মানবতার হেদায়াতের জন্য পৃথিবীতে আগত নবী-রাসূলগণের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল ছিলেন মুহাম্মাদ (ছাঃ)। যিনি এসে মানুষকে জীবনের মূল্যবোধ শিখিয়েছেন। জীবনের করণীয় সম্পর্কে অবহিত করেছেন। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যেকার সম্পর্ক জানিয়েছেন। স্রষ্টার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্ণনা করেছেন। যিনি ছিলেন পৃথিবীর মানুষের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ ও অনুকরণীয় নমুনা। মানুষকে মুক্তির পথের সঠিক সন্ধান দেওয়ার জন্য তিনি পৃথিবীতে এসেছিলেন রহমত হিসাবে। হাশরে যিনি উম্মতের একমাত্র শাফা‘আতকারী ও কান্ডারী। সেই মানবতার নবী, সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূলের প্রতি আচার-ব্যবহারে কিরূপ শিষ্টাচার বজায় রাখা দরকার, সে বিষয়ে এ নিবন্ধে আলোচনা করা হ’ল।-

১. রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি ঈমান আনা ও তাঁকে সত্যায়ন করা :

রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি সর্বপ্রধান ও সর্বশ্রেষ্ঠ আদব হচ্ছে তাঁর প্রতি একনিষ্ঠভাবে ঈমান আনয়ন করা। আর ঈমানের মূল হচ্ছে, তিনি যা নিয়ে এসেছেন, তা অকাট্যভাবে সত্যায়ন করা, তিনি যা সংবাদ দিয়েছেন তা বিশ্বাস করা, পূর্ববর্তী জাতি ও ভবিষ্যতে সংঘটিত হবে এমন গায়েব সম্পর্কে তিনি যে সকল খবর দিয়েছেন সেগুলোর সত্যতার ব্যাপারে নিশ্চিত বিশ্বাস পোষণ করা। কারণ তিনি যা বলেছেন সবই অহি (নাজম ৩-৪)। সুতরাং সেগুলোর প্রতি আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে সাথে মৌখিক স্বীকৃতিও প্রদান করতে হবে যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর রাসূল। ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকৃত মুমিন হবে না, যতক্ষণ না সে নবী করীম (ছাঃ) আনীত বিষয়গুলিকে স্বীকৃতি প্রদান করবে। আর এটাই হচ্ছে শাহাদাতাইন (আল্লাহ ব্যতীত উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর রাসূল)-এর প্রকৃত তাৎপর্য। সুতরাং যে ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, তিনি আল্লাহর রাসূল, তখন সে এ সত্যায়নও করবে যে, তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সংবাদ দিয়েছেন তা সত্য-সঠিক। কেননা এটাই হ’ল রেসালাতের প্রতি সাক্ষ্য দানের তাৎপর্য। এই নিশ্চিত বিশ্বাসের প্রতি আহবান করে আল্লাহ বলেন,

آمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُولِهِ وَأَنْفِقُوْا مِمَّا جَعَلَكُمْ مُسْتَخْلَفِيْنَ فِيْهِ فَالَّذِيْنَ آمَنُوْا مِنْكُمْ وَأَنْفَقُوْا لَهُمْ أَجْرٌ كَبِيْرٌ، وَمَا لَكُمْ لَا تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالرَّسُولُ يَدْعُوكُمْ لِتُؤْمِنُوْا بِرَبِّكُمْ وَقَدْ أَخَذَ مِيْثَاقَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِيْنَ-

‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন কর। আর তোমাদেরকে তিনি যেসব (মাল-সম্পদের) উত্তরাধিকারী করেছেন, তা থেকে ব্যয় কর। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও (আল্লাহর পথে) খরচ করে, তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরষ্কার। তোমাদের কি হ’ল যে, তোমরা আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করছ না? অথচ রাসূল তোমাদেরকে তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের আহবান জানাচ্ছেন। আর তিনি তো (আগেই) তোমাদের (নিকট থেকে) অঙ্গীকার দিয়েছেন, যদি তোমরা (তাতে) বিশ্বাসী হও’ (হাদীদ ৫৭/৭-৮)। অন্যত্র তিনি বলেন,فَآمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُولِهِ وَالنُّوْرِ الَّذِيْ أَنْزَلْنَا وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ، ‘অতএব তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের এবং আমি যে নূর অবতীর্ণ করেছি তার প্রতি ঈমান আন। আর তোমরা যে আমল করছ আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত’ (তাগাবুন ৬৪/৮)। অন্যত্র আল্লাহ আরো বলেন,

يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا آمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِيْ نَزَّلَ عَلَى رَسُوْلِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِيْ أَنْزَلَ مِنْ قَبْلُ وَمَنْ يَكْفُرْ بِاللهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيْدًا

