আমার
নাম মুহাম্মাদ আরমান ইমতিয়াজ। আমার জন্মস্থান জামালপুর যেলার বকশীগঞ্জ
থানার অন্তর্গত সীমান্তবর্তী এলাকা ধানুয়া জামালপুর ইউনিয়নের সাতানীপাড়া
গ্রামে। বকশীগঞ্জ থানার প্রায় ৯৫% ভাগই মুসলিম। বাকী ২% হিন্দু এবং ৩%
খৃষ্টান ধর্মালম্বী (গারো উপজাতি)। এই ৯৫% ভাগ মুসলমানের মধ্যে প্রায় সবাই
হানাফী মাযহাবের অনুসারী। তাই স্বাভাবিক কারণে আমাদের এলাকায় পবিত্র কুরআন ও
ছহীহ হাদীছের প্রচার খুবই কম। আমি যখন ৫ম-৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশুনা করি তখন
আমার চাচাতো ভাই মুহাম্মাদ কামরান ইমতিয়াজ ঢাকায় থাকার সুবাদে পবিত্র কুরআন
ও ছহীহ হাদীছের অনুসারী হন। অর্থাৎ আহলেহাদীছ হন। তিনি যখন আমাদের গ্রামের
বাড়িতে আসেন এবং মসজিদে ছালাত আদায় করতে যান তখন তাকে অনেক প্রশ্ন করা হয়।
তিনি বেশী কিছু না বলে একটি কথাই বলতেন, ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত রাসূল
(ছাঃ) যেভাবে ছালাত আদায় করতেন, আমি ঠিক সেভাবে ছালাত আদায় করার চেষ্টা
করি। ভাইয়া বেশী দিন গ্রামে না থেকে তার পড়াশুনার জন্য ঢাকায় চলে গেলেন।
আমি যখন নবম-দশম শ্রেণীতে পড়াশুনার জন্য বকশীগঞ্জ আসি তখন হঠাৎ মসজিদে একজন আহলেহাদীছ ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ হয়। তার নাম মুহাম্মাদ এনামুল হক। তার সাথে কুশল বিনিময় করি এবং আহলেহাদীছ সম্বন্ধে অনেক প্রশ্ন করি। তিনি বললেন, যারা পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ মেনে চলে তারাই ‘আহলেহাদীছ’। তিনি আমাকে রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত সম্পর্কে বুখারী ও মুসলিমের হাদীছগুলো দেখান। হক পথের অনুসারী হওয়ার ক্ষেত্রে তিনি আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন, যা আমি কখনও ভুলতে পারব না। আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন-আমীন! এরপর উপযেলা ইসলামী ফাউন্ডেশন পাঠাগারে গিয়ে কুতুবুস সিত্তাহ দেখি এবং এনামুল ভাই প্রদর্শিত হাদীছগুলো মিলিয়ে সঠিক পাই। অতঃপর আমি মাযহাবের সঠিক তথ্য জানার চেষ্টা করি। দেখা গেল হানাফী মাযহাবের অনুসারীরা যা মেনে চলেন, তা হাদীছের সম্পূর্ণ বিপরীত। ফলে আমি মাযহাবী গোঁড়ামি ছেড়ে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের নিঃশর্ত অনুসারী তথা ‘আহলেহাদীছ’ হয়ে যাই। ফলে আমার জীবনে নেমে আসে নানা দুঃখ-কষ্ট।
আমার পিতা আলহাজ্জ আলতাফ হোসাইন। তিনি হজ্জ করার সুবাধে পরিবারের পক্ষ থেকে বেশী একটা চাপ আমার উপর আসেনি। আল্লাহ আমার পিতা-মাতাকে জাযায়ে খায়র দান করুন-আমীন! কিন্তু দুঃখজনক হ’লেও সত্য যে, আমার গ্রামের লোকদের থেকে আমার উপর নেমে আসে চরম প্রতিবন্ধকতা।
প্রথমে গ্রামের লোকেরা আমাকে শাফেঈ মাযহাবের অনুসারী বলে। তখন আমি বললাম, আমি নির্দিষ্ট কোন মাযহাবের তাক্বলীদ করি না। যে মাযহাবের কথাগুলো কুরআন ও ছহীহ হাদীছের সঙ্গে মিলে যায় সেগুলো পালন করার চেষ্টা করি। এবার তারা আমাকে কাদিয়ানী, লা-মাযহাবী, খারেজী ইত্যাদি নামে ডাকা শুরু করে। এভাবে প্রতিনিয়ত আমাকে উত্যক্ত করা হ’ত। একদিন আমি এক ভাইয়ের কথায় প্রমাণ হিসাবে ছহীহ মুসলিম ১ম খন্ড মসজিদে নিয়ে যাই। তখন মসজিদে উপস্থিত মুছল্লীদের সামনে ইমাম ছাহেব ছহীহ মুসলিমকে কাদিয়ানীদের হাদীছ বলে আখ্যায়িত করে। তখন দুঃখে-কষ্টে আমার বুকটা যেন ফেটে যায় এই ভেবে যে, হায় আফসোস! এরা ছহীহ মুসলিমকে তাচ্ছিল্যভরে কাদিয়ানীদের হাদীছ বলে আখ্যায়িত করল! কি দুঃসাহস! এত বড় স্পর্ধা এদের!!
আমাদের মসজিদের ইমাম শরী‘আত সম্পর্কে অজ্ঞ। আর এই সব জাহেল-মূর্খদের জন্যই সমাজের দুর্দশা। অতঃপর ইমামসহ তার অধীনস্থ লোকেরা মিলে আমাকে মসজিদ থেকে বের করার ষড়যন্ত্র করল। কিন্তু আল্লাহর রহমতে সেটা ফলপ্রসু হয়নি। যারা জ্ঞানী তারা আসলে এটা বুঝতে পেরেছেন। দুঃখজনক যে, একদিন আমি না থাকা অবস্থায় জুম‘আর খুৎবায় ইমাম ছাহেব বললেন, যারা উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলে তারা বেআদব। তখন এক মুরুববী দাঁড়িয়ে বললেন, মক্কা-মদীনায় ইমামগণ সহ অনেক মুসলিম সূরা ফাতেহার শেষে উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলেন, তারা কি সবাই বেআদব? তিনি একেবারে চুপ হয়ে গেলেন।
পরিশেষে বলব, পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ গ্রহণ করার কারণে যদি এতই কটুক্তি শুনতে হয় এবং এত অপমান সহ্য করতে হয় তাহ’লে শুনে রাখুন, আমি স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ হকের দাওয়াত মানুষের নিকট পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখবো ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর কাছে এর বিনিময়ে আমি কেবল জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাই (আমীন)।
মুহাম্মাদ আরমান ইমতিয়াজ
বকশীগঞ্জ, জামালপুর।