আমি মুহাম্মাদ দেলোওয়ার হোসাইন। ফরিদপুর যেলার কুঠিবাড়ী মহল্লায় আমার বাস। ছালাত, ছিয়াম সমাজের লোকজনের সাথে মিলে-মিশেই আদায় করতাম। তখন কোন সমস্যা হ’ত না। অতঃপর এক সময় কর্মের উদ্দেশ্যে সঊদী আরবে গমন করলাম। সেখানে ছালাতে ব্যতিক্রম দেখে দেশে পত্র লিখলাম বিষয়টি জানার জন্য। বাড়ী থেকে দেশের মাযহাবী আলেমদের মতামতের ভিত্তিতে জানানো হ’ল যে, তাদের মাযহাব একটি আর আমাদের মাযহাব অন্যটি তাই এই ভিন্নতা। মনের মধ্যে তখন তেমন কোন প্রশ্ন জাগেনি। সাধারণ বুঝ পেয়ে চুপ থাকলাম। এভাবেই চলতে থাকল। ২০০০ সালে একেবারে দেশে চলে আসলাম। দিন যাচ্ছে, মাস যাচ্ছে, বছর যাচ্ছে, ঐ প্রচলিত ধারাতেই ছালাত আদায় করছি। অতঃপর ২০১১ সালে একদিন মাইকিং শুনলাম জনৈক আহলেহাদীছ আলেম আসবেন ফরিদপুরে ওয়ায করতে। মাইকিং শুনে ওয়ায শুনতে যাওয়ার আগ্রহ সৃষ্টি হ’ল। আগ্রহ থেকে সিদ্ধান্ত নিলাম মাহফিলে যাওয়ার। অতঃপর নির্ধারিত তারিখে পাশের এক ভাইকে সাথে নিয়ে রওয়ানা হ’লাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম অল্প কিছু লোক সামনে বসা। আমরাও যথারীতি বসে পড়লাম। সম্মানিত আলোচক মঞ্চে উঠে বললেন, অল্প লোক, তাতে দুঃখের কিছু নেই। কেননা ভালোকাজে অল্প লোকই হয়।
তার আলোচনার বিষয়বস্ত্ত ছিল ছালাত। শুরু করার আগে তিনি বললেন, আপনাদের নিকট থেকে আমি একটি বিষয়ে ওয়াদা নিতে চাই যে, আজকে যে আলোচনা শুনবেন, এই কথাগুলো অন্যদের নিকটে পৌঁছে দিবেন। অতঃপর তিনি মনোমুগ্ধকর বক্তব্য পেশ করলেন। তার দলীলভিত্তিক বক্তব্য শুনে মনে প্রশ্ন জাগল যে, তাহ’লে আমরা কি ভুলের মধ্যে আছি? আমরা কার অনুসরণ করছি? এরকম নানাবিধ প্রশ্নের সঠিক কোন জবাব না পেয়ে এক পর্যায়ে আমার আমল পরিবর্তন হয়ে গেল। ছহীহ হাদীছ মত ছালাত আদায় শুরু করলাম। আমার এই পরিবর্তন আমার স্ত্রী মেনে নিল। কিন্তু আত্মীয়-স্বজন আমাকে পাগল বলে আখ্যায়িত করল। আমার মহল্লার মসজিদে আমাকে সরাসরি কেউ কিছু বলত না। শুধু আড় চোখে আমার দিকে তাকাত। তবে তারা আমার ছেলের সাথে খারাপ ব্যবহার করত। আমার অনুপস্থিতিতে বুকের উপর হাত বাঁধলে কখনো কখনো অন্যান্য মুছল্লীরা তার হাত টেনে নীচে নামিয়ে দিত।
পরবর্তীতে আমার গ্রামের বাড়ী কানাইপুরের পূর্ব মল্লিকপুরে আমি নিজে জমি দান করে সেখানে একটি মসজিদ তৈরী করেছিলাম। মসজিদের কাজ শুরুর আগে এলাকাবাসীর সাথে একাধিকবার আলোচনা করেছিলাম যে, পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ মোতাবেক মসজিদটি পরিচালনা করব। মসজিদের কাজ সমাপ্ত হ’ল। সঠিক আক্বীদা মোতাবেক ছালাত শুরুও হ’ল। কিন্তু দুঃখের বিষয় তিন জুম‘আর বেশী চালাতে পারলাম না। ৪র্থ জুম‘আতে এলাকাবাসী এক হয়ে বলল যে, আমরা বুঝতে পেরেছি, তোমার কথা ঠিক কিন্তু আমরা তা মানতে পারছি না। আমাদের চার পাশের মসজিদগুলোতে যেভাবে ছালাত আদায় করা হয় আমরাও সেভাবেই আদায় করব এবং মসজিদ পরিচালনা করব। এমনকি তারা বলল যে, তুমি যদি এভাবে মসজিদ পরিচালনা কর, তাহ’লে আমরা কেউ এই মসজিদে আসব না। তুমি আগে আমাদের এলাকার অন্য মসজিদগুলো পরিবর্তন করে আস, তারপর এই মসজিদের কথা বল। আমি বললাম, সেগুলো পরিবর্তনের দায়িত্ব তো আমার নয়। আপনারা আমার আপনজন আপনারদেরকে সঠিক পথে চলতে বলা আমার দায়িত্ব। সকলে বললেন, তুমি এভাবে বললে,
আমরা আর মসজিদে আসব না। তখন আমি বললাম, আপনারা এলাকার মসজিদ ত্যাগ করবেন না। সঠিক বিষয় জানার ও তা মানার চেষ্টা করুন। আমিই বরং আসব না। তারা বলল, তুমি আসবে কিন্তু আমাদেরকে কিছু বলবে না। নিজের তৈরী মসজিদে কুরআন-হাদীছের কথা বলা যাবে না এ দুঃখে মসজিদে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। বর্তমানে আমার তৈরী করা সেই মসজিদে হানাফী মাযহাব মতে ছালাত আদায় করা হয়। চলে বিদ‘আতী সকল রসম-রেওয়াজ।