পাপাচার থেকে পরিত্রাণের উপায় সমূহ (২য় কিস্তি)

পর্ব ১ । 

৯. কুরআন অনুসারে জীবন পরিচালনা করা :

কুরআন তেলাওয়াত করা, অনুধাবন করা ও সে অনুযায়ী আমল করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক। কুরআন দ্বীনের উপরে দৃঢ় থাকার ক্ষেত্রে সংশয়ের অসুখ থেকে রক্ষা করে। মানবিক ও জৈবিক চাহিদার রোগ যা দ্বীনের উপরে দৃঢ়তাকে নিষিদ্ধ করে সেই রোগ প্রতিরোধ করে। কুরআন হচ্ছে শক্ত রশি ও সুস্পষ্ট নূর (জ্যোতি)। যে ব্যক্তি কুরআন আঁকড়ে ধরে রাখে এবং যে কুরআনের অনুসরণ করে আল্লাহ তাকে হেফাযত করেন। রক্ষা করেন যাবতীয় বিপদ-মুছীবত ও সমস্যা থেকে।

জুবাইর বিন মুত‘ইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা জুহফা নামক স্থানে একদা নবী করীম (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তখন তিনি বললেন, أَلَيْسَ تَشْهَدُونَ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنِّي رَسُولُ اللهِ، وَأَنَّ الْقُرْآنَ جَاءَ مِنْ عِنْدِ اللهِ؟ ‘তোমরা কি সাক্ষ্য দাও না যে, আল্লাহ্ ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল, আর কুরআন আল্লাহর নিকট থেকে এসেছে? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, فَأَبْشِرُوا فَإِنَّ هَذَا الْقُرْآنَ طَرَفُهُ بِيَدِ اللهِ وَطَرَفُهُ بِأَيْدِيكُمْ فَتَمَسَّكُوا بِهِ، فَإِنَّكُمْ لَنْ تَهْلِكُوا وَلَنْ تَضِلُّوا بَعْدَهُ أَبَدًا ‘অতএব তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো, এই কুরআনের একাংশ আল্লাহর হাতে, আরেকাংশ তোমাদের হাতে। তোমরা উহাকে আঁকড়ে ধর। তাহ’লে তোমরা এর পরে কখনই ধ্বংস হবে না, কখনই বিভ্রান্ত হবে না’।[1]

১০. দো‘আ করা :

যাবতীয় বিপদাপদ, বালা-মুছীবত, রোগ-শোক, দুঃখ-বেদনা, অশান্তি থেকে পরিত্রাণের জন্য দো‘আ এক অনন্য মাধ্যম। অনুরূপভাবে পাপাচার থেকে বেঁচে থাকতে কিংবা গোনাহ মাফের জন্য মহান আল্লাহর নিকটে দো‘আ করলে তিনি মাফ করে দেন। সুতরাং পাপমুক্ত নির্মল জীবন গঠন করতে মহান আল্লাহর নিকটে তাওফীক প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহ বান্দার দো‘আ কবুল করেন ও তাকে প্রার্থিত বস্ত্ত দান করে থাকেন। তাই গোনাহ বর্জন এবং পবিত্র জীবন গঠন করতে প্রয়োজন কাকুতি-মিনতি সহকারে মহান আল্লাহর দরবারে দো‘আ করা। রাতের গভীরে আরামের শয্যা ত্যাগ করে কয়েক ফোঁটা চোখের পানি ফেলে করুণাময় মহান প্রভুর দরবারে প্রার্থনা করা। তাহ’লে আল্লাহ দো‘আ কবুল করবেন এবং বান্দাকে কলুষমুক্ত করবেন। তিনি বলেন, وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ ‘আর তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব’ (গাফির/মুমিন ৪০/৬০)। তিনি আরো বলেন,وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ ‘আর যখন আমার বান্দারা তোমাকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে, (তখন তাদের বল যে,) আমি নিকটেই আছি। আমি আহবানকারীর আহবানে সাড়া দেই যখনই সে আমাকে আহবান করে। অতএব তারা যেন আমাকে ডাকে এবং আমার উপরে বিশ্বাস রাখে, যাতে তারা সুপথপ্রাপ্ত হয়’ (বাক্বারাহ ২/১৮৬)। সুতরাং মহান আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে একান্তভাবে তাঁর নিকটে দো‘আ করলে তিনি কবুল করেন। এমনকি হেদায়াত লাভ ও নেক আমল বেশী বেশী করার জন্য মহান আল্লাহর তাওফীক একান্ত যরূরী। যেমন আমরা ছালাতে সূরা ফাতিহায় বলে থাকি, إِيِّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ ‘আমরা কেবলমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং কেবলমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি’ (ফাতিহা ১/৪)। আল্লাহর নিকটে সাহায্য ও আশ্রয় প্রার্থনার নির্দেশ দিয়ে ইবনু আববাস (রাঃ)- কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللهِ، ‘তোমার কোন কিছু চাওয়ার প্রয়োজন হ’লে আল্লাহর নিকট চাও, আর সাহায্য প্রার্থনা করতে হ’লে আল্লাহর নিকটেই কর’।[2]