‘হে মুমিনগণ! তোমরা পরিপূর্ণরূপে বিশ্বাস স্থাপন কর আল্লাহর উপরে, তাঁর রাসূলের উপরে এবং ঐ কিতাবের উপরে, যা তিনি নাযিল করেছেন স্বীয় রাসূলের উপর এবং ঐ সকল কিতাবের উপরে, যা তিনি নাযিল করেছিলেন ইতিপূর্বে। আর যে কেউ অবিশ্বাস করে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাগণের উপর, তাঁর কিতাবসমূহের উপর, তাঁর রাসূলগণের উপর ও ক্বিয়ামত দিবসের উপর, সে দূরতম ভ্রষ্টতায় নিপতিত হ’ল’ (নিসা ৪/১৩৬)

রাসূল (ছাঃ)-এর উপরে ঈমান না আনার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَالَّذِىْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ يَسْمَعُ بِىْ أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الأُمَّةِ يَهُوْدِىٌّ وَلاَ نَصْرَانِىٌّ ثُمَّ يَمُوْتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِى أُرْسِلْتُ بِهِ إِلاَّ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ. ‘যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ আছে, সেই সত্তার কসম! এই উম্মতের যে কেউ ইহুদী হোক বা খ্রিস্টান আমার কথা শুনবে, অতঃপর মৃত্যুবরণ করবে। কিন্তু যা নিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি, তার প্রতি ঈমান আনবে না, সেই জাহান্নামবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে’।[1]

২. তাঁর সর্বাত্মক আনুগত্য ও অনুসরণ করা :

যাবতীয় কথা-কর্মে রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণ করতে হবে এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাঁর নির্দেশনা মোতাবেক চলতে হবে। তাঁরই অনুসরণে জীবন গড়তে হবে। রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন,

يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَطِيْعُوْا اللهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيْلاً

‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের ও তোমাদের নেতৃবৃন্দের। অতঃপর যদি কোন বিষয়ে তোমরা বিতন্ডা কর, তাহ’লে বিষয়টি আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। এটাই কল্যাণকর ও পরিণতির দিক দিয়ে সর্বোত্তম’ (নিসা ৪/৫৯)

তিনি আরো বলেন, قُلْ أَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوْا الرَّسُوْلَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا عَلَيْهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُمْ وَإِنْ تُطِيعُوْهُ تَهْتَدُوْا وَمَا عَلَى الرَّسُولِ إِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِيْنُ، ‘বল, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহ’লে তার দায়িত্বের জন্য তিনি দায়ী এবং তোমাদের দায়িত্বের জন্য তোমরা দায়ী। আর যদি তোমরা তার আনুগত্য কর তাহ’লে তোমরা সুপথ প্রাপ্ত হবে। বস্ত্ততঃ রাসূলের উপর দায়িত্ব হ’ল কেবল সুস্পষ্টভাবে (আল্লাহর বাণী) পৌঁছে দেওয়া’ (নূর ২৪/৫৪)

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, كُلُّ أُمَّتِى يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ، إِلاَّ مَنْ أَبَى. قَالُوْا يَا رَسُولَ اللهِ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِى دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِى فَقَدْ أَبَى. ‘আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে। তারা (ছাহাবীগণ) বললেন, কে অস্বীকার করবে। তিনি বললেন, যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে’।[2]

৩. রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয় পরিহার করা :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যা নিষেধ করেছেন সেসব পরিহার করা আবশ্যক। কারণ তাঁর যাবতীয় আদেশ প্রতিপালন এবং তাঁর নিষেধ পরিত্যাগ করা সকল মানুষের উপরে ফরয করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا، ‘আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা হ’তে বিরত থাক’ (হাশর ৫৯/৭)

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيْرًا، ‘সুপথ স্পষ্ট হওয়ার পর যে ব্যক্তি রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মুমিনদের বিপরীত পথে চলে, আমরা তাকে ঐদিকেই ফিরিয়ে দেই যেদিকে সে যেতে চায় এবং তাকে আমরা জাহান্নামে প্রবেশ করাব। আর সেটা হ’ল নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল’ (নিসা ৪/১১৫)

রাসূল (ছাঃ)-এর আদেশ-নিষেধ না মেনে তাঁর বিরোধিতা করলে পরকালে কঠিন শাস্তির কথা স্মরণ করিয়ে আল্লাহ মানব জাতিকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন,فَلْيَحْذَرِ الَّذِيْنَ يُخَالِفُوْنَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيْبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيْبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ، ‘অতএব যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সাবধান হৌক যে, ফিৎনা তাদেরকে গ্রাস করবে অথবা মর্মন্তুদ শাস্তি তাদের উপর আপতিত হবে’ (নূর ২৪/৬৩)

৪. রাসূল (ছাঃ)-কে সম্মান করা :

