পর্ব ১ । পর্ব ২। পর্ব ৩।  পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬। পর্ব ৭ । পর্ব ৮ । পর্ব ৯। শেষ পর্ব।

বাংলা : সপ্তম শ্রেণী

বইয়ের নাম : সপ্তবর্ণা  দাখিল সপ্তম শ্রেণি

বোর্ড প্রকাশিত, আগস্ট ২০১৮

এই বইয়ে গদ্য মোট ১০টি। এর মধ্যে ২ জন হিন্দু লেখক। আর কবিতা মোট ১০টি। এর মধ্যে ৬ জন হিন্দু কবি।

গদ্য :

(১১০/১) পৃ. ১ প্রথম গল্প ‘কাবুলিওয়ালা’ লেখক : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১ খৃ., জোড়াসাঁকো-কলিকাতা, পশ্চিমবঙ্গ)।

...মিনি আসিয়াই আরম্ভ করিয়া দিল, ‘‘বাবা, রামদয়াল দারোয়ান কাককে কাউয়া বলছিল, সে কিচ্ছু জানেনা। না?

মন্তব্য : ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পের মধ্যে এ যুগের শিক্ষার্থীদের জন্য কোন শিক্ষণীয় নেই। বৃটিশ আমলের দাদন ব্যবসায়ী হিন্দুদের পাশাপাশি আফগানিস্তান থেকে আগত মুসলমান দাদন ব্যবসায়ী কাবুলিওয়ালারা এদেশের গরীবদের রক্ত শোষণ করেছে। তাছাড়া এখন জমিদার ও দারোয়ানের যুগ নেই। কচি শিক্ষার্থীদের এগুলি মনে করিয়ে দেওয়ারও কোন প্রয়োজন নেই।    

(১১১/২) পৃ. ৪ ...রাঙ্গাচেলি-পরা কপালে-চন্দন-আঁকা বধূবেশিনী মিনি সলজ্জভাবে আমার কাছে আসিয়া দাঁড়াইল।

মন্তব্য : হিন্দু ধর্ম মতে, কপালে চন্দনের তিলক আঁকালে মস্তিষ্ক ঠান্ডা থাকে, ধৈর্য শক্তি বৃদ্ধি পায়, মন শান্ত থাকে এবং একাগ্রতা বাড়ে। হিন্দু মুনি-ঋষিরা কপালে চন্দনের তিলক দেওয়ার বিধি প্রবর্তন করেন। এ কারণেই কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান হ’লে ব্রাম্মণরা উপস্থিত ভক্তদের কপালে চন্দন তিলক দিয়ে দেন।

মাদ্রাসা শিক্ষার বইয়ে ইসলামী গল্প-কাহিনী না দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প দেওয়ার কারণ কি? অথচ তিনি ছিলেন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী। যেমন তিনি তার ‘রীতিমত নভেল’ উপন্যাসের প্রথম পরিচ্ছেদে বলেন,

‘আল্লা হো আকবর’ শব্দে রণভূমি প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠিয়াছে। একদিকে তিন লক্ষ যবনসেনা, অন্যদিকে তিন সহস্র আর্যসৈন্য। ...ভারতের জয়ধ্বজা ভূমিসাৎ হইবে এবং ...হিন্দুস্থানের গৌরবসূর্য চিরদিনের মতো অস্তমিত হইবে।

হর হর বোম্ বোম্! পাঠক বলিতে পার, কে ঐ দৃপ্ত যুবা পঁয়ত্রিশজন মাত্র অনুচর লইয়া মুক্ত অসি হস্তে অশ্বারোহণে ভারতের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর করনিক্ষিপ্ত দীপ্ত বজ্রের ন্যায় শত্রুসৈন্যের উপরে আসিয়া  পতিত  হইল?  বলিতে  পার,  কাহার  প্রতাপে  এই অগণিত  যবনসৈন্য  প্রচন্ড  বাত্যাহত অরণ্যানীর  ন্যায়  বিক্ষুব্ধ  হইয়া  উঠিল? কাহার বজ্রমন্দ্রিত  ‘হর  হর  বোম্  বোম্’ শব্দে  তিনলক্ষ মেলচ্ছকণ্ঠের  ‘আল্লা  হো  আকবর’ ধ্বনি  নিমগ্ন  হইয়া  গেল?  কাহার  উদ্যত  অসির  সম্মুখে ব্যাঘ্র-আক্রান্ত  মেষযূথের  ন্যায়  শত্রুসৈন্য  মুহূর্তের  মধ্যে  ঊর্ধ্বশ্বাসে  পলায়নপর  হইল?  ...বলিতে পার কি পাঠক? ইনিই সেই ললিতসিংহ। কাঞ্চীর সেনাপতি। ভারত-ইতিহাসের ধ্রুব নক্ষত্র’। এই ছোট্ট একটি পরিচ্ছেদের মধ্যেই তিনি মুসলমানদের দু’বার ‘যবন’, একবার ‘ম্লেচ্ছ’ ও একবার ‘মেষ’ বলে মনের ঝাল মিটিয়েছেন।

তিনি তার ‘সোনার তরী’ কাব্য বইয়ে ‘হিং টিং ছট্’ কবিতায় মুসলমানদেরকে দু’বার ‘যবন’ ও চার বার ‘ম্লেচ্ছ’ বলেছেন। অথচ এগুলি স্রেফ গালি ছাড়া কিছুই নয়।

‘শিবাজী উৎসব’ কবিতায় তিনি বলেন, ‘এক ধর্ম রাজ্য হবে এ ভারতে এ মহাবচন করিব সম্বল’।

