শিক্ষার্থীদের সাথে কুরআনের সম্পর্ক

শিক্ষার্থীর জীবনে কুরআনের প্রভাব :

কুরআন একটি মহাসমুদ্র, যার গভীরতা মাপা অসম্ভব। এটি কেবল একটি ধর্মগ্রন্থ নয়; বরং একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যা মানুষের মন, মেধা ও চরিত্রকে উন্নত করে। ছাত্রদের জীবনে কুরআনের প্রভাব অপরিসীম। এটি তাদের নৈতিকতা, জ্ঞানার্জনের মানসিকতা এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করে। একজন ছাত্র জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে কুরআনের সাথে পরিচিত হ’লে তার মন-মানসিকতা ইতিবাচকভাবে পরিবর্তিত হয়। কুরআনের প্রতিটি আয়াত তাদের অন্তরে নৈতিকতার বীজ বপন করে। এর মাধ্যমে তারা সত্যের প্রতি অবিচল থাকা, মিথ্যা পরিহার করা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার শিক্ষা পায়। এ শিক্ষাগুলো তাদের শুধু একজন সফল ছাত্র নয়, বরং একজন উত্তম মানুষ হিসাবে গড়ে তোলে।

কুরআন একজন ছাত্রের গবেষণামুখী চিন্তা তৈরিতে সাহায্য করে। কারণ, কুরআনের বহু আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তারা কেন গবেষণা করে না, তারা কি চিন্তা করে দেখে না’! বিভিন্ন উপমা দিয়ে বলা হয়েছে, ‘বস্ত্তত এখানে শিক্ষা রয়েছে তাদের জন্য যারা চিন্তা-গবেষণা করে’। ছাত্রদের জীবনে কুরআনের প্রভাব এতটাই গভীর যে, এটি তাদের আত্মিক উন্নতির পাশাপাশি চারপাশের পরিবেশকেও প্রভাবিত করে। একজন কুরআনের অনুসারী ছাত্র তার সহপাঠীদের জন্য আদর্শ হয়ে ওঠে। তার ব্যবহারে সৌজন্যতা, তার কথায় সত্যবাদিতা এবং তার কাজে ন্যায়পরায়ণতা প্রতিফলিত হয়। ছাত্র হিসাবে সে হয়ে ওঠে আদর্শ ছাত্র। হয় অনুসরণীয়। কারণ, সে কুরআনকে আপন করেছে। কুরআন তার সকল বিষয়গুলো মার্জিত করে তুলেছে।

আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাভাবিক চিত্র :

আমাদের সমাজে যে হাফিযিয়া মাদ্রাসাগুলো পরিচালিত হচ্ছে সেখানে সারাক্ষণই কুরআন তিলাওয়াত হয়। আলহামদুলিল্লাহ। তবে দুঃখের বিষয় হ’ল- তারা অনেকাংশে কুরআনকে দুনিয়া লাভের মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করেছে। আমি বলছি না, কুরআন পড়িয়ে তারা বেতন নেয় কেন? আমি বলছি না, তারাবীহ পড়িয়ে তারা পারিশ্রমিক নেয় কেন? আমি বলছি, তারা তাদের নিয়তকে পরিশুদ্ধ করছে না কেন?

আরেকটু বুঝিয়ে বলি। আমি সাধারণ মুসলিম। আমি জানি, আন্তর্জাতিক হিফয প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের পতাকা উড্ডিন করা নিসন্দেহে ভাল কাজ। আমি মুফতী নই। আমি ফতোয়া দিতে পারি না। প্রশ্ন হচ্ছে শুধু বাংলাদেশের পতাকা উড্ডিন করার উদ্দেশ্যে কুরআন হিফয করা কতটুকু সংগত। সকল প্রতিষ্ঠানের কথা বলছি না। আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি কারো বিরোধিতা করছি না।

আমি কষ্ট পাই, যখন দেখি হিফয প্রতিষ্ঠানে ইখলাছ শেখানো হয় না। আমি কষ্ট পাই, যখন দেখি বাংলাদেশের পতাকা উড্ডীন করার পরে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ব্যবসায়ী ব্যানার উড্ডীন করে। যে প্রতিষ্ঠানে একজন ছাত্রের মাসিক বেতন আট/দশ হাযার টাকা সেখানে মুহতামিমগণ পাঁচ হাযার টাকা শিক্ষকের বেতন দিয়ে প্রতিমাসে বেহিসাব টাকা ‘মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা বাবদ পারিশ্রমিক’ গ্রহণ করেন। আমি কষ্ট পাই, যখন বিশ্বের সেরা হাফেয হয়ে আসার পরে এই হাফেযগণ লেখাপড়া ছেড়ে সেলিব্রে্রটি বনে যান। যে বয়সে তার লেখাপড়া করার কথা, সে বয়সে তিনি আট দশটা হিফয প্রতিষ্ঠান নামক ব্যাবসাকেন্দ্র খুলে যেলায় যেলায় পোগ্রাম করে বেড়ান। অনলাইনে বিভিন্ন পণ্যের ভিডিও বিজ্ঞাপন তৈরি করেন। আমি সত্যিই কষ্ট পাই। তবে আমি বলব না, এধরণের চর্চা বন্ধ হোক। আমি বলব, তারা নিয়তকে পরিশুদ্ধ করুক। কুরআনের চর্চা হোক আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায়। সুমহান জান্নাত লাভে উদগ্র বাসনায়।

