মহামনীষীদের পিছনে মায়েদের ভূমিকা (৬ষ্ঠ কিস্তি)

পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫

ইমাম শাফেঈ (রহঃ)-এর মা

ইমাম শাফেঈ (রহঃ)-এর মায়ের নাম ফাতেমা বিনতে আব্দুল্লাহ। ফাতেমার পিতা ইয়ামনের বনু আযদ গোত্রের লোক ছিলেন। কেউ কেউ তার নাম ফাতেমা বিনতে আব্দুল্লাহ বিন হুসাইন বিন হাসান বিন আলী বিন আবু তালিব (রাঃ) বলে উল্লেখ করেছেন। এদের মধ্যে আছেন হাকেম আবু আব্দুল্লাহ নিশাপুরী।[1] এ মত খুবই বিরল। প্রসিদ্ধ মতে তার মা ইয়ামনের বনু আযদ গোত্রভুক্ত ছিলেন।

যে মহান ইমামের কথা আমরা নীচের ক’টি ছত্রে আলোচনা করছি, হাদীছের জগতে তার মাহাত্ম্য ও ফযীলত কোন অবিদিত বিষয় নয়। তার মর্যাদা ও খ্যাতি মুসলিম বিশ্বে খুবই সুবিদিত বিষয়। ‘বিশ্ব-জগতের সঙ্গে যেমন সূর্যের সম্পর্ক, শরীরের সঙ্গে যেমন সুস্থতার সম্পর্ক তেমনি হাদীছের সাথে তার সম্পর্ক’। তার সম্পর্কে এ মন্তব্য করেছেন তারই বিখ্যাত ছাত্র আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ)।[2]

অবিদিত লুকোছাপা থাকবেই বা কি করে? বিদ্যার দলীলই তো তিনি। শারঈ এমন কোন শাস্ত্র নেই যে, সে বিষয়ের পন্ডিতগণ তার সম্পর্কে জানেন না।

তাফসীর, হাদীছ ও এ দু’টি সংক্রান্ত বিদ্যায় তিনি হুজ্জাত বা দলীল। ফিক্বহ, উছূলে ফিক্বহ ও সকল শারঈ বিদ্যার তিনি হুজ্জাত। হুজ্জাত তিনি ভাষায়, চাই তা সাহিত্য, ব্যাকরণ, অলঙ্কার, কবিতা বা অন্য কোন বিষয়ে হোক। হুজ্জাত ছিলেন তার যুগে প্রকাশ লাভকারী সকল বিদ্যায়। এ কথার সাক্ষ্য দিয়েছেন তাঁরই ছাত্র বিখ্যাত আলেম ইসহাক বিন রাহওয়াইহ। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা তার মতো কাউকে সৃষ্টি করেছেন বলে আমার ধারণা নেই। আল্লাহর কসম! আমার দু’চোখে তার মতো কাউকে দেখিনি’।[3]

ইমাম শাফেঈর পুরো নাম মুহাম্মাদ বিন ইদরীস আশ-শাফেঈ। আল্লাহর ইচ্ছাক্রমে ইমাম শাফেঈ ইয়াতীম হয়ে গিয়েছিলেন। জন্মের মাত্র দু’বছরের মাথায় তাঁর পিতা মারা যান। তখন থেকে তিনি মায়ের তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত হ’তে থাকেন। মা অত্যন্ত হিম্মতের সাথে অবিরত ধারায় তার লালন-পালন ও শিক্ষা-দীক্ষার কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন। অনেক বড় ও কঠিন কাজকেও মা এজন্য ছোট করে দেখেছেন। তিনি তার ছেলেকে ইলম শেখার জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। ছেলে ইলম শিখতে দেশে দেশে ঘুরছে, শায়খদের দরসে তিনি ছেলেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তার জন্য ইলমের হালাকাতে জায়গা তালাশ করছেন, আর এমনি করে শাফেঈ (রহঃ) ইমাম বনে গেছেন, যিনি দুনিয়ার খাঞ্চা বিদ্যা দিয়ে ভরে দিয়েছেন।

ইমাম শাফেঈ (রহঃ) তৎকালীন শামের আসক্বালান শহরের গির্যা এলাকায় ১৫০ হিজরী সনে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা ছিলেন ইয়ামনের বিখ্যাত বনু আযদ গোত্রের মেয়ে। এই গোত্রের অনেকেই জীবিকার তালাশে ইয়ামন থেকে আসক্বালানে গিয়ে বসতি স্থাপন করেছিলেন। এমন লোকের সংখ্যা সেখানে অনেক ছিল। ইমাম শাফেঈর পিতা ইদরীস (রহঃ) ছিলেন হিজাযের অধিবাসী। মক্কাতে তার পরিবার বাস করত। কিন্তু তিনি প্রবাসে আসক্বালানে বিয়ে করেছিলেন। বিবাহের পর তিনি স্ত্রীর পরিবারের সাথে থাকতেন। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তার হায়াত দীর্ঘায়িত করেননি। এই যুগলের মুহাম্মাদ নামক একমাত্র ছেলের জন্ম হয়। উত্তরকালে যিনি ইমাম শাফেঈ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। তারপর দু’বছরের মাথায় পিতার মৃত্যু হয়। আগেই বলেছি, এ সময় ইমাম শাফেঈর মা আসক্বালানে তার পরিবারের সাথে থাকতেন। ইমাম সাফেঈর বয়স যখন দু’বছর হয় তখন তার মা বলেন, যদি আমি তাকে ইয়ামনীদের মধ্যে রাখি তাহ’লে তার ভাষা ও বংশ দুইই নষ্ট হয়ে যাবে। আর যদি আমি তার পিতৃভূমিতে যাই তাহ’লে তার ভাষা ও বংশ দুইই রক্ষা পাবে। সুতরাং আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে মক্কায় গিয়ে থাকব। ফলে তিনি আসক্বালান থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। পথ ছিল অনেক দীর্ঘ, রাস্তায় বিপদ-আপদও কম ছিল না, আর অভাব-অভিযোগ ও দারিদ্য তো ছিল নিত্য সঙ্গী। এসব মাথায় করেই দৃঢ়চেতা মা কোলের ছেলেকে নিয়ে মক্কায় পৌঁছেন।

কুরাইশদের অভ্যাস ছিল, ছেলে শিশু একটু বড় হ’লে তাকে মরু এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়া। সেখানে সে অশ্ব চালনা, তীরন্দাযী ও আরবদের আদত-অভ্যাস, যেমন দানশীলতা, বীরত্ব, শিষ্টাচার ইত্যাদি শিখে; আর রপ্ত করে আরবী ভাষার বিশুদ্ধ রীতি ও প্রয়োগ।