স্মর্তব্য যে, নির্জনে ও চোখের দ্বারাই পাপকাজ বেশী হয়। তাই নির্জনে চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে দো‘আ করতে হবে। এটা যেমন বিশেষ তেমনি এর পুরস্কারও বিশেষ। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لَا يَلِجُ النَّارَ رَجُلٌ بَكَى مِنْ خَشْيَةِ اللهِ حَتَّى يَعُودَ اللَّبَنُ فِي الضَّرْعِ، ‘আল্লাহর ভয়ে ক্রনদনকারী ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যেরূপ দোহনকৃত দুধ আবার স্তনে ফিরিয়ে নেয়া যায় না’।[3]

পাপের কারণে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। আর এর চূড়ান্ত ফলাফল হ’ল, জাহান্নাম। সেই জাহান্নাম থেকে বাঁচতে অশ্রুসিক্ত নয়নে মহান রবের শাহী দরবারে দো‘আ করতে পারলে তিনি ক্ষমা করে দিবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

উল্লেখ্য, নির্জনতা আল্লাহ দেন কেন? কেন আল্লাহ আমাদেরকে একাকীত্ব দান করেন? আল্লাহ বলেন,ادْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ، ‘আর তোমরা তোমাদের রবকে ডাক ভয় ও আকাঙ্ক্ষার সাথে। নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের অতীব নিকটবর্তী’ (আ‘রাফ ৭/৫৬)। সুতরাং নির্জন মুহূর্তগুলো আল্লাহ আমাদেরকে দান করেন, যেন আমরা তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হ’তে পারি। এজন্য রাত যখন গভীর হয় তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে ডাক আসে,مَنْ يَدْعُونِى فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِى فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِى فَأَغْفِرَ لَهُ ‘কে আছে এমন যে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিবো? কে আছে এমন যে আমার কাছে দো‘আ করবে এবং আমি তার দো‘আ কবুল করবো? কে আছে এমন যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে এবং আমি তাকে ক্ষমা করবো’?[4]

১১. আল্লাহকে লজ্জা করা :

মানুষ স্বীয় শিক্ষক-গুরুজন, পিতা-মাতা, সমাজনেতা কিংবা সৎমানুষের সামনে গোনাহ করতে লজ্জা করে। কিন্তু আল্লাহকে প্রকৃত পক্ষে লজ্জা করে না। তাই মানুষ লোকচক্ষুর অন্তরালে পাপ করলেও সর্বদ্রষ্টা আল্লাহ থেকে গোপন করতে পারে না। আল্লাহ বলেন, يَسْتَخْفُونَ مِنَ النَّاسِ وَلَا يَسْتَخْفُونَ مِنَ اللهِ وَهُوَ مَعَهُمْ إِذْ يُبَيِّتُونَ مَا لَا يَرْضَى مِنَ الْقَوْلِ وَكَانَ اللهُ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطًا، ‘তারা লোকদের থেকে লুকাতে চায়, কিন্তু আল্লাহ থেকে লুকাতে চায় না। তিনি তাদের সঙ্গে থাকেন, যখন রাত্রিতে তারা (আল্লাহর) অপ্রিয় বাক্যে শলা-পরামর্শ করে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ তাদের সকল কৃতকর্মকে বেষ্টন করে আছেন’ (নিসা ৪/১০৮)। অথচ আল্লাহ সবকিছু দেখেন। এজন্য তাঁকে সর্বাধিক লজ্জা করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,أُوصِيكَ أَنْ تسْتَحْيَ مِنَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ كَمَا تَسْتَحْي رَجُلًا مِنْ صَالِحِي قَوْمِكَ ‘আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি আল্লাহকে এমনভাবে লজ্জা করার, যেরূপ তুমি তোমার কওমের সৎকর্মশীল ব্যক্তিকে লজ্জা করে থাকো’।[5] সুতরাং মানুষ আল্লাহকে ভয় ও লজ্জা করলে সর্বপ্রকার পাপাচার থেকে বিরত থাকতে পারবে। পারবে নিজেকে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে। কবি বলেন,

