আমি
কামাল আহমাদ, পিতা মৃত নূর মিয়া। কুমিল্লা যেলার লাকসাম থানার ইরুয়াইন
গ্রামে আমার বসবাস। আমার শিক্ষা জীবন শুরু ও শেষ মাদ্রাসাতে। হক তালাশ করতে
গিয়ে আমি মক্কা-মদীনার ইলমকেই সঠিক ইলম বলে বিশ্বাস করি। আর বাংলাদেশে
একমাত্র আহলেহাদীছগণের মাঝে খুঁজে পাই মক্কা-মদীনার সঠিক ইলম ও আমল। কেননা
পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের সাথে আহলেহাদীছগণের আমলের যথাযথ মিল রয়েছে।
তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং পারিবারিকভাবে আহলেহাদীছ আক্বীদায় বিশ^াসী ও এই
আক্বীদা ও আমলের উপরই মৃত্যু কামনা করি। কিন্তু পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ
অনুযায়ী চলতে গিয়ে আমি যেন বর্তমানে জ্বলন্ত অঙ্গারের উপরে বসবাস করছি। আমি
প্রায় ১৪ বছর যাবৎ ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর পক্ষে লাকসাম উপযেলা
শহর থেকে শুরু করে গ্রাম্য এলাকা পর্যন্ত দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছি এবং
সাথে সাথে মাসিক আত-তাহরীক পত্রিকা বিতরণ করছি। এই দাওয়াতের ফলে লাকসাম
উপযেলার শহর, গ্রাম, ইউনিয়ন সর্বত্রই ছাত্র, যুবক, বৃদ্ধদের মধ্যে ব্যাপক
সাড়া পড়েছে। আহলেহাদীছ আক্বীদার দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই, ফা-লিল্লাহিল হামদ।
তবে সমস্যা হচ্ছে- এতে করে আমি হয়েছি বিভিন্ন ফের্কাবন্দী লোকের নিকট ও
প্রসাশনের কাছে নযরবন্দি। লাকসামে যে কেউ বুকে হাত বেঁধে ছালাত পড়লে এবং
ব্যক্তি জীবনে বিশৃংখলা করলে, তার দোষের একাংশ আহলেহাদীছের দায়িত্বশীল
হিসাবে আমার ঘাড়ে এসে পড়ে। গ্রাম্য প্রবাদ- ‘সব পাখি মাছ খায়, দোষ পড়ে
মাছরাঙ্গায়’। আমি যেন এ ছোবলে আক্রান্ত।
আমি ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর প্রকাশ্য অনুসারী হওয়াতে বর্তমানে আমার প্রতি নানা নিপীড়নের মাত্রা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। মসজিদে ছালাত আদায় করতে প্রকাশ্যে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে, সামাজিকভাবে হয়রানি করা হচ্ছে এবং মারধর করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যেমন- ২০১৭ সালের নভেম্বরে পিতার জানাযা ও ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারীতে বোনের জানাযা ও দাফন কার্যকে কেন্দ্র করে গ্রামের বিদ্বেষী ব্রেলভীরা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আমার নামে উপযেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর নিকট সন্ত্রাস ও জঙ্গী অপবাদের অভিযোগ পেশ করে। সে সূত্র ধরে প্রকাশ্যে ওয়ায মাহফিলে ও জুম‘আর খুৎবায় নাম উল্লেখ করে উস্কানি মূলক বক্তব্য দিয়ে আমার বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণকেও ক্ষেপিয়ে তোল। যা কাটিয়ে উঠতে আমাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। নাম উল্লেখ করে তাদের উস্কানি মূলক বক্তব্য আজও অব্যাহত আছে।
