পর্ব ১। শেষ পর্ব। 

চতুর্থ অভিযান :

কন্সটান্টিনোপল বিজয়ের তৃতীয় অভিযান ব্যর্থ হওয়ার পর দীর্ঘ প্রায় সাড়ে সাতশ’ বছর মুসলমানরা এ প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকে। যদিও ওছমানীয় সুলতান বায়েজীদ এ ব্যাপারে কিছু প্রচেষ্টা চালান। তবে তা ব্যর্থ হয়।

অতঃপর ১৬ই মুহাররম ৮৫৫ হিজরী মোতাবেক ১৪৫১ খৃষ্টাব্দে মুহাম্মাদ আল-ফাতেহ সুলতান হিসাবে সিংহাসনে আরোহণ করেন।[1] তাঁর বয়স তখন মাত্র ২২ বছর। নিজের একান্ত শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষাগুরু শায়েখ আক্ব শামসুদ্দীনের সান্নিধ্যে বাল্যকাল থেকেই কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের অনুপ্রেরণা পেয়ে এসেছেন। তাই সিংহাসনে বসেই তিনি তার সেই সুপ্ত বাসনা বাস্তবায়নের ছক আঁকতে শুরু করেন। ফলে কন্সটান্টিনোপল বিজয়ই যুবক সুলতানের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে ওঠে।

সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মাদ যে সময়টাতে খেলাফতের দায়িত্ব নেন, তখন ইউরোপের পরাশক্তিগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডে প্রায় ১০০ বছর ধরে যুদ্ধ চলছিল। জার্মানি, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরী- এই দেশগুলোও নিজেদের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে সামরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তখন বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অবস্থাও ছিল একেবারে নাজুক। কনস্টান্টিনোপলই ছিল তাদের সর্বশেষ আশ্রয়।

মুহাম্মাদ ছিলেন যেমন দুঃসাহসী, তেমনি বিচক্ষণ। বয়সে তরুণ হ’লেও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ভালই ছিল। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এ মুহূর্তে কনস্টান্টিনোপল আক্রমণ করলে নড়বড়ে বাইজান্টাইনীরা ঠিকঠাক প্রতিরোধ করে উঠতে পারবে না। ওদিকে ইউরোপের অন্য দেশগুলোও নিজেদের যুদ্ধ ফেলে কন্সটান্টিনোপল রক্ষায় এগিয়ে আসবে না।

প্রধান পরামর্শক হালিল পাশার আপত্তি থাকা সত্ত্বেও সুলতান মুহম্মাদ অনেকটা একক সিদ্ধান্তেই কন্সটান্টিনোপল আক্রমণ করার ব্যাপারে মনস্থির করলেন।

কন্সটান্টিনোপল অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়ল সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। মুসলিম বিশ্বে আগে থেকেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী প্রচলিত ছিল, যেখানে তিনি বলেছেন, لَتُفْتَحَنَّ الْقُسْطَنْطِينِيَّةُ فَلَنِعْمَ الأَمِيرُ أَمِيرُهَا وَلَنِعْمَ الْجَيْشُ ذَلِكَ الْجَيْشُ، ‘তোমরা অবশ্যই কন্সটান্টিনোপল জয় করবে। তাদের সেই বিজয়ী সেনাপতি ও সেনাদল কতই না সৌভাগ্যবান’।[2]

হাদীছটির সনদে কিছুটা দুর্বলতা থাকলেও এই ভবিষ্যদ্বাণীর ব্যাপারে যুগ যুগ ধরে মুসলমানদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল অন্যরকম। মানুষের মধ্যে এ নিয়ে আবেগ কাজ করত দারুণভাবে। ফলে বহু মানুষ স্বেচ্ছায় সুলতানের বাহিনীতে যোগ দিতে শুরু করল। অভিযানের ব্যাপক প্রস্ত্ততি শুরু হয়। সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মাদ গড়ে তুললেন বিশাল ওছমানীয় নৌবাহিনী।

এমন সময় সুলতান হাতে পেলেন আরেক চমক। তৎকালে হাঙ্গেরীর এক দক্ষ কামান ইঞ্জিনিয়ার উর্বান (أوربان) একটি বিশেষ কামানের নকশা নিয়ে হাযির হ’লেন সুলতানের কাছে। এই নকশাটি তিনি তৎকালীন বাইজান্টাইন সম্রাট একাদশ কন্সটান্টাইনের কাছেও উপস্থাপন করেছিলেন। তবে এর জন্য ইঞ্জিনিয়ার উর্বান মোটা অঙ্কের মূল্য দাবী করলে সম্রাট এক রকম তাচ্ছিল্যভরে তাড়িয়ে দেন তাকে। এদিকে যেহেতু সুলতান মুহাম্মাদ নিজেও একজন কামান নকশাকার ছিলেন, তাই তিনি বুঝতে পারলেন, এই কামান যুদ্ধে কতটা কার্যকরী হ’তে পারে।

সুলতান উর্বানের সকল দাবী মেনে তাকে দিয়ে তৈরি করান বিখ্যাত কামান ‘ব্যাসিলিকা’। ব্যাসিলিকা এতটাই বৃহদাকার ছিল যে, এটি বহন করতে প্রয়োজন হ’ত ১০০ জোড়া ষাঁড় ও ৩০০ জন সৈনিকের।[3] ব্যাসিলিকার কিছু সীমাবদ্ধতাও ছিল। এ কামান থেকে একবার গোলা ছুঁড়লে তিন ঘণ্টার মধ্যে আরেকটি গোলা ছোঁড়া যেত না। তবে এটি ছিল কন্সটান্টিনোপল যুদ্ধে মোড় বদলে দেবার মতো অস্ত্র।

চূড়ান্ত আক্রমণের পূর্বেই বাইজান্টাইন সম্রাজ্যের প্রধান বাণিজ্যপথ বসফরাস প্রণালীর তীরে দুর্গ নির্মাণ করা হ’ল। এর আগেও কন্সটান্টিনোপলকে বাণিজ্যিকভাবে অবরোধ করার জন্য সুলতান বায়েজীদ ইয়েলদিরিম একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন বসফরাসের এশিয়া অংশের তীরে। ফলে যুদ্ধের আগে দু’দিকের দু’টি দুর্গ বসফরাসে ওছমানীয়দের এক বিরাট আধিপত্য এনে দেয়। ওদিকে কন্সটান্টিনোপলও থেমে ছিল না। যদিও প্রথমদিকে সম্রাট একাদশ কন্সটান্টাইন অল্পবয়সী সুলতানকে এতটা হুমকি হিসাবে নেননি। কিন্তু মুহাম্মাদের একের পর এক পদক্ষেপ তাকে ভাবিয়ে তোলে। সম্রাট বুঝতে পারলেন, কন্সটান্টিনোপল এক বিরাট ঝড়ের মোকাবেলা করতে যাচ্ছে।