فَاستَـحْيِ مِن نَظرِ الإِلَهِ وَقُل لَـهَا

 إِنَّ الَّذِي خَلَقَ الظَّلَامَ يَـرَانِـي

‘লজ্জা কর রবের দৃষ্টিকে। নফসকে বল, যিনি অন্ধকার সৃষ্টি করেছেন, তিনি আমাকে দেখেন’। সুতরাং আল্লাহকে ও তাঁর দৃষ্টিকে লজ্জা করে পাপ পরিহারের চেষ্টা করা কর্তব্য।

১২. আল্লাহর সম্মুখে জবাবদিহিতার ভয় করা :

মহান আল্লাহর কাছে মানুষের কোন কিছু গোপন থাকে না। তিনি পৃথিবীর সবকিছুর সদা খবর রাখেন। তাঁর অজ্ঞাতে কোন গাছের পাতাও পতিত হয় না। আল্লাহ বলেন,إِنَّ اللهَ لَا يَخْفَى عَلَيْهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ، ‘আল্লাহর নিকটে যমীন ও আসমানের কোন কিছুই গোপন থাকে না’ (আলে ইমরান ৩/৫)। তিনি আরো বলেন,يَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ، ‘তিনি মানুষের চোখের চোরা চাহনি এবং তাদের বুকে যা লুকিয়ে থাকে, সবই জানেন’ (মুমিন ৪০/১৯)। আল্লাহ বলেন,وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَا تَسْقُطُ مِنْ وَرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُبِينٍ ‘আর গায়েবের চাবিকাঠি তাঁর কাছেই রয়েছে। তিনি ব্যতীত কেউই তা জানে না। স্থলে ও সমুদ্রে যা কিছু আছে, সবই তিনি জানেন। গাছের একটি পাতা ঝরলেও সেটা তিনি জানেন। মাটির নীচে অন্ধকারে লুক্কায়িত এমন কোন শস্যবীজ নেই বা সেখানে পতিত এমন কোন সরস বা নীরস বস্ত্ত নেই, যা (আল্লাহর) সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই’ (আন‘আম ৬/৫৯)

অন্যত্র তিনি বলেন,وَإِنْ تُبْدُوا مَا فِي أَنْفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُمْ بِهِ اللهُ فَيَغْفِرُ لِمَنْ يَشَاءُ وَيُعَذِّبُ مَنْ يَشَاءُ وَاللهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ‘আর তোমাদের অন্তরে যা রয়েছে, তা তোমরা প্রকাশ কর বা গোপন কর, তোমাদের কাছ থেকে আল্লাহ তার হিসাব নিবেন। অতঃপর তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন ও যাকে ইচ্ছা শাস্তি দিবেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান’ (বাক্বারাহ ২/২৮৪)

বান্দার ভাল-মন্দ কাজ-কর্ম তার আমলনামায় সুস্পষ্টরূপে লিপিবদ্ধ থাকবে। এই আমলনামা অনুযায়ী তার হিসাব হবে। কোন কিছু গোপন করার সুযোগ কোন মানুষের থাকবে না। বান্দার সাথে মহান আল্লাহ সরাসরি কথা বলবেন। বান্দাকে স্বীয় আমলনামা পড়ার জন্য বলা হবে। আল্লাহ বলেন, وَكُلَّ إِنْسَانٍ أَلْزَمْنَاهُ طَائِرَهُ فِي عُنُقِهِ وَنُخْرِجُ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كِتَابًا يَلْقَاهُ مَنْشُورًا، اقْرَأْ كِتَابَكَ كَفَى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا، مَنِ اهْتَدَى فَإِنَّمَا يَهْتَدِي لِنَفْسِهِ وَمَنْ ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّى نَبْعَثَ رَسُولًا- ‘প্রত্যেক মানুষের কৃতকর্মকে আমরা তার গ্রীবালগ্ন করে রেখেছি। আর ক্বিয়ামতের দিন আমরা তাকে বের করে দেখাব একটি আমলনামা, যা সে খোলা অবস্থায় পাবে। (সেদিন আমরা বলব,) তুমি তোমার আমলনামা পাঠ কর। আজ তুমি নিজেই নিজের হিসাবের জন্য যথেষ্ট। যে ব্যক্তি সৎপথ অবলম্বন করে, সে তার নিজের মঙ্গলের জন্যেই সেটা করে। আর যে ব্যক্তি পথভ্রষ্ট হয়, সে তার নিজের ধ্বংসের জন্যেই সেটা হয়। বস্ত্ততঃ একের বোঝা অন্যে বহন করে না। আর আমরা রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দেই না’ (বনু ইস্রাঈল ১৭/১৩-১৫)

