পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ । শেষ পর্ব 

মিসওয়াক সম্পর্কিত মাসআলা

পরিচিতি : খাদ্যকনা ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য কাঠি, ডাল বা অনুরূপ কিছু দ্বারা দাঁত পরিষ্কার করাকে মিসওয়াক বলে।

মিসওয়াক করার হুকুম :

মিসওয়াক করা সুন্নাত। এমনকি ছিয়াম অবস্থায়ও দিনের প্রথম বা শেষ ভাগে যখনই হোক না কেন মিসওয়াক করলে কোন সমস্যা নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মিসওয়াক করার প্রতি জোর তাকীদ প্রদান করেছেন। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ.

আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘মিসওয়াক হ’ল মুখ পরিষ্কারকারী এবং আল্লাহর সন্তোষ লাভের উপায়।[1]

অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِيْ أَوْ عَلَى النَّاسِ لأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ كُلِّ صَلاَةٍ.

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের জন্য বা তিনি বলেছেন, লোকদের জন্য যদি কঠিন মনে না করতাম, তাহ’লে প্রত্যেক ছালাতের সাথে তাদেরকে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম’।[2]

কখন মিসওয়াক করা যরূরী :

(ক) ওযূ করার সময় মিসওয়াক করা যরূরী। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي لأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ وُضُوءٍ.

আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যদি আমি আমার উম্মতের উপর কঠিন মনে না করতাম তাহ’লে প্রত্যেক ওযূর সাথে তাদেরকে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম’।[3]

(খ) মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন দীর্ঘ সময় মুখ বন্ধ থাকে, এতে মুখে গন্ধ হয়। তাই ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পরে এবং অন্য কোন সময় দীর্ঘক্ষণ মুখ বন্ধ রাখলে অথবা মুখের গন্ধ পরিবর্তন হ’লে মিসওয়াক করা যরূরী। হাদীছে এসেছে,

عَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا قَامَ لِلتَّهَجُّدِ مِنَ اللَّيْلِ يَشُوصُ فَاهُ بِالسِّوَاكِ.

হুযায়ফা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) রাতের বেলা যখন তাহাজ্জুদ ছালাতের জন্য উঠতেন, তখন মিসওয়াক দ্বারা তাঁর মুখ পরিষ্কার করে নিতেন’।[4]

(গ) কুরআন তেলাওয়াত এবং ছালাত আদায় করার সময় মিসওয়াক করা যরূরী।

(ঘ) মসজিদে এবং বাড়িতে প্রবেশ করলে মিসওয়াক করা যরূরী। হাদীছে এসছে,

عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ شُرَيْحٍ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ سَأَلْتُ عَائِشَةَ قُلْتُ بِأَىِّ شَىْءٍ كَانَ يَبْدَأُ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ بَيْتَهُ قَالَتْ بِالسِّوَاكِ.

মিকদাম ইবনে শুরাইহ (রাঃ) তাঁর পিতা হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন বাড়িতে প্রবেশ করতেন তখন তিনি কি দ্বারা কাজ আরম্ভ করতেন? আয়েশা (রাঃ) বললেন, তিনি মিসওয়াক দ্বারা আরম্ভ করতেন।[5]

কোন্ জিনিস দ্বারা করা মিসওয়াক করা সুন্নাত?

গাছের তরতাজা ডাল, যা মুখকে ক্ষত করে না এমন বস্ত্ত দ্বারা মিসওয়াক করা সুন্নাত।[6]

মিসওয়াক করার উপকারিতা :

মিসওয়াক করার মাধ্যমে আললাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। যেমনটি মা আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন যে, ‘মিসওয়াক হ’ল মুখ পরিষ্কারকারী এবং আল্লাহর সন্তোষ লাভের উপায়।[7]

অতএব প্রত্যেক মুসলিমের উচিত এই কল্যাণকর কাজ ত্যাগ না করে এই সুন্নাতের বাস্তবায়ন করা। এছাড়া মিসওয়াকের আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন- মিসওয়াক করলে দাঁত মযবুত হয়, মাঢ়ি মযবুত হয়, কন্ঠ পরিষ্কার হয় এবং মনে প্রফুল্লতা আসে।

মানুষের প্রকৃতিগত সুন্নাত :

মানুষের প্রকৃতিগত সুন্নাত পাঁচটি। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : خَمْسٌ مِنَ الْفِطْرَةِ الاِسْتِحْدَادُ وَالْخِتَانُ، وَقَصُّ الشَّارِبِ وَنَتْفُ الإِبْطِ وَتَقْلِيْمُ الأَظْفَارِ.