বস্ত্ততঃ এইরূপ হীন সাম্প্রদায়িক মানসিকতার কারণে এবং কুষ্টিয়ার শিলাইদহে বসে পূর্ববঙ্গের গরীব কৃষকদের উপর জমিদারী শোষণ অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করেছিলেন, একইভাবে তিনি ও তার সমমনাদের আন্দোলনের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ১৯২১ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে যায়। বর্তমানে মোদী-অমিত শাহ রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের ‘ভারতজুড়ে এক হিন্দু ধর্ম রাজ্যের প্রতিষ্ঠা’য় আত্মনিয়োগ করেছেন।

(১১২/৩) পৃ. ৯  লখার একুশে   -লেখক আবুবকর সিদ্দিক (জন্ম : ১৯৩৪, বাগেরহাট)

ছোট ছেলে লখা ফুল তুলতে গিয়ে ফুলকে বলে, ‘এসো, এসো, লক্ষ্মীসোনারা সব নেমে এসো তো’। ...মিছিলে পা মিলিয়ে সেও চলেছে শহিদ মিনারে ফুল দিতে।

মন্তব্য : শহীদ মিনার ইসলামী সংস্কৃতির বিরোধী। এগুলি মূর্তিপূজার শামিল। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য এসবের মধ্যে কোন শিক্ষণীয় নেই। তাছাড়া ছেলের নাম ‘লখা’ ফুলকে ‘লক্ষ্মীসোনা’ বলার মাধ্যমে হিন্দু দেবী লক্ষ্মীপূজার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। ‘লখা’ নামটির বিশেষ্য পদে কোন অর্থ নেই। ক্রিয়াপদে এর অর্থ দর্শন করা বা দেখা। অবশ্য ‘লখাই’ হ’ল চাঁদ সওদাগরের পুত্র লখিন্দর। যিনি মনসামঙ্গলে বেহুলার স্বামী। লেখক আবুবকর সিদ্দিক যদি ‘লখা’ নাম দ্বারা ‘লখাই’ বুঝিয়ে থাকেন, তাহ’লে সেটি তার হিন্দু মানসিকতার প্রমাণ হ’তে পারে। এইসব অর্থহীন নাম এ দেশের সিলেবাসে অবশ্যই পরিত্যাজ্য।  

(১১৩/৪) পৃ. ১৩  ‘মরু-ভাস্কর’ হাবীবুল্লাহ্ বাহার (১৯০৬-১৯৬৬ খৃ., ফেনী)

‘যেসব মহাপুরুষের আবির্ভাবে পৃথিবী ধন্য হয়েছে... তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। ...জীবনী আলোচনা করতে গিয়ে সকলের আগে আমাদের চোখে পড়ে তাঁর ঐতিহাসিকতা’।

মন্তব্য : নিবন্ধের শুরুতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ‘মহাপুরুষদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ’ বলা হয়েছে। অথচ তিনি ছিলেন নবী ও রাসূলগণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। মহাপুরুষ ও নবীর মধ্যে আলো ও আাঁধারের পার্থক্য। সাধনায় ‘মহাপুরুষ’ হওয়া যায়। কিন্তু ‘নবী’ হওয়া যায় না। ইতিহাসের সৃষ্টি হয়েছে অনেক পরে। অথচ লেখকের চোখে হাদীছ পড়েনি, বরং পড়েছে ঐতিহাসিকতা। এটি সম্পূর্ণ অবাস্তব ও অনৈতিহাসিক ব্যাপার। শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিকে হাদীছের চাইতে ইতিহাসকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতিহাস হ’ল ব্যক্তির কল্পিত বর্ণনা। আর হাদীছ হ’ল শেষনবী (ছাঃ)-এর কথা, কর্ম ও সম্মতির নাম। রাবীদের মাধ্যমে যা বর্ণিত হয়েছে এবং রিজাল শাস্ত্রবিদগণের মাধ্যমে যার শুদ্ধাশুদ্ধি যাচাইকৃত হয়েছে।

(১১৪/৫) পৃ. ১৩ ‘আল্লাহর নবী হওয়া সত্ত্বেও তিনি নিজেকে সাধারণ মানুষই মনে করতেন। ...তিনি হয়েছিলেন আরবের অবিসংবাদিত নেতা। 

মন্তব্য : আল্লাহর নবীর ব্যাখ্যা দেওয়া উচিৎ ছিল। কারণ নিবন্ধের শুরুতে তাঁকে ‘মহাপুরুষ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। আর মহাপুরুষ ও নবী কখনো এক নয়। ‘তিনি নিজেকে সাধারণ মানুষই মনে করতেন’ বলে যদি তাঁর সাধারণ মানবিক আচরণ বুঝানো হয়, তাহ’লে বক্তব্য ঠিক আছে। আর যদি তাঁকে নূরের নবী মনে করা হয়, তাহ’লে বক্তব্য সঠিক নয়। কেননা তাঁর সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তুমি বল, নিশ্চয় আমি তোমাদেরই মত একজন মানুষ ব্যতীত নই’ (কাহফ ১৮/১১০)। আর তিনি কেবল নবী ছিলেন না, বরং ছিলেন শেষনবী। তাঁর পরে আর কোন নবী নেই।