কোন পাপী ব্যক্তি যদি চিন্তা করে, আমি যে পাপাচারে লিপ্ত, ক্বিয়ামতের দিন তো আল্লাহ আমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করবেন যে, বান্দা! এগুলো কেন করলে? নির্জনে লোকচক্ষুর অন্তরালে গিয়ে পাপগুলো করেছিলে। তুমি কি ভেবেছিলে যে, তোমাকে কেউ দেখিনি? তোমার স্রষ্টা ও রব সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমিও কি দেখিনি? হাশরে বান্দার সাথে আল্লাহ কথা বলবেন। রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَا مِنْكُم أَحَدٍ إِلَّا سَيُكَلِّمُهُ رَبُّهُ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ تُرْجُمَانٌ وَلَا حِجَابٌ يَحْجُبُهُ، ‘তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে শীঘ্রই তার রব কথা বলবেন, তখন রব ও তার মাঝে কোন অনুবাদক থাকবে না এবং আড়াল করে এমন কোন পর্দা থাকবে না’।[6] অতএব সেদিন আমরা কি উত্তর দিবো? সেদিন যদি আল্লাহ জিজ্ঞেস করেন, বান্দা! গভীর রাতে কেন তুমি অশ্লীলতায় ডুবে গিয়েছিলে? কেন তুমি পৌত্তলিকতা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অবৈধ প্রেম ও নগ্নতাসহ হাযারো অপরাধে লিপ্ত হয়েছিলে? এটা কি আমার ও আমার রাসূলের শিক্ষা ছিল? তখন আমরা কি উত্তর দিবো? পাপী এভাবে ভাবলে যাবতীয় পাপ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারবে।

১৩. গোনাহের পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা করা :

গোনাহের পরিণতি সম্পর্কে যত চিন্তা-ভাবনা করা হবে, তা হ’তে বেঁচে থাকা তত সহজ হবে। আর গোনাহের পার্থিব পরিণতি হ’ল দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা, সংকট, আল্লাহ ও বান্দার মাঝে দূরত্ব তৈরি হওয়া ইত্যাদি। আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ بِمَا تَعْمَلُوْنَ، وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ نَسُوْا اللهَ فَأَنْسَاهُمْ أَنْفُسَهُمْ أُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ، ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আর প্রত্যেক ব্যক্তির উচিৎ এ বিষয়ে ভেবে দেখা যে, সে আগামী দিনের জন্য কি অগ্রিম প্রেরণ করছে? আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সম্যক অবহিত। আর তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে আত্মভোলা করে দিয়েছেন। ওরাই হ’ল অবাধ্য’ (হাশর ৫৯/১৮-১৯)

হাদীছে এসেছে, আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِذَا أَرَادَ اللهُ بِعَبْدِهِ الخَيْرَ عَجَّلَ لَهُ العُقُوبَةَ فِي الدُّنْيَا، وَإِذَا أَرَادَ اللهُ بِعَبْدِهِ الشَّرَّ أَمْسَكَ عَنْهُ بِذَنْبِهِ حَتَّى يُوَافِيَ بِهِ يَوْمَ القِيَامَةِ، ‘আল্লাহ তা‘আলা যখন তাঁর কোন বান্দার কল্যাণ চান তখন দ্রুত দুনিয়াতে তাকে বিপদে ফেলেন। আর যখন তিনি কোন বান্দার অকল্যাণ চান তখন তাকে তার অপরাধের শাস্তি প্রদান হ’তে বিরত থাকেন। অতঃপর ক্বিয়ামতের দিন তিনি তাকে পুরাপুরি শাস্তি দেন’।[7]