রোমান বাইজান্টাইনরা ছিল অর্থোডক্স খ্রিস্টান, আবার ইউরোপের অন্য দেশগুলো ছিল ক্যাথলিক খ্রিস্টান। ক্যাথলিক আর অর্থোডক্স মতবাদের দ্বন্দ্বটাও ছিল বহু পুরোনো। ফলে কন্সটান্টিনোপলের সম্রাট অন্য দেশগুলোর কাছে সাহায্য চেয়েও পাচ্ছিলেন না। কিন্তু শেষে ব্যাপারটা যখন ধর্মযুদ্ধে পরিণত হয়, তখন ক্যাথলিক পোপ রাযী হন বাইজান্টাইনদের সাহায্য করতে। তবে ইউরোপের অন্য দেশগুলো অভ্যন্তরীণ সমস্যার ফলে তেমন সাহায্য করতে পারেনি।[4]

অনেকেই নিজ উদ্যোগে ২০০-৪০০ সৈন্য নিয়ে ক্রুসেড বাহিনীতে যোগ দেয় কন্সটান্টিনোপল রক্ষার জন্য। এদের মধ্যে জেনোয়া থেকে আসা জিওভান্নি জিউস্টিনিয়ানি ছিলেন অন্যতম। তিনি দেয়াল প্রতিরক্ষায় ছিলেন বেশ দক্ষ। ১৪৫৩ সালের জানুয়ারীতে তিনি সৈন্যসহ কন্সটান্টিনোপলে পৌঁছলে তাকে নিয়োগ করা হয় দেয়াল প্রতিরক্ষার প্রধান সেনাপতি হিসাবে। এছাড়াও ভেনিসের কিছু নাবিক, যারা তখন গোল্ডেন হর্নে অবস্থান করছিল, তারাও কন্সটান্টিনোপল রক্ষায় এগিয়ে আসে।

সুলতান মুহাম্মাদ যখন চার শতেরও বেশী যুদ্ধজাহাযসহ প্রায় এক লক্ষের মতো সৈন্য নিয়ে কন্সটান্টিনোপল আক্রমণ করতে আসছিলেন, তখন বাইজান্টাইনীদের সৈন্য সংখ্যা মাত্র নয় হাযার বা তার কিছু বেশী। এরকম পরিস্থিতিতে বাইজান্টাইন সম্রাট কিছুটা বিচলিত হ’লেও ভেঙে পড়েননি। তিনি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, ওছমানীয় নৌবহর কখনোই গোল্ডেন হর্নের চেইন অতিক্রম করে আসতে পারবে না এবং ওছমানীয় সৈনিকেরা ৪০-৬০ ফুট পরপর তিনটি ২৫ ফুট উঁচু থিওডোসিয়ান দেয়াল ভাঙতেও পারবে না।[5]

১৪৫৩ সালের ৬ই এপ্রিল বৃহস্পতিবার। তখন বসন্তকাল চলছে। তবে বসন্তের সৌন্দর্য উপভোগ করার মেজাযে নেই কন্সটান্টিনোপলের কেউ। যুদ্ধের উত্তেজনা শহরের প্রতিটি মানুষকে স্পর্শ করেছে। মুহাম্মাদ আল-ফাতেহ লক্ষাধিক সৈন্য সমবেত করে শহরের অদূরেই তাঁবু ফেললেন। তারপর সেনাবাহিনীর সামনে এক তেজোদ্দীপ্ত ভাষণ প্রদান করলেন। এতে তিনি সৈন্যদের জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানালেন এবং আল্লাহর নিকট সাহায্য ও শাহাদত প্রার্থনা করলেন। তাদের সামনে যুদ্ধের আয়াত তেলাওয়াত করলেন। সৈন্যরা তাকবীর, তাহলীল ও দো‘আ পাঠের ধ্বনিতে আকাশ-বাতাশ প্রকম্পিত করে তুলল।[6]

ইতিমধ্যে কন্সটান্টিনোপলের সম্রাট যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার আহবান নিয়ে সুলতানের নিকট দূত প্রেরণ করলেন। কিন্তু সুলতান উল্টো তাকে বললেন, তুমি তোমার সম্রাটকে আমার সালাম দিবে এবং আত্মসমর্পণ করতে বলবে। আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, আমার সৈন্যরা শহরের কোন মানুষের গায়ে হাত তুলবে না। কারো উপর কোন নির্যাতন করা হবে না। কারো সম্পদ ও সম্মানে হস্তক্ষেপ করা হবে না। তোমাদের গীর্জাসমূহ ও গীর্জার পাদ্রীদের সবাইকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। শহরে কেউ থাকতে চাইলে পূর্ণ নিরাপত্তা ও শান্তির সাথে বসবাস করতে পারবে। আর অন্য কোথাও চলে যেতে চাইলে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে চলে যেতে পারবে।[7]

দূত মারফত সর্বকিছু শুনে সম্রাট বুঝতে পারলেন যুদ্ধ অবশ্যম্ভবী। তিনি আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানালেন। থিওডোসিয়ান দেয়াল ও শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর কন্সটান্টাইনের অগাধ বিশ্বাস থাকায় যুদ্ধই শেষ পরিণতি হয়ে দাঁড়াল। এর বিপরীতে তারা বহু সম্পদ প্রদানের শর্তে যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা করল। কিন্তু মুহাম্মাদ আল-ফাতেহ এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। ফলে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ল।[8]

৬ই এপ্রিল তারিখে সুলতানের সৈনিকেরা ঘিরে ফেলল পুরো শহর। সেই সাথে গোল্ডেন হর্নের প্রবেশপথে অবস্থান নেয় ওছমানীয় নৌবহর। বাইজান্টাইনীরাও প্রস্ত্তত, জিওভান্নির নির্দেশনায় দেয়াল সুরক্ষিত করা হ’ল।

সম্রাট কন্সটান্টাইন নিজেও অবস্থান নিলেন শহরের একপাশে। তবে তিনি বারবার আয়া সোফিয়া গীর্জায় প্রবেশ করে ধর্মজাযকদের প্রার্থনা করার অনুরোধ করছিলেন। যাতে তাদের স্রষ্টা শহরটিকে হেফাযত করেন। অন্যদিকে কিছু ধর্মজাযক রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিল এবং যুদ্ধের জন্য সৈন্যদের ধৈর্য ধরা, সুদৃঢ় থাকা ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করার কাজ করছিল।[9] বাইজান্টাইনী জাহাযগুলোও প্রস্ত্তত, যদি কোনভাবে গোল্ডেন হর্নের চেইন অতিক্রম করে ওছমানীয় নৌবাহিনী এসেই পড়ে, তবে তারা সেখান থেকে প্রতিরোধ করবে। যদিও গোল্ডেন হর্নের চেইন অতিক্রম করা ছিল নিশ্চিতভাবেই অসম্ভব।