এ লক্ষ্যে শাফেঈর মা তাকে হুযাইল গোত্রের নিকট প্রদান করেন। ছেলে আরবী ভাষার বিশুদ্ধ রীতি ও ঢং আয়ত্ব করবে, তার মাঝে সচ্চরিত্রের গুণাবলি বিকশিত হবে, উন্নত ধ্যান-ধারণা ও সদভ্যাস গড়ে উঠবে এবং আরবী কবিতা শিখবে- সেটা ছিল মায়ের আশা। কোন কোন আলেম সৎ ও যোগ্য, ছেলে তার কাছে ভালোভাবে আদব-আখলাক ও ইলম শিখতে পারবে মা তা মানুষের কাছে বার বার জিজ্ঞেস করে জেনে নিচ্ছেন। তারপর ছেলেকে সেই আলেমদের কাছে পাঠাচ্ছেন। ছেলে তাদের সাথে আন্তরিকভাবে মিশবে, তাদের থেকে আদব-শিষ্টাচার ও বিদ্যা-বুদ্ধি শিখবে। বিদ্যা শেখার আগে শিষ্টাচার শিখলে শিক্ষার্থীর উপর তার সুফল অনেক বড় হয়ে দেখা দেয়। ইমাম শাফেঈ (রহঃ)-এর মধ্যে এ ফল ব্যাপকভাবে ফলেছিল।

ইমাম শাফেঈ যখন মাতৃগর্ভে তখন তার মা একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন বলে অনেকে উল্লেখ করেছেন। মক্কায় তার সন্তানের ভবিষ্যৎ সুন্দর হবে বলে স্বপ্নে তাকে জানানো হয়েছিল। স্বপ্নের এ কথা সত্য হ’লে তা হবে আদব ও ইলমের পর ইমাম শাফেঈর মর্যাদাশালী হওয়ার তৃতীয় কারণ।[4]

কুরআন হিফযের প্রতি তার মা প্রথমেই গুরুত্ব দেন। ফলে মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি কুরআন হিফয সম্পন্ন করেন। তারপর তিনি হাদীছ শেখায় মনোনিবেশ করেন। মাত্র দশ বছর বয়সে তিনি ইমাম মালেক সংকলিত মু‘আত্তা গ্রন্থ মুখস্থ করে নেন। তারপর তিনি মক্কায় ইলম অন্বেষণে মশগূল হন এবং শারঈ বিদ্যায় এতটাই ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন যে বিশ বছর না হ’তে তিনি ফৎওয়া দানের অনুমতি লাভ করেন।[5]

তার এ অর্জনের পিছনে মহীয়সী মায়ের অবদান অনস্বীকার্য। জীবন গড়ার সঠিক পথ মা যেমন জেনেছেন তেমনি ছেলেকে তিনি সে পথে তুলে দিয়েছেন। ছেলে যাতে নির্দেশিত পথ আঁকড়ে থাকে, কোনভাবে বিচ্যুত না হয় সে বিষয়ে তিনি ভূমিকা রেখেছেন। মায়ের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা তাকে সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে নিশ্চয়ই পথ দেখিয়েছে।

হয়তো এই মা নিজেও তৎকালীন প্রচলিত কিছু ইলম আয়ত্ব করেছিলেন। সে যুগে খুব কম মহিলাই ছিলেন যারা জ্ঞানের দৌলত থেকে শূন্য ছিলেন। তার জ্ঞান-গরিমার সমর্থনে একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য। মক্কা মুয়ায্যামার কাযীর আদালতে এক মোকদ্দমায় তিনি ও আরেকজন মহিলা সাক্ষ্য দিতে হাযির হন। কাযী পরীক্ষাস্বরূপ দু’জনকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। তখন ইমাম শাফেঈর মা তাকে বলেন, আপনার সে অধিকার নেই। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,أَنْ تَضِلَّ إِحْدَاهُمَا فَتُذَكِّرَ إِحْدَاهُمَا الْأُخْرَى ‘দু’জনের একজন যদি ভুলে যায় তবে তাদের একজন অন্যজনকে মনে করিয়ে দেবে’ (বাক্বারাহ ২/২৮২)। তার কথায় বিচারক নীরব হয়ে যান।[6]

আত-তাজুস সুবকী এ ঘটনা উল্লেখ করার পর বলেন, ‘ইমাম শাফেঈর মায়ের পক্ষে এটি ছিল একটি সুন্দর মাসআলা উত্থাপন, উত্তম উদ্ভাবন ও বিরল সাহসিকতার পরিচায়ক। অথচ তার ছেলের মাযহাব অনুসারে, সাক্ষীদের ক্ষেত্রে সন্দেহ হ’লে বিচারকের পক্ষে তাদের পৃথক করে দেওয়া মুস্তাহাব। মহিলাদের সাক্ষ্যদানের ক্ষেত্রে তাদের পৃথক করা যাবে না বলে ইমাম শাফেঈর মায়ের উক্তিতে তার যে সাহস ও প্রজ্ঞা ফুটে উঠেছে তা আমি ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি। এখানে সমস্যারও কিছু নেই। তিনি আরো বলেন, ‘বর্ণনাকারীদের ঐকমত্য অনুসারে ইমাম শাফেঈর মা ছিলেন আল্লাহর অনুগত একজন ইবাদতগুযার মহিলা। জন্মগতভাবেই তিনি ছিলেন খুব মেধাবিনী’।[7]

ইমাম শাফেঈ (রহঃ) দারিদ্রের মধ্যে বেড়ে উঠেছিলেন। এমনকি তিনি যখন কুরআন হিফয করেন তখন তার শিক্ষককে এজন্য কোন পারিশ্রমিক দিতে পারেননি। এজন্য তিনি শিক্ষকের প্রতিনিধি বা সহকারী হিসাবে কাজ করতেন। শিক্ষক যখন খাবার খেতেন কিংবা আরাম করতেন অথবা অনুরূপ কিছু একটা করতেন তখন তিনি শিক্ষকের হয়ে ছাত্রদের আগলাতেন, তাদের সাধ্যমত পড়াতেন। পরে যখন তিনি প্রচলিত ইলম শিক্ষার জন্য বিদ্যায়তনে যাতায়াত শুরু করেন তখন তিনি সরকারী কার্যালয়ে যেতেন এবং কর্মচারীদের যে সমস্ত কাগজ অপ্রয়োজনীয় সেগুলো তাদের থেকে চেয়ে নিতেন। পরে শিক্ষকের হালাকায় পাঠ সংক্রান্ত কথা তাতে লিখে নিতেন। কাগজ কেনার মতো অর্থ তার ছিল না।