রাসূল (ছাঃ)-কে সর্বাধিক সম্মান করতে হবে। কেননা রাসূল (ছাঃ)-এর সম্মান-মর্যাদা মানব হৃদয়ে প্রোথিত হ’লে, মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাঁর অনুসরণ ও অনুকরণে তৎপর হবে। এজন্যই আল্লাহ মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন রাসূল (ছাঃ)-কে সম্মান করার। কারণ রাসূল (ছাঃ)-কে সম্মান করার ফলাফল হচ্ছে তাঁর অনুসরণ-অনুকরণ ও তাঁকে সাহায্য করা ইত্যাদি। এজন্য আল্লাহ বলেন,فَالَّذِيْنَ آمَنُوْا بِهِ وَعَزَّرُوْهُ وَنَصَرُوْهُ وَاتَّبَعُوا النُّوْرَ الَّذِيْ أُنْزِلَ مَعَهُ أُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ، ‘অতএব যারা তার উপরে বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তাকে শত্রু থেকে প্রতিরোধ করেছে ও সাহায্য করেছে এবং সেই জ্যোতির (কুরআনের) অনুসরণ করেছে যা তার সাথে নাযিল হয়েছে, তারাই হ’ল সফলকাম’ (আ‘রাফ ৭/১৫৭)

ছাহাবীগণের কাছে রাসূল (ছাঃ)-এর মর্যাদা ছিল অতুলনীয়। উরওয়াহ ইবনু মাসঊদ বলল, আল্লাহর কসম! আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কখনো থুথু ফেললে তা ছাহাবীদের হাতে পড়তো এবং তা তারা গায়ে মুখে মেখে ফেলতেন। তিনি তাঁদের কোন আদেশ দিলে তা তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে পালন করতেন। তিনি ওযূ করলে তাঁর ওযূর পানির জন্য ছাহাবীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হ’ত। তিনি যখন কথা বলতেন, তখন তাঁরা নীরবে তা শুনতেন এবং তাঁর সম্মানার্থে ছাহাবীগণ তাঁর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেন না। অতঃপর উরওয়াহ তার সঙ্গীদের নিকট ফিরে গেল এবং বলল, হে আমার কওম, আল্লাহর কসম! আমি অনেক রাজা-বাদশাহর নিকটে প্রতিনিধিত্ব করেছি। কায়সার, কিসরা ও নাজাশী সম্রাটের নিকটে দূত হিসাবে গিয়েছি। কিন্তু আল্লাহর কসম করে বলতে পারি যে, কোন রাজা-বাদশাকেই তার অনুসারীদের মত এত সম্মান করতে দেখিনি, যেমন মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর অনুসারীরা তাঁকে করে থাকে। আল্লাহর কসম! আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) যদি থুথু ফেলেন, তখন তা কোন ছাহাবীর হাতে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে তারা তা তাদের গায়ে মুখে মেখে ফেলেন। তিনি কোন আদেশ দিলে তারা তা সঙ্গে সঙ্গে পালন করেন। তিনি ওযূ করলে তাঁর ওযূর পানি নিয়ে ছাহাবীগণের মধ্যে প্রতিযোগতিা শুরু হয়। তিনি কথা বললে, ছাহাবীগণ নিশ্চুপ হয়ে শুনেন। এমনকি তাঁর সম্মানার্থে তারা তাঁর চেহারার দিকেও তাকান না’।[3]

৫. তাঁকে সর্বাধিক মহববত করা :

নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে যথার্থভাবে ভালবাসতে হবে। পৃথিবীর কোন কবীরা গোনাগার, ফাসেক মুসলমানকেও যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে, তুমি কি রাসূলকে ভালবাস? সে অবশ্যই বলবে, হ্যাঁ, আমি রাসূলকে ভালবাসি। একথা সে এজন্য বলবে কারণ সে মহাববতের অর্থ জানে না। রাসূলের ভালবাসার দু’টি স্তর আছে। যথা- ১. আছলুল মুহাববাহ (মৌলিক ভালবাসা), যার দ্বারা একজন মানুষ মুমিন বা বিশ্বাসী হয়। ২. হাক্বীক্বাতুল মুহাববাহ (তাৎপর্যপূর্ণ ভালবাসা), যার দ্বারা একজন মানুষ মুসলিম বা আত্মসমর্পণকারী হয়। কারো মাঝে রাসূলের প্রতি মৌলিক ভালবাসা না থাকলে সে কাফের হবে। ফলে এমন কোন মুমিন পাওয়া যাবে না, যে একথা বলে যে, আমি রাসূলকে ভালবাসি না। আর তাৎপর্যপূর্ণ ভালবাসার আদেশই আল্লাহ দিয়েছেন। যার উপরে ভিত্তি করেই পরকালে বান্দার হিসাব হবে, বিচার হবে। পুরস্কৃত বা তিরস্কৃত হবে, জান্নাতী বা জাহান্নামী হবে। এ ভালবাসা শুধু মুখে উচ্চারণ করা ভালবাসা নয়। যেমন- আল্লাহ বলেন,قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعُونِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ ‘তুমি বল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহ’লে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন ও তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (আলে ইমরান ৩/৩১)। সুতরাং রাসূলের প্রতি মুহাববত বলতে কেবল তাঁর প্রশংসা করা ও তাঁর প্রচার করা, তাঁর সীরাত আলোচনা করা ইত্যাদিকে বুঝায় না। বরং তাঁর প্রকৃত ভালবাসা হ’ল তাঁর সুন্নাতকে পুনরুজ্জীবিত করা, তাঁর তরীকার অনুসরণ করা, তাঁর সুন্নাতের বিরোধীদের মোকাবেলা করা, সুন্নাতের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখা এবং তাঁর উম্মতের অসম্মান দূর করা ইত্যাদি। আর এ ধরণের ভালবাসার নির্দেশই এসেছে পবিত্র কুরআনে। আল্লাহ বলেন,

