, পৃ. ৪৭।
[8]. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৭/৪৯৩।
[9]. ইমাম আহমাদ, কিতাবুয যুহ্দ, পৃ. ১৫০।
[10]. আলবানী, সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান-নূর : ১০৬৮।