হুমাইদী বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু ইদরীস (রহঃ) বলেছেন, আমি আমার মায়ের কোলে ইয়াতীম হিসাবে মানুষ হয়েছি। তিনি আমাকে লেখাপড়ার জন্য কুত্তাবে ভর্তি করে দেন।[8] কিন্তু তার কাছে শিক্ষককে দেওয়ার মতো কোন অর্থ ছিল না। এজন্য শিক্ষক যখন শ্রেণীকক্ষে অনুপস্থিত থাকবেন তখন তার প্রতিনিধিত্ব করার শর্তে তিনি আমাকে পড়াতে রাযী হন। আমার যখন কুরআন হিফয শেষ হয় তখন আমি মসজিদে প্রবেশ করি এবং আলেমদের মজলিসে বসতে শুরু করি। সেখানে আমি হাদীছ কিংবা মাসআলা শুনতাম এবং তা মুখস্থ করতাম। আমার মায়ের কাছে এমন কিছুই কখনো ছিল না, যা দিয়ে আমি কাগজ কিনতে পারতাম। ফলে লেখার মতো কোন হাড্ডি পেলে আমি তা তুলে নিতাম এবং তাতে লেখালেখি করতাম। আমাদের ঘরে পুরনো একটা মটকা ছিল, লেখা হয়ে গেলে আমি সেগুলো তাতে রেখে দিতাম। তারপর একজন লোক ইয়ামনের গভর্নর হয়ে আসেন। আমি যাতে গভর্নরের সাহচর্য লাভ করতে পারি সেজন্য জনৈক কুরাইশী তার সাথে আমার বিষয়ে আলাপ করেন। কিন্তু ইয়ামনে যাওয়ার যানবাহনের ব্যবস্থা করার মতো সঙ্গতি আমার মায়ের ছিল না। তিনি ১৬ দীনারের বিনিময়ে তার বাড়ি বন্ধক রেখে সে অর্থ আমাকে দেন। সে অর্থ নিয়ে আমি কুরাইশীকে সাথে করে ইয়ামনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। ইয়ামনে পৌঁছলে গভর্নর আমাকে একটি কাজে নিযুক্ত করেন। এজন্য আমি তাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি আমাকে আরেকটি কাজ বাড়িয়ে দেন। এবারও আমি তাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি আমাকে আরেকটি কাজ বেশী করে দেন। রজব মাসে গভর্নর মক্কা গমন করেন। তারা সেখানে আমার সুখ্যাতি করেন। ফলে আমার যশ-প্রসিদ্ধি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। আমি ইয়ামন থেকে মক্কায় ফিরে আসি। মক্কায় এসে আমি মুহাম্মাদ ইবনু আবু ইয়াহইয়ার সাথে দেখা করে তাকে সালাম জানালাম। কিন্তু তিনি আমাকে তিরস্কার করে বললেন, ‘তুমি আমাদের মজলিসে বসতে এসেছ! অথচ তুমি এই এই কাজ করেছ! এর কোনটা যখন কারো জন্য বৈধ হবে তখন সে তা করতে পারে’। এমনিতর কিছু কথা তিনি আমাকে বললেন। ফলে আমি তাকে ছেড়ে সুফিয়ান ইবনু উয়াইনার সাথে দেখা করলাম। আমি তাকে সালাম জানালে তিনি আমাকে সাদরে গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, তোমার সরকারী দায়িত্ব পালনের কথা আমরা জেনেছি। তোমার দায়িত্ব পালন সম্পর্কে কত না সুন্দর কথা চারিদিকে ছড়িয়েছে! তোমার উপর যেসকল দায়িত্ব ছিল, আল্লাহর ওয়াস্তে তা তুমি সবটুকু পালন করেছ। এ কাজে পুনরায় আর ব্রতী হয়ো না। সুফিয়ানের নছীহত আমার মানসপটে ইবনু আবু ইয়াহইয়ার আচরণ থেকে অনেক বেশী প্রভাব ফেলল’।[9]

এই মহীয়সী মায়ের জিহাদ-সংগ্রাম দেখার মতো। অভাব নিত্য সঙ্গী হওয়া সত্ত্বেও তিনি ছেলের শিক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে কাজ করেছেন। এক পর্যায়ে ছেলের পড়ার খরচের জন্য নিজের বাড়িটা পর্যন্ত বন্ধক রেখেছেন। ছেলে সেই অর্থ নিয়ে বাইরে সফর করেছে।

অবশ্য ইমাম শাফেঈর প্রখর মেধা তার আর্থিক বোঝা কিছুটা হ’লেও লাঘব করেছিল। রাবী‘ বলেন, আমি শাফেঈকে বলতে শুনেছি, কুরআন হিফযকালে কুত্তাবে আমি শিক্ষককে একজন শিশুকে একটি আয়াত পড়াতে শুনতাম। শুনামাত্রই আমি তা মুখস্থ করে নিতাম। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের যখন পাঠ্যবিষয় তাদের কাগজ ইত্যাদিতে লিখে দিতেন তখন তার লেখা শেষ হওয়ার আগেই তিনি যা লিখে দিতেন তার আগাগোড়া আমি মুখস্থ করে নিতাম। এজন্য শিক্ষক একদিন আমাকে বলেন, তোমার থেকে বিনিময় হিসাবে কিছু নেওয়া আমার জন্য হালাল হবে না।[10] এভাবে ইমাম শাফেঈর মধ্যে উঁচু মর্যাদা লাভের পিছনে তিনটি কারণ সন্নিবিষ্ট হয়েছিল।

১. বংশীয় শরাফত : বংশীয় শরাফত ও আভিজাত্যের কারণে তিনি মর্যাদাপূর্ণ কাজের প্রতি খুব লক্ষ্য দিতেন এবং তা করতে চেষ্টা অব্যাহত রাখতেন। মানহানিকর কাজের ধারে-কাছেও তিনি ঘেঁষতেন না।

২. অনাথ-ইয়াতীমত্ব : পিতৃহারা ইয়াতীম অবস্থা তাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহস যুগিয়েছিল। ফলে তিনি ইছামের মত ব্যক্তিগত আভিজাত্যের অধিকারী হ’তে পেরেছিলেন। পিতৃপুরুষের আভিজাত্য ফেরি করা লোকদের কাতারে তিনি যোগ দেননি। নিজ জীবন পরিচালনায় প্রথমত তিনি আল্লাহর উপর ভরসা করতেন, তারপর নিজের উপর। নিজের ভবিষ্যৎ তিনি নিজে গড়তেন, বাপ-দাদার গৌরবের ধার ধারতেন না।

৩. দারিদ্র : দারিদ্র একজন সম্মানিত মানুষকে তার গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে সাহস যোগায়। কোন কোন পন্থা অবলম্বন করলে তার হাত থেকে রেহাই মিলবে সেসব পন্থা অবলম্বনে সে অগ্রসর হয়। বিদ্যা অর্জন ও অশ্ব চালনায় অভিজ্ঞতা সেকালে দারিদ্র্য থেকে নিষ্কৃতি লাভের বড় দু’টি উপায় ছিল। ইমাম শাফেঈ এ দু’টি বিষয় খুব ভালোভাবে রপ্ত করেছিলেন। এমনকি দু’টি ক্ষেত্রেই তিনি তার সাথীদেরও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন।