অবরোধ শুরু হ’ল, গর্জে উঠল ব্যাসিলিকা কামান। বিশালাকার একেকটা গোলা থিওডোসিয়ান দেয়াল কাঁপিয়ে দিতে লাগল। তবে এতে খুব একটা ক্ষতি হচ্ছিল না, কারণ ব্যাসিলিকা থেকে ছোঁড়া গড়ে চারটি গোলার দু’টি গোলা লক্ষ্যভেদ করত, প্রত্যেকটি গোলা আবার একই জায়গাতে আঘাত করত না, একেকটা ফায়ার করার জন্য তিন ঘণ্টার সময় নিতে হ’ত। ফলে বাইজান্টাইন প্রকৌশলীরা যথেষ্ট সময় পেত দেয়াল সারিয়ে তোলার জন্য।

১৮ই এপ্রিল তারিখে চারটি গোলা একই জায়গায় আঘাত করাতে থিওডোসিয়ান দেয়ালে বড় একটি গর্ত তৈরি হল। গর্তের কাছে থাকা একদল ওছমানীয় সৈন্য দ্রুত ঢুকে পড়ে সেই গর্ত দিয়ে। কিন্তু তারা এটা জানত না যে, গর্তের ভেতর তৈরি ছিল গ্রিক ফায়ারের ফাঁদ। মুহূর্তেই গ্রিক ফায়ারের আগুন ধরিয়ে দেওয়া হ’ল সৈনিকদের গায়ে, ফলে তারা পিছু হটতে বাধ্য হ’ল।

দুপুরে আবার গর্তের ভেতরকার সরু গলি দিয়ে ওছমানীয়রা ঢুকতে চাইলে প্রতিরোধ গড়ে তোলে বাইজান্টাইনীরা। সেদিন প্রায় ২০০ ওছমানীয় সৈনিক প্রাণ হারালেও শহরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। বরং বাইজান্টাইনীরা মুসলিম সৈন্যদের মাথা কেটে দেওয়ালের ভিতর থেকে বাহিরে নিক্ষেপ করে।[10]

ওদিকে আবার গোল্ডেন হর্নে অবস্থান নেওয়া ওছমানীয় নৌবহরও সফল হ’তে পারছিল না। জেনোয়া থেকে বাইজান্টাইনীদের উদ্দেশ্যে সাহায্যে আসা ৫টি জাহায ওছমানীয় নৌবাহিনীকে টেক্কা দিয়ে শহরে পৌঁছে যায়। এতে সুলতান রাগান্বিত হয়ে নৌবাহিনী প্রধানকে বরখাস্ত করেন।[11] একদিকে অজেয় দেয়াল, অন্যদিকে নৌবাহিনীর ব্যর্থতা সুলতানকে ভীষণ ক্ষুব্ধ করে তোলে। নতুন করে জাগান পাশাকে নৌ-প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

২১শে এপ্রিল তারিখে সুলতান ভিন্নধর্মী এক সিদ্ধান্ত নিলেন। যেহেতু অটোমান জাহাযগুলো প্রতিরক্ষামূলক চেইনের জন্য গোল্ডেন হর্নে প্রবেশ করতে পারছিল না, তাই জাহাযগুলোকে পানির পরিবর্তে স্থলের পাহাড়ী উপত্যকা দিয়ে বিশেষ কায়দায় নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হ’ল। প্রধান পরামর্শক হালিল পাশার চরম বিরোধিতার পরেও সুলতান নিজের এই অভিনব সিদ্ধান্তে অটল রইলেন। গাছের গুড়ির উপর মেষের চর্বির প্রলেপ দিয়ে রাতের অন্ধকারে ষাঁড় দিয়ে টেনে নেওয়া হ’ল জাহায। একরাতে প্রায় ৭০টি জাহায পাহাড়ি উপত্যকা পাড়ি দিয়ে গোল্ডেন হর্নে নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে রসদ সরবরাহ করা জেনোয়ার জাহাযগুলো বাধার মুখে পড়ে এবং বাইজেনটাইনদের মনোবল ভেঙ্গে যায়।

তবে এরূপ অবস্থা একমাসেরও অধিক সময় অব্যাহত থাকলেও সফলতা তেমন আসেনি। কেননা গোল্ডেন হর্নে প্রবেশ করে সুবিধা হয়েছিল ঠিকই, তবে শহরের অপ্রতিরোধ্য প্রতিরক্ষা দেওয়াল তখনও ভাঙ্গা সম্ভব হয়নি। সুলতান প্রকৌশলীদের নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করলেন। সিদ্ধান্ত হ’ল সুড়ঙ্গ খুঁড়ে শহরের ভেতর প্রবেশ করা হবে। শুরু হ’ল খোঁড়ার কাজ। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ১৬ই মে নাগাদ বাইজেন্টাইনীরা পুরো পরিকল্পনা জেনে গেল। পাল্টা সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ওছমানীয়দের সুড়ঙ্গে গ্রিক ফায়ার দিয়ে আক্রমণ করা হ’ল। দু’জন ওছমানীয় অফিসারকেও আটক করা হয় ২৩শে মে। অফিসারদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ওছমানীয়দের সবক’টা সুড়ঙ্গপথে আক্রমণ করল বাইজান্টাইনীরা। ফলে এই পরিকল্পনাও পুরোপুরি ব্যর্থ হ’ল। এবার সুলতান নিজেও হতাশ হয়ে পড়লেন।[12] কিন্তু চেষ্টা বন্ধ হয়নি। তারা নতুন নতুন জায়গা নির্বাচন করে সুড়ঙ্গ খুড়তে থাকে। এতে রোমানদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নতুন কাউকে দেখলেই তারা মনে করছিল যে, এই হয়ত ওছমানীয় সৈন্য সুড়ঙ্গ পথে প্রবেশ করে ফেলেছে।[13]

ওছমানীয় সৈন্যরা আরেক নতুন কৌশলের আশ্রয় নিল। তারা কাঠ, বর্ম ও অন্যান্য আসবাব পত্র দ্বারা উঁচু টিলা তৈরি করল। আর উপরে ভেজা কাপড়, চামড়া ইত্যাদি দ্বারা প্রলেপ দিয়ে দিল যাতে শত্রুদের গ্রিক ফায়ারের আঘাতে পুড়ে না যায়। তিন স্তর বিশিষ্ট টিলায় তিন বাহিনীর সৈন্যরা অবস্থান নিল। টিলার উপরে আরোহনকারী তীরান্দাজরা ক্ষিপ্রগতিতে তীর ছুড়ে নিরাপত্তা প্রাচীরের ভিতরে থাকা সৈন্যদের বিনাশ করছিল। তারাও আগুনের গোলা নিক্ষেপ করছিল। কিন্তু টিলার সব কিছু পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখায় সফল হচ্ছিল না। ওছমানীয় সৈন্যরা প্রতিরোধকারীদের হত্যা করে এবং প্রাচীরের পাশের খন্দক মাটি-পাথর দিয়ে ভরে দিতে সক্ষম হয়। ওছমানীয়দের একের পর এক নতুন কৌশলে রোমান সৈন্যরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।[14]