অন্যদিকে আমাদের আলিয়া মাদ্রাসাগুলোর অধিকাংশ ছাত্রই কুরআন পড়তে জানে না। বা পড়লেও তা এতটুকু শুদ্ধতার স্তরে পৌঁছে না যা দ্বারা কুরআনের অর্থ সঠিক থাকে। যেখানে বাংলা, গণিত, ইংরেজী, আরবী ভাষা ও ব্যাকরণ; পাশাপাশি আবার ফিক্বহ, হাদীছ, উছূল এতকিছু তারা ছাত্রদের শেখাচ্ছেন, সেখানে তারা কুরআন তিলাওয়াত শুদ্ধ করে শেখাতে পারছেন না। আমি জানি না, এই সমস্যার সমাধান কী। কেনই বা ফাযিল কামিল করার পরও একজন ছাত্রের কুরআন তিলাওয়াত অশুদ্ধ থাকবে! আমাদের কি কখনোই মন চায় না, রবের কালাম মনের মাধুরী মিশিয়ে একটু তিলাওয়াত করতে! মানুষ শখের বশেও তো কতকিছু শেখে। নাচ শেখে। গান শেখে। আমাদের কি কখনো কুরআন শিখতে মন চায় না! নাকি মন চাওয়ারই সময় পাই না! সত্যিই বিষয়গুলো আমাকে অত্যন্ত কষ্ট দেয়।

আমার মনে হয়, মাদ্রাসা শিক্ষাধারায় খালেছ ক্বওমী প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো কুরআনের চর্চা ধরে রেখেছে। পাশাপাশি ছাত্র গড়া-ই যাদের মূল লক্ষ্য তারাও এই বিষয়টিকে বরাবরই প্রাধান্য দিয়েছেন। এধারার প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রত্যহ কুরআন তিলাওয়াত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রতিটি ক্লাসে রাখা হয়েছে কুরআন শিক্ষার আলাদা পিরিয়ড। কুরআন শিক্ষাকে ঐচ্ছিক হিসাবে না রেখে তা পরীক্ষার বিষয় হিসাবে যুক্ত করা হয়েছে। বছরের বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক হিফযুল কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। এটা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আহবান জানাবো, আসুন! কুরআন চর্চাকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেই। কুরআনকে একটি অপ্রয়োজনীয় বিষয় হিসাবে ফেলে না রেখে এই শিক্ষাকে নতুন রূপ দেই। প্রতিটি শিক্ষাবোর্ডের কুরআন কেন্দ্রিক সিলেবাস তৈরি করার চেষ্টা করি।

ছাত্রদের কুরআন শিক্ষার আগ্রহ কমার কারণ ও তার প্রতিকার :

আধুনিক যুগে ছাত্রদের মাঝে কুরআন শিক্ষার প্রতি আগ্রহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাচ্ছে। এটি একটি গভীর উদ্বেগের বিষয়। যা নৈতিক, সামাজিক এবং শিক্ষাগত বিভিন্ন দিক থেকে হুমকির কারণ। কুরআন শিক্ষার প্রতি এই উদাসীনতার পেছনে রয়েছে বিভিন্ন কারণ। যা একদিকে তাদের জীবন থেকে কুরআনের প্রভাব কমিয়ে দিচ্ছে এবং অন্যদিকে সমাজেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কারণ হিসাবে প্রথমেই বলতে পারি, আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা এবং প্রযুক্তির প্রভাব। এটা ছাত্রদের কুরআনের প্রতি আগ্রহ ব্যপকভাবে কমিয়ে দিচ্ছে। আজকের যুগে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রযুক্তি নির্ভর বিনোদনে নিমগ্ন। সোশ্যাল মিডিয়া, গেমস এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তাদের সময় ও মনোযোগ দখল করে নিচ্ছে। ফলে তারা কুরআন শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিতে পারছে না। এই প্রযুক্তিগত আসক্তি কুরআনের মতো গভীর এবং চিন্তাশীল বিষয়ের প্রতি তাদের মনোযোগ কমিয়ে দিয়েছে।