قُلْ إِنْ كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِيْ سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوْا حَتَّى يَأْتِيَ اللهُ بِأَمْرِهِ وَاللهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِيْنَ

‘তুমি বলে দাও, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, পুত্র, ভাই, স্ত্রী, স্বগোত্র ও ধন-সম্পদ যা তোমরা অর্জন কর, ব্যবসা যা তোমরা বন্ধ হবার আশংকা কর এবং বাড়ী-ঘর যা তোমরা পসন্দ কর- আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর রাস্তায় জিহাদ করা হ’তে অধিক প্রিয় হয়। তাহ’লে তোমরা অপেক্ষা কর আল্লাহর নির্দেশ (আযাব) আসা পর্যন্ত। বস্ত্ততঃ আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে সুপথ প্রদর্শন করেন না’ (তওবা ৯/২৪)

আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ. ‘তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা, তার সন্তান ও সব মানুষ অপেক্ষা অধিক প্রিয়তর হই’।[4] আরেকটি হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَنَسٍ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيْهِ وَجَدَ حَلاَوَةَ الإِيْمَانِ أَنْ يَكُوْنَ اللهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إِلاَّ لِلَّهِ، وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِى الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِى النَّارِ

আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘তিনটি গুণ যার মধ্যে আছে, সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে- ১. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার নিকট অন্য সকল কিছু হ’তে অধিক প্রিয় হওয়া, ২. কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালবাসা, ৩. কুফরীতে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হবার মত অপসন্দ করা’।[5] সুতরাং নবীর প্রতি প্রকৃত ভালবাসা হচ্ছে নিজের মনের চাহিদা, কামনা-বাসনার উপরে রাসূলের অনুসরণকে প্রাধান্য দেওয়া; পিতা-মাতার আনুগত্যের উপরে রাসূলের আনুগত্যকে এবং স্ত্রী-সন্তানের চাওয়া-পাওয়া ও সন্তুষ্টির উপরে রাসূলের নির্দেশকে অগ্রাধিকার দেওয়া।

আব্দুল্লাহ ইবনু হিশাম (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كُنَّا مَعَ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم وَهْوَ آخِذٌ بِيَدِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فَقَالَ لَهُ عُمَرُ يَا رَسُولَ اللهِ لأَنْتَ أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ إِلاَّ مِنْ نَفْسِى فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم لاَ وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ حَتَّى أَكُوْنَ أَحَبَّ إِلَيْكَ مِنْ نَفْسِكَ فَقَالَ لَهُ عُمَرُ فَإِنَّهُ الآنَ وَاللهِ لأَنْتَ أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ نَفْسِى فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم الآنَ يَا عُمَرُ

‘আমরা একবার নবী করীম (ছাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি তখন ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর হাত ধরেছিলেন। ওমর (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার জান ব্যতীত আপনি আমার কাছে সবকিছু অপেক্ষা অধিক প্রিয়। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, না, যাঁর হাতে আমার প্রাণ ঐ সত্তার কসম! যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে তোমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় হব ততক্ষণ তুমি পূর্ণ মমিন হবে না। তখন ওমর (রাঃ) তাঁকে বললেন, আল্লাহর কসম! এখন আপনি আমার কাছে আমার প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয়। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, হে ওমর! এখন (তুমি সত্যিকার ঈমানদার হ’লে)’।[6]

৬. তাঁর থেকে অগ্রগামী না হওয়া :

