(খ) আহলুল আছার (أهل الأثر) :
শাব্দিক অর্থ : الأثر শব্দটি একবচন। বহুবচনে آثار। অর্থ কোন জিনিসের অবশিষ্টাংশ, আলামত, নিদর্শন, চিহ্ন[1]
ইত্যাদি। এ অর্থেই পবিত্র কুরআনে শব্দটির ব্যবহার এসেছে- وَنَكْتُبُ مَا
قَدَّمُوا وَآثَارَهُمْ ‘আর লিখে রাখি যা তারা অগ্রে প্রেরণ করে এবং যা
পেছনে রেখে যায়’ (ইয়াসীন ১২)। শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, এর অর্থ বিগতদের নিকট হ’তে বর্ণিত বিষয়।[2]
পারিভাষিক অর্থ :
মুহাদ্দিছগণের পরিভাষায় রাসূল (ছাঃ), ছাহাবী এবং তাবেঈদের বর্ণিত হাদীছকে ‘আছার’ বলা হয়। অর্থাৎ মারফূ হোক, মাওকূফ হোক বা মাক্বতূ হোক সকল হাদীছই ‘আছার’। তারা হাদীছ এবং আছারের মধ্যে কোন পার্থক্য করেননি। যেমন বলা হয় أثرت الحديث ‘আমি হাদীছ বর্ণনা করেছি’। এজন্য মুহাদ্দিছগণকে ‘আছারী’ ((آثري বলা হয়।[3] এই অর্থেই ইমাম ত্বাহাভী স্বীয় হাদীছগ্রন্থকেشرح معاني الآثار এবং مشكل الآثار নামকরণ করেছেন। অনুরূপভাবে ইমাম ত্বাবারী شرح تهذيب الآثار নামে হাদীছ গ্রন্থ রচনা করেছেন।
‘আহলুল আছার’ অভিধাটির ব্যবহার :
‘আহলুল আছার’ অভিধাটি ‘আহলুল হাদীছ’ তথা মুহাদ্দিছদের জন্য ব্যবহৃত হয়, যারা হাদীছের পঠন-পাঠন এবং সংরক্ষণে আত্মনিয়োগ করেন। অনুরূপভাবে যারা গোপনে ও প্রকাশ্যে কিতাব এবং সুন্নাত থেকেই কেবল দলীল অনুসন্ধান করেন।
যেমন
আবূ হাতিম আর-রাযী (মৃ. ২৭৭হি.) বলেন,مذهبنا واختيارنا اتباع رسول الله صلى
الله عليه وسلم وأصحابه والتابعين ومن بعدهم بإحسان، والتمسك بمذهب أهل
الأثر مثل أبي عبد الله أحمد بن حنبل، وإسحاق بن إبراهيم، وأبي عبيد القاسم
بن سلام، والشافعي ‘আমাদের মাযহাব এবং পসন্দনীয় পন্থা হ’ল, রাসূল (ছাঃ),
তাঁর ছাহাবীগণ, তাবেঈগণ এবং তৎপরবর্তী তাঁদের যথার্থ অনুসারীগণের পদাংক
অনুসরণ করা। সেই সাথে ‘আহলুল আছার’ তথা আহমাদ ইবনু হাম্বল, ইসহাক ইবনু
ইবরাহীম এবং আল-ক্বাসেম ইবনু সালাম এবং শাফেঈ প্রমুখের মাযহাব অবলম্বন
করা’।[4]
তিনি আরও বলেন,وعلامة أهل البدع الوقيعة في أهل الأثر، وعلامة الزنادقة تسميتهم أهل السنة حشوية يريدون إبطال الآثار. وعلامة الجهمية تسميتهم أهل السنة مشبهة، وعلامة القدرية تسميتهم أهل الأثر مجبرة. وعلامة المرجئة تسميتهم أهل السنة مخالفة ونقصانية. وعلامة الرافضة تسميتهم أهل السنة ناصبة. ولا يلحق أهل السنة إلا اسم واحد ويستحيل أن تجمعهم هذه الأسماء ‘বিদ‘আতীদের আলামত হ’ল আহলুল আছারদের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করা এবং যিন্দীকদের আলামত হ’ল আহলুস সুন্নাহকে ‘হাশাভিয়াহ’ আখ্যা দেয়া, যারা হাদীছসমূহকে বাতিল করে দিতে চায়। জাহমিয়াদের আলামত হ’ল আহলুস সুন্নাহকে ‘মুশাববিহাহ’ (সাদৃশ্যবাদী) আখ্যা দেয়া। আর ক্বাদরিয়াদের বৈশিষ্ট্য হ’ল আহলুল আছারদেরকে ‘জাবরিয়া’ আখ্যা দেয়া, মুরজিয়াদের বৈশিষ্ট্য হ’ল আহলুস সুন্নাহকে ‘মুখালিফাহ’ ও ‘নুক্বছানিয়া’ আখ্যা দেয়া এবং রাফেযীদের বৈশিষ্ট্য হ’ল আহলুস সুন্নাহকে ‘নাছেবাহ’ আখ্যা দেয়া। অথচ আহলুস সুন্নাহর একটি ব্যতীত দ্বিতীয় কোন নাম নেই। অন্য নামগুলো তাদের জন্য প্রযোজ্য হওয়া অসম্ভব’।[5]
আবূ নাছর আস-সিজযী (মৃ. ৪৪৪হি.), ইবনু তায়মিয়াহ (মৃ. ৭২৮হি.), আস-সাফারীনী (মৃ. ১১৮৮হি.) প্রমুখ এই লক্ববটি ব্যবহার করেছেন।[6]
আস-সাফারীনী
বলেন,أهل الأثر يعني الذين إنما يأخذون عقيدتهم من المأثور عن الله جل
شأنه في كتابه، أو في سنة النبي صلى الله عليه وسلم أو ما ثبت وصح عن السلف
الصالح من الصحابة الكرام، والتابعين الفخام، ‘আহলুল আছার হ’ল তারা যারা
কেবলমাত্র আল্লাহর কিতাব এবং রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত অথবা ছাহাবী এবং
তাবেঈগণ হ’তে ছহীহ সূত্রে প্রমাণিত আছার হ’তে তাদের আক্বীদা ও বিশ্বাস
গ্রহণ করে’।[7]
সুতরাং ‘আহলুল আছার’ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের
একটি প্রসিদ্ধ নাম, যার ব্যবহার বিদ্বানদের মধ্যে রয়েছে।
(গ) আত-ত্বায়েফাহ আল-মানছূরাহ (الطائفة المنصورة) :
الطائفة
المنصورة শব্দের অর্থ হ’ল বিজয়ী দল। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অপর একটি
নাম হিসাবে এটি প্রসিদ্ধি লাভের কারণ হ’ল রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ। তিনি
বলেন,لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِى ظَاهِرِينَ عَلَى الْحَقِّ لاَ
يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى يَأْتِىَ أَمْرُ اللهِ وَهُمْ
كَذَلِكَ، ‘আমার উম্মাতের মধ্যে একটি দল সর্বদা বিজয়ী থাকবে। যারা তাদেরকে
লাঞ্ছিত করতে চাইবে, তারা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। এভাবে ক্বিয়ামত
চলে আসবে। কিন্তু তারা বিজয়ীই থাকবে’।[8]
এই হাদীছটি ১৯ জনেরও বেশী ছাহাবী থেকে বহু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে এবং ইবনু তায়মিয়াহ, সুয়ূত্বী, যুবায়দী, কাত্তানী প্রমুখ হাদীছটিকে মুতাওয়াতির হিসাবে উল্লেখ করেছেন।[9]