তিনটি গুণের সমাহারের সাথে তার মাঝে যুক্ত হয়েছিল কাজের দক্ষতা ও অদম্য ইচ্ছাশক্তি। এই ইচ্ছাশক্তিই ইমাম শাফেঈকে দুনিয়াব্যাপী খ্যাতি বিস্তারকারী ইলমের অধিকারী করেছিল। ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধার দুঃসহ অভাব তাকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করতে পারেনি। বরং অন্যরা যেখানে সুযোগ-সুবিধার অভাবে লক্ষ্য অর্জনে হতাশ হয়ে পড়ে সেখানে তিনি এ অভাবকে কাজে লাগিয়ে সাফল্য অর্জন করেছিলেন। দারিদ্রের নির্মম কষাঘাতের চিত্র অাঁকতে গিয়ে ইমাম মহোদয় নিজে বলেছেন, আমার দেহে যে জামাকাপড় আছে তার সবগুলো যদি এক পয়সার বিনিময়ে বিক্রি করা হয়, তবে সেগুলোর তুলনায় এক পয়সাই বেশী হবে। সে জামা-কাপড়ের মাঝে আছে এমন এক ব্যক্তি, যদি সৃষ্টির সকল ব্যক্তিত্বকে তার সাথে তুলনা করা হয় তবে তিনিই হবেন সবচেয়ে সম্মানিত ও বুযর্গ। তলোয়ারের খাপ পুরাতন হয়ে গেলেও তার ফলকের কিছু আসে যায় না, যখন কিনা তা হয় তীক্ষ্ণ ধার সম্পন্ন। তাকে যেদিকেই চালান হোক, সবকিছুকে সে কচুকাটা করে চলে।[11]

ইমাম শাফেঈর মায়ের পক্ষে যতটা সম্ভব হয়েছে ছেলেকে তিনি এক অনুকরণীয় শিক্ষাদান করে গেছেন। এই মা জননীর উপর মহান আল্লাহ তা‘আলার রহমতের ভান্ডার অবারিত হোক। তিনি তার জীবনকে স্রেফ ছেলের মধ্যে সীমিত রেখেছিলেন। একেবারে বাল্যবিধবা হওয়া সত্ত্বেও ছেলেকে বড় মানুষ করার চিন্তায় তিনি আর দ্বিতীয় বার বিয়ের পীঁড়িতে বসেননি। ছেলের তারবিয়াতের ক্ষেত্রে তিনি একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা তৈরি করেছিলেন। অন্য কারো সাথে তার মিশ্রণ ঘটেনি। সে রূপরেখা ধরে তিনি দৃঢ় চিত্তে অব্যাহত গতিতে চলেছিলেন, কোন ক্লান্তি তাকে স্পর্শ করেনি। ছেলের তারবিয়াতের জন্য তিনি একাধারে অনেক মহৎ ও উঁচু বিষয় এবং শ্রেষ্ঠ ও উত্তম শিক্ষকমন্ডলী নির্বাচন করেছিলেন। যার মাধ্যমে ছেলে ইলমের দরিয়া থেকে তার উৎস খুঁজে পেয়েছিলেন এবং তৃপ্তি সহকারে তা আকণ্ঠ পান করেছিলেন। তারপর তার সেই তৃপ্তিপূর্ণ জ্ঞান দ্বারা সারা বিশ্বকে পরিতৃপ্ত করেছিলেন। ভূলোক-দ্যুলোকের মধ্যবর্তী সব জায়গায় তার সে জ্ঞান ছড়িয়ে পড়ে।

ইমাম শাফেঈ (রহঃ)-এর মা তার দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় সর্বদা জ্ঞানদীপ্ত ও উপকারী উপদেশ দ্বারা ছেলেকে সাহায্য-সহযোগিতা করে গেছেন। আল্লাহ তাকে যে বুদ্ধি, প্রজ্ঞা ও সুন্দর বুঝ দান করেছিলেন তার মাধ্যমে ছেলের সামনে যাতে জীবনের দৃশ্যপট পরিষ্কার হয় তার যথার্থ পথ নির্দেশ তিনি করে গেছেন।

ইমাম শাফেঈও মায়ের মহত্ত্ব, শিষ্টাচার ও সুন্দর বোধ-বুদ্ধি সদাই গ্রহণ করেছেন। ফলশ্রুতিতে তিনি মুসলিম বিশ্বে বিদ্যার ময়দানে উচ্চাসন লাভে সক্ষম হয়েছিলেন। আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাতে হয় এমন উপকারী মায়ের জন্য এবং উপকার লাভকারী ছেলের জন্য! এমন আদব শিক্ষাদাতা মায়ের জন্য এবং এমন আদব শিক্ষা লাভকারী ছেলের জন্য!

ইমাম শাফেঈ (রহঃ)-এর মা তার ইয়ামন যাত্রাকালে বেঁচে ছিলেন। ইমাম শাফেঈ মাঝেমধ্যে মদীনা যাতায়াত করতেন। এ সময়ে একবার তার বিরুদ্ধে আববাসীয়দের বিপক্ষে আলাবীদের সাহায্য করার অভিযোগ ওঠে। তাকে এক জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ঘটনাটি ঘটে ১৮৪ হিজরীতে। তখন তার বয়স হয়েছিল ৩৪ বছর। এ সময়ে তার মা বেঁচে ছিলেন কি-না তা জানা যায় না। আল্লাহ তাকে অশেষ জাযা দান করুন।

এই মহীয়সী মা যিনি ছেলের জন্য নিজের জীবন ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন, তিনি পুরুষের সংস্রব থেকে দূরে ছিলেন। আরাম-আয়েশের জীবন যাপন ও স্বচ্ছলতা যে কী তা তিনি চোখে দেখেননি। ছেলেকেই তিনি তার একমাত্র পুঁজি হিসাবে ভাবতেন, যার মাধ্যমে তিনি আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশা করতেন। তার সে আশা আল্লাহ পূরণ করেছিলেন। যুগ যুগ ধরে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ ইমাম শাফেঈর রেখে যাওয়া ইলম ও বই-পুস্তক থেকে উপকৃত হচ্ছে। এ উপকার স্থায়ী, চিরন্তন। ছেলের রেখে যাওয়া ইলম থেকে যারাই ফায়দা লাভ করবে তাদের ছওয়াবের মতো ছওয়াব আল্লাহর হুকুমে যেমন ইমাম শাফেঈ (রহঃ) পাবেন তেমনি তার মা-ও পাবেন ইনশাআল্লাহ।[12]

ইমাম সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ)-এর মা

‘হে সুফিয়ান! তুমি বিদ্যা অন্বেষণে লিপ্ত থাক। আমি চরকার কাজের বিনিময়ে তোমার পড়ার খরচ যোগাব’। এ ছিল ছেলেবেলায় বিদ্যান্বেষণে এক মহান ইমামের প্রতি তার মমতাময়ী, বিদ্যোৎসাহী মায়ের উক্তি। ইমাম সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ)-এর পিতার নাম সাঈদ বিন মাসরূক ছাওরী।

সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) একাধারে ফক্বীহ, মুহাদ্দিছ ও সুন্নাহর পাবন্দ ছিলেন। ফিক্বহ ও হাদীছে তিনি শীর্ষস্থানে উপনীত হয়েছিলেন। তার নামে একটি ফিক্বহী মাযহাব রয়েছে, যার শীর্ষ ব্যক্তি তিনি। সে মাযহাবের নাম মাযহাবুছ ছাওরী বা ছাওরীর মাযহাব এবং মাযহাবু সুফিয়ান বা সুফিয়ানের মাযহাব। তার ছিল অনেক শিষ্য ও অনুসারী। তারা তার মাযহাব গ্রহণ করেছিলেন এবং তার রায় বা মত মেনে চলতেন। হিজরী ৮ম শতাব্দী পর্যন্ত এ মাযহাবের প্রসিদ্ধি ছিল ব্যাপক। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, ইমামগণ ইসলামের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন। ছাওরী ছিলেন ইরাকবাসীদের ইমাম। অধিকাংশ আলেম-ওলামার মতে তিনি সমসাময়িক ইমামবৃন্দ যেমন ইবনু আবী লায়লা, হাসান বিন ছালিহ বিন হাই, আবু হানীফা (রহঃ) প্রমুখের থেকে বেশী মর্যাদাবান ছিলেন। তার মাযহাব আজ (ইবনু তায়মিয়া (রহঃ)-এর যামানা) পর্যন্ত খুরাসান অঞ্চলে বিদ্যমান রয়েছে’।[13]

আলেম-ওলামা সুফিয়ানের মাযহাবের উপর অনেক গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। সেগুলো যেমন প্রসিদ্ধি অর্জন করেছে তেমনি জনগণের মধ্যে প্রসার লাভ করেছে। আলেমগণ সেগুলো অধ্যয়ন করেছেন। হাফেয ইবনু রজবের যুগ পর্যন্ত গ্রন্থগুলোর ব্যাপক প্রচার ও প্রসিদ্ধি ছিল। আল-ফাতাহ গ্রন্থে উল্লেখিত তার উক্তি থেকে এসব কথা জানা যায়। যেমন তিনি বলেছেন, আমরা ছাওরী থেকে যেসব কথা নকল করেছি সেগুলো তার শিষ্যগণ তার মাযহাবের উপর রচিত তাদের গ্রন্থাবলীতে তার থেকে নকল করেছেন।[14] অন্যত্র তিনি বলেছেন, অনুরূপভাবে সুফিয়ানের শিষ্যগণ তাদের রচনাবলিতে তার মাযহাব বর্ণনা করেছেন এবং তারা উদ্ধৃত করেছেন যে, লোকেরা এ বিষয়ে ঐক্যমত করেছেন বলে সুফিয়ান উল্লেখ করেছেন।[15]

তিনিই সেই ছাওরী যিনি নিজে ফক্বীহ এবং একটি ফিক্বহী মাযহাবের অধিকারী। তিনি মুজতাহিদ চার ইমামের পরে পঞ্চম মুজতাহিদ ইমাম। হাদীছের সাথে সংশ্লিষ্ট বড় বড় মহাজনের সাক্ষ্য অনুসারে তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হাদীছ জগতে ‘আমীরুল মুমিনীন’ অভিধায় আখ্যায়িত। শু‘বা, ইবনু উয়াইনা, আবু আছেম, ইয়াহইয়া বিন মাঈন প্রমুখ বলেছেন, সুফিয়ান ছাওরী হাদীছে আমীরুল মুমিনীন।[16] ইবনুল মুবারক (রহঃ) বলেছেন, আমি এক হাযার একশত জন শায়খ থেকে হাদীছ লিখেছি। সুফিয়ান থেকে শ্রেষ্ঠ কারো থেকে আমি লিখিনি।[17]

সুফিয়ানের সময়কালে তার থেকে অধিক মর্যাদাবান ও উচ্চ আসনওয়ালা ব্যক্তি এবং গুণে-মানে শ্রেষ্ঠ ও সংখ্যায় অধিক শিক্ষার্থী আর কেউ ছিল না। সুফিয়ান মুফাসসির তথা তাফসীরকারকও ছিলেন। তাফসীর বিদ্যায় তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। তিনি বলতেন, তোমরা আমাকে মানাসেক ও কুরআন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো। আমি এ দু’টি বিষয়ে জানি।[18] সুফিয়ান ছাওরী রচিত তাফসীর প্রফেসর ইমতিয়ায আলী আরশীর তাহক্বীক্ব বা যাচাইসহ হিন্দুস্থান থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়। তারপর বিশেষজ্ঞ কমিটির তত্ত্বাবধানে দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ তা প্রকাশ করে।

ইমাম আবুবকর খত্বীব বাগদাদী তার সম্পর্কে এক মন্তব্যে বলেছেন, তিনি মুসলিম ইমামদের অন্যতম এবং দ্বীনের নেতৃস্থানীয়দের অন্যতম নেতা ছিলেন। তার ইমামত সম্পর্কে সবাই একমত ছিলেন। তার চারিত্রিক পবিত্রতা, তীক্ষ্ণ ধী শক্তি, জ্ঞান-গরিমা, হাদীছ হুবহু মুখস্থ রাখা, পরহেযগারী ও সংসারে অনাসক্তি কিংবদন্তিতুল্য।[19]

সুফিয়ান (রহঃ)-এর জীবনী থেকে জানা যায়, তিনি মাতা-পিতার মাঝে জীবদ্দশায় যৌবন পার করেছিলেন। তার পিতা ১২৭ হিজরী পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। তার জন্ম হয়েছিল ৯৭ হিজরীতে। সুতরাং পিতার মৃত্যুকালে তিনি প্রায় ত্রিশ বছরের যুবক ছিলেন। তার পিতা সাঈদ কূফা শহরের সে সকল নির্ভরযোগ্য বিশিষ্ট মুহাদ্দিছদের একজন, যারা জারাহ ও তা‘দীলের ইমামদের প্রশংসাভাজন ছিলেন। ইবনু মাঈন, আলী ইবনুল মাদিনী, আজালী, নাসাঈ প্রমুখ জারাহ ও তা‘দীলের ইমাম তার নির্ভরযোগ্যতা ও তার বর্ণিত হাদীছ গ্রহণে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তিনি যেমন অনেকের থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন, তেমনি তার থেকে অনেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন তার দুই পুত্র মুবারক ও সুফিয়ান।[20]

ইমাম যাহাবী (রহঃ) যোগ করেছেন, সুফিয়ান তার পিতা সাঈদ বিন মাসরূকের তত্ত্বাবধানে শিক্ষা গ্রহণ ও হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তারপর তিনি বলেছেন, তার পিতা ছিলেন শাবী ও খাইছামা বিন আব্দুর রহমানের ছাত্র এবং কূফার নির্ভরযোগ্য হাদীছ বর্ণনাকারীদের অন্যতম। তাকে ছোট তাবেঈদের তালিকায় গণ্য করা হয়। কুতুবুস সিত্তার সংকলকগণ তাদের সংকলনে তার বর্ণিত হাদীছ সংকলন করেছেন। তার থেকে তার সন্তানাদি ইমাম সুফিয়ান, ওমর ও মুবারকসহ শু‘বা ইবনুল হাজ্জাজ, যায়েদাহ, আবুল আহওয়াছ, আবু আওয়ানাহ, ওমর বিন উবায়েদ আত-তানাফিসীসহ অনেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন।[21]