অতঃপর ‘তিনি হয়েছিলেন আরবের অবিসংবাদিত নেতা’ কথাটি ভুল। কারণ তিনি কাফেরদের নেতা ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন মুমিনদের নেতা। মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত তিনি কাফেরদের বিরুদ্ধে সেনা প্রেরণ করেছেন। আর তিনি নেতা হননি, বরং আল্লাহ তাঁকে শেষনবী হিসাবে বাছাই করেছিলেন এবং তাঁকে বিশ্বমানবতার কল্যাণের জন্য সর্বশেষ নবী ও রাসূল হিসাবে প্রেরণ করেছিলেন (আ‘রাফ ৭/১৫৮; সাবা ৩৪/২৮; আহযাব ৩৩/২১, ৪০)। মানুষ তাঁকে নেতা হিসাবে মানুক বা না মানুক। নেতার জন্য কর্মী আবশ্যক। কিন্তু নবীর জন্য কর্মী বা অনুসারী অপরিহার্য নয়। কারণ ক্বিয়ামতের দিন কোন কোন নবী উম্মত ছাড়াই একাকী উঠবেন (বুখারী হা/৫৭০৫)। কারু বা মাত্র একজন উম্মত বা অনুসারী থাকবে (মুসলিম হা/১৯৬; মিশকাত হা/৫৭৪৪)।  

(১১৫/৬) পৃ. ১৪ ‘জ্ঞান যেন হারানো উটের মতো’-...। ‘জ্ঞানসাধকের দোয়াতের কালি শহিদের লহুর চাইতেরও পবিত্র’।

মন্তব্য : ১ম হাদীছটি খুবই যঈফ (যঈফুল জামে‘ হা/৪৩০২)

২য় হাদীছটি মওযূ‘ বা জাল (সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৮৩২)। এর দ্বারা আল্লাহর পথে শহীদগণের উচ্চ মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। আর জ্ঞান বলতে অহি-র জ্ঞান বুঝায়। নাস্তিকদের জ্ঞান কখনোই আল্লাহর নিকট মর্যাদাপূর্ণ নয়। আর ‘জ্ঞানসাধকের কালি’ বলতে অহি-র জ্ঞানসাধকের কলমের কালি বুঝানো হয়। যে জ্ঞান অহি-র অভ্রান্ত জ্ঞানের বিপরীত, তা কখনোই গ্রহণীয় নয়। যেমন মানবতার  দৃষ্টিতে নমরূদ, ফেরাঊন ও আবু জাহলদের জ্ঞানের কোন মূল্য নেই। বর্তমান যুগেও তাদের অনুসারীদের জ্ঞানের কোন মূল্য নেই। যদিও তারা কাফের-মুনাফিকদের নিকটে বড় জ্ঞানী ও জ্ঞানসাধক বলে পরিচিত।       

(১১৬/৭) পৃ. ১৯-২০  ‘শব্দ থেকে কবিতা’- হুমায়ুন আজাদ (১৯৪৭-২০০৪ খৃ., মুন্সীগঞ্জ)।

লেখক কিশোরদের কবিতা লেখার উৎসাহ দিতে গিয়ে বলেন, -‘আর কথা বলতে হবে, নাচতে হবে, ছবি আঁকতে হবে ছন্দে’। চাঁপা ফুলের গন্ধে...‘বেজে উঠল স্বপ্নে দেখা নাচের ছন্দের নূপুর’।

মন্তব্য : এখানে সপ্তম শ্রেণীর উঠতি বয়সের দু’জন তরুণ-তরুণীর মুখোমুখি বসার ছবি দেওয়া হয়েছে। তরুণের হাঁটুসহ রান পর্যন্ত খোলা। আর বইগুলি মাটিতে ফেলা। তরুণীর মাথায় কাপড় নেই, বুকে ওড়না নেই। হাফ-হাতা ফ্রক গায়ে (পৃ. ১৮)। এগুলি কি মুসলমানদের জন্য গ্রহণীয়? তাছাড়া উক্ত ৩ পৃষ্ঠার বিরাট নিবন্ধে স্রেফ কিছু কল্পনার ফানুস ছাড়া কোথাও কোন শিক্ষণীয় নেই।  

(১১৭/৮) পৃ. ২৩  ‘হযরত আব্দুল কাদির জিলানি (র.)’

পৃ. ২৩ ...আমাদের মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) এর বংশে জন্মগ্রহণ করেন।

মন্তব্য : এটি ভিত্তিহীন। বিশ্বস্ত জীবনীকার হাফেয শামসুদ্দীন যাহাবী (৬৭৩-৭৪৮ হি.) বলেন, তাঁর নাম আব্দুল ক্বাদের বিন আবু ছালেহ আব্দুল্লাহ বিন জীলী দোস্ত (جيلي دوست)। কেউ কেউ তাঁর বংশধারা হাসান বিন আলী (রাঃ) পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন’ (তারীখুল ইসলাম ৩৯/৮৭ পৃ.)। আমাদের প্রশ্ন, হাসান বিন আলী (রাঃ) পর্যন্ত আব্দুল ক্বাদের জীলানীর বংশধারা বিশ্বস্ত সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে কি? তাছাড়া এদেশে এখনো ‘আওলাদে রাসূল’ নামধারী লোকদের আনাগোনা দেখা যায়। 

(১১৮/৯) পৃ. ২৪ ...মায়ের কুরআন তিলাওয়াত শুনে তিনি পাঁচ বছর বয়সেই কুরআনের আঠারো পারা মুখস্থ করে ফেলেন’। কাছাকাছি একই মর্মে এসেছে, ‘আমি মায়ের তেলাওয়াত শুনে শুনে ১৮ পারা পর্যন্ত মায়ের গর্ভে থাকাকালীন সময়ে মুখস্ত করে ফেলেছি’ (দৈনিক ইনকিলাব, ২৮/০১/২০১৬, আউলিয়াদের জীবন : বড় পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)