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ‘ফিতরাত (অর্থাৎ মানুষের জন্মগত স্বভাব) পাঁচটি : ক্ষুর ব্যবহার করা (নাভির নিমেণ), খাতনা করা, গোঁফ খাটো করা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা ও নখ কাটা’।[8]

ওযূ সম্পর্কিত মাসআলা

الوُضوء -এর আভিধানিক অর্থ : الوُضوء শব্দটি الوضاءة মাছদার হ’তে নির্গত। এর আভিধানিক অর্থ হ’ল, উত্তমতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা।

الوُضوء -এর পারিভাষিক অর্থ : ইবাদতের উদ্দেশ্যে শরী‘আতের নির্দিষ্ট নিয়মে ওযূর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমূহে পানি ব্যবহার করার নাম ওযূ।

الوُضوء -এরহুকুম : ওযূ ভঙ্গ হয়েছে এমন ব্যক্তি ছালাত আদায়ের ইচ্ছা করলে তার উপর ওযূ করা ওয়াজিব।[9]

الوُضوءওয়াজিব হওয়ার দলীল :

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاَةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ وَإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْا وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لاَمَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَاءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَأَيْدِيْكُمْ مِنْهُ مَا يُرِيْدُ اللهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ وَلَكِنْ يُرِيْدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ-

‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা ছালাতে দন্ডায়মান হ’তে চাও, তখন তোমাদের মুখমন্ডল ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসাহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর) এবং যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে ভালভাবে পবিত্র হও। আর যদি অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা যদি তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা যদি স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসাহ কর। আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে এবং তার নে‘মত তোমাদের উপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর’ (মায়েদা ৬)

عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ إِنِّى سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ لاَ تُقْبَلُ صَلاَةٌ بِغَيْرِ طُهُوْرٍ وَلاَ صَدَقَةٌ مِنْ غُلُوْلٍ.

ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘পবিত্রতা ব্যতীত ছালাত এবং হারাম মালের দান কবুল হয় না’।[10]

অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

لاَ تُقْبَلُ صَلاَةُ مَنْ أَحْدَثَ حَتَّى يَتَوَضَّأَ.

‘যে ব্যক্তির ওযূ ভঙ্গ হয়েছে তার ছালাত হবে না যতক্ষণ না সে ওযূ করে’।[11]

ওযূ কার উপর ও কখন ওয়াজিব?

মুসলিম, প্রাপ্ত বয়স্ক এবং জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ যদি ছালাত আদায়ের ইচ্ছা করে অথবা কা‘বা শরীফ তাওয়াফ করার ইচ্ছা করে তাহ’লে তার উপর ওযূ করা ওয়াজিব।

ওযূর শর্ত সমূহ :

ওযূর কিছু শর্ত, ফরয এবং সুন্নাত কাজ রয়েছে। শর্ত এবং ফরয অবশ্যই আদায় করতে হবে। অজ্ঞতাবশত হোক অথবা ভুলবশত হোক যে কোন কারণে ওযূর শর্ত এবং ফরয কাজ সমূহ ছেড়ে দিলে ওযূ শুদ্ধ হবে না। আর সুন্নাত কাজ সমূহ যদি অজ্ঞতাবশত অথবা ভুলবশত ছুটে যায় তাহ’লে ওযূ শুদ্ধ হবে। কিন্তু তার ছওয়াব থেকে সে বঞ্চিত হবে।

ওযূর শর্ত সমূহ ৮ টি :

১- الإسلام অর্থাৎ ওযূকারী ব্যক্তিকে অবশ্যই মুসলিম হ’তে হবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা কোন কাফিরের ইবাদত কবুল করবেন না।

২-৩ العقل و التمييزঅর্থাৎ জ্ঞান সম্পন্ন এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হ’তে হবে। কেননা পাগল এবং শিশুর উপর থেকে আল্লাহ তা‘আলা কলম উঠিয়ে নিয়েছেন। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَلِىٍّ عَلَيْهِ السَّلاَمُ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلاَثَةٍ عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ وَعَنِ الصَّبِىِّ حَتَّى يَحْتَلِمَ وَعَنِ الْمَجْنُوْنِ حَتَّى يَعْقِلَ.

আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘তিন শ্রেণীর ব্যক্তির উপর থেকে আল্লাহ তা‘আলা কলম উঠিয়ে নিয়েছেন। ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত সে জাগ্রত না হয়, অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক, যতক্ষণ না সাবালেগ হয় এবং পাগল যতক্ষণ তার জ্ঞান ফিরে না আসে।[12]

অতএব পাগল যতক্ষণ পর্যন্ত তার জ্ঞান ফিরে না আসে এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক, যতক্ষণ না সাবালেগ হয়। ততক্ষণ পর্যন্ত তার ওযূ শুদ্ধ হবে না।

৪- النية অর্থাৎ ওযূ শুদ্ধ হওয়ার জন্য নিয়ত ছহীহ হ’তে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا، أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ.

‘নিশ্চয়ই প্রত্যেক কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে ইহকাল লাভের অথবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে, তার হিজরত সেদিকেই গণ্য হবে, যে জন্য সে হিজরত করেছে’।[13]

অতএব প্রত্যেকটি কাজ যেমন নিয়তের উপর নির্ভরশীল তেমন ওযূ ছহীহ হওয়ার জন্যও নিয়ত যরূরী।

৫- ওযূর পানি পবিত্র হওয়া। অতএব অপবিত্র পানি দ্বারা ওযূ শুদ্ধ হবে না।

৬- ওযূর পানি বৈধ হওয়া। অর্থাৎ যদি কোন ব্যক্তি কারো নিকট থেকে অন্যায়ভাবে বা জোরপূর্বক পানি নিয়ে ওযূ করে তাহ’লে সেই পানি দ্বারা ওযূ হবে না।

৭- ওযূ করার পূর্বেই ইসতিন্জা করা। অর্থাৎ যদি কোন ব্যক্তি পেশাব-পায়খানা করার পরে ওযূ করে অতঃপর ইসতিন্জা করে তাহ’লে তার ওযূ ছহীহ হবে না।

৮- চামড়াতে পানি পৌঁছতে বাধা দেয় এমন বস্ত্তকে ওযূ করার পূর্বেই দূর করা। অর্থাৎ যদি কোন ব্যক্তি ওযূর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এমন বস্ত্ত ব্যবহার করে যা চামড়াতে পানি পৌঁছতে বাধা সৃষ্টি করে, তাহ’লে ওযূ করার পূর্বেই তা দূর করতে হবে। যেমন- কেউ নেইল পালিশ বা এ জাতীয় কিছু ব্যবহার করলে তা দূর করার পরে ওযূ করতে হবে। অন্যথা তার ওযূ ছহীহ হবে না।[14]

ওযূর ফরয কাজ সমূহ :

ওযূর ফরয চারটি যা আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআন মাজীদে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করেছেন। তা হ’ল :

  • সম্পূর্ণ মুখমন্ডল ধৌত করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

 يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ

‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা ছালাতে দন্ডায়মান হ’তে চাও, তখন তোমাদের মুখমন্ডল ধৌত কর’ (মায়েদা ৬)

কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া মুখমন্ডলের অন্তর্ভুক্ত। অতএব কেউ যদি মুখমন্ডল ধৌত করে কিন্তু কুলি না করে অথবা নাকে পানি না দেয়, তাহ’লে তার ওযূ ছহীহ হবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা সম্পূর্ণ মুখমন্ডল ধোয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আর কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া মুখমন্ডল ধোয়ার অন্তর্ভুক্ত।

২- উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ ‘তোমরা তোমাদের হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত কর’ (মায়েদা ৬)। এখানে কনুই পর্যন্ত বলতে কনুই সহ ধৌত করার কথা বলা হয়েছে। হাদীছে এসেছে,

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا تَوَضَّأَ أَدَارَ الْمَاءَ عَلَى مِرْفَقَيْهِ.

জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন ওযূ করতেন তখন তাঁর দুই কনুইয়ের উপর পানি ঢেলে দিতেন।[15]

অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ نُعَيْمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْمُجْمِرِ قَالَ رَأَيْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ يَتَوَضَّأُ فَغَسَلَ وَجْهَهُ فَأَسْبَغَ الْوُضُوءَ ثُمَّ غَسَلَ يَدَهُ الْيُمْنَى حَتَّى أَشْرَعَ فِى الْعَضُدِ ثُمَّ يَدَهُ الْيُسْرَى حَتَّى أَشْرَعَ فِى الْعَضُدِ ثُمَّ مَسَحَ رَأْسَهُ ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَهُ الْيُمْنَى حَتَّى أَشْرَعَ فِى السَّاقِ ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى حَتَّى أَشْرَعَ فِى السَّاقِ ثُمَّ قَالَ هَكَذَا رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَتَوَضَّأُ.