সম্প্রতি দেশে চলমান করোনা ভাইরাসের কারণে আমি এ বছরের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার ছালাত ঈদগাহে আদায় করিনি এবং মসজিদেও আদায় করিনি। কেননা আমি মসজিদে গিয়ে ঈদের ছালাত আদায় করলে আমার ছালাতের মাঝে পদ্ধতিগত প্রার্থক্য দেখা দিবে এবং মসজিদে অন্যান্য মুছল্লীদের মাঝে বিশৃংখলা দেখা দিবে। কারণ আমি আহলেহাদীছ এবং আমি ছালাতে রাফঊল ইয়াদাইন করি, সূরা ফাতিহা শেষে জোরে আমীন বলি এবং মক্কা-মদীনার ন্যায় বিশুদ্ধ হাদীছ অনুযায়ী ১২ তাকবীরে ঈদের ছালাত আদায় করি। সামাজিক বিশৃংখলা এড়াতে এবং করোনা ভাইরাসের কারণে পারিবারিক আত্মরক্ষার্থে প্রতিবেশী কাউকে না ডেকে আমার ভাতিজা-ভাগিনাসহ ১০/১২ জন মিলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের বাড়ির উঠানে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার ছালাত আদায় করি।
এতেই আহলেহাদীছ বিদ্বেষী সমাজের তথাকথিত সুন্নী দাবীদার ব্রেলভী আক্বীদার লোকেরা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে পুরা গ্রামের প্রায় ১১টি মসজিদের ইমামকে একত্রিত করে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে লাকসাম আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক অভিযোগ পেশ করে। স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় সুন্নী দাবীদার ব্রেলভীরা গত ১৩ই আগস্ট’২০ তারিখে লাকসাম উপযেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করে ‘সরকারের সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্যবিধি অবমাননা ও উঠানে ঈদের ছালাত আদায় করে শরী‘আত বিরোধী কার্যকলাপ করা’ শিরোনামে। উপযেলা নির্বাহী অফিসার অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জবাব দানের জন্য ২০শে আগস্ট’২০ বৃহস্পতিবার সকাল ১১-টায় আমাকে তার কার্যালয়ে উপস্থিত থাকার জন্য চৌকিদারের মাধ্যমে নৌটিশ পাঠায়। এদিকে ব্রেলভীরা তাদের নিজস্ব মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক মিলে ফেইসবুক, ইউটিউবসহ গোটা লাকসাম জুড়ে প্রচার করতে থাকে যে, ২০শে আগস্ট লাকসাম উপযেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে লাকসাম আহলেহাদীছদের সাথে সরাসরি বাহাছ’।
তাদের প্রচারনা অনুযায়ী তাদের আক্বীদার প্রায় ২০০ লোক টি.ভি মিডিয়া নিয়ে ২০শে আগস্ট’২০ইং তারিখে লাকসাম উপযেলা নির্বাহী অফিসের সামনে আমার বিরুদ্ধে একত্রিত হয়। তাদের এই অনাকাঙ্খিত আয়োজন দেখে উপযেলা নির্বাহী অফিসারও হতবাক। অবশেষে তিনি তাদেরকে প্রশাসনিক ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেন এবং আমাকে লিখিতভাবে অভিযোগের সঠিক উত্তর প্রদানের জন্য বলেন। এক মাস পরে রায় ঘোষণা হবে বলে জানিয়ে তিনি আয়োজন বাতিল করে দেন। উপযেলা নির্বাহী অফিসারের দক্ষতা ও বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্তের ফলে সেদিন আমি নিরাপদে ফিরে আসতে সক্ষম হই। আল্লাহ তাকে জাযায়ে খায়ের দান করুন-আমীন!
পরিশেষে বলব, অপরাধ যেন আমার একটাই আমি আহলেহাদীছ আক্বীদায় বিশ^াসী। তবে আমি মনে করি, এটা আমার অপরাধ নয়। এটাই আমার জান্নাতের পথ। নিশ্চয়ই আমার ছালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবই বিশ^পালনকর্তা আল্লাহর জন্য’ (আন‘আম ৬/১৬২)। আল্লাহ আমাকে একজন প্রকৃত আহলেহাদীছ হওয়ার এবং এই আক্বীদার উপরে দৃঢ় থাকার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!