মন্তব্য : হাম্বলী মাযহাবের ফক্বীহ হযরত আব্দুল ক্বাদের জীলানী (রহঃ) (৪৭০-৫৬১ হি.) সম্পর্কে উল্লেখিত কাহিনী ভিত্তিহীন ও ডাহা মিথ্যাচার মাত্র।

(১১৯/১০) পৃ. ২৫ ...মা অতি যত্নে জামার বগলের নিচ চল্লিশটি দিনার সেলাই করে দিলেন যাতে ডাকাতি বা চুরি না হয়। ...তাঁর সোহবতে থেকে এই ডাকাত একদিন আল্লাহর অলি হয়েছিলেন। এমনই সত্যবাদী বালক হলেন পরবর্তী কালের পীরানে পীর গাউসুল আজম হযরত আব্দুল কাদির জিলানি (র.)।

মন্তব্য : ‘তাঁর সোহবতে থেকে এই ডাকাত একদিন আল্লাহর অলি হয়েছিলেন’। পাঠ্য বইয়ের এই অংশের সাথে দৈনিক ইনকিলাব, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ‘তারাও কলেমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেলেন’। ‘ডাকাত সর্দারের সাথে আরো ৬০ জন অশ্বারোহী ডাকাত ছিলেন। তারাও কলেমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেলেন’ (দৈনিক ইনকিলাব, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৬, আউলিয়াদের জীবন : বড় পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)

কথাগুলি পরস্পরে গরমিল। আসল কথা হ’ল, উক্ত কথাটির যেহেতু ভিত্তিই নেই। সেহেতু গরমিল হওয়াটাই স্বভাবিক।

তাছাড়া ‘গাউছুল আযম’ অর্থ ‘শ্রেষ্ঠ প্রার্থনা কবুলকারী’। তিনি আল্লাহ ছাড়া কেউ নন। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব’ (মুমিন ৪০/৬০)। অথচ এই বিশেষণ লাগানো হয়েছে একজন মানুষের নামের সাথে। যা পরিষ্কারভাবে শিরক।

বিদ‘আতী ছূফীরা তাদের কল্পিত বাতেনী সাম্রাজ্যের মাধ্যমে বিশ্ব পরিচালনার জন্য আল্লাহর পক্ষে কয়েকটি স্তরে একদল আউলিয়া নির্ধারণ করেছেন। যারা গায়েব জানেন এবং তাদের নিকট আসমান ও যমীনের কোন কিছুই গোপন থাকে না (২২৯ পৃ.)। এমনকি তারা জান্নাতে তাদের স্থান সমূহ জানেন। তাদের কোন ভয় নেই বা চিন্তা নেই (২২৫ পৃ.)। তাদের কল্পনা মতে প্রধান আউলিয়ার নাম ‘গাউছ’। যিনি প্রতি যামানায় এক জন করে থাকেন। তার নীচে থাকেন ৪ জন ‘আওতাদ’, যারা পৃথিবীর হেফাযত করেন। ৭ জন ‘কুতুব’, যারা সপ্ত যমীনের দায়িত্বশীল। ৪০ জন ‘আবদাল’, যারা পৃথিবীর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিযুক্ত। তাদের একজন মারা গেলেই তার বদলে আল্লাহ আরেকজনকে নিযুক্ত করেন। ৩০০ জন ‘নুজাবা’, যারা সৃষ্টি জগতের অবস্থা পরিবর্তনের দায়িত্ব পালন করেন (মোট ৩৫২ জন)। এমনকি তাদের ধারণা মতে, এইসব আউলিয়ারা বিশ্ব পরিচালনায় এমন ক্ষমতাশালী যে, তারা কোন বিষয়ে ‘হও’ বললেই তা হয়ে যায় (২২৩ পৃ.) [আব্দুর রহমান আব্দুল খালেক : আল-ফিকরুছ ছূফী, মাকতাবা ইবনু তায়মিয়াহ, কুয়েত ২য় সংস্করণ, তাবি]। অথচ আল্লাহ বলেন, ‘যদি আল্লাহ তোমাকে কোন কষ্টে নিপতিত করেন, তবে তিনি ছাড়া তা দূর করার কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার প্রতি কোন কল্যাণ চান, তবে তার অনুগ্রহকে প্রতিরোধ করার কেউ নেই’ (ইউনুস ১০/১০৭)

তদের অনেকের আক্বীদা হ’ল, পৃথিবীবাসী আউলিয়াদের নিকট প্রয়োজন সমূহ পেশ করেন। অতঃপর আল্লাহর রহমত নাযিল হয় প্রথমে ৩১৯ জন ‘নুজাবা’র কাছে। অতঃপর সেটি চলে যায় ৭০ জন ‘নক্বীব’-এর কাছে। সেখান থেকে চলে যায় ৪০ জন ‘আবদাল’-এর কছে। সেখান থেকে চলে যায় ৭ জন ‘কুতুব’-এর কাছে। সেখান থেকে যায় ৪ জন ‘আওতাদ’-এর কাছে। সেখান থেকে যায় ‘গাউছ’-এর কাছে। যিনি থাকেন মক্কায় (মোট ৪৪১ জন) (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৭/৯৭ পৃ.;  ১১/৪৩৩, ৪৩৮)