নু‘আঈম ইবনে আব্দুল্লাহ আল-মুজমির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রাহ (রাঃ)-কে ওযূ করতে দেখেছি। তিনি খুব ভালভাবে মুখমন্ডল ধৌত করলেন, এরপর ডান হাত বাহুর কিছু অংশসহ ধৌত করলেন। পরে বাম হাতও বাহুর কিছু অংশসহ ধৌত করলেন। এরপর মাথা মাসাহ করলেন। অতঃপর ডান পায়ের নলার কিছু অংশসহ ধৌত করলেন। তারপর বাম পায়ের নলার কিছু অংশসহ ধৌত করলেন। অতঃপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে এভাবে ওযূ করতে দেখেছি।[16]

এ হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, উভয় হাতের কনুই ও পায়ের গোড়ালী সহ ধৌত করতে হবে।

৩- সম্পূর্ণ মাথা মাসাহ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ ‘তোমরা তোমাদের মাথা মাসাহ কর’ (মায়েদা ৬)। এখানে মাথা মাসাহ বলতে সম্পূর্ণ মাথা মাসাহ করার কথা বলা হয়েছে। অতএব মাথার কিছু অংশ মাসাহ করা বৈধ নয়। মাথা মাসাহ করার সাথে কান মাসাহ করতে হবে। কারণ কান মাথার অন্তর্ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, الأُذُنَانِ مِنَ الرَّأْسِ. ‘কানদ্বয় মাথার অংশ’।[17]

অতএব যেহেতু কান মাথার অংশ সেহেতু মাথার সাথে কান মাসাহ করাও ফরয।

৪- টাখনু পর্যন্ত উভয় পা ধৌত করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ ‘তোমরা তোমাদের পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর’ (মায়েদা ৬)। এখানে টাখনু পর্যন্ত বলতে টাখনুসহ ধৌত করা বুঝানো হয়েছে। যেমন পূর্বোক্ত হাদীছ- ‘... আবু হুরায়রাহ ডান পায়ের নলার কিছু অংশসহ ধৌত করলেন। অতঃপর বাম পায়ের নলার কিছু অংশসহ ধৌত করলেন। এরপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে এভাবে ওযূ করতে দেখেছি।[18]

উপরিউল্লেখিত ওযূর চারটি ফরয ছাড়াও আরো দু’টি কাজ অপরিহার্য। এমনকি ফিকহবীদগণের অনেকেই এ দু’টিকেও ফরযের মধ্যে গণ্য করেছেন।[19]

১- ওযূ করার সময় ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। অর্থাৎ প্রথমে মুখমন্ডল, তারপর দুই হাত ধৌত করা, অতঃপর মাথা মাসাহ করা এবং শেষে দুই পা ধৌত করা। যেভাবে পবিত্র কুরআনে এসেছে। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা ছালাতে দন্ডায়মান হ’তে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসাহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা ধৌত কর’ (মায়েদা ৬)

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ওযূর যে ধারাবাহিকতা বর্ণনা করেছেন তা বজায় রাখা অপরিহার্য।

২- ওযূ করার সময় এক অঙ্গ শুকানোর পূর্বেই অপর অঙ্গ ধৌত করা। হাদীছে এসেছে,

عَنْ خَالِدٍ عَنْ بَعْضِ أَصْحَابِ النَّبِىِّ أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم رَأَى رَجُلاً يُصَلِّى وَفِى ظَهْرِ قَدَمِهِ لُمْعَةٌ قَدْرُ الدِّرْهَمِ لَمْ يُصِبْهَا الْمَاءُ فَأَمَرَهُ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم أَنْ يُعِيْدَ الْوُضُوءَ وَالصَّلاَةَ.

খালিদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর কতিপয় ছাহাবী সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, তিনি ছালাত আদায় করছেন, কিন্তু তার পায়ের পাতায় এক দিরহাম পরিমাণ জায়গা শুকনো দেখতে পেলেন, যেখানে পানি পৌঁছেনি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে পুনরায় ওযূ করে ছালাত আদায় করার নির্দেশ দিলেন।[20]

অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এক অঙ্গ শুকানোর পূর্বেই অপর অঙ্গ ধৌত করা অপরিহার্য। যদি অপরিহার্য না হ’ত তাহ’লে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাদীছে উল্লেখিত ব্যক্তিকে পুনরায় ওযূ করে ছালাত আদায় করার নির্দেশ দিতেন না। বরং তার পায়ের যতুটুকু জায়গা শুকনো ছিল ততটুকুই ধৌত করার নির্দেশ দিতেন। কিন্তু যেহেতু তার অন্যান্য অঙ্গ শুকিয়ে গিয়েছিল সেহেতু তাকে পুনরায় ওযূ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

অযূর সুন্নাত কাজ সমূহ :

(ক) মিসওয়াক করে ওযূ আরম্ভ করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي لأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ وُضُوءٍ.

