ইসলাম
শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম। ইসলামে কোন উগ্রতা ও চরমপন্থার স্থান নেই।
ইসলাম মধ্যপন্থী এক অনন্য সহনশীল ধর্ম। ইসলামের মনোমুগ্ধকর সৌহার্দপূর্ণ
আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই বিগত দিনে লোকেরা দলে দলে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে
আশ্রয় গ্রহণ করে ধন্য হয়েছিল। ছালাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রেষ্ঠ
ইবাদত। যে ইবাদত পারস্পরিক সম্প্রীতির এক যুগান্তকারী মাধ্যম। সম্পদশালী,
সম্পদহীন, নেতা-কর্মী, রাজনীতিক ও সাধারণ ব্যক্তি সকলকে এক কাতারে দাঁড়
করানোর মাধ্যমে নফসের ফখরকে চূর্ণ করে দেয়ার এক অতুল্য নিয়মতান্ত্রিক
কর্মসূচী। যে ইবাদতের হিসাব হবে সর্বাগ্রে এবং এর উপর ভিত্তি করেই আখেরাত
যিন্দেগীর পরবর্তী ধাপ সমূহ সহজ অথবা কঠিন থেকে কঠিনতর হবে (ছহীহাহ হা/১৩৫৮)।
আর এই শ্রেষ্ঠ ইবাদতের শ্রেষ্ঠতম স্থান হচ্ছে মসজিদ। মসজিদ নির্মাণ ও
রক্ষণাবেক্ষণে রয়েছে বিস্তর নেকী। জান্নাতে গৃহ নির্মাণের ঘোষণাও রয়েছে
মসজিদ নির্মাণকারীর জন্য (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৬৯৭)।
ইসলামী আইন ও শাসন ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মসজিদ। সেকারণ মসজিদের
গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু অধুনা একশ্রেণীর অপরিণামদর্শী, হঠকারী,
আক্বীদাভ্রষ্ট লোক আল্লাহর ঘর মসজিদের উপর হামলে পড়েছে। শুধুমাত্র নিজেদের
আচরিত জগাখিচুড়ী ইসলামের বিপরীতে স্বচ্ছ-শুদ্ধ আক্বীদা ধারণ ও ছহীহ হাদীছ
ভিত্তিক আমলের কারণে ঐ সব মসজিদ দখল, ভাংচুর, ভস্ম, এমনকি মসজিদের মালামাল
পর্যন্ত লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পাঠকদের উদ্দেশ্যে সাম্প্রতিক
বছরগুলোতে ঘটে যাওয়া এ রকম উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা উল্লেখপূর্বক মসজিদ
ভাঙ্গার পরিণতি, এর ক্ষতিকর প্রভাব ও প্রতিকার তুলে ধরার প্রয়াস পাব
ইনশাআল্লাহ।-
১. বালিয়াডাঙ্গা পশ্চিমপাড়া আহলেহাদীছ জামে মসজিদ, নাটোর :
২০১৩ সাল। নাটোর সদর থানাধীন বালিয়াডাঙ্গা গ্রাম। সে গ্রামেরই সন্তান নূর হোসাইন (পরিবর্তিত নাম যুবায়ের), মুহাম্মাদ আল-আমীন, মুহাম্মাদ জাহিদ হোসাইন, আব্দুল বারী ও রবিন। প্রথমে জাহিদ, অতঃপর বাকী চারজন ছহীহ আক্বীদা গ্রহণ করেন। গ্রামের মসজিদে প্রকাশ্যে রাফঊল ইয়াদায়েন ও সরবে আমীন বলার কারণে বিদ‘আতীদের গা জ্বালা শুরু হয়। এদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য শুরু করেন খোদ মসজিদের ইমাম। খুৎবায় পর্যন্ত চলে মন্দচারী। উস্কে দেওয়া হয় আম-জনতাকে। এক পর্যায়ে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া হয় নূর হোসাইনকে। ফলে তারা পৃথক জায়গায় টিন দিয়ে একটি মসজিদ তৈরী করে বিশুদ্ধভাবে ছালাত আদায় শুরু করেন। এতে বিরোধীদের বিরোধিতা আরো তীব্র আকার ধারণ করে। অতঃপর একই বছর ১৭ই অক্টোবর সন্ধ্যা ৭-টায় আয়োজন করা হয় এক গ্রাম্য সালিশের। স্থানীয় এক সাবেক চেয়ারম্যান সহ গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে বিশাল সালিশ। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে ওঠে সালিশকারীরা নিজেরাই। এলাকায় ফিৎনা ছড়ানো, সামাজিক ঐক্যে ফাটল ধরানো ইত্যাদি নানাবিধ জাহেলী অভিযোগ আরোপ করে তাদেরকে হুমকি-ধমকির পাশাপাশি শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত করা হয়। প্রচলিত হানাফী মাযহাব অনুযায়ী নামায পড়তে হবে, ইমাম আবু হানীফার কথা মত চলতে হবে, এর বাইরে কোন কিছু মানা যাবে না ইত্যাদি শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হয় তাদের উপর। উপায়ান্তর না পেয়ে তারা ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর দ্ব্যার্থহীন বাণী إذا صح الحديث فهو مذهبى ‘যেটা ছহীহ হাদীছ, সেটাই আমার মাযহাব’ স্মরণ করে স্বীকারোক্তি দেন যে, আমরা ইমাম আবূ হানীফার কথাই মানব। অর্থাৎ ইমাম আবূ হানীফার নির্দেশ অনুযায়ী ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক আমল করব। অতঃপর সালিশ থেকে তাদের মুক্তি মেলে।
এভাবে ভয়-ভীতির মধ্যেই মসজিদে ছালাত চলতে থাকে। কিন্তু না, এদের হিংস্রতা ও বর্বরতা সীমা ছাড়িয়ে যায়। ২০১৪ সালের ৯ই অক্টোবর বৃহস্পতিবার এলাকাবাসী পুনরায় বৈঠকে বসে। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও মাযহাবী আলেমদের বক্তব্যে এলাকাবাসী আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে মারমুখী হয়ে ওঠে। অতঃপর রাত ১০-টায় উত্তেজিত জনতা সেই চেয়ারম্যান ও স্থানীয় মৌলভীদের নেতৃত্বে মসজিদটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পবিত্র কুরআনুল কারীমও রক্ষা পায়নি এদের নিষ্ঠুরতার ছোবল থেকে। বিষয়টি সে সময় জানাজানি হয় ব্যাপকভাবে। স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকেও এ বিষয়ে রিপোর্ট হয় (যুগান্তর ১২ অক্টোবর-১৪, পৃ: ১৫; লালগোলাপ, ১ম পৃ.; আত-তাহরীক নভেম্বর-২০১৪ সংখ্যা)। অবশেষে বেগতিক অবস্থা সামাল দিতে আয়োজন করা হয় মীমাংসা বৈঠকের। নাটোর সদর উপযেলা চেয়ারম্যান জনাব রমযান আলীর সভাকক্ষে ১২ই অক্টোবর রবিবার বেলা ১১-টায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিরোধী পক্ষ এই গর্হিত কর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়। এভাবেই সাময়িকভাবে উত্তেজনা প্রশমনের ব্যবস্থা করা হয়। উক্ত বৈঠকে আহলেহাদীছ আন্দোলনের পক্ষে লেখক নিজে উপস্থিত ছিলেন।
২. নলকা আহলেহাদীছ জামে মসজিদ, জামালপুর :
যমুনা নদীর তীরবর্তী যেলা জামালপুর। এই যেলার মাদারগঞ্জ থানাধীন নলকা গ্রামে স্থানীয় কিছু নতুন আহলেহাদীছ ভাইয়ের নিজস্ব উদ্যোগে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। ১০.০৭.২০১৬ইং তারিখে উদ্বোধনের পর ঐ মসজিদে ছহীহ তরীকায় ছালাত আদায় চলছিল বেশ ভালভাবেই। কিন্তু একশ্রেণীর পেটপূজারী পীরপন্থী আলেম এটি মেনে নিতে পারেনি শুরু থেকেই। মসজিদের মূল উদ্যোক্তা জনাব মুয্যাম্মিল হককে তারা নিদারুণভাবে শারীরিক নির্যাতন করে। ফলে জামালপুর সরকারী হাসপাতালে তিনি প্রায় সপ্তাহাধিককাল চিকিৎসাধীন ছিলেন। অতঃপর মাত্র ৯ মাসের মাথায় ১০.