দ্বিতীয়ত : খুব দুঃখের সাথেই বলতে হয়, অনেক অভিভাবক এবং শিক্ষকের মধ্যেও কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি জোর দেওয়া হ’লেও, কুরআন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা প্রায়শই উপেক্ষিত হয়। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিজ্ঞান, গণিত বা ইংরেজি শিক্ষার প্রতি যতটা মনোযোগ দেন, কুরআন শিক্ষার প্রতি ততটা মনোযোগ দেন না। এর ফলে শিক্ষার্থীরা কুরআন শিক্ষাকে জীবনের অপরিহার্য অংশ হিসাবে দেখতে অভ্যস্ত হয় না। সেখান থেকেও আমরা বড় একটা ঘাটতিতে রয়ে গেছি।

তৃতীয়ত : কুরআন শিক্ষার প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়ার একটি বড় কারণ হ’ল, পাঠদানের পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা। অনেক ক্ষেত্রে কুরআন শিক্ষা শুধুমাত্র সারাদিন মুখস্থ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। যা শিক্ষার্থীদের জন্য একঘেয়েমির কারণ হয়ে ওঠে। তারা লম্বা সময় শুধু কুরআন পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে যদি পাঠদানের মাঝে মাঝে বিরতী নেয়া যায় এবং আনুসাঙ্গিক কিছু শেখানো যায় তবে তাদের এঘেয়েমি আসবে না বলে মনে হয়। বিরতীকালীন সময়ে কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন বিষয় শেখানো যেতে পারে। যেমন, আরবী ভাষার মুলপাঠগুলো দেয়া যেতে পারে। আবার মাঝে মাঝে বক্তব্যের মাধ্যমে কুরআনের গভীর তাৎপর্য এবং জীবনের সঙ্গে এর সম্পর্ক শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা যেতে পারে। ফলাফলে তারা কুরআনের সঙ্গে মানসিক সংযোগ স্থাপন করতে শিখবে ইনশাআল্লাহ।

চতুর্থত : আমরা কুরআন শিক্ষাকে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার গন্ডির বাইরে বের করে দিয়েছি। কাজেই কুরআন শিক্ষায় সামাজিক মূল্যবোধের স্থানও পরিবর্তন হয়েছে। এটিও কুরআন শিক্ষার প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়ার একটি কারণ। বর্তমান সময়ে সফলতার মানদন্ড শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং চাকুরী অর্জনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। সে প্রতিযোগিতায় কুরআন শিক্ষার মতো নৈতিক এবং আত্মিক শিক্ষার গুরুত্ব প্রায়শই আড়ালে পড়ে গেছে। আজকাল শিক্ষার্থীরা কুরআন শিক্ষাকে কেবল একটি ধর্মীয় দায়িত্ব হিসাবে দেখে, যা তাদের জীবনের অন্য ক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।

ছাত্রদের মাঝে কুরআন শিক্ষার আগ্রহ কমে যাওয়ার কারণগুলো অত্যন্ত গভীর এবং বহুমুখী। প্রযুক্তির প্রভাব, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের সচেতনতার অভাব, পাঠদানের একঘেয়েমি এবং সমাজের মানসিকতা এসব কারণ একসঙ্গে কুরআন শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হ্রাস করছে। এই সমস্যার সমাধান করতে হ’লে শিক্ষার্থীদের কুরআনের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য যুগোপযোগী এবং মানসিকভাবে উদ্দীপনামূলক পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। কুরআনের সৌন্দর্য, গুরুত্ব এবং জীবনঘনিষ্ঠ দিকগুলো শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরতে হবে। যাতে তারা এটি কেবল ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, বরং জীবনের পথপ্রদর্শক হিসাবে দেখতে পারে।

কুরআনের সাথে মেধা বিকাশ ও মুখস্থ শক্তি বৃদ্ধির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা :

কুরআন শুধুমাত্র ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, এটি মানব জীবনের সর্বাত্মক উন্নয়নের এক অসাধারণ মাধ্যম। এর আয়াতগুলো শুধু আত্মার প্রশান্তি আনে না, বরং মেধা বিকাশ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। আধুনিক বিজ্ঞান ও মনস্তত্ত্বের আলোকে এটি প্রমাণিত যে, কুরআন পাঠ, অধ্যয়ন এবং মুখস্থ করার অভ্যাস মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং জ্ঞানার্জনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