রাসূলের থেকে অগ্রগামী না হওয়া অর্থ জীবদ্দশায় তাঁর আদেশ-নিষেধ, অনুমতি ও কর্মকান্ডের অগ্রগামী না হওয়া। তাঁর আদেশ বা অনুমতি কোন কিছু আগ বেড়ে না করা। তেমনি তাঁর নিষেধ ব্যতীত ইসলামের কোন কাজ পরিত্যাগ না করা। ক্বিয়ামত পর্যন্ত এ বিধান বলবৎ থাকবে, এটা রহিত হয়নি। অনুরূপভাবে তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর রেখে যাওয়া সুন্নাতের অগ্রগামী হওয়া যাবে না। সুতরাং তাঁর জীবদ্দশায় যেমন এ হুকুম জারী ছিল। তাঁর মৃত্যুর পরে তা অনুরূপই বহাল থাকবে। যে ব্যাপারে নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا تُقَدِّمُوْا بَيْنَ يَدَيِ اللهِ وَرَسُولِهِ وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আগে বেড়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন’ (হুজুরাত ৪৯/১)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,لاَ تَقُوْلُوْا خِلاَفَ الْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ. ‘কুরআন ও সুন্নাতের পরিপন্থী কিছু বল না’।[7]

আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, আল্লাহ ও রাসূলের অগ্রগামী হওয়ার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ অবগত হওয়ার পূর্বে কোন কাজ করা। তিনি বলেন, তোমরা বল না, যতক্ষণ না তিনি বলেন, তোমরা নির্দেশ দিও না যতক্ষণ না তিনি নির্দেশ দেন, তোমরা ফৎওয়া দিও না যতক্ষণ না তিনি ফৎওয়া দেন, কোন বিষয় তোমরা বাস্তবায়ন কর না যতক্ষণ না সে বিষয়ে তাঁর হুকুম বা ফায়ছালা পাওয়া যায়।[8] মোটকথা রাসূলের সুন্নাত অবগত হওয়ার পূর্বে নিজের ইচ্ছামত কোন আমল না করা।

৭. রাসূল (ছাঃ)-এর কণ্ঠস্বরের উপরে কণ্ঠস্বর উঁচু না করা :

রাসূলের আওয়াজের উপরে আওয়াজ উচ্চ করা যাবে না। কারণ তাতে আমল বাতিল হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا تَرْفَعُوْا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوْا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَنْ تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تَشْعُرُوْنَ، ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপরে তোমাদের কণ্ঠস্বর উঁচু কর না এবং তোমরা পরস্পরে যেভাবে উঁচুস্বরে কথা বল, তার সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বল না। এতে তোমাদের কর্মফল সমূহ বিনষ্ট হবে। অথচ তোমরা জানতে পারবে না’ (হুজুরাত ৪৯/২)। এ ব্যাপারে ছাহাবীগণ অতি সজাগ ছিলেন। যেমন উপরোক্ত আয়াত নাযিল হওয়া সম্পর্কে বুখারীতে এসেছে, ইবনু আবূ মুলায়কাহ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, উত্তম দু’ব্যক্তি- আবূবকর ও ওমর (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে কণ্ঠস্বর উঁচু করে ধ্বংস হওয়ার দ্বার প্রান্তে উপনীত হয়েছিলেন। যখন বানী তামীম গোত্রের একদল লোক নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে এসেছিল। তাদের একজন বানী মাজাশে গোত্রের আকরা ইবনু হাবিসকে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তাব করল এবং অপরজন অন্য জনের নাম প্রস্তাব করল। নাফে‘ বলেন, এ লোকটির নাম আমার মনে নেই। তখন আবূ বকর ছিদ্দীক (রাঃ) ওমর (রাঃ)-কে বললেন, আপনার ইচ্ছা হ’ল কেবল আমার বিরোধিতা করা। তিনি বললেন, না, আপনার বিরোধিতা করার ইচ্ছা আমার নেই। এ ব্যাপারটি নিয়ে তাঁদের আওয়াজ উঁচু হয়ে গেল। তখন আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপরে তোমাদের কণ্ঠস্বর উঁচু কর না’ ... শেষ পর্যন্ত।

ইবনু যুবায়ের (রাঃ) বলেন, এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর ওমর (রাঃ) এত আস্তে কথা বলতেন যে, দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তা শুনতে পেতেন না’।[9]

আরেকটি হাদীছে এসেছে, আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, এ আয়াত- (অর্থ) ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপরে তোমাদের কণ্ঠস্বর উঁচু কর না এবং তোমরা পরস্পরে যেভাবে উঁচুস্বরে কথা বল, তার সাথে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বল না। এতে তোমাদের কর্মফল সমূহ বিনষ্ট হবে। অথচ তোমরা জানতে পারবে না’ (হুজরাত ৪৯/২) নাযিল হ’লে ছাবিত বিন ক্বায়েস (রাঃ) স্বীয় ঘরে বসে গেলেন এবং বলতে লাগলেন, আমি একজন জাহান্নামী। এরপর থেকে তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন।

একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছাহাবী সা‘দ ইবনু মু‘আযকে ছাবিত (রাঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে বললেন, হে আবূ আমর! ছাবিতের কি হ’ল? সা‘দ (রাঃ) বললেন, সে তো আমার প্রতিবেশী, তার কোন অসুখ হয়েছে বলে তো জানি না। আনাস (রাঃ) বলেন, পরে সা‘দ (রাঃ) ছাবিতের কাছে গেলেন এবং তার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বক্তব্য উল্লেখ করলেন। ছাবিত (রাঃ) বললেন, এ আয়াত নাযিল হয়েছে। আর তোমরা জান, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর আমার কন্ঠস্বর সবচেয়ে উঁচু হয়ে যায়। সুতরাং আমি তো জাহান্নামী। সা‘দ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এসে ছাবিতের কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তখন বললেন, না, বরং সে তো জান্নাতী’।[10]