০৪.২০১৭ইং তারিখে দেশের একজন স্বনামধন্য পীরের কিছু প্রভাবশালী মুরীদের নেতৃত্বে তারা জোর করে মসজিদটি দখল করে নেয়। পরবর্তীতে বিষয়টি আইন-আদালত পর্যন্ত গড়ায়। দীর্ঘদিন মামলা চলার পর গত ০৪.০৭.২০১৯ইং তারিখে আহলেহাদীছদের পক্ষে রায় হয়। অবশ্য রায় হওয়ার আগেই মসজিদটি পুনরায় দখলে চলে আসে। বর্তমানে মসজিদটি আহলেহদীছ ভাইদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে এবং ছহীহ তরীকায় ছালাত আদায় হচ্ছে। ফালিল্লাহিল হাম্দ।
৩. বায়তুর রহমান আহলেহাদীছ জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম :
দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের উত্তর পতেঙ্গায় স্টিলমিল বাযার সংলগ্ন মুন বেকারী গলিতে জনাব আব্দুশ শাকূর কর্তৃক দানকৃত জমিতে ২০১৩ সালে বায়তুর রহমান আহলেহাদীছ জামে মসজিদ ও ২০১৭ সালে আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আশপাশের সকল মসজিদই মাযহাব ও পীর পন্থীদের দ্বারা পরিচালিত। সঙ্গত কারণেই তাদের একচ্ছত্র বিদ‘আতী রাজত্বে ভাটা পড়ুক সেটা তারা কখনো কামনা করেনি। যেকোন মূল্যে ছহীহ আক্বীদার এই মারকায বন্ধ করাই যেন তাদের ব্রত। একের পর এক প্রতিবন্ধকতা চলতেই থাকে। অবশেষে ১৫ই অক্টোবর’১৭ পাঠের অনুপযোগী ছিন্ন কুরআন পানিতে ফেলাকে ইস্যু করে মাযহাব, পীর ও মাযারপন্থীরা একাট্টা হয়ে আহলেহাদীছ মসজিদ দখলের গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। থানায় সালিশ বসলে সেখানে আহলেহাদীছ বিরোধী প্রায় দুই তিন হাযার লোক জড়ো করা হয়। একপ্রকার থানা ঘেরাও এর মত পরিস্থিতি। থানা কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে সালিশ বৈঠক থেকেই অন্যায়ভাবে মসজিদের জমিদাতা জনাব আব্দুশ শাকূর, মসজিদ কমিটির সভাপতি ও যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি ডা. শামীম আহসান ও ইমাম মুহাম্মাদ রফীকুল ইসলামসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করে এবং পরদিন কোর্টের মাধ্যমে তাদেরকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। এতেও তারা ক্ষান্ত হয়নি। রাস্তার মোড়ে মোড়ে আহলেহাদীছ বিরোধী ব্যানার, ফ্যাস্টুন টাঙ্গানো হয়। অতঃপর ২০শে অক্টোবর জুম‘আর ছালাতের পর পীর ও মাযার পন্থীদের প্রায় পাঁচ হাযার লোক আহলেহাদীছ বিরোধী বিশাল মিছিলে অবতীর্ণ হয়। এ সময় আহলেহাদীছ বিরোধী বিভিন্ন শ্লোগান, প্ল্যাকার্ড, ফ্যাস্টুন প্রদর্শন ছাড়াও হাযার হাযার লিফলেট বিতরণ করা হয়। কিন্তু মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় তাদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাত হয়। সরাসরি কেন্দ্রের নামে রেজিঃকৃত উক্ত জমিতে তারা দখলদারী কায়েম করতে ব্যর্থ হয়। সেই সাথে কারান্তরীণ দায়িত্বশীলগণও কিছুদিন পর মুক্তি লাভ করেন। ফালিল্লাহিল হাম্দ। তবে এখনো সেখানে বিদ‘আতী মৌলভীদের চাপে ও প্রশাসনের পরামর্শে মাইকে আযান দেওয়া বন্ধ আছে। আল্লাহ চাইলে এই প্রতিবন্ধকতাও দ্রুত কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ।