‘যদি আমি আমার উম্মতের উপর কঠিন মনে না করতাম, তাহ’লে প্রত্যেক ওযূর সাথে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম’।[21]

(খ) বিসমিল্লাহ বলে ওযূ আরম্ভ করা। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لاَ وُضُوْءَ لَهُ وَلاَ وُضُوْءَ لِمَنْ لَمْ يَذْكُرِ اسْمَ اللهِ تَعَالَى عَلَيْهِ.

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ছালাত হবে না ওযূ ছাড়া এবং ওযূ হবে না বিসমিল্লাহ বলা ছাড়া’।[22]

অত্র হাদীছের প্রতি লক্ষ্য করে কিছু সংখ্যক আলেম বলেন যে, বিসমিল্লাহ বলে ওযূ আরম্ভ করা ওয়াজিব। তবে ছহীহ মত হ’ল, বিসমিল্লাহ বলে ওযূ আরম্ভ করা সুন্নাত।[23] কেননা যে হাদীছগুলোতে রাসূল (ছাঃ)-এর ওযূর পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে তাতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলার কথা বলা হয়নি। তাছাড়া ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ওযূ আরম্ভ করা ওয়াজিব মর্মে ভাল সনদের কোন হাদীছ আমার জানা নেই।[24]

(গ) ঘুম থেকে জেগে ওযূ করার পূর্বে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা সুন্নাত। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : إِذَا تَوَضَّأَ أَحَدُكُمْ فَلْيَجْعَلْ فِيْ أَنْفِهِ ثُمَّ لِيَنْثُرْ وَمَنِ اسْتَجْمَرَ فَلْيُوتِرْ وَإِذَا اسْتَيْقَظَ أَحَدُكُمْ مِنْ نَوْمِهِ فَلْيَغْسِلْ يَدَهُ قَبْلَ أَنْ يُدْخِلَهَا فِي وَضُوْئِهِ فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لاَ يَدْرِيْ أَيْنَ بَاتَتْ يَدُهُ.

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন ওযূ করে তখন সে যেন তার নাক পানি দিয়ে ঝাড়ে। আর যে শৌচকার্য করে সে যেন বেজোড় সংখ্যক ঢিলা ব্যবহার করে। আর তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে জাগে তখন সে যেন ওযূর পানিতে হাত ঢুকানোর পূর্বে তা ধুয়ে নেয়। কারণ তোমাদের কেউ জানে না যে, ঘুমন্ত অবস্থায় তার হাত কোথায় থাকে’।[25]

(ঘ) নাকের ভিতরে পানি প্রবেশ করিয়ে তা ঝেড়ে ফেলা সুন্নাত। তবে ছিয়াম অবস্থায় নাকের এমন গভীরে পানি প্রবেশ করানো যাবে না। যাতে পেটের মধ্যে পানি প্রবেশের সম্ভাবনা থাকে। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَاصِمِ بْنِ لَقِيطِ بْنِ صَبِرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَالِغْ فِى الاِسْتِنْشَاقِ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ صَائِمًا

আছেম ইবনে লাক্বীত ইবনে ছাবিরা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা নাসিকায় পানি প্রবেশ করাও। তবে ছিয়াম অবস্থা ছাড়া’।[26]

(ঙ) ওযূর অঙ্গ সমূহ পানি দিয়ে মর্দন করা সুন্নাত। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَبَّادِ بْنِ تَمِيمٍ عَنْ عَمِّهِ قَالَ : رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَوَضَّأُ، فَجَعَلَ يَدْلُكُ ذِرَاعَيْهِ.