মানুষের মস্তিষ্কে সর্বদা একধরণের তরঙ্গ কাজ করে। যেমন নদীতে সবসময় ঢেউ থাকে। নদীর ঢেউ যেমন সর্বদা একরকম থাকে না, তেমনই মানুষের মস্তিষ্কের তরঙ্গমালাও একেক সময় একেক রকম থাকে। কুরআন তিলাওয়াতের সময় কুরআনের সুরেলা ধ্বনি ও ছন্দ মানুষের মস্তিষ্কে যে তরঙ্গ সৃষ্টি করে তার নাম ‘আলফা’। এই তরঙ্গ মনকে শান্ত করে এবং মস্তিষ্ককে কার্যকর রাখে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কুরআন পাঠকারীদের মনোযোগ এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তুলনামূলকভাবে বেশি। এর কারণ, কুরআন পাঠ করার সময় মস্তিষ্কের ডান এবং বাম অংশ একসঙ্গে সক্রিয় থাকে, যা মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। পাশাপাশি কুরআন পাঠের সময় যে আলফা তরঙ্গ সৃষ্টি হয় তা কুরআন পাঠের পরেও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মস্তিষ্কে স্থায়ী হয়। সে সময় যে কাজই করা হয় সেটা মনোযোগের সাথে হয়। এজন্য সকালে ও সন্ধায় পড়াশোনা শুরুর পূর্বে কুরআন তিলাওয়াত করা বেশ ফলপ্রসূ। 

কুরআন মুখস্থ করা একটি ধৈর্যশীল প্রক্রিয়া। যা বারবার পুনরাবৃত্তি ও অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জিত হয়। এই অভ্যাস মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অংশকে সক্রিয় করে তোলে, যা দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত কুরআন মুখস্থ করেন, তাদের মস্তিষ্ক তথ্য সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধারে বেশি দক্ষ। পাশাপাশি একজন মানুষ যখন বিদেশী ভাষা মুখস্থ করে তখন তার মস্তিষ্কে দ্বি-ভাষিক দক্ষতা বাড়ে। সুতরাং বলা যায়, আরবী ভাষায় কুরআন মুখস্থ করা মস্তিষ্কের দ্বি-ভাষিক দক্ষতা বাড়াবে। ভিন্ন ভাষার শব্দ ও বাক্য কাঠামো আয়ত্ত করার ফলে মস্তিষ্কের নিউরোনগুলো আরও কার্যকর হবে। আর এটি স্মৃতিশক্তি, সৃজনশীলতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতাকে বাড়িয়ে তুলবে।

কুরআনের সুরেলা তিলাওয়াত শুধু মস্তিষ্ক নয়, পুরো শরীরকেই এক গভীর প্রশান্তি এনে দেয়। এই প্রশান্তি কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। স্ট্রেস কমে গেলে মস্তিষ্ক আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে। এর ফলে নতুন কিছু শেখা এবং মুখস্থ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তিলাওয়াতের সময় মনোযোগ কেন্দ্রীভূত থাকায় মস্তিষ্কের ‘প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স’ নামক অংশ সক্রিয় হয়। এটি মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা উন্নত করে। কুরআনের সাথে মেধা বিকাশ এবং মুখস্থশক্তি বৃদ্ধির এই সম্পর্ক একটি বাস্তব ও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত বিষয়। সুতরাং দাবীর সাথেই বলা যায় যে, শিক্ষার্থীর মেধা বিকাশে কুরআন একটি গুরুত্বপূর্ণ টনিক। যাকে এককথায় ‘সর্বরোগের মহৌষধ’ বলা যায়।

উপসংহার :

কুরআন এমন একটি জীবন বিধান, যা দুনিয়ার বুকে সর্বশেষ জীবন বিধান হিসাবে অবতীর্ণ হয়েছে। এর চেয়ে নির্ভুল কোন গ্রন্থ দুনিয়ার বুকে নেই। যুগে যুগে এই চ্যালেঞ্জ মানুষের প্রতি আল্লাহ দিয়ে রেখেছেন। দেখুন! একটি গ্রন্থ এমনি এমনি এই মর্যাদাপ্রাপ্ত হয় না। এটা বিশ্বের প্রতিপালকের বাণী হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার সাথে সাথেই তার শ্রেষ্ঠত্বও প্রমাণিত হয়। শুধু শিক্ষার্থীদের জন্যই কুরআন এমন উপকারী, বিষয়টি এমন নয়। সকল পেশা, ভাষা, গোত্র, বর্ণ ভেদে সকল মানুষের সম্পর্ক কুরআনের সাথে ঠিক এমনই। কুরআনের মাধ্যমে অলৌকিক কিছু ঘটে যাওয়া কখনোই অসম্ভব নয়। কারণ, কুরআন শুধু একটি কিতাব নয়। এটি মহান স্রষ্টার বাণী। এটি নবীকুলের সর্দার মুহাম্মাদ (ছাঃ) এর মু‘জেযা।

সারওয়ার মিছবাহ

শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।






আরও
আরও
.