মানুষ স্বীয় নাফরমানীর স্বাদ বিস্মৃত হয় কিন্তু পাপের বোঝা ও নিন্দা-মন্দ অবশিষ্ট থাকে। ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন,لو ميز العاقل بين قضاء وطره لحظة، وانقضاء باقي العمر بالحسرة على قضاء ذلك الوطر: لما قرب منه، ولو أعطي الدنيا، غير أن سكرة الهوى تحول بين الفكر وذلك ‘জ্ঞানী ব্যক্তি যদি স্বীয় মনোবাসনা পূর্ণ করা ও সেই মনোবাসনা পূরণের কারণে সমগ্র জীবন আফসোসের সাথে অতিবাহিত করার ব্যাপারে ক্ষণকাল চিন্তা করত, তাহ’লে সে এর নিকটবর্তী হ’ত না যদিও তাকে দুনিয়ার (সব সম্পদ) দেওয়া হয়। কিন্তু প্রবৃত্তির মদমত্ততা চিন্তা ও বাসনার মাঝে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়’।[8] মানুষ এক ঘণ্টায় কতই না পাপ করে, যেন কিছুই হয়নি। আর এর প্রভাব বহুদিন ধরে অবশিষ্ট থাকে। খুব কম সংখ্যক মানুষই এতে লজ্জিত-অনুতপ্ত হয়। পাপাচার থেকে দূরে থাকার সর্বোত্তম উপায় হ’ল তাতে নিমজ্জিত হওয়ার উপকরণ হ’তে দূরে থাকা এবং পাপের নিকটবর্তী না হওয়া। যে ব্যক্তি এটা উপলব্ধি করতে সক্ষম এবং এই অপকর্ম থেকে সম্পূর্ণরূপে নিজেকে নিরাপদ রাখতে চায় তার পক্ষেই বেঁচে থাকা সম্ভব।

আবু বাকরাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْ ذَنْبٍ أَجْدَرُ أَنْ يُعَجِّلَ اللهُ تَعَالَى لِصَاحِبِهِ الْعُقُوبَةَ فِي الدُّنْيَا، مَعَ مَا يَدَّخِرُ لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِثْلُ الْبَغْيِ وَقَطِيعَةِ الرَّحِمِ، ‘মহান আল্লাহ বিদ্রোহী ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীর মতো অন্য কাউকে দুনিয়াতে অতি দ্রুত আযাব দেয়ার পরও আখিরাতের আযাবও তার জন্য জমা করে রাখেননি’।[9] অন্যত্র তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই নেক আমলের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত প্রতিদান দেওয়া হয়, রক্ত সম্পর্ক বজায় রাখার। এমনকি কোন পরিবারের লোক যদি পাপীও হয়, কিন্তু তারা যদি রক্ত সম্পর্ক বজায় রাখে, তবে তাদের সম্পদ ও সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। কোন পরিবার এমন হ’তে পারে না যে, তারা রক্ত সম্পর্ক বজায় রাখবে অতঃপর অভাবী হবে’।[10]

মহান আল্লাহ বলেন,فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ، أُولَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ، ‘অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহ’লে অবশ্যই তোমরা জনপদে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আতমীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাৎ করেন। অতঃপর তাদেরকে তিনি বধির করেন ও তাদের চক্ষুগুলিকে অন্ধ করে দেন’ (মুহাম্মাদ ৪৭/২৩)

১৪. পাপকে বড় মনে করা :

গোনাহ বা পাপাচার হ’ল মানুষের শত্রুতুল্য। আর শত্রুকে কখনো ছোট করে দেখতে হয় না। সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ كَقَوْمٍ نَزَلُوا فِى بَطْنِ وَادٍ فَجَاءَ ذَا بِعُودٍ وَجَاءَ ذَا بِعُودٍ حَتَّى أَنْضَجُوا خُبْزَتَهُمْ وَإِنَّ مُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ مَتَى يُؤْخَذْ بِهَا صَاحِبُهَا تُهْلِكْهُ. ‘তোমরা ছোট ছোট তুচ্ছ পাপ থেকেও দূরে থেকো। কেননা ছোট ও তুচ্ছ গোনাহসমূহের উপমা হ’ল এরূপ, যেরূপ একদল লোক (সফরে গিয়ে) এক উপত্যকায় (বিশ্রাম নিতে) নামল। অতঃপর এ একটা কাঠ, ও একটা কাঠ এনে জমা করল। এভাবে অবশেষে তারা এত কাঠ জমা করল, যদ্দবারা তারা তাদের রুটি পয়ে নিতে পারল। আর ছোট ছোট তুচ্ছ পাপের পাপীকে যখন ধরা হবে তখন তা তাকে ধ্বংস করে ছাড়বে’।[11]

আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তাকে রাসূল (ছাঃ) বলেন,يَا عَائِشُ، إِيَّاكِ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوبِ، فَإِنَّ لَهَا مِنَ اللهِ طَالِبًا، ‘হে আয়েশা! তুমি ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র তুচ্ছ পাপ হ’তেও সাবধান থেকো। কেননা আল্লাহর পক্ষ হ’তে তাও (লিপিবদ্ধ করার জন্য ফেরেশতা) নিযুক্ত আছেন’।[12] ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, إِنَّ الْمُؤْمِنَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَأَنَّهُ قَاعِدٌ تَحْتَ جَبَلٍ يَخَافُ أَنْ يَقَعَ عَلَيْهِ، وَإِنَّ الْفَاجِرَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَذُبَابٍ مَرَّ عَلَى أَنْفِهِ. ‘ঈমানদার ব্যক্তি তার গোনাহগুলোকে এত বিরাট মনে করে, যেন সে একটা পর্বতের নীচে উপবিষ্ট আছে, আর সে আশঙ্কা করছে যে, সম্ভবত পর্বতটা তার উপর ধ্বসে পড়বে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি তার গোনাহগুলোকে মাছির মত মনে করে, যা তার নাকের উপর দিয়ে চলে যায়’।[13] অতএব প্রকৃত মুমিন ছগীরা গোনাহকেও কবীরা গোনাহ মনে করে তা পরিত্যাগে সচেষ্ট হয়। কবি বলেন,لاَ تَحْقِرَنَّ صَغِيْرَةً * إِنَّ الْجِبَالَ مِنَ الْحَصَى ‘গোনাহকে ছোট মনে করো না। বড় পাহাড় ছোট ছোট পাথর দিয়েই তৈরি হয়’।

গুনাহগার যদি চিন্তা করে যে, তার নাম-যশ কত উঁচু অথচ কর্মকান্ড কত নীচু; সে সৃষ্টিকুলের দৃষ্টিতে আল্লাহর বন্ধু, কিন্তু কাজ করে আল্লাহর দুশমনের মত; বাহ্যিক দৃষ্টিতে ঈমানদার অথচ ভিতরে ভিতরে পাক্কা দুরাচার। লেবাসে-পোষাকে, আকারে-আকৃতিতে তাক্বওয়াশীল, কিন্তু ভিতরে তাক্বওয়াহীন, উদ্ধত। জনসম্মুখে আল্লাহর বান্দা, অন্দরমহলে শয়তানের গোলাম। তার যবান আল্লাহর রেযামন্দীর প্রত্যাশী, চোখে পরনারীর প্রতি আসক্তি। সে সকলের কাছে সাধাসিধে ছূফী কিন্তু স্রষ্টার দৃষ্টিতে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধী। তার উপরটা সুন্নাতসমৃদ্ধ, অথচ ভেতরটা অশ্লীলতাপূর্ণ। মাখলূকের কাছে তার স্বভাবচরিত্র গোপন, কিন্তু স্রষ্টার কাছে সবই দৃশ্যমান। সে দৃশ্যত জান্নাত প্রত্যাশী, বাস্তবে জাহান্নাম খরিদকারী। তার জন্য এই ক্ষতিকর কর্ম থেকে ফিরে আসাটাই শ্রেয়। আল্লাহ তার জন্য তওবার দরজা খোলা রেখেছেন। এটাই হয়তো সুযোগ লুফে নেয়ার আখেরী দিন। পরে আক্ষেপ-অনুশোচনা করে কোন ফায়দা নেই। কবি বলেন,

اب پچهتاۓ كيا ہوت + جب چڑيا ں چك گئيں كہيت

‘এখন আফসোস করে কী হবে! যখন চড়ুইরা ক্ষেত বিরাণ করে দিয়েছে’। এভাবে সে বার বার চিন্তা করলে এবং নিজের কু-প্রবৃত্তির বিরোধিতা করলে বিশেষত তার গোপন পাপের প্রবণতা কমে আসবে।