জানতে ইচ্ছা হয়, ‘গাউছুল আযম’ মক্কা ছেড়ে ঢাকায় কেন? তাছাড়া একজন ‘গাউছুল আযম’ একই সময়ে চট্টগ্রামের মাইজভান্ডার দরবারে ও ঢাকার গাউছুল আযম কমপ্লেক্সে  কিভাবে থাকেন? বিশ্ব পরিচালনার শ্রেষ্ঠ আউলিয়া যখন আমাদের রাজধানীতেই থাকেন, তখন ছোট্ট এডিস মশাগুলোর কামড় থেকে রাজধানী বাসীকে কেন বাঁচাতে পারেন না? কেন রাজধানী সহ সারা দেশে শত শত মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে? বস্ত্ততঃ এ সবই প্রকাশ্য কুফরী আক্বীদা। এ থেকে তওবা করা অপরিহার্য।

(১২০/১১) পৃ. ২৬  ‘শেষে তিনি কঠোর সাধনায় মন দিলেন। লোকালয় থেকে দূরে জঙ্গলে নির্জন পরিবেশে চলে গেলেন। সমস্ত পার্থিব চিন্তা মন থেকে ঝেড়ে মুছে একমাত্র আল্লাহর জিকিরে দিন কাটাতে লাগলেন। আল্লাহর ধ্যানে বাধা সৃষ্টি হয় বলে তিনি আরাম-আয়েশ ত্যাগ করলেন’।

(১২১/১২) পৃ. ২৭ ...রাতের ঘুমকে পরিত্যাগ করে সারারাত ইবাদতে কাটিয়ে দিতেন। এমনিভাবে কঠোর সাধনার ফলে হযরত আবদুল কাদির জিলানি (র.) একজন কামেল অলিতে পরিণত হলেন। তিনি হয়ে উঠলেন যেন এক ভিন্ন জগতের মানুষ। ...গোসলের পর তিনি এশার নামায আদায় করলেন। মুনাজাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে তিনি ইন্তেকাল করলেন’।

মন্তব্য : এগুলি স্বভাবধর্ম ইসলামের বিরোধী। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে আল্লাহভীরু। আমি ছিয়াম রাখি, ছালাত আদায় করি এবং আমি বিবাহ করেছি। অতএব যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল, সে ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৫)। তাছাড়া বিশ্বস্ত জীবনীকার হাফেয যাহাবী (৬৭৩-৭৪৮ হি.) আব্দুল ক্বাদের জীলানীর জীবনীতে তাঁর সম্পর্কে প্রচলিত বহু গল্প ও কাহিনী জমা করেছেন (তারীখুল ইসলাম ৩৯/৮৯-১০২ পৃ.)। সেখানে বলা হয়েছে, এগুলির মধ্যে  কিছু সঠিক, বাজে ও মিথ্যা রয়েছে’ (৩৯/১০০ পৃ.وبالصحيح والواهي والمكذوب)। কিন্তু কিস্ময়ের কথা হ’ল এই, এদেশে প্রচলিত উপরোক্ত গল্পসমূহের কোনটিই তার মধ্যে নেই। তাছাড়া ২৭টি পুত্র ও ২২টি কন্যা সন্তান সহ মোট ৪৯টি সন্তানের জনক (ঐ ৩৯/৯৭ পৃ.) হয়ে কোন পিতা কিভাবে জঙ্গলে যেয়ে সাধনা করতে পারেন, সেটাও ভাববার বিষয়।    

(১২২/১৩) পৃ. ৩০ ‘পিতৃপুরুষের গল্প’ লেখক : হারুন হাবীব (জন্ম : ১৯৪৮ খৃ.)।

পৃ. ৩২ ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, আর সেইসব রক্তের স্মৃতিকে ভবিষ্যতের বংশধরদের জন্য ধরে রাখতে গিয়েই দেশে এই শহিদ মিনারের মতো স্মৃতিসৌধ গড়ে উঠেছে। মামাকে বলে, ‘মামা এবার কি তুমি ফুল দিয়ে আসবে শহিদ মিনারে?’ ‘আসব। গ্রামে থাকি, অনেক বছর আসতে পারি নি। এবার তোকে নিয়েই আসব (১২৩/১৪) পৃ. ৩৩ শহিদ মিনার থেকে কাজল মামা আর অন্তু জুতো পরে নেয়। ফিরে আসার সময় মামা বলেন, ‘অন্তু চল, আমরা দু’জনে এক মিনিট দাঁড়িয়ে একুশে ফেব্রুয়ারির শহিদদের শ্রদ্ধা জানাই।’ অন্তু ও কাজল মামা নীরবে শ্রদ্ধা জানায়।

(১২৪/১৫) পৃ. ৩৫  সৃজনশীল প্রশ্ন

সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রিয়তি বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রথমবারের মতো ঢাকায় বেড়াতে এসেছে। একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাবা-মা ওকে নিয়ে যায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে। বাবা-মায়ের সাথে সেও ফুল দিয়ে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। 

মন্তব্য : ‘পিতৃপুরুষের গল্প’ শিরোনাম দিয়ে তার মধ্যে শহীদ মিনারের গল্প টেনে আনা অপ্রাসঙ্গিক হয়েছে। তাছাড়া ভাষা শহীদ বলতে সালাম, জববার, রফীক, বরকত চার জনকে বুঝায়। যারা ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে ঢাকাতে আয়োজিত মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। নিঃসন্দেহে এটি স্মরণীয় ঘটনা। কিন্তু ভাষা আন্দোলন তার বহু পূর্ব থেকেই শুরু হয়েছে। অতএব সঠিকভাবে স্মৃতিচারণ করতে গেলে সেইসব অতীত নেতৃবৃন্দের স্মৃতিচারণ করতে হবে। অতঃপর শহীদ মিনার বানানো এবং তাতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো ইসলামী রীতির বিরোধী। এরপরেও ‘অন্তু ও কাজল’ কোন ইসলামী নাম নয়। বস্ত্ততঃ সবকিছুর মধ্যেই সুকৌশলে শিক্ষার্থীদের মন থেকে ইসলামকে মুছে দেওয়ার চক্রান্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।  

(১২৫/১৬) পৃ. ৩৬ ‘ছবির রং’ লেখক : হাশেম খান (জন্ম ১৯৪১ খৃ.)

