ছোট বেলা থেকেই কষ্টের মাঝে বেড়ে ওঠা। পরিবারে প্রচলিত ইসলামের অনুশীলন ছিল বলে পূর্ব থেকেই কিছুটা আখেরাতমুখী ছিলাম। আববা সব সময় বলতেন, দুনিয়াদার হবে না। কারণ দুনিয়া ক্ষণিকের। তাই তিনি আমাদের সবাইকে মাদ্রাসায় পড়ান। ৫ম শ্রেণী থেকেই আমি জায়গীর থাকি। কারণ চাচাদের সাথে মনোমালিন্যের কারণে আববা আমাদের গ্রাম থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে নতুন জায়গায় বাড়ী কিনে ভাই-বোনদের নিয়ে বসবাস করেন। আমি গ্রামের মাদ্রাসার শিক্ষার্থী হওয়ায় আববা আমাকে জায়গীর ঠিক করে দেন। যখন ৭ম শ্রেণীতে উঠি তখন মাদ্রাসার বড় ভাইয়েরা আমাকে রাজনীতিতে প্রবেশ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। সাথে কিছু শিক্ষকও। এদিকে আববার নিষেধ ছিল কখনো যেন রাজনীতিতে না জড়াই। কিন্তু রাজনীতিতে যোগ না দেওয়ার কারণে শিক্ষকদের চোখে আমি ভাল ছিলাম না। তাদের হিংস্রতা এতটাই প্রবল ছিল যে, তারা আমাকে দাখিল পরীক্ষা দিতেও বাধাগ্রস্থ করে। সামান্য বেতন বাকীর অযুহাতে আমার সাথে মিথ্যাচার করে যে, বোর্ড কর্তৃক আমার কাগজপত্র বাতিল করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আববা মারা যান। ফলে ইচ্ছা থাকলেও আর পড়ালেখার সুযোগ হ’ল না।

অতঃপর পিতৃহীন সংসারে রোজগারের পথ বেছে নিলাম। কয়েক বছর দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্ম করে অবশেষে চলে গেলাম সুদূর কাতারে। প্রবাস জীবনে প্রথমে ড্রাইভিং ও পরে অন্যান্য কাজে যোগদান করি। সেখানে বিভিন্ন মসজিদে ছালাত আদায় করতে গিয়ে বেশ অমিল খুঁজে পেলাম। ভাবলাম, আমাদের রাসূল (ছাঃ) একজন, কিন্তু ছালাতে এত ভিন্নতা কেন? খুঁজতে লাগলাম কোন্টা আসল ছালাত। ছোট থেকেই শুনে আসছিলাম যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বিশুদ্ধ হাদীছ পাওয়া যায় ছহীহ বুখারীতে। তাই ছহীহ বুখারী খুঁজতে লাগলাম। দেখতে পেলাম সমাজে প্রচলিত ছালাতের অনেক কিছুই মিলছে না হাদীছের সাথে।

পরে ইউটিউব খুঁজতে গিয়ে একজন আলোচককে দেখলাম মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ছাহেবের ভুল ধরে বক্তব্য দিচ্ছেন। জানতে পারলাম আলোচকের নাম ‘মাওলানা মতীউর রহমান মাদানী’। ভারতের মালদহে তাঁর বাড়ী। সঊদী আরবের দাম্মাম দাওয়া সেন্টারের বাংলা বিভাগের দাঈ। সেই সাথে বাংলাদেশের খ্যাতনামা আলেম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব স্যার সম্পর্কেও জানতে পারলাম। তাঁর কিছু বই পড়লাম। বিশেষ করে ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ও সীরাতুর রাসূল (ছাঃ)। ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পড়ে অনেক কিছু খুব সহজেই পেয়ে গেলাম। এই সাথে তাঁর সম্পর্কে বিরোধীদের পক্ষ থেকে কিছু কথাও কানে আসলো। কিন্তু পাবনার বন্ধু আব্দুল কাবীর ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ হ’লে তিনি আমাকে ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব স্যার সম্পর্কে এমন কিছু জানালেন, যা আমাকে অবাক করে দিল। বুঝতে পারলাম হকের পথ মসৃণ নয়। এ পথ কণ্টকাকীর্ণ। কাজেই বিরুদ্ধবাদীরা বিরোধিতা করবে এটিই স্বাভাবিক। এক পর্যায়ে আমি আত-তাহরীক পত্রিকা হাতে পেলাম। তাহরীক পাঠে আমি চকৎকৃত হ’লাম। ফলে আমার আক্বীদা-আমল সবই নতুন করে ঢেলে সাজালাম। ফালিল্লা-হিল হাম্দ।