৪. আহলেহাদীছ জামে মসজিদ, লক্ষ্মীপুর খাঁ পাড়া জীবননগর, চূয়াডাঙ্গা :
যেলার জীবননগর থানাধীন লক্ষ্মীপুর খাঁ পাড়ায় নবনির্মিত আহলেহাদীছ জামে মসজিদটি ৩রা মার্চ ২০১৭ সালে উদ্বোধনের মাত্র তিন মাস পরেই মাযহাবপন্থীরা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। ঘটনাটি ঘটে ২১শে জুন ২০১৭ রোজ শুক্রবার। তখন বেলা ১২-টা ৪০মিনিট। খুৎবা শেষে জামা‘আতের জন্য ইক্বামত হয়েছে। আচমকা দুই তিন শত লোকের আগমন। ছালাতের জন্য কিছু সময় অপেক্ষা। অতঃপর সালাম ফিরানোর সাথে সাথেই আক্রমণ। কোন বাক্যব্যয় না করে এক এক করে মসজিদের চাল, বেড়া, দরজা, জানালা, গ্রিল সবকিছু খুলে নিয়ে যেতে লাগল তারা। ইতিহাসের ঘৃণ্যতম তান্ডব চালিয়ে চোখের পলকেই তছনছ করে ফেলল সবকিছু। এমনকি টিউবওয়েলের মাথাটিও রেহাই পেল না এদের ভাঙ্গচুর ও লুটপাট থেকে। এই সময় তাদের বক্তব্য ছিল এরা আগে আগে নামায পড়ে, আগে ইফতার করে, জোরে আমীন বলে, নামাযের মধ্যে বারবার হাত তুলে সমাজে ফিৎনা সৃষ্টি করছে। এরা জঙ্গী। জঙ্গীরাও জোরে আমীন বলে, রাফঊল ইয়াদায়েন করে। এরাও তাই করে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে জনাব আমজাদ হোসাইন নামক জনৈক ব্যক্তি সর্বপ্রথম ছহীহ আক্বীদার সন্ধান পান এবং অনেক যাচাই-বাছাইয়ের পর আহলেহাদীছ আকবীদা গ্রহণ করেন। তিনি ও তার সহযোগী দু’একজন গ্রামের জামে মসজিদেই ছালাত আদায় করতেন। যখন থেকে তিনি ছহীহ হাদীছের উপর আমল শুরু করলেন তথা সরবে আমীন বলা ও রাফঊল ইয়াদায়েন শুরু করলেন তখন থেকেই তাদের বিরুদ্ধে কানাঘুষা শুরু হয়। বাক-বিতন্ডা হয় একাধিকবার। তাদেরকে হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত ছালাতুর রাছূল (ছাঃ) বই দেখালে বলে, এইসব চটি বই আমরা মানি না। তখন আমজাদ ছাহেব বলেন, ‘কোন একটি ছিন্ন পৃষ্ঠায় যদি কুরআনের আয়াত লেখা থাকে তাহ’লে কি তা মানবেন না?’ তারা তখন লা জওয়াব হবে যায়। পর্যায়ক্রমে পরিস্থিতি ঘোলাটে হ’তে থাকে। মসজিদের খতীব ছাহেব দেশের একজন স্বনামধন্য পীরের অনুসারী ও যেলা ওলামা পরিষদের অন্যতম দায়িত্বশীল হয়েও খুৎবায় আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে চরমভাবে বিষোদ্গার করে সাধারণ মুছল্লীদের ক্ষেপিয়ে তোলেন। ফলে একপর্যায়ে তাকে হানাফী তরীকায় ছালাত আদায় না করলে মসজিদে যেতে নিষেধ করে দেয়। বাধ্য হয়ে তিনি প্রায় এক বছর বাড়ীতে ওয়াক্তিয়া ছালাত আদায় করেন এবং চার কিলোমিটার দূরবর্তী এক মসজিদে গিয়ে জুম‘আর ছালাত আদায় করেন। অবশেষে অনেক চেষ্টার পর কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সহযোগিতায় মসজিদের জন্য উক্ত জায়গাটি খরীদ করা হয়। অতঃপর ২০১৭ সালে টিনের চাল ও টিনের বেড়া দিয়ে মসজিদটি