পৃ. ৩৮ চারুকলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাপ্রাপ্ত চিত্রশিল্পীদের ছবির সামনে দাঁড়ালে একই কথা মনে হবে। বাংলাদেশের শিল্পীরা অনেক মুক্ত সহজ ও সাহসী। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, বেগুনি, কমলা, কালো ও সাদা রংকে শিল্পীরা সুন্দরভাবে ছবিতে, নকশিকাঁথায়, হাতপাখায়, পুতুলে, হাঁড়িপাতিলে ব্যবহার করছেন।

মন্তব্য : ছবি-মূর্তি আঁকা ও পুতুল বানানোর মধ্যে চারুকলা শিক্ষা ইসলামী সংস্কৃতির বিরোধী। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদেরকে মূর্তি পূজার প্রতি উদ্বুদ্ধ করার এই অপপ্রয়াস অবশ্যই বন্ধ করা উচিৎ।

(১২৬/১৭) পৃ. ৪০ ‘রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ লেখিকা: সেলিনা হোসেন (জন্ম : ১৯৪৭ খৃ.)

প্রর্দাপ্রথা কঠোরভাবে মানা হতো বলে মেয়েদের শিক্ষা লাভের কোন সুযোগ ছিল না।

মন্তব্য : এটি সম্পূর্ণ বাজে কথা। বৃটিশ আমলে মুসলিম মেয়েদের পর্দার মধ্যে থেকে শিক্ষা লাভের সুযোগ না থাকার কারণেই তারা শিক্ষা থেকে পিছিয়ে ছিল। বর্তমান স্বাধীন দেশেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। সে যুগে পর্দার মধ্যে থেকে তারা যতটুকু লেখাপড়া শিখেছিল, তাতে তাদের সম্ভ্রম অক্ষুণ্ণ থাকত। তাদের স্বামী ও অভিভাবকরাই তাদের ভরণ-পোষণ করত। বর্তমান যুগে তাদেরকে পর্দা থেকে বের করে এনে উচ্চশিক্ষার নামে সহশিক্ষা ও সহচাকুরীর মাধ্যমে তাদের সম্ভ্রম লুণ্ঠিত হচ্ছে। সেই সাথে মাতৃত্ব ও সন্তান পালনের গুরু দায়িত্ব পালন ব্যাহত হওয়ায় পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে যাচ্ছে। এমনকি কোন কোন পরিবারে ভাঙ্গন চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। বিগত সময়ে মসলিম মেয়েদের নিকট পর্দা রক্ষা করা ছিল মুখ্য। কিন্তু বর্তমান যুগে সেটি অনেকটা গৌণ হয়ে গেছে। আর পর্দহীনতাকেই বলা হচ্ছে আধুনিকতা। অতএব ইসলামী পর্দা রক্ষা করেই নারীকে পৃথক পরিবেশে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে হবে। কোন অবস্থাতেই পুরুষের সঙ্গে সহশিক্ষা ও সহচাকুরী নয়।  

(১২৭/১৮) পৃ. ৫২-৫৫ ‘বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা’ লেখক এ. কে. শেরাম।

...তারা আজ জাতীয় মূল ধারার অংশ।

মন্তব্য : বাংলাদেশের এই সব ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিসত্তার জীবন ও সংস্কৃতির মধ্যে দেশের ৯০ শতাংশ মুসলিম শিক্ষার্থীদের শিক্ষণীয় কিছু নেই। তদুপরি তাদের মণিপুরী নাচ ও সাঁওতাল নাচের ছবি ক্লাসের বইয়ে দেওয়ার কোন প্রয়োজন ছিলনা। ‘তারা আজ জাতীয় মূল ধারার অংশ’ বলে বোর্ড কর্তৃপক্ষ কি বুঝাতে চেয়েছেন, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। এদেশের জাতীয় মূল ধারা হ’ল ইসলাম। অতএব ক্ষুদ্র-বৃহৎ সকল মানুষ আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলামের মধ্যে যথাযথভাবে প্রবেশ করুক, সেটাই এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।

(১২৮/১৯) পৃ. ৬২-৬৩ ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘যে দধীচিদের হাড় দিয়ে ঐ বাষ্প শকট চলে’। এখানে দধীচি শব্দের অর্থ ভারতীয় পুরাণে উল্লেখিত একজন ত্যাগী কুলি’।

এখানে কবি ত্যাগী দধীচির সঙ্গে ত্যাগী কুলি-মজুরের তুলনা করেছেন। অতঃপর তিনি বলেছেন, ‘তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরই গান’ তাদেরই ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে উত্থান’।