অন্যদিকে রোমানদের উপরে নেমে আসে আসমানী গযব। ২৫শে মে বাইজান্টাইনীরা সৈন্যদের মনোবল চাঙ্গা করার জন্য মরিয়ম (আঃ)-এর একটি বড় মূর্তি বানিয়ে শহরের চারদিকে প্রদক্ষিণ করাচ্ছিল। হঠাৎ করে মূর্তিটি পড়ে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। আবার ২৬শে মে কন্সটান্টিনোপলের ভূখন্ডে ব্যাপক বৃষ্টি, সেই সাথে অবিরাম বজ্রপাত হয়। বজ্রপাতে কাঁপছিল কন্সটান্টিনোপলের আকাশ-বাতাশ। একটি বজ্র আয়া সোফিয়া গীর্জার উপর পতিত হয়। এতে রোমানরা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। সংবাদ দেওয়া হয় সম্রা্টকে যে, ঈশ্বর আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। খুব শীঘ্রই ওছমানীয় সৈন্যরা আমাদের উপর বিজয় লাভ করবে। এই ভয়াবহ সংবাদ শুনে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন।[15]

সুলতান মুসলিম সৈন্যদের অগ্রগামিতা ও রোমানদের ভগ্ন হৃদয় পর্যবেক্ষণ করে আবারো বাইজান্টাইন সম্রা্টের নিকট পত্র লিখলেন আত্মসমর্পণের জন্য। তিনি চিঠিতে লিখলেন, সম্রাট যাতে কোন রক্তপাত ছাড়াই শহরটি সুলতানের হাতে তুলে দেন। সম্রাট ও সৈন্যদের নিরাপত্তার পূর্ণ নিশ্চয়তা দেওয়া হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন। পত্র পেয়ে সম্রাট পরামর্শ সভা আহবান করেন। লোকেরা দু’দলে বিভক্ত হয়ে গেল। একদল বলল, রক্তপাত এড়াতে যুদ্ধ ছাড়াই শহরটি মুসলমানদের হাতে তুলে দিতে হবে। আরেকদল বলল, না জীবনের শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাব। সম্রাট দ্বিতীয় মতটি গ্রহণ করে পত্রে লিখলেন, আমি কন্সটান্টিনোপলের ব্যাপারে কসম করে বলছি, আমাদের শেষ ব্যক্তি থাকা পর্যন্ত শহরটি কারো হাতে তুলে দিব না। এর সিংহাসন আমাকে হেফাযত করবে নতুবা দুর্গপ্রাচীরের নীচে দাফন করবে।[16] সুলতান পত্র পেয়েই বললেন, ঠিক আছে, খুব শীঘ্রই কন্সটান্টিনোপলের সিংহাসন আমার জন্য হবে অথবা এর দুর্গপ্রাচীরের নীচে আমার কবর হবে।[17]

পত্র পাওয়ার পর সুলতানও আলেম-ওলামা ও সেনা অফিসারদের নিয়ে পরামর্শ সভা আহবান করলেন। পরামর্শ করলেন শেষ মুহূর্তের করণীয় সম্পর্কে। মন্ত্রী খলীল পাশাসহ একদল অবরোধ করেই তাদের আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করতে হবে বলে মত দেন। যাতে অন্যান্য ইউরোপীয়ানরা মুসলমানদের উপর ক্ষিপ্ত না হয়। অপরদিকে যগনূশ পাশাসহ সেনা অফিসাররা আক্রমণ করে শহরটি দখল করার পরামর্শ দেন। এছাড়াও সুলতানের শিক্ষক আক্ব শামসুদ্দীন ও কাওরানী যগনূশের মতকে সমর্থন জানায়। ফলে সুলতান দ্বিতীয় অভিমতটিই গ্রহণ করেন।[18]

২৭শে মে সুলতান নিজে ও সৈন্যদের সকলে ছালাতে মনোনিবেশ করে আল্লাহর নিকট কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করলেন। নিজেদেরকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর নিকটে সমর্পণ করলেন। প্রত্যেকে বিজয়ের জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলেন। সন্ধ্যায় সৈন্যদের চার দিকে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হ’ল। আর সৈন্যরা তাকবীর ও তাহলীল ধ্বনিতে আকাশ-বাতাশ প্রকম্পিত করে তুলল। বাইজান্টাইনরা মনে করল মুসলমানদের মাঝে আগুন ছড়িয়ে গেছে। পরক্ষণেই দেখল ভিন্ন চিত্র। ফলে শত্রু সৈন্যদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল।[19]

২৮শে মে পুরোদমে প্রস্ত্ততি নিয়ে মুসলিম সৈন্যরা কামানের গোলা ছুড়তে শুরু করল। দেয়াল ফুটো করতেই হবে। অন্যথা ভিতরে প্রবেশ করা যাবে না। অন্যদিকে রোমান সৈন্যরা গ্রিক ফায়ার দ্বারা আঘাত করা অব্যাহত রেখেছিল। তারই মধ্যে মুসলিম সৈন্যরা এগিয়ে যাচ্ছিল বীরদর্পে। এদিকে সুলতান সৈন্যদের মাঝে ঘুরে ঘুরে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছিলেন, তাদের মনোবল চাঙ্গা করছিলেন, জিহাদের আয়াত তেলাওয়াত করছিলেন এবং বিজয়ের জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছিলেন।[20]

অন্যদিকে বাইজান্টাইন সম্রাট নারী-শিশু ও বৃদ্ধদের গীর্জায় সমবেত হয়ে সকলকে কান্নাকাটি করতে বললেন। সবাইকে একান্তভাবে তাদের সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করতে বলেন। তারপর জনগণের সম্মুখে একটি বিদায়ী ভাষণ প্রদান করেন। সেখানে তিনি বলেন, বাইজান্টাইন সম্রাট মারা গেলেও তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। কোন কোন ঐতিহাসিক বলেন, সম্রাট যে বক্তব্য প্রদান করেছিলেন, তাতে সবার চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল। তিনি তার সভাসদবর্গকে সাথে নিয়ে আয়া সোফিয়া গীর্জায় প্রবেশ করেন এবং প্রার্থনা করেন। সাথে সাথে তিনি সবার সাথে দেখা করে শেষ বিদায় গ্রহণ করেন।[21]