প্রতিটি গোনাহের নেপথ্যে এমন উপকরণ অবশ্যই থাকে, যা ব্যক্তিকে পাপের প্রতি উদ্দীপ্ত করে এবং ঐ পাপে লিপ্ত করে। সুতরাং পাপের উদ্রেককারী সব উপকরণ থেকে দূরে থাকা যরূরী। সেই সাথে যেসব ছিদ্রপথে গোনাহ প্রবেশ করে সেই ছিদ্রপথ বা দরজা বন্ধ করা উচিত। কারণ ঘরের দরজা বন্ধ না করলে যেমন চোর ঢুকবে, তেমনি গোনাহের দরজা বন্ধ না করলে অনিচ্ছায় গোনাহে জড়িয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে। তাই গোনাহের দরজা বন্ধ করতে পারলে গোনাহ থেকে বাঁচা সহজ হবে। আর যে সকল পথে গোনাহ হয়ে যায় সে বিষয়ে ভাবলে তালিকার প্রথমেই আসবে আধুনিক ডিভাইস; মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ ও কম্পিউটার। এসবে ইন্টারনেট সংযোগ করে পাপের দরজা উন্মুক্ত হয়ে যায়। এগুলো ভাল-মন্দ সকল কাজে ব্যবহার করা যায়। প্রয়োজনের তাকীদে এগুলো হাতে আসে, পরে তা দিয়ে প্রয়োজন মিটানো অপেক্ষা গোনাহই অধিক প্রবেশ করে। সুতরাং প্রয়োজন হ’লে এগুলোর সুষ্ঠু ও নিরাপদ ব্যবহার করতে হবে।

আল্লাহর বিধান মানা বা না মানার ক্ষেত্রে মানুষ সাধারণত চার শ্রেণীতে বিভক্ত। যথা- (১) ইবাদত করে, গোনাহও করে। অর্থাৎ কিছু ইবাদত করে, কিছু গোনাহ করে। (২) ইবাদতও করে না, গোনাহও করে না। অর্থাৎ ইবাদত করে না অলসতার কারণে। গোনাহ করে না অজ্ঞতায়। এদের সংখ্যা সমাজে নিতান্তই কম। (৩) যারা কেবল গোনাহ করে, গোনাহের মাঝে আকণ্ঠ ডুবে থাকে, নেক আমল করার তাওফীক এদের আদৌ হয় না। (৪) আল্লাহর কিছু বান্দা নেক আমল করেন এবং গোনাহ থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করেন। তারাই আল্লাহর খাছ বান্দা।

১৫. গোনাহ পরিত্যাগের উপকারিতার কথা চিন্তা করা :

পাপ পরিত্যাগের চিন্তা বান্দাকে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার শক্তি যোগাবে। আর গোনাহ ত্যাগ করার উল্লেখযোগ্য উপকারিতা হ’ল, অন্তর পরিষ্কার হয়ে ওঠে, আল্লাহর মুহাববত বাড়তে থাকে এবং জান্নাত লাভে সে ধন্য হয় ইত্যাদি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى. فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى، ‘আর যে ব্যক্তি নিজ প্রতিপালকের সামনে দাঁড়ানোর ভয় পোষণ করত এবং নিজেকে মন্দ চাহিদা হ’তে বিরত রাখত, জান্নাতই হবে তার ঠিকানা’ (নাযি‘আত ৭৯/৪০-৪১)

১৬. দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বান্দার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবে :

যেকোন গোনাহ করার আগে স্মরণ করা প্রয়োজন যেসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবহার করে গোনাহ করা হচ্ছে, সেগুলো ক্বিয়ামতের দিন পাপীর বিরুদ্ধে সাক্ষী দিবে। ময়দানে মাহশারে জগতের সকল মানুষ ও জিনের সামনে পাপীকে লাঞ্ছিত করে ছাড়বে। আল্লাহ বলেন,الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَىٰ أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ، ‘আজ আমরা তাদের মুখে মোহর মেরে দেব। আর আমাদের সাথে কথা বলবে তাদের হাত ও সাক্ষ্য দিবে তাদের পা, তাদের কৃতকর্ম বিষয়ে’ (ইয়াসীন ৩৬/৬৫)

এমনকি সেদিন শরীরের চামড়াও সাক্ষী দিবে ব্যক্তির বিরুদ্ধে। আল্লাহ বলেন,حَتَّى إِذَا مَا جَاءُوهَا شَهِدَ عَلَيْهِمْ سَمْعُهُمْ وَأَبْصَارُهُمْ وَجُلُودُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ، وَقَالُوا لِجُلُودِهِمْ لِمَ شَهِدْتُمْ عَلَيْنَا قَالُوا أَنْطَقَنَا اللهُ الَّذِي أَنْطَقَ كُلَّ شَيْءٍ وَهُوَ خَلَقَكُمْ