নির্মাণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে ছালাত আদায় শুরু করেন। কিন্তু তিন মাসের মাথায়ই এই তান্ডব চালায় বিরোধীরা। প্রথমদিকে প্রশাসন নমনীয় থাকলেও পরবর্তীতে রাজনৈতিক চাপে তারা পুনরায় মসজিদ নির্মাণ করতে কঠিনভাবে নিষেধ করে। এভাবে মসজিদ বিহীন জায়গাটি পড়ে থাকে প্রায় দুই বছর। কিন্তু আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় যারা মসজিদ ভেঙ্গেছিল তাদেরই দু’একজন যুবকের সম্বিত ফিরে আসে। তারা তাদের পূর্বকর্মের জন্য অনুতপ্ত হন এবং ক্ষমা চান। তাদের মধ্যে হকের চেতনা জাগ্রত হয়। ফলে তারা উক্ত মসজিদটি পুনরায় নির্মাণের পরামর্শ দেন। স্থানীয় পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, যিনি এক সময় মসজিদ ভাঙ্গার পক্ষে ছিলেন, তিনি মসজিদ নির্মাণের জন্য আমজাদ ছাহেবকে ডেকে বলে দেন। এমনকি তারা আর্থিকভাবেও সহযোগিতা করেন। অবশেষে পুনরায় মসজিদটি নির্মাণ করা হয় এবং ২০১৯ সালের ২৭শে নভেম্বর মসজিদটি পুনরায় উদ্বোধন করা হয়। ফালিল্লাহিল হামদ।
৫. আত-তাক্বওয়া জামে মসজিদ, সিলেট :
২০১৮ সালের মার্চ মাসে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সিলেট শহরের কুমাড়পাড়ায় আত-তাকওয়া জামে মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার। সিলেট শহরে আহলেহাদীছ মানহাজের এটি একটি অন্যতম মসজিদ। এই মসজিদের মাধ্যমে বিশুদ্ধ দ্বীনের দাওয়াত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। শিরক-বিদ‘আতের জঞ্জাল থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ তাওহীদ ও ছহীহ সুন্নাহর রাজপথে ফিরে আসতে থাকে। ফলে এটি বিদ‘আতীদের চক্ষুশূল হয়ে যায়। শুরু হয় মসজিদ বন্ধের আন্দোলন। স্বার্থপর মৌলভীদের সাথে বুঝে না বুঝে যোগ দেয় একশ্রেণীর রাজনীতিকও। ২০১৮ সালের মে মাসে সিলেট শহরের রাজপথ গরম করা হয় আহলেহাদীছ মসজিদ উৎখাতের আন্দোলন দিয়ে। এমনকি সুরমা নদীতে নিক্ষেপেরও হুমকি দেওয়া হয়। অবশেষে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলার বিশেষ রহমতে মসজিদটি বিরোধীদের হিংস্র থাবা থেকে রক্ষা পায়।
৬. মাকতাবাতুল ফোরক্বানিয়া জামে মসজিদ, ভোলা :
২০১৯ সালের ১১ই জুলাই ভোলা সদরের ৫ নং বাপ্তা ইউনিয়নের মাকতাবাতুল ফোরক্বানিয়া জামে মসজিদ ভাঙচুর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ইসলামী লেবাসদারী জাহেলিয়াতের শিখন্ডিরা। পীরবাদে বিশ্বাসীদের এই বর্বরতা প্রত্যক্ষ করে সারা বিশ্ব। মসজিদের গায়ে আগুন। জ্বলছে সামানা। জ্বলছে আল্লাহর পবিত্র কালাম। দগ্ধিভূত হচ্ছে মানুষের ঈমান। ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে হকপন্থীদের হৃদয়। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে পবিত্র ধর্ম ইসলাম। কিন্তু প্রশাসন নির্বিকার। জাহেলিয়াতের চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেও পীর-মুরীদির ধ্বজাধারিরা নিরাপদ। হানাফিয়াতের হিংস্রতায় বাকরুদ্ধ বিবেকবান মুসলিম। অবশেষে মহান আল্লাহর গায়েবী মদদে পুনরায় সেখানে মসজিদ নির্মাণ চলছে। আল-হামদুলিল্লাহ।