অতএব রাসূল (ছাঃ)-এর জীবদ্দশায় যেমন তাঁর সামনে কণ্ঠস্বর উঁচু করা নিষিদ্ধ ছিল, তেমনি তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর রেখে যাওয়া হাদীছের বিপরীতে উচ্চবাচ্য করা যাবে না। বরং হাদীছের নির্দেশ মাথা পেতে মেনে নিতে হবে।

৮. রাসূলের আহবানকে অন্যের ন্যায় না ভাবা :

রাসূল (ছাঃ)-এর আহবানকে সাধারণ মানুষের আহবানের ন্যায় ভাবা যাবে না। বরং রাসূল (ছাঃ)-এর আহবানকে তথা হাদীছকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। আল্লাহ বলেন,لَا تَجْعَلُوا دُعَاءَ الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا، ‘রাসূলের প্রতি আহবানকে তোমরা পরস্পরের প্রতি আহবানের ন্যায় গণ্য কর না’ (নূর ২৪/৬৩)। এ আয়াতের দু’টি অর্থ হ’তে পারে- ১. পরস্পরকে ডাকার ন্যায় রাসূলকেও তাঁর নাম ধরে না ডাকা। বরং হে আল্লাহর রাসূল, হে আল্লাহর নবী এভাবে ডাকা। অনুরূপভাবে তাঁর কথা-কাজের খবর দেওয়ার সময়ও ‘মুহাম্মাদ বলেছেন’ বা ‘মুহাম্মাদ করেছেন’ এভাবে না বলে বরং সম্মানসূচকভাবে বলা যে, আল্লাহর রাসূল, আল্লাহর নবী বা নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন বা করেছেন বলা যরূরী। কেননা আল্লাহ কুরআনে আদম (বাক্বারাহ ২/৩৩), নূহ (হূদ ১১/৪৮), ইবরাহীম (হূদ ১১/৭৬), মূসা (আ‘রাফ ৭/১৪৪), ঈসা (আলে ইমরান ৩/৫৫), দাঊদ (ছোয়াদ ২৬/২৬) প্রমুখ নবী-রাসূলগণের নাম ধরে সম্বোধন করেছেন। কিন্তু নবী করীম (ছাঃ)-এর নাম উল্লেখ করে অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ! বলে কোথাও তিনি সম্বোধন করেননি। বরং হে নবী, হে রাসূল ইত্যাদি বলেছেন।

২. রাসূল (ছাঃ)-এর আহবানকে অন্যের আহবানের মত মনে না করা। বরং তাঁর আহবানকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হবে। যেমন একটি হাদীছে এসেছে, আবূ সাঈদ ইবনু মুআল্লা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা মসজিদে নববীতে ছালাত আদায় করছিলাম, এমন সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে ডাকেন। কিন্তু ডাকে আমি সাড়া দেইনি। পরে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি ছালাত আদায় করছিলাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ কি বলেননি যে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আহবানে সাড়া দাও। যখন তিনি তোমাদের আহবান করেন ঐ বিষয়ের দিকে, যা তোমাদের (মৃত অন্তরে) জীবন দান করে’ (আনফাল ৮/২৪)। তারপর তিনি আমাকে বললেন, তুমি মাসজিদ থেকে বের হওয়ার আগেই তোমাকে আমি কুরআনের একটি অতি মহান সূরা শিক্ষা দিব’।[11] অতএব রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে এবং তদনুযায়ী আমল করতে হবে।

৯. অনুমতি ব্যতীত তাঁর মজলিস ত্যাগ না করা :

নবী করীম (ছাঃ)-এর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কোন মজলিস ত্যাগ করা যাবে না। আল্লাহ বলেন,

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللهِ وَرَسُولِهِ وَإِذَا كَانُوا مَعَهُ عَلَى أَمْرٍ جَامِعٍ لَمْ يَذْهَبُوا حَتَّى يَسْتَأْذِنُوهُ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَأْذِنُونَكَ أُولَئِكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَرَسُولِهِ فَإِذَا اسْتَأْذَنُوكَ لِبَعْضِ شَأْنِهِمْ فَأْذَنْ لِمَنْ شِئْتَ مِنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمُ اللهَ إِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ

‘মুমিন তো কেবল তারাই, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং যখন তারা তার সঙ্গে কোন সমষ্টিগত গুরুত্বপূর্ণ কাজে সাথী হয়, তখন তারা চলে যায় না তার কাছ থেকে অনুমতি না নেওয়া পর্যন্ত। নিশ্চয়ই যারা তোমার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে, তারাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাসী। অতএব তারা তাদের কোন কাজে তোমার নিকট অনুমতি চাইলে তাদেরকে তুমি অনুমতি দাও যাকে চাও। আর তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (নূর ২৪/৬২)

অর্থাৎ রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে সমষ্টিগতভাবে উপস্থিত থাকলে আসন্ন জিহাদ, ছালাত বা পরামর্শ বৈঠকে সমবেত হ’লে রাসূল (ছাঃ)-এর অনুমতি ব্যতীত উদ্দিষ্ট কাজ শেষ না করে স্থান ত্যাগ করবে না।[12]

১০. তাঁর কথার বিরোধিতা না করা :

তাঁর কথা বা কাজের বিরোধিতা বা পরিপন্থী কাজ করা যাবে না। মানুষের কথা, রায়, সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হ’তে পারে কিন্তু তাঁর কোন কথা, রায় বা সিদ্ধান্তের পরিবর্তন, পরিবর্ধন করা যাবে না। করলে ইহকালে ও পরকালে ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ বলেন,فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيْبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيْبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ، ‘অতএব যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সাবধান হৌক যে, ফিৎনা তাদেরকে গ্রাস করবে অথবা মর্মন্তুদ শাস্তি তাদের উপর আপতিত হবে’ (নূর ২৪/৬৩)। একটি হাদীছে এসেছে,

জাবের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওমর (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, আমরা ইহুদীদের নিকট তাদের অনেক ধর্মীয় কথাবার্তা শুনে থাকি। এসব আমাদের কাছে অনেক ভাল মনে হয়। এসব কথার কিছু কি লিখে রাখার জন্য আমাদেরকে অনুমতি দিবেন? তিনি বললেন,أَمُتَهَوِّكُونَ فِيهَا يَا ابْنَ الْخَطَّابِ وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لَقَدْ جِئْتُكُمْ بِهَا بَيْضَاءَ نَقِيَّةً لاَ تَسْأَلُوهُمْ عَنْ شَىْءٍ فَيُخْبِرُوكُمْ بِحَقٍّ فَتُكَذِّبُوْا بِهِ أَوْ بِبَاطِلٍ فَتُصَدِّقُوْا بِهِ وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لَوْ أَنَّ مُوسَى صلى الله عليه وسلم كَانَ حَيًّا مَا وَسِعَهُ إِلاَّ أَنْ يَتَّبِعَنِى، ইহুদী ও নাছারাগণ যেভাবে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, তোমরাও কি (তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে) এভাবে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছ? আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের কাছে একটি অতি উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ দ্বীন নিয়ে এসেছি। মূসা (আঃ)ও যদি আজ দুনিয়ায় বেঁচে থাকতেন, আমার অনুসরণ ব্যতীত তাঁর কোন উপায় ছিল না’।[13]

অর্থাৎ ক্বিয়াসের দ্বারা হাদীছের বিপরীত করা বা হাদীছের পরিপন্থী কাজ করা যাবে না। বরং ক্বিয়াস বাতিল হবে, হাদীছ-সুন্নাত বহাল থাকবে। কোন ইমাম, ওলী, আলেমের দোহাই দিয়ে রাসূলের কথা-কাজের কোন পরিবর্তন করা যাবে না। কিংবা মনের খেয়াল-খুশিমত তা বদলানো যাবে না।

১১. নাম শুনলেই তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ করা :

তাঁর নাম শুনলেই দরূদ পড়তে হবে। কেননা তিনি আমাদেরকে হকের দিকে, আল্লাহর দিকে পথ দেখিয়েছেন। আল্লাহর সন্তোষের পথের নির্দেশনা দিয়েছেন এবং তাঁর অসন্তোষের পথ থেকে সতর্ক করেছেন। এজন্য তাঁর প্রতি দরূদ পড়তে হবে। আল্লাহ বলেন,إِنَّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلَى النَّبِيِّ يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا صَلُّوْا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا، ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরূদ প্রেরণ করেন। (অতএব) হে মুমিনগণ! তোমরা তার প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণ কর’ (আহযাব ৩৩/৫৬)। এখানে আল্লাহর পক্ষ হ’তে দরূদ অর্থ তাঁর রহমত ও সন্তুষ্টি এবং ফেরেশতাগণের পক্ষ হ’তে দরূদ অর্থ দো‘আ ও ক্ষমা প্রার্থনা।[14]

হাদীছে এসেছে, আলী ইবনু আবী তালিব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,الْبَخِيلُ الَّذِى مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَىَّ ‘কৃপণ সেই লোক যার কাছে আমার আলোচনা করা হয়, অথচ সে আমার উপর দরূদ পড়ে না’।[15]

১২. তাঁর পরিবার-পরিজনকে সম্মান করা :