আববাদ ইবনে তামীম তার চাচা হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ওযূ করতে দেখেছি, তিনি তাঁর হাত মর্দন করলেন।[27]

(চ) দাড়ি খিলাল করা সুন্নাত। দাড়ি দুই প্রকার। ১- পাতলা দাড়ি যার ভিতর দিয়ে চামড়া দেখা যায়। এই দাড়ি ধৌত করা ওয়াজিব। ২- ঘন দাড়ি যার ভিতর দিয়ে চামড়া দেখা যায় না। এই দাড়ি ধৌত করা ওয়াজিব নয়। বরং পানি দিয়ে খিলাল করা সুন্নাত। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ قَالَ : رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى الله عَليْهِ وسَلَّمَ يُخَلِّلُ لِحْيَتَهُ.

আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে তাঁর দাড়ি খিলাল করতে দেখেছি।[28]

আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا تَوَضَّأَ أَخَذَ كَفًّا مِنْ مَاءٍ فَأَدْخَلَهُ تَحْتَ حَنَكِهِ فَخَلَّلَ بِهِ لِحْيَتَهُ وَقَالَ هَكَذَا أَمَرَنِى رَبِّى عَزَّ وَجَلَّ. রসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন ওযূ করতেন তখন হাতের এক অঞ্জলী পানি নিতেন এবং তাঁর চোয়ালের নিচে প্রবেশ করাতেন। অতঃপর তা দ্বারা তাঁর দাড়ি খিলাল করতেন এবং তিনি বলতেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা আমাকে অনুরূপ নির্দেশ দিয়েছেন’।[29]

(ছ) হাত ধোয়ার সময় প্রথমে ডান হাত এবং পা ধোয়ার সময় প্রথমে ডান পা ধৌত করা সুন্নাত। হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُحِبُّ التَّيَمُّنَ مَا اسْتَطَاعَ فِي شَأْنِهِ كُلِّهِ فِيْ طُهُوْرِهِ وَتَرَجُّلِهِ وَتَنَعُّلِهِ.

আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী (ছাঃ) নিজের সমস্ত কাজে যথাসম্ভব ডান দিক হ’তে আরম্ভ করা পসন্দ করতেন। পবিত্রতা অর্জন, মাথা আচড়ানো এবং জুতা পরার সময়ও।[30]

(জ) ওযূর অঙ্গ-প্রতঙ্গ সমূহ দ্বিতীয় বার ও তৃতীয় বার ধৌত করা সুন্নাত। তবে প্রথম বার ধৌত করা ওয়াজিব। হাদীছে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ تَوَضَّأَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَرَّةً مَرَّةً.

ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) ওযূর অঙ্গ একবার করে ধৌত করেছেন।[31] অন্য বর্ণনায় এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ বলেন, أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم تَوَضَّأَ مَرَّتَيْنِ مَرَّتَيْنِ. নবী করীম (ছাঃ) ওযূর অঙ্গ দু’বার করে ধৌত করেছেন।[32] অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ حُمْرَانَ مَوْلَى عُثْمَانَ أَنَّهُ رَأَى عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ دَعَا بِإِنَاءٍ فَأَفْرَغَ عَلَى كَفَّيْهِ ثَلاَثَ مِرَارٍ فَغَسَلَهُمَا ثُمَّ أَدْخَلَ يَمِيْنَهُ فِي الإِنَاءِ فَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثًا وَيَدَيْهِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ ثَلاَثَ مِرَارٍ ثُمَّ مَسَحَ بِرَأْسِهِ ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَيْهِ ثَلاَثَ مِرَارٍ إِلَى الْكَعْبَيْنِ ثُمَّ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : مَنْ تَوَضَّأَ نَحْوَ وُضُوْئِيْ هَذَا ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ لاَ يُحَدِّثُ فِيْهِمَا نَفْسَهُ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.

হুমরান (রহঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি ওছমান ইবনে আফ্ফান (রাঃ)-কে দেখেছেন যে, তিনি পানির পাত্র আনিয়ে উভয় হাতের তালুতে তিনবার ঢেলে তা ধুয়ে নিলেন। অতঃপর ডান হাত পাত্রের মধ্যে ঢুকালেন। তারপর কুলি করলেন ও নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করলেন। তারপর তাঁর মুখমন্ডল তিনবার ধৌত করলেন এবং দু’হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধৌত করলেন। অতঃপর মাথা মাসাহ করলেন। অতঃপর দুই পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধৌত করলেন। পরে বললেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার মত এ রকম ওযূ করবে, অতঃপর দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, যাতে দুনিয়ার কোন খেয়াল করবে না, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে’।[33]

অতএব উল্লিখিত দলীল সমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ওযূতে প্রথমবার ধৌত করা ওয়াজিব এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার ধৌত করা সু্ন্নাত। তবে মাথা শুধুমাত্র একবার মাসাহ করতে হবে।

(ঝ) ওযূ শেষে দো‘আ পড়া সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ الْوُضُوْءَ، ثُمَّ يَقُوْلُ : أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، إِلاَّ فُتِحَتْ لَهُ ثَمَانِيَةُ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ، يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ.