এভাবে ইমাম সুফিয়ান তার পিতা থেকে ইলম অর্জন করেছেন এবং তার থেকে হাদীছ গ্রহণ করেছেন। তার ছয় শতাধিক শায়েখের মধ্যে তার পিতা ছিলেন তার প্রথম শায়েখ, প্রথম শিক্ষক ও প্রথম মুরববী। তার মাতাও ছিলেন বিদূষী মহিলা। ফিক্বাহ শাস্ত্রে তার যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি ছিল। সংসারের প্রতি অনাসক্ত ও পরহেযগার হিসাবে তিনি পরিচিত ছিলেন। ইবনুল জাওযী ও মুনাভী তাকে সৎকর্মশীলা ও মুত্তাকী মহিলাদের শ্রেণীতে উল্লেখ করেছেন।[22]

বুঝা যায়, এই আলেম ফাযেল দম্পতির পুরো গৃহ তাদের প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। তারা দু’জনে ইমাম ও আলেম সন্তান জন্মের অনুকূলে একটি যোগ্য উর্বর পরিবেশ গড়ে তুলেছিলেন। এজন্য আমরা দেখতে পাই, সুফিয়ানের ভাই-বোনেরা নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই ইলমের ময়দানে স্মরণীয়-বরণীয় হয়েছিলেন। তার দুই ভাই মুবারক ও ওমর ছিলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হাদীছ বহনকারী রাবীদের অন্তর্ভুক্ত কৃতী আলেম। ইবনু কুতাইবা, মাক্বদিসী, ইবনু হাযম, হাকেম, আসক্বালানী প্রমুখ তাদের গ্রন্থে এ দু’জনের নাম উল্লেখ করেছেন। তাদের বোন ছিলেন মুহাদ্দিছ আম্মার বিন মুহাম্মাদের মা। ইবনু সা‘দ তার আত-তাবাক্বাতুল কুবরা গ্রন্থে তার জীবনী তুলে ধরেছেন।[23] এ পরিবারের সদস্য হিসাবে সুফিয়ান তো সুফিয়ানই।

সুন্দর ও যোগ্য পরিবেশ স্বীয় প্রভুর আদেশে সুন্দর ফসল ফলিয়ে থাকে। এমন পরিবেশে জন্মগ্রহণকারী মানুষ ভালো আচরণ ও ভালো অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে, তার উপরই সে যৌবন লাভ করে এবং তার উপর চলতে চলতে সে বার্ধক্যে উপনীত হয়। কবি আবুল আলা আল-মায়াররী বলেন, আমাদের তরুণরা বেড়ে ওঠে সেসব সদাচরণের উপর, যেগুলো পালনে তাদের পিতা তাদের অভ্যস্ত করেছে।

এই প্রাথমিক অনুকূল পরিবেশের ফল এমন দাঁড়িয়েছিল যে, ইয়াহইয়া বিন আইউব বলেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন আবুল মুছান্না, তিনি বলেন, ‘মারভ শহরে সুফিয়ান ছাওরীর আগমনে শোরগোল পড়ে যায়। আমি লোকদের বলতে শুনলাম, ছাওরী এসেছে! ছাওরী এসেছে!! আমি তাকে দেখার জন্য বের হ’লাম। দেখলাম, এক তরুণ, যৌবনের আভাস হিসাবে তার চেহারায় কেবল দাড়ি-গোঁফ উঠতে শুরু করেছে’। যাহাবী বলেন, সেই অল্প বয়সে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ার কারণ তার অত্যধিক মেধা ও মুখস্থ শক্তি। যখন তিনি হাদীছ বর্ণনা করা শুরু করেন, তখন তিনি যুবক।[24]

এ কারণে ইমাম আবু ইসহাক সুবাইয়ী যখন সুফিয়ান ছাওরীকে এগিয়ে আসতে দেখেন, তখন বলে ওঠেন, ‘আমি শৈশবেই তাকে জ্ঞান-বুদ্ধি দান করেছিলাম’।[25]

এক ইলমী পরিবেশে সুফিয়ান ছাওরী জন্মগ্রহণ করেন, প্রতিপালিত হন এবং বেড়ে ওঠেন। এ পরিবেশে তিনি ইলম শিখেন এবং ফিক্বহ শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। এ পরিবেশে তিনি তারবিয়াত লাভ করেন এবং বসবাস করেন। তার জীবনে সঠিক পথে অগ্রসর হওয়ার পিছনে তার বিদূষী মহীয়সী মায়ের বিরাট অবদান ছিল। যখন তিনি ইমাম হিসাবে স্বীকৃত তখন তিনি এ অবদানের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, যখন আমি লেখাপড়া করতে মনস্থ করলাম তখন আমি বললাম, ‘প্রভু আমার! আমার তো অবশ্যই রূযী-রুটি লাগবে। আমি খেয়াল করেছি, ইলম মন থেকে বিস্মৃত হয়ে যায়। সুতরাং আমি যাতে খোলা মনে ইলম শিখতে পারি সেজন্য তুমি আমাকে প্রয়োজনীয় জীবিকা প্রদান করো’।[26]

আমরা জানতে পেরেছি যে, সুফিয়ানের গৃহে প্রাচুর্য ছিল না। তার পিতা দরিদ্র মানুষ ছিলেন। তারা যে দরিদ্র ছিলেন অন্য এক বর্ণনাতেও তার সাক্ষ্য মেলে। একবার তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি কেন হাদীছ গ্রহণের জন্য যুহরীর কাছে যাননি? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, তার কাছে যাওয়ার মতো দিরহামের ব্যবস্থা তার ছিল না। ফলে তিনি তার নিকট যেতে পারেননি। আরেক বার্তায় জানা যায়, তার এক চাচা বুখারায় থাকতেন। সেখানে তিনি মারা গেলে তার সূত্রে প্রাপ্ত উত্তরাধিকার আনার জন্য তিনি বুখারা গিয়েছিলেন। এ সময়ে সুফিয়ানের বয়স ছিল আঠার বছর।

এক সময়ে সুফিয়ান ইলম শেখার পথে যাত্রা করতে সংকল্পবদ্ধ হন। তার মনে বিস্মৃতি বাসা বাঁধার আগে তিনি যাতে ইলম অর্জন করতে পারেন সে বিষয়ে তিনি কৃতসংকল্প হয়েছিলেন। এজন্য তিনি তার পুরো সময় ইলম অর্জনের পিছনে নিয়োগ করেন। আল্লাহ তা‘আলা তার এ ইচছাকে তার মায়ের কল্যাণে আরো মজবূত করে দেন। তিনি ছেলের খরচ চালানর দায়িত্ব নেন এবং তাকে বলেন, ‘হে সুফিয়ান! তুমি ইলম অন্বেষণে লিপ্ত থাক। আমি চরকার কাজের বিনিময়ে তোমার পড়ার খরচ যোগাব’।