নবী করীম (ছাঃ)-এর পরিবার-পরিজনকে যথাযোগ্য সম্মান করা। কারণ মহান আল্লাহ স্বয়ং তাদেরকে সম্মানিত করেছেন। আল্লাহ বলেন,إِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرًا، ‘হে নবী পরিবার! আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পবিত্র করতে’ (আহযাব ৩৩/৩৩)

তিনি আরো বলেন,يَانِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِيْ فِيْ قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوْفًا، ‘হে নবীপতণীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও। যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পর পুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে কথা বল না। তাহ’লে যার অন্তরে রোগ আছে, সে প্রলুব্ধ হয়ে পড়বে। অতএব তোমরা সঙ্গত কথা বল’ (আহযাব ৩৩/৩২)

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত একটি হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لا يُبْغِضُنَا أهْلَ الْبَيْتِ رَجُل إِلاَّ أدْخَلَهُ اللهُ النَّارَ، ‘সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমার পরিবার-পরিজনের প্রতি যে ব্যক্তিই বিদ্বেষ পোষণ করবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন’।[16]

পরিশেষে বলব, রাসূল (ছাঃ) এ পৃথিবীতে এসেছিলেন মানবতার হেদায়াতের জন্য। তাঁর অনুসরণ করার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নিজেও বলেছেন যে, পরকালে মুক্তির জন্য তাঁর অনুসরণ ব্যতীত কোন গত্যন্তর নেই। সুতরাং রাসূল (ছাঃ)-এর যথাযথ অনুসরণের মধ্যেই তাঁর প্রতি আদব বা শিষ্টাচার প্রতিপালিত হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রাসূলের প্রতি আদব পালনের তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!


[1]. মুসলিম হা/১৫৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৭০৬৩।

[2]. বুখারী হা/৭২৮০; মিশকাত হা/১৪৩।

[3]. বুখারী হা/২৭৩১-৩২।

[4]. বুখারী হা/১৫; মুসলিম হা/৪৪; মিশকাত হা/৭।

[5]. বুখারী হা/১৬, ২১, ৬০৪১, ৬৯৪১; মুসলিম হা/৪৩; আহমাদ হা/১২০০২।

[6]. বুখারী হা/৬৬৩২।

[7]. হাফেয ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ৭/৩৬৪ পৃঃ।

[8]. মাজমূউল কাইয়েম মিন কালামে ইবনিল কাইয়েম, (রিয়ায : দারু ত্বাইয়েবাহ, ১ম প্রকাশ ১৪২৬হি./২০০৫খ্রি.), ১ম খন্ড, পৃঃ ৯৭০; ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন, ১/৫৮ পৃঃ।

[9]. বুখারী হা/৪৮৪৫, ৪৩৬৭।

[10]. মুসলিম হা/১১৯; আহমাদ হা/১২৫০২।

[11]. বুখারী হা/৪৪৭৪; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৪৫২।

[12]. তাফসীর তাবারী ১৯/২২৮ পৃঃ।

[13]. আহমাদ হা/১৪৭৩৬; মিশকাত হা/১৭৭; ইরওয়াউল গালীল হা/১৫৮৯, হাদীছ হাসান ।

[14]. তাফসীর ইবনে কাছীর, ৬/৪৫৭, আহযাব ৫৬ আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ।

[15]. তিরমিযী হা/৩৫৪৬; মিশকাত হা/৯৩৩, হাদীছ ছহীহ।

[16]. ছহীহ ইবনে হিববান হা/৬৯৭৮; ছহীহাহ হা/২৪৮৮।







বিষয়সমূহ: শিষ্টাচার
দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ ভেঙ্গে দিচ্ছে ভারত - আহমদ সালাহউদ্দীন
মাদ্রাসার পাঠ্যবই সমূহের অন্তরালে (৫ম কিস্তি) - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
পাপাচার থেকে পরিত্রাণের উপায় সমূহ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
পবিত্র রামাযান : আল্লাহর সান্নিধ্যে ফিরে আসার মাস - ড. মুহাম্মাদ নযরুল ইসলাম খান, আমেরিকা
ঘোড়ার গোশত : হালাল নাকি হারাম? একটি পর্যালোচনা - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
আক্বীদা ও আহকামে হাদীছের প্রামাণ্যতা (৭ম কিস্তি) - মীযানুর রহমান মাদানী
আলেমের গুরুত্ব ও মর্যাদা - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত পরিচিতি (৬ষ্ঠ কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
শায়খ আলবানীর তাৎপর্যপূর্ণ কিছু মন্তব্য (১ম কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
কুরআন ও হাদীছের আলোকে ‘সোনামণি’র ৫টি নীতিবাক্য - ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম
আল্লামা আলবানী সম্পর্কে শায়খ শু‘আইব আরনাঊত্বের সমালোচনার জবাব (৫ম কিস্তি) - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
প্রসঙ্গ : মাসিক আত-তাহরীক - মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম প্রধান
আরও
আরও
.