মন্তব্য : অত্র কবিতায় কুলি-মজুরদের দেবতার আসনে বসিয়ে প্রকারান্তরে তাদেরকে অন্যদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ মানুষের মধ্যে এই স্বাভাবিক কর্মবণ্টন আল্লাহর সৃষ্টিকৌশলের অংশ (যুখরুফ ৪৩/৩২)। মালিক-শ্রমিক যে কেউ দায়িত্বহীন ও অনৈতিক কর্ম করবে, সে অবশ্যই আখেরাতে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হবে। অতএব কুলি-মজুরদের ঢালাওভাবে ‘দেবতা’ বলে তাদেরকে প্রকারান্তরে কম্যুনিজমের হিংস্র শ্রেণী সংগ্রামের দিকে প্ররোচিত করা হচ্ছে। যা দেশের শিল্প উন্নয়নের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট কবে। যা ইসলামের শ্রমনীতির সম্পূর্ণ বিরোধী।     

(১২৯/২০) পৃ. ৬৬ ‘আমার বাড়ি’ কবি : জসীম উদ্দীন (১৯০৩-১৯৭৬ খৃ.)

   - ‘আমার বাড়ি যাইও ভোমর, বসতে দিব পিঁড়ে’।

মন্তব্য : এখানে নাচের ভঙ্গিতে দাঁড়ানো নগ্ন মাথার মেয়েটি ‘ভোমর’ বলে গাছের শাখায় বসা পাখির দিকে ইঙ্গিত করলেও এর মাধ্যমে সে তার প্রিয়জনকে আহবান করবে। যা তাকে পরকীয়া প্রেমের দিকে নিয়ে যাবে। অতএব এসব কবিতা উঠতি বয়সের কিশোরীদের শিখানোর কোন প্রয়োজন নেই। বর্তমানে কিশোর অপরাধ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার পিছনে এইসব কবিতার কুপ্রভাব অবশ্যই রয়েছে।   

(১৩০/২১) পৃ. ৬৬-৬৭ ‘চাঁদ মুখে তোর চাঁদের চুমো মাখিয়ে দেব সুখে। তারা ফুলের মালা গাঁথি, জড়িয়ে দেব বুকে’।

মন্তব্য : এই কবিতায় ‘জলপান যে করতে দেব’ লেখা হয়েছে। অথচ মুসলমানরা জলপান করেনা, পানি পান করে। ভোমরকে ‘থামিও তব রথ’ বলে তার বাড়িতে আসতে বলা হচ্ছে। অথচ এদেশের প্রিয়জনেরা ‘রথে’ চড়ে যাতায়াত করেনা। ‘রথ’কে হিন্দুরা দেবতা মনে করে। বাল্য বয়সে    এইসব ভাষা শিখানোর মাধ্যমে এদেশের মুসলিম শিক্ষার্থীদের যবান ও কলম দিয়ে মুশরিকদের ভাষা রপ্ত করানো হচ্ছে। যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।   

(১৩১/২২) পৃ. ৭৪-৭৫  ‘সবার আমি ছাত্র’ -কবি সুনির্মল বসু (১৯০২-১৯৫৭ খৃ.)

        বিশ্ব-জোড়া পাঠশালা মোর,

      সবার আমি ছাত্র,

মন্তব্য : কবি তার ২১ লাইনের দীর্ঘ কবিতায় আকাশ, বায়ু, পাহাড়, খোলা মাঠ, সূর্য, চাঁদ, সাগর, নদী, মাটি, ঝরণা, শ্যাম বনানী ও পৃথিবী সবার কাছে কবি শিক্ষা পান। কিন্তু এসবের সৃষ্টিকর্তা কে? সে বিষয়ে কবিতার মধ্যে কোন শিক্ষা নেই। উচিৎ ছিল সেটাই তুলে ধরা। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না, চন্দ্রকেও না। বরং সিজদা কর আল্লাহকে, যিনি এগুলি সৃষ্টি করেছেন। যদি তোমরা সত্যিকার অর্থে তাঁরই ইবাদত করে থাক’ (হা-মীম সাজদাহ/ফুছছিলাত ৪১/৩৭)। তাছাড়া এর মধ্যে হিন্দুদের অদ্বৈতবাদী দর্শনের প্রচার রয়েছে। যেখানে স্রষ্টা ও সৃষ্টি একই সত্তা। যা তাওহীদের ঘোর বিরোধী। কারণ ইসলামে স্রষ্টা ও সৃষ্টি সম্পূর্ণ পৃথক। অতঃপর ‘বিশ্ব-জোড়া’ বানানের মাঝে ড্যাশ (-) হবেনা। এর অর্থ হ’ল, বিশ্ব যা, জোড়া তাই। যেমন হাসি-খুশী, কুলি-মজুর, কৃষক-শ্রমিক ইত্যাদি।

(১৩২/২৩) পৃ. ৭৮     শ্রাবণে   

         -সুকুমার রায় (১৮৮৭-১৯৩২ খৃ.)

জল ঝরে জল ঝরে সারাদিন সারারাত-

...জলে জলে জলময় দশদিক টলমল,

...অবিরাম একই গান, ঢাল জল ঢাল জল।

মন্তব্য : কবি নিজে হিন্দু। সেহেতু তার ভাষায় ‘জল ঝরে’ কথা ঠিক আছে। কিন্তু এদেশের শিক্ষার্থীরা ‘জল’ পান করে না, ‘পানি’ পান করে। এদেশের শিক্ষার্থীদের চোখ দিয়ে পানি ঝরে। জল ঝরে না। আর শ্রাবণে আকাশ থেকে জল নয়, বরং বৃষ্টি ঝরে। সুকুমার রায়ের এই ‘জলময়’ কবিতায় ৮ বার ‘জল’ শব্দ আনা হয়েছে। এগুলি মুখস্ত করিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় পানি ঢেলে দেওয়ার অর্থ কি? ‘শ্রাবণে’ কবিতার জন্য কি অন্য কোন কবিকে বাছাই করা যেত না? যারা এদেশের ভাষায় কবিতা লেখেন? যদিও আমরা দাবি করি যে, আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। যদি সেটাই হয়, তাহ’লে ভাষার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের গোলামী কেন?     