এই হাদীছের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হয় যে, মুসলিম উম্মাহর মধ্যে একটি দল সর্বদা বিরাজমান থাকবে যারা হক্বের উপর সুদৃঢ়ভাবে টিকে থাকবে। তাদের চলার পথ ও মানহাজ হবে খুবই সুস্পষ্ট এবং দলীলসমৃদ্ধ। তারা সর্বদা আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নে অটল থাকবে। তারা মানুষকে সৎপথের দিকে ডাকবে এবং অসৎপথ থেকে বিরত রাখবে। আর তারা কখনই আল্লাহর পথে সংগ্রাম থেকে পিছপা হবে না। সেই সংগ্রাম কখনও হবে সশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে। আবার কখনও জিহাদের অন্যান্য মাধ্যমসমূহ অবলম্বন করে। মোটকথা এই দল সর্বাবস্থায় এবং সর্বযুগে হক্বের উপর বিজয়ী থাকবে।
এজন্য
এই বিজয়ী দলের ব্যাখ্যায় বিদ্বানগণ সর্বসম্মতভাবে বলেছেন যে, এই দলটি হ’ল
যারা কিতাব ও সুন্নাত এবং ছাহাবী অনুসৃত পথ দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকে। তারা
বিদ‘আত এবং বিদ‘আতীদের থেকে সর্সতোভাবে দূরত্ব বজায় রাখে। আর তারা হ’লেন
আছহাবুল হাদীছ, যারা কথায় ও কাজে হাদীছের উপর আমল করে থাকে এবং যারা
আল্লাহর পথে সংগ্রামী মুজাহিদ।[10] যেমন ইবনুল মুবারক (মৃ. ১৮১হি.) বলেন,هم عندي اصحاب الحديث ‘আমার দৃষ্টিতে তারা হ’লেন আছহাবুল হাদীছ’।[11]
আলী
ইবনুল মাদীনী (মৃ. ২৩৪হি.) বলেন, هم أهل الحديث، والذين يتعاهدون مذاهب
الرسول، ويذبون عن العلم. لولاهم، لم تجد عند المعتزلة والرافضة والجهمية
وأهل الإرجاء والرأي شيئا من السنن، ‘তারা হ’লেন আহলে হাদীছ যারা রাসূল
(ছাঃ)-এর চলার পথসমূহের উপর অবিচল থাকেন এবং জ্ঞানের সুরক্ষায় তৎপর থাকেন।
যদি তারা না থাকতেন তবে মু‘তাযিলা, রাফেযী, জাহমিয়া, মুরজিয়া এবং
রায়পন্থীদের নিকট তুমি কখনও সুন্নাতের দিশা পেতে না’।[12]
আহমাদ
বিন হাম্বল (মৃ. ২৪১হি.) বলেন,إن لم يكونوا أهل الحديث فلا أدري من هم،
‘যদি তারা (এই বিজয়ী দলটি) আহলেহাদীছ না হয়, তবে আমি জানি না তারা কারা’।[13]
ইমাম বুখারী (মৃ. ২৫৬হি.) বলেন, هم أهل العلم ‘তারা হ’লেন জ্ঞানী ব্যক্তিগণ’।[14] অন্যত্র তিনি বলেন,يعني أصحاب الحديث ‘তারা হ’ল আছহাবুল হাদীছগণ’।[15]
ইমাম
আবূ আব্দুল্লাহ আল-হাকেম (মৃ. ৪০৫হি.) বলেন,فلقد أحسن أحمد بن حنبل في
تفسير هذا الخبر أن الطائفة المنصورة التي يرفع الخذلان عنهم إلى قيام
الساعة هم أصحاب الحديث، ومن أحق بهذا التأويل من قوم سلكوا محجة الصالحين،
واتبعوا آثار السلف من الماضين ودمغوا أهل البدع والمخالفين بسنن رسول
الله صلى الله عليه، ‘এই হাদীছের ব্যাখ্যায় আহমাদ বিন হাম্বল চমৎকার বলেছেন
যে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত লাঞ্ছনামুক্ত ঘোষিত হয়েছে যে দল, সেই বিজয়ী দল হ’ল