৭. ফাতেমা (রাঃ) জামে মসজিদ, সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া :
যেলার সরাইল থানাধীন হাফিযটোলা গ্রাম। সেই গ্রামের জনৈক হারিছ মিয়ার তত্ত্বাবধানে ও নিজেদের অর্থায়নে ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ফাতেমা (রাঃ) জামে মসজিদ। আহলেহাদীছ মানহাজের এই মসজিদটি বিদ‘আতীদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেলার একটি প্রভাবশালী হানাফী মাদ্রাসার মুফতীদের যে কোন ফৎওয়া অন্ধের মত মেনে নেওয়ার রেওয়ায সেখানকার অধিকাংশ লোকের। এক্ষেত্রেও ব্যত্যয় ঘটেনি। সাধারণ মুছল্লীদের উত্তেজিত করে পরিবেশ ঘোলাটে করে তারা। ফলে সংখ্যাধিক্যের পূজারী নেতারাও প্রাথমিক পর্যায়ে সমর্থন দিয়ে শেষতক এড়িয়ে যান। অতঃপর উপযেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে গত ৬ই অক্টোবর২০ তারিখে আয়োজন করা হয় আহলেহাদীছ ও হানাফীদের মধ্যে বাহাছের। আহলেহাদীছদের পক্ষে ঢাকা থেকে বেশ কয়েকজন আলেম উপস্থিত হন। অপরদিকে মাযহাবীরা পরিকল্পিতভাবে কয়েক শত লোক জড়ো করে এবং আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার মূলক কথাবার্তা বলতে থাকে। এসময় তারা বিক্ষিপ্তভাবে আহলেহাদীছ বিরোধী শ্লোগানও দিতে থাকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে উপযেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৌশলে বৈঠকটি বাতিল করেন।
অতঃপর একই তারিখ দিবাগত রাত দেড়টার দিকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, উপযেলা চেয়ারম্যান ও উপযেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উক্ত মসজিদের ইমাম মাওলানা দেলোয়ার হোসাইনের বাসায় গিয়ে তাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে পরিবারসহ কুমিল্লা যেলার নিজ বাড়ীতে পাঠিয়ে দেন নিরাপত্তাহীনতার আশংকায়। এসময়ে তাকে জানোনো হয় যে, তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে মর্মে সূত্র মারফত খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেকারণ এখানে থাকা নিরাপদ নয়। অতঃপর ভোর সাড়ে চারটায় তাকে সসম্মানে তার গ্রামের বাড়ী কুমিল্লা যেলার বুড়িচং থানাধীন জগতপুরে পৌঁছে দেওয়া হয়। এতেই প্রমাণিত হয় ছহীহ হাদীছের দুশমনদের হিংস্রতা কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে।
অবশেষে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হ’লে প্রশাসন উভয় পক্ষকে নিয়ে পৃথক পৃথক বৈঠক করেন এবং সাময়িক একটি মীমাংসার ব্যবস্থা করেন। আহলেহাদীছ আক্বীদার সাথে সাংঘর্ষিক কিছু শর্তসাপেক্ষে মসজিদটি আহলেহাদীছদের দায়িত্বেই ছেড়ে দেওয়া হয়। মসজিদ নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার বৃহত্তর স্বার্থে দু’একটি শর্ত ছহীহ হাদীছ বিরোধী হ’লেও মেনে নিয়ে বর্তমানে আহলেহাদীছদের নেতৃত্বে মসজিদটি পরিচালিত হচ্ছে। ফালিল্লা-হিল হাম্দ। (ক্রমশঃ)