২৯শে মে ভোরের আলো ফুটতেই গর্জে উঠল ব্যাসিলিকা কামান, সাথে ছোট কামানগুলোও। পূর্বেও কামানের গোলা লেগেছিল এমন জায়গায় ব্যাসিলিকার আরো তিনটি গোলা আঘাত হানল। থিওডোসিয়ান দেওয়ালে গর্ত তৈরি হ’ল। অন্যদিকে সুলতান একহাযার সিঁড়ি তৈরি করতে বললেন। সেগুলো স্থাপন করা হ’ল নিরাপত্তা দেওয়ালে। সিঁড়ি ও গর্ত উভয় পথ দিয়ে শত শত ওছমানীয় সৈন্য শহরে ঢুকে পড়তে লাগল। আবার সমুদ্র পথে আক্রমণ জোরদার করা হ’ল। ব্যাপক আক্রমণের ফলে বাইজান্টাইন সেনারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ল।[22]

শুরু হ’ল প্রচন্ড সংঘর্ষ। বায়জান্টাইনীরাও প্রাণপণে লড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ৩০ জনের একদল সেনা শহরের দেওয়ালে উঠে পড়েন। তারা দেওয়ালের যে উঁচু স্থানে বায়জেন্টাইনী পতাকা ছিল তা ছুঁড়ে ফেলে দেন এবং তদস্থলে ওছমানীয় পতাকা উড়িয়ে দেন। তাদের শরীরে একের পর এক তীর বিধতে থাকে। কিন্তু অসম সাহসিকতায় তারা পতাকা রক্ষা করেন। শহরের কেন্দ্রে ওছমানীয় পতাকা দেখে বাইজান্টাইনী সৈন্যদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। আম জনসাধারণ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পালাতে শুরু করে। মনোবল বেড়ে যায় ওছমানীয় সৈনিকদের। এমন সময় কমান্ডার জুস্টিনিয়ান চরমভাবে আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ফলে তার সৈন্যরা পালাতে শুরু করে। বাইজান্টাইন সম্রাট আর বসে থাকতে পারলেন না। নিজের পরিচয় গোপন রাখার জন্য রাজকীয় পোষাক ছুড়ে ফেলে তরবারি হাতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যুদ্ধ করতে করতে একসময় সাধারণ সৈনিকের মত মারা যান। অল্পক্ষণের মাঝেই বানের পানির মত ওছমানীয় সৈন্যরা শহরে প্রবেশ করে।[23]

শহরে প্রবেশ করেই সুলতান দুই দল সৈন্য মোতায়েন করেন, যেন ক্ষিপ্ত ওছমানীয় সৈন্যরা গীর্জাগুলোতে আক্রমণ না করে। বিনয়ের সাথে শহরে প্রবেশ করেন সুলতান। ঘোড়া থেকে নেমে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। শহরের নতুন নামকরণ করেন ইসলামবুল বা ইসলামের শহর।[24] এরপর থেকেই সুলতান মুহাম্মাদের নামের সাথে যুক্ত হ’ল ‘ফাতেহ’ বা বিজয়ী। সেই থেকেই সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মাদ পরিচিত হ’লেন মুহাম্মাদ আল-ফাতেহ তথা বিজয়ী মুহাম্মাদ নামে। তিনি আয়া সোফিয়ায় প্রবেশ করে দেখলেন সেখানে আতঙ্কিত ধর্মযাজকসহ বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। কেউ আবার বিভিন্ন গোপন আস্তানায় আত্মগোপন করেছে, কেউ কান্নাকাটি করছিল। সুলতান তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। তাঁর উদারতা দেখে বহু মানুষ ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেয়। সুলতান সকলকে নিরাপদে নিজ নিজ গৃহে অবস্থানের নির্দেশ দেন। সবাইকে নিজ নিজ ধর্মের ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা দান করেন। এরপর সুলতান আয়া সোফিয়া ধর্মযাজকদের নিকটে গীর্জাটি ক্রয় করার প্রস্তাব দেন। তারা সম্মতি দিলে নিজ অর্থে তা খরিদ করেন এবং মসজিদ হিসাবে ওয়াক্বফ করে দেন। সুলতানের নির্দেশে সেখান থেকে যাবতীয় মূর্তি সরিয়ে ফেলা হয় এবং খুৎবা প্রদানের জন্য মিম্বার বানানো হয়।[25]

পঞ্চম অভিযানের ভবিষ্যদ্বাণী :

রাসূল (ছাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী কন্সটান্টিনোপল সহ পুরো ইউরোপে মুসলামদের বিজয় সম্পন্ন হবে ক্বিয়ামতের পূর্বে দাজ্জালের আগমনের পূর্বক্ষণে। ইমাম মাহদীর আগমনের পরক্ষণে যখন মুসলমান ও ইউরোপীয় শক্তির মাঝে যুদ্ধ চলতে থাকবে, ঠিক তখনই মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হবে। তারা কন্সটান্টিনোপলসহ পুরো ইউরোপের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। বহু হতাহতের পর মুসলমানরা আল্লাহর সাহায্যে বিনা যুদ্ধে ইউরোপের বিরুদ্ধে জয়লাভ করবে। মুসলমানদের মাধ্যমে রোম বা বর্তমান ইউরোপ বিজয় করা ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত। আওফ ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, আমি তাবূক যুদ্ধে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এলাম। তিনি তখন একটি চামড়ার তৈরি তাঁবুতে ছিলেন। রাসূল (ছাঃ) বললেন, ক্বিয়ামতের আগের ছয়টি নিদর্শন গণনা করে রাখো। আমার মৃত্যু, অতঃপর বায়তুল মুক্বাদ্দাস বিজয়, অতঃপর তোমাদের মধ্যে ঘটবে মহামারী, বকরীর পালের মহামারীর মত, সম্পদের প্রাচুর্য, এমনকি এক ব্যক্তিকে একশ’ দীনার দেয়ার পরেও সে অসন্তুষ্ট থাকবে। অতঃপর এমন এক ফিৎনা আসবে যা আরবের প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করবে। অতঃপর যুদ্ধ বিরতির চুক্তি-যা তোমাদের ও বনী আসফার বা রোমকদের মধ্যে সম্পাদিত হবে। অতঃপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং আশিটি পতাকা উড়িয়ে তোমাদের বিপক্ষে আসবে; প্রত্যেক পতাকার নীচে থাকবে বার হাযার সৈন্য।[26]