আছহাবুল হাদীছ। কেননা এই দলটি ব্যতীত আর কোন দল এই ব্যাখ্যার দাবীদার হ’তে
পারত, যারা সৎকর্মশীলদের প্রদর্শিত পথে পরিচালিত হয়। যারা সালাফে ছালেহীনের
পদাংক অনুসরণ করে এবং যারা বিদ‘আতী ও রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাহ বিরোধীদের
চূড়ান্তভাবে পরাভূত করে’।[16]
কাযী আয়ায
(৫৪৪হি.) বলেন,إنما أراد أحمد أهل السنة والجماعة ومن يعتقد مذهب أهل
الحديث ‘আহমাদ বিন হাম্বল এর দ্বারা উদ্দেশ্য নিয়েছেন আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামা‘আতকে এবং যারা আহলুল হাদীছ মাযহাবকে গ্রহণ করেছে’।[17]
সুতরাং ‘আত-ত্বায়েফাহ আল-মানছূরাহ’ বা বিজয়ী দল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্যতম উপাধি। এজন্য এই দলটির গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে ইবনু তায়মিয়া (মৃ. ৭২৮হি.) বলেন, وهم الطائفة المنصورة الذين قال فيهم النبي:
لا تزال
طائفة من أمتي‘এরাই হ’ল সেই বিজয়ী দল যাদের সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা সত্যের উপর বিজয়ী থাকবে...’।[18]
(ঘ) ফিরক্বা নাজিয়াহ (الفرقة الناجية) :
‘ফিরক্বা
নাজিয়াহ’ অর্থ মুক্তিপ্রাপ্ত দল। মুক্তিপ্রাপ্ত দল হিসাবে আহলে সুন্নাত
ওয়াল জামা‘আতের প্রসিদ্ধি লাভের কারণ হ’ল নাজাতপ্রাপ্ত দল সম্পর্কে রাসূল
(ছাঃ)-এর মন্তব্য। যেমন তিনি বলেন,أَلَا إِنََّ مَنْ قَبْلَكُمْ مِنْ
أَهْلِ الْكِتَابِ افْتَرَقُوْا عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِيْنَ مِلَّةً،
وَإِنَّ هَذِهِ الْمِلَّةَ سَتَفْتَرِقُ عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِيْنَ:
ثِنْتَانِ وَسَبْعُوْنَ فِي النَّارِ، وَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ، وَهِيَ
الْجَمَاعَةُ، ‘জেনে রেখো, তোমাদের পূর্ববর্তী আহলে কিতাব বাহাত্তর দলে
বিভক্ত হয়েছে। আর এই উম্মত বিভক্ত হবে তিহাত্তর দলে। এর মধ্যে বাহাত্তরটি
দলই হবে জাহান্নামী আর একটি দল হবে জান্নাতী। সেই দলটি হচ্ছে ‘আল-জামাআত’।[19]
আলী
(রাঃ) এই হাদীছটি বর্ণনান্তে পাঠ করতেন,وَمِمَّنْ خَلَقْنَا أُمَّةٌ
يَهْدُونَ بِالْحَقِّ وَبِهِ يَعْدِلُونَ ‘আর যাদেরকে আমি সৃষ্টি করেছি
তাদের মধ্যে একদল লোক আছে, যারা ন্যায়ানুগভাবে পথ দেখায় এবং ন্যায় বিচার
করে’ (আল-আ‘রাফ ১৮১)।[20]
এই
হাদীছে বর্ণিত ‘আল-জামা‘আত’ শব্দটি যে একমাত্র আহলুস সুন্নাহর জন্যই
প্রযোজ্য, তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। এজন্য ইবনু তায়মিয়াহ (মৃ. ৭২৮হি.)