সুফিয়ান তার শায়েখদের থেকে ইলম শেখায় রত হন। তার মায়ের কথা তাকে বেশী করে ইলম শিখতে প্রেরণা যোগাত এবং এজন্য কষ্ট স্বীকার করতে তিনি কুণ্ঠিত হ’তেন না। মায়ের কথা ছেলের মনে গভীর রেখাপাত করেছিল। তাই তার জীবনের একটা মুহূর্তও তিনি অনর্থক নষ্ট করেননি। তিনি বলতেন, আমরা যখনই আমাদের শিক্ষাদানের জন্য কাউকে পাই তখনই আমরা তার থেকে ইলম শিখতে শুরু করি।[27]

তবে সুফিয়ানের মা যখন তাকে দিনের খাবার সাথে দিয়ে পড়তে পাঠাতেন তখন তাকে এ উদ্দেশ্যে পাঠাতেন না যে, সহপাঠীদের থেকে বেশী জানা নিয়ে তিনি গর্ব করবেন, বন্ধুদের সাথে প্রতিযোগিতা করবেন এবং জনগণের মনোযোগ তার দিকে আকর্ষিত হবে। বরং তিনি তাকে এ নিয়তে পাঠাতেন যে, তিনি যে ইলম শিখবেন তা আমল করার জন্য শিখবেন এবং তার প্রভাব যেন তার দেহ-মনে ফুটে ওঠে। এজন্য মা তাকে বলেছিলেন, তুমি ইলম শিখতে যাও, আমি চরকার কাজের বিনিময়ে তোমার ভরণ-পোষণ যোগাব। এতদসঙ্গে তার এ কথাও উল্লেখ্য যে, তিনি ছেলেকে বলেছিলেন, যখন তুমি কিছু সংখ্যক হাদীছ লিখবে তখন খেয়াল করবে, তোমার ভিতরে আরো বেশী লেখার শক্তি পাও কি-না। যদি পাও তবে সামনে অগ্রসর হবে, নচেৎ মোটেও চেষ্টা করবে না।[28]

ইলমী হালাকায় ছেলে কতটুকু অর্জন করেছে একজন মা পর্যবেক্ষণ করছেন। সম্ভবত মায়ের সাথে ছেলের আলাপের সময় ইলম অর্জন সম্পর্কে তার চিন্তাজগতে ভেসে উঠত মায়ের প্রথম কথাগুলো। মা তাকে ইলমের শুধু পরিমাণের দিকে নযর দিতে বলেননি, বরং গুণের অর্থাৎ আমলের দিকেও নযর দিতে বলেছেন। গুণ ছাড়া পরিমাণের কোন মূল্য নেই। সুতরাং ছেলের থেকে শুধু ইলম অর্জন কাম্য নয়, বরং ইলম ও তদনুযায়ী আমল উভয়ই কাম্য।

যখন তুমি কিছু সংখ্যক হাদীছ লিখবে তখন খেয়াল করবে, তোমার ভিতরে আরো বেশী লেখার শক্তি পাও কি-না। যদি পাও তবে সামনে অগ্রসর হবে, নচেৎ বেশী ইলম হাছিলের চেষ্টা করবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমলের শক্তি বেশী না পাবে ততক্ষণ বেশী ইলম অর্জনে লাভ হবে না। কেননা অর্জিত ইলম অনুসারে আমল না করার দরুন তোমাকে বরং অধিকমাত্রায় পাপের বোঝাই বহন করতে হবে।

তিনি ছিলেন বিদূষী, সৎকর্মপরায়ণ ও পরহেযগার মা। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা তার রোপিত চারা ও ফসলের সুন্দর ফল দান করেছেন। এ ফল হয়েছে সুমিষ্ট ও পরিপক্ক। জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত চারাটি ফল দিয়ে চলেছে এবং তথা ক্বিয়ামত পর্যন্ত সে ফল দিয়ে যাবে।

এরকমই ছিলেন মা, আর সুফিয়ানও হয়েছেন সেরকম ফল। মা তার লক্ষ্য পূরণে ছেলের পিছনে চেষ্টা চালিয়েছেন এবং যত্ন নিয়েছেন। ছেলেকে প্রয়োজনীয় উপদেশ দিয়েছেন, তার প্রতি খেয়াল রেখেছেন। ফলে তিনি ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়েছেন। এ উপলক্ষে একবার তার মা বলেছিলেন, প্রিয় পুত্র আমার! যখন তুমি দশটি হরফ (হাদীছ) লিখবে তখন দেখবে যে, তোমার নিজের মধ্যে আল্লাহর প্রতি তোমার যে ভয়, তোমার যে সহিষ্ণুতা, তোমার যে সম্মানবোধ তা বাড়ছে কি-না? যদি তুমি তা দেখতে না পাও তাহ’লে জেনে রেখ এ শিক্ষা তোমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তোমার জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনবে না।

কিছু আলেমের বর্ণনায় তার মায়ের উক্তিতে বাড়তি কিছু তথ্য আছে। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেন, আমি ওয়াকী‘কে বলতে শুনেছি, সুফিয়ানের মা সুফিয়ানকে বলেন, ‘তুমি যাও, ইলম শেখ। আমি আমার চরকার কাজের বিনিময়ে তোমার ভরণ-পোষণ যোগাব। যখন তুমি কিছু হাদীছ লিখবে তখন দেখবে যে, তোমার নিজের মধ্যে আরো বেশী লিখার শক্তি পাও কি-না, যদি পাও তবে তা চালিয়ে যাবে। যদি তা না কর তাহ’লে তুমি আমার অনুগামী হবে না। অর্থাৎ না তুমি আমার ছেলে হবে, না আমি তোমার মা। তুমি আমার সাথে সম্পর্কে জড়াবে না, বলবে না, ইনি আমার মা।

আল্লাহর কসম! মায়ের পক্ষ থেকে ছেলের প্রতি এমন কথা উচ্চারণ বাস্তবে বড়ই কঠিন। এ কারণে দেখা যায়, ইমাম সুফিয়ান তার শিক্ষা ও আমলে তার মায়ের কথায় ভীষণ প্রভাবিত হয়েছিলেন। তার উপর সে প্রভাব এতটাই পড়েছিল যে, ইলম অনুসারে আমল তার আদত-অভ্যাস ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে পরিণত হয়েছিল।