দাজ্জালের আগমনের পূর্বে ইউরোপীয়রা যৌথবাহিনী গঠনের মাধ্যমে মুসলমানদের সমূলে ধ্বংস করার জন্য এগিয়ে আসবে। মুসলমানরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করবে। অসংখ্য মুসলমানের শাহাদতের পর আল্লাহর সাহায্য নেমে আসবে। রোমান বাহিনী তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে মুসলমানদের আক্রমণ করতে আসবে। ঠিক তখনই মুসলমানেরা তাকবীর ধ্বনি দিতে থাকবে। আর প্রথম তাকবীরে প্রথম দলটি মাটিতে ধ্বসে ধ্বংস হয়ে যাবে। দ্বিতীয় তাকবীরে দ্বিতীয় দলটি ধ্বংস হয়ে যাবে। আর তৃতীয় তাকবীর দিলে তাদের শহরের প্রবেশদ্বার খুলে যাবে। আর এর মাধ্যমে প্রচুর গণীমত লাভ করবে। কিন্তু গণীমত ভোগ করার মত সুযোগ তারা পাবে না। কারণ ইতিমধ্যে দাজ্জাল আগমনের সংবাদ চলে আসবে। ফলে মুসলমানরা সব ফেলে দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্ত্ততি নিবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ না রোমান সেনাবাহিনী আ‘মাক্ব অথবা দাবিক নগরীতে অবতরণ করবে। তখন তাদের মোকাবিলায় মদীনা থেকে পৃথিবীর সর্বোত্তম মানুষের এক দল সৈন্য বের হবে। অতঃপর উভয় দল সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান হবার পর রোমানরা বলবে, তোমরা ঐ সমস্ত লোকদের পৃথক করে দাও, যারা আমাদের লোকদের বন্দী করেছে। আমরা তাদের সাথে লড়াই করব। তখন মুসলমানরা বলবে, আল্লাহর শপথ! আমরা আমাদের ভাইদের থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন হব না। অবশেষে তাদের পরস্পর যুদ্ধ হবে। এ যুদ্ধে মুসলমানদের এক-তৃতীয়াংশ সৈন্য পালিয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা কখনো তাদের তওবা কবুল করবেন না। সৈন্যদের এক-তৃতীয়াংশ নিহত হবে এবং তারা হবে আল্লাহর নিকট শহীদদের মাঝে সর্বোত্তম শহীদ। আর সৈন্যদের অপর তৃতীয়াংশ বিজয়ী হবে। জীবনে আর কখনো তারা ফিৎনায় পতিত হবে না। তারাই কন্সটান্টিনোপল বা বর্তমান ইস্তাম্বুল জয় করবে। তারা নিজেদের তরবারী যায়তুন বৃক্ষে লটকিয়ে যুদ্ধ লব্ধ সম্পদ বণ্টন করতে থাকবে। এমতাবস্থায় তাদের মধ্যে শয়তান চিৎকার করে বলতে থাকবে, দাজ্জাল তোমাদের পিছনে তোমাদের পরিবার-পরিজনের মধ্যে চলে এসেছে। এ কথা শুনে মুসলমানরা সেখান থেকে বের হবে। অথচ এটি মিথ্যা খবর। তারা যখন সিরিয়া পৌঁছবে তখন দাজ্জালের আবির্ভাব হবে। যখন মুসলিম বাহিনী যুদ্ধের প্রস্ত্ততি গ্রহণ করবে এবং সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান হ’তে শুরু করবে তখন ছালাতের সময় হবে। অতঃপর ঈসা (আঃ) অবতরণ করবেন এবং ছালাতে তাদের ইমামতি করবেন। আল্লাহর শক্ররা তাকে দেখামাত্রই বিগলিত হয়ে যাবে যেমন লবণ পানিতে গলে যায়। যদি ঈসা (আঃ) কাউকে এমনিই ছেড়ে দেন তবুও সে নিজে নিজেই বিগলিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। অবশ্য আল্লাহ তা‘আলা ঈসা (আঃ)-এর হাতে দাজ্জালকে হত্যা করবেন এবং তার রক্ত ঈসা (আঃ)-এর বর্শাতে তিনি তাদেরকে দেখিয়ে দিবেন।[27]

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা কি ঐ শহরের কথা শুনেছ, যার এক প্রান্ত স্থলভাগে এবং এক প্রান্ত সাগরে? তারা (ছাহবীগণ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! শুনেছি। অতঃপর বললেন, ক্বিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ইসহাক (ইসমাঈল (আঃ)-এর সন্তানদের সত্তর হাযার লোক এ শহরের বিরুদ্ধে অভিযান না করবে। তারা শহরের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়ে কোন অস্ত্র দ্বারা যুদ্ধ করবে না এবং কোন তীরও চালাবে না; বরং তারা একবার لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ বলবে, অমনি এর একপ্রান্ত পদানত হয়ে যাবে। বর্ণনাকারী ছাওর (রহঃ) বলেন, আমার যতদূর মনে পড়ে, আমার কাছে বর্ণনাকারী সাগর প্রান্তের কথা বলেছিলেন। অতঃপর দ্বিতীয়বার তারা لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ বলবে। এতে শহরের অপর প্রান্ত পদানত হয়ে যাবে। এরপর তারা তৃতীয়বার لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ বলবে, তখন তাদের জন্য (নগর তোরণ) খুলে দেয়া হবে। তখন তারা সেখানে (প্রচুর) গনীমত লাভ করবে। তারা যখন গনীমতের মাল বণ্টনে ব্যস্ত থাকবে, তখন কেউ চিৎকার করে ঘোষণা করবে, দাজ্জালের আবির্ভাব হয়েছে। এ কথা শুনতেই তারা সবকিছু ফেলে প্রত্যাবর্তন করবে।[28]

আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ)-এর হাদীছে যুদ্ধের ভয়াবহতার বর্ণনা এসেছে। যাতে দেখা যায় যে, রোমানদের সাথে সেই যুদ্ধে বহু মানুষ মারা যাবে। একদা আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) শামের প্রতি ইশারা করে বললেন, আল্লাহর শক্ররা একত্রিত হবে মুসলিমদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য এবং মুসলিমগণও তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য একত্রিত হবে। রাবী বলেন, এ কথা শ্রবণে আমি বললাম, আল্লাহর শক্র বলে আপনাদের উদ্দেশ্য হ’ল রোমীয় (খৃষ্টান) সম্প্রদায়। তিনি বললেন, হ্যাঁ! তখন ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হবে। তখন মুসলমানরা একটি দল অগ্রে প্রেরণ করবে, তারা মৃত্যুর জন্য সম্মুখে এগিয়ে যাবে। বিজয় অর্জন করা ছাড়া তারা প্রত্যাবর্তন করবে না। এরপর পরস্পর তাদের মধ্যে যুদ্ধ হবে। যুদ্ধ করতে করতে রাত্রি অতিবাহিত হয়ে যাবে। তারপর দু’পক্ষের সৈন্যরা জয় লাভ করা ছাড়াই ফিরে চলে যাবে। যুদ্ধের জন্য মুসলমানদের যে দলটি এগিয়ে গিয়েছিল তারা প্রত্যেকেই শাহাদত বরণ করবে। অতঃপর পরবর্তী দিন মুসলমানরা মৃত্যুর জন্য অপর একটি দল সামনে পাঠাবে। তারা সবাই শাহাদত বরণ করবে। অতঃপর পরবর্তী দিন মুসলমানরা মৃত্যুর জন্য অপর একটি দল সামনে পাঠাবে। তারা বিজয়ী না হয়ে ফিরবে না। এদিনও পরস্পরের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ হবে। পরিশেষে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। উভয় বাহিনী বিজয় লাভ করা ছাড়াই স্বীয় শিবিরে প্রত্যাবর্তন করবে। যে দলটি সামনে ছিল তারা সরে যাবে। অতঃপর তৃতীয় দিন আবার মুসলমানগণ মৃত্যু বা বিজয়ের উদ্দেশ্যে অপর একটি বাহিনী পাঠাবে। এ যুদ্ধ সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকবে। পরিশেষে বিজয় লাভ করা ছাড়াই উভয় বাহিনী প্রত্যাবর্তন করবে। তবে মুসলিম বাহিনীর সামনের সেনাদলটি শহীদ হয়ে যাবে।

তারপর যুদ্ধের চতুর্থ দিনে অবশিষ্ট মুসলিমগণ সকলেই যুদ্ধের জন্য সামনে এগিয়ে যাবে। সেদিন কাফেরদের উপর আল্লাহ তা‘আলা অকল্যাণ চাপিয়ে দিবেন। তারপর এমন যুদ্ধ হবে যা জীবনে কেউ দেখবে না অথবা যা জীবনে কেউ দেখেনি। পরিশেষে তাদের শরীরের উপর পাখী উড়তে থাকবে। পাখী তাদেরকে অতিক্রম করবে না। এমতাবস্থায় তা মাটিতে পড়ে নিহত হবে। একশ’ মানুষ বিশিষ্ট একটি গোত্রে, মাত্র একজন লোক বেঁচে থাকবে। এমন সময় কেমন করে গনীমতের সম্পদ নিয়ে লোকেরা আনন্দোৎসব করবে এবং কেমন করে উত্তরাধিকার সম্পদ ভাগ করা হবে? এমতাবস্থায় মুসলিমগণ আরেকটি ভয়ানক বিপদের খবর শুনতে পাবে এবং এ মর্মে একটি শব্দ তাদের কাছে পৌঁছবে যে, দাজ্জাল তাদের পেছনে তাদের পরিবার-পরিজনের মধ্যে চলে এসেছে। এ সংবাদ শুনতেই তারা হাতের সমস্ত কিছু ফেলে দিয়ে রওয়ানা হয়ে যাবে এবং দশজন অশ্বারোহী ব্যক্তিকে সংবাদ সংগ্রাহক দল হিসাবে প্রেরণ করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, দাজ্জালের খবর সংগ্রাহক দলের প্রতিটি লোকের নাম, তাদের বাপ-দাদার নাম এবং তাদের ঘোড়ার রঙ সম্পর্কেও আমি জ্ঞাত আছি। এ পৃথিবীর সর্বোত্তম অশ্বারোহী দল সেদিন তারাই হবে।[29] অবশ্য এই বিজয় ক্বিয়ামতের পূর্বক্ষণে হবে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, বায়তুল মাক্বদিসে বসতি স্থাপন ইয়াছরিবের (মদীনার) বিপর্যয়ের কারণ হবে এবং ইয়াছরিবের বিপর্যয় সংঘাতের কারণ হবে। যুদ্ধের ফলে কন্সটান্টিনোপল বিজিত হবে এবং কন্সটান্টিনোপল বিজয় দাজ্জালের আবির্ভাবের নিদর্শন।[30] অন্য বর্ণনায় এসেছে, আনাস (রাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের সন্নিকটে কন্সটান্টিনোপলের বিজয় ঘটবে।[31]

এক্ষণে মুহাম্মাদ আল-ফাতেহের হাতে যে কন্সটান্টিনোপল বিজয় হয় সেটি কি রাসূল (ছাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণীর আওতাভূক্ত? এতে কিছু বিদ্বান মতপার্থক্য করলেও বিশুদ্ধ কথা হ’ল সুলতান মুহাম্মাদ আল-ফাতেহ এর আওতাভুক্ত। কারণ হাদীছে দু’টি বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে- প্রথম হ’ল কন্সটান্টিনোপল বিজয়। আর দ্বিতীয় হ’ল রোম বিজয়। মুহাম্মাদ আল-ফাতেহের হাতে কন্সটান্টিনোপল বিজিত হয়েছে কিন্তু রোম তথা ইউরোপ বিজয় এখনো হয়নি, যা ক্বিয়ামতের পূর্বে হবে।[32] সেজন্য শায়খ আহমাদ শাকের (রহঃ) বলেন, মুহাম্মাদ আল-ফাতেহের হাতে কন্সটান্টিনোপল বিজয় পুরো ইউরোপ বিজয়ের জন্য সতর্কবাণী, যা ক্বিয়ামতের পূর্বে মুসলমানদের হাতে হবে।[33] তাছাড়া শহরটির কিছু অংশ ছাহাবায়ে কেরামের আমলে বিজয় হয়েছিল বলেও একদল বিদ্বান মতপ্রকাশ করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, কুস্ত্তনতুনিয়া হ’ল রোম দেশের একটি শহর। দাজ্জালের আবির্ভাবকালে এটি জয় করা হবে। কতক ছাহাবীর যামানাতেই কন্সটান্টিনোপল জয় হয়।[34] এমনও হ’তে পারে যে, বর্তমান ইস্তাম্বুল আবারো ইউরোপীয়দের হাতে চলে যাবে। পরে আবার মুসলমানরা দখল করবে। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।