তাঁর আল-আক্বীদাহ আল-ওয়াসিত্বিয়াহ পুস্তকের শুরুতেই উল্লেখ করেছেন,أماّ
بعد؛ فهذا اعتقاد الفرقة الناجية المنصورة إلى قيام الساعة؛ أهل السنة
والجماعة ‘অতঃপর ক্বিয়ামত পর্যন্ত এটাই হ’ল বিজয়ী ফিরক্বা নাজিয়াহ তথা
আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদা বিশ্বাস’।[21]
তিনি
আরও বলেন,فإذا كان وصف الفرقة الناجية أتباع الصحابة على عهد رسول الله
صلى الله عليه وسلم وذلك شعار السنة والجماعة كانت الفرقة الناجية هم أهل
السنة والجماعة، فالسنة ما كان صلى الله عليه وسلم هو وأصحابه عليه
‘ফিরক্বা নাজিয়ার বৈশিষ্ট্য যখন রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবীদের অনুসারী হওয়া,
যেটা কিনা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের চিহ্ন; তখন ফিরক্বা নাজিয়াহ হ’ল
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতই। আর সুন্নাত হ’ল যে নীতির উপর রাসূল (ছাঃ) ও
তাঁর ছাহাবীগণ প্রতিষ্ঠিত ছিলেন’।[22]
আব্দুল কাদের জীলানী (৫৬১ হি.) বলেন,أما الفرقة الناجية فهي أهل السنة والجماعة ‘ফিরক্বা নাজিয়াহ হ’ল, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত’।[23]
পূর্বসূরী বিদ্বানদের কেউ কেউ ‘ফিরক্বা নাজিয়াহ’ শিরোনামে গ্রন্থও রচনা করেছেন। যেমন ইবনু বাত্তাহ (৩৮৭হি.) রচনা করেছেন তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থالإبانة عن شريعة الفرقة الناجية ومجانبة الفرق المذمومة। অনুরূপভাবে রচনা করেছেন ইবনুল ক্বাইয়িম (মৃ. ৭৫১হি.)الكافية الشافية في الانتصار للفرقة الناجية।
সমকালীন
সঊদী বিদ্বান হাফেয আল-হাকামী (মৃ. ১৯৫৮খ্রি.) ফিরক্বা নাজিয়াহ-এর
ব্যাখ্যায় বলেন,وقد أخبرنا الصادق المصدوق صلى الله عليه وسلم أن الفرقة
الناجية هم من كان على مثل ما كان عليه هو وأصحابه ... وإنما تصلح هذه
الصفة لحملتها وحفاظها ونقادها المنقادين لها المتمسكين بها، الذابين عنها
يقفون عندها ويسيرون بسيرها... فهم والله "أهل السنة والجماعة" وهم الطائفة
المنصورة إلى قيام الساعة، الذين لم تزل قلوبهم على الحق متفقة مؤتلفة،
وأقوالهم وأعمالهم وعقائدهم على الوحي لا مفترقة ولا مختلفة. فانتدبوا
لنصرة الدين دعوة وجهادا وقاوموا أعداءه جماعات وفرادى ‘চির সত্যবাদী রাসূল
(ছাঃ) আমাদের অবহিত করেছেন যে, ফিরক্বা নাজিয়াহ হ’ল তারা যারা সেই নীতির
উপর প্রতিষ্ঠিত, যে নীতির উপর ছিলেন তিনি রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীরা।
...আর এই বৈশিষ্ট্য কেবল তাদের জন্যই উপযোগী যারা সুন্নাতের ধারক, বাহক,
সংরক্ষক ও যথার্থ সমালোচক। যারা সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরে থাকে, সুন্নাতের
প্রতিরক্ষা দান করে, সুন্নাতের সাথে চলে এবং সুন্নাতের পথেই পরিচালিত হয়।
...আল্লাহর কসম! তারা হ’ল ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত’। তারা হ’ল ক্বিয়ামত