أَوَّلَ مَرَّةٍ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ، ‘অবশেষে যখন তারা জাহান্নামের নিকটে এসে যাবে, তখন তাদের কান, চোখ ও ত্বক তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবে। অবশেষে যখন তারা জাহান্নামের নিকটে এসে যাবে, তখন তাদের কান, চোখ ও ত্বক তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবে। তোমাদের কান, চোখ ও ত্বক তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে না ভেবেই তোমরা তাদের কাছ থেকে কিছুই গোপন করতে না। বরং তোমরা ধারণা করেছিলে যে, তোমরা যা কর তার অনেক কিছুই আল্লাহ জানেন না’ (হা-মীম আস-সাজদাহ ৩১/২১-২২)

মানবদেহের যেসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে সাধারণত গোনাহ হয়ে থাকে, সেগুলো প্রধানত চারটি। যথা- ১. চোখ ২. যবান ৩. কান ৪. মস্তিষ্ক। এই চারটি অঙ্গের হেফাযত করতে পারলে ব্যভিচার ও গীবত কিংবা হারাম খাদ্য গ্রহণ করা থেকে শুরু করে কুফরী পর্যন্ত সকল গোনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব। আল্লাহ বলেন,وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا، ‘আর যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, তার পিছে পড়ো না। নিশ্চয়ই তোমার কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় প্রতিটিই জিজ্ঞাসিত হবে’ (ইসরা ১৭/৩৬)। অতএব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হেফাযত করা পাপ থেকে বেঁচে থাকার অন্যতম মাধ্যম। [ক্রমশঃ]


[1]. ত্বাবরানী কাবীর; ছহীহুত তারগীব হা/৩৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৪।

[2]. তিরমিযী হা/২৫১৬; মিশকাত হা/৫৩০২; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৯৫৭।

[3]. তিরমিযী হা/১৬৩৩, ২৩১১; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৭৭৮; মিশকাত হা/৩৮২৮।

[4]. বুখারী হা/১১৪৫; মুসলিম হা/৭৫৮; মিশকাত হা/১২২৩।

[5]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৭৩৮; ছহীহাহ হা/৭৪১; ছহীহুল জামে‘ হা/২৫৪১।

[6]. বুখারী হা/৭৪৪৩; মিশকাত হা/৫৫৫০।

[7]. তিরমিযী হা/২৩৯৬; ছহীহাহ হা/১২২০; মিশকাত হা/১৫৬৫।

[8]. ইবনুল জাওযী, ছয়দুল খাত্বের, পৃঃ ২১৮।

[9]. আবু দাউ হা/৪৯০২; তিরমিযী হা/২৫১১; ইবনু মাজাহ হা/৪২১১; আদাবুল মুফরাদ হা/২৯; ছহীহাহ হা/৯১৮।

[10]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪৪০; ছহীহুত তারগীব হা/২৫৩৭; ছহীহাহ হা/৯১৮।

[11]. আহমাদ হা/২২৮০৮; ত্বাবারানী হা/৫৭৩৯, বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান; ছহীহাহ হা/৩৮৯; ছহীহুল জামে‘ হা/২৬৮৬।

[12]. আহমাদ হা/২৪৪৬০; দারেমী হা/২৭২৬; ইবনু মাজাহ হা/৪২৪৩; ছহীহাহ হা/৫১৩, ২৭৩১; মিশকাত হা/৫৩৫৬।

[13]. বুখারী হা/৬৩০৮; তিরমিযী হা/২৪৯৭; মিশকাত হা/২৩৫৮।






বিষয়সমূহ: পাপ
কুরআনের আলোকে ভূমি জরিপ ও ভূমি ব্যবস্থাপনা - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আক্বীদা ও আহকামে হাদীছের প্রামাণ্যতা (৩য় কিস্তি) - মীযানুর রহমান মাদানী
ছালাত পরিত্যাগকারীর ভয়াবহ পরিণতি (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
শোকর (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব ও ফযীলত (শেষ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত (৭ম কিস্তি) - মুযাফফর বিন মুহসিন
শরী‘আহ আইন বনাম সাধারণ আইন : একটি পর্যালোচনা - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
বিদায়ের আগে রেখে যাও কিছু পদচিহ্ন (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন - মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান
মৃত ব্যক্তির নিকট কুরআন তেলাওয়াতের বিধান - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
মুহাসাবা (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
প্রাক-মাদ্রাসা যুগে ইসলামী শিক্ষা (২য় কিস্তি) - আসাদুল্লাহ আল-গালিব (শিক্ষার্থী, ইংরেজী বিভাগ, ২য় বর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)।
আরও
আরও
.