উপসংহার : কন্সটান্টিনোপল বা বর্তমান ইস্তাম্বুল পুরো পৃথিবীর কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। পুরো পৃথিবী যদি একটি রাষ্ট্র হয় আর এর রাজধানী কন্সটান্টিনোপলকে বানানো হয় তাহ’লে সেটিই উপযুক্ত হবে। সেজন্য শহরটি ইতিহাসে স্মরণীয় বরণীয়। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামও শহরটির ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। এই শহরটি বিজয়ের জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করাকে রাসূল (ছাঃ) ফযীলতপূর্ণ আমল বলেছেন। ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ ও তাবে‘ তাবেঈগণ লড়াই করেছেন। কিন্তু সফলতা নির্ভর করে আল্লাহর ইচ্ছার উপর। আল্লাহ মুহাম্মাদ আল-ফাতেহের মাধ্যমে এই মহান বিজয় নিশ্চিত করেছেন। আয়া সোফিয়ার মত ঐতিহাসিক গীর্জা মসজিদে রূপান্তরিত হয়েছে। এটি কেবল মুহাম্মাদ আল-ফাতেহের বিজয় নয়; বরং পুরো মুসলিম বিশ্বের বিজয়। আয়া সোফিয়া যাদুঘর থেকে আবারো মসজিদে রূপান্তরিত হওয়া আরেকটি বিজয়। এই বিজয় সারা বিশ্বের নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য অন্ধকারের মধ্যে আশার আলোকচ্ছটা, যা তাদেরকে সম্মুখপানে দৃঢ়পদে চলতে সহায়তা করবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে বিশুদ্ধ দ্বীনের উপর আমৃত্যু টিকে থাকার তাওফীক দান করুন- আমীন!

 

মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম

নিয়ামতপুর, নওগাঁ।

[1]. জামালুদ্দীন ইবনু তাগরী, আন-নুজূমুয যাহেরা ১৬/০৩

[2]. আহমাদ হা/১৮৯৭৭; হাকেম হা/৮৩০০; ত্বাবারাণী কাবীর হা/১২১৬, হাকেম ও যাহাবী এর সনদকে ছহীহ বলেছেন এবং হায়ছামী বর্ণনকারীদের ছিক্বাহ বলেছেন। তবে আরনাউত্ব ও আলবানী যঈফ বলেছেন’। দ্র. যঈফাহ হা/৮৭৮; যঈফুল জামে‘ হা/৪৬৫৫।

[3]. আলী মুহাম্মাদ আছ-ছাল্লাবী, কন্সটান্টিনোপল বিজয়ী মুহাম্মাদ আল-ফাতেহ, পৃ. ৮৯; আল-ফুতুহুল ইসলামিয়া আবরাল ‘উছূর পৃ. ৩৬১

[4]. দ্রঃ https://roar.media/bangla/main/history/ottoman-victory -of-constantinople.

[5]. সালাতীনে আলে ওছমান পৃ. ২; রূশাইদী, মুহাম্মাদ আল-ফাতেহ, পৃ. ৯৬

[6]. সালাতীনে আলে ওছমান, পৃ. ২৪-২৫

[7]. আব্দুস সালাম ফাহমী, মুহাম্মাদ আল-ফাতেহ পৃ. ৯২

[8]. মুহাম্মাদ আল-ফাতেহ পৃ. ১০০

[9]. মুহাম্মাদ আল-ফাতেহ পৃ. ৯৮ আল-ওছমানিঊন ওয়াল বালক্বান পৃ. ৮৯

[10]. মাওয়াকেফু হাসেমা ফী তারীখিল ইসলাম পৃ. ১৮০

[11]. ড. আলী হাসওয়ান, আল-ওছমানিউন ওয়াল বালকান পৃ. ৯২; মাওয়াকেফু হাসেমা ফী তারীখিল ইসলামী পৃ. ১৮০

[12]. ড. আব্দুল আযীয, আল-ফুতুহুল ইসলামিয়া আবরাল উছূর পৃ. ৩৭২

[13]. সুলতান মুহাম্মাদ আল-ফাতেহ পৃ. ১১০

[14]. আল-ফাতেহ পৃ. ১৪৪

[15]. মুহাম্মাদ আল-ফাতেহ পৃ. ১১৮

[16]. আব্দুস সালাম ফাহমী, মুহাম্মাদ আল ফাতেহ পৃ. ১১৬

[17]. আল-ফুতুহুল ইসলামিয়া আবরাল উছূর পৃ. ৩৭৬

[18]. মুহাম্মদ ছাফওয়াত, ফাৎহুল কুস্ত্তন্তুনিয়া পৃ. ১০৩;আল-ফুতুহুল ইসলামিয়া আবরাল উছূর পৃ. ৩৭৬

[19]. ইউসুফ বেগ আছাফ, তারীখ সালাতীনে আলে ওছমান পৃ. ৬০

[20]. আল-ফুতুহুল ইসলামিয়া আবরাল উছূর পৃ. ৩৭৮

[21]. মুহাম্মাদ আল-ফাতেহ পৃ. ১২৯

[22]. মাওয়াকেফু হাসেমা ফী তারীখিল ইসলামী পৃ. ১৮৬-৮৭

[23]. আল-ফুতুহুল ইসলামিয়া আবরাল উছূর পৃ. ৩৮৪; সুলতান মুহাম্মাদ আল-ফাতেহ পৃ. ১২৬

[24]. বর্তমান ইস্তাম্বুল, পশ্চিমা বিশ্বের মদদপুষ্ট ধর্মনিরপেক্ষবাদী নাস্তিক মোস্তফা কামাল পাশা যেমন আয়া সোফিয়াকে মসজিদ থেকে যাদুঘরে রূপান্তর করেছিল তেমনি ইসলামবুলের নাম পরিবর্তন করে ইস্তাম্বুল রেখেছিল

[25]. মুহাম্মাদ আল-ফাতেহ পৃ. ১৩১; হোসাইন মুনাস, আত্বলাসুত-তারীখিল ইসলামী পৃ. ৩৫৬-৩৬৪, বিস্তারিত ড. আলী মুহাম্মাদ আছ-ছাল্লাবী, ফাতেহুল কুস্ত্তন্তুনিয়া সুলতান মুহাম্মাদ আল-ফাতেহ বই দ্রষ্টব্য

[26]. বুখারী হা/৩১৭৬; ইবনু মাজাহ হা/৪০৪২; মিশকাত হা/৫৪২০

[27]. মুসলিম হা/২৮৯৭; হাকেম হা/৮৪৮৬; মিশকাত হা/৫৪২১; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৪৩৩

[28]. মুসলিম হা/২৯২০; মিশকাত হা/৫৪২৩

[29]. মুসলিম হা/২৮৯৯; হাকেম হা/৮৪৭১; আহমাদ হা/৪১৪৬

[30]. আবুদাউদ হা/৪২৯৪; মিশকাত হা/৫৪২৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৪০৯৬

[31]. তিরমিযী হা/২২৩৯; মিশকাত হা/৫৪৩৬, সনদ ছহীহ

[32]. আলবানী, ছহীহাহ হা/৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য

[33]. উমদাতুত-তাফসীর আন ইবনে কাছীর ২/২৫৬, টীকা দ্র.; ইউসুফ ওয়াবেল, আশরাতুস-সা‘আত ১৬৪ পৃ.

[34]. তিরমিযী হা/২২৩৯-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য






আরও
আরও
.