‘মুসলমানদের যে কেউ ওযূ করবে, সে যেন উত্তমভাবে ওযূ করে। অতঃপর বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা‘বূদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে। সে যেকোন দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।[34]

[চলবে]

মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম

[1]. নাসাঈ, ‘মিসওয়াক করার প্রতি উৎসাহ প্রদান’ অনুচ্ছেদ, হা/৫; মিশকাত, ‘মিসওয়াক করা’ অনুচ্ছেদ, হা/৩৫১, বাংলা অনুবাদ: এমদাদিয়া ২/৭৪; নাছিরুদ্দীন আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন, ইরওয়াউল গালীল ১/১০৫।

[2]. বুখারী, ‘জুমআর দিন মিসওয়াক করা’ অনুচ্ছেদ, হা/৮৮৭, বাংলা অনুবাদ: তাওহীদ পাবলিকেশন্স ১/৪১১; মিশকাত, ‘মিসওয়াক করা’ অনুচ্ছেদ, হা/৩৪৭, বাংলা অনুবাদ: এমদাদিয়া ২/৭২।

[3]. বুখারী, ‘ছায়েমের জন্য কাঁচা বা শুকনো মিসওয়াক ব্যবহার করা’ অনুচ্ছেদ, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ২/৩০৮।

[4]. বুখারী, ‘তাহাজ্জুদের ছালাত দীর্ঘ করা’ অনুচ্ছেদ, হা/১১৩৬, বাংলা অনুবাদ: তাওহীদ পাবলিকেশন্স ১/৫৫২।

[5]. মুসলিম, হা/২৫৩।

[6]. আল-মুলাক্ষাছুল ফিক্বহী, ১/৩৫ পৃঃ, আল-ফিক্বহুল মুয়াস্সার ১৪ পৃঃ।

[7]. নাসাঈ, ‘মিসওয়াক করার উৎসাহ প্রদান’ অনুচ্ছেদ, হা/৫, মিশকাত, ‘মিসওয়াক করা’ অনুচ্ছেদ, হা/৩৫১, বাংলা অনুবাদ, এমদাদিয়া ২/৭৪, নাছিরুদ্দীন আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন, ইরওয়াউল গালীল ১/১০৫।

[8]. বুখারী, ‘গোঁফ ছাটা’ অনুচ্ছেদ, হা/৫৮৮৯, বাংলা অনুবাদ: তাওহীদ পাবলিকেশন্স ৫/৪০৪।

[9]. আল-ফিকহুল মুয়াস্সার, পৃঃ ১৭।

[10]. মুসলিম, হা/২২৫, মিশকাত, হা/২৮১; বাংলা অনুবাদ : এমদাদিয়া ২/৪৮।

[11]. বুখারী, ‘পবিত্রতা ব্যতীত ছালাত কবুল হবে না’ অনুচ্ছেদ, হা/১৩৫, বাংলা অনুবাদ; তাওহীদ পাবলিকেশন্স, ১/৮৫। মুসলিম, হা/২২৫। মিশকাত, হা/২৮০, বাংলা অনুবাদ; এমদাদিয়া ২/৪৮।

[12]. সুনানে আবি দাউদ, তাহক্বীক: নাছিরুদ্দীন আলবানী, হা/৪৪০৩, হাদীছ ছহীহ।

[13]. বুখারী, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি কিতাবে অহী শুরু হয়েছিল অধ্যায়, হা/১।

[14]. ছালেহ আল-ফাউযান, আল-মুলাক্ষাছুল ফিকহী, ১/৪১ পৃঃ; আল-ফিকহুল মুয়াস্সার, পৃঃ ১৮।

[15]. দারাকুতনী, হা/২৬৮, বায়হাক্বী, হা/২৫৬।

[16]. মুসলিম, ‘অযূর সময় মুখমন্ডল, কনুই ও পায়ের টাখনুর বাইরে একটু বেশী করে ধোয়া উত্তম’ অনুচ্ছেদ, হা/৬০২।

[17]. সুনানে ইবনে মাজাহ, তাহক্বীক্ব নাছিরুদ্দীন আলবানী, হা/৪৪৩, ছহীহ আবূদাঊদ, হা/১২৩, সিলসিলা ছহীহা হা/৩৬, ইরওয়াউল গালীল, হা/৮৪।