আবার কোন আলেমের বর্ণনায় উঠে এসেছে, সুফিয়ানের মা তাকে বলেছিলেন, প্রিয় বৎস! ‘তুমি ইলম শেখ। আমি আমার চরকার কাজের বিনিময়ে তোমার ভরণ-পোষণ যোগাব। যখন তুমি দশটি হরফ (হাদীছ) লিখবে তখন দেখবে, তোমার নিজের মধ্যে কল্যাণ বেশী অনুভব করছ কি-না? যদি কল্যাণ না দেখ, তবে খামাখা কষ্ট করতে যেও না।[29]

এমনিভাবে যে ফসল চাষ করে তার উচিত, নিজ ভূমি ভালোভাবে পরিচর্যা করা, চারা মজবূত করা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য জানা এবং যত্ন সহকারে তার পরিচর্যা করা। তবেই সে ভালো ফল আশা করতে পারবে এব ং নিজ কর্মের ফসল

কর্তনের মাধ্যমে ভাগ্য প্রসন্ন করতে পারবে। তার অবস্থা এমন হবে না যার সম্পর্কে কবি বলেছেন, আহম্মকি বশত তুমি বীজ বপনের সময় অবহেলা করেছ। সুতরাং মানুষ যখন ফসল কাটবে তখন কি করে তুমি ফসল পাবে? আল্লাহ তা‘আলা সুফিয়ান ও তার মায়ের উপর পূর্ববর্তী ও পর্বর্তীদের মাঝে এবং বিচার দিবসে রাযী-খুশি থাকুন- আমীন!।[30]

[ক্রমশঃ]

মূল (আরবী) : ইউসুফ বিন যাবনুল্লাহ আল-‘আতীর

অনুবাদ : মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক


[1]. তারিখে দিমাশক ৫১/২৭৫।

[2]. মানাযিলুল আয়িম্মাতিল আরবায়াহ পৃ ২২২।

[3]. আদাবুশ-শাফেঈ ওয়া মানাকিবুহু, পৃ. ৩১।

[4]. তাহযীবুয তাহযীব ৯/২৬।

[5]. আদাবুশ শাফেঈ ওয়া মানাকিবুহু, পৃ ৩১।

[6]. ই‘লাঊস সুনান ১৫/৩০৮।

[7]. আত-তাবাকাত ১/২৮৫; ফাতহুল বারী ৫/১৯৬।

[8]. আমাদের দেশে বর্তমানে যেসব হিফযুল কুরআন মাদ্রাসা বা হিফযখানা রয়েছে, যেখানে কুরআন ছহীহ-শুদ্ধভাবে শিক্ষাদান ও মুখস্থ করানো হয়, তৎকালীন ইসলামী বিশ্বে সেগুলোকে কুত্তাব ও মক্তব বলা হ’ত। আবু মুহাম্মাদ ইউসুফ বিন যাবনুল্লাহ আল-‘আতীর, উম্মাহাতুন রাববাইনা উযামায়া, (মদীনা: ১ম প্রকাশ ১৪৪৩ হিঃ, পৃ. ৭৬)।

[9]. জামিউ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাযলিহী ১/৪১৩; আদাবুশ শাফেঈ ওয়া মানাকিবুহু পৃ.২১।

[10]. মুজামুল উদাবা ৬/২৩৯৫।

[11]. দীউয়ানুশ শাফেঈ, ইন্টারনেট।

[12]. ইমাম শাফেঈ ১৫০ হিজরীতে শামের গির্যায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০৪ হিজরীতে মিশরে অর্শ রোগে মৃত্যুবরণ করেন। তার রচিত ও সংকলিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে রয়েছে আল-উম্ম, আর-রিসালাহ, মুসনাদুস শাফেঈ, আহকামুল কুরআন, ইখতিলাফুল হাদীছ, ছিফাতুল আমরি ওয়ান্নাহী, জিমাউল ইলম, ফাযাইলু কুরাইশ, বায়ানুল ফারয, ইখতিলাফু মালেক ওয়া শাফিঈ প্রভৃতি।

[13]. মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৩/২২৪।

[14]. ইবনু রজব, ফাতহুল বারী, ৬/১১৪।

[15]. ইবনু রজব, ফাতহুল বারী, ২/২৮০।

[16]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৭/২৩৮।

[17]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৭/২৩৭।

[18]. আল-জারহু ওয়াত-তা‘দীল, ২/২২৪।

[19]. তারীখু বাগদাদ ১০/২১৯।

[20]. আত-তাহযীব ৬/৮২। হাদীছ বর্ণনাকারী রাবীদের চারিত্রিক গুণাবলী ও হাদীছ হুবহু মুখস্থ রাখা সম্পর্কিত প্রশংসামূলক মন্তব্যকে তা‘দীল এবং সমালোচনামূলক মন্তব্যকে জারাহ বলে। যেসব ইমাম এ বিষয়ে পান্ডিত্য দেখিয়েছেন এবং গ্রন্থ লিখেছেন তারা জারাহ ও তা‘দীলের ইমাম নামে পরিচিত।

[21]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৭/২৩০।

[22]. তাফসীরে ছাওরীর ভূমিকা, পৃ. ০৮।

[23]. আত-তাবাকাতুল কুবরা, ৬/২৫৮।

[24]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৭/২৩৬।

[25]. মারইয়াম ১৯/১২; সিয়ারু আলামিন নুবালা ৭/২৩৭।

[26]. তারিখুল ইসলাম ৪/৩৮৩।

[27]. হিলইয়াতুল আওলিয়া ৬/৩৬৩।

[28]. বায়হাক্বী, মাদখাল ইলাস সুনানিল কুবরা ১/৪২৭।

[29]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৭/২৩০।

[30]. ইমাম সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) ৯৭ হিজরীতে কূফা নগরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৬১/৬২ বছর বয়সে বছরায় মৃত্যুবরণ করেন।






ধন-সম্পদ : মানব জীবনে প্রয়োজন, সীমালংঘনে দহন (১ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
আলেমগণের মধ্যে মতভেদের কারণ (শেষ কিস্তি) - আব্দুল আলীম বিন কাওছার
প্রাক-মাদ্রাসা যুগে ইসলামী শিক্ষা - আসাদুল্লাহ আল-গালিব (শিক্ষার্থী, ইংরেজী বিভাগ, ২য় বর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)।
রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠের গুরুত্ব ও ফযীলত - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
ওয়াহ্হাবী আন্দোলন : উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ; মুসলিম বিশ্বে এর প্রভাব (৪র্থ কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত পরিচিতি - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
তাওফীক্ব লাভের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
নিয়মের রাজত্ব - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
শিশুদের চরিত্র গঠনে ‘সোনামণি’ সংগঠনের ভূমিকা - ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
কুরআন ও সুন্নাহর বিশ্বজনীন আদর্শ প্রতিষ্ঠায় যুবসমাজের ভূমিকা - শেখ ইমরান ইবনু মুয্যাম্মিল
মানবাধিকার ও ইসলাম (১৩তম কিস্তি) - শামসুল আলম
ঈদের ছয় তাকবীরের পক্ষে উপস্থাপিত দলীল সমূহ পর্যালোচনা - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
আরও
আরও
.