ফলে বাধাহীন জীবনে নেমে আসতে লাগলো একটার পর একটা বাধা। বাড়ীতে বিষয়টি জানালে ও দাওয়াত দিলে তারা আমাকে কাফের হয়ে গেছি বলে মন্তব্য করে বসল। অবাক বিস্ময়ে সবকিছু ভাবতে লাগলাম। এমনকি কেউ কেউ আমার সাথে কথা বলাও বন্ধ করে দিল। অবশ্য পরবর্তীতে ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) বই পাঠের মাধ্যমে মহিলাদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের ছালাত শুদ্ধ করে নেয়। অপরদিকে কোম্পানী থেকেও নেমে আসলো দারুণ চাপ। আমার দাড়ি ছেড়ে দেওয়া ও টাখনুর উপরে কাপড় পরিধানের বিষয়টি সহজে মেনে নিতে পারল না কর্তাব্যক্তিরা। এদিকে আমার প্রমোশনের সময় হ’লে সেখানেও প্রতিবন্ধকতা। সাফ জানিয়ে দিল ওনাদের মত না চললে প্রমোশন, বেতন বৃদ্ধি কিছুই হবে না। এরি মধ্যে কোম্পানী থেকে বলল, আমার সহকারী হিসাবে ২জন মেয়ে কাজ করবে। যে মেয়েরা খারাপ হিসাবে কোম্পানীতে পূর্ব থেকেই পরিচিত। তখন খ্রিষ্টানদের আসল চক্রান্ত বুঝতে পারলাম। জিজ্ঞেস করলাম, এটা মেনে না নিলে আমার কি সমস্যা হবে? তারা বললেন, আমাদের কথা মতে না চললে চলে যেতে হবে।

অতঃপর বিষয়টি নিয়ে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে পরামর্শ করলাম। অনেকে হজম করে সবকিছু মেনে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু বিবেক সায় দিল না। সামান্য টাকার কাছে ঈমান বিক্রি করব? এ হ’তে পারে না। আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা করে সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে ফিরে যাওয়ার। সে মতে ২০১৮ সালে দেশে ফিরে আসলাম। কিন্তু দেশের অবস্থাতো আগে থেকেই করুণ। ফলে সবদিক থেকে যেন জীবন সংকীর্ণ হয়ে আসছে। ভাবছি, এ তো আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। আল্লাহর দ্বীন সঠিকভাবে ও সঠিক পন্থায় মানার কারণে মুসলমানদের দ্বারা, এমনকি নিজ আত্মীয়-স্বজনদের পক্ষ থেকে এমন নিদারুণ আচরণ অবিশ্বাস্য, অভাবনীয়। তবে জাহেলী আরবের দোষ কি? তারা তো আর মুসলিম ছিল না।

অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম হিজরতের সুন্নাত পালন করব। ইতিপূর্বে ছুটিতে দেশে এসে রাজশাহী মারকায দেখতে গিয়েছিলাম। হৃদয় দিয়ে অনুভব করেছিলাম শান্তির আবহ। অতঃপর ২০১৮ সালের তাবলীগী ইজতেমার লাইভ ভিডিওতে আমীরে জামা‘আতের নিকটে বায়‘আত করি। বায়‘আত করার পর থেকে এবং সাংগঠনিকভাবে সম্পৃক্ত থাকার সিদ্ধান্তের পর হ’তে সবদিক থেকে অন্য রকমের তৃপ্তি অনুভব করি।

সবশেষে ২০১৮ সালের শেষের দিকে স্ত্রী সন্তান নিয়ে রাজশাহীতে হিজরত করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। অনুভব করি বিশুদ্ধভাবে দ্বীন পালনের এক পরম তৃপ্তি। আল্লাহ আমাদের সকলকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন-আমীন!







‘সকলের সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে বল, এখন থেকে ইমাম আবু হানীফার আদর্শ অনুযায়ী জীবন-যাপন করব’ (!)
দলীল-টলিল বুঝি না, তোর মসজিদেই আসার দরকার নেই
মাযহাব না মানার কারণে আশ্রয় হারাতে হ’ল - -খালিদ সাইফুল্লাহ, গাযীপুর।
জোরে ‘আমীন’ বলার অপরাধে মুছল্লীদের লাঠির আঘাতে মসজিদে লুটিয়ে পড়লাম - আত-তাহরীক ডেস্ক
স্রেফ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হোক আমাদের পথচলা
হকের পথে যত বাধা - মুহাম্মাদ ইসমাঈল হোসাইন - মাইজদী, নোয়াখালী
তোর মতো ছালাত পড়া তো জীবনে কোথাও দেখিনি! - আকীকুল হাসান
জোরে ‘আমীন’ বললে মুছল্লীদের সমস্যা হয়! - আত-তাহরীক ডেস্ক
‘তোমাকে সঊদী আরবের ভূতে ধরেছে’ - নূরুল ইসলাম, নাটোর
হক-এর পথে টিকে থাকা বড় চ্যালেঞ্জ - .
কুসংস্কারাচ্ছন্ন একটি সমাজে তাওহীদের চারাগাছ রোপিত হ’ল যেভাবে - মুহাম্মাদ বেলাল বিন ক্বাসেম
আহলেহাদীছ আক্বীদায় বিশ্বাসী, এটাই কি আমার অপরাধ!
আরও
আরও
.