[18]. মুসলিম, ওযূর সময় মুখমন্ডল, কনুই ও পায়ের টাখনুর বাইরে একটু বেশী করে ধোয়া উত্তম অধ্যায়, হা/৬০২।

[19]. শারহুল মুমতে ১/১৮৩ পৃঃ, আল-মুলাক্ষাছুল ফিকহী ১/৪১ পৃঃ।

[20]. সুনানু আবী দাঊদ, তাহক্বীক্ব নাছিরুদ্দীন আলবানী, হা/১৭৫, হাদীছ ছহীহ, ইরওয়াউল গালীল, ১/১২৭।

[21]. বুখারী, ‘ছায়েমের জন্য কাঁচা বা শুকনো মিসওয়াক ব্যবহার করা’ অনুচ্ছেদ, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ২/৩০৮।

[22]. সুনানু আবী দাঊদ, তাহক্বীক: নাছিরুদ্দীন আলবানী, হা/১০১।

[23]. ছহীহ ফিকহুস সুন্নাহ ১/১২২ পৃঃ।

[24]. ইবনে কুদামা, আল-মুগনী ১/১৪৫ পৃঃ।

[25]. বুখারী, ‘বেজোড় সংখ্যক ঢিলা ব্যবহার করা’ অনুচ্ছেদ, হা/১৬২, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ১/৯৬।

[26]. আবুদাঊদ, হা/১৪২; নাসাঈ, হা/৮৭; নাছিরুদ্দীন আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন, ছহীহ নাসাঈ, হা/৮৫।

[27]. ছহীহ ইবনে হিববান, হা/১০৮২, বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা ১/১৯৬, মুসতাদরাক হাকেম ১/২৪৩; ছহীহ ইবনে খুযাইমা ১/৬২।

[28]. সুনানু ইবনে মাজাহ, তাহক্বীক: নাছিরুদ্দীন আলবানী, হা/৪২৯, হাদীছ ছহীহ।

[29]. সুনানু আবুদাঊদ, তাহক্বীক : নাছিরুদ্দীন আলবানী, হা/১৪৫, হাদীছ ছহীহ।

[30]. বুখারী, ‘মসজিদে প্রবেশ ও অন্যান্য কাজ ডান দিক হ’তে আরম্ভ করা’ অনুচ্ছেদ, হা/৪২৬, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ১/২১৭।

[31]. বুখারী, ‘অযূর মধ্যে একবার করে ধৌত করা’ অনুচ্ছেদ, হা/১৫৭, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ১/৯৫।

[32]. বুখারী, ‘অযূর মধ্যে দু’বার করে ধৌত করা’ অনুচ্ছেদ, হা/১৫৮, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ১/৯৫।

[33]. বুখারী, ‘অযূর মধ্যে তিনবার করে ধৌত করা’ অনুচ্ছেদ, হা/১৫৯, বাংলা অনুবাদ: তাওহীদ পাবলিকেশন্স ১/৯৫।

[34]. সুনানু ইবনে মাজাহ, ‘অযূর পরে কি বলবে’ অনুচ্ছেদ, তাহক্বীক: নাছিরুদ্দীন আলবানী হা/৪৭০, হাদীছ ছহীহ।






কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ঈমান (শেষ কিস্তি) - হাফেয আব্দুল মতীন - পিএইচ.ডি গবেষক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া
মানবাধিকার ও ইসলাম (১৬তম কিস্তি) - শামসুল আলম
আলেমগণের মধ্যে মতভেদের কারণ (২য় কিস্তি) - আব্দুল আলীম বিন কাওছার
আহলেহাদীছদের রাজনীতি : ইমারত ও খেলাফত - ড. নূরুল ইসলাম
কুরআন ও সুন্নাহর বিশ্বজনীন আদর্শ প্রতিষ্ঠায় যুবসমাজের ভূমিকা - শেখ ইমরান ইবনু মুয্যাম্মিল
ইসলামে তাক্বলীদের বিধান (২য় কিস্তি) - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
আমানত (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ভালবাসা (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - ইহসান ইলাহী যহীর
বিদ‘আতে হাসানার উদাহরণ : একটি পর্যালোচনা (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
ঈদায়নের কতিপয় মাসায়েল
সফল মাতা-পিতার জন্য যা করণীয় - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
যাকাত সম্পর্কিত বিবিধ মাসায়েল (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
আরও
আরও
.