(১৩৩/২৪) পৃ. ৮৩                                                                                                   ‘গরবিনী মা জননী’

              -সিকান্দার আবু জাফর (১৯১৮-১৯৭৫ খৃ.)।

‘ওরে আমার মা-জননী

জন্মভূমি বাঙলারে

তোর মত আর পুণ্যবতী

ভাগ্যবতী বল মা কে \’

মন্তব্য : কবি এখানে জন্মভূমিকে মা-জননী, পুণ্যবতী ও ভাগ্যবতী বলে অভিহিত করেছেন। মুসলমান নামধারী হয়েও মাটিকে প্রাণীবাচক সম্বোধন করে তিনি পরিষ্কারভাবে শিরক করেছেন। মাটির পাপ-পূণ্য করার ক্ষমতা নেই। মাটিকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। আর আল্লাহর হুকুমেই বৃষ্টিপাতের ফলে মৃত মাটি জীবিত হয় এবং তা থেকে শস্য উৎপাদিত হয় (বাক্বারাহ ১৬৪)। ৩৩ লাইনের ঐ ‘সংক্ষেপিত’ কবিতায় কবি সর্বত্র কেবল মা মা করেছেন এবং শেষ লাইনে বলতে চেয়েছেন,    যুগ-চেতনার চিত্তভূমি

                নিত্যভূমি বাঙলারে \

এর দ্বারা তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, তার সমস্ত চেতনার উৎস তার জন্মভূমি। অথচ মুসলিম শিক্ষার্থীদের সমস্ত চেতনার উৎস তাওহীদ। অর্থাৎ আল্লাহর উপর ভরসা করেই তারা সকল কর্ম সম্পাদন করে এবং তার সাহায্যেই তারা দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা কামনা করে। উক্ত কবিতায় তাওহীদের এই কালজয়ী চেতনাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। শেষে একজন একতারা হাতে বাউলের ছবি দিয়ে বোর্ড কতৃপক্ষ কি বুঝাতে চেয়েছেন তা বোধগম্য নয়।

(১৩৪/২৫) পৃ. ৮৬ সাম্য কবিতা- সুফিয়া কামাল (১৯১১-১৯৯৯ খৃ.)। কবিতাটিতে সকলে মিলেমিশে কাজ করে দেশকে উন্নত করার কথা বলা হয়েছে।  

মন্তব্য : এখানে কয়েকজন মাথাখোলা নারী ও কয়েকজন পুরুষের পরস্পরে হাতে হাত ধরে সাম্যের চিত্র দেখানো হয়েছে। যা স্রেফ বেহায়াপনা ছাড়া কিছুই নয়।

(১৩৫/২৬) পৃ. ৮৯ ‘কোরানের বাণী’ -সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮২-১৯২২ খৃ.)

মন্তব্য : ‘কোরানের বাণী’ হিন্দু কবির মুখ দিয়ে কেন? এর মধ্যে কুরআনের বাণী প্রচার উদ্দেশ্য নাকি হিন্দু কবির নাম প্রচার উদ্দেশ্য, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। যদি ঐ কবি কুরআনের ভক্তই হ’তেন, তাহলে তিনি কুফরী ছেড়ে দিয়ে ইসলাম কবুল করতেন। অতএব কুরআনের বাণীর জন্য কোন মুসলিম কবির লিখিত কবিতা পেশ করা উচিৎ ছিল। এভাবে ৯৬ পৃষ্ঠার পুরা বইটিতে কোন স্থানে উল্লেখযোগ্য কোন ইসলামী শিক্ষা নেই।

(চলবে)






শিক্ষকের মৌলিক দায়িত্ব ও কর্তব্য, শিশুর পাঠদান পদ্ধতি ও শিখনফল নির্ণয় - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে আহলেহাদীছগণের অগ্রণী ভূমিকা - ড. নূরুল ইসলাম
মানব জাতির প্রতি ফেরেশতাদের দো‘আ ও অভিশাপ - মুহাম্মাদ আবু তাহের, পরিচালক, কিউসেট ইনস্টিটিউট, সিলেট।
ছিয়ামের ফাযায়েল ও মাসায়েল - আত-তাহরীক ডেস্ক
দ্বীনের পথে ত্যাগ স্বীকার (২য় কিস্তি) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
হাদীছের অনুবাদ ও ভাষ্য প্রণয়নে ভারতীয় উপমহাদেশের আহলেহাদীছ আলেমগণের অগ্রণী ভূমিকা - ড. নূরুল ইসলাম
জান্নাতের পথ (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - ড. নূরুল ইসলাম
আক্বীদা ও আহকামে হাদীছের প্রামাণ্যতা (৯ম কিস্তি) - মীযানুর রহমান মাদানী
মানুষকে কষ্ট দেওয়ার পরিণতি - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
মুমিন কিভাবে দিন অতিবাহিত করবে - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
মৌলবাদের উত্থান - মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান
তাহরীকে জিহাদ : আহলেহাদীছ ও আহনাফ (১ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আরও
আরও
.