পর্যন্ত বিজয়ী দল। যাদের অন্তর্জগত হক্বের উপর ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত। যাদের
কথা, আমল ও বিশ্বাস অহীভিত্তিক; বিচ্ছিন্ন ও পৃথক নয়। যারা দ্বীনের বিজয়ের
জন্য দাওয়াত ও জিহাদের মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালায় এবং তাদের শত্রুদের
বিরুদ্ধে জামা‘আতবদ্ধভাবে বা একাকী প্রতিরোধ গড়ে তোলে’।[24]
[চলবে]
[1]. ইবনে মানযূর, লিসানুল আরব ৪/৫ পৃ.; ড. মুহাম্মাদ আল-কাল‘আজী, মু‘জামু লুগাতিল ফুকাহা, ১/৪০ পৃ.; ইবনু ফারেস, মু‘জামু মাকায়ীসিল লুগাহ, ১/৫৪ পৃ.; আয-যুবায়দী, তাজুল আরূস, ৩/৪ পৃ.।
[2]. (هو الشيء المنقول عن السابقين) মুহাম্মাদ নাছেরুদ্দীন আলবানী, আল-হাদীছু হুজ্জাতুন বি নাফসিহি, পৃ. ১৪।
[3]. জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী, তাদরীবুর রাবী ফী শারহে তাক্বরীবুন নববী, মুকাদ্দামাতুল মুআল্লিফ, ১/১১ পৃ.; নববী, মুকাদ্দামা আল-মিনহাজ শারহু মুসলিম, ১/৬৩ পৃ.; ইবনু হাজার আসক্বালানী, নুযহাতুন নযর ফি তাওযীহি নুখবাতুল ফিকার, ১/২৩০ পৃ.; শামসুদ্দীন আস-সাখাভী, ফাতহুল মুগীছ শারহু আলফিয়াতুল হাদীছ, ১/৩১ পৃ.; মুহাম্মাদ নাছেরুদ্দীন আলবানী, আল-হাদীছু হুজ্জাতুন বি নাফসিহি, পৃ. ১৪; ড. নূরুদ্দীন আত্তার, মানহাজুন নাক্বদি ফি ঊলূমিল হাদীছ, পৃ. ২৮।
[4]. হিবাতুল্লাহ আল-লালকাঈ, শারহু উছূলিল ই‘তিক্বাদ, ১/২০২ পৃ.।
[5]. প্রাগুক্ত, ১/২০১ পৃ.।
[6]. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ৬/১৭০ পৃ.; ছালেহ আদ-দাখীল, খাছায়েছু আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ, পৃ. ১৪৪।
[7]. শামসুদ্দীন আস-সাফারীনী, লাওয়ামেঊল আনওয়ার আল-বাহিয়াহ, ১/৬৪ পৃ.।
[8]. ছহীহ মুসলিম হা/১৯২০।
[9]. ইবনু তায়মিয়াহ, ইক্বতিযাউছ ছিরাতিল মুস্তাকীম ১/৬ পৃ.; জালালুদ্দীন সূয়ুত্বী, ক্বাতফুল আযহার, পৃ. ২১৬.; আবূবকর আয-যুবায়দী, লাক্বতুল লাআলী আল-মুতানাছিরাহ, পৃ. ৬৮; আল-কাত্তানী, আন-নাযমুল মুতানাছির, পৃ. ৯৩।
[10]. ড. গালিব আওয়াজী, ফিরাক্ব মুআছারাহ তানতাসিবু ইলাল ইসলাম, ১/১১০ পৃ.।
[11]. খত্বীব বাগদাদী, শারফু আছহাবিল হাদীছ, পৃ. ২৬।
[12]. প্রাগুক্ত, পৃ. ১০।
[13]. মুহিউদ্দীন আন-নববী, শারহু ছহীহ মুসলিম, ১৩/৬৭ পৃ.।
[14]. প্রাগুক্ত, ১৩/৬৬ পৃ.।
[15]. খত্বীব বাগদাদী, শারফু আছহাবিল হাদীছ, পৃ. ২৭।
[16]. আবূ আব্দুল্লাহ আল-হাকিম, মা‘রিফাতু উলূমিল হাদীছ, পৃ. ২।
[17]. মুহিউদ্দীন আন-নববী, শারহু ছহীহ মুসলিম, ১৩/৬৭ পৃ.।
[18]. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ৩/১৫৯ পৃ.।
[19]. আহমাদ হা/১৬৯৩৭, আবূদাউদ হা/৪৫৯৭; মিশকাত হা/১৭২, সনদ ছহীহ।
[20]. আল-আজুর্রী, আশ-শারী‘আহ, ১/৩০৯ পৃ.।
[21]. উছায়মীন, শারহুল আক্বীদা আল-ওয়াসিত্বিয়াহ, পৃ. ৪৮।
[22]. ইবনু তায়মিয়া, মিনহাজুস সুন্নাহ, ৩/৪৫৭ পৃ.।
[23]. আব্দুল কাদের আল-জিলানী, আল-গুনিয়াহ, ১/১৭৫ পৃ.।
[24]. হাফেয আল-হাকামী, মা‘আরিজুল কুবূল, ১/৬১ পৃ.।